শীর্ষ প্রশ্ন
সময়রেখা
চ্যাট
প্রসঙ্গ

লঙ্কা রাজ্য

রামায়ণ ও মহাভারতে উল্লেখিত রাবণের রাজ্য উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ

লঙ্কা রাজ্য
Remove ads
Remove ads

লঙ্কা ( /ˈlæŋkə/, হিন্দুস্তানি: [ˈləŋkaː] ) হলো হিন্দু মহাকাব্যে (রামায়ণ এবং মহাভারতের) কিংবদন্তি রাক্ষসরাজ রাবণের দ্বীপ দুর্গ-রাজধানীর নাম। দুর্গটি ত্রিকূট পর্বত নামে পরিচিত তিনটি পর্বতশৃঙ্গের মধ্যে একটি মালভূমিতে অবস্থিত ছিল। প্রাচীন লঙ্কাপুর শহরটি হনুমান দ্বারা পুড়িয়ে ফেলা হয়েছিল বলে জানা যায়। রাবণের ভাই বিভীষণের সাহায্যে রাম কর্তৃক রাবণকে বধ করা হয়েছিল, তারপর বিভীষণ লঙ্কাপুরের রাজা হয়েছিলেন। পাণ্ডবদের আমলে তাঁর বংশধররা তখনও রাজ্য শাসন করছিলেন বলে কথিত আছে। হিন্দু মহাকাব্য মহাভারত অনুসারে, পঞ্চম পাণ্ডব সহদেব যুধিষ্ঠিরের রাজসূয় যজ্ঞের জন্য তার দক্ষিণ সামরিক অভিযানের সময় এই রাজ্যে এসেছিলেন। বলা হয়, রাবণের প্রাসাদগুলি চার দাঁতের হাতি দ্বারা রক্ষিত ছিল। [] ভাগবত পুরাণ অনুসারে, সগরের ষাট হাজার পুত্রের দ্বারা ভূমি খননের ফলে আটটি উপদ্বীপের সৃষ্টি হয়েছিল, যার মধ্যে লঙ্কা অন্যতম। []

Thumb
রাক্ষসরাজ রাবণের স্বর্ণলঙ্কা
Remove ads

রামায়ণ

সারাংশ
প্রসঙ্গ

লঙ্কার শাসক

রামায়ণ এবং মহাভারত অনুসারে, লঙ্কা মূলত সুমালি নামক রাক্ষস দ্বারা শাসিত হয়েছিল। কুবের লঙ্কা নগরী দখল করে যক্ষ রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন এবং তার রাজধানী রাক্ষস দ্বারা রক্ষিত হয়। ঋষি বিশ্রবা এবং সুমালীর কন্যা কৈকসীর পুত্র রাবণ, যে ছিল কুবেরের সৎভাই, কুবেরের সাথে যুদ্ধ করে তার কাছ থেকে লঙ্কা কেড়ে নেয়। রাবণ রাক্ষস রাজ্যের রাজা হিসাবে লঙ্কা শাসন করেছিলেন। লঙ্কার যুদ্ধটি আঙ্কোর বাটের ১২শ শতাব্দীর খমের মন্দিরের একটি বিখ্যাত রিলিফে চিত্রিত হয়েছে।

Thumb
লঙ্কায় আগুন দেন হনুমান।

রাবণের মৃত্যুর পর তার ভাই বিভীষণ তার স্থলাভিষিক্ত হন।

রামায়ণ অনুসারে রাবণের "লঙ্কা" এর অবস্থান

বর্তমানে বিদ্যমান হিন্দু ধর্মগ্রন্থ এবং রামায়ণে উল্লেখিত লঙ্কাকে ( রাবণের লঙ্কা হিসাবে উল্লেখিত) ভারত মহাসাগরে অবস্থিত একটি বৃহৎ দ্বীপ-দেশ বলে মনে করা হয়। গবেষণা অনুসারে, রাবণের প্রাসাদটি সিগিরিয়ায় অবস্থিত ছিল যেটি অনুরাধাপুরের কশ্যপ প্রথম দ্বারা নির্মিত প্রাসাদ ছিল কারণ কিংবদন্তি বর্ণনা করে যে, লঙ্কা রাজ্যের রাজধানী মালভূমি এবং বনের মধ্যে অবস্থিত ছিল। কিছু পণ্ডিত দাবি করেছেন, রাবণের লঙ্কা অবশ্যই শ্রীলঙ্কা ছিল কারণ এটি ৫ম শতাব্দীর শ্রীলঙ্কার গ্রন্থ মহাবংশে বলা হয়েছে। [] যাইহোক, রামায়ণ স্পষ্টভাবে বর্ণনা করে যে, রাবণের লঙ্কা ভারতের দক্ষিণ সমুদ্রের তীর থেকে ১০০ যোজন (মোটামুটি ১২১৩ কি.মি বা ৭৫৩.৭২ মাইল) দূরত্বে অবস্থিত ছিল। [][]

কিছু পণ্ডিত এই গ্রন্থের বিষয়বস্তু ব্যাখ্যা করে বলেছেন, যেখানে ভারতের মূল-মধ্যরেখা বিষুব রেখা অতিক্রম করে সেখানে লঙ্কা অবস্থিত ছিল। [][] তাই এই দ্বীপটি বর্তমান শ্রীলঙ্কা থেকে ১৬০ কিমি (১০০ মা) কিলোমিটারেরও অধিক দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত। বাল্মীকির রামায়ণের সমস্ত বিদ্যমান সংস্করণগুলির মধ্যে সবচেয়ে মূলগ্রন্থটিও পশ্চিম ভারত মহাসাগরে রাবণের লঙ্কার অবস্থানের ধারণা দেয়। এটি ইঙ্গিত দেয় যে লঙ্কা ভারত মহাসাগরের পশ্চিম অংশে বৃহৎ দ্বীপ-জাতি, নিমজ্জিত পর্বতমালা এবং ডুবে যাওয়া মালভূমির মধ্যে ছিল। [][]

১৯শ শতাব্দী থেকে বেশ কিছু পণ্ডিতদের দ্বারা বহু জল্পনা-কল্পনা করা হয়েছে যে, রাবণের লঙ্কা ভারত মহাসাগরে নিমজ্জিত হওয়ার পূর্বে যেখানে মালদ্বীপ একসময় একটি উঁচু পর্বত হিসাবে দাঁড়িয়েছিল তার চারপাশে ভারত মহাসাগরে থাকতে পারে। [১০][১১][১২][১৩] ভারত ও মালদ্বীপের আশেপাশে মিনিকয় দ্বীপের উপস্থিতির মাধ্যমে এই জল্পনাকে সমর্থন করা হয়, যার প্রাচীন নাম মিনিকা বা মৈনাক (লঙ্কায় যাওয়ার পথে হনুমানের দেখা পর্বত), এর অর্থ হল "নরখাদক", এটি সম্ভবত সুরসার একটি উল্লেখ, কারণ নিকোবরের নরখাদক এখানে প্রায়শই সাপের সাথে পাওয়া যেত। [১৪] সুমাত্রা এবং মাদাগাস্কারকেও একটি সম্ভাবনা হিসেবে প্রস্তাব করা হয়েছে। []

বর্ণনা

Thumb
হনুমান লঙ্কা পোড়া দেখছে, ভাওয়ানরাও শ্রীনিবাসরাও পন্ত প্রতিনিধি, ১৯১৬

রাবণের লঙ্কা এবং এর রাজধানী লঙ্কাপুরীকে এমনভাবে বর্ণনা করা হয়েছে যা আধুনিক দিনের মানদণ্ডেও অলৌকিক বলে মনে হয়। রাবণের কেন্দ্রীয় প্রাসাদ কমপ্লেক্স (প্রধান দুর্গ) ছিল বেশ কয়েকটি স্থাপনার একটি বিশাল সংগ্রহ যার উচ্চতা এক যোজন ( ১৩ কিমি অথবা ৮ মা ) , দৈর্ঘ্য এক যোজন এবং প্রস্থ অর্ধেক যোজন ছিল। এই দ্বীপে ত্রিকুট পর্বত (ত্রিকোনমালাই-তামিল/ত্রিঙ্কোমেলে-ইংরেজি, যেখানে রাবণ শিবের জন্য মন্দির তৈরি করেছিলেন) নামে পরিচিত একটি বৃহৎ পর্বতশ্রেণী ছিল, এর উপরে অবস্থিত ছিল রাবণের রাজধানী লঙ্কা, যার কেন্দ্রে তার দুর্গ ছিল। [১৫][১৬][১৭]

Remove ads

মহাভারতে লঙ্কার উল্লেখ

সারাংশ
প্রসঙ্গ

মহাভারতে লঙ্কার অনেক উল্লেখ পাওয়া যায় ঋষি মার্কণ্ডেয় কর্তৃক রাজা যুধিষ্ঠিরের কাছে রামসীতার গল্পের বর্ণনায়, যে বর্ণনাটি রামায়ণের একটি অগ্রভাগহীন সংস্করণ। নিম্নলিখিত সারাংশের উল্লেখগুলি মহাভারত এবং নিম্নলিখিত গঠনকে মেনে চলে: (বই: বিভাগ)। মার্কন্ডেয়ের গল্পের বর্ণনা শুরু হয় মহাভারতের তৃতীয় বই (বর্ণপর্ব), অধ্যায় ২৭১ থেকে।

সহদেবের দক্ষিণে অভিযান

পাণ্ডুর পুত্র সহদেব পঞ্জয়ন্তী নগর, পাষণ্ডদের দেশ এবং কর্ণাটকদের কেবল তাঁর দূতদের দ্বারা জয় করেন তথা তাদের থেকে কর সংগ্রহ করেন। পরে পাণ্ড্য, দ্রাবিড়, উড্রকেরল, অন্ধ্র, তালবন, কলিঙ্গ, উষ্ট্র, কর্ণিক, রমণীয়া আটবি পুরী ও জবনপুর দূত দ্বারা নিজের অধীন করে কর সংগ্রহ করলেন।। এবং, তিনি সমুদ্রতীরে পৌঁছলেন, তারপরে পুলস্ত্যের নাতি এবং লঙ্কার শাসক বিশিষ্ট বিভীষণের কাছে মহান আশ্বাসের বার্তাবাহকদের প্রেরণ করেছেন (2:30)।

তারপর মাদ্রীর পুত্র সমুদ্রের কচ্ছদেশে অবস্থান করে পুলস্ত্যের পৌত্র বিভীষণের কাছে দূত পাঠালেন। বিভীষণ প্রীতিপূর্বক তার শাসন শিরোধার্য করে বিবিধ রত্ন, অগুরু চন্দন কাঠ, দিভ্য আভরণ, মহার্হ বসন মহামূল্য মণি প্রেরণ করলেন। রাজন! এভাবে ধীমান সহদেব বল, সান্ত্ববাদপ্রয়োগ ও বিজয়দ্বারা পার্থিবদের করদ করে প্রত্যাবর্তন করলেন।

মহাভারত, সভাপর্ব

যুধিষ্ঠিরের রাজসূয় যজ্ঞে লঙ্কার রাজার উপস্থিতি

লঙ্কার রাজা জ্যেষ্ঠ পাণ্ডব যুধিষ্ঠিরের রাজসূয় যজ্ঞে উপস্থিত রাজাদের সম্মেলনে উপস্থিত হিসাবে তালিকাভুক্ত।

বঙ্গ, অঙ্গ, পৌণ্ড্র, ওড্র, চোল, দ্রাবিড়, চের, পাণ্ড্য, মুশিক, অন্ধক, সমুদ্র তীরের বহু দ্বীপ ও দেশের প্রধান, সিংহলদের শাসক, বর্বর ম্লেচ্ছ, লঙ্কার আদিবাসী, পশ্চিমের সমস্ত শত শত রাজা, সমুদ্র উপকূলের সমস্ত প্রধান, পহ্লব, দর্দ, কিরাতের বিভিন্ন গোত্র , যবন, শকগণ, হারহুণ, চিন, তুখার, সিন্ধব, জগুদাস, রামঠ, মুন্ডা, স্ত্রী রাজ্যের বাসিন্দা, তঙ্গন, কেকয়, মালব এবং কাশ্মীরের বাসিন্দারা ... (3:51)।

অন্যান্য খণ্ডিত উল্লেখ

  • যোদ্ধা, ঘোড়া, হাতি এবং রথ সহ লঙ্কা (3:149)।
  • দুর্গ, প্রাচীর এবং প্রবেশদ্বার সমেত লঙ্কা (3:147)।
  • লঙ্কার দেয়াল (3:282)।
  • চার দাঁতের হাতি (4.27.12)
Remove ads

অন্যান্য কিংবদন্তি

ভবিষ্য পুরাণের প্রতিসর্গ পর্বে বরাহমিহিরাচার্যের পৌরাণিক কিংবদন্তিতে লঙ্কা এবং তার রাজা বিভীষণের উল্লেখ আছে। কিংবদন্তিটি হলো:

পূষা নামক সূর্য সেখানে উপস্থিত হয়ে দেবগণকে মধুর বাণী দ্বারা বললেন— উজ্জয়িনী পুরীতে রুদ্রপশুর গৃহে উৎপন্ন হয়ে আমি জ্যোতিষশাস্ত্র প্রবর্তক এবং মিহিরাচার্য নামে খ্যাত হবো। এই বলে ভগবান পূষা সেই ব্রাহ্মণের ঘরে বালকরূপে জন্মগ্রহণ করলেন। মূল গণ্ডান্ত নক্ষত্র এবং শুভদায়ক অভিজিৎ যোগে উৎপন্ন হওয়ার কারণে সেই বালককে তার মাতা-পিতা কাঠের সিন্দুকে আবদ্ধ করে অর্ধরাত্রির সময় নদীতে নিক্ষেপ করল। নদীপথে সেই শিশু সমুদ্রে পৌঁছে গেল, সেখানে রাক্ষসীদের দ্বারা সুরক্ষিত হয়ে সমুদ্রপথে লঙ্কা পৌঁছে গেল। সেখানে বাস করে সে জ্যোতিষশাস্ত্রের বিশেষাধ্যয়ন করল। এর ফলে তার জাতক ফলিত ও মূকপ্রশ্ন আদিতে বিশেষ নিপুণতা প্রাপ্তি হল। তারপর রাক্ষসেন্দ্র বিভীষণের কাছে গিয়ে সে বলল, ভক্তরাজ এবং হরিপ্রিয় বিভীষণ! তোমায় নমস্কার। রাক্ষসীদের দ্বারা আমার অপহরণ হয়েছে তাই আমি আপনার শরণে এসেছি। এই কথা শুনে রাজা সেই বৈষ্ণব ব্রাহ্মণশ্রেষ্ঠকে তার জন্মভূমিতে পৌঁছিয়ে দিলেন। সেখানে পৌঁছে তিনি ম্লেচ্ছ দ্বারা বিনষ্ট সেই সনাতন এবং তিন ভাগে বিভক্ত বেদাঙ্গ জ্যোতিষশাস্ত্র পুনরায় উদ্ধার করলেন।

ভবিষ্য পুরাণ, প্রতিসর্গ পর্ব, চতুর্থ খণ্ড, অধ্যায় ৮ [১৮]

তথ্যসূত্র

Loading content...

বহিঃসংযোগ

Loading content...
Loading related searches...

Wikiwand - on

Seamless Wikipedia browsing. On steroids.

Remove ads