Loading AI tools
ভারতীয় দেওবন্দি ইসলামি পণ্ডিত উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
শাহ আবরারুল হক হক্কী হারদুয়ী (১৯২০ — ২০০৫) ছিলেন একজন ভারতীয় ইসলামি পণ্ডিত, হানাফি সুন্নি আলেম এবং ধর্ম সংস্কারক। তিনি আশরাফ আলী থানভীর সর্বশেষ খলিফা ছিলেন। তাকে মুহিউস সুন্নাহ বা সুন্নত জিন্দাকারী নামেও ডাকা হত। [1][2][3]
মুহিউস সুন্নাহ শাহ আবরারুল হক হক্কী হারদুয়ী | |
---|---|
ব্যক্তিগত তথ্য | |
জন্ম | ২০ ডিসেম্বর ১৯২০ হারদুয়ী, উত্তরপ্রদেশ, ভারত |
মৃত্যু | ১৭ মে ২০০৫ |
সমাধিস্থল | আ’ম কবরস্থান, হারদুয়ী |
ধর্ম | ইসলাম |
জাতীয়তা | ভারতীয় |
পিতামাতা |
|
যুগ | বিংশ শতাব্দী |
আখ্যা | সুন্নি |
ব্যবহারশাস্ত্র | হানাফি |
আন্দোলন | দেওবন্দি |
প্রধান আগ্রহ | ইসলামি ইতিহাস, সুন্নাহ, তাফসীর |
যেখানের শিক্ষার্থী | মাজাহির উলুম, সাহারানপুর |
ঊর্ধ্বতন পদ | |
যার দ্বারা প্রভাবিত | |
যাদের প্রভাবিত করেন
|
আবরারুল হক ২০ ডিসেম্বর ১৯২০ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের হারদুয়ী শহরের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। তিনি এশিয়া মহাদেশের হাদীস শাস্ত্রবিদ আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভীর বংশধর। তার পিতা মাহমুদুল হক, যিনি আশরাফ আলী থানভীর শিষ্য ছিলেন। আলাউদ্দিন খিলজির রাজত্বকালে তার পরিবার তুরস্ক থেকে ভারতে আসেন। [4]
হারদুয়ী শহরে স্বীয় পিতা কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত ইসলামিয়া মাদ্রাসায় তিনি প্রাধমিক শিক্ষা শুরু করেন এবং ৮ বছর বয়সে পূর্ণ কুরআন শরীফ হিফয সম্পন্ন করেন। ১৩৪৯ হিজরীতে উচ্চ শিক্ষার্থে তিনি ভারতের প্রসিদ্ধ শিক্ষাকেন্দ্র মাজাহির উলুম,সাহারানপুরে ভর্তি হন এবং ১৩৫৬ হিজরী সনে ১ম স্থান অধিকার করে দাওরায়ে হাদীস তথা সর্বোচ্চ ডিগ্রী লাভ করেন।[5] এখানে মুহাম্মদ জাকারিয়া কান্ধলভি , মনজুর আহমদ খান , আবদুল রেহমান কমলপুরী , আসাদুল্লাহ রামপুরীর মত বিখ্যাত ব্যক্তিগণ তার শিক্ষক ছিলেন এবং মুহাম্মদ ইউসুফ কান্ধলভি ও ইনামুল হাসান কান্ধলভী ছিলেন তার সহপাঠী। তিনি একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৩৫৮ হিজরি সনে ১ম স্থান অধিকার করে “তাকমীলে ফুনূন” তথা উচ্চতর শাস্ত্রীয় গবেষণাও সম্পন্ন করেন।
শিক্ষাজীবন সমাপ্ত করার পর শিক্ষকবৃন্দের ইচ্ছায় মাজাহির উলুম, সাহারানপুরে তিনি শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। এখানে কিছু দিন শিক্ষকতা করার পর স্বীয় মুর্শিদ হাকীমুল উম্মত আশরাফ আলী থানভীর নির্দেশে তিনি মাদ্রাসা জামিউল উলুমে চলে যান। সেখানকার কর্তৃপক্ষ তার যোগ্যতা দেখে তাঁকে “শাইখুল হাদীস” হিসেবে পদোন্নতি দেন। এরপর আশরাফ আলী থানভীর দ্বিতীয় বারের মাশওয়ারায় তিনি ফতেহপুর ইসলামিয়া মাদ্রাসায় চলে যান এবং সেখানে শিক্ষকতা করতে থাকেন।
এরপর ১৩৬২ হিজরীতে থানভীর আদেশে নিজ এলাকায় চলে যান এবং তার দৃষ্টিভঙ্গির ভিত্তিতে মাদ্রাসায়ে আশরাফুল মাদারিস প্রতিষ্ঠা করেন।[6]
ছাত্র জীবন থেকেই তিনি হাকীমুল উম্মত আশরাফ আলী থানভীর সাথে ইসলাহী সম্পর্ক গড়ে তুলেন। মাজাহির উলুম, সাহারানপুরে অধ্যায়নকালে তিনি থানভীর হাতে আত্মশুদ্ধির বাইআত গ্রহণ করেন এবং প্রতি বৃহস্পতিবার রাতে তার দরবারে উপস্থিত হয়ে আধ্যাত্মিক সাধনায় আত্মনিয়োগ করতে থাকেন। অধ্যায়ন থেকে ফারেগ হওয়ার পর ফতেহপুর মাদ্রাসায় অধ্যাপনাকালে ২১ বছর বয়সে থানভী থেকে খেলাফত লাভ করেন। চিন্তা-চেতনা, ধ্যান-ধারণায় থানভীর মত হওয়ায় সমাজের লোকেরা তাঁকে দ্বিতীয় থানভী বলে আখ্যায়িত করতেন এবং তার কাছে মুরিদ হতেন। বাংলাদেশে তার উত্তরসুরি হিসাবে রয়েছেন ২৮ জন খলীফা।
আশরাফ আলী থানভীর প্রতিষ্ঠিত মজলিসে দাওয়াতুল হকের কর্মসূচিগুলি বাস্তবায়নে তিনি কঠোর পরিশ্রম করেছেন এবং দেশ-বিদেশে কয়েক শত র্ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন।
বিশুদ্ধভাবে কুরআন তিলাওয়াত শিখানোর জন্য তিনি ভারতে প্রায় ৩০০ নুরানী মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন, যেগুলো তার নির্দেশে পরিচালিত হত এবং সেগুলোর শিক্ষক ও পরীক্ষক হারদুয়ী থেকে পাঠান হত।
পৃথিবীর যে কোন দেশ থেকে যত বড় আলেমই আধ্যাত্মিক সাধনার জন্য তার নিকট হাজির হতেন, তিনি অবশ্যই নূরানী কায়েদা নিয়ে মকতবে বসার পরামর্শ দিতেন। এটাই তার সুলূকের পথ পাড়ি দেয়ার মূল বিষয় বস্তু ছিল।
দ্বীনের বহুমুখী কার্যক্রম বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ১৯৮১ সালে হাফেজ্জী হুজুরের দাওয়াতে সর্বপ্রথম তিনি বাংলাদেশ সফরে আসেন এবং বাংলাদেশের অধিকাংশ বড় বড় মাদ্রাসায় সফর করে তাদের সুন্নাতের প্রতি আরো তৎপর হওয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করেন এবং ঢাকা মহানগরীতে মজলিসে দাওয়াতুল হকের কাজকে গতিশীল করার জন্য প্রত্যেক থানাভিত্তিক কমিটি করে দেন এবং হালকার আমীর ও নায়েবে আমীর মাসে দুবার ধানমন্ডি ইজতিমায় জমা হয়ে কাজের লিখিত রিপোর্ট পেশ করার নির্দেশ দেন। তার হাত ধরেই বাংলাদেশে এই সংগঠনের চর্চা শুরু হয়।[7] সে ধারা এখনও চালু রয়েছে। পরে তিনি বহুবার বাংলাদেশে তাশরীফ আনেন এবং বিভিন্ন মাদ্রাসা ভ্রমণ করেন। সর্বশেষ ২০ ডিসেম্বর ২০০৪ সালে মজলিসে দাওয়াতুল হকের ১১তম বার্ষিক ইজতিমা উপলক্ষ্যে বাংলাদেশে আগমণ করেন এবং এক সপ্তাহ অবস্থান করে এদেশের বহু ইসলামী জলসায় বয়ান রাখেন।
‘শাহ আবরারুল হক সাহেব চারিত্রিক পরিশুদ্ধি, তালীম-তারবিয়ত ও তাদরীসের খেদমত অত্যন্ত সুন্দরভাবে আঞ্জাম দিচ্ছেন। ফলে তার ফুয়ূয ও বারাকাত সমগ্র হিন্দুস্তানের সর্বস্তরের লোকদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ছে। তার বয়ানে ঐ সমস্ত দুর্লভ কথা-বার্তা শোনা যায় যা আমরা থানাভবনে শুনেছি’
— [8]
‘ শাহ আবরারুল হক সাহেব দা. বা. আযীমতের অধিকারী এক মহান শায়খ ও নির্ভীক দায়ী-ইলাল্লাহ’
— [8]
‘আল্লাহ পাক শাহ আবরারুল হক সাহেবকে জাহেরী বাতেনী সর্ব গুণে গুণান্বিত করেছেন। তার ওয়াজ নসীহতে হযরত থানভীর চিন্তাধারা ও স্বভাব ফুটে উঠে। তিনি অন্তর থেকে দরদ নিয়ে কথা বলেন। তাই তার বয়ান শ্রোতাদের মনে বিস্ময়কর প্রভাব সৃষ্টি করে’
— [8]
‘শাহ আবরারুল হক সাহেব হচ্ছেন এক অসাধারণ মুসলিহুল উলামা। উলামায়ে কেরামের সংশোধনের মত দূরহ কাজ কেবল তার পক্ষেই সম্ভব ’
— [8]
‘আখেরী যুগে হযরতের অস্তিত্ব উম্মতের জন্য বিশাল এক পুঁজিভান্ডার। আলহামদুলিল্লাহ, তার শিক্ষা-দীক্ষা এবং হেদায়াতের ফুয়ূয ও বারাকাত সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়েছে।’
— [8]
২০১১ সালে শাহ আবরারুল হক হারদুয়ীর জীবন ও কর্ম নিয়ে আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২৩২ পৃষ্ঠার একটি গবেষণা পত্র প্রকাশিত হয়েছে।[9]
তিনি ১৭ মে ২০০৫ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের হারদুয়ী জেলায় নিজ বাড়ীতে মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৮ বছর। তাঁকে হারদুয়ী জেলা শহরের আম কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়।
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.