Loading AI tools
সঙ্গীত ধারা উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
ভারতীয় লোক সঙ্গীত হল এক ভিন্নধর্মী সঙ্গীত কারণ ভারতের বিশাল সাংস্কৃতিক বিভিন্নতা। এর বিভিন্ন ধরনের মধ্যে আছে: বাউল, ভাটিয়ালি, ভাঙড়া, লাবনি, ডাণ্ডিয়া এবং রাজস্থানী। সিনেমা এবং পপ সংগীত এসে লোক সঙ্গীতের জনপ্রিয়তাকে দুর্বল করে দিয়েছে, কিন্তু সন্ত এবং কবিদের এক বিশাল সাংগীতিক লাইব্রেরি এবং তাদের নামের ঐতিহ্য আছে, প্রায়ই তারা প্রায়-ভারতীয় লোক সঙ্গীত ঠুংরি গায় যেটা নৃত্য-প্রধান।
ভাবাগীতি (আক্ষরিক অর্থ 'ভাব কবিতা') হল এক রকম ভাবপ্রকাশের কবিতা এবং লঘু সঙ্গীত। বেশির ভাগ কবিতা গাওয়া হয় বিশেষ ধরনের, ভালোবাসা, প্রকৃতি, দর্শন ইত্যাদ, এবং ধরনটা গজল থেকে আলাদা নয়, যদিও গজলের একটা অদ্ভুত ছন্দ আছে। এই ধরনটা ভারতের অনেক জায়গায়, বিশেষত কর্ণাটকে জনপ্রিয়। অন্যান্য ভাষায় ভাবগীতির বিভিন্ন নাম আছে।
কন্নড় ভাবাগীতি আধুনিক কবিদের কবিতা থেকে নেওয়া হয়, যেমন: কেভেম্পু, ডি আর বেন্দ্রে, গোপালকৃষ্ণ অদিগা, কে এস নরসিমহাস্বামী, জি এস শিবরুদ্রাপ্পা, কে এস নিসার আহমেদ, এন এস লক্ষ্মীনারায়ণা ভট্ট প্রমুখ। বিখ্যাত ভাবাগীতি প্রদর্শকরা হলেন: পি কলিঙ্গ রাও, মাইশোর অনন্তস্বামী, সি অসওয়াথ, শিমোগা সুব্বান্না, অর্চনা উদুপা, রাজু অনন্তস্বামী প্রমুখ।
ভাঙড়া (Punjabi: ਭੰਗੜਾ) হল এক ধরনের নাচ-প্রধান পাঞ্জাব-এর লোক সংগীত। বর্তমান সাংগীতিক ধারাটা এসেছে সাধারণ ঐতিহ্য ছাড়া পাঞ্জাব প্রদেশের একটা জংলা অনুষঙ্গ থেকে, যাকে বলে সেম সেম। পাঞ্জাব অঞ্চল-এর মহিলা নাচকে বলা হয় গিদ্ধা (পাঞ্জাবি: ਗਿੱਧਾ)।
বিহু হল অসমীয়া সংস্কৃতির সবচেয়ে বিখ্যাত উৎসব। এই উৎসবগুলো বিভিন্নভাবে এক বছরে তিনবার পালিত হয়ে থাকে। তিনটের মধ্যে একটা হল রঙ্গলি অথবা ভোগ বিহু যেটা ভীষণভাবে পালিত হয়, এবং তারপর আসে ভোগালি অথবা মার্গ বিহু। কোঙ্গলি অথবা কাটি বিহু পালিত হয় এক গরিব পথে। ভোগ বিহু ঢোল-পিপার আওয়াজের সঙ্গে সুরেলা গান অসমের প্রত্যেক কোণে এক ঝলক বাতাস বয়ে আনে। এই গানগুলো সমাজের রঙিন আনন্দের প্রতিভূ, যাকে বলে বিহুগীত। বিহুগীত বিহু উৎসবে বিহু নাচ করার মাধ্যমে প্রদর্শন করা হয়। গানের মধ্যে আছে নাটকীয়তা, ভালোবাসা, প্রকৃতি এবং ঘটনাবলির পরম্পরা। নবীন ছেলে এবং মেয়েরা গোষ্ঠীবদ্ধ হয়ে নাচে অংশ নেয়। বিহুগীতগুলো সাধারণত বিস্তৃত আকারের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের গীতিকবিতা থেকে প্রেমিক-প্রেমিকার ভালোবাসা নিবেদনের উচ্ছ্বাস থাকে, সামাজিক সচেতনতা থেকে কৌতুকপূর্ণ গল্পও থাকে। বিহু হল অসমের সবচেয়ে জনপ্রিয় লোক সঙ্গীত এবং সারা ভারতে এর বিস্তৃতি জানা যায়। এটা এতদঞ্চলের একটা অতি গুরুত্বপূর্ণ উৎসব হিসেবে স্বীকৃত। অসমীয়া জনগণের এটা একটা রঙিন এবং উচ্চ সংস্কৃতির প্রতীক।
মহারাষ্ট্রের লোক সঙ্গীত।
লাবনি হল মহারাষ্ট্র থেকে এক জনপ্রিয় লোক সঙ্গীত। ঐতিহ্যগতভাবে, এই গান মহিলা শিল্পীরা গেয়ে থাকে, কিন্তু কখনো কখনো পুরুষ শিল্পীরাও লাবনি গান গায়। লাবনি গানের সঙ্গে যে নাচের আকৃতি অনুষঙ্গ যুক্ত তাকে বলে তামাশা। এই নাচের আকৃতিতে সূচিত নৃত্যশিল্পী (তামাশা বাঈ), সহ-নৃত্যশিল্পী - মাবশি, ড্রামবাদক - ঢোলকি এবং বাঁশি বাদক - বাঁশরি ওয়ালা।
উত্তরাখণ্ডী লোক সঙ্গীতের মূল উৎস প্রকৃতির কোলে ছিল। আসল এবং ঐশ্বরিক সঙ্গীতের অনুভব ও ছোঁয়া প্রকৃতি বিষয়ক এবং প্রকৃতির সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। এই লোক সঙ্গীত প্রাথমিকভাবে উত্তরাখণ্ড রাজ্যের জনগণের উৎসব, ধর্মীয় ঐতিহ্য, লোকগাথা এবং সরল জীবনের সঙ্গীত। এভাবে উত্তরাখণ্ড লোক সঙ্গীত হল ওখানকার জনগণের সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকারের এবং হিমালয় পর্বতে তারা যে জীবন যাপন করে তারই প্রতিফলন। উত্তরাখণ্ডী লোক সঙ্গীতের যন্ত্রানুষঙ্গগুলো হল: ঢোল, দামৌন, তুরি, রনসিংহা, ঢোলকি, দাউর, থালি, ভাঙ্কোরা এবং মসক বাজা। তবলা এবং হারমোনিয়ামও অল্পবিস্তর ব্যবহৃত হয়। সঙ্গীতের প্রধান ভাষাগুলো হল কুমায়নি এবং গাড়োয়ালি।
ডান্ডিয়া একটা নৃত্য-প্রধান লোক সঙ্গীত যেটা গ্রহণ করা হয়েছিল বিশ্বজোড়া পপ সঙ্গীতের জন্যে, পশ্চিম ভারতে জনপ্রিয়, বিশেষভাবে নবরাত্রি চলাকালে। বর্তমান সঙ্গীত ধারা ঐতিহ্যগত সঙ্গীত অনুষঙ্গক্রিয়া থেকে ডান্ডিয়া লোক সঙ্গীতে উপলব্ধ, যাতে বলা হয় সেম সেম।
পাণ্ডবনি একটা লোক সঙ্গীত গায়কীর ধারা, ভীমকে নায়ক হিসেবে রেখে সাংগীতিক অনুষঙ্গক্রিয়ার সঙ্গে অতীতের মহাকাব্য মহাভারত থেকে নেওয়া। ছত্তিশগড় রাজ্য এবং ওডিশা এবং অন্ধ্র প্রদেশের প্রতিবেশী উপজাতীয় অঞ্চলগুলোতে এই ধারার লোক নাটক খুব জনপ্রিয়।
রাজস্থানি সংগীত, লঙ্গাস, সাপেরা, ভোপা, যোগি এবং মঙ্গাইনার[1] ইত্যাদি সাংগীতিক জাতগুলো থেকে একটা বিচ্ছিন্ন সঙ্গীতের সংগ্রহ।
বাংলার বাউল বিশ্বখ্যাত। এই ধরনের সঙ্গীতজ্ঞরা আঠারো, উনিশ, বিশ শতক এবং এই শতকেও ভারত তথা বিদেশে খমক, একতারা এবং দোতারা নিয়ে বাউল লোক সঙ্গীত গেয়ে থাকেন। 'বাউল' শব্দটা এসেছে সংস্কৃত বতুল থেকে, যার অর্থ পবিত্রতা অসাধরণত্বে উৎসাহ দেয়। বাউলরা হলেন অতিন্দ্রিয় চারণ কবির একটা গোষ্ঠী। এটা বলা হয়, তারা ভীষণভাবে কর্তাভজাদের হিন্দু তান্ত্রিক অংশ তথা সুফি অংশের দ্বারা প্রভাবান্বিত। বাউলরা সফর করেন তাদের অন্তরের আদর্শকে খোঁজার জন্যে, যাকে বলা হয় মনের মানুষ (হৃদয়ের মানুষ)। বিশ্ববিখ্যাত বাউল সঙ্গীত শিল্পী হলেন পূর্ণ দাস বাউল।
এই ধরনের সঙ্গীত প্রধানত আগেকার 'বঙ্গদেশ' অথবা এখনকার বাংলাদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গের মাঝিমাল্লা ও জেলেরা গেয়ে থাকে। আসল ভাটিয়ালি শব্দটা নিয়ে অনেক মত আছে। তার মধ্যে খুব জনপ্রিয়গুলো হল:
জগদ্বিখ্যাত ভাটিয়ালি সঙ্গীত শিল্পীদের একজন হলেন নির্মলেন্দু চৌধুরী।
গর্বা ('গান') হিন্দু দেবীদের দেবতার সম্মানে নবরাত্রির সময় গাওয়া হয়। শিল্পীরা কৃষ্ণ, রাম, হনুমান এবং অন্যান্য দেবদেবীর সম্মানে গান গেয়ে থাকেন।
এটা একটা গোষ্ঠীবদ্ধ নাচ, যেটা 'দোলু' নাম থেকে এসেছে - পার্কাসন যন্ত্রানুষঙ্গ এই নাচে ব্যবহার করা হয়। উত্তর কর্ণাটক অঞ্চলের কুরুবা সম্প্রদায়ের পুরুষ লোক সঙ্গীত শিল্পীদের দ্বারা প্রদর্শিত হয়। গোষ্ঠীতে ১৬ জন নৃত্যশিল্পী থাকে যারা নাচের সময় ড্রাম কাঁধে নিয়ে ছন্দে বাজায়। নেতা করতাল নিয়ে মাঝখানে থেকে নির্দেশ দেয় এবং বাজনা নিয়ন্ত্রণ করে। মন্থর এবং দ্রুত ছন্দ অদলবদল হয় এবং গোষ্ঠী বিভিন্ন ধাঁচের সঙ্গীত উদ্ভাবন করে।
কোলাটা / কোলাট্টাম হল অন্ধ্র প্রদেশ, কর্ণাটক এবং তামিলনাড়ু রাজ্যগুলোর একটা ঐতিহ্যপূর্ণ লোক নৃত্য।[2] উত্তর ভারতের সমগোত্রীয় ডান্ডিয়া রসের সঙ্গে এর মিল আছে, এটা রঙিন কাঠি নিয়ে প্রদর্শিত হয় এবং সাধারণত মেয়ে-পুরুষ একযোগে নাচে অংশ নিয়ে থাকে।
সুফি ফোক রকে আছে আধুনিক চড়া (উচ্চগ্রাম) উপাদান এবং সুফি কবিতার ঐতিহ্যপূর্ণ লোক সঙ্গীত। যখন পাকিস্তানের জুনুনের মতো ব্যান্ডগুলোর অগ্রগামিতার দ্বারা এটা বিশেষ করে উত্তর ভারতে জনপ্রিয় হয়। ২০০৫ খ্রিষ্টাব্দে রব্বি শের্গিল একটা সুফি রক গান বের করছিলেন যার নাম 'বুল্লা কি জানা', যা কিনা ভারত এবং পাকিস্তানে শীর্ষ-তালিকাভুক্ত হয়েছিল।
বীরাগেস কর্ণাটক রাজ্যের আগেকার একটা লোক নৃত্য থেকে এসেছে। এটা হিন্দু পৌরাণিক কাহিনি থেকে নেওয়া খুবই নিবিড় কর্মশক্তি-ক্ষয়কারি নাচের গতির একটা প্রাণশক্তিসম্পন্ন নাচ। বীরাগেস মহিশুরের দশেরা মিছিলের নাচ প্রদর্শনের মধ্যে একটা বিশেষ নাচ।
নাতুপুরা পাতু হল তামিল লোক সঙ্গীত। এর মধ্যে আছে গ্রামাতিসাই (গ্রাম্য লোক সঙ্গীত) এবং গানা (নগর লোক সঙ্গীত)। এটা রাজস্থানেও গাওয়া হয়।
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.