কিম জং-ইল (জন্মঃ ১৬ ফেব্রুয়ারি, ১৯৪২ - মৃত্যুঃ ১৭ ডিসেম্বর, ২০১১) গণতান্ত্রিক গণপ্রজাতন্ত্রী কোরিয়া বা উত্তর কোরিয়ার শাসক ও প্রধান ব্যক্তিত্ব ছিলেন। শৈশবে তার নাম ছিল ইউরি ইরসেনোভিচ কিম। তিনি সমাজতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল ওয়ার্কার্স পার্টির মহাসচিব ছিলেন। দলটি ১৯৪৮ খ্রিষ্টাব্দ থেকে অদ্যাবধি উত্তর কোরিয়ায় ক্ষমতাসীন রয়েছে। ১৯৯৪ খ্রিষ্টাব্দে স্বীয় পিতা কিম ইল সাংয়ের মৃত্যুর পর ঐতিহ্যবাহী স্তালিনপন্থী সমাজতান্ত্রিক এই দেশটির নেতৃত্ব গ্রহণ করেন।

দ্রুত তথ্য কিম জং ইল김정일, উত্তর কোরিয়ার প্রধান নেতা ...
কিম জং ইল
김정일
Thumb
উত্তর কোরিয়ার প্রধান নেতা
কাজের মেয়াদ
৮ জুলাই, ১৯৯৪  ১৭ ডিসেম্বর, ২০১১[1]
প্রিমিয়ারহং সং-ন্যাম
পাক পং-জু
কিম ইয়ুং-ইল
চো ইয়ুং-রিম
পূর্বসূরীকিম ইল-সাং
উত্তরসূরীকিম জং-উন
কোরিয়ার ওয়ার্কার্স পার্টির মহাসচিব
কাজের মেয়াদ
৮ অক্টোবর, ১৯৯৭  ১৭ ডিসেম্বর, ২০১১
ডেপুটিকিম ইয়ুং-ন্যাম
চো ইয়ুং-রিম
জো মাইয়ুং-রোক
রি ইয়ং-হো
পূর্বসূরীকিম ইল-সাং
উত্তর কোরিয়ার জাতীয় প্রতিরক্ষা কমিশনের সভাপতি
কাজের মেয়াদ
৯ এপ্রিল, ১৯৯৩  ১৭ ডিসেম্বর, ২০১১
ডেপুটিজো মাইয়ুং-রোক
পূর্বসূরীসৃষ্ট পদ
কোরিয়ান পিপিলস্‌ আর্মির সুপ্রিম কমান্ডার
কাজের মেয়াদ
২৪ ডিসেম্বর, ১৯৯১  ১৭ ডিসেম্বর, ২০১১
পূর্বসূরীকিম ইল-সাং
কেন্দ্রীয় সামরিক সংস্থার সভাপতি
কাজের মেয়াদ
৮ অক্টোবর, ১৯৯৭  ১৭ ডিসেম্বর, ২০১১
পূর্বসূরীকিম ইল-সাং
ব্যক্তিগত বিবরণ
জন্ম(১৯৪২-০২-১৬)১৬ ফেব্রুয়ারি ১৯৪২
বেইকদু মাউন্টেইন, জাপান নিয়ন্ত্রণাধীন কোরিয়া(উত্তর কোরীয় দলিল)
(১৯৪১-০২-১৬)১৬ ফেব্রুয়ারি ১৯৪১
ভায়াতস্‌কোয়ে, খবরোভস্ক ক্রেই, সোভিয়েত ইউনিয়ন(সোভিয়েত দলিল)
মৃত্যু১৭ ডিসেম্বর ২০১১(২০১১-১২-১৭)
(৬৯ কিংবা ৭০ বছর)
পিয়ং ইয়াং, উত্তর কোরিয়া
রাজনৈতিক দলকোরিয়ার ওয়ার্কার্স পার্টি
দাম্পত্য সঙ্গীকিম ইয়াং-সুক
সং হাই-রিম
কো ইয়াং-হী
কিম ওক
সন্তানকিম সাল-সং
কিম জং-ন্যাম
কিম জং-চুল
কিম জং-উন
প্রাক্তন শিক্ষার্থীকিম ইল-সাং ইউনিভার্সিটি
ইউনিভার্সিটি অব মাল্টা
স্বাক্ষরThumb
সামরিক পরিষেবা
আনুগত্য উত্তর কোরিয়া
শাখাকোরিয়ান পিপিলস্‌ আর্মি
কাজের মেয়াদ১৯৯১-২০১১
পদওনসু
কমান্ডসুপ্রিম কমান্ডার
উত্তর কোরিয়ার সর্বোচ্চ নেতা
বন্ধ

জন্ম রহস্য

উত্তর কোরিয়া নামে পরিচিত ডেমোক্রেটিক পিপলস রিপাবলিক অব কোরিয়ার শীর্ষ নেতা ছিলেন কিম জং ইল। তিনি দ্বিতীয় কিম জং নামেও পরিচিত। কিম জং ইলের পিতা কিম ইল সাং-কে উত্তর কোরিয়ার জনক বলা হয়। তার জন্ম হয় ১৯১২ খ্রিষ্টাব্দের ১৫ এপ্রিল পিয়ং ইয়ংয়ে। পৃথক রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিতি পাওয়ার পর থেকে সাংয়ের জন্মদিনকে দ্য ডে অব সান হিসেবেই পালন করে আসছে উত্তর কোরিয়ার জনগণ। এই রাষ্ট্রনায়কের ঔরসেই কিম জং ইলের জন্ম। সে সময় গেরিলা যুদ্ধ চলছিল। কোরিয়ার মাউন্ট পেকতু নামীয় সর্বোচ্চ পর্বত চূড়ায় একটি তাঁবুতে তার জন্ম হয়। পর্বত শিখরে প্রসূত শিশুটিই পরবর্তীকালে উত্তর কোরিয়ার রাজনীতিতে মৃত্যুর শেষদিন পর্যন্ত শীর্ষ নেতৃত্বে ছিলেন। তবে তার জন্ম তারিখ নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন কাহিনী প্রচলিত রয়েছে। একটি কাহিনী অনুসারে সাইবেরিয়ার এক গ্রামে তার জন্ম হয় ও নামকরণ করা হয়েছিল ইউরি ইরসেনোভিচ কিম। সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের দলিলপত্র অনুযায়ী তার জন্ম ১৯৪১ খ্রিষ্টাব্দে ১৬ ফেব্রুয়ারি তারিখে। অন্য কাহিনী অনুসারে অর্থাৎ উত্তর কোরিয়ার দলিলপত্র অনুযায়ী তার জন্ম হয়েছিল ১৯৪২ খ্রিষ্টাব্দের ১৬ ফেব্রুয়ারি তারিখে।[2]

শিক্ষাজীবন

সরকারী নথিপত্র অনুযায়ী জানা যায় যে, কিম সেপ্টেম্বর, ১৯৫০ থেকে আগস্ট, ১৯৬০-এর মধ্যে সাধারণ শিক্ষাগ্রহণ করেন। তিনি পিয়ং ইয়াংয়ের ৪নং প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ১নং মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে (নামস্যান হায়ার মিডিল স্কুল) অধ্যয়ন করেন। এরফলে তার বৈদেশিক শিক্ষা বেশ বিতর্কের মধ্যে পড়ে। অনেকে বিশ্বাস করেন যে তিনি গণপ্রজাতন্ত্রী চীনে শৈশবকালীন শিক্ষাগ্রহণ করেন। এটি হয়েছে মূলতঃ কোরীয় যুদ্ধ থেকে তাকে নিরাপদ রাখার স্বার্থে।[3]

বিদ্যালয় চলাকালেই তিনি রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েন। তিনি চিলড্রেনস্‌ ইউনিয়নের সক্রীয় কর্মী ছিলেন।[4] এছাড়াও, স্টাডি গ্রুপে মার্কসবাদ এবং অন্যান্য সাহিত্যের সাথে জড়িত ডেমোক্রেটিক ইয়ুথ লীগের সমর্থক ছিলেন তিনি। সেপ্টেম্বর, ১৯৫৭ সালে তিনি ডেমোক্রেটিক ইয়ুথ লীগের সহঃ সভাপতি নির্বাচিত হন।

১৯৭০-এর দশকের শুরুতে কিম ইউনিভার্সিটি অব মাল্টা থেকে ইংরেজি ভাষায় শিক্ষাগ্রহণ করেন।[5] মাল্টায় অবস্থানের সময় স্বল্প মেয়াদের ছুটির দিনগুলোতে তিনি প্রধানমন্ত্রী ডোম মিনটোফের আতিথ্য গ্রহণ করেছিলেন।[6]

রাজনৈতিক জীবন

পিতার ঘনিষ্ঠ সান্নিধ্যে থেকে তিনি হাতে-কলমে রাজনীতি শিখে নিয়েছিলেন। পিতা কিম ইল সাং ১৯৪৮ খ্রিষ্টাব্দের ৯ সেপ্টেম্বর ওয়ার্কার্স পার্টি নামক রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি শুধু উত্তর কোরিয়ার জন্য এই দল গঠন করেন। সে সময়ই তিনি উত্তর কোরিয়াকে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা করেন। ১৯৫০ খ্রিষ্টাব্দের ২৫ জুন উত্তর কোরিয়া পৃথক হওয়ার জন্য দক্ষিণ কোরিয়ার ওপর আক্রমণ চালায়। ১৯৫৩ খ্রিষ্টাব্দের ২৭ জুলাই সাময়িক যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করা হয়। এরপর থেকেই উত্তর কোরিয়া ও দক্ষিণ কোরিয়া পৃথক দেশ হিসেবে বিশ্বে পরিচিত হয়ে আসছে। শুরু থেকেই উত্তর কোরিয়া সমাজতান্ত্রিক দেশ হিসেবে পরিচালিত হচ্ছে। ১৯৭৩ খ্রিষ্টাব্দের সেপ্টেম্বর মাসে আনুষ্ঠানিকভাবে রাজনীতিতে আসেন কিম জং ইল। ১৯৭৪ খ্রিষ্টাব্দে ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা হিসেবে নির্বাচিত হন তিনি। এর মাধ্যমে উত্তর কোরিয়ার ভবিষ্যৎ নেতা হিসাবে তার আসনটি পাকাপোক্ত হয়ে যায়। তিনি উত্তর কোরিয়ায় সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থাকে আরও সুদৃঢ় অবস্থানে নিয়ে যেতে সক্ষম হন। সেই সময় থেকেই তিনি উত্তর কোরিয়ার নেতৃত্ব দিয়ে এসেছেন। ১৯৮৩ খ্রিষ্টাব্দের ৮ জানুয়ারি কিম জং তৃতীয়বারের মতো পিতা হন। এই পুত্র সন্তানের নাম কিম জং উন। ১৯৯১ খ্রিষ্টাব্দের ২৪ ডিসেম্বর কিম জং ইল উত্তর কোরিয়ার সেনাবাহিনীর নামকরণ করেন সুপ্রিম কমান্ডার অফ দ্য কোরিয়ান পিপিলস্‌ আর্মি। ঐ সময় জাতিসংঘও দ্বি-খণ্ডিত কোরিয়াকে পৃথক দুটি দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। ১৯৯৩ খ্রিষ্টাব্দের এপ্রিল মাসে কিম দেশের জাতীয় প্রতিরক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন। ১৯৯৪ খ্রিষ্টাব্দের ৮ জুলাই পিতা কিম ইল সাং মারা গেলে তার উত্তরসূরি হিসেবে ক্ষমতাসীন হন কিম জং ইল। এরপর থেকে উত্তর কোরিয়ার শাসক হিসেবে দেশ পরিচালনা করেছেন। দেশ পরিচালনা করতে গিয়ে নানা বাধা-বিপত্তি সবসময় সাহস ও ধৈর্য্যের সঙ্গে মোকাবেলা করতে হয়েছে তাকে।[7]

পদবী ধারণ

  • সদস্য, পার্টি সেন্টার, কোরিয়ার ওয়ার্কার্স পার্টি (১৯৭০-এর দশকে)
  • সহঃ-সভাপতি, কোরিয়ার ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটি (১৯৭২ - ১৯৮০)
  • প্রিয় নেতা (Chinaehaneun Jidoja) (১৯৭০ দশকের শেষদিক - ১৯৯৪)
  • সদস্য, প্রেসিডিয়াম কমিটি, সুপ্রিম পিপিলস্‌ এ্যাসেম্বলী
  • সম্পাদক, কোরিয়ার ওয়ার্কার্স পার্টি, (১৯৮০ - ১৯৯৪)
  • সুপ্রিম কমান্ডার, কোরিয়ান পিপিলস্‌ আর্মি (২৫ ডিসেম্বর, ১৯৯১ – ১৭ ডিসেম্বর, ২০১১)
  • মার্শাল, উত্তর কোরিয়া (১৯৯৩ - ২০১১)
  • সভাপতি, জাতীয় প্রতিরক্ষা কমিশন (১৯৯৩ - ২০১১)
  • মহান নেতা (Widehan Ryongdoja) (জুলাই, ১৯৯৪ – ডিসেম্বর, ২০১১)
  • মহাসচিব, কোরিয়ার ওয়ার্কার্স পার্টি (অক্টোবর, ১৯৯৭ – ডিসেম্বর, ২০১১)
  • সভাপতি, সেন্ট্রাল মিলিটারী কমিশন (অক্টোবর, ১৯৯৭ – ডিসেম্বর, ২০১১)

মূল্যায়ন

বিশ্বখ্যাত ফোর্বস ম্যাগাজিন ২০১০ খ্রিষ্টাব্দে কিম জং ইল-কে বিশ্বের অন্যতম ক্ষমতাধর ব্যক্তি হিসেবে ঘোষণা করে। সাময়িকী কর্তৃপক্ষের তালিকায় বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তি হিসেবে ৩১তম স্থান দখল করেছিলেন তিনি।[8]

মৃত্যু

১৭ ডিসেম্বর, ২০১১ শনিবার হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তার মৃত্যু হয়। মৃত্যুর দু'দিন পর উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন ও বার্তা সংস্থা কেসিএনএ সোমবার এই মৃত্যুসংবাদ প্রথম প্রচার করে। সরকারী বিবৃতিতে বলা হয়, মাত্রাতিরিক্ত শারীরিক ও মানসিক চাপের কারণেই তার মৃত্যু হয়েছে। ঐদিন রাজধানী পিয়ং ইয়ংয়ের বাইরে ট্রেনে সফরকালে তার হার্ট এটাক হয়। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬০ বৎসর। কিম জং ইলের মৃত্যুতে ১৭ থেকে ২৯ ডিসেম্বর, ২০১১ পর্যন্ত ১৩ দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করা হয়েছে। ২৮ ডিসেম্বর, ২০১১ তারিখে রাজধানী পিয়ংইয়ংয়ে শেষকৃত্য অনুষ্ঠিত হবে। তার তৃতীয় পুত্র কিম জং উনকে উত্তরসূরি হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।[9] মৃত্যুর আগে দীর্ঘদিন যাবৎ তার শারীরিক অসুস্থতা নিয়ে গুঞ্জন ছিল। তার মৃত্যু হয়েছে এরকম গুজব বিভিন্ন সময়ে ছড়িয়েছে। তিনি ডায়াবেটিসে ভুগছিলেন। এছাড়া কয়েকবার তিনি পক্ষাঘাতেও আক্রান্ত হয়েছেন বলে শোনা গেছে। সর্বশেষ উইকিলিকসে প্রকাশিত মার্কিন গোপন নথি অনুযায়ী তিনি ইপিলিপ্সিতে ভুগছিলেন।

তথ্যসূত্র

বহিঃসংযোগ

Wikiwand in your browser!

Seamless Wikipedia browsing. On steroids.

Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.

Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.