Loading AI tools
এক বিশেষ প্রকারের খাবার যা সুগন্ধি চাল, ঘি, গরম মশলা এবং মাংস মিশিয়ে রান্না করা হয় উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
বিরিয়ানি দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো, বিশেষ করে ভারত, বাংলাদেশ, আফগানিস্তান ও পাকিস্তান প্রভৃতি দেশে প্রচলিত এক বিশেষ প্রকারের খাবার যা সুগন্ধি চাল, ঘি, গরম মশলা এবং মাংস মিশিয়ে রান্না করা হয়। এটি দক্ষিণ এশিয়ার মুসলমানদের মাধ্যমে উৎপত্তি লাভ করে।[1][2][3] এটি সাধারণত বিশেষ অনুষ্ঠানে অতিথি আপ্যায়নে পরিবেশিত হয়।
বিরিয়ানি (بریانی) একটি উর্দু শব্দ, যা ফারসি ভাষা থেকে এসেছে।[4][5] ফারসি ভাষায় বিরিঞ্জ (ফার্সি: برنج) অর্থ চাল বা ভাত।[6][7] অন্যমতে, ফারসি শব্দ বিরিয়ান (ফার্সি: بریان) থেকে এসেছে যারঅর্থ রোস্ট বা ভেজে নেওয়া।[8][9] অর্থাৎ মূলত রোস্ট করা মাংস ও ভাতের সহযোগে তৈরি বিশেষ সুুস্বাদু খাবারই বিরিয়ানি। এটি বিরানি, বেরিয়ানি, বিরিয়ান্নি ইত্যাদি নামেও পরিচিত। বিরিয়ানি রান্নার আগে সুগন্ধি চাল ঘি দিয়ে ভেজে নেওয়া হয়। তাই এই নামকরণ। বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলে যে “বিরন করা” শব্দটি ব্যবহৃত হয় সেটা এই ফারসি শব্দেরই পরিবর্তিত রূপ।
বিরিয়ানির সঠিক উৎপত্তি সম্পর্কে অনশ্চিয়তা রয়েছে। তবে উত্তর ভারতে, দিল্লির (মুঘলাই রন্ধনপ্রণালী) মুসলিম বসতিপূর্ণ স্থানগুলিতে, রামপুর, লখনউ (আওধী রান্না) এবং অন্যান্য ছোট রাজ্যে বিরিয়ানি বিভিন্ন বৈচিত্র্যের উৎপত্তি লক্ষ করা যায়। [4] আবার অনের মতে, দক্ষিণ ভারতের হায়দ্রাবাদ এ বিরিয়ানির উৎপত্তি। সেইসাথে তামিলনাড়ু (আম্বুর, তানজাভুর, চেটিনাড, সালেম, ডিন্ডিগাল) ), কেরালা (মালাবার), তেলেঙ্গানা এবং কর্ণাটক (ভাটকল) যেখানে মুসলিম সম্প্রদায় উপস্থিত ছিল সেখানেও এই রন্ধনপদের উৎপত্তি বলে মনে করা হয় । অনেকের মতে এই খাবারের উৎপত্তি মুঘল আমলে দিল্লীতে।
পোলাও ও বিরিয়ানি দুটো খাবারই সুগন্ধি চাল ও মাংস দিয়ে রান্না করা হয়। তারপরও এদের মাঝে বেশ কিছুটা পার্থক্য আছে।[10] পোলাওতে মাংস দেওয়া বা না দেওয়া ঐচ্ছিক। তবে পোলাও এর উৎপত্তি মধ্য এশিয়ায়। সেখানে পোলাও মাংসের সাথেই রান্না করা হয়। এমনকি বাংলাদেশ, ভারত এবং পাকিস্তানে অনেকটা এভাবেই পোলাও রান্না করা হয়। মুঘলরা মধ্য এশিয়া থেকে আসার সময়ে পোলাও এর সংস্কৃতি মাতৃভূমি থেকে সঙ্গে করে নিয়ে আসে। পোলাও বিরিয়ানির মূল পার্থক্য যতটা না রান্নার প্রণালীতে তার চেয়েও অনেক বেশি মশলার ব্যবহারে। বিরিয়ানির মশলায় উপাদানের বৈচিত্র্য অনেক বেশি, মশলাও ব্যবহার করা হয় তুলনামূলক বেশি পরিমাণে। ফলে বিরিয়ানির মশলার ঝাঁঝ পোলাও এর চেয়ে অনেক বেশি কড়া হয়।[11]
মধ্য এশিয়ার উজবেকিস্তান বা তুর্কমেনিস্তান এ হালের পোলাও এবং বিরিয়ানির আদিরূপের সাক্ষাৎ পাওয়া যায়। তবে ভারতীয় উপমহাদেশে এত বেশি মশলার ব্যবহার হয় তাতে সমরখন্দ বা বুখারার সেই আদি পোলাও বেশ পানসে ও জৌলুসহীন মনে হয়। পোলাও এবং বিরিয়ানির আরেকটি বড় পার্থক্য আছে তাদের মৌলিক রন্ধন প্রণালীতে। পোলাও রান্নার আগে চাল ধুয়ে কিছুক্ষণ রেখে দেয়া হয় ও পরে পানিতে ফুটিয়ে সেদ্ধ করা হয়। কিন্তু বিরিয়ানিতে চালের সুঘ্রাণ অবিকৃত রাখতে চাল বেশি ধোয়া কিংবা ফোটানো হয়না। বরঞ্চ আগে থেকে ফুটিয়ে গরম পানি যোগ করা হয়।
তেহারীকে বিরিয়ানির একটি বিশেষ পরিমার্জিত ধরন বলা চলে। তেহারীতে গোশতের পরিমাণ থাকে কম। আলু ও হাড় থাকে বেশি। মূলত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় চড়া দামের কারণে খরচ বাঁচাতে এই বৈচিত্র্য আনা হয়েছিল। তবে প্রেক্ষাপট বদলে গেলেও এখনও আবেদন বদলে যায়নি তেহারীর।
প্রথাগতভাবে বিরিয়ানিকে দুই শ্রেণীতে ভাগ করা যায়।
অঞ্চল অনুসারে বিরিয়ানিতে ভিন্ন ভিন্ন উপাদান ব্যবহার করা হয়। তবে মাংস (গরু, মুরগী, ছাগল, ভেড়া, চিংড়ি বা মাছ) এবং চাল বিরিয়ানির প্রধান উপাদান। বিরিয়ানির চাল সবসময়েই লম্বা বা চিকন প্রকারের যেমনঃ তুলশীমালা, বাসমতী বা কালিজিরা চাল বা চিনিগুড়া ব্যবহার করা হয়। বিরিয়ানির চাল প্রথমে ভালো করে ধুয়ে নেওয়া হয়। তারপর তা বেশ কয়েকঘণ্টা ভিজিয়ে রাখা হয়। তারপর গরম পানি তে শহী জিরা, গরমমশলা মেশানো হয়, এরপর এতে ভেজানো চাল দিয়ে সিদ্ধ / আধা সিদ্ধ করা হয়। ম্যারিনেট করা মাংসের বড় টুকরো তা সে মুরগি হোক বা খাসি বা গরু, চালে মেশানো হয়। হাঁড়িতে চাল ও মাংস স্তরে স্তরে সাজিয়ে রাখা হয়, দুটি স্তরের মধ্যে ঘি দেওয়া হয়। এছাড়াও নানারকম মশলা মেশানো হয়। শেষে হাঁড়ির মুখ আটা দিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়। বিরিয়ানিতে আলু ও আলুবোখরা, দই ব্যবহার করা হয়।
ভারতীয় উপমহাদেশের দেশগুলোতে অন্যান্য খাদ্যের পদগুলোর মত বিরিয়ানিতেও শাকসবজির ব্যবহার দেখা যায়। বিরিয়ানিতে সাধারণত জায়ফল , লবঙ্গ , এলাচ, দারুচিনি, তেজপাতা, ধনিয়া, পুদিনা পাতা ইত্যাদি মসলা ব্যবহার করা হয়।[12]
বিরিয়ানির মশালার সাথে প্রধান উপাদানটি মুরগী , গরুর মাংস এবং ছাগলের মাংস; বিশেষ জাতগুলি পরিবর্তে সামুদ্রিক খাবার ব্যবহার করা হয়। বিরিয়ানি সাধারণত চাটনি, সিদ্ধ ডিম এবং সালাদ দিয়ে পরিবেশন করা হয়।
কাচ্চি বিরিয়ানি এর উৎপত্তি মধ্য এশিয়ায় হলেও এটি দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো, বিশেষ করে ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তান প্রভৃতি দেশে একটি জনপ্রিয় খাবার। এটি প্রচলিত এক বিশেষ প্রকারের খাবার যা সুগন্ধি চাল, ঘি/তেল, গরম মশলা এবং কাঁচা মাংস মিশিয়ে রান্না করা হয়। এটি ভারতীয় উপমহাদেশের মুসলমানদের মাধ্যমে প্রসারতা লাভ করে।
কাচ্চি বিরিয়ানির মাংস প্রথমে আলাদা ভাবে রান্না করে তার উপরে সমান ভাবে সেদ্ধ চাল বিছিয়ে দেয়া হয়।এরপরে পাত্রটির মুখে ঢাকনা দিয়ে চারপাশ আটা দিয়ে বন্ধ করে তা চুলায় বসিয়ে দেয়া হয় ।এভাবে তিন থেকে চার ঘণ্টার মধ্যে তৈরি হয়ে যাবে কাচ্চি বিরিয়ানি।
তেহারি এবং তেহরি এবং বিরিয়ানির নিরামিষ সংস্করণের বিভিন্ন নাম। এটি মুসলিম নবাবদের হিন্দু পুস্তকাকারীদের জন্য তৈরি করা হয়েছিল। সাধারণত চালের সাথে আলু যোগ করেইতেহারি প্রস্তুত করা। ঐতিহ্যবাহী বিরিয়ানির ক্ষেত্রে মাংসের সাথে চাল যোগ করা হয়। কাশ্মীরে তেহারি স্ট্রিট ফুড হিসাবে বিক্রি হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তেহারি আরও জনপ্রিয় হয়ে ওঠে, যখন মাংসের দাম যথেষ্ট পরিমাণে বৃদ্ধি পায় এবং বিরিয়ানিতে আলু জনপ্রিয় বিকল্পে পরিণত হয়েছিল।
গরুর মাংসের বিরিয়ানি, নাম অনুসারে, মাংস হিসাবে গরুর মাংস ব্যবহার করে। হায়দরাবাদে এটি কল্যাণী বিরিয়ানি নামে বিখ্যাত, যেখানে মহিষ বা গরুর মাংস ব্যবহৃত হয়। বিড়রের কল্যাণী নবাবরা আঠারো শতকের একসময় হায়দ্রাবাদে আসার পরে এই খাবারটি শুরু হয়েছিল। কল্যাণী বিরিয়ানি ছোট ছোট কিউব মাংস, নিয়মিত মশলা, পেঁয়াজ এবং অনেক টমেটো দিয়ে তৈরি হয়। এটির একটি আলাদা টমেটো, জিরা এবং ধনিয়ার গন্ধ রয়েছে।
আম্বুর/ভানিয়াম্বাদি বিরিয়ানি
ভারতে তামিলনাডুর তিরুপথুর জেলার পার্শ্ববতী শহর আম্বুর ও ভানিয়াম্বাদিতে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিমদের মধ্যে আম্বুর/ভানিয়াম্বাদি বিরিয়ানি প্রচলিত। আরকোটের নবাবদের দ্বারা এই বিরিয়ানির প্রচলন শুরু হয়। এই বিরিয়ানি সাধারণত বাসমতী অথবা জিরা সাম্বা ভাত নামে পরিচিত।
ভাতকলি/নববতী বিরিয়ানি নবনাথ খাবারের একটি অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ এবং ভাটকার একটি বিশেষত্ব। এই ভাতকলি/নববতী বিরিয়ানি ফরাসি ব্যবসায়ীদের দ্বারা প্রচলিত হয়।এই ফরাসি ব্যবসায়ীরা ভারতীয় কাবাব ও রুটির ক্ষেত্রেও ভিন্নতা আনে। ভাতকলি বিরিয়ানির মাংসটি পেঁয়াজ এবং সবুজ মরিচ ভিত্তিক মশলায় রান্না করা হয় এবং পরে সুগন্ধি চালের সাথে রান্না করা হয়। এটির একটি স্বতন্ত্র মশলাদার স্বাদ রয়েছে।এই বিরিয়ানির ভাত কমলার হালকা রেখাচিত্রে প্রচুর পরিমাণে সাদা হয় । ভাতকলি বিরিয়ানি থ্যালাসেরির মতই শুধু বিরিয়ানির উপর পেঁয়াজ ছড়িয়ে দেয়ার দিক থেকে আলাদা ।
বিরিয়ানির দিল্লি সংস্করণটি একটি অনন্য স্থানীয় স্বাদ তৈরি করেছিল কারণ মুঘল রাজারা তাদের রাজনৈতিক রাজধানী উত্তর ভারতের শহর দিল্লিতে স্থানান্তরিত করেছিলেন। দিল্লিতে বিরিয়ানি বিক্রির বেশিরভাগ দোকানগুলি মসজিদের যেমন জামে মসজিদ (ভ্রমণকারীদের জন্য) বা প্রথাগত কেনাকাটার জায়গা (যেমন চাঁদনি চক) এর কাছাকাছি রয়েছে ।
মোঘল আমলের ঐতিহ্যবাহী বিরিয়ানি ঢাকাইয়া হাজী বিরিয়ানি । ঢাকার বাসিন্দা হাজী মোহাম্মদ হোসেন চালু করেছিলেন হাজীর বিরিয়ানী ।এই বিরিয়ানির বিশেষত্ব হলো, গরুর গোশতের পরিবর্তে শুধু খাসির গোশত এবং ঘি/বাটার অয়েলের পরিবর্তে সরিষার তেল ব্যবহার করা । এছাড়া সম্পূর্ণ দেশীয় সব মশলা ব্যবহার করা হয় এই বিরিয়ানিতে।[13]
হায়দ্রাবাদি বিরিয়ানি হলো ভারতের অন্যতম বিখ্যাত বিরিয়ানী। কেউ কেউ বলেন হায়দরাবাদি বিরিয়ানি হায়দরাবাদের সমার্থক শব্দ।এটি বাসমতী চাল, মশলা এবং ছাগলের মাংস দিয়ে তৈরি করা হয়। জনপ্রিয় বিভিন্নতা ছাগলের মাংসের পরিবর্তে মুরগি ব্যবহার করে। দুধ ব্যবহার করে তৈরি করা এই ধরনের বিরিয়ানি তাই একটি অন্য জায়গা করে নিয়েছে খাদ্য রসিকদের মনে। মাংসের টুকরোগুলি প্রথমে দুধে রান্না করা হয়, তার পর যাবতীয় মশলা মিশিয়ে একটি পাত্রে দম দিয়ে এই বিরিয়ানি বানানো হয়। [14]
কলকাতা বিরিয়ানি লখনউ রীতি থেকে বিকশিত হয়েছিল, যখন আউধের শেষ নবাব ওয়াজেদ আলি শাহ ১৮৫৬ সালে মতিয়াব্রুজের শহরতলিতে কলকাতায় নির্বাসিত হয়েছিলেন। শাহ তাঁর সাথে তাঁর ব্যক্তিগত শেফকে নিয়ে এসেছিলেন। কলকাতার দরিদ্র পরিবারগুলি, যা প্রচুর পরিমাণে মাংস দিতে পারে না, বিরিয়ানিতে আলু এবং সিদ্ধ ডিম যোগ করত, যা কলকাতা বিরিয়ানির একটি বিশেষত্ব হয়ে উঠেছিল। কলকাতা বিরিয়ানিতে প্রাথমিকভাবে মাংস এবং আলু এবং মাঝে মধ্যে সিদ্ধ ডিম ব্যবহার করা হত। কলকাতা বিরিয়ানি মশালায় অনেক হালকা। চাল থেকে আলাদাভাবে রান্না করা মাংসের জন্য দাহী-ভিত্তিক মেরিনেডে মূলত লঙ্কা এবং এলাচ সহ গাঁথুনি মূলত জায়ফল, দারুচিনি, গদা ব্যবহার করা হয়। মশলার এই সংমিশ্রণটি বিরিয়ানির অন্যান্য শৈলীর তুলনায় এটি অন্যরকম স্বাদ দেয়।
বহিরাগত এবং সুগন্ধযুক্ত সিন্ধি বিরিয়ানি মশলাদার স্বাদ, সুগন্ধি ভাত এবং উপাদেয় মাংসের জন্য পাকিস্তানে বেশ পরিচিত। সিন্ধি বিরিয়ানি পাকিস্তানি ও সিন্ধি খাবারের মেনুগুলির মধ্যে সবচেয়ে প্রিয় খাবার। সিন্ধি বিরিয়ানি মাংস ,বাসমতি চাল, শাকসবজি এবং বিভিন্ন মশলার মিশ্রণে তৈরি করা হয়। সিন্ধি বিরিয়ানি প্রায়শই পাকিস্তান আন্তর্জাতিক বিমান সংস্থা (পিআইএ) দ্বারা বেশিরভাগ পাকিস্তানের আন্তর্জাতিক ফ্লাইটে পরিবেশন করা.
১৯ শতকের প্রথম দিকে শ্রীলঙ্কার উত্তর অংশে এবং কলম্বোতে ,দক্ষিণ ভারতের ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে বিরিয়ানির প্রচলন শুরু হয়। শ্রীলঙ্কায় এই বিরিয়ানি বুরইয়ানি নামে পরিচিত । শ্রীলঙ্কায় বিরিয়ানি ভারতীয় বিরিয়ানির চেয়ে বেশি মসলাদার হয়।
এছাড়াও ভারতীয় উপমহাদেশে বিভিন্ন আঞ্চলে আরো কিছু বিরিয়ানি প্রচলিত আছে। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল সব্জী বিরিয়ানী, চিংড়ী বিরিয়ানী, মেমোনী বিরিয়ানি, লক্ষনৌ বিরিয়ানি ইত্যাদি।
মায়ানমারে (বার্মা) বিরিয়ানি বার্মি ভাষায় ডানপাউক বা ডানবাউক (ဒံ ပေါက်) নামে পরিচিত। ডানপাউক পার্সিয়ান শব্দ দম পুক্ত থেকে উদ্ভূত, যা ধীরে ধীরে চুলায় রান্নার কৌশল বোঝায়। এই ডানপাউক মায়ানমারের বিভিন্ন উৎসবের প্রধান পদ। ডানবাউক রেস্তোঁরাগুলো এতিহ্যগতভাবে মুসলমানদের মালিকাধীন।তবে সাম্প্রতিক দশকে বৌদ্ধ উদ্যোক্তারা বাজারে প্রবেশ করেছে।
ডানবাউকের বৈশিষ্ট্যযুক্ত উপাদানগুলির মধ্যে রয়েছে: কাজু বাদাম, দই, কিসমিস এবং মটর, মুরগী, লবঙ্গ, দারুচিনি, জাফরান এবং তেজপাতা ও বাসমতী চাল। ডানবাউকে, ড্যানবাউক মশলার মিশ্রণের সাথে মুরগির মাংস বিশেষভাবে রান্না করা হয়। ডানবাউক সাধারণত কাটা পেয়াজ, সুপ, শসা দিয়ে পরিবেশন করা হয়। সাম্প্রতিক দশকগুলিতে, ডানবাউক রেস্তোঁরাগুলিতে "এমব্রোসিয়া" বিরিয়ানি (နတ် သု ဓာ ထမင်း) সহ বিভিন্ন প্রকারের বিরিয়ানি প্রচলিত রয়েছে, এতে শুকনো ফল এবং মাখনের চাল ব্যবহার করা হয়।
ইরাকে বিরিয়ানি (برياني: "বিরিয়ানি") সাধারণত জাফরান ভিত্তিক । এটি ইরাক জুড়ে বিশেষত ইরাকি কুর্দিস্তানে জনপ্রিয়। বেশিরভাগ সময় ভাজা পেঁয়াজ, ভাজা আলুর কিউব, বাদাম এবং কিসমিসের সাথে চাল ও মাংস দিয়ে এই বিরিয়ানি তৈরি করা হয়। কখনও কখনও, একটি টক অথবা মশলাদার টমেটো সস পাশে পরিবেশন করা হয়।
ইরানে সাফাভিড রাজবংশের সময় (১৫০১-১৭৩৬), বেরিয়ান নামে একটি পদ (:ان پلو) তৈরি করা হত ।এইজন্য মেষশাবক বা মুরগির মাংস দই, গুল্ম, মশলা, শুকনো ফল যেমন কিসমিস, ছাঁটাই বা ডালিমের বীজের সাথে রাত্রে মেরিনেট করে রাখা হত। এবং পরে ট্যানুর ওভেনে রান্না করা হত।
আফগানিস্তানে বিরিয়ান একটি জনপ্রিয় পদ। হয়। এই বিরিয়ান গোশত এবং চাল এক সাথে রান্না করে প্রস্তুত করা হয় তবে বিরিয়ানীতে ব্যবহৃত অতিরিক্ত অন্যান্য মশালা ছাড়াই এই ধরনের বিরিয়ানি প্রস্তুত করা হয়। আফগানি বিরিয়ানি প্রচুর শুকনো ফল যেমন কিসমিস ব্যবহার করা হয় এবং কম পরিমাণে মাংস ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
নাসি কেবুলি একটি ইন্দোনেশিয়ান মশলাদার বাষ্পযুক্ত চালের পদ, যেটি ছাগলের মাংসের ঝোল, দুধ এবং ঘি দিয়ে রান্না করা হয়[15]। নাসি কেবুলি পোলাউ থেকে আগত যা একটি আফগানি পদ। এটি ভারতীয় উপমহাদেশে পরিবেশন করা বিরিয়ানির অনুরূপ।
মালয়েশিয়া এবং সিঙ্গাপুরে নাসি ব্রিয়ানি খাবারগুলি খুব জনপ্রিয়। মালয়েশিয়ার ভারতীয় খাবারের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসাবে রেস্তোরাঁগুলিতে পরিবেশন করা হয় ।
মরিশাসে বিরিয়ানি বিশেষত হিন্দু ও মুসলিম বিবাহের ক্ষেত্রে খুব জনপ্রিয়। এটি স্ট্রিট ফুড হিসাবেও বেশ পরিচিত ।
কেপ মালয় সংস্কৃতিতে, বিরিয়ানির একটি প্রকরণ মাংসের সাথে ডিশের মূল উপাদান হিসাবে সাধারণত মসুর ডালকে অন্তর্ভুক্ত করে (সাধারণত গরুর মাংস, মুরগী, সামুদ্রিক খাবার বা শাকসবজি)।এই পদটিতে সাধারণত মাংস ও মূল উপকরণ আলাদা আলাদা ভাবে রান্না করা হয়। কখনও কখনও এটি ডাম-রান্না পদ্ধতি ব্যবহার করে তৈরি করা হয়.
থাইল্যান্ডে বিরিয়ানি সাধারণত খাও মুখ (থাই: ข้าวหมก) নামে পরিচিত। এই বিরিয়ানিতে সাধারণত মুরগি, গো-মাংস বা মাছ ব্যবহার করা হয়।থাইল্যান্ডে ই বিরিয়ানি সাধারণত টক সস দিয়ে পরিবেশন করা হয়।
বিরিয়ানি বিভিন্ন ভাবে পরিবেশন করা হয়। পরিবেশনা নির্ভর বিরিয়ানির প্রকারের উপর। প্রকারভেদে বিরিয়ানির সাথে রায়তা (টকদই + গোলমরিচের সাহায্যে বানানো উপদেয় খাবার), চাটনি (আলু বোখারার চাটনি / জলপাই চাটনি), সালাদ, সিদ্ধ ডিম, কাবাব প্রভৃতি দিয়ে পরিবেশন করা হয়।
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.