কঠোপনিষদ্

হিন্দুধর্মের প্রাচীন সংস্কৃত ধর্মগ্রন্থগুলির মধ্যে একটি উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ

কঠোপনিষদ্

কঠোপনিষদ্‌ (সংস্কৃত: कठोपनिषद्; আইএএসটি: Kaṭhopaniṣad) হল একটি সংস্কৃত পাঠ্য, এবং মুখ্য উপনিষদের শ্রেণীবদ্ধ। পাঠ্যটি যজুর্বেদের কঠ শাখার শেষ আটটি ক্ষুদ্র অংশের মধ্যে নিহিত।[][] পাঠ্যটি কাঠকোপনিষদ্‌ নামেও পরিচিত। মুক্তিকা ক্রমের ১০৮টি উপনিষদের তেলুগু ভাষার সংকলনে, রাম দ্বারা হনুমানকে বর্ণিত, এটি ৩ নম্বরে তালিকাভুক্ত।[]

কঠোপনিষদ্‌ দু-টি অধ্যায়ে বিভক্ত। প্রত্যেকটি অধ্যায় আবার তিনটি করে ‘বল্লী’ বা অংশে বিভক্ত। মনে করা হয়, প্রথম অধ্যায়টি দ্বিতীয় অধ্যায়ের পূর্বে রচিত হয়েছিল।[] এই উপনিষদটিতে আছে ঋষি বাজশ্রবসের পুত্র নচিকেতাহিন্দু মৃত্যুদেবতা যমের সাক্ষাৎকারের কিংবদন্তি উপাখ্যান। তাদের কথোপকথনের মধ্যে দিয়ে মানব-প্রকৃতি, জ্ঞান, আত্মামোক্ষ-সংক্রান্ত বিষয়গুলি উঠে আসে।[]

Thumb
কঠোপনিষদের একটি পাণ্ডুলিপি পাতা– মন্ত্র ১.১.১ থেকে ১.১.৩।Katha Upanishad, Krishna Yajurveda (Sanskrit, Devanagari script)

কঠোপনিষদ্‌ গ্রন্থের কালক্রম অস্পষ্ট ও বিতর্কিত। বৌদ্ধ পণ্ডিতেরা বলেছেন, এই গ্রন্থটি সম্ভবত আদিযুগের বৌদ্ধ ধর্মগ্রন্থগুলির পূর্বে (খ্রিস্টপূর্ব ৫ম শতাব্দ) রচিত হয়েছিল।[] কিন্তু হিন্দু পণ্ডিতেরা বলেছেন, এই গ্রন্থের রচনাকাল সম্ভবত খ্রিস্টপূর্ব ১ম সহস্রাব্দের প্রথম ভাগ। অর্থাৎ আদিযুগের বৌদ্ধ ধর্মগ্রন্থগুলির পূর্বেই কঠোপনিষদ্‌ রচিত হয়েছিল।[]

কঠোপনিষদ্‌ বেদান্ত দর্শনের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রাচীন সংস্কৃত শাস্ত্র। হিন্দুধর্মের বিভিন্ন সম্প্রদায়ের কাছে এটি প্রভাবশালী শ্রুতিশাস্ত্রও বটে। এই উপনিষদের বর্ণনা অনুযায়ী, “আত্মার অস্তিত্ব রয়েছে” এবং এই উপনিষদ্‌ “পরমানন্দ-স্বরূপ আত্মজ্ঞান অনুসন্ধানে”র শিক্ষা দেয়। অন্যান্য মুখ্য উপনিষদের মতো কঠোপনিষদ্‌ গ্রন্থটিও এই আদর্শের ভিত্তিতেই উক্ত মতবাদের ব্যাখ্যা দান করেছে। এই উপনিষদের মাধ্যমেই হিন্দু ও বৌদ্ধ দর্শনের মধ্যে যে পার্থক্য তা স্পষ্ট রূপ নিয়েছে। কারণ, বৌদ্ধধর্মের শিক্ষা অনুসারে “আত্মার অস্তিত্ব নেই” এবং বৌদ্ধধর্ম শিক্ষা দেয় “পরমানন্দ-স্বরূপ শূন্যতারই অনুসন্ধান করা” মানবের কর্বত্য।[][] কঠোপনিষদ্‌ গ্রন্থের বিস্তারিত শিক্ষাবলির বিভিন্ন ব্যাখ্যা পাওয়া যায়। আদি শঙ্কর প্রমুখ অদ্বৈতবাদী ধর্মগুরুরা যেমন মূল বৈদান্তিক মত অনুসরণ করে এই উপনিষদ্‌টিকে ব্যাখ্যা করেছেন,[][][১০] তেমনই পরবর্তীকালে দ্বৈতবাদী পণ্ডিতেরাও সাংখ্য মতানুসারে এই উপনিষদের পৃথক ব্যাখ্যা উপস্থাপনা করেছেন।[১১]

কঠোপনিষদ্‌ সর্বাধিক পঠিত ও চর্চিত উপনিষদ্‌গুলির অন্যতম। খ্রিস্টীয় ১৭শ শতাব্দীতে এই উপনিষদ্‌টি ফারসি ভাষায় অনূদিত হয়। সেই অনুবাদ অবলম্বনে পরবর্তীকালে এই উপনিষদ্‌টি লাতিন ভাষায় অনূদিত হয় এবং সমগ্র ইউরোপে বিতরিত হয়।[১২] ম্যাক্স মুলার ও অন্যান্য অনেক গবেষক এই উপনিষদ্‌টি অনুবাদ করেছিলেন। আর্থার সোফেনহায়ার প্রমুখ অন্যান্য দার্শনিকেরা এই উপনিষদ্‌টির প্রশংসা করেছিলেন। এডউইন আর্নল্ড কবিতায় এটিকে “মৃত্যুর গোপন কথা” ("The Secret of Death") বলে উল্লেখ করেন। রালফ ওয়াল্ডো এমারসন তার ইমমর্টালিটি নামক প্রবন্ধের শেষে উপনিষদ্‌টির কেন্দ্রীয় উপাখ্যানের কৃতিত্ব স্বীকার করে নেন। তার ব্রহ্ম নামক কবিতাটিতেও তিনি একই কাজ করেছিলেন।[][১৩]

পাদটীকা

তথ্যসূত্র

বহিঃসংযোগ

Loading related searches...

Wikiwand - on

Seamless Wikipedia browsing. On steroids.