নদিয়া জেলা বা নদীয়া জেলা (পূর্বনাম নবদ্বীপ জেলা) ভারতে অবস্থিত পশ্চিমবঙ্গের প্রেসিডেন্সি বিভাগের একটি জেলা। এই জেলার উত্তর-পশ্চিমে ও উত্তরে মুর্শিদাবাদ জেলা; পূর্ব সীমান্তে বাংলাদেশের খুলনা বিভাগ, দক্ষিণ-পূর্বে ও দক্ষিণে উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলা এবং পশ্চিমে হুগলি ও পূর্ব বর্ধমান জেলা অবস্থিত। এখানে শ্রীচৈতন্য ভক্তিবাদ প্রচার করেন। তিনি বলেন--তৃণাদপি সুনিচেন তরোরিব সহিষ্নুনা। অমানিনা মানদেন কীর্তনীয় সদা হরি।।
নদিয়া জেলা | |
---|---|
পশ্চিমবঙ্গের জেলা | |
পশ্চিমবঙ্গে নদিয়ার অবস্থান | |
দেশ | ভারত |
রাজ্য | পশ্চিমবঙ্গ |
প্রশাসনিক বিভাগ | প্রেসিডেন্সি বিভাগ |
সদরদপ্তর | কৃষ্ণনগর |
সরকার | |
• লোকসভা কেন্দ্র | ২টি |
• বিধানসভা আসন | ১৭টি |
আয়তন | |
• মোট | ৩,৯২৭ বর্গকিমি (১,৫১৬ বর্গমাইল) |
জনসংখ্যা (২০১১) | |
• মোট | ৫১,৬৮,৪৮৮ |
• জনঘনত্ব | ১,৩০০/বর্গকিমি (৩,৪০০/বর্গমাইল) |
• পৌর এলাকা | ৯,৭৯,৫১৯ |
জনতাত্ত্বিক | |
• সাক্ষরতা | ৭৫.৫৮ %[1] |
• লিঙ্গানুপাত | ৯৪৭ |
প্রধান মহাসড়ক | জাতীয় সড়ক ৩৪ |
ওয়েবসাইট | দাপ্তরিক ওয়েবসাইট |
নদিয়া একটি ঐতিহাসিক অঞ্চল। ১৭৮৭ সালে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির রাজত্বকালে জেলা হিসেবে নদিয়ার আত্মপ্রকাশ। সে সময় বর্তমান হুগলি ও উত্তর ২৪ পরগনা জেলার কিছু অংশ এই জেলার অন্তর্ভুক্ত ছিল। ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট সাময়িকভাবে এই জেলা পাকিস্তান রাষ্ট্রের অন্তর্ভুক্ত হয়। তিন দিন বাদে ১৮ আগস্ট কিয়দংশ বাদে নদিয়া পুনরায় ভারত অধিরাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়। ১৯৪৮ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি নদিয়া জেলা তার বর্তমান রূপটি লাভ করে। ১৯৪৭ সালে সাময়িকভাবে জেলার নামকরণ নবদ্বীপ করা হলেও অনতিবিলম্বেই সেই নামকরণ বাতিল হয়।
নদিয়া মূলত একটি কৃষিপ্রধান জেলা। স্বাধীনতার পর বিধানচন্দ্র রায়ের উদ্যোগে কল্যাণী নগরীকে কেন্দ্র করে একটি শিল্পাঞ্চল গড়ে উঠেছে এই জেলায়। এছাড়া ক্ষুদ্র, মাঝারি ও কুটির শিল্পেও এই জেলার বিশেষ খ্যাতি রয়েছে। বাঙালি হিন্দু সমাজে নদিয়া জেলা গৌড়ীয় বৈষ্ণব আন্দোলনের প্রাণপুরুষ চৈতন্য মহাপ্রভুর স্মৃতিবিজড়িত।
নামকরণ
নদিয়া নামের উৎস সম্বন্ধে নানা ধারণা প্রচলিত আছে। নদিয়া ও নবদ্বীপ এই দুটি নামই এই জনপদে প্রচলিত। এই স্থান বহু বার বৈদেশিক আক্রমণের শিকার হয়েছে, যার ফলে উচ্চারণের বিকৃতির মাধ্যমে নদিয়া ও নবদ্বীপ সম্পর্কযুক্ত হতে পারত, যদিও তা হয় নি। নদিয়ার নামকরণ প্রসঙ্গে কান্তিচন্দ্র রাঢ়ী একটি কিংবদন্তির উল্লেখ করেছেন। তিনি লিখেছেন যে,
ভাগীরথী তীরস্থ নবসৃষ্ট চরভূমিতে এক তান্ত্রিক প্রতিদিন সন্ধ্যায় ন’টি দিয়া (প্রদীপ) জ্বালিয়ে তন্ত্র-সাধনা করতেন। দূর থেকে দেখে লোকে এই দ্বীপটিকে ন’দিয়ার চর বলত। আর সেই থেকেই নাকি লোকমুখে ‘নদিয়া’ নামের প্রচলন করে।[2]
ইতিহাস
ভাগীরথী নদীর তীরে অবস্থিত হওয়ায় নদিয়া হিন্দু ধর্মালম্বীদের জন্য একটি তীর্থস্থান। রাজা বল্লাল সেন নদিয়া প্রতিষ্ঠা করেন। প্রাচীন বাংলার হিন্দু রাজারা গৌড়ের পাশাপাশি নদিয়াতেও অবস্থান করতেন। রাজা বল্লাল সেন তাঁর শাসনামলে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ভাগীরথী নদীতে তীর্থস্নান করার উদ্দেশ্যে আসতেন। তিনি এই নদীর তীরে পঞ্চরত্ন নামে একটি মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯২২ ও ১৯৫৮ সালে ব্রিটিশ সরকার কর্তৃক পরিচালিত ভূমি জরিপ ম্যাপে একই সময়ে খননকৃত একটি দীঘির অস্তিত্ব পাওয়া যায়। মুসলিম সেনাপতি ইখতিয়ার উদ্দিন মুহম্মদ বিন বখতিয়ার খলজী কর্তৃক বিজিত হওয়ার আগে অবধি নদিয়া বাংলার রাজধানী ছিল। নদীর পশ্চিম তীরে প্রাচীর বেষ্টিত একটি নগরীতে রাজপ্রাসাদ, হারেম, বাজার ও বাসস্থান ছিল। ধারণা করা হয় যে, তিব্বত, নেপাল ও ভুটানের সাথে নদিয়ার বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিল। ১৮৬৯ সালে নদিয়া পৌরসভা হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে।[3] ইংরেজ আমলে অবিভক্ত নদিয়া জেলা কৃষ্ণনগর সদর, রানাঘাট, চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া ও মেহেরপুর, এই পাঁচটি মহকুমায় বিভক্ত ছিল। দেশভাগের পরে চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া ও মেহেরপুর, এই তিনটি মহকুমা তৎকালীন বৃহত্তর কুষ্টিয়া জেলা হিসেবে পাকিস্তান অন্তর্ভুক্ত হয়।[4]
ভূগোল
নদিয়া জেলা ২২°৫৩' ও ২৪°১১' উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৮°০৯' ও ৮৮°৪৮' পূর্ব দ্রাঘিমাংশের মধ্যে অবস্থিত। কর্কটক্রান্তি রেখা এই জেলাকে দুই ভাগে বিভক্ত করে পূর্বদিকে মাজদিয়ার সামান্য উত্তর দিয়ে পশ্চিমে চাপড়া, নবিননগর, মধুপুর, কৃষ্ণনগরের উত্তরে-- ঘূর্নি, ঘূর্ণি গোডাউণ, কালিদহ, পাণিনালা, হরনগর, আনন্দনগর, ভক্তনগর, হাঁসাডাঙ্গা-বনগ্রাম, চৌগাছা, মায়াকোল, বাহাদুরপুরের উপর দিয়ে চলে গেছে। সেজন্য তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে ২ থেকে ৩ ডিগ্রি বেশি (বা শীতকালে কম) থাকে এই সব জায়গা গুলিতে। এই জেলার উত্তর ও উত্তর-পশ্চিমে মুর্শিদাবাদ জেলা, দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলা, পশ্চিমে পূর্ব বর্ধমান ও হুগলি জেলা এবং পূর্বে বাংলাদেশের কুষ্টিয়া ও যশোর জেলা অবস্থিত।
ভূপ্রকৃতি
গঙ্গা–ভাগীরথী ও তার অন্যান্য উপনদী দ্বারা গঠিত নদিয়া জেলা মূলত বিশাল গাঙ্গেয় সমভূমির একটি অংশ। এই জেলা গঙ্গার পরিণত বদ্বীপের অন্তর্গত। জলঙ্গী ও চূর্ণীর প্রবাহ এই অঞ্চলের ভূমিরূপ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে। জেলার স্বাভাবিক ভূমিঢাল দক্ষিণ-পূর্ব দিকে। তবে বর্তমান ভূমির ঢাল খুব কম এবং ঝিল, পুরনো নদীখাত ও জলাভূমি দ্বারা বিচ্ছিন্ন।জলঙ্গী ও চূর্ণী নদীর প্রবাহপথ সর্পিল এবং স্থানে স্থানে তা অনেক বিল সৃষ্টির কারণ হয়েছে। এই নদীগুলির প্রবাহপথ ক্রমাগত পলি পড়ে পড়ে মজে এসেছে। এই কারণে বর্ষার সময় এখানে অনেক জায়গায় বন্যা হয়।
জলবায়ু
নদিয়া জেলার জলবায়ু উষ্ণ আর্দ্র ক্রান্তীয় মৌসুমি প্রকৃতির। কর্কটক্রান্তি রেখা জেলার মাঝামাঝি দিয়ে যাওয়ায় গ্রীষ্মে প্রচণ্ড গরম অনুভূত হয়। জেলায় মূলত চারটি ঋতু দেখা যায়। যথা – গ্রীষ্মকাল (মার্চ-জুন), বর্ষাকাল (জুন-সেপ্টেম্বর), শরৎকাল (অক্টোবর-নভেম্বর) ও শীতকাল (ডিসেম্বর-ফেব্রুয়ারি)। গ্রীষ্মকালের সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন গড় উষ্ণতা যথাক্রমে ৪৩° সেন্টিগ্রেট ও ১৯° সেন্টিগ্রেট। অন্যদিকে শীতকালের সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন গড় উষ্ণতা যথাক্রমে ৩০° সেন্টিগ্রেট ও ০৯° সেন্টিগ্রেট। বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ১২০০-১৪০০ মিলিমিটার। অধিকাংশ বৃষ্টিপাত হয় বর্ষাকালেই।
নদনদী
নদিয়া জেলার প্রধান নদনদীগুলি হল ভাগীরথী, জলঙ্গী, ভৈরব, চূর্ণী, মাথাভাঙা ও ইছামতী ইত্যাদি। এই জেলায় ভাগীরথীর দৈর্ঘ্য ১৮৭ কিলোমিটার। ভাগীরথীর বদ্বীপ প্রবাহে শেষ উপনদী হিসেবে যুক্ত হয়েছে মাথাভাঙা নদী। এরপর ভৈরব নদ ভাগীরথী থেকে নির্গত হয়ে জলঙ্গীর সঙ্গে মিলিত হয়েছে। আরও দক্ষিণে ভাগীরথী থেকে নির্গত হয়েছে জলঙ্গী নদী (দৈর্ঘ্য ২০৬ কিলোমিটার)। এই অংশ বর্তমানে পলি পড়ে বন্ধ হয়ে গেছে। জলঙ্গী নদী উত্তর-পশ্চিমাংশে নদিয়া-মুর্শিদাবাদ জেলার সীমান্ত বরাবর দক্ষিণ-পশ্চিম মুখে প্রবাহিত হয়েছে। এরপর জেলার মাঝখান দিয়ে দক্ষিণ-পশ্চিমে এঁকেবেঁকে প্রবাহিত হয়ে নবদ্বীপের নিকট ভাগীরথী নদীর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। ভৈরব নদ বর্তমানে মৃতপ্রায়।
মাথাভাঙা (দৈর্ঘ্য ১৯ কিলোমিটার) উপনদীটি ভারত ও বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। এরপর পুনরায় ভারতে প্রবেশ করে দুটি শাখায় বিভক্ত হয়েছে। পশ্চিম শাখাটি চূর্ণী (দৈর্ঘ্য ৫৩ কিলোমিটার) নামে পশ্চিমে ও পূর্ব শাখাটি ইছামতী (দৈর্ঘ্য ৬৮ কিলোমিটার) নামে দক্ষিণ দিকে প্রবাহিত হয়েছে। নদিয়া জেলার নদীগুলি বারবার দিক ও গতি পরিবর্তন করে। বন্যা এখানকার নদীগুলির প্রধান বৈশিষ্ট্য। নদীর প্রবাহ পরিবর্তনের ফলে জেলায় অনেক অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদ, জলাভূমি ও বিল গড়ে উঠেছে।
স্বাভাবিক উদ্ভিদ
নদিয়া জেলার মাত্র ১.২২ হেক্টর জমিতে অরণ্য বর্তমান, যা জেলার মোট ভৌগোলিক আয়তনের মাত্র ০.৩১ শতাংশ। নাকাশিপাড়া ব্লকের বেথুয়াডহরীতে বেথুয়াডহরী বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য এই জেলায় একমাত্র অভয়ারণ্য যেখানে শাল গাছ ও মেহগনি গাছ গাছের অরণ্যে হরিণ দেখা যায়। এছাড়া কৃষ্ণনগরের চার কিলোমিটার উত্তরে বাহাদুরপুর অরণ্যে প্রচুর অর্জুন, সেগুন ইত্যাদি গাছ দেখা যায়। রয়েছে রানাঘাটের ঠিক পূর্ব পাশেই (দূরত্ব মাত্র ১৩ কিলোমিটার) পশ্চিমবঙ্গ সরকার অধীনস্থ ৩০০ বিঘা জমির উপরে বিশাল ফরেস্ট। যা কিনা দেবগ্রাম ফরেস্ট নামেই বহুল পরিচিত। জারুল, সেগুন, হিজল, বাঁশ গাছ সহ অন্যান্য চিরহরিৎ বৃক্ষে ভরপুর । জঙ্গলের মধ্যেই রয়েছে দুটি বড় পুকুর । একটি নলপুকুর এবং অপরটি পদ্মপুকুর নামে পরিচিত । এই বনাঞ্চলগুলি ছাড়াও জেলায় মনুষ্যরোপিত উদ্ভিদ যথা শাল, শিশু গাছ, গামার গাছ, তৃণ, শিমুল গাছ, নিম গাছ, অর্জুন গাছ, বাবলা গাছ, জাম গাছ, দেবদারু গাছ ইত্যাদিও দেখা যায়।
জনপরিসংখ্যান
নদিয়া জেলার সংখ্যাগরিষ্ঠ সম্প্রদায় হিন্দু, যা মোট জনসংখ্যার ৭২.১৫%। এছাড়া অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায় ইসলাম (২৬.৭৬%), খ্রিস্টান (০.৬৫%), শিখ (০.০২%), বৌদ্ধ (০.০১%), জৈন (০.০১)। এছাড়া অন্যান্য ধর্মে বিশ্বাসী ০.৩৩% মানুষ ও বিবৃতি নেই এমন মানুষ ০.০৭%।
ভাষা
পুরাতাত্ত্বিক সংস্কৃতি
মায়াপুরের নিকটে সেনরাজা বল্লাল সেনের স্মৃতিসম্বলিত বল্লাল ঢিপি বর্তমান। এখানকার বামনপুকুর বাজারে চৈতন্য মহাপ্রভুর সমকালীন নবদ্বীপ শাসক 'চাঁদকাজী'র সমাধি আছে।
নবদ্বীপের পশ্চিমে পাড়ভাঙায় উঁচু ঢিবি বৌদ্ধস্তুপ হিসাবে চিহ্নিত, যা 'পাহাড়পুর' নামে খ্যাত। যোগীনাথতলা পাড়ায় হাত-পা হীন কূর্মাকৃতি পাথরখণ্ড 'বৌদ্ধ শূন্যবাদ'এর প্রতীক বলে স্বীকৃত। দণ্ডপাণিতলায় দ্বিভূজ দণ্ডপাণির মূর্তি হাঁস ও মড়ার মাথার খুলিসহ পূজিত হয়। এছাড়া আছে, ধর্মরাজ বুদ্ধের মূর্তি৷ এখানকার কিছু স্থানে শিবলিঙ্গের বদলে শিবের পাথুরে লোড়ামূর্তি পূজিত হয়; এদের কোনোটি 'বুদ্ধমূর্তি' বা প্রতীকচিহ্ন আঁকা মূর্তি৷
ভবতারণ শিবমন্দিরে একটি পাথরখণ্ডে পদ্মপাণি বুদ্ধমূর্তি খোদিত আছে। এছাড়া, 'অ্যালানে শিব' বা 'আলোকনাথ শিব' পালযুগের বৌদ্ধসংস্কৃতির ধারাকে বহন করে আসছে।
দিগনগরে নদিয়া রাজবংশের রাজা রাঘব রায়ের প্রতিষ্ঠিত 'রাঘবেশ্বর শিবমন্দির' (১৬৬৯ খ্রিষ্টাব্দে) আছে। শিবনিবাসে তার প্রতিষ্ঠিত রাজরাজেশ্বর, রাজ্ঞীশ্বর, ও রামচন্দ্র নামে তিনটি দেবমূর্তি আছে।
রাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায়-এর সময় থেকে তার আদেশে নদিয়ায় বিশালাকারে দীপান্বিতা শ্যামাপূজার প্রবর্তন ঘটে।
অগ্রদ্বীপে ঘোষঠাকুর প্রতিষ্ঠিত গোপীনাথ বর্তমান। চৈত্র একাদশীতে ঘোষঠাকুরের বাৎসরিক শ্রাদ্ধ উপলক্ষ্যে বিশাল মেলা বসে।
এছাড়া, রাস পূর্ণিমায় নবদ্বীপের শাক্তরাস একটি অভিনব আকর্ষণ। পোড়া-মা তলায় প্রাচীন দেবীপ্রতিমা অধিষ্ঠিতা। উলা-বীরনগরে উলাই চণ্ডী সাড়ম্বরে পূজিতা হন।
নবদ্বীপ ও শান্তিপুরে বেশ কিছু 'বৈষ্ণব মন্দির' বর্তমান। বৈষ্ণব তিথি অনুসারে মন্দিরসমূহে উৎসব পালিত হয়। এর মধ্যে 'রাস-উৎসব' ও 'দোল-উৎসব' অন্যতম।
ফুলিয়ায় 'যবন' হরিদাস ঠাকুরের সাধন পীঠস্থান 'ভজন গোফা' বর্তমান। ফুলিয়ায় কবি কৃত্তিবাস ওঝার জন্মস্থান। কাঁচরাপাড়ায় কৃষ্ণ দেবরায়ের প্রতিষ্ঠিত আটচালা বাংলা মন্দির বিখ্যাত।
কল্যাণীর ঘোষপাড়ায় দোল-পূর্ণিমায় কর্তাভজা সম্প্রদায়ের গুরুঠাকুরাণী সতীমায়ের বিশাল মেলা বসে।[8]
উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব
- কবি কৃত্তিবাস ওঝা, রামায়নের প্রাচীন অনুবাদক ও কবি ।
- শ্রী চৈতন্যদেব (১৪৮৬-১৫৩৩) মহাপুরুষ সমাজসংস্কারক, বৈষ্ণব ধর্মের প্রবর্তক।
- কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশ (জন্ম আনু. ১৬০০-১৬১০) নবদ্বীপের এক খ্যাতনামা তন্ত্র তথা কালীসাধক যিনি দক্ষিণাকালীর রূপকল্পনা করে বাংলার ঘরে ঘরে কালী পূজার প্রচলন করেন।
- রামচন্দ্র বিদ্যাবাগীশ (জন্ম: ১৭৮৬ - মৃত্যু: ২ মার্চ ১৮৪৫) একজন আভিধানিক ও পণ্ডিত। তিনি ১৮১৭ খ্রিষ্টাব্দে বাংলাভাষায় প্রথম অভিধান বঙ্গভাষাভিধান রচনা করেন। তিনি ব্রাহ্মসমাজের সাথে যুক্ত ছিলেন।
- তারাশঙ্কর তর্করত্ন (?-১৮৫৮) ছিলেন উনিশ শতকের একজন লেখক যিনি কলকাতার সংস্কৃত কলেজের কৃতী ছাত্র ছিলেন।
- মদনমোহন তর্কালঙ্কার (১৮১৭-১৮৫৮) ভারতীয় উপমহাদেশের ঊনবিংশ শতাব্দীয় অন্যতম পণ্ডিত ব্যক্তিত্ব যিনি বাংলার নবজাগরণের অন্যতম অগ্রদূত হিসাবেও পরিগণিত।
- দীনবন্ধু মিত্র (১৮৩০-১৮৭৩), নাট্যকার, সাহিত্যিক।[9]
- রাণী রাসমণি, মানবদরদী জমিদার, দক্ষিণেশ্বর কালী মন্দিরের প্রতিষ্ঠাত্রী
- বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামী (১৮৪১-১৮৯৯), ব্রাহ্মসমাজের অন্যতম আচার্য।
- কর্নেল সুরেশ বিশ্বাস (১৮৬১-১৯০৫), ব্রাজিলের গৃহযুদ্ধে কৃতিত্ব, দুঃসাহসী অভিযাত্রী।
- অক্ষয়কুমার মৈত্রেয় (১৮৬১ – ১৯৩০), ইতিহাসবিদ ও প্রাবন্ধিক। জন্মস্থান শিমুলিয়া, নদীয়া।[10]
- দ্বিজেন্দ্রলাল রায় (১৮৬৩-১৯১৩) প্রখ্যাত কবি ও নাট্যকার।
- দীনেন্দ্রকুমার রায় (১৮৬৯-১৯৪৩) একজন পত্রিকা সম্পাদক, অনুবাদক এবং গ্রন্থকার।
- হরিদাস দে (১৯০২ - ২৪ মে, ১৯৭৩) ছিলেন ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের একজন অন্যতম ব্যক্তিত্ব এবং অগ্নিযুগের বিপ্লবী।[11]
- চঞ্চল কুমার মজুমদার (১৯৩৮-২০০০) - বিখ্যাত বাঙালি পদার্থবিজ্ঞানী, মজুমদার-ঘোষ মডেলের উদ্ভাবক।
- দিগম্বর বিশ্বাস, জমিদার ও মহাজন যিনি নীল বিদ্রোহের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন
- বিশ্বনাথ সর্দার - নীলবিদ্রোহের অন্যতম প্রধান নেতা ও শহীদ।
- অনন্তহরি মিত্র- ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম শহীদ
- বসন্ত বিশ্বাস- অগ্নিযুগের বিপ্লবী কিশোর ও শহীদ
- হেমন্তকুমার সরকার, বিপ্লবী ও লেখক
- বীণা দাস - অগ্নিযুগের বিপ্লবী ও রাজনীতিবিদ
- শরৎকুমার রায় (ভূতত্ববিদ), গবেষণার জন্য প্রথম সুমেরু জয় করেছিলেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে আমেরিকান বিমান বাহিনীর ক্যাপ্টেন।
- করুণানিধান বন্দ্যোপাধ্যায় - খ্যাতনামা কবি
- চার্লস জিমেলিন - প্রথম পদকজয়ী ব্রিটিশ অলিম্পিয়ান
- ভক্তিবিনোদ ঠাকুর, বৈষ্ণব ধর্মের এক অন্যতম ব্যক্তিত্ত্ব, পন্ডিত ও পদকর্তা
- যতীন্দ্রমোহন বাগচী - খ্যাতনামা কবি
- হেমচন্দ্র বাগচী - খ্যাতনামা কবি
- মুহাম্মদ মোজাম্মেল হক-কবি, সাংবাদিক
- সরলাবালা সরকার - সাহিত্যিক
- গোপাল ভাঁড়-রম্য গল্পকার ভাঁড় ও মনোরঞ্জনকারী
- লালন-সাধক, গায়ক, গীতিকার, সুরকার, বাউল-দার্শনিক
- কৃষ্ণরাম ভট্টাচাৰ্য, বাঙালি পন্ডিত
- শ্ৰীকৃষ্ণ সার্বভৌম, বাঙালি পন্ডিত ও লেখক
- অসীমকান্তি দত্তরায়, চিকিৎসা বিজ্ঞানী।
- সুধীর চক্রবর্তী, অধ্যাপক, লেখক, গবেষক এবং লোকসংস্কৃতি বিশেষজ্ঞ।
- সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় (মৃত্যু নভেম্বর ২০২১), ভারতীয় বাঙালি চলচ্চিত্র কিংবদন্তি অভিনেতা, আবৃত্তি শিল্পী, কবি এবং অনুবাদক।
তথ্যসূত্র
Wikiwand in your browser!
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.