Loading AI tools
পঞ্জিকা অনুযায়ী মানুষের জন্মগ্রহণের দিবস উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
জন্মদিন হচ্ছে পঞ্জিকা অনুযায়ী মানুষের জন্মগ্রহণের দিবস। সাধারণত জন্মবার্ষিকীতে কারো জন্মদিন উৎসবের মাধ্যমে পালন করা হয়ে থাকে। সাধারণত বছরের একটি নির্দিষ্ট মাসের নির্দিষ্ট তারিখে শিশুর পক্ষে তার পিতা-মাতা, আত্মীয়-স্বজন কিংবা ব্যক্তি কর্তৃক উদ্যাপিত হয় এই জন্মদিন। অর্থাৎ, বৎসরের নির্দিষ্ট দিনে জন্মগ্রহণকারী শিশু বা ব্যক্তির জন্ম উপলক্ষে যে আনন্দঘন উৎসব-আয়োজনের পরিবেশ সৃষ্টি করা হয়, তাই জন্মদিন নামে আখ্যায়িত করা হয়। সাধারণত শিশুদেরকে কেন্দ্র করেই এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। তাছাড়াও, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কিশোর-কিশোরী, যুবক-যুবতীসহ বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদেরকেও জন্মদিন পালন করতে দেখা যায়। সাড়ম্বর উদ্যাপন ছাড়াও জন্মদিন উদ্যাপনের প্রধান মাধ্যম শুভেচ্ছা জ্ঞাপন।
মানবীয় গুণাবলীর অধিকারী মানুষ আবেগপ্রবণ জাতি হিসেবে চিহ্নিত। মূলত মায়ের গর্ভ থেকে ভূমিষ্ঠ শিশুর এক বছর পূর্তিতে জন্মদিনের আয়োজন করা হয় মহাআড়ম্বরে। সন্তান কিংবা ব্যক্তিকে তার জন্মদিবসটির গুরুত্ব, সামাজিক প্রেক্ষাপটে চিহ্নিতকরণ ও লোকদের সাথে আরো পরিচিত করাও এর অন্যতম উদ্দেশ্য। কিংবা বাবা-মায়ের আদরের ধন হিসেবে শিশুটিকে সন্তুষ্ট ও খুশি করার জন্যও জন্মদিন পালন করা হয়। কখনও কখনও বেসরকারী পর্যায়ে কোন প্রতিষ্ঠানের উৎপত্তির তারিখকে কেন্দ্র করে পরবর্তী বছরগুলোতে নির্দিষ্ট তারিখে জন্মদিনের আয়োজন করা হয়। ঐ দিনে প্রতিষ্ঠানের পরিবেশ থাকে অত্যন্ত আনন্দঘন ও উৎফুল্ল। কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ সংশ্লিষ্টদের মাঝে বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা, আনন্দ-স্ফূর্তির বহিঃপ্রকাশ দেখা যায়। যখন ব্যক্তির বয়স মাসের নির্দিষ্ট তারিখ ও বছর একই পর্যায়ে অবস্থান করে তখন তা মহা জন্মদিন বা লাকী বার্থডে, শ্যাম্পেন ডে অথবা স্টার বার্থডে নামে অভিহিত করা হয়।
যার জন্ম ২০১০ সালে, পরবর্তী বৎসর অর্থাৎ ২০১১-এ তার প্রথম জন্মবার্ষিকী উদযাপিত হবে। প্রথম জন্মবার্ষিকী হলেও এটি তার ২য় জন্মদিবস। প্রথম জন্মবার্ষিকী বা ২য় জন্ম দিবসে একজনের বয়স ১ হয়। সে দ্বিতীয় বৎসরে প্রবেশ করে। যাদের জন্ম জর্জিয়ান পঞ্জিকার ফেব্রুয়ারি মাসের ২৯ তারিখে তাদের জন্মদিন কেবল অধিবর্ষে উদ্যাপন করা সম্ভব।
জন্মদিনে মোমবাতি, বেলুন ও কেক অত্যাবশকীয় উপকরণ হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে অনেক আগে থেকেই। অর্ডার দিয়ে তৈরীকৃত কেকে সাধারণ ব্যক্তির নাম থাকে এবং এর চতুর্দিকে কিংবা অভ্যন্তরে বয়সের সাথে মিল রেখে মোমবাতির সংখ্যা নির্ধারিত হয়। এছাড়াও, মিষ্টি, বিস্কুট, কলা, চা, কফি, কোমল পানীয়, দধি ইত্যাদির ব্যবস্থা করা হয়। মোমবাতিতে শিখা প্রজ্জ্বলনের পর ছুড়ি দিয়ে কেক কেটে শিশু বা ব্যক্তির মুখে দেয়ার মাধ্যমে জন্মদিন শুরু হয়।পরবর্তীতে কেকের বাকী অংশ টুকরো টুকরো করে আমন্ত্রিত অতিথিদেরকে দেয়া হয়।
গুরুত্ব অনুযায়ী পূর্ব থেকেই নির্ধারিত জন্মদিনের কার্ডের মাধ্যমে আমন্ত্রিত অতিথিদেরকে জ্ঞাত করানো হয়। কার্ডে কততম জন্মদিন, কখন, আপ্যায়ণ, পিতা-মাতা, আত্মীয়-স্বজনের পরিচিতিসহ শিশু বা ব্যক্তির ছবি থাকে। এছাড়াও, দৈনিক পত্রিকাগুলোর বিজ্ঞাপন অংশে ছবিসহ শিশু বা ব্যক্তির দীর্ঘায়ু কামনা করে ছড়া কিংবা জন্মদিনের শুভেচ্ছা বাণী লেখা হয়। অনেকাংশে পাড়া-প্রতিবেশীদেরকে শুধুমাত্র মৌখিকভাবেই জন্মদিনের নিমন্ত্রণ করা হয়।
নতুন পোশাক পরিধান করা শিশু কিংবা ব্যক্তির জন্য জন্মদিনে একান্ত পালনীয় বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। এছাড়াও, নিমন্ত্রিত কিংবা আমন্ত্রিত ব্যক্তিদেরকে নিজেদের স্বাচ্ছন্দ্য ও রূচিমাফিক পোশাক পড়ে আসেন। পরিবার কিংবা প্রাতিষ্ঠানিক আর্থিক সচ্ছলতার উপর নির্ভর করে জন্মদিনের আয়োজন। সাধারণত সচ্ছল পরিবারগুলোই জন্মদিন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকে। ফলে ঐদিনে সৃষ্ট জন্মদিন উৎসব বেশ ঝাঁক-ঝমকপূর্ণ হয়ে থাকে।
জনপ্রিয় গান হিসেবে জন্মদিনে “হ্যাপি বার্থডে টু ইউ” গানটির বহুল ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। এছাড়াও ভারতীয় বাংলা সঙ্গীত হিসেবে “জন্মদিনে কি আর দেব তোমায় উপহার / বাংলায় নাও ভালোবাসা, হিন্দিতে নাও পেয়ার”; “জন্মদিন আজ, গলাটা ছেড়ে গা” অথবা “এলো এক অচেনা বছর”; কিংবা বাংলাদেশে, বাংলায়, মাইলস ব্যান্ডের "আজ জন্মদিন তোমার" ইত্যাদি গানের ব্যাপক ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এসকল গান ঘরে বাজানো ছাড়াও ইদানীং অনেকেই রেডিও বা অন্যান্য গণমাধ্যমের দ্বারা একজন অন্যজনকে উপহারস্বরূপ শুনিয়েও থাকে।
শহরাঞ্চলে জন্মদিন উপলক্ষে খাওয়া-দাওয়া সাধারণত চাইনিজ রেস্তোরাঁ কিংবা ছাদের উপরে সামিয়ানা টাঙ্গিয়ে করা হয়। গ্রামাঞ্চলে পরিবার গৃহেই আয়োজন করা হয়। অন্যান্য খাবারের পাশাপাশি বাঙ্গালী সমাজে জন্মদিন ও অন্নপ্রাশনে দুধ সহযোগে পায়েস এক অতিপরিচিত খাবার হিসেবে অবশ্যম্ভাবী। আবার, সন্তানের মঙ্গল ও দোয়া-আশীর্বাদ কামনার লক্ষ্যে প্রতিবেশীদের মাঝে মিষ্টি জাতীয় খাবার বিতরণ করতেও দেখা যায়।
পূর্বে ডাকযোগে জন্মদিনের কার্ড প্রেরণ করা হতো যা বর্তমানে প্রগতি ও আধুনিক প্রযুক্তির পাল্লায় পড়ে প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছে। ব্যক্তি ও পরিবেশের উপর নির্ভর করে আমন্ত্রিত অতিথিদেরকে খেলনা, খাবার, নগদ অর্থ, প্রাইজবন্ড কিংবা অন্যান্য উপহারাদি আদান-প্রদান করতে দেখা যায়। কিংবা অতিথিদেরকে কার্ডে জন্মদিনের উপহার না আনার জন্য উল্লেখ করে স্বনির্বন্ধ অনুরোধ করা হয়।
কোন ব্যাক্তির জন্মদিনে তাকে বিভিন্ন জন্মদিনের শুভেচ্ছা বার্তার মাধ্যমে শুভেচ্ছা জানানো হয়। কার্ডে লিখে, বার্তা পাঠিয়ে কিংবা সরাসরি শুভেচ্ছা জানানো হয়ে থাকে।
ইসলাম ধর্মে জন্মদিন পালন করা বৈধ নয় মর্মে স্পষ্ট ফতোয়া দিয়েছে উপমহাদেশের বিখ্যাত ইসলামী বিদ্যাপিঠ দারুল উলূম দেওবন্দ। [1] এছাড়াও সৌদি আরবের সর্বোচ্চ ফতোয়াবোর্ড আল-লাজনাতুদ দায়িমাও এই ফতোয়া দিয়েছে। [2] সৌদিআরবের প্রধান মুফতি বিন বায (রঃ) জন্মদিন পালনকে বিদআত ও অবৈধ বলেছেন। [3]
লুসিফার নামক শয়তানের পূজার ধর্মকে Satanic Religion বলা হয়। শয়তানের চার্চের প্রতিষ্ঠাতা লেভি (Lavey) শয়তানের বাইবেলে (Satanic Bible) লিখেছে- শয়তানের ধর্মে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উৎসব হল নিজের জন্মদিন পালন। [4]
শিশুর জন্মদিনে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের প্রাধান্য লক্ষ্য করা যায়। শিশুকে প্রসাধনসামগ্রী ও তিলক-চন্দন দিয়ে সাজানোর পর ধান, দূর্বা ও উলুধ্বনি সহযোগে উজ্জ্বল আলোর পরিস্ফূটন দেখা যায়। অনুষ্ঠানকে স্মরণীয় করে রাখতে ক্যামেরা ও ভিডিওর ব্যবস্থা করা হয় যাতে পরবর্তীতে স্মৃতিরোমন্থণ করা যায়। এছাড়াও, গান-বাজনা, নৃত্য, মুকাভিনয়, কৌতুক (হাস্যরসাত্মক সৃষ্টিকর্ম) কিংবা যাদু প্রদর্শনীসহ অন্যান্য হালকা বিনোদনের ব্যবস্থাও থাকে। এছাড়াও, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারীসহ বিভিন্ন ধর্মের মধ্যে জন্মদিন পালন করা হয়ে থাকে।
শাস্ত্রীয় বিবরণ ও জ্যোতিষ গণনার ভিত্তিতে লোক বিশ্বাস অনুযায়ী ভগবান শ্রীকৃষ্ণের জন্ম হয়েছিল ৩২২৮ খ্রীষ্টপূর্বাব্দের ১৮ অথবা ২১ জুলাই। এ দিনটি জন্মাষ্টমী নামে পরিচিত। ভাদ্র ও মাঘ মাসের শুক্লা চতুর্থীকে গণেশ চতুর্থী বলা হয়। হিন্দু বিশ্বাসে এই দিনটি গণেশের জন্মদিন।
হিন্দু ধর্মে দ্বাদশ অথবা ত্রয়োদশ বছরে জন্মদিন পালিত হয় পৈত পরিধান উৎসব হিসেবে। বয়স পূর্তিতে শিশু একটি বড় সূতার কুণ্ডলী কাঁধের একপার্শ্বে ঝুলিয়ে রেখে পরিধান করে। এছাড়াও, এ উৎসবটি উপনয়ণ নামে স্বীকৃত। হিন্দুদের বর্ণপ্রথায় উচ্চতর বর্ণ হিসেবে ব্রাহ্মণ পরিবারের সংস্কৃতিতে এ উৎসবটি মূলতঃ বালকের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।[5]
মূলতঃ ১৪ বৎসর থেকে ২১ বৎসরের মধ্যে জন্মদিন পূর্তিগুলোর মাধ্যমে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে শিশু-কিশোর বিভিন্ন ধরনের যোগ্যতা অর্জনের অন্যতম ভিত্তিসূচক হিসেবে কাজ করে। তন্মধ্যে -
ঐতিহাসিকভাবে স্বীকৃত ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব, জাতীয় বীর কিংবা প্রতিষ্ঠাতার সম্মানার্থেও স্বাধীন দেশসমূহ সরকারি ছুটি প্রদান করে। যেমন:
যাদের জন্মদিন ফেব্রুয়ারির ২৯ তারিখে, তাদের অপেক্ষা করতে হয় চার-চারটি বৎসর পর অর্থাৎ লিপ-ইয়ার বা অধি-বর্ষে। এছাড়াও, উপমহাদেশে বিশেষতঃ বাংলাদেশে পারিবারিকভাবে নির্দিষ্ট দিনকে জন্মদিন হিসেবে পালন করলেও দিনক্ষণ ভুলে যাওয়া, ঝামেলা এড়ানো কিংবা হিসাব রাখার সুবিধার্থে অনেক অভিভাবকই সন্তানের জন্মদিনকে ১ জানুয়ারি হিসেবে চিহ্নিত করে জন্মনিবন্ধনের মাধ্যমে বিদ্যালয়ের খাতায় নাম লেখান।
স্বাধীন দেশগুলোয় প্রতিটি নাগরিকের জন্য জাতীয় পরিচয় পত্র কিংবা আইডি কার্ড, ব্যাংক হিসাব নং, শিক্ষাগত সনদসহ দৈনন্দিন জীবনে অনেক কাগজপত্রেই নাম, ঠিকানা, রক্তের গ্রুপসহ জন্মদিন বা তারিখের কথা উল্লেখ থাকে।
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.