বাংলার নবজাগরণ
অবিভক্ত ভারতবর্ষের বাংলা অঞ্চলে ঊনবিংশ ও বিংশ শতকে সমাজ সংস্কার আন্দোলন / From Wikipedia, the free encyclopedia
বাংলার নবজাগরণ , যাকে বাঙালি রেনেসাঁও বলা হয়, ব্রিটিশ রাজের বঙ্গীয় অঞ্চলের একটি উল্লেখযোগ্য সাংস্কৃতিক, সামাজিক, বুদ্ধিবৃত্তিক এবং শৈল্পিক আন্দোলন ছিল, যা ১৮ শতকের শেষ থেকে ২০ শতকের প্রথম দিকে বিস্তৃত হয়। এর শিকড়গুলি প্রায়শই ঐতিহাসিক ঘটনাগুলির মধ্যে খুঁজে পাওয়া যায় যেমন ১৭৫৭ সালের পলাশীর যুদ্ধে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বিজয় এবং সংস্কারক রামমোহন রায়র অগ্রণী কাজ, যাকে ব্যাপকভাবে "বাংলার নবজাগরণ এর পিতা" হিসেবে গণ্য করা হয়।
প্রায় দুই শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে, বাংলার নবজাগরণ বাঙালি সমাজে গভীর পরিবর্তন এনেছে, যা ভারতীয় উপমহাদেশে উপনিবেশবাদী ও জাতীয়তাবাদী অনুভূতির উত্থানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এর দার্শনিক ভিত্তিগুলি উদারতাবাদ এবং আধুনিকতার একটি স্বতন্ত্র সংমিশ্রণ দ্বারা গঠিত হয়েছে। যদিও এই আন্দোলনের অগ্রগামী এবং কৃতিত্বগুলি ১৯তম এবং ২০তম শতক জুড়ে অতি সম্মানিতভাবে উদযাপন করা হয়েছিল, ১৯৭০ দশকে এর ঔপনিবেশিক উত্সকে কেন্দ্র করে একটি আরও সমালোচনামূলক দৃষ্টিভঙ্গি আবির্ভূত হয়েছে।
প্রাথমিকভাবে বাঙালি হিন্দুদের নেতৃত্ব ছিল, যারা ঔপনিবেশিক বাংলায় বৃহত্তর সামাজিক ও অর্থনৈতিক সুযোগ-সুবিধা ভোগ করেছল। বাংলার নবজাগরণ সমাজ সংস্কারকরাজা রামমোহন রায়, প্রখ্যাত লেখকরবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং বিশিষ্ট পদার্থবিদ সত্যেন্দ্র নাথ বসুর মতো প্রভাবশালী ব্যক্তিত্বের আবির্ভাব দেখা দিয়েছিল। উল্লেখযোগ্য বাঙালি মুসলিম অবদানকারীদের মধ্যে ছিলেন সোহরাওয়ার্দী পরিবারের সদস্যবৃন্দ, কবি ও সঙ্গীতজ্ঞ কাজী নজরুল ইসলাম, লেখক রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন এবং মীর মশাররফ হোসেন। এ কথিত নবজাগরণে কেবলমাত্র বাংলার হিন্দুসমাজের উঁচুস্তরের সামান্য অংশ তাৎক্ষণিকভাবে প্রভাবিত হলেও শেষাবধি মুসলিম সমাজ (অনেকটাই অংশত ) ও অন্য সমাজের মাঝেও প্রসার লাভ করে। সেই শতকের শেষপাদে নবজাগরণ উপমহাদেশের অন্যসব অংশেও ছড়িয়ে যায়।[1][2]
অশোক মিত্র বলেন, অনেকে ভুলবশত এ জাগরণকে রেনেসাঁস হিসেবে আখ্যায়িত করেন। তিনি বলেন, এর ফলে ভারতে শিল্প বাণিজ্যের কোন বিকাশ ঘটেনি, যা রেনেসাঁসের ফলে হয়েছিল। এমনকি এর ধারক এবং বাহকেরা ছিলেন সবাই ব্রিটিশ কাঠামোয় লালিত। এর স্রষ্টারা ব্রিটিশ শাসনকে উপনিবেশতার বদলে প্রগতির সমর্থক মনে করতেন। এই শহরকেন্দ্রিক নবজাগরণের সাথে গ্রামাঞ্চলের কৃষক সমাজের কোনো যোগাযোগ ছিল না।
এটি ছিল মূলত উচুঁ স্তরেরে হিন্দু সমাজের আন্দোলন; বাংলার মুসলিম সমাজের সাথে এর কোনো সম্পৃক্ততা ছিল না এবং এর ফলেই মাথা তুলে দাড়িয়েছিল হিন্দু জাতীয়তাবাদ, যা বাংলার মুসলমানদের দূরে সরিয়ে দেয়। এ নবজাগরণে শোষণের উৎস বা এর পরিণতি সম্পর্কে ম্পষ্ট কোনো ধারণা ছিল না। অনেক কৃষক আন্দোলন বা গণআন্দোলন এর সমর্থন লাভ করেনি। তিতুমীরের বিদ্রোহ বা সাঁওতাল বিদ্রোহ তাদের সমর্থন পায়নি।[3]