ইছামতি নদী বা ইচ্ছামতি নদী বাংলাদেশ-ভারতের একটি আন্তঃসীমান্ত নদী[1] এটি ভারতবাংলাদেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত।[2] নদীটির দৈর্ঘ্য ৩৩৪ কিলোমিটার । বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড বা "পাউবো" কর্তৃক ইছামতি নদীর প্রদত্ত পরিচিতি নম্বর দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের নদী নং ৭।[3]

দ্রুত তথ্য দেশসমূহ, রাজ্য ...
ইছামতি-কালিন্দি (ইছামতি)
Thumb
ভারতের টাকি থেকে নদীর রূপ
ভারতের টাকি থেকে নদীর রূপ
দেশসমূহ ভারত, বাংলাদেশ
রাজ্য পশ্চিমবঙ্গ
অঞ্চল
জেলাসমূহ নদিয়া জেলা, উত্তর চব্বিশ পরগণা জেলা, ঝিনাইদহ জেলা, সাতক্ষীরা জেলা, চুয়াডাঙ্গা জেলা, যশোর জেলা
নগর বনগাঁ, বসিরহাট, টাকি
উৎস মাথাভাঙ্গা নদী
মোহনা রায়মঙ্গল নদী
দৈর্ঘ্য ৩৩৪ কিলোমিটার (২০৮ মাইল)
Thumb
ইছামতি নদীর নিম্নপ্রান্তের গতিপথ যা ভারত-বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে যাওয়া আসা করছে
ইছামতি নদীর নিম্নপ্রান্তের গতিপথ যা ভারত-বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে যাওয়া আসা করছে
বন্ধ

বর্তমান অবস্থা

Thumb
বনগাঁ শহরে ইছামতি নদী

নদীটি বর্তমানে সিলটেশন বা পলিমাটি জমে ভরাট হয়ে যাবার সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে এবং এর ফলশ্রুতিতে শীত মৌসুমে এটি কেবল সরু পথে প্রবাহিত এবং গ্রীষ্ম মৌসুমে বন্যার কবলে পড়ে। বিশেষজ্ঞরা এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় সচেষ্ট হচ্ছেন এবং সঙ্কট সমাধানে ভারত ও বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হচ্ছে।[4]

গতিপথ

ইছামতি নদীটিকে বর্তমান নদী গবেষকগণ তিনভাগে ভাগ করেন। উচ্চ ইছামতি, মধ্য ইছামতি এবং নিম্ন ইছামতি নামে। উচ্চ ইছামতি নদীটি পদ্মা নদীর একটি শাখানদী মাথাভাঙ্গা নদী থেকে প্রবাহিত হয় এবং বেনাপোল পর্যন্ত প্রবাহিত হয়। মধ্য ইছামতি নদী বেনাপোল থেকে দেবহাটা পর্যন্ত প্রবাহিত হয়। নিম্ন ইছামতি নদী পশ্চিমবঙ্গের সুন্দরবন এবং বাংলাদেশের সুন্দরবনের বুড়ি গোয়ালিনী রেঞ্জ পর্যন্ত প্রবাহিত হয়ে রায়মঙ্গল নদীতে পতিত হয়।

নদীটির উৎস হতে দেবহাটার পশ্চিম পর্যন্ত মোট দৈর্ঘ্য ২০৮ কিমি। প্রবাহ থেকে শেষ অংশ উত্তর ২৪ পরগণা জেলা‎র হাসনাবাদের কাছে এবং সাতক্ষীরা জেলার দেবহাটার কাছে কালিন্দী নদীর সাথে যুক্ত হয়। (২) একসময়ের পশ্চিম ঢাকার প্রধান নদী এবং (৩) দিনাজপুরের ইছামতি। ১৭৬৪-৬৬ সালের রেনেলের মানচিত্র অনুসারে শেষোক্ত নদী দুইটি একীভূত দেখা যায়। বেশকিছু জলানুসন্ধানবিদদের মতে, প্রাচীনকালে তিনটি ইছামতি নদীই অভিন্ন ছিল।[2][4]

উপরোল্লিখিত দ্বিতীয় নদীটি যা হুরসাগরের অগ্রভাগের নাথপুর ফ্যাক্টরির বিপরীতে জাফরগঞ্জের দক্ষিণে উৎপত্তি লাভ করেছে এবং মুন্সীগঞ্জের মোহিনীঘাটের দিকে প্রবাহিত হয়েছে। যোগিনীঘাট যমুনা ও ইছামতির নদীসঙ্গমে অবস্থিত। নদীটিতে পাঁচটি তীর্থযাত্রার ঘাট -তীর্থঘাট, আগলা, শোলপুর, বরুণীঘাট ও যোগিণীঘাট রয়েছে যা স্থানীয়ভাবে পঞ্চতীর্থ ঘাট নামে পরিচিত।[2]

নিম্ন ইছামতি

মাথাভাঙ্গা নদী বাংলাদেশের কুষ্টিয়া জেলার মুন্সীগঞ্জে পদ্মার ডানতীর থেকে উৎপত্তি লাভ করেছে। এটি নদিয়া জেলার মাজদিয়ার কাছে দ্বিখণ্ডিত হয়ে দুটি নদী ইছামতি ও চূর্ণী উৎ‌পন্ন করে। ভারতে ১৯.৫ কিলোমিটার (১২.১ মা) তীর্যকভাবে অতিক্রম করে, ইছামতি মুবারকপুরের কাছে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। এটি বাংলাদেশে ৩৫.৫ কিলোমিটার প্রবাহিত হয় এবং আবারো ভারতে প্রবেশ করে নদিয়ার দত্তপুলিয়া দিয়ে। নদীটি বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ২১ কিলোমিটার (১৩ মা) দীর্ঘ আন্তর্জাতিক সীমারেখা তৈরি করে যা আংরাইল থেকে কালাঞ্চি এবং পুনরায় গোয়ালপাড়া থেকে কালিন্দী-রাইমঙ্গল আউটফল হয়ে বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়।[4]

ভৈরব এক সময় গঙ্গা থেকে প্রবাহিত হত, এটি তখন জলঙ্গীর বর্তমান তীরের মধ্যদিয়ে আরো পূর্বদিকে ফরিদপুরের দিকে প্রবাহিত হত। ভৈরব এখন আর তেমন জীবন্ত নেই। মাথাভাঙা জলঙ্গীর একটি নতুন জলস্রোত এবং অতিসাম্প্রতিককালের আগ পর্যন্ত নদীটি হুগলীর সাথে যোগসূত্র ঘটায় চূর্ণী নদী গ্রহণের মাধ্যমে। আগেকালে মাথাভাঙার অধিকাংশ জল পূর্বে কুমার, চিত্রা, কপোতাক্ষ ও ইছামতিতে প্রবাহিত হত। এখানে উল্লেখযোগ্য যে, আগে এই অঞ্চলের নদীগুলো দক্ষিণ-পূর্ব অভিমুখে প্রবাহিত হত, কিন্তু পরবর্তীকালে কোন শক্তি জলাঙ্গী ও মাথাভাঙ্গাকে দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে নিয়ে যায়। এটি ঘটার কারণ হল একটি স্থানীয় সাবসিডেন্স যা ১৭৫০ এর আগে কিছু সময় ধরে সংঘটিত হয় এবং এটি তখন থেকে অকার্যকর অবস্থায় আছে।[5]

নদীগর্ভের গভীরতা হ্রাস

যেহেতু ইছামতি নদীর গর্ভ মাথাভাঙ্গা থেকে ১৪ ফুট বেশি উঁচু, আবার চূর্ণী মাথাভাঙ্গা থেকে ছয় ইঞ্চি নিচু। শুষ্ক মৌসুমে মাথাভাঙ্গার জলের উচ্চতা পদ্মার থেকে বেশি থাকে এবং এর ফলে এ সময়ে ইছামতিতে কোন জল প্রবেশ করে না। নদীতে পলি জমে যাবার একটি কারণ হল রেললাইনের জন্য তৈরি ওভারব্রীজের গার্ড ওয়াল নদীতে তৈরি করা। এলাকাটিতে নদীগর্ভের খনন কাজ জরুরি কেননা শুষ্ক মৌসুমেও জলের প্রবাহ রয়েছে। যেহেতু এই ভারত ও বাংলাদেশ উভযের জন্যই প্রয়োজন তাই এক্ষেত্রে উভয়ের একমত হওয়া প্রয়োজন। বিষয়টি মন্ত্রী পর্যায়ে আলোচিত হয়েছে এবং জরীপ করা স্থানগুলোতে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সমস্যা সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা পাওয়া গিয়েছে। এ বিষয়ে নিকট ভবিষ্যতে সিদ্ধান্ত গ্রহণের সম্ভাবনা রয়েছে।[4][6][7][8]

নদী সংশ্লিষ্ট এলাকাটি শিল্প বর্জ্য ও জনগণের নদীর জমি দখলের কারণেও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। হচ্ছে। প্রয়োজনীয় পয়ঃপ্রণালীর অভাব, অবৈধ দখল, আর্সেনিকসহ অন্যন্য কারণে স্থলভাগের জলের দূষিতকরণ, জলচর উদ্ভিদ ও প্রাণী নিধনসহ অন্যান্য সমস্যার সকলের অংশগ্রহণের মাধ্যমে সমাধান প্রয়োজন।[4]

ইছামতি নদী ও এর শাখাসমূহ উত্তর ২৪ পরগণার বণগাঁওয়ে ইংরেজি U বর্ণাকৃতির জলাধার তৈরি করেছে। কৃষি ও নৃতাত্ত্বিক চাপের পাশাপাশি আগাছার প্রাদুর্ভাব বিশেষত কচুরীপানার ব্যাপকতা একটি বড় দুশ্চিন্তার কারণ কেননা এটি লেকের জল ঢেকে ফেলছে।[7]

দুর্গাপুজোয় প্রতিমা বিসর্জনের চিত্র

Thumb
ইছামতি নদীতে ভারত ও বাংলাদেশের যৌথ দুর্গা প্রতিমা বিসর্জনের চিত্র

দুর্গাপুজোর শেষে, বিজয়া দশমীতে ইছামতিতে প্রতিমা বিসর্জনের অনুষ্ঠান ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের একটি অনন্য প্রদর্শনী। ইছামতি নদীটি যা দুই দেশের মাঝে নিরপেক্ষ সীমানা হিসেবে কাজ করে, তা উভয় দেশের নৌকো থেকে দেবদেবী বিসর্জনের সময় উচ্ছ্বসিত প্রফুল্লতায় ভরে ওঠে। এসময় চোখের দূরতম সীমা পর্যন্ত বিভিন্ন আকৃতির নৌকো দৃষ্টিগোচর হয় এবং প্রতিটি নৌকোগুলোতে সংশ্লিষ্ট দেশের পতাকা লাগানো থাকে। এটিই বছরের একমাত্র দিন যখন সীমান্ত টহল শিথিল করা হয় নদীর উভয় পাড়ের মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে নদীর অপর পাড়ে যেতে পারে। কিছুদিন আগে প্রতিমা বিসর্জনের পর মানুষজন এমনকি অপর পাড়েও নৌকো ভেড়াতে পারত। তবে বর্তমান কয়েক বছর ধরে সীমান্ত রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর কড়াকড়ি বেড়ে যাওয়ায় এই অনুশীলনটির ব্যত্যয় ঘটছে।[9]

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র

Wikiwand in your browser!

Seamless Wikipedia browsing. On steroids.

Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.

Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.