Loading AI tools
উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
ম্যাক্রোফেজ (ইংরেজি: Macrophage) (সংক্ষেপে Mφ, MΦ অথবা MP) (গ্রিক: বৃহৎ ভক্ষক, গ্রিক μακρός থেকে(makrós) = বৃহৎ, φαγεῖν (phagein) = ভক্ষণ করা) হলো দেহের প্রতিরক্ষাব্যবস্থার একটি কোষ। এটি এক ধরনের শ্বেত রক্তকণিকা যা কোষীয় ধ্বংসাবশেষ, দেহের বহিরাগত বস্তু, অণুজীব, ক্যান্সার কোষ প্রভৃতিকে ভক্ষণ করে।[2] ম্যাক্রোফেজ যে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এসব ভক্ষণ কাজ সম্পাদন করে তাকে ফ্যাগোসাইটোসিস বলে। এসকল বৃহৎ ফ্যাগোসাইট বা ভক্ষককোষ প্রায় সকল জরুরি কোষেই বিদ্যমান।[3] যেখানে তারা অ্যামিবাসদৃশ চলনের মাধ্যমে সম্ভাব্য অণুজীবদের জন্য পাহারা দেয়। সারা শরীরে তারা বিভিন্ন আকৃতি (বিভিন্ন নামসহ) ধারণ করে যেমন, হিস্টিওসাইট, কুপফার কোষ, অ্যালভিওলার ম্যাক্রোফেজ, মাইক্রোগ্লাইয়া ইত্যাদি। তবে এরা সবাই একক নিউক্লিয়াসযুক্ত ফ্যাগোসাইট ব্যবস্থার অন্তর্ভুক্ত। টিসু ম্যাক্রোফেজের জীবনচক্র শুরু হয় মনোসাইট হিসেবে। মনোসাইট অস্থি মজ্জায় তৈরি হয়ে রক্তে আসে। অতঃপর সেখানে প্রায় ৭২ ঘণ্টা অবস্থান করে। রক্তে অবস্থানকালীন মনোসাইট অপরিপক্ব অবস্থায় থাকে এবং ঐ সময় সংক্রমণকারী বস্তুর বিরুদ্ধে লড়াই করার সক্ষমতা খুব বেশি থাকে না। যখন তারা টিসুতে প্রবেশ করে তখন তারা স্ফীত হতে শুরু করে। কখনো কখনো তাদের ব্যাস পাঁচগুণ বৃদ্ধি পেয়ে ৬০-৮০ মাইক্রোমিটার পর্যন্ত হয়। টিসুতে প্রবেশ করার পর তাদের নাম হয় টিসু ম্যাক্রোফেজ। তারা টিসুতে সংক্রমণকারী জীবাণুদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অত্যন্ত সক্ষম। ম্যাক্রোফেজ দেহের সহজাত প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। অভিযোজনমূলক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাতেও সাহায্য করে। মানুষের ক্ষেত্রে ম্যাক্রোফেজের ব্যাস ২১ মাইক্রোমিটার (০.০০০৮৩ ইঞ্চি) হয়ে থাকে।[4] রাশিয়ার প্রাণীবিজ্ঞানী ইলিয়া মিয়েচ্নিকফ ১৮৮৪ সালে প্রথম ম্যাক্রোফেজ আবিষ্কার করেন।[5]
ম্যাক্রোফেজ | |
---|---|
বিস্তারিত | |
উচ্চারণ | /ˈmakrə(ʊ)feɪdʒ/ |
তন্ত্র | অনাক্রম্যতন্ত্র |
কাজ | ফ্যাগোসাইটোসিস বা কোষ ভক্ষণ |
শনাক্তকারী | |
লাতিন | Macrophagocytus |
আদ্যক্ষরা | Mφ, MΦ |
মে-এসএইচ | D008264 |
টিএইচ | H2.00.03.0.01007 |
এফএমএ | FMA:63261 |
মাইক্রো শারীরস্থান পরিভাষা |
দেহের যেসব অঞ্চলে অণুজীব আক্রমণ বা বাহ্যিক কণা সঞ্চিত হওয়ার সম্ভাবনা আছে সেসব অঞ্চলে অধিকাংশ ম্যাক্রোফেজ অবস্থান করে। এসব কোষগুলোকে একত্রে মনোনিউক্লিয়ার ফ্যাগোসাইট সিস্টেম বলে যা পূর্বে রেটিকিউলোএন্ডোথেলিয়াল সিস্টেম নামে পরিচিত ছিল। প্রত্যেকটি ম্যাক্রোফেজের অবস্থান অনুযায়ী সুনির্দিষ্ট নাম আছে:
কোষের নাম | অবস্থান |
অ্যাডিপোস টিসু ম্যাক্রোফেজ | অ্যাডিপোস টিসু (স্নেহ পদার্থ) |
মনোসাইট | অস্থি মজ্জা/রক্ত |
কুপফার কোষ | যকৃৎ |
সাইনাস হিস্টিওসাইট | লিম্ফ নোড |
অ্যালভিওলার ম্যাক্রোফেজ (ধুল কোষ) | ফুসফুসীয় বায়ুথলি |
টিসু ম্যাক্রোফেজ (হিস্টিওসাইট) থেকে উদ্ভূত দানব কোষ | যোজক কলা |
মাইক্রোগ্লাইয়া | কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র |
হফবাউয়ার কোষ | অমরা |
ম্যাসেঞ্জিয়াল কোষ[6] | বৃক্ক |
অস্টিওক্লাস্ট | অস্থি |
এপিথেলিওয়েড কোষ | গ্রানুলোমা |
লোহিত শাঁস ম্যাক্রোফেজ (সাইনুসয়েডের আবরণী কোষ) | প্লীহার লোহিত শাঁস |
পেরিটোনিয়াল ম্যাক্রোফেজ | পেরিটোনিয়াল গহ্বর |
লাইসোম্যাক[7] | পিয়ার্স প্যাচ |
প্রাপ্তবয়স্ক সুস্থ টিসুতে যে ম্যাক্রোফেজসমূহ থাকে তা হয় প্রবহমান মনোসাইট থেকে উদ্ভূত হয় অথবা জন্মের পূর্ব থেকে সৃষ্ট এবং প্রাপ্তবয়স্ক অবস্থাতেও মনোসাইট ছাড়াই সৃষ্ট হয়।[8][9] তবে রোগস্থলে যেসকল ম্যাক্রোফেজ জমায়েত হয় তা সাধারণত প্রবহমান মনোসাইট থেকে উদ্ভূত হয়।[10]
ম্যাক্রোফেজ হলো পেশাদার ভক্ষক কোষ এবং মৃত কোষ ও কোষীয় ধ্বংসাবশেষ অপসারণে অত্যন্ত বিশেষায়িত কোষ।[11] ম্যাক্রোফেজ হলো মনোসাইট উদ্ভূত কোষ যা রক্ত থেকে টিসুতে প্রবেশ করে। রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থা দ্বারা সক্রিয় হলে তারা নিউট্রোফিলের চেয়েও অধিকতর শক্তিশালী কোষ ভক্ষক। তারা প্রায়শই ১০০ টি ব্যাকটেরিয়াও ভক্ষণ করতে সক্ষম। তারা অনেক বৃহৎ কণা যেমন লোহিত রক্ত কণিকা অথবা ম্যালেরিয়া পরজীবীকেও ভক্ষণ করতে সক্ষম অথচ নিউট্রোফিল ব্যাকটেরিয়ার তুলনায় বৃহৎ বস্তুকেও ভক্ষণ করতে সক্ষম নয়। বস্তুকণা কে ভক্ষণের পর অবশিষ্টাংশকে দেহের বাইরে বের করে দিয়ে বেঁচে থাকতে পারে এবং আরও কয়েকমাস কাজ চালিয়ে যেতে পারে। দেহের প্রদাহ বর্ধিতকরণ ও নিয়ন্ত্রণে ম্যাক্রোফেজ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। টিসু নজরদারিতে ম্যাক্রোফেজের ভূমিকা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তারা প্রতিনিয়ত তাদের পারিপার্শ্বিক এলাকায় টিসু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কি না কিংবা অণুজীব আক্রমণ ঘটেছে কি না তা নজরদারি করে। এছাড়াও ম্যাক্রোফেজের আরও বহুবিধ কাজ রয়েছে।[12][13][14][15][16] তারা দেহের ঝাড়ুদার হিসেবে কাজ করে। তারা দেহ থেকে মৃত ও ক্ষয়ে যাওয়া কোষ এবং অন্যান্য কোষীয় ধ্বংসাবশেষ পরিষ্কার করে। ডেন্ড্রাইটিক কোষের সাথে এরাও অ্যান্টিজেন উপস্থাপনে ভূমিকা রাখে যা দেহের প্রতিরক্ষাব্যবস্থায় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ক্ষরণকারী কোষ হিসেবে মনোসাইট ও ম্যাক্রোফেজ প্রতিরক্ষায় সাড়াদানের নিয়ন্ত্রণ ও প্রদাহ সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তারা বিভিন্ন ধরনের শক্তিশালী রাসায়নিক পদার্থ ( মনোকাইন) তৈরি করে, তন্মধ্যে রয়েছে উৎসেচক, কমপ্লিমেন্ট প্রোটিন ও নিয়ন্ত্রণমূলক বস্তু যেমন ইন্টারলিউকিন-১ ।
ক্ষত নিরাময়ে ম্যাক্রোফেজের আবশ্যক ভূমিকা রয়েছে।[17] ক্ষত হওয়ার দ্বিতীয় দিন থেকে ক্ষতস্থানের প্রধান কোষ হিসেবে ম্যাক্রোফেজ পলিমরফোনিউক্লিয়ার নিউট্রোফিল কে প্রতিস্থাপিত করে। [18] অণুচক্রিকা ও অন্যান্য কোষ কর্তৃক ক্ষরিত বৃদ্ধি ফ্যাক্টর দ্বারা আকৃষ্ট হয়ে রক্তপ্রবাহ থেকে মনোসাইট রক্তবাহ প্রাচীরের মধ্য দিয়ে ক্ষতস্থানে পৌঁছায়।[19] ক্ষতস্থানে মনোসাইটের সংখ্যা চূড়ায় পৌঁছায় ক্ষত হওয়ার এক থেকে দেড় দিন পরে। ক্ষতস্থানে পৌঁছানোর পর মনোসাইট পরিপক্ব হয়ে ম্যাক্রোফেজে পরিণত হয়। প্লীহাতে দেহের অর্ধেক মনোসাইট সংরক্ষিত থাকে।[20][21]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.