উমাইয়া খিলাফত
দ্বিতীয় ইসলামী খিলাফত (৬৬১-৭৫০ খ্রিস্টাব্দ) / From Wikipedia, the free encyclopedia
উমাইয়া সাম্রাজ্য (আরবি: الأموية, trans.আল-উমাইয়া) ইসলামের খেলাফত ধংশের পর গড়ে ওঠা প্রথম সাম্রাজ্য।(আবু দাউদ ৪৬৪৬,তিরমিজি ২২২৬) এটি উমাইয়া রাজবংশকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠে। ইসলামের তৃতীয় খলিফা হজরত উসমান খিলাফত লাভের মাধ্যমে উমাইয়া পরিবার প্রথম ক্ষমতায় আসে। তবে উমাইয়া বংশের শাসন মুয়াবিয়া কর্তৃক সূচিত হয়। তিনি দীর্ঘদিন সিরিয়ার গভর্নর ছিলেন। ফলে সিরিয়া উমাইয়াদের ক্ষমতার ভিত্তি হয়ে উঠে এবং দামেস্ক তাদের রাজধানী হয়। উমাইয়ারা মুসলিমদের বিজয় অভিযান অব্যাহত রাখে। ককেসাস, ট্রান্সঅক্সানিয়া, সিন্ধু, মাগরেব ও ইবেরিয়ান উপদ্বীপ (আন্দালুস) জয় করে মুসলমান বিশ্বের আওতাধীন করা হয়। সীমার সর্বোচ্চে পৌছালে উমাইয়া খিলাফত মোট ৫.৭৯ মিলিয়ন বর্গ মাইল (১,৫০,০০,০০০ বর্গ কি.মি.) অঞ্চল অধিকার করে রাখে। তখন পর্যন্ত বিশ্বের দেখা সাম্রাজ্যগুলোর মধ্যে এটি সর্ববৃহৎ ছিল। অস্তিত্বের সময়কালের দিক থেকে এটি ছিল পঞ্চম।[5]
উমাইয়া সাম্রাজ্য الأموية আল-‘উমাউইয়াহ্ (আরবি) | |||||||||||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
৬৬১–৭৫০ | |||||||||||||||
পতাকা | |||||||||||||||
উমাইয়া সাম্রাজ্যের সর্বোচ্চ সীমা | |||||||||||||||
অবস্থা | সাম্রাজ্য | ||||||||||||||
রাজধানী | দামেস্ক (৬৬১–৭৪৪) হারান (৭৪৪–৭৫০) | ||||||||||||||
নির্বাসনে রাজধানী | কর্ডোবা (৭৫৬–১০৩১) | ||||||||||||||
প্রচলিত ভাষা | আরবি (সরকারি ভাষা) – কিবতি, গ্রীক, ফারসি (আবদুল মালিকের শাসন পর্যন্ত কিছু অঞ্চলের সরকারি ভাষা) – আরামায়িক, আর্মেনীয়, বার্বার, আফ্রিকান রোমান, জর্জিয়ান, হিব্রু, তুর্কি, কুর্দি | ||||||||||||||
ধর্ম | ইসলাম | ||||||||||||||
সরকার | রাজতন্ত্র | ||||||||||||||
বাদশা | |||||||||||||||
• ৬৬১–৬৮০ | প্রথম মুয়াবিয়া | ||||||||||||||
• ৭৪৪–৭৫০ | দ্বিতীয় মারওয়ান | ||||||||||||||
ইতিহাস | |||||||||||||||
• মুয়াবিয়ার খিলাফত দখল | ৬৬১ | ||||||||||||||
৭৫০ | |||||||||||||||
আয়তন | |||||||||||||||
৭৫০ খ্রিষ্টাব্দ (১৩২ হিজরি) | ১,৫০,০০,০০০ বর্গকিলোমিটার (৫৮,০০,০০০ বর্গমাইল) | ||||||||||||||
জনসংখ্যা | |||||||||||||||
• ৭ম শতাব্দী | 34000000 | ||||||||||||||
মুদ্রা | স্বর্ণ দিনার ও দিরহাম | ||||||||||||||
| |||||||||||||||
বর্তমানে যার অংশ | তালিকা
|
কিছু মুসলিমের কাছে উমাইয়াদের কর সংগ্রহ ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা অনৈতিক ঠেকে। অমুসলিম জনগণ স্বায়ত্তশাসন ভোগ করত এবং তাদের বিচারিক কার্যক্রম তাদের নিজস্ব আইন ও ধর্মীয় প্রধান বা নিজেদের নিযুক্ত ব্যক্তি দ্বারা চালিত হত।[6] তাদের কেন্দ্রীয় সরকারকে জিজিয়া কর দিতে হত।[6] বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.) এর জীবদ্দশায় বলেন যে প্রত্যের ধর্মীয় সম্প্রদায় নিজেদের ধর্মপালন করবে ও নিজেদের শাসন করতে পারবে। এ নীতি পরবর্তীতেও বহাল থাকে।[6] হযরত উমর ফারুক (রা.) কর্তৃক চালু হওয়া মুসলিম ও অমুসলিমদের জন্য কল্যাণ রাষ্ট্র ব্যবস্থা চলতে থাকে।[6][6] হযরত আমির মুয়াবিয়া (রাঃ) এর স্ত্রী মায়সুম (এজিদের মা) ছিলেন একজন খ্রিষ্টান। রাষ্ট্রে মুসলিম ও খ্রিষ্টানদের মধ্যে সম্পর্ক ভাল ছিল। উমাইয়ারা বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের সাথে ধারাবাহিক যুদ্ধে জড়িত ছিল।[6][6][6] গুরুত্বপূর্ণ পদে খ্রিষ্টানদের বসানো হয় যাদের মধ্যে কারো কারো পরিবার বাইজেন্টাইন সরকারে কাজ করেছিল। খ্রিষ্টানদের নিয়োগ অধিকৃত অঞ্চলে বিশেষত সিরিয়ার বিশাল খ্রিষ্টান জনগোষ্ঠীর প্রতি ধর্মীয় সহিষ্ণুতার নীতি হিসেবে গ্রহণ করা হয়। এ নীতি জনগণের সমর্থন আদায়ে সক্ষম হয় এবং সিরিয়াকে ক্ষমতার কেন্দ্র হিসেবে স্থিতিশীল করে তোলে।[7][8]
আরব গোত্রগুলোর মধ্যকার বিরোধের কারণে সিরিয়ার বাইরের প্রদেশে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে বিশেষত দ্বিতীয় মুসলিম গৃহযুদ্ধ (৬৮০-৬৯২) ও বার্বার বিদ্রোহের (৭৪০-৭৪৩) সময়। দ্বিতীয় গৃহযুদ্ধের সময় উমাইয়া গোত্রের নেতৃত্ব সুফয়ানি শাখা থেকে মারওয়ানি শাখার হস্তান্তর হয়। ক্রমাগত যুদ্ধবিগ্রহের ফলে সম্পদ ও লোকবল কমে আসায় তৃতীয় মুসলিম গৃহযুদ্ধের সময় দুর্বল হয়ে পড়ে এবং চূড়ান্তভাবে আব্বাসীয় বিপ্লবের ফলে ক্ষমতাচ্যুত হয়। পরিবারের একটি শাখা উত্তর আফ্রিকা হয়ে আন্দালুস চলে যায় এবং সেখানে উমাইয়া সাম্রাজ্য (আন্দালুস) প্রতিষ্ঠা করে। এ খিলাফত ১০৩১ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত টিকে ছিল এবং আন্দালুসের ফিতনার পর এর পতন হয়।