উত্তরাখণ্ড
ভারতের একটি রাজ্য উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
উত্তরাখণ্ড (হিন্দি: उत्तराखण्ड, পূর্বতন নাম উত্তরাঞ্চল) [২] উত্তর ভারতের একটি স্থলবেষ্টিত রাজ্য। এই রাজ্যে অনেক হিন্দু মন্দির ও তীর্থস্থান আছে বলে, এটিকে ‘দেবভূমি’ বা ‘দেবতাদের দেশ’ বলা হয়। হিমালয়, ভাবর ও তরাই অঞ্চলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য এই রাজ্য বিখ্যাত। ২০০০ সালের ৯ নভেম্বর উত্তরপ্রদেশ রাজ্যের হিমালয় ও তৎসংলগ্ন জেলাগুলি নিয়ে ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের ২৭তম রাজ্য হিসেবে উত্তরাখণ্ড রাজ্য সৃষ্টি করা হয়েছিল।[৩] উত্তরাখণ্ডের উত্তর দিকে চীনের তিব্বত, পূর্বদিকে নেপালের মহাকালী অঞ্চল ও সুদূর-পশ্চিমাঞ্চল, দক্ষিণ দিকে ভারতের উত্তরপ্রদেশ এবং উত্তর-পশ্চিম দিকে ভারতের হিমাচল প্রদেশ রাজ্য অবস্থিত। উত্তরাখণ্ড রাজ্যটি দুটি বিভাগে বিভক্ত। এগুলি হল: গাড়োয়াল ও কুমায়ূন বিভাগ। এই দুই বিভাগের অন্তর্গত মোট জেলার সংখ্যা ১৩। উত্তরাখণ্ডের অন্তর্বর্তী রাজধানী হল দেরাদুন। দেরাদুনই এই রাজ্যের বৃহত্তম শহর ও রেল টার্মিনাস। উত্তরাখণ্ড হাইকোর্ট নৈনিতাল শহরে অবস্থিত।
উত্তরাখণ্ড उत्तराखण्ड उत्तराखण्डराज्यम् | |
---|---|
রাজ্য | |
ডাকনাম: দেবভূমি देवभूमि | |
![]() ভারতের মানচিত্রে উত্তরাখণ্ডের অবস্থান (লাল রঙে চিহ্নিত) | |
![]() উত্তরাখণ্ডের মানচিত্র | |
স্থানাঙ্ক (দেরাদুন): ৩০.৩৩° উত্তর ৭৮.০৬° পূর্ব | |
দেশ | ভারত |
অঞ্চল | উত্তর ভারত |
প্রতিষ্ঠা | ৯ নভেম্বর, ২০০০ [a] |
ইতিহাস | সারসংক্ষেপ
|
রাজধানী | দেরাদুন [b] |
বৃহত্তম শহর | দেরাদুন |
জেলা | ১৩টি |
সরকার | |
• শাসক | ভারত সরকার |
• রাজ্যপাল | বেবি রানি মৌর্য |
• মুখ্যমন্ত্রী | ত্রিবেন্দ্র সিং রাওয়াত |
• উত্তরাখণ্ড বিধানসভা | এককক্ষীয় (৭১টি আসনবিশিষ্ট) [c] |
• সংসদীয় ক্ষেত্র | রাজ্যসভা (৩টি আসন) লোকসভা (৫টি আসন) |
• হাইকোর্ট | উত্তরাখণ্ড হাইকোর্ট |
আয়তন | |
• মোট | ৫৩,৪৮৩ বর্গকিমি (২০,৬৫০ বর্গমাইল) |
এলাকার ক্রম | ১৯শ |
জনসংখ্যা (২০১১) | |
• মোট | ১,০১,১৬,৭৫২ ৫১,৫৪,১৭৮ ♂ ৪৯,৬২,৫৭৪ ♀ |
• ক্রম | ২০শ |
• জনঘনত্ব | ১৮৯/বর্গকিমি (৪৯০/বর্গমাইল) |
• ঘনত্বের ক্রম | ২০শ |
বিশেষণ | উত্তরাখণ্ডি |
সময় অঞ্চল | ভারতীয় প্রমাণ সময় (ইউটিসি+০৫:৩০) |
আইএসও ৩১৬৬ কোড | IN-UT |
যানবাহন নিবন্ধন | UK 01—XX |
মানব উন্নয়ন সূচক (২০১১) | ০.৫১৫[১](মধ্যম) |
মানব উন্নয়ন সূচক অনুসারে স্থান | ৭ম |
লিঙ্গ অনুপাত | ৮৪১♀/১,০০০♂ |
সাক্ষরতা (২০১১) | ৭৯.৬৩% ৮৮.৩৩% ♂ ৭০.৭০% ♀ |
কথিত ভাষা | হিন্দি গাড়োয়ালি কুমায়োনি উর্দু পাঞ্জাবি জৌনসারি ভোটি রাজি রাথি/সালানি নেপালি |
সরকারি ভাষা | হিন্দি সংস্কৃত |
ওয়েবসাইট | www.uk.gov.in |
^a উত্তরপ্রদেশ পুনর্গঠন আইন, ২০০০ অনুসারে উত্তরপ্রদেশ ভেঙে ২০০০ সালের ৯ নভেম্বর সৃষ্ট ^b দেরাদুন রাজ্যের অন্তর্বর্তী রাজধানী। নতুন রাজধানী এখনও নির্বাচিত হয়নি। ^c ৭০টি আসন নির্বাচিত প্রতিনিধি এবং ১টি আসন আংলো ইন্ডিয়ান গোষ্ঠীর থেকে মনোনীত সদস্যের জন্য রক্ষিত। |
পুরাতাত্ত্বিক খননকার্যের ফলে উত্তরাখণ্ড ভূখণ্ডে প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে মানুষের বসতি থাকার প্রমাণ পাওয়া যায়। প্রাচীন ভারতে বৈদিক যুগে এই অঞ্চল কুরু ও পাঞ্চাল মহাজনপদের অংশ ছিল। গাড়োয়াল ও কুমায়ূন অঞ্চলের প্রথম উল্লেখযোগ্য রাজবংশটি ছিল কুনিন্দ রাজবংশ। খ্রিস্টপূর্ব ২য় শতাব্দীর এই রাজবংশ আদি শৈব ধর্মাবলম্বী ছিল। কলসিতে প্রাপ্ত অশোকের শিলালিপি থেকে জানা যায়, এই অঞ্চলে বৌদ্ধধর্মের অস্তিত্ব ছিল। মধ্যযুগে এই অঞ্চল কুমায়ূন রাজ্য ও গাড়োয়াল রাজ্যের অন্তর্গত হয়। ১৮০৩ সালে এই রাজ্য নেপালের গোর্খা সাম্রাজ্যের অন্তর্গত হয়। ১৮১৬ সালে ইঙ্গ-নেপাল যুদ্ধের পর অধুনা উত্তরাখণ্ডের অধিকাংশ অঞ্চল সুগৌলী সন্ধিচুক্তি বলে ব্রিটিশ ভারতের অঙ্গীভূত হয়। পূর্বতন গাড়োয়াল ও কুমায়ূন ও গাড়োয়াল রাজ্যদুটি পরস্পর প্রতিদ্বন্দ্বী দুটি রাজ্য হলেও, বিভিন্ন প্রতিবেশী জাতিগোষ্ঠীর অবস্থান এবং পারস্পরিক ভৌগোলিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক, ভাষাগত ও প্রথাগত মিলের জন্য দুই অঞ্চলের মধ্যে যে ঐক্য গড়ে উঠেছিল তা ১৯৯০-এর দশকে উত্তরাখণ্ড আন্দোলনকে বিশেষ গতি দিয়েছিল।
উত্তরাখণ্ডের অধিবাসীদের উত্তরাখণ্ডি বলা হয়। বিশেষভাবে অঞ্চল অনুসারে, উত্তরাখণ্ডের অধিবাসীদের গাড়োয়ালি ও কুমায়ুনি – এই দুই ভাগে ভাগ করা হয়। ২০১১ সালের জনগণনা অনুসারে, এই রাজ্যের জনসংখ্যা ১০,১১৬,৭৫২। জনসংখ্যার দিক থেকে এটি ভারতের ১৯শ সর্বাধিক জনবহুল রাজ্য। এই রাজ্যের জনসংখ্যার একটি বৃহৎ অংশ রাজপুত ও ব্রাহ্মণ। রাজ্যের ৮৫% লোক হিন্দু ধর্মাবলম্বী। মুসলমানেরা এই রাজ্যের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় গোষ্ঠী। এছাড়াও শিখ, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ ও জৈনরাও এই রাজ্যে বাস করেন। গাড়োয়ালি ও কুমায়ূনী ভাষা এবং অন্যান্য পার্বত্য উপভাষাগুলি রাজ্যের প্রধান আঞ্চলিক ভাষা। হিন্দি এই রাজ্যের সর্বাধিক কথিত ভাষা। উত্তরাখণ্ডই ভারতের একমাত্র রাজ্য যেখানী সংস্কৃত একটি সরকারি ভাষার মর্যাদা পায়।
নামকরণ
সারাংশ
প্রসঙ্গ
সংস্কৃত ভাষায় ‘উত্তরাখণ্ড’ নামটির অর্থ ‘উত্তরের দেশ’। প্রাচীন হিন্দুশাস্ত্রে ‘কেদারখণ্ড’ (অধুনা গাড়োয়াল বিভাগ, উত্তরাখণ্ড) ও ‘মানসখণ্ড’ (অধুনা কুমায়ুন বিভাগ, উত্তরাখণ্ড) – উভয় অঞ্চলকে ‘উত্তরাখণ্ড’ নামে চিহ্নিত করা হয়েছে। প্রাচীন পুরাণগুলিতে ‘উত্তরাখণ্ড’ বলতে ভারতের হিমালয় পর্বতমালার মধ্যবর্তী অঞ্চলকে বোঝানো হয়েছে।[৪]
১৯৯৮ সালে ভারত সরকার ও উত্তরপ্রদেশ সরকার যখন উত্তরপ্রদেশ রাজ্যটিকে ভেঙে নতুন রাজ্য গঠনের উদ্যোগ নিয়েছিল, তখন অবশ্য ভারতীয় জনতা পার্টি কর্তৃক নতুন রাজ্যের নাম স্থির করা হয় ‘উত্তরাঞ্চল’। উত্তরাঞ্চল নাম গ্রহণের কারণ ছিল, এই নামটির মধ্যে বিচ্ছিন্নতাবাদী মানসিকতা কম প্রকাশ পায়। তবে নতুন রাজ্যের দাবিদার আন্দোলনকারীরা এই নাম গ্রহণের তীব্র সমালোচনা করেন। তাঁরা এই নামকরণটিকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মনে করেছিলেন।[৫] নতুন রাজ্য গঠনের পর সরকারিভাবে ‘উত্তরাঞ্চল’ নামটি ব্যবহৃত হতে থাকলেও, জনসাধারণের মধ্যে ‘উত্তরাখণ্ড’ নামটিই বেশি জনপ্রিয় ছিল।
২০০৬ সালের অগস্ট মাসে উত্তরাঞ্চল বিধানসভা ও উত্তরাখণ্ড রাজ্য আন্দোলনের প্রধান ব্যক্তিত্বদের দাবি মেনে নিয়ে ভারতের কেন্দ্রীয় ক্যাবিনেট রাজ্যের নাম পরিবর্তনে সম্মত হয়। ২০০৬ সালের অক্টোবরে এই মর্মে উত্তরাখণ্ড বিধানসভায় একটি আইন পাস হয়।[৬] সেই বছরই ভারতীয় সংসদের শীতকালীন অধিবেশনে কেন্দ্রীয় ক্যাবিনেট একটি বিল উত্থাপন করে। ডিসেম্বর মাসে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি এ. পি. জে. আব্দুল কালাম সংসদে পাস হওয়া বিলটিতে সাক্ষর করেন। ২০০৭ সালের ১ জানুয়ারি রাজ্যের নাম পরিবর্তন করে ‘উত্তরাখণ্ড’ রাখা হয়।[৭]
ইতিহাস
সারাংশ
প্রসঙ্গ
প্রাগৈতিহাসিক যুগ
প্রাগৈতিহাসিক যুগের শিলাচিত্র, পাথরের ছাউনি, প্রত্নতাত্ত্বিক পাথরের যন্ত্রপাতি (কয়েক হাজার বছরের পুরনো) এবং বৃহৎ প্রস্তরখণ্ড থেকে প্রমাণিত হয় উত্তরাখণ্ডের পার্বত্য অঞ্চলে প্রাগৈতিহাসিক যুগেও জনবসতির অস্তিত্ব ছিল। এছাড়া এখানে প্রাপ্ত পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শন থেকে জানা যায় যে আদি বৈদিক যুগেও (খ্রিস্টপূর্ব ১৫০০ অব্দ) এখানে বৈদিক ধর্মাবলম্বীরা বাস করত।[৮]
প্রাচীন যুগ
পৌরব, কুষাণ, কুণ্ডিন, গুপ্ত, গুর্জর-প্রতিহার, কাত্যুরি, রাইকা, পাল, চন্দ, পানোয়ারের পারমার, শিখ ও ব্রিটিশরা পর্যায়ক্রমে উত্তরাখণ্ড অঞ্চল শাসন করে।[৪]
অস্ট্রো-এশীয় উপজাতি কোলরা এই অঞ্চলের প্রকৃত বাসিন্দা। বৈদিক যুগে (খ্রিস্টপূর্ব ১৭০০-১১০০ অব্দ) উত্তরপশ্চিমাঞ্চল থেকে ইন্দো-আর্য খাসাস উপজাতি এই অঞ্চলে এসে কোলেদের সঙ্গে বসবাস শুরু করে। সেই সময় অধুনা উত্তরাখণ্ড ভূখণ্ড ঋষি ও সাধুদের আবাসস্থল ছিল। হিন্দুরা বিশ্বাস করে, ব্যাস উত্তরাখণ্ডেই মহাভারত নামক মহাকাব্যটি রচনা করেছিলেন।[৯] গাড়োয়াল ও কুমায়ুএর প্রথম প্রধান রাজবংশগুলির মধ্যে অন্যতম হল কুণ্ডিন রাজবংশ। খ্রিস্টপূর্ব ২য় শতাব্দীর এই রাজবংশ ছিল শৈব ধর্মাবলম্বী। এরা পশ্চিম তিব্বতে নুন রফতানি করত। পশ্চিম গাড়োয়ালের কালসিতে অশোকের শিলালিপি থেকে প্রমাণিত হয় এই অঞ্চলে বৌদ্ধধর্মও প্রসার লাভ করেছিল। মূলধারার হিন্দুধর্মের সঙ্গে লৌকিক শমনীয় ধর্মবিশ্বাসও এই অঞ্চলে প্রচলিত ছিল। যদিও আদি শঙ্কর ও সমতলের অন্যান্য বাসিন্দাদের এই অঞ্চলের আগমনের সঙ্গে সঙ্গে গাড়োয়াল ও কুমায়ুনে ব্রাহ্মণ্যধর্ম পুনরায় প্রতিষ্ঠিত হয়। খ্রিস্টীয় ৪র্থ থেকে ১৪শ শতাব্দীর মধ্যে কুমায়ুনের কাত্যুর (অধুনা বৈজনাথ) উপত্যকা-সংলগ্ন অঞ্চল শাসন করেছিল কাত্যুরি রাজবংশ। জগেশ্বরের ঐতিহাসিক মন্দিরটি সম্ভবত কাত্যুরিরাই প্রতিষ্ঠা করেন। পরে এটি সংস্কার করেছিলেন চন্দ রাজারা। কিরাত নামে পরিচিত তিব্বতি-বর্মীয় গোষ্ঠী সম্ভবত উত্তরাখণ্ডের উত্তরের উচ্চভূমি ও সমগ্র অঞ্চলের নানা স্থানে বসবাস শুরু করেছিল। এরা সম্ভবত আধুনিক কালের ভোটিয়া, রাজি, বুকসা ও থারুদের পূর্বপুরুষ।[১০]
মধ্যযুগ ও ব্রিটিশ শাসন

মধ্যযুগে উত্তরাখণ্ডের পশ্চিমাঞ্চল ছিল গাড়োয়াল রাজ্য এবং পূর্বাঞ্চল ছিল কুমায়ুন রাজ্যের অধীনে। এই যুগে পাহাড়ি চিত্রকলা নামে এক চিত্রকলার এক নতুন শৈলী এখানে বিকাশ লাভ করেছিল।[১১] আধুনিক গাড়োয়াল অঞ্চল পারমার রাজাদের অধীনে একত্রীভূত হয়েছিল। বহু ব্রাহ্মণ ও রাজপুতদের সঙ্গে এই পারমাররা এই অঞ্চলে এসে বসবাস শুরু করেছিলেন।[১২] ১৭৯১ খ্রিস্টাব্দে নেপালের গোর্খা সাম্রাজ্য কুমায়ুন রাজ্যের রাজধানী আলমোড়া দখল করে নেয়। ১৮০৩ খ্রিস্টাব্দে গোর্খারা গাড়োয়াল রাজ্যও দখল করে নেয়। ১৮১৬ খ্রিস্টাব্দে ইঙ্গ-নেপাল যুদ্ধের পর তেহরির একটি ক্ষুদ্র অঞ্চল হিসেবে গাড়োয়াল পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়। তেহরির বৃহত্তর অংশ, পূর্ব গাড়োয়াল ও কুমায়ুন সুগৌলির চুক্তি অনুসারে ব্রিটিশদের অধীনে আসে।

স্বাধীনোত্তর যুগ ও উত্তরাখণ্ড আন্দোলন
ভারতের স্বাধীনতার পর গাড়োয়াল রাজ্য উত্তরপ্রদেশ রাজ্যের অন্তর্গত হয়। এই সময় অধুনা উত্তরাখণ্ড ভূখণ্ড উক্ত রাজ্যের গাড়োয়াল ও কুমায়ুন বিভাগের মধ্যে বিভক্ত ছিল।[১৩] ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত এই অঞ্চলের নাম হিসেবে ‘উত্তরাখণ্ড’ শব্দটিই সর্বাধিক পরিচিত ছিল। উত্তরাখণ্ড ক্রান্তি দল সহ একাধিক রাজনৈতিক গোষ্ঠী এই সময় থেকে এই নামে পৃথক রাজ্যের দাবিতে আন্দোলন শুরু করে। গাড়োয়াল ও কুমায়ুন রাজ্যদুটি পূর্বে পরস্পরের প্রতিদ্বন্দ্বী রাজ্য হলেও, ভৌগোলিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক, ভাষাগত ও প্রথাগত দিক থেকে এই দুই অঞ্চল ছিল অবিচ্ছেদ্য ও পরস্পরের পরিপূরক।[১৪] এই সম্পর্কের ভিত্তিতেই উত্তরাখণ্ডের নতুন রাজনৈতিক পরিচিতির দাবি জোরালো হয়েছিল। ১৯৯৪ সালে এই আন্দোলন চূড়ান্ত রূপ নেয়। এই সময়ই উত্তরাখণ্ড রাজ্য গঠনের দাবি স্থানীয় জনসাধারণ ও জাতীয় রাজনৈতিক দলগুলি সর্বসম্মতভাবে মেনে নেয়।[১৫] এই সময়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাটি ছিল ১৯৯৪ সালের ১ অক্টোবর রাত্রিতে রামপুর তিরাহা গুলিচালনার ঘটনা। এই ঘটনা জনসাধারণের মধ্যে বিশেষ আলোড়ন তোলে।[১৬] ১৯৯৮ সালের ২৪ অক্টোবর উত্তরপ্রদেশ বিধানসভায় উত্তরপ্রদেশ পুনর্গঠন বিল পাস হলে নতুন রাজ্য গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয়।[১৭] দুবছর পর ভারতীয় সংসদে উত্তরপ্রদেশ পুনর্গঠন আইন, ২০০০ পাস হয়। এরপর ২০০০ সালের ৯ নভেম্বর ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের ২৭তম রাজ্য হিসেবে উত্তরাখণ্ড রাজ্যের জন্ম হয়।
চিপকো আন্দোলন
"माटू हमरू, पाणी हमरू, हमरा ही छन यी बौण भी... पितरों न लगाई बौण, हमुनही त बचौण भी।"
আমাদের মাটি, আমাদের জল, এই বনাঞ্চল আমাদের। আমাদের পূর্বপুরুষেরা এগুলি পালন করেছেন, আমরাই এগুলিকে রক্ষা করব।
- প্রাচীন চিপকো গান (গাড়োয়ালি ভাষা)[১৮]
১৯৯০-এর দশকে চিপকো পরিবেশ আন্দোলনের জন্যও উত্তরাখণ্ড পরিচিত। এটি ছিল একটি গণ-আন্দোলন।[১৯] এই সময় এখানে অন্যান্য কিছু সামাজিক আন্দোলনও হয়েছিল। এই আন্দোলনটি প্রথম দিকে জীবিকা রক্ষার আন্দোলন হলেও পরবর্তী কালে এটি বন সংরক্ষণ ও পরিবেশ রক্ষার আন্দোলনে পরিণত হয়। সারা বিশ্বে সুপরিচিত এই আন্দোলনটি ছিল একটি অহিংস প্রতিবাদ আন্দোলন।[২০] ভারতের বুদ্ধিজীবী সমাজকে এই আন্দোলন আকৃষ্ট করে। এই আন্দোলন আদিবাসী ও সমাজের পিছিয়ে পড়ার গোষ্ঠীগুলির মানুষদের হয়েও কথা বলতে শুরু করে। প্রায় ২৫ বছর পরে ইন্ডিয়া টুডে পত্রিকা ‘ভারতের রূপদানকারী ১০০ জন ব্যক্তিত্বে’র মধ্যে চিপকো আন্দোলনের ‘বন সত্যাগ্রহে’র মানুষদের নাম উল্লেখ করে।[২১] চিপকো আন্দোলনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য ছিল মহিলা গ্রামবাসীদের বিশাল সংখ্যায় এই আন্দোলনে অংশগ্রহণ।[২২] নারীপুরুষ সবাই এই আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন। গৌরা দেবী ছিলেন প্রধান আন্দোলনকারী যিনি এই আন্দোলন শুরু করেন। অন্যান্য অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ছিলেন চণ্ডীপ্রসাদ ভট্ট, সুন্দরলাল বহুগুণা ও বিশিষ্ট চিপকো কবি ঘনশ্যাম রাতুরি।[২৩]
ভূগোল
সারাংশ
প্রসঙ্গ

উত্তরাখণ্ড রাজ্যের আয়তন ৫৩,৪৮৩ বর্গকিলোমিটার।[২৪] এর মধ্যে ৮৬% পার্বত্য অঞ্চল এবং ৬৫% বনাঞ্চল।[২৪] রাজ্যের উত্তরাংশের অধিকাংশ স্থানই হিমালয়ের শৃঙ্গ ও হিমবাহ দ্বারা আচ্ছাদিত। ১৯শ শতাব্দীর প্রথমার্ধ্বে ভারতে রাস্তা, রেলপথ ও অন্যান্য পরিকাঠামো গড়ে তোলার সময় হিমালয়ের অঞ্চলের দুর্গমতা সম্পর্কে সবাইকে সচেতন করেছিল। হিন্দুধর্মের প্রধান দুই নদী গঙ্গা ও যমুনা এই রাজ্যের যথাক্রমে গঙ্গোত্রী ও যমুনোত্রী থেকে উৎসারিত। সেই সঙ্গে এই রাজ্যের বদ্রীনাথ ও কেদারনাথ শহরদুটি (ছোটো চারধামের অংশ) হিন্দুধর্মের প্রধান তীর্থশহরগুলির অন্যতম। উত্তরাখণ্ডের জিম করবেট জাতীয় উদ্যান ভারতীয় উপমহাদেশের প্রাচীনতম জাতীয় উদ্যান। এখানে বেঙ্গল টাইগার দেখা যায়। এই রাজ্যের গাড়োয়াল অঞ্চলের যোশীমঠের কাছে ভ্যুন্দর গঙ্গার উচ্চ অববাহিকায় ভ্যালি অফ ফ্লাওয়ার্স একটি ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান। এখানে বিভিন্ন ধরনের দুষ্প্রাপ্য ফুল পাওয়া যায়।[২৫][২৬] রয়্যাল বোটানিক গার্ডেনস, কিউ-এর ডিরেক্টর স্যার জোসেফ ডালটন হুকার এই অঞ্চল পরিভ্রমণের সময় এই পুষ্পোদ্যানটি গড়ে তুলেছিলেন। পরে এই বেসরকারি বাণিজ্যিক প্রকল্পটি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ১৮৫৫ সালে লর্ড ডালহৌসি ইন্ডিয়ান ফরেস্ট চার্টার জারি করেন। ১৮৭৮ সালের ভারতীয় বন আইন বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে ভারতে বন সংরক্ষণে বিশেষ সহায়ক হয়। এরপরেই ১৮৭৮ সালে ডাইট্রিচ ব্র্যান্ডিস দেরাদুনে ইম্পিরিয়াল ফরেস্ট স্কুল স্থাপন করেন। ১৯০৬ সালে এই সংস্থার নাম পালটে রাখা হয় ‘ইম্পিরিয়াল ফরেস্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউট’। এটি এখন ফরেস্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউট নামে পরিচিত। দেরাদুনের চারপাশে আদর্শ ‘বন পরিমণ্ডল’ ব্যবহৃত হয় প্রশিক্ষণ, প্রদর্শন ও বৈজ্ঞানিক সমীক্ষার কাজে। এই অঞ্চলের বন ও পরিবেশের উপর এর একটি সুদূরপ্রসারী ইতিবাচক প্রভাব রয়েছে। হিমালয়ের জৈবপরিবেশে বিভিন্ন ধরনের পশু (যেমন ভরল, স্নো লেপার্ড, চিতাবাঘ ও বাঘ), উদ্ভিদ ও দুষ্প্রাপ্য ঔষধি লতাপাতা দেখা যায়। উত্তরাখণ্ডের হিমবাহ থেকেই ভারতের জাতীয় নদী গঙ্গা ও উত্তর ভারতের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নদী যমুনার উৎপত্তি। এই দুই নদী এই রাজ্যের বহু হ্রদ, হিমবাহ গলিত জল ও ছোটো নদীর জলে পুষ্ট।[২৭]
উত্তরাখণ্ড রাজ্যটি হিমালয় পর্বতমালার দক্ষিণ ঢালে অবস্থিত। উচ্চতা অনুসারে উচ্চতম এলাকার হিমবাহগুলি থেকে নিচু এলাকার উপক্রান্তীয় বনাঞ্চলে এই রাজ্যের আবহাওয়া ও উদ্ভিজ্জ প্রকৃতির বিশেষ পার্থক্য দেখা যায়। উচ্চতম এলাকাগুলি তুষার ও প্রস্তরখণ্ডে আচ্ছাদিত থাকে। ৩,০০০ এবং ৫,০০০ মিটার (৯,৮০০ এবং ১৬,৪০০ ফুট) উচ্চতার মধ্যে পশ্চিম হিমালয় আল্পীয় বন ও তৃণভূমি অবস্থিত। এই রেখার ঠিক নিচেই অবস্থিত নাতিশীতোঞ্চ এলাকার পশ্চিম হিমালয় উপ-আল্পীয় মোচাকৃতি বৃক্ষের বনাঞ্চল। ৩,০০০ থেকে ২,৬০০ মিটার (৯,৮০০ থেকে ৮,৫০০ ফুট) উচ্চতায় নাতিশীতোষ্ণ এলাকায় এই বন পশ্চিম হিমালয় বৃহৎপত্র বনাঞ্চলে পরিবর্তিত হয়েছে। শেষোক্ত বনটি ২,৬০০ থেকে ১,৫০০ মিটার (৮,৫০০ থেকে ৪,৯০০ ফুট) উচ্চতায় অবস্থিত। ১,৫০০ মিটার (৪,৯০০ ফুট) উচ্চতার নিচে হিমালয় উপক্রান্তীয় পাইন বনাঞ্চল অবস্থিত। উত্তরপ্রদেশ-উত্তরাখণ্ড সীমান্ত অঞ্চলের নিম্নভূমিতে রয়েছে উচ্চ গাঙ্গেয় সমভূমি আর্দ্র পর্ণমোচী বনাঞ্চল ও তরাই-দুয়ার সাভানা ও তৃণভূমি। এই এলাকাটি ভাবর নামে পরিচিত। নিচু এলাকার এই বনাঞ্চলের বড়ো অংশটিই কৃষিকার্যের জন্য কেটে ফেলে হয়েছে। তবে কিছু কিছু জায়গায় বনাঞ্চল রয়ে গিয়েছে।[২৮]
২০১৩ সালের জুন মাসে অত্যধিক বর্ষণের ফলে এই অঞ্চলে এক বিধ্বংসী বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এই বন্যায় ৫০০০ লোক নিখোঁজ এবং হত বলে ধরে নেওয়া হয়েছে। ভারতীয় গণমাধ্যমে এই বন্যাটিকে ‘হিমালয়ের সুনামি’ আখ্যা দেওয়া হয়েছিল।
জনপরিসংখ্যান
সারাংশ
প্রসঙ্গ
উত্তরাখণ্ডের অধিবাসীদের সাধারণত উত্তরাখণ্ডি বলা হয়। কখনও কখনও তাদের বিশেষভাবে কুমায়ুনি ও গাড়োয়ালি বলা হয়। কুমায়ুন অঞ্চলের অধিবাসীদের কুমায়ুনি ও গাড়োয়াল অঞ্চলের অধিবাসীদের গাড়োয়ালি বলা হয়। ২০১১ সালের ভারতের জনগণনা অনুসারে, উত্তরাখণ্ডের জনসংখ্যা ১০,১১৬,৭৫২। এর মধ্যে ৫,১৫৪,১৭৮ জন পুরুষ এবং ৪,৯৬২,৫৭৪ জন মহিলা। ৬৯.৪৫% অধিবাসী গ্রামের বাসিন্দা। উত্তরাখণ্ড জনসংখ্যার ভিত্তিতে ভারতের ২০শ বৃহত্তম রাজ্য। দেশের অধিবাসীদের ০.৬৪% এবং মূল ভূখণ্ডের অধিবাসীদের ১.৬৯% এই রাজ্যে বাস করেন। রাজ্যের জনঘনত্ব প্রতি বর্গকিলোমিটারে ১৮৯ জন। ২০০১-১১ দশকে এই রাজ্যের বৃদ্ধির হার ১৯.১৭%। রাজ্যের লিঙ্গানুপাতের হার প্রতি ১০০০ পুরুষে ৯৬৩ জন মহিলা।[৩০][৩১][৩২] রাজ্যের জন্মহার ১৮.৬, যেখানে সামগ্রিক জন্ম হার ২.৩। শিশু মৃত্যুর হার ৪৩, প্রসবকালীন প্রসূতির মৃত্যুহার ১৮৮ এবং সামগ্রিক মৃত্যু হার ৬.৬।[৩৩]
২০১১ সালের ধর্মভিত্তিক জনসংখ্যার তথ্য এখনও সরকার কর্তৃক প্রকাশিত হয়নি। তবে কোনো কোনো জাতীয় সংবাদপত্রে এই তথ্যানুসন্ধান করে তা প্রকাশ করা হয়েছে। এই তথ্য অনুসারে ২০০১ থেকে ২০১১ সালের মধ্যে মুসলমান জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে ২%। এখন রাজ্যের মুসলমান জনসংখ্যার হার ১৩.৯%।[৩৪]
জাতিগোষ্ঠী
উত্তরাখণ্ডের দুটি ভৌগোলিক-সাংস্কৃতিক অঞ্চল গাড়োয়াল ও কুমায়ুনে বহুজাতিক জনবসতি দেখা যায়। এই রাজ্যের জনসংখ্যার একটি বৃহত্তর অংশ রাজপুত (পূর্বতন ভূস্বামী ও তাদের বংশধরদের বিভিন্ন গোষ্ঠী)। এর মধ্যে গাড়োয়ালি, কুমায়ুনি, গুজ্জর সম্প্রদায়ের লোক রয়েছে। সেই সঙ্গে অন্যান্য অভিবাসীরাও রয়েছেন। ২০০৭ সালে সেন্টার ফর দ্য স্টাডি অফ ডেভেলপিং সোসাইটিজ কর্তৃক কৃত একটি সমীক্ষা অনুসারে, উত্তরাখণ্ডে ব্রাহ্মণদের হার সর্বাধিক। জনসংখ্যার প্রায় ২০% ব্রাহ্মণ।[৩৫] জনসংখ্যার প্রায় এক-পঞ্চমাংশ তফসিলি জাতি-ভুক্ত।[৩২] রাজি প্রভৃতি তফসিলি উপজাতি, যারা মূলত নেপাল সীমান্তের কাছে বসবাস করে, তারা জনসংখ্যার ৩%।[৩২] উত্তরাখণ্ডের জনসংখ্যার চার-পঞ্চমাংশ হিন্দু।[৮] মুসলমান, শিখ, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ ও জৈনরা অবশিষ্ট জনসংখ্যার অংশ। এর মধ্যে মুসলমানরা বৃহত্তম সংখ্যালঘু সম্প্রদায়।[৮][৩২]
ভাষা
কুমায়ুন ও গাড়োয়াল অঞ্চলে পাহাড়ি ভাষার দুটি উপভাষা – যথাক্রমে গাড়োয়ালি ও কুমায়ুনি কথিত হয়। জৌনসারি ও ভোটি ভাষা যথাক্রমে পশ্চিম ও উত্তরাঞ্চলের আদিবাসী সম্প্রদায়গুলির ভাষা। শহরের অধিবাসীরা যদিও হিন্দিতে কথা বলেন। হিন্দিই উত্তরাখণ্ডের সরকারি ভাষা। উত্তরাখণ্ডই ভারতের একমাত্র রাজ্য যেখানে সংস্কৃত সরকারি ভাষার মর্যাদা পেয়ে থাকে।[৩৬]
সরকার ব্যবস্থা ও রাজনীতি
সারাংশ
প্রসঙ্গ
ভারতের সংবিধান অনুসারে, দেশের অন্যান্য রাজ্যের মতো উত্তরাখণ্ডেও সংসদীয় প্রতিনিধিত্বমূলক গণতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থা প্রচলিত।
উত্তরাখণ্ডের রাজ্যপাল রাজ্যের আনুষ্ঠানিক প্রধান। ভারত সরকারের পরামর্শক্রমে ভারতের রাষ্ট্রপতি তাঁকে পাঁচ বছরের মেয়াদে নিযুক্ত করেন। উত্তরাখণ্ডের বর্তমান রাজ্যপালের নাম কৃষ্ণকান্ত পাল। উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যের প্রকৃতি কার্যনির্বাহী ক্ষমতা ভোগ করেন। তিনি রাজ্য বিধানসভা নির্বাচনে জয়ী দল বা জোটের প্রধান। উত্তরাখণ্ডের বিধানসভা নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত। বিধানসভার সদস্যদের বলা হয় বিধায়ক। বিধায়কদের মধ্যে থেকে অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষ নির্বাচিত হন। অধ্যক্ষ বিধানসভার পৌরোহিত্য করেন। তাঁর অনুপস্থিতিতে উপাধ্যক্ষ সভায় পৌরোহিত্য করেন। মুখ্যমন্ত্রীর পরামর্শক্রমে রাজ্যপাল ক্যাবিনেট মন্ত্রীদের নির্বাচিত করেন। উত্তরাখণ্ডের মন্ত্রিসভা বিধানসভার কাছে নিজেদের কাজের জন্য দায়বদ্ধ থাকে। উত্তরাখণ্ডের বিধানসভা এককেন্দ্রিক। এই সভার সদস্য সংখ্যা ৭০।[৩৭] স্থানীয় স্তরের সরকার ব্যবস্থা গ্রামীণ স্তরে পঞ্চায়েত ও শহরাঞ্চলে পৌরসভা নামে পরিচিত। রাজ্য সরকার ও সকল স্থানীয় সরকারের মেয়াদ পাঁচ বছর। উত্তরাখণ্ড থেকে ভারতীয় সংসদের লোকসভায় ৫টি ও রাজ্যসভায় ৩টি আসন বরাদ্দ রয়েছে।[৩৮] উত্তরাখণ্ডের সর্বোচ্চ আদালত উত্তরাখণ্ড হাইকোর্ট নৈনিতাল শহরে অবস্থিত। এই আদালত ছাড়াও রাজ্যে নিম্নস্তরের আদালতও রয়েছে। রাজ্যের বর্তমান মুখ্য বিচারপতি হলেন বিচারপতি কে. এম. জোসেফ।[৩৯]
উত্তরাখণ্ডের প্রধান রাজনৈতিক দল হল ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস ও ভারতীয় জনতা পার্টি। রাজ্য প্রতিষ্ঠার পর থেকে এই দুই দলই পর্যায়ক্রমে উত্তরাখণ্ডের শাসনক্ষমতা ভোগ করেছে। ২০১২ সালের রাজ্য বিধানসভা নির্বাচনে ত্রিশঙ্কু বিধানসভা গঠিত হলে বৃহত্তম দল ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস একটি জোট সরকার গঠন করে। ত্রিবেন্দ্র সিং রাওয়াত হলেন উত্তরাখণ্ডের অষ্টম এবং বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী। তিনি ১২ মার্চ ২০১৭ সালে দায়িত্ব গ্রহণ করেন।[৪০]
প্রশাসনিক বিভাগ
উত্তরাখণ্ড রাজ্যে ১৩টি জেলা রয়েছে। এগুলি কুমায়ুন ও গাড়োয়াল বিভাগের অধীনস্থ। ২০১১ সালের ১৫ অগস্ট তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী রমেশ পোখরিয়াল দিদিহাট, রানিখেত, কোটদ্বার ও যমুনোত্রী জেলা গঠনের কথা ঘোষণা করলেও এই জেলাগুলি এখনও গঠিত হয়নি।[৪১] দুটি বিভাগের অন্তর্গত জেলাগুলি হল:
|
প্রত্যেকটি জেলা একজন জেলা কমিশনার বা জেলাশাসক কর্তৃক শাসিত হয়। জেলাগুলি মহকুমায় বিভক্ত। মহকুমাগুলি শাসিত হয় মহকুমাশাসক কর্তৃক। মহকুমাগুলির গ্রামীণ এলাকা পঞ্চায়েতে ও শহরাঞ্চল পৌরসভায় বিভক্ত।
২০১১ সালের জনগণনা অনুসারে, হরিদ্বার, দেরাদুন ও উধম সিং নগর জেলার জনসংখ্যা সর্বাধিক। এই জেলাগুলিতে ১০ লক্ষেরও বেশি লোক বাস করে।[৩০]
সংস্কৃতি
সারাংশ
প্রসঙ্গ

সাহিত্য
উত্তরাখণ্ডের জাতিগত বৈচিত্র্যের কারণে এই রাজ্যে হিন্দি, কুমায়ুনি, গাড়োয়ালি, জৌনসারি ও ভোটি ভাষায় সমৃদ্ধ সাহিত্যিক ঐতিহ্য গড়ে উঠেছে। এই রাজ্যের বিভিন্ন কিংবদন্তির উৎস এই রাজ্যের চারণকবিদের কাব্যগীতি। এগুলিকে এখন হিন্দু সাহিত্যের ধ্রুপদি রচনা গণ্য করা হয়। গঙ্গাপ্রসাদ বিমল, মনোহর শ্যাম যোশী, প্রসূন যোশী, শেখর যোশী, শৈলেশ মাতিয়ানি, শিবানী, সংগীত নাটক অকাদেমি পুরস্কার-প্রাপ্ত মোহন উপ্রেতি, বি. এম. শাহ, সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার-প্রাপ্ত মঙ্গলেশ দাবরাল ও জ্ঞানপীঠ পুরস্কার-প্রাপ্ত সুমিত্রানন্দন পন্ত এই রাজ্যের প্রধান সাহিত্যিক। বিশিষ্ট দার্শনিক ও পরিবেশকর্মী সুন্দরলাল বহুগুণা ও বন্দনা শিবা এই রাজ্যের বাসিন্দা।
সংগীত
উত্তরাখণ্ডের সংস্কৃতির একটি অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হল সংগীত। মঙ্গল, বাসন্তী, খুদেদ, ও ছোপাটি এখানকার জনপ্রিয় লোকসংগীত।[৪২] এগুলি হাওয়া হয় ঢোল, ডমরু, তুরি, রণসিঙা, ঢোলক, দৌর, থালি, ভাঙ্কোরা, মণ্ডন ও নসকবাজার সঙ্গতে। "বেদু পাকো" এই রাজ্যের একটি জনপ্রিয় লোকগান। এটি আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন এবং রাজ্যেও একটি কিংবদন্তি। এটি উত্তরাখণ্ডের অঘোষিত রাষ্ট্রীয় সংগীত।[৪৩] উত্তরাখণ্ডে সংগীতের মাধ্যমে দেবদেবীদের আবাহন করা হয়। জাগর নামক ভূতপূজার অনুষ্ঠানে ‘জাগরিয়া’ বা গায়ক মহাভারত ও রামায়ণের কাহিনি অবলম্বনে দেবতাদের কীর্তি গানের মাধ্যমে উপস্থাপনা করেন। এই রাজ্যের জনপ্রিয় লোকসংগীতশিল্পীরা হলেন নরেন্দ্র সিং নেগি ও মিনা রাণা।[৪৪]
নৃত্যকলা
উত্তরাখণ্ড ভূখণ্ডের নৃত্যকলা এই অঞ্চলের জীবন ও মানব অস্তিত্বের বিভিন্ন আবেগের সঙ্গে যুক্ত। পুরুষদের লংবীর নৃত্য অনেকটি জিমন্যাস্টিক ভঙ্গিমাগুলির অনুরূপ। দেরাদুনের আরেকটি বিখ্যাত লোকনৃত্য হল বরদা নটী নৃত্য। এটি বিভিন্ন ধর্মীয় উৎসবের সময় আয়োজিত হয়। অন্যান্য বিখ্যাত নৃত্যগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হুরকা বাউল, ঝোরা-চাঁচরি, ঝুমাইলা, চুপহুলা ও ছোলিয়া।[৪৫]
শিল্পকলা


উত্তরাখণ্ডের স্থানীয় শিল্পকলার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হল কাঠখোদাই শিল্প। রাজ্যের বিভিন্ন মন্দির অলংকরণের কাজে এই শিল্প ব্যবহৃত হয়। কাঠের উপর ফুল, দেবদেবী ও জ্যামিতিক নকশা আঁকা হয়। গ্রামের ঘরবাড়িতে দরজা, জানলা, সিলিং ও দেওয়াল চিত্রণেও এই শিল্প ব্যবহার করা হয়। বাড়ি ও মন্দিরে সুন্দর ছবি ও ম্যুরাল ব্যবহৃত হয়। ১৭শ ও ১৮শ শতাব্দীতে এই অঞ্চলে পাহাড়ি চিত্রকলা নামে চিত্রকলার এক বিশেষ শৈলী উদ্ভাবিত হয়েছিল। কাংড়া চিত্রকলার গাড়োয়াল শাখার সূত্রপাত ঘটেছিল মোলা রাম কর্তৃক। গুলার রাজ্যে কাংড়া চিত্রকলার সূচনা ঘটেছিল। কুমায়ুনি শিল্প জ্যামিতিক আকারে। অন্যদিকে গাড়োয়ালি শিল্প প্রকৃতির অনুষঙ্গে সৃষ্ট। উত্তরাখণ্ডের অন্যান্য শিল্পের মধ্যে সোনার গয়না, গাড়োয়ালের ঝুড়ি শিল্প, উলের শাল, স্কার্ফ ও গালিচাশিল্প বিখ্যাত। শেষোক্ত শিল্পটি উত্তর উত্তরাখণ্ডের ভোটিয়াদের উৎপাদন।
খাদ্য
রুটি ও সবজি উত্তরাখণ্ডের মানুষের প্রধান খাদ্য। তবে আমিষ খাবারও চলে। উত্তরাখণ্ডের মানুষদের খাদ্যাভ্যাসের একটি স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য হল টম্যাটো, দুধ ও দুগ্ধজাত খাদ্যের বহুল ব্যবহার। দুর্গম এলাকায় ফাইবার-সমৃদ্ধ কাঁচা খাদ্যশস্যের প্রচলন বেশি। বাজরা (স্থানীয় নাম ‘মাদুয়া’ বা ‘ঝিঙ্গোরা’) হল এই অঞ্চলের অন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ খাদ্যশস্য। কুমায়ুন ও গাড়োয়ালের ভিতরের দিকের এলাকায় এই শস্যের চল আছে। সাধারণত দেশি ঘি বা সরষের তেল দিয়ে রান্না হয়। ‘জাখিয়া’ নামে একধরনের মশলা ব্যবহার করে সাধারণ রান্নাকে সুস্বাদু করে তোলা হয়। বল মিঠাই এখানকার এক জনপ্রিয় মিষ্টি। অন্যান্য জনপ্রিয় খাবার হল দুবুক, চেইন, কাপ, চুটকানি, সেই ও গুলগুলা। ‘ঝোই’ বা ‘ঝোলি’ নামে কাধির একটি আঞ্চলিক রূপান্তরও এখানে জনপ্রিয়।[৪৬]
উৎসব ও মেলা

হিন্দুধর্মের অন্যতম প্রধান মেলা কুম্ভমেলা উত্তরাখণ্ডে আয়োজিত হয়। ভারতের যে চারটি তীর্থে এই মেলা হয় এই রাজ্যের হরিদ্বার তার অন্যতম। ২০১০ সালের মকর সংক্রান্তি (১৪ জানুয়ারি, ২০১০) থেকে বৈশাখ পূর্ণিমা স্নান (২৮, এপ্রিল, ২০১০) পর্যন্ত সর্বশেষ পূর্ণকুম্ভের আয়োজন করা হয়েছিল। বিশ্বের বৃহত্তম এই ধর্মীয় মেলায় শতাধিক বিদেশি পর্যটক এসেছিলেন।[৪৭] বৈঠকি হোলি, খারি হোলি ও মহিলা হোলির আকারে কুমায়ুনি হোলি বসন্ত পঞ্চমীতে শুরু হয় এবং এক মাস ধরে উৎসব ও সংগীতানুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে আয়োজিত হয়। গঙ্গা দশহরা, বসন্তপঞ্চমী, মকর সংক্রান্তি, ঘি সংক্রান্তি, খাতারুয়া, সাবিত্রী ব্রত ও ফুল দেই এই রাজ্যের অন্যতম প্রধান উৎসব।কানোয়ার যাত্রা, কাণ্ডালি উৎসব, রাম্মান, হারেলা মেলা, কৌচণ্ডী মেলা, উত্তরায়ণী মেলা ও নন্দা দেবী রাজ জাট মেলা এই রাজ্যের প্রধান মেলা।
অর্থনীতি
সারাংশ
প্রসঙ্গ
উত্তরাখণ্ড ভারতের দ্বিতীয় দ্রুততম উন্নয়নশীল রাজ্য।[৪৮] ২০০৫ অর্থবর্ষে রাজ্যের মোট আভ্যন্তরিণ উৎপাদন (স্থির দামের ভিত্তিতে) ছিল ২৪,৭৮৬ কোটি টাকা। ২০১২ অর্থবর্ষে তা বেড়ে হয়েছে ৬০,৮৯৮ টাকা। ২০০৫-১২ অর্থবর্ষ পর্যায়ে মোট আভ্যন্তরিণ উৎপাদন বৃদ্ধির হার ১৩.৭%। ২০১২ অর্থবর্ষে কর্মক্ষেত্র থেকে মোট আভ্যন্তরিণ উৎপাদনে অবদান ৫০%-এরও বেশি। উত্তরাখণ্ডে মাথাপিছু আয় ১,০৩,০০০ টাকা (২০১৩ অর্থবর্ষ); যা জাতীয় গড় ৭৪,৯২০ টাকার (২০১৩ অর্থবর্ষ) থেকে অনেকটা বেশি।[৪৯][৫০] ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংক অনুসারে, ২০০০ সালের এপ্রিল থেকে ২০০৯ সালের অগস্ট মাস পর্যন্ত এই রাজ্যে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের পরিমাণ ৪৬.৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।[৫১]
কৃষি

ভারতের অধিকাংশ রাজ্যের মতো উত্তরাখণ্ডের অর্থনীতির সবচেয়ে গুরুপূর্ণ ক্ষেত্র হল কৃষি। বাসমতী চাল, গম, সয়াবিন, চীনাবাদাম, কাঁচা খাদ্যশস্য, ডাল ও তৈলবীজ এই রাজ্যের প্রধান কৃষিজ পণ্য। ফলের মধ্যে আপেল, কমলালেবু, পেয়ারা, পিচ, লিচু ও খেজুর এখানে প্রচুর পরিমাণে ফলে। ফল-প্রক্রিয়াকরণ শিল্পও রাজ্যের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শিল্প। এই রাজ্যে লিচু, হর্টিকালচার, লতাপাতা, ঔষধি গাছ ও বাসমতী চালের জন্য বিশেষ কৃষিক্ষেত্র স্থাপন করা হয়েছে। ২০১০ সালে রাজ্যে ৮৩১ হাজার টন গম ও ৬১০ হাজার টন চাল উৎপাদিত হয়। অন্যদিকে এই রাজ্যের প্রধান অর্থকরী ফলস আখের উৎপাদন পরিমাণ ছিল ৫০৫৮ হাজার টন। রাজ্যের ৯০% এলাকা পার্বত্য অঞ্চল। তাই হেক্টর প্রতি উৎপাদনের হার বেশি হয়। রাজ্যের কৃষিক্ষেত্রের ৮৬% সমতল অঞ্চলে। অবশিষ্টাংশ পার্বত্য অঞ্চলে অবস্থিত।[৫২]
শিল্প
এই রাজ্যের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ শিল্প হল পর্যটন ও জলবিদ্যুৎ। এছাড়াও তথ্যপ্রযুক্তি, আইটিইএস, জৈবপ্রযুক্তি, ফার্মাকিউটিক্যাল ও অটোমোবাইল শিল্পেরও যথেষ্ট বিকাশ ঘটেছে। পর্যটন, তথ্যপ্রযুক্তি, উচ্চশিক্ষা ও ব্যাংকিং-ই এই রাজ্যের প্রধান শিল্পক্ষেত্র।[৫২]
২০০৫-২০০৬ সাল নাগাদ, রাজ্য সরকার হরিদ্বার, পন্তনগর ও সিতারগণিতে ইন্টিগ্রেটেড ইন্ডাস্ট্রিয়াল এস্টেট; সেলাকিতে ফার্মা সিটি; দেরাদুনের সহস্ত্রধারায় তথ্যপ্রযুক্তি পার্ক এবং কোটদ্বারের সিগগাদিতে গ্রোথ সেন্টার সফল ভাবে গড়ে তোলে। ২০০৬ সালেই প্রাইভেট পাবলিক পার্টনারশিপ ধাঁচের ২০টি শিল্পক্ষেত্র এই রাজ্যে গড়ে তোলা হয়।[৫৪]
জীবজগৎ
সারাংশ
প্রসঙ্গ
জাতীয় উদ্যান
উত্তরাখণ্ডের জীবজগৎ অত্যন্ত বৈচিত্র্যপূর্ণ। এই রাজ্যের ৩৪,৬৫১ বর্গকিলোমিটার এলাকা বনাঞ্চলে আচ্ছাদিত; যা রাজ্যের মোট ভূখণ্ডের ৬৫%।[৫৭] উত্তরাখণ্ডে অনেক দুষ্প্রাপ্য প্রজাতির গাছ ও পশুপাখি দেখা যায়। এগুলির অনেকগুলিই অভয়ারণ্য ও রিজার্ভে সংরক্ষিত হয়। উত্তরাখণ্ডের জাতীয় উদ্যানগুলির মধ্যে নৈনিতাল জেলার রামনগরে জিম করবেট জাতীয় উদ্যান ভারতের প্রাচীনতম জাতীয় উদ্যান। এটি এবং চামোলি জেলার ভ্যালি অফ ফ্লাওয়ার্স জাতীয় উদ্যান এবং নন্দা দেবী জাতীয় উদ্যান একসঙ্গে ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান। এখানে বহু সংখ্যক বৃক্ষপ্রজাতি আন্তর্জাতিকভাবে বিপন্ন। এদের অনেকগুলিই উত্তরাখণ্ডের অন্যত্র পাওয়া যায় না।[৫৮] হরিদ্বার জেলার রাজাজি জাতীয় উদ্যান এবং উত্তরকাশী জেলার গোবিন্দ পশুবিহার জাতীয় উদ্যান ও অভয়ারণ্য ও গঙ্গোত্রী জাতীয় উদ্যান এই রাজ্যের অন্যান্য সংরক্ষিত বনাঞ্চল।[৫৯]
পশুপাখি
পার্বত্য অঞ্চলে প্রচুর চিতাবাঘ দেখা যায়। তবে নিম্নভূমির জঙ্গলেও চিতাবাঘ চোখে পড়ে। অন্যান্য বিড়ালজাতীয় প্রাণীর মধ্যে আছে বন বিড়াল, মেছোবাঘ ও চিতা বিড়াল। অন্যান্য স্তন্যপায়ী প্রাণীদের মধ্যে আছে বিভিন্ন ধরনের হরিণ (মায়া হরিণ, সম্বর হরিণ, প্যারা হরিণ ও চিত্রা হরিণ), শ্লথ ও এশীয় কালো ভাল্লুক, নেউল, ভোঁদড়, হলুদগলা মার্টিন, ভরাল, দেশি বনরুই, হনুমান ও লাল বানর। গ্রীষ্মকালে হাজারে হাজারে হাতি দেখতে পাওয়া যায়। স্বাদুপানির কুমির, ঘড়িয়াল অন্যান্য সরীসৃপদের এই অঞ্চলে দেখা যায়। স্থানীয় কুমিরদের বিলুপ্তির হাত থেকে বাঁচাতে বন্দী করে প্রজনন ঘটিয়ে আবার রামগঙ্গা নদীতে ছেড়ে দেওয়া হয়।[৬০] বিভিন্ন ধরনের মিষ্টি জলের নদীকচ্ছপ ও সাধারণ কচ্ছপ (যেমন দেশি কড়ি কাইট্টা, মুকুটি নদ-কাছিম ও গঙ্গা তরুণাস্থি কাছিম) এবং বিভিন্ন ধরনের প্রজাপতি ও পাখি (যেমন চান্দা, ডোরাকাটা বাঘ প্রজাপতি, সাতভাই ছাতারে, বড় মেটেকুড়ালি, তোতা (লালবুক টিয়া), কমলা-বুক হরিয়াল ও খয়েরি-ডানা পাপিয়া) দেখা যায়।[৬১] ২০১১ সালে জিম করবেট ন্যাশনাল পার্কে দুলর্ভ অতিথি পাখি শুঁটি রাজহাঁস দেখা গিয়েছে।[৬২]
গাছপালা
চিরহরিৎ ওক, রডোডেনড্রন ও কনিফার গাছ পার্বত্য অঞ্চলের প্রধান গাছ। শাল, শিমুল, শীশম, সিন্ধুরে, খয়ের, কঠমূলী ও রক্তকাঞ্চন এই অঞ্চলের অন্যান্য গাছ। অ্যালবিজিয়া চিনেসিস নামে এক ধরনের গাছের মিষ্টি ফুল শ্লথ ভাল্লুকেরা খুব পছন্দ করে। এই অঞ্চলে এই ফুল ফুটতে দেখা যায়।[৬১] অধ্যাপক সি. পি. কালার গবেষণায় জানা গিয়েছে ভ্যালি অফ ফ্লাওয়ার্স জাতীয় উদ্যানে ৫২০টি প্রজাতির বড়ো গাছ ও ৪৯৮টি প্রজাতির ফুলগাছ আছে। এই জাতীয় উদ্যানে বিভিন্ন ধরনের ঔষধি বৃক্ষও পাওয়া যায়।[৬৩][৬৪]
পরিবহণ ব্যবস্থা
সারাংশ
প্রসঙ্গ
সড়ক পরিবহণ
উত্তরাখণ্ডের মোট রাস্তার দৈর্ঘ্য ২৮,৫০৮ কিলোমিটার। এর মধ্যে ১,৩২৮ কিলোমিটার জাতীয় সড়ক এবং ১,৫৪৩ কিলোমিটার রাজ্য সরড়।[৫৪] রাজ্য সড়ক পরিবহন সংস্থা পরে উত্তরাখণ্ড পরিবহন সংস্থা নামে পুনর্গঠিত হয়েছে। এটিই রাজ্যের প্রধান পরিবহন সংস্থা। ২০০৩ সালের ৩১ অক্টোবর এই সংস্থা চালু হয়। আন্তঃরাজ্য ও জাতীয়কৃত রাস্তাগুলি রক্ষণাবেক্ষণ করে এটি। ২০১২ সালের হিসেব অনুসারে, এই সংস্থা ৩৫টি জাতীয়কৃত রুট ও অন্যান্য অনেকগুলি রাস্তায় ১০০০ বাস চালায়। বেসরকারি পরিবহন সংস্থাগুলি জাতীয়কৃত নয় এমন রাস্তাগুলিতে এবং উত্তরাখণ্ড ও প্রতিবেশী উত্তরপ্রদেশের মধ্যে ৩০০০ বাস চালায়।[৬৫]
নির্মাণাধীন চার ধাম হাইওয়ে রাজ্যের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও কৌশলগতভাবে তাৎপর্যপূর্ণ যোগাযোগ ব্যবস্থা হতে চলেছে ।
বিমান ও হেলিকপ্টার পরিবহণ
রাজ্যের বিমান পরিবহন ব্যবস্থা ধীরে ধীরে গড়ে উঠছে। দেরাদুনের জলি গ্র্যান্ট বিমানবন্দর রাজ্যের ব্যস্ততম বিমানবন্দর। এখান থেকে দিল্লির ইন্দিরা গান্ধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে দৈনিক ছয়টি উড়ান চলে। কুমায়ুন অঞ্চলের পন্তনগরের পন্তনগর বিমানবন্দর থেকে দিল্লিতে প্রতিদিন একটি উড়ান চলে এবং ফিরে আসে। এছাড়া সরকার পিথোরাগড়ে নৈনি সাইনি বিমানবন্দর,[৬৬] উত্তরকাশী জেলার চিনিয়ালিসৌরে ভারকোট বিমানবন্দর এবং চামোলি জেলার গৌচরে গৌচর বিমানবন্দর গড়ে তোলার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে।
পন্তনগর, জলি গ্র্যান্ট বিমানবন্দর ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পর্যটনকেন্দ্রে (যেমন ঘাগারিয়া ও হেমকুন্দ সাহিব) হেলিপ্যাড পরিষেবা গড়ে তোলার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।[৬৭]
রেল পরিবহণ
উত্তরাখণ্ড ভূখণ্ডের ৮০%-এরও বেশি অঞ্চল পর্বতাকীর্ণ। তাই এই রাজ্যে রেল পরিষেবার পরিধি সীমাবদ্ধ। মূলত সমতল অঞ্চলেই রেল পরিষেবা চালু আছে। ২০১১ সালের হিসেব অনুসারে, রাজ্যের মোট রেললাইনের পরিমাণ প্রায় ৩৪৫ কিলোমিটার।[৫৪] রেল পরিষেবা সবচেয়ে সস্তা হওয়ায় এটিই সবচেয়ে জনপ্রিয়। কুয়ায়ুন অঞ্চলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রেল স্টেশটি হল কাঠগোদাম। এটি নৈনিতাল থেকে ৩৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। কাঠগোদাম উত্তরপূর্ব রেলের ব্রডগেজ লাইনের শেষ টার্মিনাস। এই স্টেশনের মাধ্যমে নৈনিতাল দিল্লি, দেরাদুন ও হাওড়ার সঙ্গে যুক্ত। অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ স্টেশন হল পন্তনগর, লালকৌন ও হলদওয়ানি।
দেরাদুন রেল স্টেশন উত্তর রেলের একটি প্রধান স্টেশন।[৬৮] হরিদ্বার স্টেশনটি দিল্লি-দেরাদুন ও হাওড়া-দেরাদুন লাইনে অবস্থিত। উত্তর রেলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্টেশন হল হরিদ্বার জংশন রেল স্টেশন। এটি মিটার গেজ ও ব্রডগেজ লাইন কর্তৃক যুক্ত। রুরকি স্টেশনটি ভারতীয় রেলের উত্তর রেল বিভাগের অন্তর্গত এটি মেন পাঞ্জাব-মুঘলসরাই ট্রাঙ্ক রুটে অবস্থিত এবং ভারতের প্রধান শহরগুলির সঙ্গে যুক্ত। অন্যান্য প্রধান স্টেশন হল ঋষীকেশ, কোটদ্বার ও রামনগর এগুলি দৈনিক ট্রেনের মাধ্যমে দিল্লির সঙ্গে যুক্ত।


Roorke

Laksar Jn

Haridwar

Doiwala

Dehradun

Harrawala

Kansrao

Raiwala Jn

Ikkar

Aithal

Landaura

-

Uttarkashi/Athali

Chinyalisaur

Maneri

Gangotri

Palar

Yamunotri

Rishikesh

Devprayag

Rudraprayag

Karnaprayag

Saikot

Sonprayag

Kedarnath

Makkumath

Joshimath

Kathgodam

Haldwani

Lal Kuan Jn

Raisi

Kashipur Jn

Ramnagar

Pirumadara

-

Gularbhoj

Bazpur

Rudrapur City

Pantnagar

Kotdwar

Najibabad Jn

Muazzampur Narayan Jn
রেলপথ স্টেশন (বর্তমানগুলো সবুজ রঙে - নির্মাণাধীনগুলো কমলা রঙে)
পর্যটন
সারাংশ
প্রসঙ্গ

উত্তরাখণ্ড রাজ্যটি হিমালয়ের কোলে অবস্থিত। তাই এখানে অনেক পর্যটনকেন্দ্র গড়ে উঠেছে। অনেক প্রাচীন মন্দির, সংরক্ষিত বনাঞ্চল, জাতীয় উদ্যান, শৈলশহর ও পর্বতশৃঙ্গ এখানে পর্যটকদের আকর্ষণ করে। এই রাজ্যে ৪৪টি জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ সংরক্ষিত সৌধ আছে।[৬৯] এই রাজ্যের ওক গ্রোভ স্কুল বিশ্ব ঐতিহবাহী স্থানের প্রতীক্ষমান তালিকার অন্তর্ভুক্ত।[৭০] হিন্দুধর্মের পবিত্রতম দুই নদী গঙ্গা ও যমুনার উৎস যথাক্রমে গঙ্গোত্রী ও যমুনোত্রী এই রাজ্যে অবস্থিত।


উত্তরাখণ্ড রাজ্যটিকে বলা হয় ‘দেবভূমি’।[২৪] কারণ, এখানে হিন্দুদের কয়েকটি পবিত্রতম মন্দির রয়েছে। সহস্রাধিক বছর ধরে হিন্দু তীর্থযাত্রীরা মোক্ষলাভ ও পাপমোচনের আশায় এই তীর্থগুলি দর্শন করতে আসছেন। গঙ্গোত্রী ও যমুনোত্রী যথাক্রমে ভারতের জাতীয় নদী গঙ্গা ও যমুনা নদীর উৎস। এই তীর্থদুটি গঙ্গা ও যমুনার সঙ্গে যুক্ত। এই দুই তীর্থ এবং বদ্রীনাথ ( বদ্রীনাথ বিষ্ণু মন্দিরের জন্য খ্যাত) ও কেদারনাথ (কেদারনাথ জ্যোতির্লিঙ্গ (শিব) মন্দিরের জন্য খ্যাত) হিন্দুধর্মের ছোটো চারধাম তীর্থচক্রের অঙ্গ। এগুলি রাজ্যের উত্তর অঞ্চলে অবস্থিত। হরিদ্বার (নামের অর্থ, ‘ঈশ্বরের দরজা’) একটি প্রধান হিন্দু তীর্থ। প্রতি বারো বছর অন্তর এখানে কুম্ভমেলা আয়োজিত হয়। সারা ভারত ও বিশ্ব থেকে লক্ষ লক্ষ তীর্থযাত্রী এখানে এই মেলায় অংশ নিতে আসেন। হরিদ্বারের কাছে ঋষীকেশ ভারতের একটি প্রধান যোগ কেন্দ্র। এই মন্দিরে অনেক মন্দির রয়েছে। এগুলির অনেকগুলিই শিব ও দুর্গার মন্দির। অনেক হিন্দু শাস্ত্রে এই সব মন্দিরের উল্লেখ পাওয়া যায়।[৭১] অবশ্য উত্তরাখণ্ড শুধু হিন্দুদেরই তীর্থস্থান নয়। রুরকির কাছে পিরান কালিয়ার শরিফ একটি মুসলিম তীর্থস্থান। হিমালয়ের কোলে হেমকুণ্ড গুরুদ্বারা সাহিব একটি অন্যতম প্রধান শিখ তীর্থস্থান। তিব্বতি বৌদ্ধরা এখানে মিন্ড্রোলিং মঠ ও এটির বৌদ্ধ স্তুপ গড়ে তুলেছে। দেরাদুনের ক্লিমেন্ট টাউনে অবস্থিত এই স্তুপটিকে বিশ্বের উচ্চতম বৌদ্ধস্তুপ বলা হয়।[৭২][৭৩]
ভারতের সবচেয়ে বিখ্যাত শৈলশহরগুলির কয়েকটি উত্তরাখণ্ডে অবস্থিত। এরাজ্যের মুসৌরি, নৈনিতাল, ধনৌলটি, ল্যান্সডাউন, পৌরি, সাত্তাল, আলমোড়া, কৌসানি, ভীমতাল ও রানিখেত হল ভারতের কয়েকটি বিখ্যাত শৈলশহর।[৭৪] এই রাজ্যে ১২টি জাতীয় উদ্যান ও বণ্যপ্রাণী অভয়ারণ্য আছে; যা রাজ্যের মোট আয়তনের ১৩.৮%। এগুলি ৮০০ থেকে ৫৪০০ মিটারের মধ্যে বিভিন্ন উচ্চতায় অবস্থিত। ভারতীয় উপমহাদেশের প্রাচীনতম জাতীয় উদ্যান জিম করবেট জাতীয় উদ্যান একটি প্রধান পর্যটন কেন্দ্র।[৫৯] এই জাতীয় উদ্যানে বিভিন্ন প্রজাতির বন্যপ্রাণী এবং ভারত সরকার পরিচালিত একটি ব্যাঘ্র সংরক্ষণ কেন্দ্র আছে। রাজাজি জাতীয় উদ্যান হাতির জন্য বিখ্যাত। এছাড়া চামোলি জেলায় ভ্যালি অফ ফ্লাওয়ার্স জাতীয় উদ্যান ও নন্দা দেবী জাতীয় উদ্যান একসঙ্গে ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান। বদ্রীনাথের কাছে ১২২ মিটার (৪০০ ফুট) উচ্চতায় বসুধারা জলপ্রপাত এটির তুষারাবৃত পর্বতমালার প্রেক্ষাপটে একটি অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র।[৭৫]
উত্তরাখণ্ড রাজ্য ভারতের পর্বতারোহন, হাইকিং ও রক ক্লাইম্বিং-এর একটি অন্যতম গন্তব্য । ঋষীকেশে হোয়াইটওয়াটার র্যা ফটিং-এর মাধ্যমে এখানে অ্যাডভেঞ্চার পর্যটনের ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়েছে। হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলে অবস্থিত বলে এখানে ট্রেকিং, ক্লাইম্বিং, স্কিং, ক্যাম্পিং, রক ক্লাইম্বিং ও প্যারাগিল্ডিং-এর সুবিধা রয়েছে।[৭৬] রূপকুণ্ড একটি জনপ্রিয় ট্রেকিং কেন্দ্র। এখানে হ্রদ থেকে রহস্যময় কঙ্কালপ্রাপ্তিটি ন্যাশানাল জিওগ্রাফিক চ্যানেলে একটি তথ্যচিত্রে দেখানো হয়েছে।[৭৭] রূপকুণ্ডের ট্রেকিং পথটি বাগয়ালের সুন্দর তৃণভূমির মধ্যে দিয়ে গিয়েছে।
শিক্ষা
২০১০ সালের ৩০ সেপ্টেম্বরের হিসেব অনুসারে, উত্তরাখণ্ডে ১৫,৩৩১টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১,০৪০,১৩৯ জন ছাত্রছাত্রী এবং ২২,১১৮ জন শিক্ষকশিক্ষিকা রয়েছেন।[৭৮][৭৯][৮০] ২০১১ সালের জনগণনা অনুসারে, রাজ্যের সাক্ষরতার হার ৭৯.৩৩%। পুরুষ সাক্ষরতার হার ৮৮.৩৩% এবং মহিলা সাক্ষরতার হার ৭০.৭০%।[৩২] রাজ্যের বিদ্যালয়গুলির শিক্ষাদানের মাধ্যম ইংরেজি বা হিন্দি ভাষা। রাজ্যে প্রধানত সরকারি, সরকার-কর্তৃক সাহায্য না পাওয়া বেসরকারি এবং সাধারণ বেসরকারি বিদ্যালয় রয়েছে। বিদ্যালয়গুলি সেন্ট্রাল বোর্ড অফ সেকেন্ডারি এডুকেশন (সিবিএসই), কাউন্সিল ফর ইন্ডিয়ান স্কুল সার্টিফিকেট এক্সামিনেশনস (সিআইএসসিই) ও উত্তরপ্রদেশ সরকারের শিক্ষা মন্ত্রক কর্তৃক নির্ধারিত পাঠক্রম অনুসারে চলে। এই রাজ্যে অনেকগুলি বিশ্ববিদ্যালয় ও ডিগ্রি কলেজ রয়েছে।
রাজ্যের শ্রীনগর-এ একটি ২০১১ সালে প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্রীয় প্রযুক্তিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
খেলাধুলা
সারাংশ
প্রসঙ্গ

অ্যাডভেঞ্চার খেলাধুলা, জলক্রীড়া ও পর্বতারোহণ উত্তরাখণ্ডে খুবই জনপ্রিয়। পর্যটক ও অ্যাডভেঞ্চার-অনুসন্ধানীরা উত্তরাখণ্ডে হোয়াইটওয়াটার রিভার র্যা্ফটিং-এর জন্য আসেন। উত্তরাখণ্ডে অনেক সুউচ্চ পর্বতশৃঙ্গ থাকায় এটি পর্বতারোহীদেরও একটি প্রিয় গন্তব্য।
স্কিং, আইস স্কেটিং, সেইলিং, প্যারাসেইলিং, কায়াকিং, ক্যানোয়িং, র্যা ফটিং, ইয়াচিং, ট্রেকিং, রক ক্লাইম্বিং, হাইকিং, প্যারাগিল্ডিং, স্কাই ডাইভিং ও বাঙ্গি জাম্পিংও উত্তরাখণ্ডের পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয় খেলা।[৮১] উত্তরাখণ্ডের খরস্রোতা পার্বত্য নদনদীগুলি অ্যাডভেঞ্চার-অনুসন্ধানীদের কাছে সেইলিং ও প্যারাসেইলিং উপভোগের বিশেষ সুবিধে করে দেয়। উত্তরাখণ্ডের রানিখেত ইত্যাদি অঞ্চলে গলফ একটি নতুন পর্যটন আকর্ষণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই এখানে প্রচুর গলফার আসেন।
উত্তরাখণ্ড ক্রিকেট অ্যাসোশিয়েশন হল উত্তরাখণ্ড রাজ্যের ক্রিকেট ও উত্তরাখণ্ড ক্রিকেট দলের প্রধান নিয়ন্ত্রক পর্ষদ। উত্তরাখণ্ডে অ্যাসোশিয়েশন ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা হল উত্তরাখণ্ড রাজ্য ফুটবল অ্যাসোশিয়েশন। উত্তরাখণ্ড ফুটবল দল সন্তোষ ট্রফি ও অন্যান্য ক্লাব লিগে অংশগ্রহণ করে।
স্টেডিয়াম
উত্তরাখণ্ডের স্টেডিয়ামগুলির তালিকা নিচে দেওয়া হল:[৮২]
- অভিমন্যু ক্রিকেট অ্যাকাডেমি, দেরাদুন
- আম্বেডকর স্টেডিয়াম, দেরাদুন
- নৈনিতাল স্টেডিয়াম, নৈনিতাল
- সোমনাথ স্টেডিয়াম, রানিখেত
- জীবনচন্দ্র উপাধ্যায় স্টেডিয়াম, পিথোরাগড়
- মিনি স্টেডিয়াম, দেরাদুন
- স্পোর্টস স্টেডিয়াম, উধম সিং নগর, রুদ্রপুর
- স্টিভেনসন স্টেডাম, পন্তনগর
আরও দেখুন

উইকিসংবাদে উত্তরাখণ্ড সম্পর্কিত সংবাদ রয়েছে।
- নয়না দেবী হিমালয়ান পক্ষী সংরক্ষণ রিজার্ভ
- উত্তরাখণ্ডের ব্যক্তিত্বদের তালিকা
|
|
তথ্যসূত্র
আরও পড়ুন
বহিঃসংযোগ
Wikiwand - on
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.