চুনারুঘাট উপজেলা
হবিগঞ্জ জেলার একটি উপজেলা উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
হবিগঞ্জ জেলার একটি উপজেলা উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
চুনারুঘাট উপজেলা বাংলাদেশের হবিগঞ্জ জেলার একটি প্রশাসনিক এলাকা। চুনারুঘাটের প্রাচীন নাম ছিল 'তরফ'। তরফ রাজ্য নামেই বহুকাল আগে ডাকা হতো চুনারুঘাটকে। ধীরে ধীরে নাম পরিবর্তন হয়ে এখন চুনারুঘাট নামেই পরিচিত। ব্যবসায়িক কারণে ত্রিপুরা রাজ্যের বণিকরা তরফ রাজ্যে চুনাপাথর নিয়ে আসতেন (খোয়াই) নদীপথে। প্রচুর চুনাপাথর এই অঞ্চলে আসত। ব্যবসায়ীগণ এখানে এসে চুনাপাথর ক্রয়-বিক্রয় করতেন। যারা চুন তৈরী করেন তাদের ডাকা হয় চুনারু । প্রথমে লোকে বলত চুনারু-আট বা চুনারুহাট, বর্তমানে বই বা পত্রিকাতে চুনারুঘাট লিখলেও গ্রামীণ জনগণ চুনাআট বা চুনারঘাট নামেই ডাকেন। কালক্রমে এটি হয়ে ওঠে ঐতিহ্যবাহী জনপদ চুনারুঘাট। চুনারুঘাট আয়তনে হবিগঞ্জ জেলার সবচেয়ে বড় উপজেলা। বাংলাদেশের অন্যতম জাতীয় উদ্যাণ "সাতছড়ি জাতীয় উদ্যাণ", খোয়াইনদী তীরবর্তী এলাকায় আখের বাগানের গুড়, চা বাগান, রাবার বাগান, লিচু, লেবু, টক কমলার জন্য চুনারুঘাট বিখ্যাত।চুনারুঘাট উপজেলার পাইকপাড়া ইউনিয়নের সাতছড়ি জাতীয় উদ্যাণে চাকলাপুঞ্জি নামক এলাকায় আদিমকালিন মানু্ষের পাথরের হাতিয়ার আবিষ্কার চুনারুঘাটকে করে তুলেছে অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র!
চুনারুঘাট | |
---|---|
উপজেলা | |
মানচিত্রে চুনারুঘাট উপজেলা | |
স্থানাঙ্ক: ২৪°১২′৩৪″ উত্তর ৯১°৩১′১১″ পূর্ব | |
দেশ | বাংলাদেশ |
বিভাগ | সিলেট বিভাগ |
জেলা | হবিগঞ্জ জেলা |
আয়তন | |
• মোট | ৪২৭ বর্গকিমি (১৬৫ বর্গমাইল) |
জনসংখ্যা (২০১১)[1] | |
• মোট | ২,৬৭,০২০ |
• জনঘনত্ব | ৬৩০/বর্গকিমি (১,৬০০/বর্গমাইল) |
সাক্ষরতার হার | |
• মোট | ৪৮.৮০% |
সময় অঞ্চল | বিএসটি (ইউটিসি+৬) |
প্রশাসনিক বিভাগের কোড | ৬০ ৩৬ ২৬ |
ওয়েবসাইট | দাপ্তরিক ওয়েবসাইট |
এই উপজেলার উত্তরে শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলা ও বাহুবল উপজেলা, দক্ষিণে ভারতের ত্রিপুরা, পূর্বে মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলা ও ভারতের ত্রিপুরা, পশ্চিমে মাধবপুর উপজেলা।
তুঙ্গাচল থেকে তরফ, তরফ থেকে চুনারুঘাট। চুনারুঘাটের প্রচীন নাম ছিল তুঙ্গাচল পরবর্তীতে সিপাসালার সৈয়দ নাসির উদ্দিন তুঙ্গাচল বিজয় করে নাম রাখেন তরফ রাজ্য৷ এই তরফ রাজ্য নামেই বহুকাল আগে ডাকা হতো চুনারুঘাটকে । ধীরে ধীরে নাম পরিবর্তন হয়ে এখন চুনারুঘাট নামেই পরিচিত। ব্যবসায়িক কারণে ত্রিপুরা রাজ্যের বণিকরা তরফ রাজ্যে চুনাপাথর নিয়ে আসতেন (খোয়াই) নদীপথে। প্রচুর চুনাপাথর এই অঞ্চলে আসত। ব্যবসায়ীগণ এখানে এসে চুনাপাথর ক্রয়-বিক্রয় করতেন। প্রথমে লোকে বলত চুনের-আট বা চুনাহাট, বর্তমানে বই বা পত্রিকাতে চুনারুঘাট লিখলেও গ্রামীন জনগণ চুনাআট বা চুনারঘাট নামেই ডাকেন। কালক্রমে এটি হয়ে ওঠে ঐতিহ্যবাহী জনপদ চুনারুঘাট। চুনারুঘাটের একটি পত্রিকা তরফ বার্তা ও একটি ইটের ভাটা তরফ বিক্সস চুনারুঘাটের প্রাচীন নামকে এখনো ধারণ করে৷
মুক্তিযুদ্ধে চুনারুঘাট উপজেলা ৪নং সেক্টরের অধীনে ছিল। এই অঞ্চলের সেক্টর কমান্ডার ছিলেন মেজর কমান্ডার (অবঃ) সি আর দত্ত (বীরউত্তম)। এছাড়াও আর অসংখ্য মুক্তিযুদ্ধা চুনারুঘাটের হয়ে স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহন করেন৷
চুনারুঘাটের রাজাপুর (টেকরঘাট) ছিল হিন্দু রাজ্য তুঙ্গাচলের রাজধানী। রাজা আছক নারায়ণ ছিলেন এর শেষ হিন্দু শাসক৷ যিনি ১৩০৪ সালে তরফ দখলে পরাজিত হন এবং তুঙ্গাচলের নাম পরিবর্তন করে তরফ রাখা হয় তরফের প্রথম মুসলিম শাসক ছিলেন সৈয়দ নাসিরুদ্দিন, যিনি বিখ্যাত মুরারবন্দ দরগাহ শরীফে সমাহিত হন।
১৫৮১ সালে চুনারুঘাটে তরফ ও (টুইপ্রা) ত্রিপুরা রাজ্যের মধ্যে জিলকুয়ার যুদ্ধ সংঘটিত হয়। খোয়াই নদী ছিল অন্যান্য স্থানের সাথে যাতায়াত ও যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম। বোড়াইল বা বড়াইল মৌজায় নদীর পশ্চিম তীরে একটি ঘাট ছিল। ব্যাবসায়িক কারনে ত্রিপুরা রাজ্যের বনিকরা তরফ রাজ্যে চুনাপাথর নিয়ে আসতেন (খোয়াই) নদীপথে। প্রচুর চুনাপাথর এই অঞ্চলে আসত। ব্যবসায়ীগণ এখানে এসে চুনাপাথর ক্রয়-বিক্রয় করতেন। প্রথমে লোকে বলত চুনের-আট বা চুনাহাট, বর্তমানে বই বা পত্রিকাতে চুনারুঘাট লিখলেও গ্রামীন জনগন চুনাআট বা চুনারঘাট নামেই ডাকেন। কালক্রমে এটি হয়ে ওঠে ঐতিহ্যবাহী জনপদ চুনারুঘাট। ১৯১৪ সালে চুনারুঘাট থানা প্রতিষ্ঠিত হয়। যা চুনারুঘাটের মুছিকান্দি গ্রামের নালমুখ বাজারে। পরবর্তীতে নদী ভাঙনের শংকায় থানা বিলীন হতে পারে ভেবে বর্তমান বড়াইল মৌজায় চুনারুঘাট থানা স্থানান্তর করা করা হয়।
নদী- পাহাড়- বন - চা বাগান ঘেরা একটি উপজেলা চুনারুঘাট৷ ছোট বড় অসংখ্য বিল ও হাওর ঘেরা অঞ্চল ছিল চুনারুঘাট। ১০ টি বিশাল হাওর নিয়ে এই তরফ অঞ্চল ছিল। যদিও চুনারুঘাট উপজেলাতে বড় কোন হাওর নেই। নদী নালা মারা যাওয়ার ফলে তেমন পানি আর কোথাও দেখা মিলেনা। এই অঞ্চলের ছোট বড় অসংখ্য টিলা রয়েছে।
খোয়াই নদীর প্রাচীন নাম৷ প্রচীন নাম খোয়াই নামের উৎপত্তি সম্পর্কে একটি কিংবদন্তি প্রবাদ আছে : খোয়াই নদীর প্রাচীন নাম ক্ষমা বা ক্ষেমা । ক্ষেমা নাম করণের পেছনে একটি জনপ্রবাদ রয়েছে। একবার এক ভিনদেশী বণিক তার পানসী নৌকা নিয়ে এই নদীর তীরে নোঙ্গর করে ফেলে খাসিয়াদের একটি পূজা উৎসব উপভোগ করছিল। যুবকের রূপে মুগ্ধ হয়ে অভিজাত এক খাসিয়া কন্যা তাকে ভালবেসে বিয়ে করার জন্য ইচ্ছা প্রকাশ করে । কিন্তু খাসিয়া সম্প্রদায় তাকে নিজেদের সম্প্রদায়ের একজন যুবকের সাথে ঐ কন্যার বিবাহ দিলে ক্ষেমা বা ক্ষাম নামের ঐ খাসিয়া কন্যা নদীতে আত্মাহুতি দেন । সেই থেকে এই নদীর নাম ক্ষেমা বা ক্ষমা৷ তবে প্রবাহমান খোয়াই নদী বাংলাদেশের অন্য সব নদী পথের মতো উত্তর থেকে দক্ষিণে নয় বরং দক্ষিণ থেকে উত্তরে প্রবাহিত হয়৷
করাঙ্গী ও সুতাং নদী এখনো প্রবাহমান। তাছাড়াও চন্দনা নামের একটি খাল যা দূত নগরায়নের ফলে হারিয়ে যেতে বসেছে। চন্নার ডর নামে কিছু অংশ এখনো দৃশ্যমান তবে সেখানে ফেলা হচ্ছে বর্জ্য।
হবিগঞ্জ বাজার–শায়েস্তাগঞ্জ–বাল্লা রেলপথ
উপনবেশিক বৃটিশ শাসন আমলে তৎকালীন (অবিভক্ত বৃটিশ-ভারতের) আসাম প্রভেন্সির সিলেট জেলার হবিগঞ্জ মহুকুমায় রেলপথে ট্রেন চলাচল শুরু হয়। বৃটিশ সরকার ১৯২৮ সালে হবিগঞ্জ বাজার-শায়েস্তাগঞ্জ-বাল্লা রেলপথ নির্মাণ করে গড়ে তুলে অবকাঠামো।[2] ২০০৩ সালে এ লাইনে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।[2]
শায়েস্তাগঞ্জ-হবিগঞ্জ রেলপথ সেকশনে চারটি রেলওয়ে স্টেশন আসাম বেঙ্গল রেলওয়ে দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯২৮ সালে।
বি.দ্র.: শায়েস্তাগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশন ১৯০৩ সালে আসাম বেঙ্গল রেলওয়ে কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯২৮-২৯ সালে হবিগঞ্জ বাজার-শায়েস্তাগঞ্জ-বাল্লা রেলপথ সংযোগ ফাঁড়ি যোগাযোগ চালু হলে এটি জংশন রেলওয়ে স্টেশনে পরিণত হয়।
শায়েস্তাগঞ্জ-চুনারুঘাট রেলপথ সেকশনে সাতটি রেলওয়ে স্টেশন আসাম বেঙ্গল রেলওয়ে দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯২৯ সালে।
চুনারুঘাট উপজেলায় বর্তমানে ১টি পৌরসভা ও ১০টি ইউনিয়ন রয়েছে। সম্পূর্ণ উপজেলার প্রশাসনিক কার্যক্রম চুনারুঘাট থানার আওতাধীন।[3]
এই উপজেলার মোট জনসংখ্যা ২,৬৭,০২০ জন (প্রায়), এর মধ্যে পুরুষ ১,৩৫,১২০ জন এবং মহিলা ১,৩১,৯০০ জন। জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রায় ৪৭২ জন/বর্গকিমি।
শিক্ষার হার ৪৮%
প্রাথমিক বিদ্যালয় | স্থান | স্থাপিত তারিখ |
---|---|---|
পাইকপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় | পাইকপাড়া, পাইকপাড়া ইউনিয়ন | |
সতং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় | সতংবাজার, পাইকপাড়া ইউনিয়ন | |
মাঝিশাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় | মাঝিশাল, পাইকপাড়া ইউনিয়ন | |
পীরেরগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় | ||
হাজী ইছাদউল্লা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় | দক্ষিণ নরপতি, চুনারুঘাট ইউনিয়ন | |
রানীগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, রানীগাঁও, চুনারুঘাট |
উচ্চ বিদ্যালয় | স্থান | স্থাপিত তারিখ |
---|---|---|
আলহাজ্ব মোজাফফর উদ্দীন উচ্চ বিদ্যালয় | পাইকপাড়া,পাইকপাড়া ইউনিয়ন | ১৯৮৪ |
শানখলা উচ্চ বিদ্যালয় | শানখলা, শানখলা ইউনিয়ন | ১৯৮৯ |
তাহের শামসুন্নহার জুনিয়র উচ্চ বিদ্যালয় | চান্দপুর চা বাগান, | |
দক্ষিণা চরণ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় | চুনারুঘাট, চুনারুঘাট উপজেলা | ১৯২৮ |
অগ্রণী উচ্চ বিদ্যালয় | চান্দপুর,পাইকপাড়া ইউনিয়ন | ১৯৭০ |
আলোর পথে উচ্চ বিদ্যালয় | চুনারুঘাট, চুনারুঘাট উপজেলা | |
আমুরোড হাই স্কুল এন্ড কলেজ | গোছাপারা | ১৯৬৬ |
রাজার বাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় | রাজারবাজার, চুনারুঘাট উপজেলা | |
একডালা উচ্চ বিদ্যালয় (চুনারুঘাট) | সোনাচং বাজার, চুনারুঘাট | ১৯৭৩ |
চুনারুঘাট পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় | ||
শাকির মোহাম্মদ উচ্চ বিদ্যালয় | ||
সাটিয়াজুরী উচ্চ বিদ্যালয় | ||
শ্রীকুটা আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় | শ্রীকুটা বাজার,চুনারুঘাট ইউনিয়ন | |
আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজ | উত্তর বাজার,চুনারুঘাট | ২০০৯ |
ছুবহে ছাদেক উচ্চ বিদ্যালয় | ডেউয়াতলি,চুনারুঘাট |
দাখিল মাদ্রাসা | স্থান | স্থাপিত তারিখ |
---|---|---|
আজগর আহম্মদ দাখিল মাদ্রাসা | , পাইকপাড়া ইউনিয়ন | |
সায়্যেদ কুতুবুল আউলিয়া দাখিল মাদ্রাসা | নরপতি |
কলেজের নাম | স্থান | স্থাপিত তারিখ |
---|---|---|
চুনারুঘাট সরকারি কলেজ | চুনারুঘাট উপজেলা | ১৯৭৩ |
চুনারুঘাটের মানুষ আঞ্চলিক হবিগঞ্জি ভাষায় কথা বলে থাকেন৷ তাছাড়াও, ত্রিপুরা ককবরক, উরাও, খাড়িয়া, সাওতাল, উড়্যিষা, মুন্ডা ভাষা প্রচলিত আছে৷ উল্লেখ্য খাড়িয়া ভাষাতে হাতে গোনা কয়েকজন মানুষ কথা বলে থাকেন। চা বাগানের মানুষজন এসব ভাষাতে কথা বলে থাকেন৷
চুনারুঘাট উপজেলায় সব ধরনের খেলাধুলা প্রচলিত থাকলেও এই অঞ্চলে জনপ্রিয় খেলা হিসেবে ফুটবল খেলাটি ছোট বড় সকল মানুষের মনে জায়গা করে নিয়েছে ।পাশাপাশি ক্রিকেট খেলাও বেশ জনপ্রিয়।
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.