ইসরায়েল
মধ্যপ্রাচ্যের একটি রাষ্ট্র উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
মধ্যপ্রাচ্যের একটি রাষ্ট্র উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
ইসরায়েল ( হিব্রু ভাষায়: מְדִינַת יִשְׂרָאֵל – মেদিনাৎ য়িস্রা'এল্ ; আরবি: دَوْلَةْ إِسْرَائِيل-দাউলাৎ ইস্রা'ঈল্) হলো পশ্চিম এশিয়া তথা মধ্যপ্রাচ্যের একটি আংশিকভাবে স্বীকৃত রাষ্ট্র। এটি ভূমধ্যসাগরের দক্ষিণ–পূর্ব তীরে ও লোহিত সাগরের উত্তর তীরে অবস্থিত। এর উত্তর স্থলসীমান্তে লেবানন, উত্তর-পূর্বে সিরিয়া, পূর্বে জর্দান ও ফিলিস্তিন (পশ্চিম তীর), পশ্চিমে ফিলিস্তিনের ভূখণ্ড গাজা এবং দক্ষিণ-পশ্চিমে মিশর অবস্থিত।[24]
ইসরায়েল | |
---|---|
১৯৪৯ এর আর্মিস্টাইস বর্ডার (গ্রিন লাইন) | |
রাজধানী | তেল আবিব (
স্বীকৃতি)[টীকা 1] ৩১°৪৭′ উত্তর ৩৫°১৩′ পূর্ব |
বৃহত্তম নগরী | তেল আবিব[টীকা 2] |
সরকারি ভাষা | হিব্রু |
স্বীকৃত ভাষা | আরবি[টীকা 3] |
নৃগোষ্ঠী (২০১৯) | |
ধর্ম (২০১৯) |
|
জাতীয়তাসূচক বিশেষণ | ইসরায়েলি |
সরকার | এককেন্দ্রিক সংসদীয় সাংবিধানিক প্রজাতন্ত্র |
আইজ্যাক হারজোগ | |
বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু | |
• নেসেটের স্পিকার | ইয়ারিভ লেভিন |
• প্রধান বিচারপতি | এস্থার হায়ুত |
আইন-সভা | নেসেট |
ব্রিটিশ সাম্রাজ্য থেকে স্বাধীনতা | |
• ঘোষণা | ১৪ই মে ১৯৪৮[15] |
১১ই মে ১৯৪৯ | |
• প্রাথমিক আইন | ১৯৫৮–২০১৮ |
আয়তন | |
• মোট | ২০,৭৭০–২২,০৭২ কিমি২ (৮,০১৯–৮,৫২২ মা২)[ক] (১৫০তম) |
• পানি (%) | ২.৭১ (২০১৫ অনুযায়ী)[16] |
জনসংখ্যা | |
• ২০২১ আনুমানিক | ৯,৩৪৮,৮৫০[17][টীকা 4] (৯৯তম) |
• ২০০৮ আদমশুমারি | ৭,৪১২,২০০[18][টীকা 4] |
• ঘনত্ব | ৪২৪/কিমি২ (১,০৯৮.২/বর্গমাইল) (৩৫তম) |
জিডিপি (পিপিপি) | ২০২০[19] আনুমানিক |
• মোট | ৩৭ হাজার ২৩১ কোটি মার্কিন ডলার[টীকা 4] (৫১তম) |
• মাথাপিছু | $৪০,৩৩৬[টীকা 4] (৩৪তম) |
জিডিপি (মনোনীত) | ২০২০[19] আনুমানিক |
• মোট | $৪১ হাজার ৫০ কোটি[টীকা 4] (৩১তম) |
• মাথাপিছু | $৪৪,৪৭৪[টীকা 4] (১৯তম) |
জিনি (২০১৮) | ৩৪.৮[টীকা 4][22] মাধ্যম · ৪৮তম |
মানব উন্নয়ন সূচক (২০১৯) | ০.৯১৯[টীকা 4][23] অতি উচ্চ · ১৯তম |
মুদ্রা | ইসরায়েলি শেকেল (₪) (ILS) |
সময় অঞ্চল | ইউটিসি+২ (ইসরায়েলি মান সময়) |
ইউটিসি+৩ (ইসরায়েলি গ্রীষ্ম সময়) | |
তারিখ বিন্যাস | |
গাড়ী চালনার দিক | ডান |
কলিং কোড | +৯৭২ |
আইএসও ৩১৬৬ কোড | IL |
ইন্টারনেট টিএলডি | .il .ישראל |
|
ভূমধ্যসাগরের উপকূলে অবস্থিত তেল আবিব হলো দেশটির অর্থনৈতিক, প্রযুক্তিগত প্রাণকেন্দ্র ও বৃহত্তম মহানগর এলাকা। [25] ইসরায়েল সমগ্র জেরুসালেম শহরকে নিজের রাজধানী হিসেবে দাবী করে আসছে, যদিও এই মর্যাদা সংখ্যাগরিষ্ঠ রাষ্ট্রই স্বীকার করে না।[26] শহরের পশ্চিমভাগ ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণাধীন এবং এখানে দেশটির সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলি অবস্থিত। [টীকা 5] ইসরায়েলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, গুয়াতেমালা ও ইতালি ব্যতীত অন্য ৮৭টি দেশের দূতাবাস তেল আবিব নগর বা জেলায় অবস্থিত (২০২১ সালের তথ্যানুযায়ী)। [27] এছাড়া হাইফা ও বে-এরশেভা এর আরও দুইটি বৃহৎ মহানগর এলাকা।
অর্থনৈতিকভাবে ইসরায়েল একটি অত্যন্ত উন্নত শিল্প -প্রধান রাষ্ট্র এবং স্থূল আভ্যন্তরীণ উৎপাদনের হিসেবে ইসরায়েল বিশ্বের ৩৪তম বৃহত্তম অর্থনীতি। ইসরায়েল অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও উন্নয়ন সংস্থার সদস্যরাষ্ট্র। বিশ্বব্যাংকের হিসাবমতে জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার সাথে এটি এশিয়ার মোট ৩টি উচ্চ-আয়ের রাষ্ট্রগুলির একটি। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের মতে এটি বিশ্বের ৩৯টি অগ্রসর অর্থনীতিসমৃদ্ধ দেশগুলির একটি।
ইসরায়েলে প্রায় ৯৩ লক্ষ লোক বাস করে এবং এটি মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ দেশ; এখানে প্রতি বর্গকিলোমিটারে প্রায় ৪২৫ জন অধিবাসী বাস করে। এদের মধ্যে ৬৭ লক্ষ ইহুদী জাতি ও ধর্মাবলম্বী ও ১৯ লক্ষ আরব জাতিভুক্ত (যাদের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমান)। এটিই বিশ্বের একমাত্র ইহুদী সংখ্যাগরিষ্ঠ রাষ্ট্র। এর জনগণ অত্যন্ত উচ্চশিক্ষিত; এখানকার প্রায় অর্ধেক জনগণের (২৫-৬৪ বছর বয়সী) বিশ্ববিদ্যালয় বা তার সমপর্যায়ের শিক্ষাগত যোগ্যতা আছে, যা বিশ্বের ৩য় সর্বোচ্চ।[28] দেশের জীবনযাত্রার মান গোটা মধ্যপ্রাচ্যের মধ্যে সর্বোচ্চ; এশিয়াতে ৫ম ও বিশ্বে ১৯তম।[23]
ইসরায়েল বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তির নিরিখে বিশ্বের সেরা দেশগুলির একটি। মার্কিন সংবাদ মাধ্যম ব্লুমবার্গের প্রকাশিত ব্লুমবার্গ নবীকরণ সূচকে ২০১৯,২০২০ এবং ২০২১ সালে ইসরায়েল যথাক্রমে ৫ম, ৬ষ্ঠ ও ৭ম সেরা নবীকারক হিসেবে স্থান পেয়েছিল (দক্ষিণ কোরিয়া ও সিঙ্গাপুরের পরে এশিয়াতে তৃতীয়)। অন্যদিকে মার্কিন কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয় ও আরও কিছু সহযোগী সংস্থার প্রকাশিত বৈশ্বিক নবীকরণ সূচকে দেশটি ২০২০ সালে ১৩তম স্থান লাভ করে। শেষোক্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী ইসরায়েলে প্রতি ১০ লক্ষ অধিবাসীর জন্য ৮৩৪১ জন বিজ্ঞানী, গবেষক এবং প্রকৌশলী আছেন, যা বিশ্বের সর্বোচ্চ। ইসরায়েল তার বাৎসরিক বাজেটের প্রায় ৫% বৈজ্ঞানিক গবেষণা ও উন্নয়নের জন্যে বরাদ্দ করে, যা বিশ্বের মধ্যে সর্বোচ্চ। গবেষণামূলক শিল্পপ্রতিষ্ঠান ও বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের সহযোগিতার নিরিখে এটি বিশ্বের ১ নম্বর দেশ। ইসরায়েলের বৈদেশিক বাণিজ্যের ১৩% তথ্য ও প্রযুক্তি সেবা রপ্তানিতে নিয়োজিত, যা বিশ্বের সর্বোচ্চ। ইসরায়েল প্রতি একশত কোটি মার্কিন ডলার স্থূল অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের হিসেবে বিশ্বের সর্বাধিক সংখ্যক মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন নির্মাণ করে। জ্ঞানের বিস্তারে দেশটি বিশ্বের ২য় সেরা দেশ; ১৫- ৬৫ বছরের প্রতি ১০ লক্ষ ইসরায়েলির উইকিপিডিয়ায় সম্পাদনার সংখ্যা ৯৪, যা বিশ্বের ৩য় সর্বোচ্চ।[29]
ইসরায়েল নিজেকে একটি ইহুদীবাদী গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে দাবী করে। এখানে একটি প্রতিনিধিত্বমূলক সংসদীয় গণতন্ত্র বিদ্যমান। দেশটির এককক্ষবিশিষ্ট আইনসভার নাম ক্নেসেত। প্রধানমন্ত্রী সরকারপ্রধানের দায়িত্ব পালন করেন।
ইসরায়েল রাষ্ট্রের জন্ম, ইতিহাস ও রাজনীতি মধ্যপ্রাচ্য সংকটের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। দেশটি স্বাধীন হওয়ার পর থেকেই প্রতিবেশী আরব রাষ্ট্রগুলির সাথে বেশ কয়েকবার যুদ্ধে লিপ্ত হয়। এটি ১৯৬৭ সাল থেকে অর্ধ-শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে ফিলিস্তিনি-অধ্যুষিত পশ্চিম তীর এবং গাজা উপত্যকা সামরিকভাবে দখল করে আছে। এই ঘটনাটি আন্তর্জাতিকভাবে আধুনিক ইতিহাসের দীর্ঘতম সামরিক দখলের ঘটনা হিসেবে গণ্য করা হয়। [fn 1][33] ২০২১ সালে এসে জাতিসংঘের ১৯২টি সদস্যরাষ্ট্রের মধ্যে ১৬৪টি রাষ্ট্র ইসরায়েলকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিলেও ২৮টি রাষ্ট্র (মূলত মুসলমান অধ্যুষিত) এখনও ইসরায়েলের সার্বভৌমত্ব মেনে নেয়নি এবং এর সাথে তাদের কোনো কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই। [34] তাদের মতে, ইসরায়েল স্বাধীন রাষ্ট্র ফিলিস্তিনের একটি অংশের অবৈধ দখলদার বাহিনীর নিয়ন্ত্রিত ভূখণ্ড। তবে নিকটতম দুই আরব প্রতিবেশী মিশর ও জর্দানের সাথে ইসরায়েল শান্তিচুক্তি স্বাক্ষর করেছে এবং দেশ দুইটির স্বীকৃতিও লাভ করেছে।
মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ২০২১ সালের এপ্রিল মাসে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে যাতে ঐতিহাসিক গবেষণা ও দালিলিক যুক্তিপ্রমাণসহ দাবী করা হয় যে ইসরায়েলি সরকার প্রণালীবদ্ধভাবে ইসরায়েলের ইহুদীদেরকে অগ্রাধিকার প্রদান করে এবং অধিকৃত পশ্চিম তীর ও গাজা ভূখণ্ডের ফিলিস্তিনিদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ করে। সংস্থাটির মতে ইসরায়েলের আইন, নীতি ও ইসরায়েলের উচ্চপদস্থ সরকারী কর্মকর্তাদের বিবৃতিতে সুস্পষ্ট প্রমাণিত হয় যে জনপরিসংখ্যান, রাজনৈতিক ক্ষমতা ও ভূমির উপরে ইহুদী ইসরায়েলিদের কর্তৃত্ব বজায় রাখার মূল লক্ষ্যটি ইসরায়েলি সরকারের সমস্ত নীতিকে দিকনির্দেশনা প্রদান করেছে। এই লক্ষ্যে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ ফিলিস্তিনিদের জাতিগত পরিচয়ের ভিত্তিতে বিভিন্ন মাত্রায় তাদের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে গণহারে ভূমি জবরদখল, অব্যাহতভাবে ইসরায়েলি বসতি নির্মাণ ও সুউচ্চ প্রাচীর নির্মাণ করে ফিলিস্তিনিদেরকে ছিটমহলে অবরুদ্ধকরণ ও বলপূর্বক পৃথকীকরণ, তাদের বসবাসের অধিকার ও নাগরিক অধিকার হরণ ও তাদের উপরে দমন-নিপীড়নের মতো কাজগুলি সম্পাদন করে চলেছে। কিছু কিছু এলাকায় এই ধরনের বৈষম্য এতই প্রবল যে হিউম্যান রাইটস ওয়াচের মতে ইসরায়েলি সরকারের আচরণগুলি একটি অলিখিত সীমা লঙ্ঘন করেছে এবং এগুলি জাতিবিদ্বেষভিত্তিক পৃথকাবাসন (আপার্টহাইট) ও নিপীড়নের মতো মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ হিসেবে গণ্য হবার যোগ্য।[35] এর আগে ২০১৭ সালে মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বিবৃতি দেয় যে ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে ইসরায়েল ফিলিস্তিনি ভূমি জবরদখল, ছয় লক্ষ ইহুদীর জন্য ২৮০টির মতো (আন্তর্জাতিক আইনের দৃষ্টিতে) অবৈধ বসতি স্থাপন, ফিলিস্তিনিদের বাসভূমি থেকে উচ্ছেদের পাশাপাশি অবাধ বৈষম্যমূলক আচরণের দ্বারা প্রতিদিন ফিলিস্তিনিদেরকে কর্মস্থলে গমন, বিদ্যালয়ে গমন, বিদেশে গমন, আত্মীয়দের সাক্ষাৎ, অর্থ উপার্জন, প্রতিবাদে অংশগ্রহণ, কৃষিভূমিতে কাজ করার ক্ষমতা, এমনকি বিদ্যুৎ ও সুপেয় জলের লভ্যতার মতো মৌলিক অধিকারগুলি প্রণালীবদ্ধভাবে লঙ্ঘন করে চলেছে।[36]
১৯৪৮ সালে দেশটির স্বাধীনতা লাভের সময় নাম রাখা হয় 'স্টেট অব ইসরায়েল', হিব্রু ভাষায় নাম রাখার কথা ভাবা হয়েছিলো যেমন: ইস্রায়েল দেশ, সিয়োন অথবা যিহূদিয়া। তবে ইসরায়েল নামটি হিব্রু এবং আরবি দুটো ভাষারই হওয়াতে এই নামই রাখারই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়।[37]
৪র্থ শতাব্দীতে কনস্টানটাইনের ধর্মান্তরিত হওয়ার সাথে সাথে প্যালেস্টাইনে সংখ্যাগরিষ্ঠ ইহুদিদের জন্য পরিস্থিতি আরও কঠিন হয়ে পড়ে। ইহুদি এবং ইহুদি ধর্মের বিরুদ্ধে বৈষম্যমূলক আইনের একটি ধারা পাশ করা হয়েছিল এবং গির্জা এবং কর্তৃপক্ষ উভয়ের দ্বারাই ইহুদিরা নির্যাতিত হয়েছিল। অনেক ইহুদি প্রবাসে প্রবাসী সম্প্রদায়ের বিকাশ লাভ করেছিল, কিছু স্থানীয়ভাবে খ্রিস্টান অভিবাসন এবং স্থানীয় ধর্মান্তর হয়েছিল । 5 ম শতাব্দীর মাঝামাঝি, সেখানে খ্রিস্টান সংখ্যাগরিষ্ঠ ছিল।৫ম শতাব্দীর শেষের দিকে, সামারিটান বিদ্রোহ শুরু হয়, যা ৬ষ্ঠ শতাব্দীর শেষভাগ পর্যন্ত অব্যাহত থাকে এবং এর ফলে সামারিটান জনসংখ্যা ব্যাপকভাবে হ্রাস পায়। জেরুজালেমের সাসানিয়ান বিজয়ের পর এবং ৬১৪ খ্রিস্টাব্দে হেরাক্লিয়াসের বিরুদ্ধে স্বল্পস্থায়ী ইহুদি বিদ্রোহের পর , বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্য ৬২৮ সালে এই এলাকার নিয়ন্ত্রণ পুনঃসংহত করে ।
634-641 খ্রিস্টাব্দে, রাশিদুন খিলাফত লেভান্ট জয় করে । পরবর্তী ছয় শতাব্দীতে এই অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ উমাইয়া , আব্বাসীয় , ফাতিমীয় খিলাফত এবং পরবর্তীকালে সেলজুক ও আইয়ুবী রাজবংশের মধ্যে হস্তান্তরিত হয়। পরবর্তী কয়েক শতাব্দীতে এলাকার জনসংখ্যা ব্যাপকভাবে হ্রাস পায়, রোমান ও বাইজেন্টাইন আমলে আনুমানিক ১ মিলিয়ন থেকে উসমানীয় যুগের প্রথম দিকে প্রায় ৩০০,০০০-এ নেমে আসে। এই জনসংখ্যা হ্রাসের পাশাপাশি আরবায়নের একটি স্থির প্রক্রিয়া ছিল অমুসলিম দেশত্যাগ, মুসলিম অভিবাসন এবং স্থানীয়ভাবে ইসলামে ধর্মান্তরিত হওয়ার কারণে ইসলামিকরণ ঘটে।
11 শতকের শেষের দিকে ক্রুসেড আসে , খ্রিস্টান ক্রুসেডারদের প্যাপলি -অনুমোদিত আক্রমণ ছিল জেরুজালেম এবং পবিত্র ভূমিকে মুসলিম নিয়ন্ত্রণ থেকে ফিরিয়ে নেওয়ার এবং ক্রুসেডার রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে ।
১১৮৭ সালে এটি আবার আইয়ুবীয় রাজবংশ এর অধীনে চলে যায়, ত্রয়োদশ শতাব্দীতে ইসরায়েল মিশরের মামলুক সুলতান এর নিয়ন্ত্রণে আসে ।
১৫১৭ সালে এটি উসমানীয় সাম্রাজ্যভুক্ত হয়; ইহুদীরা সপ্তম শতাব্দী থেকেই বিভিন্ন জায়গায় পালিয়ে বেড়িয়েছে এবং পরে তারা ইউরোপ মহাদেশে পাড়ি জমায়।[38]
প্রথম বিশ্বযুদ্ধে তুরস্কের উসমানীয় সাম্রাজ্যের পতনের পর ইসরায়েল (যদিও তা ফিলিস্তিন নামে একটি দেশ ছিল তবে তারা অর্থাৎ ইহুদিরা দেশটি জোরপূর্বক দখল করে নেয়) দেশটি ব্রিটিশরা তাদের অধীনে নিয়ে নেয় এবং নাম রাখে 'মেন্ডেটরি প্যালেস্টাইন'।[39] ১৯১৭ সালের ২রা নভেম্বর ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী আর্থার জেমস বালফোর ইহুদীবাদীদেরকে লেখা এক পত্রে ফিলিস্তিনী ভূখণ্ডে একটি ইহুদী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি ঘোষণা করেন। বেলফোর ঘোষণার মাধ্যমে ফিলিস্তিনে ইহুদীদের আলাদা রাষ্ট্রের সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয় এবং বিপুলসংখ্যক ইহুদী ইউরোপ থেকে ফিলিস্তিনে এসে বসতি স্থাপন করতে থাকে।
১৯২৩ সালে স্বাধীন তুরস্কের জন্ম হলে এই অঞ্চলে ইহুদীরা রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য উদগ্রীব হয়ে যান। ইউরোপের বিভিন্ন দেশ যেমন ব্রিটেন, ফ্রান্স, জার্মানি, নরওয়ে, পোল্যান্ড, গ্রীস এবং সুইজারল্যান্ডে বসবাসকারী ইহুদীদেরকে নেতারা আহ্বান জানান ইসরায়েলে বসতি গড়তে। তাছাড়া ব্রিটিশ সরকার ইহুদীদেরকে তাদের নিজস্ব ভূমি ছেড়ে দেবে বলে প্রতিশ্রুতি দেয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে প্রায় আড়াই লাখ ইহুদী মানুষ ইসরায়েল ভূখণ্ডে পাড়ি জমায়।[40]
১৯২১ সালে ইহুদীরা 'হাগানাহ' নামের এক বাহিনী তৈরি করে।[41] এ বাহিনী ইহুদীবাদীদের রাষ্ট্র তৈরির কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্রথমে মুসলিমদের বিরুদ্ধে ইহুদীবাদীদের সহায়তা করা হাগানাহ বাহিনীর দায়িত্ব হলেও পরবর্তীকালে তারা আধা-সামরিক বাহিনীতে পরিণত হয় এবং জোরপূর্বক ফিলিস্তিন দখলের পর এই বাহিনী ইসরায়েলের মূল সামরিক বাহিনী গঠন করে।[42]
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হলে ইউরোপ থেকে আরো ইহুদী মানুষ ইসরায়েলে আসে এবং তাদের অনেককেই হাগানাহ সহ অন্যান্য বাহিনীতে নেওয়া হয় ভবিষ্যৎ যুদ্ধের মোকাবেলা করার জন্য।[43]
১৯৪৮ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ফিলিস্তিনী ভূখণ্ডকে দ্বিখণ্ডিত করা সংক্রান্ত ১৮১ নম্বর প্রস্তাব গৃহীত হয়। জাতিসংঘ ফিলিস্তিনকে দ্বিখণ্ডিত করার প্রস্তাব পাশ করে ৪৫ শতাংশ ফিলিস্তিনীদের এবং বাকি ৫৫ শতাংশ ভূমি ইহুদীবাদীদের হাতে ছেড়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।[44] এভাবে ১৯৪৮ সালের ১৪ মে ইসরায়েল স্বাধীনতা ঘোষণা করে। ড্যাভিড বেন গুরিয়ন ইসরায়েলের প্রথম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন।[45]
১৯৪৮ সালের ১৭ মে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন ইসরায়েলকে প্রথম স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।[46] ১৯৪৯ সালের মার্চ মাসে তুরস্ক সরকার ইসরায়েলকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতিদানকারী প্রথম মুসলিমসংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ ছিলো।[47][48]
ইসরায়েলের রাজনীতি একটি সংসদীয় প্রতিনিধিত্বমূলক বহুদলীয় গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র কাঠামোয় সংঘটিত হয়। রাষ্ট্রপতি হলেন রাষ্ট্রের প্রধান। সরকারপ্রধান হলেন প্রধানমন্ত্রী। রাষ্ট্রের নির্বাহী ক্ষমতা তার উপর ন্যস্ত।[49] আইন প্রণয়নের ক্ষমতা নেসেট নামের আইনসভার উপর ন্যস্ত।[50] বিচার বিভাগ নির্বাহী ও আইন প্রণয়ন বিভাগ থেকে স্বাধীন।[51]
ইসরায়েলের সঙ্গে ১৭০টি দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক আছে।[52] তবে ফিলিস্তিন বিবাদের জন্য মুসলিম দেশগুলোর সঙ্গে শীতল সম্পর্ক রয়েছে।[53]
ইসরায়েলে ছয়টি জেলা আছে, এগুলো হলোঃ জেরুসালেম জেলা, উত্তর জেলা, হায়ফা জেলা, মধ্য জেলা, তেল আবিব জেলা এবং দক্ষিণ জেলা এবং জুডিয়া এ্যান্ড সামারিয়া এলাকা।[54]
ইসরায়েলের সশস্ত্র বাহিনী (ইসরায়েল ডিফেন্স ফোর্সেস, সংক্ষেপে আইডিএফ) তিনটি মিলিটারি সংস্থার সমন্বয়ে গঠিত।[55] সংস্থাগুলো হচ্ছে স্থলবাহিনী, বিমান বাহিনী ও নৌবাহিনী।[15] তিন বাহিনীকে এক বাহিনী ধরা হয়; এই বাহিনী দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন। অফিশিয়ালি ইসরায়েল সশস্ত্র বাহিনী প্রতিষ্ঠা করা হয় ১৯৪৮ সালের ২৬ মে কেবিনেটের সিদ্ধান্তক্রমে। এ জন্য লিখিত আদেশ দেয় ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। ১৯৪৮ সালের আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের সময় বাধ্যতামূলকভাবে অনেক ইহুদিকে এই বাহিনীতে নিয়োগ দেয়া হয়। এ ছাড়াও ইহুদিদের তিনটি সংগঠন হাগানাহ, ইরগান ও লেহির সদস্যদের নিয়ে প্রাথমিকভাবে এই বাহিনী গঠন করা হয়। যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে প্রতিষ্ঠা আর নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে অনেকগুলো যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে হয় এই বাহিনীকে।[15]
বিভিন্ন দেশের সাথে এই বাহিনীর অস্ত্র ও প্রযুক্তির বেশ পার্থক্য রয়েছে। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে মারকাভা মেইন ব্যাটল ট্যাঙ্ক, উজি সাব মেশিনগান এবং গালিল ও টাভর অ্যাসল্ট রাইফেল। আইডিএফ’র উন্নয়নে বিভিন্ন খাতে অর্থসহযোগিতা করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য খাত হচ্ছে এফ-১৫১ জেট বিমান, টিএইচ।[15]
ইসরায়েল পশ্চিম এশিয়াতে ভূমধ্যসাগরের পূর্ব উপকূলে অবস্থিত। এই ভূমধ্যসাগরীয় উপকূল ধরে সমভূমি অবস্থিত। ইসরায়েলের দক্ষিণে রয়েছে বিশাল নেগেভ মরুভূমি আর উত্তরে আছে বরফাবৃত পর্বতমালা। দক্ষিণে লোহিত সাগরে এক চিলতে প্রবেশপথ আছে।[56][57]
ইসরায়েলের অর্থনীতি আধুনিক পশ্চিমা অর্থনীতির সমপর্যায়ের। ইসরায়েলের নিজস্ব সম্পদের পরিমাণ খুব কম। দেশটি ১৯৭০-এর দশক থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ আর্থিক অনুদান পেয়ে আসছে, তবে ১৯৯৮-এর পর এই অনুদানের পরিমাণ কমিয়ে দেয়া হয়। ইসরায়েল ও.ই.সি.ডি. (অরগ্যানাইজেশন ফর ইকোনমিক কো - অপারেশন এন্ড ডেভেলপমেন্ট) এর সদস্য। দেশটির মানুষের জীবনযাত্রার মান খুবই উন্নত এবং ২০১২ সাল অনুযায়ী দেশটির মাথাপিছু আয় ৩৫,০০০ মার্কিন ডলার।[58][59] ইসরায়েলের উন্নত শিক্ষাব্যবস্থা এবং সরকারের ভালো সদিচ্ছা থাকার কারণে দেশটিতে বেকারত্ব খুবই কম।[60]
ইসরায়েলের জনসংখ্যা প্রায় ৯ মিলিয়ন।
ইসরায়েল ভাষাগত ও সংস্কৃতিগতভাবে বিচিত্র। এথনোলগের ১৫শ সংস্করণ অনুসারে ইসরায়েলে ৩৩টির মত ছোট-বড় ভাষা ও উপভাষা প্রচলিত[61]। ইসরায়েলি নাগরিকেরা নিজেদের মধ্যে ভাব আদান প্রদানের জন্য মূলত আধুনিক হিব্রু ভাষা ব্যবহার করেন। আধুনিক হিব্রু ভাষাটি ১৯শ শতকের শেষ দিকে প্রাচীন হিব্রু ভাষার বিভিন্ন উপভাষার উপর ভিত্তি করে সৃষ্টি হয়েছিল এবং এতে স্লাভীয় ও জার্মানিয় ভাষাসমূহের কিছু প্রভাব আছে। ভাষার সরকারি মর্যাদা ও ভাষা সংক্রান্ত নীতিমালার উপর ইসরায়েলে বেশ কিছু আইন আছে। বর্তমানে হিব্রু ও আরবি ইসরায়েলের সরকারি ভাষা।[62]
ইসরায়েলের বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতি তার জনসংখ্যার বৈচিত্র্য থেকে উদ্ভূত। বিশ্বব্যাপী প্রবাসী সম্প্রদায়ের ইহুদিরা তাদের সাংস্কৃতিক এবং ধর্মীয় ঐতিহ্যকে তাদের সাথে ফিরিয়ে এনেছিল।[63] স্থাপত্য,[64] সঙ্গীত[65] এবং রান্নার[66] সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে আরবের প্রভাব বিদ্যমান । ইজরায়েল বিশ্বের একমাত্র দেশ যেখানে হিব্রু ক্যালেন্ডারের ব্যবহার পরিলক্ষিত হয়। কর্মক্ষেত্র ও স্কুল ছুটি ইহুদি ছুটির দ্বারা নির্ধারিত হয় এবং শনিবার তাদের সাপ্তাহিক ছুটির দিন।[67]
ইসরায়েলের পর্যটন মূলত ইহুদী, ইসলাম ধর্মের পবিত্র ও ঐতিহাসিক স্থানগুলিকে কেন্দ্র করে আবর্তিত। দেশটির সর্বত্র ইহুদী ধর্মের ও সভ্যতার স্মৃতিবিজড়িত নানা প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। ইহুদীদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় শহর এবং মুসলিম ও খ্রিস্টানদেরও গুরুত্বপূর্ণ তীর্থস্থান হল জেরুজালেম শহর। জেরুজালেমের ইহুদী মন্দির ও পশ্চিম দেওয়াল বিখ্যাত। এছাড়া আছে যিশুখ্রিস্টের জন্মস্থান বেথেলহেম, বাসস্থান নাজারেথ।এখানে হারাম আল শরীফ তথা আল-আকসা মসজিদ অবস্থিত।ইসলামের তৃতীয় পবিত্রতম মসজিদ যা মুসলিমদের প্রথম কিবলা হিসাবে পরিচিত। ভূমধ্যসাগরের তীর জুড়ে রয়েছে অনেক অবকাশ যাপন কেন্দ্র। আরও আছে লবণাক্ত মৃত সাগর, যার পানিতে ভেসে থাকা যায়। লোহিত সাগরের উপকূল এবং গ্যালিলির সাগরের উপকূলেও অনেক অবকাশ কেন্দ্র আছে।[68]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.