Loading AI tools
বেশিরভাগ মেরুদণ্ডী প্রাণির অভ্যন্তরীণ অঙ্গ উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
পেটের বামভাগের উপরদিকে অবস্থিত একটি অঙ্গ।[1] এটি লসিকাতন্ত্রের এবং রক্ত সংবহন তন্ত্রের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। কথ্য বাংলায় প্লীহাকে পিলে বলা হয়, ইংরেজিতে স্প্লিন( Spleen)। বিভিন্ন মনুষ্যেতর প্রাণীর রক্তের আয়তন প্লীহার সঙ্কোচন দ্বারা সাময়িক ভাবে বর্ধিত হতে পারে (অর্থাৎ রক্তের "রিজার্ভার" হিসাবে কাজ করে,[2])।
একজন স্বাস্থ্যবান পূর্ণবয়স্ক মানুষের প্লীহা দৈর্ঘ্যে প্রায় ৭ সে.মি (২.৮ ইঞ্চি) থেকে ১৪ সে.মি (৫.৫ ইঞ্চি) পর্যন্ত হতে পারে।[3] সাধারণঅত প্লীহার ওজন ১৫০ গ্রাম থেকে ২০০ গ্রামের মত হয়।[4] প্লীহার অবস্থান নবম দশম ও একাদশ পাঁজরের ঝুলন্ত (স্টার্নামের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত নয়) অংশের পিছনে মধ্যচ্ছদার ঠিক নিচেই। এর উত্তল বহিরাংশ মধ্যচ্ছদাকে স্পর্শ করে থাকে (ছবি এই তলটির উলটো দিক থেকে তোলা)। এর ভিতরের অবতল তলগুলির সামনের অংশটি পাকস্থলীকে স্পর্শ করে, আর পিছনের অংশ বাম বৃক্ককে স্পর্শ করে।[5]
অন্ত্রের অন্যান্য অঙ্গের তুলনায় প্লীহার গঠন অনন্য। অধিকাংশ অন্ত্রীয় অঙ্গ এন্ডোডার্মাল টিস্যু থেকে উৎপন্ন হলেও প্লীহার উৎপত্তি মেসেনকাইমা টিস্যু থেকে। [6]
শিশু অবস্থায় দেহে লোহিত রক্তকণিকা তৈরি করা। প্লীহা লিম্ফোসাইট তৈরি করে। এন্টি বডি তৈরি করে দেহ সুরক্ষার কাজ করে।[7]
প্লীহার মধ্যে অনাক্রম্যতন্ত্রের একটি বড় অংশ থাকে। তাই অস্ত্রোপচার করে প্লীহা বাদ দিলে ক্যাপ্সুলধারী ব্যাক্টেরিয়াদের দ্বারা ইনফেকশন হবার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। কিছু কিছু রোগে প্লীহা বড় হয়। প্রাচীন বাংলায় ম্যালেরিয়া ছিল তাদের অন্যতম (বঙ্গদেশে ম্যালেরিয়া এত বেশি ছিল যে একে ম্যালেরিয়া "হাইপার-এন্ডেমিক" অঞ্চল বলা হত)। ম্যালেরিয়াকে কথ্য বাংলায় পিলের জ্বর বলা হত এবং বাংলার শিশুদের পীলে সারা বছর বার বার ম্যালেরিয়ার ফলে স্ফীত ও কালো হয়ে থাকত বলে এই ঘটনাকে ইংরাজীতে হাইপারস্প্লেনিজম বলা হয়। তবে কালাজ্বর, থ্যালাসেমিয়া, ক্রনিক মায়োলয়েড লিউকেমিয়া ইত্যাদি আরো নানা রোগে প্লীহা বৃদ্ধি হতে পারে। বর্ধিত না হলে প্লীহা পাঁজরের পিছনেই গুপ্ত থাকে তাই পেটের নরম অংশ টিপলে সরাসরি ছোঁয়া যায়না। সাধারণতঃ দীর্ঘ অক্ষ দশম পাঁজরের সমান্তরাল থাকে এবং বুক ভরে শ্বাস নিলে দশম পাঁজরের শীর্ষের কাছে হাত রাখলে অভিজ্ঞ ডাক্তাররা প্লীহার একটু অংশ স্পর্শ করতে পারেন। প্লীহা কোনো রোগের কারণে খুব বড় হয়ে গেলে পেটের মধ্যে অনেকটা নিচ অবধি চলে আসে। তখন পেটে সামান্য চোট থেকেও প্লীহা ছিঁড়ে যেতে পারে। প্লীহা ছিঁড়ে গেলে সঙ্গে সঙ্গে অস্ত্রোপোচার করে প্লীহাকে বাদ না দিলে পেটের মধ্যে খুব বেশি রক্তপাত হয়ে মৃত্যও ঘটতে পারে।
প্লীহার গঠন অতিরিক্ত ব্যায়াম ও হাইপোক্সিক গ্যাসের দরুণ ৪০% পর্যন্ত কমে যায় বলে প্রমাণিত হয়েছে।[8]
সিকল সেল এনিমিয়ার মতো বিভিন্ন রোগের কারণে , ট্রমা বা অন্য কোন কারণে প্লীহার কর্মক্ষমতা হারিয়ে গেলে এস্প্লেনিয়া রোগ হয়।[9] হাইপোস্প্লেনিয়ার ক্ষেত্রে কিছুটা কর্মক্ষম প্লীহাকে বোঝায়। এছাড়াও, কোন অস্ত্রোপাচারে স্প্লেনেকটোমি বা প্লীহা অপসারণ করা হলেও এস্প্লেনিয়া হতে পারে।[10] দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ২৮ বছর বয়েসী ৭৪০ জনেরও বেশি সৈন্যদের প্লীহা অপসারণ করে দেখা গিয়েছিল তাদের নিউমোনিয়াতে মৃত্যু হার অনেক বেশি। গড়ে ১.৩ জনের তুলনায় প্রায় ৬জন। এছাড়াও ইশেমিক হৃদরোগেও এই মৃত্যুহার ৩০ জনের স্থলে ৪১ জন হয়েছিল।[11]
প্রায় ১০% মানুষের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত প্লীহা দেখা যায়।[12] ভ্রুণাবস্থার প্রাথমিক দশায় প্লীহার সাথে অতিরিক্ত ঝিল্লির মতো অতিরিক্ত প্লীহা বা অলঙ্কারিক প্লীহা দেখতে পাওয়া যায়। একাধিক এই ধরনের অতিরিক্ত প্লীহার দরুণ পলিস্প্লেনিয়া নামক রোগ হয়।[13]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.