Loading AI tools
সংস্কৃত মহাকাব্য রামায়ণের একটি চরিত্র উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
বিভীষণ (আইএএসটি: Vibhīṣaṇa) ছিলেন রামায়ণে বর্ণিত রাবণের ভ্রাতা এবং লঙ্কার সিংহাসনে রাবণের উত্তরসূরী৷[1] রাক্ষস হওয়া সত্ত্বেও বিভীষণ ছিলেন মহৎ এবং চরিত্রবান পুরুষ, তিনি তার রাবণের দ্বারা সীতাহরণের কাজকে ঘৃণ্য চোখে দেখতেন এবং তিনি রাবণের কাছে বারবার সীতাকে তার স্বামী রামের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার অনুরোধ করেন, যদিও তার এই অনুরোধে রাবণ বিশেষ কর্ণপাত করেননি৷ রাবণ বিভীষণের কথা না শুনলে মা নিকষার পরামর্শে তিনি লঙ্কা ও তার ভ্রাতাকে ত্যাগ করে রামের পক্ষে যোগ দেন৷ রাম-রাবণের যুদ্ধে রাম রাবণকে পরাজিত করলে বিভীষণ লঙ্কার রাজা উপাধি পান এবং রাম অযোধ্যায় ফিরে আসেন৷
বিভীষণ | |
---|---|
লঙ্কার রাজা | |
রাজত্ব | পুরাণ মতে, তার জ্যেষ্ঠভ্রাতা রাবণের মৃত্যুর পর যুধিষ্ঠিরের রাজত্বকাল অবধি তিনি লঙ্কা শাসন করেন৷ |
পূর্বসূরি | রাবণ |
জন্ম | লঙ্কা |
দাম্পত্য সঙ্গী | সরমা |
বংশধর | ত্রিজটা |
প্রাসাদ | পুলস্ত্য |
পিতা | বিশ্রবা |
মাতা | নিকষা |
ইতিহাসের বেশ কিছু পর্বে সিংহলিরা বিভীষণকে তাদের চারজন অভিভাবক (চতুর্মহারাজা) ও রক্ষাকর্তার মধ্যে একজন বলে গণ্য করে থাকেন৷[2] কোট্টে সাম্রাজ্যকালে এই চতুর্মহারাজ বিশ্বাসটি প্রকট হয়ে ওঠে৷ লেখক বিক্রমসিংহ আদিগরের "রাবণ কথা" অনুসারে, রাম রাবণকে হত্যা করার পর বিভীষণ যক্ষদের রাজধানী অলকাপুরী থেকে কেলণিয়-তে (বর্তমানে কলম্বোর নিকট অবস্থিত) স্থানান্তর করেন৷[3] খ্রিস্টীয় পঞ্চদশ শতাব্দীতে তোটগমুবে শ্রী রাহুল থেরা লিখিত কবিতা স্যললিহিনী সন্দেশয় অনুসারে, বিভীষণ এই খবর চরদের দ্বারা সিংহলী পার্বত্য ময়নার পায়ে বাঁধা চিঠির মাধ্যমে কেলণিয় তে পাঠানোর আদেশ দেন৷ খ্রিষ্টীয় ষোড়শ শতাব্দীর শেষভাগে তিনি পত্তিনি দেবীর দ্বারা দেবত্ব লাভ করেন৷ ঐসময়ে তিনি কেলণিয় অঞ্চলে অগণিত ভক্তের দ্বারা পূজিত হতে থাকেন৷[4]
পুরাণ মতে বিভীষণ ছিলের সাত্ত্বিকগুণ সম্পন্ন ও শুদ্ধসাত্ত্বিক হৃদয়বান পুরুষ৷ ছোটোবেলা থেকে তিনি প্রায় সময়েই ঈশ্বর সাধনা ও দেবতার ধ্যান করতে পছন্দ করতেন৷ ঘটনাক্রমে ব্রহ্মা তার প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে তাকে বরদান করতে চাইলে বিভীষণ দেবতার চরণকমলে নিজের মনোনিবেশ করতে পারার শক্তি চান৷ এবং এই একাগ্র মনঃসংযোগের দ্বারাই তিনি তিনি শ্রীবিষ্ণুর দর্শন চান ও তার চরণস্পর্শ করতে চান বলে বর চান৷ তার এই ইচ্ছা খুব ভালোভাবেই পূর্ণ হয় এবং রামায়ণ মতে বিভীষণ তার সুখ ও আড়ম্বরপূর্ণ জীবন ছেড়ে বিষ্ণুর অবতার শ্রীরামের সাথে সাক্ষাৎকার করেন এবং দুরাচারী হত্যায় তাকে যথাসাধ্য সাহায্য ও সেবা করেন৷
বিভীষণ ছিলেন ঋষি বিশ্রবা ও নিকষার কনিষ্ঠ পুত্র৷ পুলস্ত্য মুনির উত্তরসূরী পৌলস্ত্য হিসাবে তিনি যোগ্য সাত্ত্বিকগুণের সম্পন্ন ছিলেন৷ তিনি লঙ্কার রাজা রাবণ ও নিদ্রার রাজা কুম্ভকর্ণের কনিষ্ঠ ভ্রাতা, তথা ধনদেবতা কুবের ছিলেন তার বৈমাত্রেয় ভ্রাতা৷ রক্ষকুলে রাক্ষসী মায়ের কোলে জন্ম হলেও তিনি তার পিতার মতো সতর্ক এবং ধার্মিক ছিলেন এবং নিজেকে ব্রাহ্মণ হিসাবেই নিজেকে গড়ে তোলেন৷
জ্যেষ্ঠভ্রাতা রাবণের থেকে বিপরীতগুণ সম্পন্ন হওয়ার কারণে তিনি রাবণের দ্বারা সীতাহরণের ঘটনা মেনে নিতে পারেননি৷ উপরন্তু তিনি রাবণকে এবিষয়ে বোঝানোর চেষ্টা করলে রাবণ তাকে অপমান করেন৷ ফলে তিনি মা নিকষার পরামর্শে লঙ্কা ত্যাগ করেন৷ পরে তিনি রামের সাথে সাক্ষাৎ করেন এবং তার সৈন্যগঠনে সাহায্য করে সীতা পুণরুদ্ধারের সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দেন৷ তিনি রামসনার কাছে রাবণের প্রতিরক্ষাবাহিনীর গুপ্ত তথ্য ফাঁস করেন ও রামকে এই ধর্মযুদ্ধ জয়ের আশ্বাস দেন৷ রাম বিভীষণের কথা মেনে নেন এবং রাবণ-বধের পর তাকে লঙ্কার সিংহাসনে বসানোর প্রতিশ্রুতি দেন৷
লঙ্কার রাম-রাবণের যুদ্ধে লঙ্কার গুপ্ত তথ্যের বিষয়ে বিভীষণের জ্ঞান রামের যুদ্ধ জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে৷ বিভীষণ নিঃসঙ্কোচে লঙ্কাপুরীর অনেক অন্তরালের তথ্য বিষয় রামের সামনে উন্মোচন করেছিলেন যেমন পৌলস্ত্য কুলমাতা নিকুম্ভিলা মন্দির ও যজ্ঞাগারের গুপ্ত রহস্য ফাঁস রামের যুদ্ধজয়ে অন্যতম কারণ ছিলো৷ রাম ও রাবণের মেঘের অন্তরালে যুদ্ধ চলাকালীন রাম রাবণকে চিহ্নিত করতে অক্ষম হয়ে পড়লে তিনিই রাবণের মৃত্যুর পথ তাকে জ্ঞাত করান৷ তিনি রামকে জানান যে রাবণ তার উদরে সঞ্চিত করে রেখেছেন, ফলে সেই সুগন্ধীকে শুষ্ক করা অত্যাবশ্যক৷ অন্তিমে রাম রাবণকে বধ করতে সক্ষম হন৷ আবার আধুনিক পাঠকবর্গ ভারতীয় মহাকাব্যগুলির সুচরিত্র ও দূরাচারী বিশ্লেষণ করার সময়ে রামায়ণে চিত্রায়িত চরিত্রগুলির বিশ্লেষণে ধর্ম বিষয়ক দ্যোতক অর্থ খুঁজে পান৷ মহাকাব্যটি স্পষ্টভাবে উল্লেখ করে যে কুম্ভকর্ণ বা বিভীষণ কেউই ধর্মের পথ ছেড়ে স্বেচ্ছায় অধর্ম করতে চাননি কিন্তু তাদের কাছে উভয়সঙ্কট নিষ্পত্তির দ্বিতীয় কোনো পথ না থাকায় তারা নিজেদের ধর্মমতো পক্ষ চয়ন করেন৷ রামায়ণ শিক্ষা দেয় যে, কুম্ভকর্ণ তার রাবণকে পরামর্শ দেওয়ার পর সে তা মানতে অপ্রস্তুত থাকলে তিনি(কুম্ভকর্ণ) ভ্রাতার প্রতি আনুগত্য দেখিয়ে তার পক্ষ নেয়, আবার বিভীষণের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটলে তিনি(বিভীষণ) তার বিরোধ করেন৷
প্রতীকীভাবে, রামায়ণে বিভীষণ চরিত্রটি ছিলো শ্রীরামের প্রতি আত্মসমর্পণকৃত তার এক ভক্তের৷ চরিত্রটি বিশ্লেষণে দেখা যায় যে, ঈশ্বর তার ভক্তের কুল গোত্র বা জন্মস্থান দেখে ভেদাভেদ করেন না৷ একই ধরনের নীতিকথা প্রহ্লাদ ও নরসিংহের শ্রুতিতেও লক্ষ্য করা যায়৷
রাবণ-বধের পর বিভীষণ লঙ্কার সিংহাসনে বসলে তিনি সম্পূর্ণভাবে দৈত্যসুলভ আচরণ এবং দৈত্যরীতি বিসর্জন দেন এবং সঠিক ধর্মের পথে চলা শুরু করেন৷ তার স্ত্রী ও লঙ্কার রাণী সরমা তাকে ধর্মের পথে চলতে সহধর্মিণীর ভূমিকা পালন করে৷ পরবর্তীকালে অনাল্তে নাম্নী এক কন্যাসন্তান জন্মায়৷
যুদ্ধ শেষে রাম যখন অযোধ্যার দিকে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হতে থাকেন, ঠিক তখনই তিনি নিজের আসল বিষ্ণুরূপে বিভীষণকে দর্শন দেন এবং পৃৃথিবীতে থেকে মানবসেবা করে তাদের সঠিক ধর্মপথের দিশা দেওয়ার দেশ করেন৷ এভাবে বিভীষণ দীর্ঘ অমরত্ব পান ও সপ্ত চিরঞ্জীবিদের মধ্যে একজন হয়ে ওঠেন৷ বিষ্ণুরূপে তিনি বিভীষণকে রামের জন্মগত সূর্যবংশের দেবতা শ্রীরঙ্গনাথের আরাধনা করতে বলেন৷
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.