Loading AI tools
উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদ ১৯৪৭ থেকে ১৯৭১ সালের মধ্যে পূর্ব পাকিস্তানের প্রাদেশিক আইনসভা ছিল। দেশভাগের পর ১৯৪৭ থেকে ১৯৫৫ সালে প্রাদেশিক নাম পরিবর্তিত হওয়ার পূর্বে এটি পূর্ববঙ্গ আইনসভা নামে পরিচিত ছিল। আইনসভাটি ছিল বঙ্গীয় আইন পরিষদ ও বঙ্গীয় আইনসভার উত্তরসূরি, যেগুলো ১৯৪৭ সালে বঙ্গভঙ্গের সময় পূর্ববঙ্গ ও পশ্চিমবঙ্গের মধ্যে বিভক্ত হয়েছিল। এটি ছিল পাকিস্তানের বৃহত্তম প্রাদেশিক আইনসভা। ১৯৫৪ ও ১৯৭০ সালে মাত্র দুবার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
পূর্ববঙ্গ আইনসভা (১৯৪৭–১৯৫৫) পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদ (১৯৫৫–১৯৭১) | |
---|---|
ধরন | |
ধরন | |
ইতিহাস | |
শুরু | ১৯৪৭ |
বিলুপ্তি | ১৯৭১ |
পূর্বসূরী | বঙ্গীয় আইন পরিষদ বঙ্গীয় আইনসভা |
উত্তরসূরী | বাংলাদেশ গণপরিষদ |
আসন | ৩০০ (১৯৭১)[1] |
সভাস্থল | |
জগন্নাথ হল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, পূর্ব পাকিস্তান[2] |
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদ ও পূর্ব পাকিস্তানি প্রাদেশিক পরিষদে নির্বাচিত অধিকাংশ বাঙালি সদস্য বাংলাদেশের গণপরিষদের সদস্য হয়।
১৯৪৭ সালের ২০ জুন, বঙ্গীয় আইনসভার ১৪১ জন পূর্ব বাঙালি বিধায়ক বঙ্গভঙ্গের পক্ষে ভোট দেন, ভারত বিভক্ত হলে ১০৭ জন পাকিস্তানের গণপরিষদে যোগদানের পক্ষে সমর্থন দেন।[3] আসামের সিলেট অঞ্চল পূর্ববঙ্গে যোগদানের জন্য গণভোটে ভোট দেয়। পাকিস্তান অধিরাজ্য সৃষ্টির পর আসাম বিধানসভার সিলেটের বিধায়ক ছাড়াও সেই ১৪১ জন বিধায়ক পূর্ববঙ্গ আইনসভা গঠন করেন। মুসলিম লীগের স্যার খাজা নাজিমুদ্দিন প্রথম মুখ্যমন্ত্রী হন। ১৯৪৮ সালে নুরুল আমিন তার স্থলাভিষিক্ত হন। আইনসভার সমাবেশটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা হাইকোর্টের সন্নিকটে জগন্নাথ হলে[4] অনুষ্ঠিত হতো। এলাকাটি ১৯৫২ সালে বাংলা ভাষা আন্দোলনের কেন্দ্রস্থল ছিল।
১৯৫০ সালে পূর্ববঙ্গ রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইন পাশ হয়। এই আইনটি পূর্বের আইন ও প্রবিধানগুলো বাতিল করে যা ব্রিটিশ শাসনামলে স্থায়ী বন্দোবস্ত তৈরি করেছিল।
কৃষক প্রজা পার্টি ও আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে যুক্তফ্রন্ট জোট ১৯৫৪ সালে প্রাদেশিক সাধারণ নির্বাচনের সময় মুসলিম লীগকে পরাজিত করে। কৃষক ও শ্রমিক দলের নেতা একে ফজলুল হক ছয় সপ্তাহের জন্য মুখ্যমন্ত্রী হন। যুক্তফ্রন্ট প্রতিরক্ষা ও পররাষ্ট্রনীতি ছাড়া পূর্ববঙ্গে সম্পূর্ণ স্বায়ত্তশাসনের আহ্বান জানায়; ও রাষ্ট্র ভাষা হিসেবে বাংলার স্বীকৃতি দাবি করে।[5] পূর্ববঙ্গের আইনসভা বাংলা একাডেমি প্রতিষ্ঠার জন্য একটি আইন পাস করে। যাইহোক, হকের সরকার দুই মাসের মধ্যে বরখাস্ত হয়। হককে গৃহবন্দী করা হয়।[6] গভর্নর জেনারেলের শাসনকালের পর আবু হোসেন সরকার ১৯৫৫ সালে মুখ্যমন্ত্রী হন।
এক ইউনিট ব্যবস্থার ফলস্বরূপ ১৯৫৫ সালে আইনসভার নাম পরিবর্তন করে পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদ রাখা হয়। ১৯৫৬ সালের পাকিস্তানের সংবিধানের অধীনে পাকিস্তান একটি প্রজাতন্ত্রে পরিণত হয় যেখানে পূর্ব পাকিস্তানের জন্য ছাড়স্বরূপ বাংলাকে রাষ্ট্র ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।
১৯৫৭ সালে পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদে পূর্ণ স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে একটি সর্বসম্মত প্রস্তাব গৃহীত হয়।[7] আতাউর রহমান খান ১৯৫৬ সালে মুখ্যমন্ত্রী হন।
১৯৫৮ সালে আইনসভায় রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংঘর্ষ হয়, যার ফলে ডেপুটি স্পিকার শাহেদ আলী পাটোয়ারী আহত হন। পরে পাটোয়ারীর মৃত্যু হয়। ১৯৫৮ সালের ৭ অক্টোবর সামরিক আইন জারি করার জন্য রাষ্ট্রপতি ইস্কান্দার মির্জা এই সংঘর্ষকে একটি অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করেছিলেন।[8][9] সেনাপ্রধান আইয়ুব খান প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক নিযুক্ত হন। খান পরে মির্জার স্থলাভিষিক্ত হয়ে রাষ্ট্রপতির পদ গ্রহণ করেন। পূর্ব পাকিস্তান সহ সমস্ত প্রাদেশিক পরিষদ ভেঙে দেওয়া হয়। গ্রেফতার করা হয় অসংখ্য রাজনৈতিক নেতা ও সাংবাদিককে। নির্বাচিত সংস্থার অযোগ্যতা আদেশ ৭৫ জন রাজনীতিবিদকে আট বছরের জন্য (১৯৬৬ সাল পর্যন্ত) সরকারি দপ্তরে থাকতে বাধা দেয়।[10]
১৯৬২ সালের পাকিস্তানের সংবিধান সংসদীয় ব্যবস্থা বিলুপ্ত করে এবং যথাক্রমে কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক স্তরে রাষ্ট্রপতিশাসিত ও শাসকশাসিত ব্যবস্থা প্রবর্তন করে। এই ব্যবস্থায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্যটিকে "মৌলিক গণতন্ত্র" বলা হয়েছিল, যেখানে ইলেক্টোরাল কলেজগুলো পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি এবং পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের গভর্নরদের নির্বাচন করার জন্য দায়ী থাকবে।
১৯৬২ সালে ঢাকাকে পাকিস্তানের আইনসভার রাজধানী ঘোষণা করা হয়।[11] ১৯৬০ এর দশকে পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদ তেজগাঁওয়ের সংসদ ভবনে ছিল। পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদ পর্যায়ক্রমে একই ভবনে আহবান করে। ভবনটি এখন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়।
১৯৬৬ সালে আওয়ামী লীগের ছয় দফা কেন্দ্রীয় সংসদীয় গণতন্ত্র দাবি করে।
১৯৬৯ সালে রাষ্ট্রপতি আইয়ুব খান সেনাপ্রধান ইয়াহিয়া খান কর্তৃক ক্ষমতাচ্যুত হন। ১৯৬৯ সালের পূর্ব পাকিস্তানের অভ্যুত্থান রাষ্ট্রপতি আইয়ুব খানের উৎখাতে ভূমিকা রাখে। নতুন শাসক ইয়াহিয়া খান ১৯৭০ সালে সার্বজনীন ভোটাধিকারের (পাকিস্তানের ইতিহাসে প্রথম) উপর ভিত্তি করে সাধারণ নির্বাচনের আয়োজন করেন, যেখানে আওয়ামী লীগ পূর্ব পাকিস্তানের প্রাদেশিক পরিষদের ৩০০টি আসনের মধ্যে ২৮৮টি আসনে জয়লাভ করে।[12] ক্ষমতা হস্তান্তরে পাকিস্তানি সামরিক জান্তার অস্বীকৃতির ফলে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হয়।
২৫ মার্চ ১৯৭১ সালে শুরু হওয়া পূর্ব পাকিস্তানে পাকিস্তানি সামরিক দমন-পীড়নের পরে পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের অধিকাংশ সদস্য এবং পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের বাঙালি সদস্যরা ১৭ এপ্রিল ১৯৭১ তারিখে মেহেরপুরের বৈদোনাথতলায় এক সমাবেশ করেন যেখানে তারা বাংলাদেশের ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করেন। ২৬ মার্চ স্বাধীনতা ঘোষণা করা হয় ও ২৭ মার্চ পুনরায় সম্প্রচার করা হয়।
পাকিস্তান সৃষ্টির পর পূর্ববঙ্গে ১৯৫৪ সালের নির্বাচন ছিল প্রথম নির্বাচন। মুসলিম নির্বাচকমণ্ডলীর জন্য ২২৮টি, সাধারণ নির্বাচকমণ্ডলীর জন্য ৩০টি, তফসিলি জাতি নির্বাচকমণ্ডলীর জন্য ৩৬টি, পাকিস্তান খ্রিস্টান নির্বাচকমণ্ডলীর জন্য ১টি, মহিলা নির্বাচকমণ্ডলীর জন্য ১২টি ও ১টি মহিলা নির্বাচকমণ্ডলীর জন্য বৌদ্ধ নির্বাচকমণ্ডলীর ১টি সহ সংরক্ষিত আসনের ভিত্তিতে এটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
আওয়ামী লীগ | কৃষক শ্রমিক পার্টি | নিজাম-ই-ইসলাম | গণতন্ত্রী পার্টি | খেলাফত-ই-রব্বানী | মুসলিম লীগ | পাকিস্তান জাতীয় কংগ্রেস | সংখ্যালঘু যুক্তফ্রন্ট | তফসিলি জাতি ফেডারেশন | পাকিস্তানের কমিউনিস্ট পার্টি | খ্রিস্টান | বৌদ্ধ | স্বাধীন জাতি (হিন্দু) | স্বতন্ত্র |
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
১৪৩ | ৪৮ | ১৯ | ১৩ | ১ | ১০ | ২৪ | ১০ | ২৭ | ৪ | ২ | ১ | ১ | ৩ |
আওয়ামী লীগ একক বৃহত্তম দল হিসেবে আবির্ভূত হয়। যাইহোক, জনগণের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে যুক্তফ্রন্ট বিধানীয় পার্টি কৃষক শ্রমিক পার্টির নেতা এ কে ফজলুল হক, বাংলার প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীকে সংসদের নেতা নির্বাচিত করে। সরকার গঠনের জন্য ৩ এপ্রিল ১৯৫৪ সালে গভর্নর হককে আমন্ত্রণ জানান। এই নির্বাচন পূর্ববঙ্গের রাজনীতিতে মুসলিম লীগের আধিপত্যের অবসান ঘটায়।[13] এটি স্থানীয় মধ্যবিত্ত শ্রেণীর বিধায়কদের একটি তরুণ প্রজন্মের সূচনা করে।[14] কিন্তু পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব ও আমলাতন্ত্রের ওপর এই রায়ের তেমন কোনো প্রভাব পড়েনি।[13]
১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচন ও প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনে পৃথক নির্বাচকমণ্ডলীর ঐতিহ্যকে ভেঙ্গে দেয় এবং সর্বজনীন প্রাপ্তবয়স্ক ভোটাধিকারের ভিত্তিতে সংগঠিত হয়। ফলাফল নিম্নলিখিত দেওয়া হলো।[15]
আওয়ামী লীগ | পাকিস্তান ডেমোক্রেটিক পার্টি | ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি | জামায়াতে ইসলামী | অন্যান্য | স্বতন্ত্র |
---|---|---|---|---|---|
২৮৮ | ২ | ১ | ১ | ১ | ৭ |
পূর্ব পাকিস্তানে পাকিস্তানি সামরিক দমন-পীড়নের কারণে নবনির্বাচিত পরিষদের অধিবেশন হতে পারেনি। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণাটি তার বেশিরভাগ সদস্য দ্বারা স্বাক্ষরিত হয়েছিল, যা পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের বাঙালি সদস্যদের পাশাপাশি পরিষদকে বাংলাদেশের গণপরিষদের একটি অংশে রূপান্তরিত করেছিল।
বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রীদের দ্বারা মোট পাঁচটি মন্ত্রণালয় (সংসদীয় সরকার) গঠিত হয়েছিল।
ক্র | নাম | ছবি | মেয়াদ | পার্টি | গভর্নর | গভর্নর জেনারেল/রাষ্ট্রপতি |
---|---|---|---|---|---|---|
১ | খাজা নাজিমুদ্দিন | ১৫ আগস্ট ১৯৪৭ - ১৪ সেপ্টেম্বর ১৯৪৮ | মুসলিম লীগ | স্যার ফ্র্যাডেরিক চালমার্স বোর্ন | মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ | |
২ | নুরুল আমিন | ১৪ সেপ্টেম্বর ১৯৪৮ - ৩ এপ্রিল ১৯৫৪ | মুসলিম লীগ | ফিরোজ খান নুন | খাজা নাজিমুদ্দিন মালিক গোলাম মুহাম্মদ | |
৩ | শেরে বাংলা একে ফজলুল হক | ৩ এপ্রিল ১৯৫৪ - ২৯ মে ১৯৫৪ | কৃষক শ্রমিক পার্টি | চৌধুরী খালিকুজ্জামান | মালিক গোলাম মুহাম্মদ | |
৪ | আবু হোসেন সরকার | ২০ জুন ১৯৫৫ - ৩০ আগস্ট ১৯৫৬ | কৃষক শ্রমিক পার্টি | ইস্কান্দার মির্জা মুহাম্মদ শাহাবউদ্দিন (ভারপ্রাপ্ত) |
মালিক গোলাম মুহাম্মদ ইস্কান্দার মির্জা | |
৫ | আতাউর রহমান খান | ১ সেপ্টেম্বর ১৯৫৬ - মার্চ ১৯৫৮ | আওয়ামী লীগ | আমিরউদ্দীন আহমদ শেরে বাংলা একে ফজলুল হক |
ইস্কান্দার মির্জা |
নাম | নির্বাচিত |
---|---|
আবদুল করিম | ১৯৪৮ |
আবদুল হাকিম | ১৯৫৫ |
আবদুল হামিদ চৌধুরী | ১৯৬২ |
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.