Loading AI tools
বীর বিক্রম খেতাবপ্রাপ্ত বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের মুক্তিযোদ্ধা উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী (জন্ম: ১১ জানুয়ারি ১৯৪৫)[3] একজন রাজনীতিবিদ ও সরকারি কর্মকর্তা। তিনি ১৯৬৮ সালে পাকিস্তানের সিভিল সার্ভিসে যোগ দিয়েছিলেন। ১৯৭১-এ স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যূদয়ের পর নানা গুরুত্বপূর্ণ সরকারি পদে দায়িত্ব পালনের পর ২০০২ সালে তিনি সচিব হিসাবে অবসরে গমন করেন। তিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিদ্যুৎ, জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা ছিলেন।[4]
তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী | |
---|---|
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিদ্যুৎ, জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা | |
কাজের মেয়াদ ২৫ জানুয়ারি ২০০৯ – ২৯ নভেম্বর ২০২৩[1] | |
প্রধানমন্ত্রী | শেখ হাসিনা |
কাজের মেয়াদ ১১ জানুয়ারি ২০২৪[2] – ৬ আগস্ট ২০২৪ | |
ব্যক্তিগত বিবরণ | |
জন্ম | সিলেট | ১১ জানুয়ারি ১৯৪৫
নাগরিকত্ব | বাংলাদেশ |
জাতীয়তা | বাংলাদেশী |
রাজনৈতিক দল | বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ |
দাম্পত্য সঙ্গী | আসমা ইলাহী |
সন্তান | ২ মেয়ে |
পিতামাতা |
|
প্রাক্তন শিক্ষার্থী | হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ঢাকা কলেজ |
পুরস্কার | বীর বিক্রম |
তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী একজন মুক্তিযোদ্ধা। তিনি একমাত্র উচ্চপদস্থ সরকারী কর্মকর্তা যিনি প্রবাসী সরকারে যোগ না-দিয়ে প্রথম থেকেই অস্ত্র হাতে রণাঙ্গনে অবস্থান করেছেন। মুক্তিযুদ্ধে বীরত্ব ও সাহসিকতাপূর্ণ অবদানের জন্য নবগঠিত বাংলাদেশ সরকার ১৯৭২-এ তাকে বীর বিক্রম খেতাব প্রদান করে।[5]
১৯৪৫ সালের ১১ জানুয়ারি তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরীর জন্ম।[3] পৈতৃক বাড়ি সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার নাটেশ্বর গ্রামে। তার বাবার নাম শাখাওয়াত হোসেন চৌধুরী এবং মায়ের নাম সুফিয়া চৌধুরী। ১৯৭৩-এ তিনি পল্লীকবি জসিম উদ্দীনের জ্যেষ্ঠ কন্যা আসমা তৌফিকের সঙ্গে পরিণয় সূত্রে আবদ্ধ হন। তাদের দুই মেয়ে যথা বুশরা ও মেহনাজ।[6] বৈবাহিকসূত্রে বাংলাদেশী রাজনীতিবিদ মওদুদ আহমেদ তার ভায়রা ভাই ছিলেন।[7]
তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী ১৯৭১ সালে কুষ্টিয়া জেলার জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে কর্মরত ছিলেন। মার্চে অসহযোগ আন্দোলন চলাকালে ২১-২৩ মার্চ তিনি ঝিনাইদহে কয়েকজন বাঙালি সহকর্মীর সঙ্গে মিলিত হন। আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেন যদি সামরিক সংঘর্ষ অবধারিত হয় তবে তারা নিজ নিজ এলাকায় প্রতিরোধ গড়ে তুলবেন।
স্বাধীনতা লাভের পর পর তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী পর্যায়ক্রমে বাংলাদেশ সরকারের সচিব পদে উন্নীত হয়ে ২০০২ সালে অবসর গ্রহণ করেন।
২০০৯ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত তিনি মন্ত্রীর পদমর্যাদায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিদ্যুৎ, জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতেই তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী জনগণের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে ঝাঁপিয়ে পড়েন মুক্তিযুদ্ধে। ২৬ মার্চ তিনি দুটি চিঠি লিখে পাঠান ভারতে। আর একটি পাঠান মেহেরপুর সীমান্তসংলগ্ন নদীয়া জেলার ডিসিকে। এর অনুলিপি দেন বিএসএফের স্থানীয় অধিনায়ককে। দ্বিতীয় চিঠি ভারতের জনগণকে উদ্দেশ করে। দুটি চিঠিতেই ছিল তার স্বাক্ষর ও সরকারি সিলমোহর। দ্বিতীয় চিঠিটি ২৭ মার্চ অমৃত বাজার পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। চিঠি পেয়ে নদীয়া জেলার ডিসি ও বিএসএফের অধিনায়ক সাড়া দেন। তাদের আমন্ত্রণে ২৯ মার্চ তিনি ভারতের বেতাই বিওপিতে যান। তারা বাংলাদেশের দূত হিসেবে মর্যাদা দিয়ে তাকে সাদর অভ্যর্থনা জানান। বিএসএফের একটি ছোট দল তাকে গার্ড অব অনার প্রদান করে। এর পর তারা আলোচনা করেন। পরদিন ৩০ মার্চ তিনি চুয়াডাঙ্গা যান। চুয়াডাঙ্গা ইপিআর উইংয়ের বাঙালি সৈনিকদের বিদ্রোহের খবর তিনি আগেই পেয়েছিলেন। এখানে অবস্থানকালে আওয়ামী লীগের নেতা তাজউদ্দীন আহমদ ও ব্যারিস্টার আমীর-উল-ইসলামের সঙ্গে তার দেখা হয়। তাদের তিনি ও ঝিনাইদহ মহকুমার পুলিশ কর্মকর্তা মাহবুব উদ্দিন আহমেদ (বীর বিক্রম) ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে চ্যাংখালী চেকপোস্টে নিয়ে যান। তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী প্রতিরোধযুদ্ধকালে সক্রিয় যুদ্ধের পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধের নানা সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত ছিলেন। ৩০ মার্চ আবু ওসমান চৌধুরীর সার্বিক নেতৃত্বে প্রতিরোধ যোদ্ধারা কুষ্টিয়া আক্রমণ করেন। এই যুদ্ধে এবং ১৭ এপ্রিল মেহেরপুরের মুজিবনগরে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি ও সরকারের প্রধানমন্ত্রীসহ মন্ত্রিপরিষদের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে তিনি সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ সরকারের কার্যক্রম শুরু হলে তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরীকে বাংলাদেশ সরকারের সচিবালয়ে নিয়োগ দেওয়া হয়। কিন্তু তিনি নিরাপদ বেসামরিক দায়িত্বের বদলে সশস্ত্র যুদ্ধেই আগ্রহ প্রকাশ করেন। তখন তাকে মুক্তিবাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
বাংলাদেশ সরকার গঠিত হওয়ার পর বাংলাদেশের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ ক্রমেই সাংগঠনিক রূপ পায়। এ সময় সেক্টর গঠিত হয়। তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী ৮ নম্বর সেক্টরের শিকারপুর সাব-সেক্টরের অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পান। পরে তিনি বেনাপোল সাব-সেক্টরের অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বেনাপোল সাব-সেক্টরের আওতাধীন এলাকা ছিল বেনাপোল ট্রানজিট পয়েন্ট থেকে যশোর জেলার কেশবপুর পর্যন্ত। এর উত্তরে ছিল ঝিকরগাছা এবং দক্ষিণে সাতক্ষীরা জেলা। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ১০৭ ইনফ্রেন্টি ব্রিগেডের ২২ এফএফ (ফ্রন্টিয়ার ফোর্স) এই এলাকায় প্রতিরক্ষায় নিয়োজিত ছিল। এই এলাকায় অনেক যুদ্ধ সংঘটিত হয়। তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরীর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ পরিচালনায় বেনাপোল সাব-সেক্টরের মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে অসংখ্য অপারেশন করেন। তার সার্বিক নেতৃত্বে বিভিন্ন স্থানে বেশ কয়েকটি সরাসরি যুদ্ধ সংঘটিত হয়। এর মধ্যে পুটখালীর যুদ্ধ অন্যতম। ১৯৭১ সালের ১২ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যার পর তার নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা ভারতের কাঁঠালবাগান ক্যাম্প থেকে বাংলাদেশের ভেতরে এসে পুটখালীতে অবস্থানরত পাকিস্তানি সেনাদের আক্রমণ করেন। তখন তুমুল যুদ্ধ হয়।[8]
২০২৪ সালের ১০ সেপ্টেম্বর তাকে রাজধানীর গুলশান থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ।[9]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.