Loading AI tools
অ্যাসল্ট রাইফেল উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
একে-৪৭ বর্তমান বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় আগ্নেয়াস্ত্র। এটি একটি গ্যাস পরিচালিত স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র। এর ডিজাইনার রাশিয়ার (তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন) মিখাইল কালাশনিকভ। কালাশনিকভ ১৯৪৭ সালে এই উন্নত স্বয়ংক্রিয় রাইফেল তৈরি করেন বলে তার নামানুসারে এর নাম দেয়া হয় আভটোমাট (স্বয়ংক্রিয়) কালাশনিকভ ১৯৪৭ বা সংক্ষেপে একে-৪৭।[8] এ পর্যন্ত প্রায় ১০ কোটিরও অধিক এই অস্ত্র বিক্রি হয়েছে এবং বিশ্বের প্রায় ৫০টিরও বেশি দেশের সামরিক বাহিনীতে এটি ব্যবহৃত হচ্ছে। যা কিনা দুনিয়ার সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত এবং জনপ্রিয় রাইফেল। একে ৪৭ এর জনপ্রিয়তার অন্যতম কারণ এর সহজ ব্যবহার, নির্ভরতা ও রক্ষাণাবেক্ষণ ইত্যাদি। এটাকে বিশ্বের প্রথম কার্যকর অটোমেটিক রাইফেল বলা হয়। ১৯৫১ সাল থেকে এখনও এটি ব্যবহৃত হয়ে আসছে। সৈন্যদের মধ্যে এর ব্যাপক জনপ্রিয়তার মূল কারণ এটি জলে ভিজিয়ে, ধুলাতে রেখে বা এর উপর দিয়ে রাস্তা মেরামতের রোলার চালানোর পরও এটিকে আগের মতই ব্যবহার করা যায়, যা এর সমপর্যায়ের অন্যান্য অস্ত্রের ক্ষেত্রে অসম্ভব।
একে-৪৭ | |
---|---|
৬এইচ২ বায়োনেট সহ একে-৪৭ | |
প্রকার | অ্যাসল্ট রাইফেল |
উদ্ভাবনকারী | সোভিয়েত ইউনিয়ন |
ব্যবহার ইতিহাস | |
ব্যবহারকাল | ১৯৪৯–বর্তমান (বিশ্বব্যাপি) ১৯৪৯–১৯৭৮ সোভিয়েত ইউনিয়ন |
ব্যবহারকারী | দেখুন ব্যবহারকারী |
যুদ্ধে ব্যবহার | *১৯৫৬ সালের হাঙ্গেরিয়ান বিপ্লব[1]
|
উৎপাদন ইতিহাস | |
নকশাকারী | মিখাইল কালাশনিকভ |
নকশাকাল | ১৯৪৬–১৯৪৮[2] |
উৎপাদনকারী | কালাশনিকভ কনসার্ন এবং নরিনকো সহ অন্যান্য বিভিন্ন |
উৎপাদনকাল | ১৯৫৯–১৯৬৯ |
উৎপাদন সংখ্যা | ≈ 75 million AK-47s, 100 million Kalashnikov-family weapons.[3][4] |
সংস্করণসমূহ | দেখুন সংস্করণসমূহ |
তথ্যাবলি | |
ওজন | ম্যাগাজিন ছাড়া: ৩.৪৭ কেজি (৭.৭ পা) ম্যাগাজিন, খালি: ০.৪৩ কেজি (০.৯৫ পা) (early issue)[5] ০.৩৩ কেজি (০.৭৩ পা) (স্টিল)[6] ০.২৫ কেজি (০.৫৫ পা) (প্লাস্টিক)[7] ০.১৭ কেজি (০.৩৭ পা) (হালকা ধাতু)[6] |
দৈর্ঘ্য | Fixed wooden stock: ৮৮০ মিমি (৩৫ ইঞ্চি)[7] ৮৭৫ মিমি (৩৪.৪ ইঞ্চি) folding stock extended ৬৪৫ মিমি (২৫.৪ ইঞ্চি) stock folded[5] |
ব্যারেলের দৈর্ঘ্য | সার্বিক লম্বা: ৪১৫ মিমি (১৬.৩ ইঞ্চি)[7] Rifled bore length: ৩৬৯ মিমি (১৪.৫ ইঞ্চি)[7] |
কার্টিজ | 7.62×39mm |
কার্যপদ্ধতি/অ্যাকশন | গ্যাস-চালিত, রোটেটিং বোল্ট |
গুলির হার | Cyclic rate of fire: ৬০০ রাউন্ড/মিনিট[7] Combat rate of fire: Semi-auto 40 rds/min[7] Bursts 100 rds/min[7] |
নিক্ষেপণ বেগ | ৭১৫ মি/সে (২,৩৫০ ফুট/সে)[7] |
কার্যকর পাল্লা | ৩৫০ মি (৩৮০ গজ)[7] |
ফিডিং | 30-round detachable box magazine[7] There are also 5- 10-, 20- and 40-round box and 75- and 100-round drum magazines available |
সাইট | 100–800 m adjustable iron sights Sight radius: ৩৭৮ মিমি (১৪.৯ ইঞ্চি)[7] |
২০০৪ সালের হিসাবে, "আনুমানিক ৫০০ মিলিয়ন বিশ্বব্যাপী আগ্নেয়াস্ত্রের ভেতর, প্রায় ১০০ মিলিয়ন কালাশনিকভ পরিবারের অন্তর্গত, যার তিন-চতুর্থাংশ হচ্ছে একে-৪৭-গুলো"।[3]
একে ৪৭ এর অন্যতম বৈশিষ্ট হল এর বুলেট এর মারাত্বক ভেদন ক্ষমতা ,এটি ৭.৬২*৩৯ মি.মি বুলেটকে ৭১৫ মিটার/সেকেন্ডে ছোঁড়ে যা ৮ ইঞ্চি কাঠ এবং ৫ ইন্চি কনন্ক্রিট ভেদ করতে পারে। এছাড়া এতে কষ্টমাইজ বুলেট ব্যবহার করা যায়। এতে সিঙ্গেল শট, ব্রাস্ট অব ফায়ার এবং গ্রেনেড ছোঁড়ার সুবিধা আছে । নির্ভরতার দিক দিয়ে আজও একে ৪৭ অনন্য। একে ৪৭ এ কখনো ব্যাক ফায়ার হয় না। এটিকে দুনিয়ার যেকোন স্থানে ব্যবহার করা যায়। তীব্র শীত,গরম,ভেজা আবহওয়াতেই এর কিছু হয় না। অন্যান্য রাইফেলের তুলনায় একে-৪৭ জ্যাম হবার রেটও কম। বর্তমান বিশ্বের সব দেশই একে ৪৭ বা এর বিভিন্ন সংস্করনের রাইফেল ব্যবহার করে থাকে। বাংলাদেশে সেনাবাহিনীতে একে ৪৭ এর চাইনিজ সংস্করন টাইপ ৫৬ ব্যবহৃত হয়।
কালাশনিকভের পূর্ণ নাম মিখাইল তিমোফিয়েভিচ কালাশনিকভ। তিনি সাবেক সোভিয়েট সেনাবাহিনীর একজন লে. জেনারেল। ১৯১৯ সালের ১০ নভেম্বর সাইবেরিয়ার আলতাই অঞ্চলে কুরিয়া নামে একটি গ্রামে কৃষক পরিবারে তার জন্ম। তিমোফেল ও আলেকসান্দ্রা কালাশনিকভ দম্পতির তিনি সপ্তদশ সন্তান। ১৯৩৮ সালে তিনি সোভিয়েট রেড আর্মিতে যোগদান করেন। ২৪তম ট্যাংক রেজিমেন্টের সিনিয়র ট্যাংক কমান্ডার হিসাবে পদোন্নতি পান তিনি। ১৯৪১ সালের অক্টোবরে ব্রায়ানস্কে তিনি জার্মান বাহিনীর গুলিতে মারাত্মকভাবে আহত হন। আহত হওয়ায় তিনি ৬ মাস ছুটিতে ছিলেন। জার্মানদের হাতে উন্নততর অস্ত্র থাকায় রাতে তার সুনিদ্রা হতো না। ছুটিতে থাকাকালে একটি নয়া কারবাইন তৈরির ধারণা তার মাথায় আসে। নিজের ধারণাকে কাজে লাগাতে তিনি মাতাই অস্ত্র কারখানায় যান। কর্তৃপক্ষ তাকে তার উদ্ভাবনী ক্ষমতা ব্যবহারের সুযোগ দেয়। তিনি আমেরিকান এম-১ এবং জার্মান এসটিজি-৪৪ এর ডিজাইনের সর্বোত্তম কৌশলের সমন্বয়ে একটি স্বয়ংক্রিয় রাইফেল তৈরির সিদ্ধান্ত নেন। ১৯৪৪ সালে তিনি একটি কারবাইনের ডিজাইন তৈরি করেন। যৌবনে ইজভেস্ক অস্ত্র কারখানায় ডিজাইন নিয়ে ব্যস্ত মিখাইল কালাশনিকভ
কিন্তু তার ডিজাইন কর্তৃপক্ষের পছন্দ হয়নি। তবে ব্যর্থ হলেও তিনি দমে যাননি। ১৯৪৬ সালে তার উদ্ভাবিত একে-৪৭ রাইফেলের পূর্ববর্তী সংস্করণ ‘একে-৪৬’ সরকারিভাবে সামরিক বাহিনীতে পরীক্ষা করা হয়। ১৯৪৭ সালে রেড আর্মির কয়েকটি নির্দিষ্ট ইউনিটে তার রাইফেল গ্রহণ করা হয়। ১৯৪৯ সালে প্রতি মিনিটে ৬ শ’ গুলিবর্ষণে সক্ষম তার উদ্ভাবিত রাইফেল সোভিয়েট সেনাবাহিনীতে পূর্ণমাত্রায় চালু করা হয়। দুই বছরের মধ্যে একে-৪৭ সোভিয়েট সেনাবাহিনীতে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করে। সে সময় থেকে এ রাইফেল সোভিয়েট ইউনিয়নের একটি অন্যতম রপ্তানি সামগ্রীতে পরিণত হয়। একে-৪৭ রাইফেল অত্যন্ত কার্যকর ও নির্ভরযোগ্য হওয়ায় ভিয়েতনাম যুদ্ধে মার্কিন বাহিনী যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি এম-১৬ রাইফেল ফেলে দিয়ে এ অস্ত্র গ্রহণ করে। এ পর্যন্ত এক কোটির বেশি একে-৪৭ রাইফেল নির্মাণ করা হয়েছে। ৫০টির বেশি দেশ এবং অসংখ্য গেরিলা গ্রুপ এ অস্ত্র ব্যবহার করছে। তবে সাবেক ওয়ারশ জোটভুক্ত দেশগুলোতে পাইরেসি হওয়ায় সোভিয়েত ইউনিয়নের ক্ষতি হয় ২ শ’ কোটি ডলার। আকাশচুম্বি জনপ্রিয়তা সত্ত্বেও সোভিয়েট যুগে একে-৪৭ রাইফেলের প্যাটেন্ট সংরক্ষণ না করায় কালাশনিকভ আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন। ১৯৯১ সালে স্বত্ব সংরক্ষণ করার আইনি লড়াইয়ে তিনি হেরে যান। ১৯৪৯ সাল থেকে তিনি উদমার্টিয়ার ইজভেস্কে বসবাস করছেন। ৭ দশমিক ৬২ এমএম ক্যালিবারের এ রাইফেল উদ্ভাবনের জন্য তিনি স্টালিন মেডেল লাভ করেন।
মিখাইল কালাশনিকভ ত ২০০৯ সালের ১০ নভেম্বর জন্মদিনে রুশ প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি মেদভেদেভ তার হাতে ‘হিরো অব রাশা’ পদক তুলে দেন। পদক প্রদান অনুষ্ঠানে কালাশনিকভ নিজের লেখা একটি দেশাত্মবোধক কবিতা আবৃত্তি করেন। আরেকটি অজানা বিষয় মারণাস্ত্রের জনক কালাশনিকভ একজন শৌখিন কবি। এ পর্যন্ত তার ৬টি কবিতার বই প্রকাশিত হয়েছে। ২৩ ডিসেম্বর ২০১৩ সালে ৯৪ বছর বয়সে রাশিয়ার উদমুরত প্রজাতন্ত্রের রাজধানী ইজহভস্কে তিনি শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন তিনি। আগ্নেয়াস্ত্রের মধ্যে যেটিকে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি মানুষের মৃত্যুর কারণ হিসেবে দেখা হয়, সেই একে-৪৭ এর উদ্ভাবক মিখাইল কালাশনিকভ।
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.