অণুচক্রিকা
উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
অণুচক্রিকা (ইংরেজি: platelet) হলো রক্তের ক্ষুদ্র বর্ণহীন ও নিউক্লিয়াসবিহীন ডিম্বাকৃতির চাকতি-সদৃশ উপাদান যার কাজ হলো রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করা এবং রক্তপাত বন্ধ করা।[১] ইংরেজি ভাষায় এটি প্লেটলেট নামে পরিচিত। এর অপর নাম থ্রম্বোসাইট যা গ্রিক θρόμβος (থ্রম্বোস), "ঘনীভূত পিণ্ড" এবং κύτος (কিতোস্), "কোষ" শব্দযুগল থেকে এসেছে। অণুচক্রিকার কোনো কোষ নিউক্লিয়াস নেই; এরা অস্থিমজ্জা বা ফুসফুসের[২] মেগাক্যারিওসাইট (মহাকেন্দ্রক কোষ) থেকে উদ্ভূত সাইটোপ্লাজমের খণ্ডাংশ,[৩] যা পরে সংবহনে প্রবেশ করে। অণুচক্রিকা কেবল স্তন্যপায়ী প্রাণীদের মধ্যে দেখা যায়, অন্যান্য মেরুদণ্ডী প্রাণীদের ক্ষেত্রে (যেমন, পাখি, উভচর প্রাণী) অণুচক্রিকা অখণ্ড এককেন্দ্রক কোষ হিসেবে সংবাহিত হয়।[৪]:৩

অণুচক্রিকা | |
---|---|
আলোক অণুবীক্ষণ যন্ত্র (৫০০ ×) দিয়ে গিমজা রঞ্জন দ্বারা প্রস্তুতকৃত প্রান্তীয় রক্ত অনুলেপ বা ব্লাড ফিল্ম থেকে প্রাপ্ত চিত্র, যেখানে বেগুনি রঙের বিন্দুর মতো অণুচক্রিকা ও এর চারিদিকে গোলাপি বৃত্তাকার গঠনের লোহিত রক্তকণিকা দৃশ্যমান। | |
![]() চারটি নিষ্ক্রিয় ও তিনটি সক্রিয় অণুচক্রিকার ত্রিমাত্রিক চিত্র। | |
বিস্তারিত | |
পূর্বভ্রূণ | মেগাক্যারিওসাইট (মহাকেন্দ্রক কোষ) |
তন্ত্র | রক্তবিজ্ঞান |
কাজ | রক্ত তঞ্চন করা; রক্তপাত প্রতিরোধ |
শনাক্তকারী | |
লাতিন | থ্রম্বোসাইটাস |
মে-এসএইচ | D001792 |
এফএমএ | FMA:62851 |
মাইক্রো শারীরস্থান পরিভাষা |
অণুচক্রিকার একটি প্রধান কাজ হচ্ছে হিমোস্ট্যাসিস বা রক্তরোধনে অবদান রাখা। হিমোস্ট্যাসিস বা রক্তরোধন হলো এন্ডোথেলিয়াম বা অন্তরাস্তরের ক্ষতস্থান থেকে রক্তপাত বন্ধ করার প্রক্রিয়া। ক্ষতস্থানে জড়ো হয়ে ফুটো স্থানটি ছিপি তৈরি করে বন্ধ করে দেয়। প্রথমত, অণুচক্রিকা আহত এন্ডোথেলিয়ামের বাইরের পদার্থের সাথে সংযুক্ত হয়: আসঞ্জন। দ্বিতীয়ত, তারা আকৃতির পরিবর্তন ঘটায়, এবং রাসায়নিক বার্তাবাহক ক্ষরণ করে: সক্রিয়করণ। তৃতীয়ত, তারা রিসেপ্টর সেতুর মাধ্যমে একে অপরের সাথে যুক্ত হয়: সমষ্টিকরণ।[৫] এই অণুচক্রিকা ছিপি (প্রাথমিক রক্তরোধন) গঠন তঞ্চন প্রপাত সক্রিয়করণের সাথে সংশ্লিষ্ট, যার ফলস্বরূপ ফাইব্রিন অবক্ষেপন ও সংযোগসাধন ঘটে (গৌণ রক্তরোধন)।
এই প্রক্রিয়াগুলো যুগপৎ ঘটতে পারে: এর বিস্তৃতি হচ্ছে প্রধানত অণুচক্রিকা ছিপি বা সাদা পিণ্ড গঠন থেকে প্রধানত ফাইব্রিন বা লোহিত পিণ্ড অবক্ষেপন বা আরও বৈশিষ্ট্যসূচক মিশ্রণ। অনেকে এই প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করতে পরবর্তী প্রত্যাহরণ ও অণুচক্রিকা সংদমন কে যথাক্রমে চতুর্থ ও পঞ্চম ধাপ হিসেবে বর্ণনা করেন।[৬] এবং এরপরও অনেকে ষষ্ঠ ধাপ হিসেবে ক্ষত মেরামত যোগ করেন। অণুচক্রিকা সহজাত[৭] ও অর্জিত[৮] উভয় অন্তর্বাহ অনাক্রম্যতায় অংশ নেয়।
অণুচক্রিকা সংখ্যা ও জীবৎকাল

রক্তে প্রতি মাইক্রোলিটারে অণুচক্রিকার সংখ্যা ১,৫০,০০০-৪,৫০,০০০ (গড়ে প্রায় ৩,০০,০০০/মাইক্রোলিটার)।[৯] রক্তে প্রায় প্রতি দশ দিন অন্তর অণুচক্রিকাসমূহ প্রতিস্থাপিত হয়। অন্য কথায় বলা যায়, প্রতি মাইক্রোলিটার রক্তে দৈনিক প্রায় ৩০,০০০ অণুচক্রিকা তৈরি হয়।[৯] গড়ে একজন সুস্থ প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির দেহে দৈনিক প্রায় ১০১১ সংখ্যক অণুচক্রিকা তৈরি হয়। নবজাতকের ক্ষেত্রে অণুচক্রিকার সংখ্যা কম থাকে (১,৫০,০০০-২,০০,০০০/মাইক্রোলিটার), জন্মের পর তিন মাস বয়সে স্বাভাবিক মাত্রায় পৌঁছায়। নারী ও পুরুষের মধ্যে অণুচক্রিকা সংখ্যায় কোনো পার্থক্য নেই। তবে, মাসিকের সময় এর সংখ্যা কমে যায়। সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে অধিক উচ্চতায় অণুচক্রিকা সংখ্যা বাড়ে। খাবার খাওয়ার পরেও এই সংখ্যা বাড়ে।[১০] রক্তে অণুচক্রিকার অর্ধায়ু ৮-১২ দিন (গড়ে ১০ দিন)। প্লীহার টিসু ম্যাক্রোফেজ ব্যবস্থার মাধ্যমে অণুচক্রিকা ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। অর্ধেকেরও বেশি অণুচক্রিকা প্লীহার ম্যাক্রোফেজের মাধ্যমে ধ্বংস হয়। সুতরাং স্প্লিনোমেগালি বা প্লীহাবৃদ্ধির ফলে অণুচক্রিকা সংখ্যা কমে এবং প্লীহাকর্তন বা স্প্লিনেক্টমিতে অণুচক্রিকা সংখ্যা বাড়ে।[১০]
অণুচক্রিকার বৈশিষ্ট্যাবলি
সারাংশ
প্রসঙ্গ

অণুচক্রিকার নিম্নলিখিত তিনটি গুরুত্বপূর্ণ ধর্ম বা বৈশিষ্ট্য রয়েছে:[১০]
- অ্যাডহিসিভনেস: অমসৃণ পৃষ্ঠতলে লেগে থাকার বৈশিষ্ট্যকে অ্যাডহিসিভনেস বা আঠালোভাব বলে। রক্তনালিতে ক্ষত হলে অন্তরাস্তর ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং সাব-এন্ডোথেলিয়াল (অব-অন্তর্ঝিল্লিক) কোলাজেন প্রকাশিত হয়ে পড়ে। কোলাজেনের সংস্পর্শে আসার পর অণুচক্রিকা সক্রিয় হয় এবং কোলাজেনের সাথে সেঁটে যায়। আসঞ্জন হলো অণুচক্রিকার পুরু আস্তরের কাজ। অণুচক্রিকার আসঞ্জন প্রক্রিয়ার সাথে ক্ষতিগ্রস্ত এন্ডোথেলিয়াম থেকে ক্ষরিত ফন ভিলেব্রান্ট ফ্যাক্টর (vWF) ও অণুচক্রিকা ঝিল্লির পৃষ্ঠতলে অবস্থিত গ্লাইকোপ্রোটিন Ib নামক রিসেপ্টর প্রোটিনের মধ্যে মিথস্ক্রিয়া জড়িত। ফন ভিলেব্রান্ট ফ্যাক্টর হলো একটি বৃহৎ প্রবহমান অণু যা এন্ডোথেলিয়াল কোষ দ্বারা উৎপন্ন হয়। এন্ডোথেলিয়াল কোষের ভেইবেল-পালাদে বস্তুতেও vWF সঞ্চিত থাকে। এর সাথে বন্ধন হলে অণুচক্রিকা সক্রিয় হয় এবং এর দানাগুলোর উপাদান অবমুক্ত করে। অবমুক্ত এডিপি অণুচক্রিকার কোষ ঝিল্লির এডিপি রিসেপ্টরের ওপর কাজ করে আরও বেশি অণুচক্রিকার পুঞ্জীভবন ঘটায়। মানব অণুচক্রিকায় কমপক্ষে তিনটি ভিন্ন এডিপি রিসেপ্টর আছে, যেমন P2Y1, P2Y2 ও P2X1। এগুলো নিঃসন্দেহে ওষুধ উদ্ভাবনের জন্য আকর্ষণীয় লক্ষ্যবস্তু এবং কতক নতুন সম্বাধক হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোক প্রতিরোধে আশা জাগিয়েছে।[১১] আঠালোভাবকে ত্বরান্বিত করে এমন অন্যান্য বস্তুসমূহ হলো কোলাজেন (তন্তুজেন), থ্রম্বিন, এডিপি, থ্রম্বোক্সেন এ২, ক্যালসিয়াম আয়ন, পি-সিলেক্টিন ও ভিট্রোনেক্টিন। নতুন সংগৃহীত রক্তের নমুনায় অণুচক্রিকাগুলো একে অপরের সাথে ও সকল লভ্য উপরিতলে লেগে থাকে, যদি না রক্তে সাইট্রেট বা অন্যান্য পদার্থ মিশানো হয় যা রক্তে ক্যালসিয়াম আয়নের লভ্যতা হ্রাস করে।[১২]
- অ্যাগ্রিগেশন (সমষ্টিকরণ): অ্যাগ্রিগেশন হলো অণুচক্রিকার সমষ্টিকরণ বা জমায়েত। আসঞ্জনের পরে অণুচক্রিকার ঘন (ডেল্টা) দানা থেকে অবমুক্ত পদার্থসমূহের দ্বারা আরও অধিক সংখ্যক অণুচক্রিকা সক্রিয় হয়। সক্রিয়করণের সবচেয়ে সংবেদনশীল চিহ্ন হচ্ছে অঙ্গসংস্থানিক পরিবর্তন।[১৩] অঙ্গসংস্থানিক পরিবর্তন শুরু করার ক্ষেত্রে মাইটোকন্ড্রিয়াল হাইপারপোলারাইজেশন (অতিধ্রুবণ) প্রধান ভূমিকা রাখে।[১৪] সক্রিয়করণের সময় অণুচক্রিকার অভ্যন্তরে ক্যালসিয়াম আয়নের পরিমাণ বাড়ে এবং দীর্ঘ সূত্রবৎ ক্ষণপাদ দীর্ঘায়িত করে তাদের আকৃতির পরিবর্তন করে যাকে প্রবর্ধ বা ফিলোপোডিয়া (সূত্রপাদ) বলে। এ-সকল পরিবর্তন অণুচক্রিকার কোষঝিল্লি ও উন্মুক্ত নালিকাতন্ত্রের সাথে মাইক্রোটিউবিউল/অ্যাক্টিন যৌগের মিথস্ক্রিয়ার মাধ্যমে সংঘটিত হয়। এটি পেশি কোষের সংকোচন প্রক্রিয়ার মতোই।[১৫] ফিলোপোডিয়া অণুচক্রিকাকে একত্রে সমষ্টীভূত হতে সাহায্য করে। অণুচক্রিকার সক্রিয়করণ ও সমষ্টিকরণ প্রক্রিয়া এডিপি, থ্রম্বোক্সেন এ২ ও অণুচক্রিকা-সক্রিয়ক পদার্থ (এটি একটি সাইটোকাইন যা অণুচক্রিকা ছাড়াও নিউট্রোফিল ও মনোসাইট থেকে ক্ষরিত হয়) দ্বারা ত্বরান্বিত হয়। সক্রিয়করণের কয়েক মিনিট পরেই সমষ্টিকরণ প্রক্রিয়া শুরু হয়। গ্লাইকোপ্রোটিন IIb/IIIa (GPIIb/IIIa) রিসেপ্টর চালু হওয়ার মাধ্যমে শুরু হয়, এসব রিসেপ্টর ফন ভিলেব্রান্ট ফ্যাক্টর (vWF) অথবা ফাইব্রিনোজেনের সাথে বন্ধন তৈরি করে।[৫] প্রতি অণুচক্রিকায় এ-রকম প্রায় ৬০,০০০ সংখ্যক রিসেপ্টর আছে।[১৬] যখন অন্ততপক্ষে অণুচক্রিকার নয়টি ভিন্ন পৃষ্ঠতলীয় রিসেপ্টরের মধ্যে যে-কোনো একটি বা আরও বেশি রিসেপ্টর সক্রিয়করণের সময় চালু হয়, তখন অন্তঃঅণুচক্রিকা সংকেতদায়ক পাথওয়ে বিদ্যমান GpIIb/IIIa রিসেপ্টরের আকৃতির পরিবর্তন – কুঞ্চিত থেকে ঋজু – ঘটায় এবং এভাবে বন্ধন গঠনের সক্ষমতা অর্জন করে।[৫]
- অ্যাগ্লুটিনেশন: অ্যাগ্লুটিনেশন বা আশ্লেষণ হলো অণুচক্রিকাসমূহের একত্রে পুঞ্জিতকরণ। কিছু অণুচক্রিকা অ্যাগ্লুটিনিন ও অণুচক্রিকা-সক্রিয়ক পদার্থের ক্রিয়ার ফলে সমষ্টীভূত অণুচক্রিকাসমূহের আশ্লেষণ ঘটে। এন্ডোথেলিয়াম (অন্তরাস্তর) অক্ষত থাকলে থ্রম্বাস (তঞ্চপিণ্ড) তৈরি হয় না, কারণ নাইট্রিক অক্সাইড,[১৭] প্রোস্টাসাইক্লিন,[১৮] ও সিডি৩৯[১৯] অণুচক্রিকাকে বাধা প্রদান করে থ্রম্বাস বা তঞ্চিত রক্তপিণ্ড গঠন প্রতিরোধ করে।
সক্রিয়ক পদার্থসমূহ | সম্বাধক পদার্থসমূহ |
---|---|
১. কোলাজেন, যা রক্তবাহ ক্ষতিগ্রস্ত হলে প্রকাশিত হয় ২. ফন ভিলেব্রান্ট ফ্যাক্টর ৩. থ্রম্বোক্সেন এ২ ৪. অণুচক্রিকা সক্রিয়ক পদার্থ ৫. থ্রম্বিন ৬. অ্যাডেনোসিন ডাইফসফেট (এডিপি) ৭. ক্যালসিয়াম আয়ন (Ca2+ ৮. পি-সিলেক্টিন - এন্ডোথেলিয়াল কোষ থেকে নিঃসৃত কোষ আসঞ্জন অণু ৯. কনভালজিন - সাপের বিষ থেকে প্রাপ্ত পরিশোধিত প্রোটিন | ১. নাইট্রিক অক্সাইড (NO) ২. তঞ্চন উপাদান - II, IX, X, XI, XII ৩. প্রোস্টাসাইক্লিন ৪. নিউক্লিওটাইডেজ যা এডিপি কে ভেঙে ফেলে |
অঙ্গসংস্থানিক বৈশিষ্ট্য
সারাংশ
প্রসঙ্গ

অণুচক্রিকাসমূহ অপেক্ষাকৃত ক্ষুদ্র, এর ব্যাস ২-৪ μm (গড়ে ২.৫ μm) ও আয়তন ৭-৮ ঘন মাইক্রোমিটার (গড়ে ৭.৫ cu µ)।[২০][২১] এরা নিষ্ক্রিয় অবস্থায় ডিম্বাকার দ্বি-উত্তোল (লেন্স আকৃতির) চাকতির মতো হয়ে থাকে।[৪]:১১৭–১৮[২২] এ-ছাড়া স্বাভাবিক অবস্থায় অণুচক্রিকা কমলালেবুর মতো দুই প্রান্তে সামান্য চাপা গোলাকার হতে পারে, যার অর্ধাক্ষ অনুপাত ২-৮।[২৩] কখনো কখনো দণ্ডাকার,ডাম-বেল, কমা আকৃতি, চুরুট আকৃতি বা অন্য যে-কোনো অস্বাভাবিক আকৃতির হতে পারে।[১০] নিষ্ক্রিয় অবস্থায় অণুচক্রিকার প্রবর্ধ বা ফিলোপোডিয়া থাকে না তবে সক্রিয় অবস্থায় থাকে।[২৪]
অণুচক্রিকা অস্থিমজ্জার মেগাক্যারিওসাইট (মহাকেন্দ্রক কোষ) থেকে উৎপত্তি লাভ করে। অণুচক্রিকা পুরু গ্লাইকোপ্রোটিন আস্তরযুক্ত কোষ ঝিল্লি দ্বারা বেষ্টিত থাকে, যেটি এদের আঠালো বৈশিষ্ট্যের জন্য দায়ী। কোষ ঝিল্লিটি ৬ ন্যানোমিটার পুরু। কোষ ঝিল্লির ব্যাপক অন্তঃপ্রবেশের ফলে একটি উন্মুক্ত নালিকা ব্যবস্থা গড়ে উঠে, যেটি খুবই সূক্ষ্ম সুড়ঙ্গ ব্যবস্থা যার মধ্য দিয়ে অণুচক্রিকার দানাসমূহ তাদের উপাদান বাইরে বের করে দেয়। কোষ ঝিল্লিতে ফসফোলিপিড, কোলেস্টেরল ও গ্লাইকোলিপিড আকারে লিপিড থাকে, গ্লাইকোক্যালিক্স হিসেবে শর্করা এবং গ্লাইকোপ্রোটিন ও প্রোটিন থাকে।[১০] বিক্ষিপ্তভাবে থাকা গ্লাইকোক্যালিক্স রক্ত তঞ্চনের সময় অণুচক্রিকার আসঞ্জন ও সক্রিয়করণের সাথে জড়িত।[২৫]
রঞ্জিত রক্ত অনুলেপে, অণুচক্রিকাগুলো প্রায়শই গুচ্ছ হিসেবে থাকে। চাকতি-সদৃশ অণুচক্রিকার প্রান্তীয় অঞ্চল খুবই হালকাভাবে রঞ্জিত থাকে, যাকে হায়ালোমিয়ার (কাচবৎ অংশ) বলে, দানাসমৃদ্ধ গাঢ়ভাবে রঞ্জিত কেন্দ্রীয় অঞ্চলটিকে গ্র্যানিউলোমিয়ার (দানালো অংশ) বলে। কোষ ঝিল্লির নিচে অণুচক্রিকার পরিসীমা বরাবর মাইক্রোটিউবিউল (অণুনালিকা) ও মাইক্রোফিলামেন্ট (অণুসূত্র) থাকে যা অণুচক্রিকার আকার বজায় রাখতে সাহায্য করে। মাইক্রোটিউবিউলসমূহ অ্যাক্টিন ফিলামেন্ট, মায়োসিন ও কোষ সংকোচনের সাথে জড়িত অন্যান্য প্রোটিনের (যেমন, থ্রম্বোসথিনিন) সাথে সংশ্লিষ্ট থাকে। এ-ছাড়া সাইটোপ্লাজমে আরও থাকে মাইটোকন্ড্রিয়া, গ্লাইকোজেন, অল্প পরিমাণ মসৃণ এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলাম, কোষ ঝিল্লির নালিকাকার ইনভ্যাজিনেশন (অন্তঃপ্রবেশ) এবং তিনটি প্রধান ধরনের ঝিল্লি-বেষ্টিত থলি যা আলফা, ডেল্টা ও ল্যামডা দানা নামে আখ্যায়িত। আলফা দানাসমূহ হলো বৃহত্তম, যার ব্যাস প্রায় ২০০-৫০০ ন্যানোমিটার যা অণুচক্রিকার মোট আয়তনের ১০%।[২৬] অণুচক্রিকায় এদের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি (প্রতি অণুচক্রিকায় প্রায় ৫০-৮০টি)।[২৭] এদের মধ্যে অণুচক্রিকা-উদ্ভূত বৃদ্ধি ফ্যাক্টর, ফাইব্রিনোজেন ও অন্যান্য পদার্থ থাকে। ডেল্টা বা ডেন্স দানা ক্ষুদ্রতর (ব্যাস ১৫০-৩০০ nm)[২৭] এবং প্রতি অণুচক্রিকায় ৩-৮ টি ডেল্টা দানা থাকে।[২৬] এতে ৫-হাইড্রোক্সিট্রিপ্ট্যামিন (সেরোটোনিন) থাকে যা রক্তরস থেকে এন্ডোসাইটোসিস (অন্তঃকোষায়ন) প্রক্রিয়ায় প্রবেশ করে। ল্যামডা দানা হলো ক্ষুদ্রতম (ব্যাস ২৫০ nm) এবং এতে লাইসোসোমাল উৎসেচক থাকে।[১২]
আলফা দানা | ডেল্টা দানা | ল্যামডা দানা |
---|---|---|
১. তঞ্চন উপাদান: ফাইব্রিনোজেন, V ও XIII ২. অণুচক্রিকা উদ্ভূত বৃদ্ধি ফ্যাক্টর ৩. ভাস্কুলার এন্ডোথেলিয়াল বৃদ্ধি ফ্যাক্টর ৪. বেসিক ফাইব্রোব্লাস্ট বৃদ্ধি ফ্যাক্টর ৫. এন্ডোস্ট্যাটিন ৬. থ্রম্বোস্পন্ডিন ৭. ফন ভিলেব্রান্ট ফ্যাক্টর | ১. নিউক্লওটাইড ২. সেরোটোনিন ৩. ফসফোলিপিড ৪. ক্যালসিয়াম আয়ন (Ca2+) ৫. লাইসোসোম | ১. লাইসোসোমাল উৎসেচক |
উৎপত্তি ও পূর্ণবিকাশ

অণুচক্রিকা অস্থিমজ্জায় গঠিত হয়। বহুজনি রক্তোৎপাদী মাতৃকোষ থেকে কলোনি ফর্মিং ইউনিট-মেগাক্যারিওসাইট (CFU-Meg) উৎপন্ন হয়।[২৮][২৯][৩০] এখান থেকে মেগাক্যারিওব্লাস্ট (আদি মহাকেন্দ্রক কোষ) তৈরি হয় যেখান থেকে তৈরি হয় প্রোমেগাক্যারিওসাইট (প্রাক্-মহাকেন্দ্রক কোষ)। এটি মেগাক্যারিওসাইট বা মহাকেন্দ্রক কোষের প্রজনিকা কোষ।[৩১] মেগাক্যারিওসাইটের বিকাশ পর্যায় হলো নিম্নরূপ:
বহুজনি রক্তোৎপাদী মাতৃকোষ (CFU-Meg) → মেগাক্যারিওব্লাস্ট → প্রোমেগাক্যারিওসাইট → মেগাক্যারিওসাইট (মহাকেন্দ্রক কোষ)
মেগাক্যারিওসাইটের সাইটোপ্লাজম সিউডোপোডিয়াম বা ক্ষণপাদ তৈরি করে যাকে প্রোপ্লেটলেট বলা হয়। ক্ষণপাদের একটি অংশ বিযুক্ত হয়ে অণুচক্রিকা গঠিত হয়, যা সংবহনে প্রবেশ করে। এভাবে একটি মেগাক্যারিওসাইট থেকে কয়েক হাজার অণুচক্রিকা তৈরি হতে পারে। অণুচক্রিকার উৎপাদন কলোনি-স্টিমিউলেটিং ফ্যাক্টর ও থ্রম্বোপোয়েটিন দ্বারা প্রভাবিত হয়। কলোনি-স্টিমিউলেটিং ফ্যাক্টর মনোসাইট ও টি-লিম্ফোসাইট কর্তৃক ক্ষরিত হয়। থ্রম্বোপোয়েটিন ইরিথ্রোপোয়েটিন-সদৃশ গ্লাইকোপ্রোটিন যা যকৃৎ ও বৃক্ক থেকে ক্ষরিত হয়।[১০] মেগাক্যারিওসাইটের বাকি অংশ অ্যাপোপ্টোসিস ও ম্যাক্রোফেজ দ্বারা ফ্যাগোসাইটোসিস (কোষভক্ষণ) প্রক্রিয়ায় ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়।
মেগাক্যারিওব্লাস্টের ব্যাস ২৫-৫০ μm, যার একাধিক নিউক্লিওলাসযুক্ত ডিম্বাকার বা বৃক্ক-আকৃতির নিউক্লিয়াসবিশিষ্ট ক্ষারাকর্ষী সাইটোপ্লাজম রয়েছে। এদের বিভেদন ঘটার মাধ্যমে মেগাক্যারিওসাইট উৎপন্ন হয়, তবে বিভেদনের পূর্বে এরা এন্ডোমাইটোসিস (অন্তঃসমবিভাজন) প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যায়, যেখানে কোষ বিভাজন দ্বারা পৃথক হওয়া ছাড়াই অনেকবার ডিএনএ অনুলিপন সংঘটিত হওয়ার ফলে অত্যন্ত পলিপ্লয়েড (বহুপ্রস্থ) নিউক্লিয়াস (৮N থেকে ৬৪N পর্যন্ত) সৃষ্টি হয়।
মেগাক্যারিওসাইট (গ্রিক megas, মহা, + karyon, নিউক্লিয়াস, কেন্দ্রক + kytos, কোষ) শব্দের অর্থ মহাকেন্দ্রক কোষ, এদের ব্যাস ১৫০ μm এবং পলিপ্লয়েড (বহুপ্রস্থ) নিউক্লিয়াসগুলো বৃহৎ, অনিয়তভাবে উপখণ্ডযুক্ত এবং অসূক্ষ্ম ক্রোমাটিনযুক্ত। এদের সাইটোপ্লাজমে অসংখ্য মাইটোকন্ড্রিয়া, একটি সুগঠিত অমসৃণ এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলাম এবং একটি বিস্তৃত গলজি বস্তু যেখান থেকে অণুচক্রিকার সুনির্দিষ্ট দানা তৈরি হয়। মেগাক্যারিওসাইট সবচেয়ে বেশি ভালো দেখা যায় অস্থিমজ্জায়, তবে প্লীহা বা ফুসফুসের ইন্টারস্টিশিয়াল টিসুতেও প্রায়শই ভাস্কুলার সাইনুসয়েড (শিরানালাভ) বা কৈশিকার সাথে নিবিড় সংশ্লিষ্টতাসহ থাকে।[৩২]

সঞ্চিত অণুচক্রিকাগুলো প্লীহাতে জমা থাকে, প্রয়োজন হলে সিম্প্যাথেটিক বা সমবেদী স্নায়ুতন্ত্রের উদ্দীপনায় প্লীহা সংকোচনের মাধ্যমে অবমুক্ত হয়। সংবহনতন্ত্রে গড়ে ৮-৯ দিন থাকে।[৩৩] অণুচক্রিকার জীবৎকাল নিয়ন্ত্রিত হয় Bcl-xL টাইমার (কালনিরূপক) সমৃদ্ধ অভ্যন্তরীণ অ্যাপোপ্টোটিক নিয়ন্ত্রণমূলক পাথওয়ে দ্বারা।[৩৪] বয়োবৃদ্ধ অণুচক্রিকাসমূহ প্লীহা ও যকৃতে ফ্যাগোসাইটোসিস (কোষভক্ষণ) প্রক্রিয়ায় ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়।
অণুচক্রিকার কাজ
সারাংশ
প্রসঙ্গ
স্বাভাবিক অবস্থায় অণুচক্রিকাগুলো নিষ্ক্রিয় থাকে, কেবল সক্রিয় হলেই তাদের কার্য সম্পাদন করে। সক্রিয় অণুচক্রিকা তাৎক্ষণিকভাবে অনেক পদার্থ অবমুক্ত করে। এই প্রক্রিয়া অণুচক্রিকা অবমুক্তি বিক্রিয়া নামে পরিচিত। অণুচক্রিকার কার্যাবলি সম্পাদিত হয় এ-সব অবমুক্ত পদার্থের মাধ্যমেই।[১০] নিচে অণুচক্রিকার বিভিন্ন কাজ সম্পর্কে বর্ণনা করা হলো:
- রক্ত তঞ্চনে ভূমিকা: অণুচক্রিকা অন্তর্নিহিত প্রোথ্রম্বিন সক্রিয়ক গঠনে সাহায্য করে যা রক্ত তঞ্চন আরম্ভ করার জন্য দায়ী। প্রোথ্রম্বিন সক্রিয়ক নামক পদার্থটি রক্তবাহের বিদারণ বা ক্ষতি হলে গঠিত হয়। এটি প্রোথ্রম্বিন থেকে থ্রম্বিন রূপান্তর বিক্রিয়ায় অনুঘটক হিসেবে কাজ করে। থ্রম্বিন একটি উৎসেচক হিসেবে কাজ করে এবং ফাইব্রিনোজেনকে ফাইব্রিন জালকে রূপান্তর করে যা অণুচক্রিকা, রক্তকণিকা ও রক্তরসকে জালকে আটকে ফেলে এবং রক্তপিণ্ড গঠন করে।[৩৫]
- রক্তপিণ্ড প্রত্যাহরণে ভূমিকা: রক্তপিণ্ডে, অণুচক্রিকাসহ রক্তকণিকাসমূহ ফাইব্রিন সুতার মধ্যে আটকা পড়ে। অণুচক্রিকার সাইটোপ্লাজমে সংকোচনশীল প্রোটিন, যেমন অ্যাক্টিন, মায়োসিন ও থ্রম্বোসথিনিন থাকে যেগুলো রক্তপিণ্ড প্রত্যাহরণের জন্য দায়ী। এগুলো রক্তবাহ প্রাচীরের সংকোচন ঘটানোর মাধ্যমে বিদীর্ণ অংশকে কাছাকাছি নিয়ে আসে এবং রক্তপাত বন্ধে সাহায্য করে।[১০]
- রক্তপাত প্রতিরোধে ভূমিকা (হিমোস্ট্যাসিস): অণুচক্রিকা তিনটি উপায়ে হিমোস্ট্যাসিস বা রক্তরোধনকে ত্বরান্বিত করে:[১০]
১. অণুচক্রিকা ৫-হাইড্রোক্সিট্রিপ্ট্যামিন বা সেরোটোনিন ক্ষরণ করে যা রক্তনালির সংকোচন ঘটায়।
২. আঠালো বৈশিষ্ট্যের জন্য অণুচক্রিকাগুলো কৈশিকার মতো রক্তবাহের ক্ষত বন্ধ করে দিতে পারে।
৩. ক্ষণস্থায়ী ছিপি গঠনের মাধ্যমে অণুচক্রিকাগুলো ক্ষতিগ্রস্ত রক্তবাহ বন্ধ করতে পারে।
- বিদীর্ণ রক্তবাহের মেরামতে ভূমিকা: অণুচক্রিকার সাইটোপ্লাজমে গঠিত অণুচক্রিকা-উদ্ভূত বৃদ্ধি ফ্যাক্টর বিদীর্ণ রক্তবাহের এন্ডোথেলিয়াম ও অন্যান্য গঠনগুলোর মেরামতের জন্য উপকারী।[১০]
- প্রতিরক্ষা কৌশলে ভূমিকা: অ্যাগ্লুটিনেশন বা আশ্লেষণ বৈশিষ্ট্যের জন্য অণুচক্রিকা বাহ্যিক বস্তুকে বেষ্টন করে ফেলে এবং ধ্বংস করে।[৩৬] অণুচক্রিকাসমূহ ব্যাকটেরিয়াকে বাঁধতে পারে হয় সরাসরি থ্রম্বোসাইটিক প্যাটার্ন রিকগনিশন রিসেপ্টর[৩৭] ও ব্যাকটেরিয়াল পৃষ্ঠতল প্রোটিনের মাধ্যমে অথবা রক্তরস প্রোটিনের সাহায্যে যা অণুচক্রিকা ও ব্যাকটেরিয়া উভয়ের সাথেই বন্ধন তৈরি করে।[৩৮] অণুচক্রিকাসমূহ বহুবিধ প্রদাহমূলক প্রক্রিয়া আরম্ভ ও অংশগ্রহণ করে সরাসরি জীবাণুকে বেঁধে ফেলে এবং এমনকি তাদের ধ্বংস করে সহজাত প্রতিরক্ষায় কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করে। এটি নিদানিক উপাত্তকে সমর্থন করে যেখানে দেখা যায় যে, অনেক গুরুতর ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাস সংক্রমণে অণুচক্রিকা সংখ্যা হ্রাস পায়, এভাবে প্রদাহে তাদের অবদান কমিয়ে দেয়। সংবহনে প্রাপ্ত প্লেটলেট-লিউকোসাইট অ্যাগ্রিগেট (অণুচক্রিকা-শ্বেতকণিকা সমাহার) সেপসিস (রক্তদূষণ) বা প্রদাহমূলক অন্ত্রীয় রোগকে নির্দেশ করে, যা অণুচক্রিকা ও অনাক্রম্য কোষের মধ্যে সংযোগ রয়েছে বলে প্রমাণ করে।[৩৭] সক্রিয় অণুচক্রিকাসমূহ অ্যান্টিবডি বা প্রতিরক্ষিকার সাথে মিথস্ক্রিয়ার মাধ্যমে অর্জিত প্রতিরক্ষায় অংশ নেয়। এরা FcγRIIA রিসেপ্টরের মাধ্যমে সুনির্দিষ্টভাবে ইমিউনোগ্লোবিউলিন জি (IgG)-এর সাথে বন্ধন করতে পারে। সক্রিয় হওয়ার পর IgG অপসোনিনায়নকৃত ব্যাকটেরিয়ার সাথে বন্ধন করার পর, অণুচক্রিকা পরবর্তীতে বিক্রিয়ামূলক অক্সিজেন মূলক, জীবাণুনাশক পেপ্টাইড, ডিফেন্সিন, কাইনোসিডিন ও প্রোটিয়েজ অবমুক্ত করে এবং সরাসরি ব্যাকটেরিয়াকে হত্যা করে।[৩৯]
- প্রদাহ নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা: অণুচক্রিকাসমূহ শ্বেতকণিকার সাথে মিথস্ক্রিয়া করে এবং সাইটোকাইন, কেমোকাইন ও অন্যান্য প্রদাহমূলক মধ্যস্থতাকারী পদার্থ ক্ষরণ করার মাধ্যমে দ্রুততার সাথে ক্ষত বা সংক্রমণ স্থলে ছড়িয়ে পরে।[৪০][৪১][৪২][৪৩][৪৪] সম্প্রতি, নিউক্লিয়াসবিহীন স্তন্যপায়ী প্রাণিবর্গের অণুচক্রিকাসমূহ স্বতঃক্রিয় চলনে অক্ষম এই বিশ্বাস ভুল প্রমাণিত হয়েছে।[৪৫] প্রকৃতপক্ষে, অণুচক্রিকাসমূহ হলো সক্রিয় ধাঙড় কোষ, এরা রক্তবাহের প্রাচীর পরিষ্কার করে ও থ্রম্বাস বা তঞ্চপিণ্ডকে পুনর্গঠিত করে। এরা ব্যাকটেরিয়াসহ অনেক পৃষ্ঠতলকে শনাক্ত করতে ও এতে লেগে থাকতে সক্ষম, এদেরকে তাদের উন্মুক্ত নালিকা ব্যবস্থায় সম্পূর্ণরূপে আবৃত করতে সক্ষম, এজন্য এই পদ্ধতিকে ফ্যাগোসাইটোসিসের পরিবর্তে কাভারসাইটোসিস নামকরণ করার জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে, কারণ উন্মুক্ত নালিকা ব্যবস্থা হলো কেবল বাহ্যিক কোষ ঝিল্লির অন্তঃপ্রবেশ। অণুচক্রিকাসমূহ দীর্ঘমেয়াদি প্রদাহমূলক রোগ, যেমন সাইনোভাইটিস (সন্ধিঝিল্লি প্রদাহ) বা রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস (সন্ধিবাত) রোগেও অংশগ্রহণ করে।[৪৬]
রোগের উপসর্গগুলো
সারাংশ
প্রসঙ্গ
অণুচক্রিকাসংক্রান্ত কোনো রোগের জন্য স্বতঃস্ফূর্ত ও অত্যধিক রক্তক্ষরণ ঘটতে পারে। এই রক্তক্ষরণ হতে পারে অণুচক্রিকার সংখ্যাস্বল্পতা, অণুচক্রিকার কার্মিক বিকার অথবা অণুচক্রিকার সংখ্যা মাত্রাতিরিক্ত বেশি : প্রতি মাইক্রোলিটারে ১০ লাখের বেশি (অত্যধিক অণুচক্রিকা সংখ্যা পৃথককরণের মাধ্যমে ফন ভিলেব্রান্ট ফ্যাক্টরের সংখ্যা আপেক্ষিকভাবে কমিয়ে দেয়)।[৪৭][৪৮]
রক্তক্ষরণের বৈশিষ্ট্য ও অবস্থানের উপর ভিত্তি করে এটি অণুচক্রিকাসংক্রান্ত বা তঞ্চন উপাদানের ত্রুটিজনিত কি না তা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।[৪]:৮১৫, Table ৩৯-৪ নিচের বিষয়গুলো অণুচক্রিকাসংক্রান্ত রক্তক্ষরণ নির্দেশ করে (তঞ্চনত্রুটিজনিত নয়): রেজর বা ক্ষুরের আঘাতে ত্বক কেটে গেলে ত্বরিত ও অত্যধিক রক্তক্ষরণ হয়, কিন্তু চাপ প্রয়োগে বন্ধ করা যায়; ত্বকে রক্তাভ দাগ তৈরি করে এমন স্বতঃস্ফূর্ত রক্তক্ষরণকে তাদের আকারের উপর ভিত্তি করে নামকরণ করা হয়: পারপিউরা বা ধূম্ররোগ (ব্যাস ৩-১০ mm),[৪৯] পিটিকিয়া বা কালশিটাণু (<৩ mm), একিমোসিস বা কালশিটা (>১ cm);[৫০] শ্লৈষ্মিক ঝিল্লিতে রক্তক্ষরণের ফলে দাঁতের মাড়ি দিয়ে রক্ত পড়া, নাক দিয়ে রক্ত পড়া ও পরিপাক নালিতে রক্তক্ষরণ; মেনোরেজিয়া (অতি রজঃস্রাব); অক্ষিপটমধ্যস্থ ও অন্তঃকরোটি রক্তক্ষরণ।
অণুচক্রিকার সংখ্যা অত্যধিক বেড়ে গেলে বা স্বাভাবিক অণুচক্রিকা অস্বাভাবিক রক্তনালি প্রাচীরের সংস্পর্শে এলে শিরাস্থ থ্রম্বোসিস ও ধামনিক থ্রম্বোসিস হতে পারে। উপসর্গ থ্রম্বোসিস সংঘটন স্থলের উপর নির্ভর করে।
রোগসমূহ
সারাংশ
প্রসঙ্গ
অণুচক্রিকাসংক্রান্ত রোগ হতে পারে অণুচক্রিকার সংখ্যার তারতম্য এবং এর কার্মিক বিকারের জন্য।[৪]:vii
অণুচক্রিকার সংখ্যা স্বাভাবিকের তুলনায় কমে গেলে তাকে থ্রম্বোসাইটোপিনিয়া (অণুচক্রিকা স্বল্পতা) বলে। এটি হতে পারে হয় উৎপাদন হ্রাস বা ক্ষয় বৃদ্ধি উভয় কারণেই। অণুচক্রিকার ঘনত্ব বৃদ্ধি পাওয়াকে থ্রম্বোসাইটোসিস বা অণুচক্রিকাধিক্য বলে।এটি জন্মগত, বিক্রিয়ামূলক বা অনিয়ন্ত্রিত উৎপাদন-এসব কারণে হতে পারে। অণুচক্রিকার কার্যক্রমের ব্যাঘাত ঘটে এমন অবস্থাকে থ্রম্বোসাইটোপ্যাথি বলে। স্বাভাবিক অণুচক্রিকা রক্তক্ষরণের চেয়ে বরং রক্তনালির প্রাচীরে অস্বাভাবিকতার প্রতি সাড়া প্রদান করতে পারে এবং অনুপযোগী অণুচক্রিকা আসঞ্জন/সক্রিয়করণ ও থ্রম্বোসিস (অন্তর্তঞ্চন) হতে পারে, যা স্বাভাবিক রক্তপিণ্ড গঠনের চেয়ে ভিন্ন কৌশলে গঠিত হয়।
থ্রম্বোসাইটোপিনিয়া
অণুচক্রিকা স্বল্পতা দুটি কৌশলের একটি দ্বারা হতে পারে:
- হ্রাসপ্রাপ্ত বা অস্বাভাবিক উৎপাদন (অস্থিমজ্জা ব্যর্থতা এবং বংশানুক্রমিক থ্রম্বোসাইটোপ্যাথি বা অণুচক্রিকা বিকার)
- সংবহনে অবমুক্ত হওয়ার পর ক্ষয়বৃদ্ধি (অনাক্রম্যতা, ডিআইসি অথবা পৃথককরণ)
অণুচক্রিকা সংখ্যা ৫০× ১০৯/L-এর বেশি হলে রক্তক্ষরণ হওয়ার সম্ভাবনা কম এবং ২০×১০৯/L-এর কম না হলে সাধারণত স্বতঃস্ফূর্ত রক্তক্ষরণ হয় না,[৫১] যদি না তাদের স্বাভাবিক কাজের ব্যাঘাত ঘটে। গুরুতর থ্রম্বোসাইটোপিনিয়া (<১০× ১০৯/L) হলে অক্ষিপট ও বিরল ক্ষেত্রে অন্তঃকরোটিতে রক্তক্ষরণ হতে পারে।[৫২]
নিচে থ্রম্বোসাইটোপিনিয়ার (অণুচক্রিকা স্বল্পতা) গুরুত্বপূর্ণ কিছু কারণ উল্লেখ করা হলো:
- উৎপাদন হ্রাস
- অস্থিমজ্জা হাইপোপ্লেজিয়া বা অবগঠন
- শৈশবকালীন অস্থিমজ্জা ব্যর্থতা সিনড্রোম, যেমন ফ্যানকোনি রক্তশূন্যতা, ডিসকেরাটোসিস কনজেনিটা (জন্মগত অপকেরাটিনতা), জন্মগত অ্যামেগাক্যারিওসাইটিক থ্রম্বোসাইটোপিনিয়া
- ইডিয়োপ্যাথিক অ্যাপ্লাস্টিক অ্যানিমিয়া
- ওষুধ দ্বারা প্রবর্তিত: কোষবিষক ওষুধ, অ্যান্টিমেটাবোলাইট (বিপাকরোধী ওষুধ)
- ট্রান্সফিউজন-অ্যাসোসিয়েটেড গ্রাফট-ভার্সাস-হোস্ট ডিজিজ (সঞ্চারণ-সংশ্লিষ্ট গ্রাফট-বনাম-পোষক রোগ)
- অস্থিমজ্জা অনুপ্রবেশ
- লিউকেমিয়া (শ্বেতিকাকর্কট)
- মায়েলোমা (মজ্জাকোষার্বুদ)
- কর্কটরোগ (বিরল)
- মায়েলোফাইব্রোসিস (মজ্জাকাঠিন্য)
- অস্টিওপেট্রোসিস (বহু অস্থিকাঠিন্য)
- লাইসোসোমাল সঞ্চয় রোগ, যেমন গৌশে রোগ
- হিমাটিনিক বা রক্তবর্ধকের ঘাটতি
- ভিটামিন বি১২ এবং/অথবা ফলেট ঘাটতি (মেগালোব্লাস্টিক রক্তশূন্যতা)
- ফ্যামিলিয়াল (ম্যাক্রো-)থ্রম্বোসাইটোপ্যাথি (পারিবারিক বৃহৎ অণুচক্রিকা বিকার)[৫৩][৫৪]
- মায়োসিন ভারী শিকল অস্বাভাবিকতা, যেমন অ্যালপোর্ট সিনড্রোম, মে-হেগলিন অ্যানোমালি, বের্নার-সুলিয়ার সিনড্রোম, মনট্রিয়ল অণুচক্রিকা সিনড্রোম, ভিস্কট-অলড্রিচ সিনড্রোম (ক্ষুদ্র অণুচক্রিকা), মেডিটারেইনিয়ান ম্যাক্রোথ্রম্বোসাইটোপ্যাথি (ভূমধ্যসাগরীয় বৃহৎ অণুচক্রিকা বিকার)
- অস্থিমজ্জা হাইপোপ্লেজিয়া বা অবগঠন
- অত্যধিক ধ্বংস বা ক্ষয়
- অনাক্রম্য কৌশল
- ইডিয়োপ্যাথিক থ্রম্বোসাইটোপিনিক পারপিউরা (স্বয়ম্ভূত অণুচক্রিকা স্বল্পতামূলক ধূম্ররোগ)
- নিওনেটাল অ্যালোইমিউন থ্রম্বোসাইটোপিনিয়া
- রক্ত সঞ্চারণ পরবর্তী পারপিউরা (ধূম্ররোগ)
- ওষুধ-সংশ্লিষ্ট, বিশেষ করে কুইনিন, ভ্যানকোমাইসিন ও হেপারিন
- তঞ্চন সক্রিয়করণ
- ডিসেমিনেটেড ইন্ট্রাভাস্কুলার কোয়াগুলেশন (প্রকীর্ণ অন্তর্বাহ তঞ্চন)
- যান্ত্রিক সঞ্চয়
- হাইপারস্প্লেনিজম (প্লীহা অতিক্রিয়া)
- থ্রম্বোটিক মাইক্রোঅ্যানজিয়োপ্যাথি (তঞ্চনসংক্রান্ত অণুবাহ বিকার)
- হিমোলিটিক ইউরেমিক সিনড্রোম (লালিকানাশক ইউরিমিয়াসম্বন্ধীয় সংলক্ষণ) ও অ্যাটিপিক্যাল হিমোলিটিক ইউরেমিক সিনড্রোম(অপ্রতিরূপক লালিকানাশক ইউরিমিয়াসম্বন্ধীয় সংলক্ষণ)
- যকৃতের রোগ
- থ্রম্বোটিক থ্রম্বোসাইটোপিনিক পারপিউরা (তঞ্চনসংক্রান্ত অণুচক্রিকা স্বল্পতামূলক ধূম্ররোগ)
- প্রি-এক্লাম্পসিয়া (প্রাক্-গর্ভাক্ষেপ)/এইচইএলএলপি সিনড্রোম
- অন্যান্য
- জেস্টেশনাল থ্রম্বোসাইটোপিনিয়া (গর্ভকালীন অণুচক্রিকা স্বল্পতা)
- টাইপ ২বি ফন ভিলেব্রান্ট ডিজিজ
- সিউডো ফন ভিলেব্রান্ট ডিজিজ
- অনাক্রম্য কৌশল
থ্রম্বোসাইটোপ্যাথি
থ্রম্বোসাইটোপ্যাথি বা অণুচক্রিকা বিকার হলো এমন একটি অবস্থা যেখানে অণুচক্রিকা সংখ্যা স্বাভাবিক থাকলেও এর কার্যক্রম স্বাভাবিক থাকে না। নিম্নে অণুচক্রিকা বিকারের কিছু গুরুত্বপূর্ণ কারণ তুলে ধরা হলো:
- জন্মগত
- আসঞ্জনজনিত রোগ
- বের্নার-সুলিয়ার সিনড্রোম
- সক্রিয়করণসংক্রান্ত রোগ
- দানার পরিমাণ বা অবমুক্তিসংক্রান্ত রোগ
- হারমান্সকি–পুদলাক সিনড্রোম
- ধূসর অণুচক্রিকা সিনড্রোম (অণুচক্রিকা আলফা দানা ঘাটতি)
- এডিপি রিসেপ্টর ত্রুটি
- হ্রাসকৃত সাইক্লোঅক্সিজিনেজ সক্রিয়তা
- প্লেটলেট স্টোরেজ পুল ডেফিসিয়েন্সি (অণুচক্রিকা সঞ্চয় কুণ্ড ঘাটতি)
- সমষ্টিকরণসংক্রান্ত রোগ
- গ্লানৎসম্যান থ্রম্বাসথিনিয়া (গ্লানৎসম্যানের অণুচক্রিকা বিকার)
- ভিস্কট-অলড্রিচ সিনড্রোম
- তঞ্চনক সক্রিয়তাসংক্রান্ত রোগ
- কোলাজেন-অ্যান্ড থ্রম্বিন-অ্যাক্টিভেটেড প্লেটলেট ডিফেক্ট (কোলাজেন ও থ্রম্বিন সক্রিয়কৃত অণুচক্রিকা ত্রুটি)
- স্কট সিনড্রোম
- আসঞ্জনজনিত রোগ
- অর্জিত
থ্রম্বোসাইটোসিস ও থ্রম্বোসাইথিমিয়া
অণুচক্রিকাধিক্যের সবচেয়ে প্রচলিত কারণ হচ্ছে যে এটি অন্য প্রক্রিয়ার প্রতি বিক্রিয়ামূলক, যেমন সংক্রমণ, প্রদাহ, যোজক কলার রোগ, ম্যালিগন্যান্সি, লৌহ ঘাটতি, অ্যাকিউট হিমোলাইসিস (তীব্র লালিকানাশ) বা পরিপাকতন্ত্রের রক্তক্ষরণ। নিদানিক বৈশিষ্ট্যাবলি সাধারণত অন্তর্নিহিত কারণের অনুরূপ এবং রক্তরোধন কদাচিৎ প্রভাবিত হয়। মায়েলোপ্রোলিফারেটিভ রোগ থেকে বিক্রিয়ামূলক অণুচক্রিকাধিক্য আলাদা করা যায় সমরূপ ক্ষুদ্র অণুচক্রিকার উপস্থিতি, প্লীহাবৃদ্ধি না থাকা এবং সংশ্লিষ্ট অন্তর্নিহিত রোগের উপস্থিতি দেখে।[৫২] আবশ্যক থ্রম্বোসাইথিমিয়াতে সর্বদা অণুচক্রিকা সংখ্যা বেশি থাকায় ধামনিক বা শিরাস্থ থ্রম্বোসিস হতে পারে।[৫১]
থ্রম্বোসাইটোসিস বা অণুচক্রাধিক্যের গুরুত্বপূর্ণ কারণসমূহ নিম্নরূপ:
- বিক্রিয়ামূলক অণুচক্রিকাধিক্য
- তীব্র ও দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহমূলক রোগসমূহ
- সংক্রমণ
- সংহারক রোগ
- টিসু ক্ষতি
- হিমোলিটিক রক্তশূন্যতা
- প্লীহাকর্তন পরবর্তী
- রক্তক্ষরণের পর
- ক্লোনাল অণুচক্রিকাধিক্য
- প্রাথমিক থ্রম্বোসাইথিমিয়া
- পলিসাইথিমিয়া রুব্রা ভেরা
- ক্রনিক মায়েলয়েড লিউকিমিয়া
- মায়েলোফাইব্রোসিস (মজ্জাকাঠিন্য)
- মায়েলোডিসপ্লাস্টিক সিনড্রোম
- রিং সিডারোব্লাস্ট ও থ্রম্বোসাইটোসিসসহ মায়েলোডিসপ্লাস্টিক সিনড্রোম
- বিচ্ছিন্ন ৫q বিলোপনসহ মায়েলোডিসপ্লাস্টিক সিনড্রোম
ওষুধবিজ্ঞান
সারাংশ
প্রসঙ্গ
প্রদাহরোধী ওষুধ
প্রদাহের চিকিৎসায় ব্যবহৃত কিছু ওষুধ অবাঞ্ছিতভাবে স্বাভাবিক অণুচক্রিকার কাজকে দমন করে। এগুলোকে নন-স্টেরয়ডাল অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামাটোরি ড্রাগস্ বা প্রদাহ বিরোধী অ-স্টেরয়েড ওষুধ বলে। অ্যাসপিরিন অনিবর্তনীয়ভাবে সাইক্লোঅক্সিজিনেজ-১ (COX1) উৎসেচককে প্রতিনিবৃত্ত করে ফলে অণুচক্রিকার কাজ ব্যাহত হয়। অণুচক্রিকা নতুনভাবে সাইক্লোঅক্সিজিনেজ তৈরি করতে সক্ষম না কারণ এদের ডিএনএ নেই। অ্যাসপিরিনের ব্যবহার বন্ধ না করা পর্যন্ত এবং যথেষ্ট পরিমাণ আক্রান্ত অণুচক্রিকা নতুন দ্বারা প্রতিস্থাপিত না হওয়া পর্যন্ত অণুচক্রিকার স্বাভাবিক কার্যক্রম ফিরে আসবে না, যেটি হতে প্রায় এক সপ্তাহ লাগতে পারে। আইবুপ্রোফেন এত লম্বা সময় ধরে সক্রিয় থাকে না, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অণুচক্রিকার কাজ স্বাভাবিক পর্যায়ে ফিরে আসে[৫৯] এবং অ্যাসপিরিনের পূর্বে আইবুপ্রোফেন সেবন করলে অ্যাসপিরিনের অনিবর্তনীয় প্রভাব ঠেকানো যায়।[৬০]
অণুচক্রিকার কাজ দমনকারী ওষুধ
এ-সকল ওষুধ থ্রম্বাস বা তঞ্চপিণ্ড গঠন প্রতিরোধ ব্যবহৃত হয়।
মুখে সেবনীয় ওষুধ
- অ্যাসপিরিন
- ক্লোপিডোগ্রেল
- সিলোস্টাজল
- টাইক্লোপিডিন
- টাইকাগ্রেলর
- প্রাসুগ্রেল
অণুচক্রিকা উৎপাদন বৃদ্ধিকারক ওষুধ
- থ্রম্বোপোয়েটিন মিমেটিকস
- ডেসমোপ্রেসিন
- ফ্যাক্টর VIIa
অন্তঃশিরা ওষুধ
- অ্যাবসিক্সিম্যাব
- এপটিফাইবাটাইড
- টাইরোফাইব্যান
- অন্যান্য: ওপ্রেলভেকিন, রমিপ্লস্টিম, এলট্রমবোপ্যাগ, আরগ্যাট্রোব্যান
চিকিৎসায় ব্যবহার
সারাংশ
প্রসঙ্গ
সঞ্চারণ
নির্দেশনা
অণুচক্রিকা সংখ্যা অস্বাভাবিকভাবে কমে গেলে হয় স্বতঃস্ফূর্ত রক্তক্ষরণ প্রতিরোধ করার জন্য (সাধারণত <১০×১০৯/L হলে) অথবা রক্তক্ষরণ হতে পারে এমন কিছু শল্যচিকিৎসার পূর্বে অণুচক্রিকা সঞ্চারণ করা হয়। উদাহরণস্বরূপ, অস্ত্রোপচার হবে এমন রোগীর অণুচক্রিকা সংখ্যা <৫০×১০৯/L হলে অস্বাভাবিক রক্তক্ষরণ হতে পারে, অণুচক্রিকা সংখ্যা <৮০×১০৯/L হলে স্থানিক অবেদন পদ্ধতি যেমন এপিডুরাল বা অধিবহির্মাত্রিক অবেদন এড়িয়ে চলা হয়।[৬১] অণুচক্রিকা সংখ্যা স্বাভাবিক কিন্তু এর কার্যক্রম অস্বাভাবিক হলেও অণুচক্রিকা সঞ্চারণ করা যেতে পারে, যেমন কোনো ব্যক্তি অ্যাসপিরিন বা ক্লোপিডোগ্রেল সেবন করলে এমন হয়।[৬২] থ্রম্বোটিক থ্রম্বোসাইটোপিনিক পারপিউরা (তঞ্চনসংক্রান্ত অণুচক্রিকা স্বল্পতামূলক ধূম্ররোগ) রোগে অণুচক্রিকা সঞ্চারণ করা যায় না, কারণ এতে তঞ্চনবিকার বেড়ে যায়।
সংগ্রহ

অণুচক্রিকাসমূহ হয় সংগৃহীত সমগ্র রক্ত থেকে পৃথক করা হয় এবং একটি থেরাপিউটিক বা নিরাময়িক মাত্রা বানানোর জন্য একত্রিত করা হয় অথবা প্লেটলেটফেরিসিস (অণুচক্রিকা বিয়োজন) প্রক্রিয়ায় সংগ্রহ করা হয়: রক্ত দাতার কাছ থেকে নেওয়া হয়, একটি যন্ত্রের মধ্য দিয়ে প্রবেশ করানো হয় যা অণুচক্রিকাসমূহ অপসারণ করে এবং অবশিষ্টাংশ দাতার দেহে একটি বদ্ধ লুপের মধ্য দিয়ে ফিরিয়ে দেয়। শিল্পকারখানার মানদণ্ড অনুযায়ী সঞ্চারণের পূর্বে অণুচক্রিকায় ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি পরীক্ষা করতে হবে যেন বীজাণুঘটিত বিক্রিয়া এড়ানো সম্ভব হয়, কেননা এটি প্রাণঘাতী হতে পারে। সম্প্রতি রক্ত ভাণ্ডার ও রক্ত সঞ্চারণ সেবার জন্য আমেরিকান অ্যাসোসিয়েশন অব ব্লাড ব্যাঙ্ক শিল্পকারখানা মানদণ্ড (৫.১.৫.১) অণুচক্রিকায় ব্যাকটেরিয়া নিরীক্ষণের বিকল্প হিসেবে জীবাণু হ্রাসকরণ প্রযুক্তি ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে।[৬৩]
একত্রিত সমগ্র রক্তের অণুচক্রিকা দুটি পদ্ধতির একটির মাধ্যমে পৃথক করা হয়।[৬৪] যুক্তরাষ্ট্রে, এক ইউনিট সমগ্র রক্তকে একটি বৃহৎ সেন্ট্রিফিউজ বা বিকেন্দ্রক যন্ত্রে রাখা হয়। এই অবস্থায়, অণুচক্রিকাসমূহ রক্তরসে ভাসমান অবস্থায় থাকে। লোহিত কণিকা থেকে অণুচক্রিকা-সমৃদ্ধ রক্তরস (পিআরপি) অপসারণ করা হয়, ইতঃপর রক্তরস থেকে অণুচক্রিকা বের করার জন্য আরও দ্রুতগতিতে সেন্ট্রিফিউজ (বিকেন্দ্রকরণ)করা হয়। বিশ্বের অন্যান্য এলাকায়, সমগ্র রক্তের ইউনিট এমনভাবে সেন্ট্রিফিউজ করা হয় যেন অণুচক্রিকাসমূহ বাফি কোট বা বাদামি-হলদে আস্তরে ভাসমান থাকে, যার মধ্যে অণুচক্রিকা ও শ্বেতকণিকা থাকে। বাফি কোট একটি জীবাণুমুক্ত থলেতে বা ব্যাগে পৃথক করা হয় যা অল্প পরিমাণ লোহিত রক্তকণিকা ও রক্তরস থাকে, ইতঃপর পুনরায় সেন্ট্রিফিউজ করে অণুচক্রিকা ও রক্তরসকে লোহিত ও শ্বেতকণিকা থেকে পৃথক করা হয়। জীবাণুমুক্ত সংযোগ যন্ত্র ব্যবহার করে অনেক দাতার রক্ত থেকে অণুচক্রিকাকে একটি পাত্রে একত্রিত করে কাঙ্ক্ষিত নিরাময়িক মাত্রায় একটি পণ্য উৎপাদন করা হয়। অ্যাফেরিসিস অণুচক্রিকা একটি যান্ত্রিক কৌশল ব্যবহার করে সংগ্রহ করা হয় যা দাতার কাছ থেকে রক্ত টেনে নিয়ে সেন্ট্রিফিউজ করে অণুচক্রিকা ও অন্যান্য উপাদান আলাদা করে অবশিষ্ট রক্ত দাতার দেহে ফেরত পাঠানো হয়। এই পদ্ধতির সুবিধা হলো একক রক্তদান থেকে ন্যূনকল্পে একটি নিরাময়িক মাত্রা পাওয়া যায়, অন্যদিকে অনেক রক্তদাতা থেকে সংগৃহীত অণুচক্রিকায় সঞ্চারণ-বাহিত রোগের ঝুঁকি ও অন্যান্য জটিলতা থাকে। রাইবোফ্লেভিন ও অতিবেগুনি আলোক চিকিৎসা ব্যবহার করে রক্ত থেকে জীবাণু হ্রাস করা যায় এবং সঞ্চারণবাহিত রোগ ছড়ানোর ঝুঁকি হ্রাস করা যায়।[৬৫][৬৬] অ্যামোটোসালেন ও অতিবেগুনি-এ আলোক ব্যবহার করে আরেকটি আলোকরাসায়নিক চিকিৎসা প্রক্রিয়া উদ্ভাবন করা হয়েছে যার মাধ্যমে ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, পরজীবীকে নিষ্ক্রিয় করা যায়।[৬৭]
সংরক্ষণ
যে-কোনো পদ্ধতিতে সংগৃহীত অণুচক্রিকার সংরক্ষণ মেয়াদ খুবই কম, সাধারণত পাঁচ দিন। এর ফলে অণুচক্রিকা সরবরাহের ঘাটতি দেখা দেয়। যেহেতু অণুচক্রিকা সংরক্ষণের কোনো ফলপ্রসূ দ্রবণ নেই, তাই তারা দ্রুত তাদের কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। অণুচক্রিকা অবিরাম ঝাঁকুনি বা আলোড়নের মাধ্যমে ২০–২৪ °C (৬৮–৭৫.২ °F) তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করতে হয়। এটি ফ্রিজে রাখা যায় না, কারণ এতে অণুচক্রিকার আকৃতির পরিবর্তন ঘটে এবং কার্যক্রম নষ্ট হয়ে যায়। কক্ষ তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করলে যে-কোনো ব্যাকটেরিয়া যা সংগ্রহ প্রক্রিয়ার সময় রক্ত উপাদানের সংস্পর্শে আসে, বংশবৃদ্ধি করার উপযুক্ত পরিবেশ পায় এবং রোগীর দেহে ব্যাকটেরিমিয়া (জীবাণুরক্ততা) করতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের বিধি মোতাবেক সঞ্চারণের পূর্বে রক্ত উপাদান ব্যাকটেরিয়া দ্বারা দূষিত হয়েছে কি না তা পরীক্ষা করা আবশ্যক।[৬৮]

গ্রহীতার নিকট বিতরণ
অণুচক্রিকার ক্ষেত্রে অনাক্রম্য সুসঙ্গতি নিশ্চিত করতে দাতা ও গ্রহীতার এ-বি-ও রক্তগ্রুপ একই হওয়া বা ক্রস-ম্যাচিং (রক্তমিল) করা জরুরি না, যদি না এতে যথেষ্ট পরিমাণ লোহিত রক্তকণিকা থাকে। লোহিত রক্তকণিকার উপস্থিতিতে এটি আলোহিত-কমলা রং ধারণ করে এবং সাধারণত সমগ্র-রক্ত অণুচক্রিকার সাথে সংশ্লিষ্ট। গ্রহীতাকে অণুচক্রিকা দেওয়ার পূর্বে সঞ্চারণ-সংশ্লিষ্ট গ্রাফট-বনাম-পোষক রোগ প্রতিরোধ করার জন্য এটিকে তেজনিষ্ক্রিয়তার মাধ্যমে বিশুদ্ধ করা হয়। অণুচক্রিকা সঞ্চারণের পর গ্রহীতার অণুচক্রিকা সংখ্যায় যে পরিবর্তন হয় তাকে ইনক্রিমেন্ট বা বৃদ্ধি বলে এবং এটি গণনা করা হয় প্রাক্-সঞ্চারণ অণুচক্রিকা সংখ্যাকে সঞ্চারণ পরবর্তী অণুচক্রিকা সংখ্যা থেকে বিয়োগ করে। অনেক বিষয় এই বৃদ্ধিকে প্রভাবিত করে যেমন, গ্রহীতার দেহের আকার, সঞ্চারিত অণুচক্রিকার সংখ্যা এবং নিদানিক বৈশিষ্ট্যাবলি যা সঞ্চারিত অণুচক্রিকার অকালিক ধ্বংস ঘটায়। যখন অণুচক্রিকা সঞ্চারণ করার পরেও এর পর্যাপ্ত সংখ্যাবৃদ্ধি ঘটে না, তখন এটিকে অণুচক্রিকা সঞ্চারণ দুশ্চিকিৎস্যতা বলে।
অ্যাফেরিসিস-উদ্ভূত কিংবা দৈবচয়নকৃত দাতা থেকে প্রাপ্ত, উভয় ধরনের অণুচক্রিকাকে একটি আয়তন হ্রাসকরণ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে প্রক্রিয়াজাত করা হয়। এই প্রক্রিয়ায়, অণুচক্রিকা একটি সেন্ট্রিফিউজ বা কেন্দ্রাতিগ ঘূর্ণন যন্ত্রে ঘোরানো হয় এবং অতিরিক্ত রক্তরস অপসারণ করে ১০ থেকে ১০০ মি.লি. ঘনীভূত অণুচক্রিকা রাখা হয়। এরূপ আয়তন-হ্রাসকৃত অণুচক্রিকা সাধারণত কেবল নবজাতক ও শিশুরোগীদের দেওয়া হয় কারণ বেশি আয়তনের রক্তরস শিশুর ক্ষুদ্র সংবহনতন্ত্রকে ভারাক্রান্ত করতে পারে। নিম্নতর আয়তনের রক্তরস প্লাজমা প্রোটিনের প্রতি বিরূপ সঞ্চারণ বিক্রিয়ার সম্ভাবনা কমায়।[৬৯] আয়তন হ্রাসকৃত অণুচক্রিকার মেয়াদ মাত্র চার ঘণ্টা।[৭০] প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য এক ডোজ প্লেটলেট কনসেন্ট্রেট (অণুচক্রিকা ঘনীভবন) তৈরি করতে চার ইউনিট বা ব্যাগ রক্তের প্রয়োজন অথবা অ্যাফেরিসিস প্রক্রিয়ায় একজন দাতার নিকট থেকেই এক ডোজ ঘনীভূত অণুচক্রিকা পাওয়া যায়। প্রতি প্রাপ্তবয়স্ক ডোজে ন্যূনতম ২.৪×১০১১ সংখ্যক অণুচক্রিকা থাকে, যা অণুচক্রিকার সংখ্যা প্রায় ৪০×১০৯/L পর্যন্ত বৃদ্ধি করতে পারে যদি না রোগী কোনো ক্ষয়শীল তঞ্চনবিকার যেমন, ডিসেমিনেটেড ইন্ট্রাভাস্কুলার কোয়াগুলেশন (প্রকীর্ণ অন্তর্বাহ তঞ্চন) রোগে আক্রান্ত থাকে।[৫২]
ক্ষত নিরাময়
রক্তক্ষরণ বন্ধ করার জন্য রক্তপিণ্ড গঠন কেবল একটি ক্ষণস্থায়ী সমাধান; টিসু মেরামত প্রয়োজন। এন্ডোথেলিয়ামের ক্ষুদ্র ব্যাঘাত শারীরবৃত্তীয় কৌশলে নিরাময় হয়; বৃহৎ ব্যাঘাত মেরামতের জন্য আঘাত শল্যবিদের সাহায্য প্রয়োজন।[৭১] প্লাজমিন নামক ফাইব্রিনোলিটিক উৎসেচকের মাধ্যমে ধীরে ধীরে দ্রবীভূত হয়ে যায় এবং অণুচক্রিকাসমূহ ফ্যাগোসাইটোসিস প্রক্রিয়ায় অপসারিত হয়।[৭২]
অণুচক্রিকা থেকে অণুচক্রিকা-উদ্ভূত বৃদ্ধি ফ্যাক্টর নামক একটি শক্তিশালী কেমোট্যাক্টিক (রসানুচলনমূলক) পদার্থ এবং ট্র্যান্সফর্মিং গ্রোথ ফ্যাক্টর বিটা অবমুক্ত হয়, যা বহিঃকোষীয় ম্যাট্রিক্স, ফাইব্রোব্লাস্ট বৃদ্ধি ফ্যাক্টর, ইনসুলিন-সদৃশ বৃদ্ধি ফ্যাক্টর ১, অণুচক্রিকা-উদ্ভূত এপিডার্মাল বৃদ্ধি ফ্যাক্টর ও ভাস্কুলার এন্ডোথেলিয়াল বৃদ্ধি ফ্যাক্টররের অবক্ষেপণকে উদ্দীপিত করে। অণুচক্রিকা-সমৃদ্ধ রক্তরসের মাধ্যমে এ-সকল বস্তুর স্থানিক প্রয়োগ ক্ষত নিরাময়ে অনুবন্ধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।[৭৩]
অন্যান্য প্রাণী
অণুচক্রিকার পরিবর্তে, অস্তন্যপায়ী মেরুদণ্ডী প্রাণীদের নিউক্লিয়াসযুক্ত থ্রম্বোসাইট রয়েছে, যা অঙ্গসংস্থানিক দিক দিয়ে বি- লিম্ফোসাইটের মতো। এগুলো থ্রম্বিনের প্রভাবে সমষ্টীভূত হয়, কিন্তু অণুচক্রিকার মতো এডিপি, সেরোটোনিন, নর-অ্যাড্রেনালিনের প্রভাবে সমষ্টীভূত হয় না।[৭৪][৭৫]
ইতিহাস
সারাংশ
প্রসঙ্গ
- ১৮৪১ সালে জর্জ গালিভার অণুচক্রিকার ছবি এঁকেছিলেন,[৭৬] এতে তিনি ১৮৩০ সালে জোসেফ জ্যাকসন লিস্টার কর্তৃক উদ্ভাবিত যুগ্ম লেন্সযুক্ত (যৌগিক) অণুবীক্ষণযন্ত্র ব্যবহার করেছিলেন।[৭৭] এই অণুবীক্ষণ যন্ত্রে চিত্রের সূক্ষ্মতার অনেক উন্নতি হয়েছিল, ফলে প্রথমবারের মতো অণুচক্রিকা দেখা সম্ভব হয়েছিল।
- ১৮৪২ সালে উইলিয়াম অ্যাডিসন একটি অণুচক্রিকা-ফাইব্রিন রক্তপিণ্ডের চিত্র আঁকেন।[৭৮]
- ১৮৬৪ সালে লিওনেল বিল প্রথমবারের মতো অণুচক্রিকা দৃশ্যমান এমন একটা অঙ্কন প্রকাশ করেন।[৭৯]
- ১৮৬৫ সালে ম্যাক্স শুল্ৎসে অণুচক্রিকার বর্ণনা দেন যাকে তিনি স্ফেরিউল (বর্তুলিকা) নামে আখ্যায়িত করেন; তিনি লক্ষ করেন যে, এগুলো লোহিত রক্তকণিকার চেয়ে ক্ষুদ্রতর, কখনো গুচ্ছাকারে এবং কখনো ফাইব্রিন বস্তুর স্তূপে দেখা যায়।[৮০]
- ১৮৮২ সালে জুলিও বিজজেরো আণুবীক্ষণিকভাবে উভচর প্রাণীর রক্ত নিয়ে পরীক্ষা করেন। তিনি শুল্ৎসের স্ফেরিউল বা বর্তুলিকাকে ইতালি ভাষায় piastrine: ক্ষুদ্র থালা বা প্লেট নাম দেন।[৮১][৮২] সাইন্টিফিক আমেরিকান নামক একটি বৈজ্ঞানিক সঞ্চয়নীতে প্রকাশিত নিবন্ধে দাবি করা হয়েছে যে বিজজেরো Blutplättchen (ব্লুটপ্লেটশেন- জার্মান ভাষায় যার অর্থ অণুচক্রিকা) নাম প্রস্তাব করেছিলেন।[৮৩]
- উইলিয়াম অজলার অণুচক্রিকাকে পর্যবেক্ষণ করেছিলেন এবং ১৮৮৬ সালে প্রকাশিত বক্তৃতায় এগুলোকে তৃতীয় কণিকা ও একটি রক্ত ফলক আখ্যা দিয়েছিলেন; তিনি এগুলোকে একটি বর্ণহীন প্রোটোপ্লাজমিক চাকতি হিসেবে বর্ণনা করেন।[৮৪]
- জেমস রাইট তার নামে নামকরণকৃত রঞ্জক ব্যবহার করে তৈরি করা ব্লাড স্মিয়ার বা রক্তানুলেপ পরীক্ষা করেন এবং তার ১৯০৬ সালের প্রকাশনায় প্লেট্স (থালা) পরিভাষা ব্যবহার করেন,[৮৫] কিন্তু তার ১৯১০ সালের প্রকাশনায় পূর্বের নাম পরিবর্তন করে প্লেটলেট্স (অণুচক্রিকা) রাখেন[৮৬] যা সর্বজনীনভাবে গৃহীত পরিভাষায় পরিণত হয়েছে।
থ্রম্বোসাইট (রক্তপিণ্ড কোষ) পরিভাষাটির ব্যবহার শুরু হয়েছিল ১৯০০ সালের প্রথমদিকে এবং কখনো কখনো প্লেটলেট বা অণুচক্রিকার সমার্থক শব্দ হিসেবে ব্যবহৃত হয়; কিন্তু অণুচক্রিকা-সম্পর্কিত অন্যান্য পরিভাষার মূলশব্দ ব্যতীত (যেমন, থ্রম্বোসাইটোপিনিয়া শব্দের অর্থ অণুচক্রিকাস্বল্পতা) বৈজ্ঞানিক সাহিত্যে সাধারণত ব্যবহৃত হয় না।[৪]:v৩ থ্রম্বোসাইট পরিভাষাটি অস্তন্যপায়ী মেরুদণ্ডী প্রাণীদের রক্তে প্রাপ্ত এককেন্দ্রক কোষের জন্য উপযুক্ত: এগুলো কার্যগত দিক দিয়ে অণুচক্রিকার সমতুল্য, কিন্তু অখণ্ড কোষ হিসেবে সংবাহিত হয় যেখানে মানুষের ক্ষেত্রে অণুচক্রিকা হলো অস্থিমজ্জার মেগাক্যারিওসাইটের সাইটোপ্লাজমীয় খণ্ড।[৪]:৩ কিছু কিছু ক্ষেত্রে, থ্রম্বাস শব্দটি ক্লট বা রক্তপিণ্ড শব্দের বিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত হয়, এক্ষেত্রে এর গঠন বা সংযুতি (সাদা, লাল বা মিশ্র) যাই হোক না কেন। অন্যান্য ক্ষেত্রে এটি অস্বাভাবিক রক্তপিণ্ড থেকে স্বাভাবিক রক্তপিণ্ডকে আলাদা করতে ব্যবহৃত হয়: থ্রম্বাস (তঞ্চপিণ্ড) উদ্ভূত হয় শারীরবৃত্তীয় হিমোস্ট্যাসিস বা রক্তরোধন থেকে, অন্যদিকে থ্রম্বোসিস (অন্তর্তঞ্চন) উদ্ভূত হয় নিদানতাত্ত্বিক ও অত্যধিক পরিমাণ রক্তপিণ্ড থেকে।[৮৭] তৃতীয় ক্ষেত্রে এটি ব্যবহৃত হয় প্রক্রিয়া থেকে ফলাফল আলাদা করার জন্য: থ্রম্বাস (তঞ্চপিণ্ড) হলো ফল, অন্যদিকে থ্রম্বোসিস (অন্তর্তঞ্চন) হলো প্রক্রিয়া।
তথ্যসূত্র
বহিঃসংযোগ
Wikiwand - on
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.