Loading AI tools
হিন্দুধর্মের প্রধান ধর্মগ্রন্থ এবং পৃথিবীর সর্বপ্রাচীন সাহিত্য উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
বেদ (সংস্কৃত: वेद, "জ্ঞান") হল প্রাচীন ভারতে লিপিবদ্ধ একাধিক গ্রন্থের একটি বৃহৎ সংকলন। ছান্দস্ ভাষায় রচিত বেদই ভারতীয় সাহিত্যের প্রাচীনতম নিদর্শন এবং সনাতন ধর্মের সর্বপ্রাচীন পবিত্র ধর্মগ্রন্থ।[৪][৫] সনাতনীরা বেদকে "অপৌরুষেয়" ("পুরুষ বা লোক" দ্বারা কৃত নয়, অলৌকিক)[৬] এবং "নৈর্বক্তিক ও রচয়িতা-শূন্য" (যা সাকার নির্গুণ ঈশ্বর-সম্বন্ধীয় এবং যার কোনও রচয়িতা নেই)[৭][৮][৯] মনে করেন। আর্ষ শাস্ত্র অনুযায়ী পরব্রহ্মই সৃষ্টির আদিতে মানব হিতার্থে বেদের জ্ঞান প্রকাশ করেন। সর্বপ্রথম অগ্নি, বায়ু, আদিত্য ও অঙ্গিরা এই চার ঋষি চার বেদের জ্ঞান প্রাপ্ত হন। এবং পরবর্তিতে তাঁরা অন্যান্য ঋষিদের মাঝে সেই জ্ঞান প্রচার করেন এবং অলিপিবদ্ধভাবে পরাম্পরার মাধ্যমে তা সংরক্ষিত হয়ে এসেছে।[১০][১১] আর্যসমাজের প্রতিষ্ঠাতা মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতী এই চার ঋষিকে শরীরধারী মানুষ বলেছেন।[১২] পুস্তক আকারে প্রাপ্ত বেদ আধুনিক হলেও এর জ্ঞানকে শাশ্বত বলে অনেক নৈষ্ঠিক পণ্ডিত মনে করেন। পাশ্চাত্যের অনেক গবেষক ভাষাগত রচনাশৈলি, প্রত্নতাত্তিক প্রমাণাদির উপর নির্ভর করে বেদের রচনাকাল আনুমানিক ১৫০০ থেকে ৮০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ হিসাবে ধারণা করেন।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
বেদ | |
---|---|
তথ্য | |
ধর্ম | হিন্দুধর্ম |
ভাষা | বৈদিক সংস্কৃত |
যুগ | আনু. ১৫০০–১২০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ (ঋগ্বেদ),[১] আনু. ১২০০–৯০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ (যজুর্বেদ, সামবেদ, অথর্ববেদ)[১][২] |
মন্ত্র | ২০,৩৭৯টি মন্ত্র[৩] |
বেদকে শ্রুতি (যা শ্রুত হয়েছে) সাহিত্যও বলা হয়। কারণ বেদের লিখিত কোনো বই বা পুস্তক আকারে ছিল না। বৈদিক ঋষিরা বেদমন্ত্র মুখে মুখে উচ্চারণ করে তাদের শিষ্যদের শোনাতেন, আর শিষ্যরা শুনে শুনেই বেদ অধ্যায়ন করতেন।[১৩] এইখানেই সনাতন ধর্মের অন্যান্য ধর্মগ্রন্থগুলোর সঙ্গে বেদের পার্থক্য। সনাতন ধর্মের অন্যান্য ধর্মগ্রন্থগুলোকে বলা হয় স্মৃতি (যা স্মরণধৃত হয়েছে) সাহিত্য। সনাতন মহাকাব্য মহাভারতে ব্রহ্মা বেদ প্রাপ্ত হয়েছেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে।[১৪] যদিও বৈদিক স্তোত্রগুলোতে বলা হয়েছে, একজন সূত্রধর যেমন নিপূণভাবে রথ নির্মাণ করেন, ঠিক তেমনই ঋষিগণ দক্ষতার সঙ্গে বেদ গ্রন্থনা করেছেন।[১০]
বেদের সংখ্যা চার: ঋগ্বেদ, যজুর্বেদ, সামবেদ ও অথর্ববেদ।[১৫][১৬] এতে মোট মন্ত্র সংখ্যা ২০৩৭৯টি। প্রত্যেকটি বেদ আবার চারটি প্রধান ভাগে বিভক্ত: সংহিতা (মন্ত্র ও আশীর্বচন), ব্রাহ্মণ (ধর্মীয় আচার, ধর্মীয় অনুষ্ঠান ও যজ্ঞাদির উপর টীকা), আরণ্যক (ধর্মীয় আচার, ধর্মীয় ক্রিয়াকর্ম, যজ্ঞ ও প্রতীকী যজ্ঞ) ও উপনিষদ্ (ধ্যান, দর্শন ও আধ্যাত্মিক জ্ঞান-সংক্রান্ত আলোচনা)।[১৫][১৭][১৮] কোনও কোনও গবেষক উপাসনা (পূজা) নামে একটি পঞ্চম বিভাগের কথাও উল্লেখ করে থাকেন।[১৯][২০]
ভারতীয় দর্শনের বিভিন্ন শাখা ও সনাতন ধর্মের বিভিন্ন সম্প্রদায় বেদ সম্পর্কে ভিন্ন ভিন্ন অবস্থান গ্রহণ করে থাকে। ভারতীয় দর্শনের যে সকল শাখা বেদের প্রামাণ্যতা স্বীকার করে এবং বেদকেই তাদের শাস্ত্রের প্রমাণ হিসেবে গ্রহণ করে, সেগুলোকে "আস্তিক" শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত করা হয়।[note ১] অন্যদিকে ভারতীয় দর্শনের লোকায়ত, চার্বাক, আজীবক, বৌদ্ধ ও জৈন প্রভৃতি অন্যান্য শ্রামণিক শাখায় বেদের প্রামাণ্যতা স্বীকৃত নয়। এগুলোকে "নাস্তিক" শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত করা হয়।[২২][২৩] মতপার্থক্য থাকলেও শ্রামণিক ধারার গ্রন্থগুলোর মতো বেদের বিভিন্ন স্তরের বিভাগগুলোতেও একই চিন্তাভাবনা ও ধারণাগুলো আলোচিত হয়েছে।[২২]
বেদ শব্দটি সংস্কৃত: “বিদ্” ধাতু থেকে নিষ্পন্ন। “বিদ্” ধাতু দ্বারা “জ্ঞানার্থ”, “সত্যার্থ”, “লাভার্থ” ও “বিচারার্থ” এই চার প্রকার অর্থ নির্দেশ করে। “বিদ্” ধাতু করণ এবং অধিকরণ কারকে “ঘঞ্” প্রত্যয় যোগ করলে “বেদ” শব্দ সিদ্ধ হয়ে থাকে। বেদ শব্দটি মুখ্য ও গৌণ দুই অর্থ হয়ে থাকে। মুখ্যার্থ-জ্ঞানরাশি; আর গৌণার্থ-শব্দরাশি। বৈদিক জ্ঞানরাশি আত্মপ্রকাশ করে বৈদিক শব্দরাশির সাহায্যে। বেদগ্রন্থকে শব্দব্রহ্ম (বেদগ্রন্থ অনন্তপুরুষ পরব্রহ্মের বাগ্ময়ী মূর্তি) বলা হয়। বেদ শ্রুতি, ত্রয়ীবিদ্যা বা ত্রয়ী, নিগম, ছন্দস্ ইত্যাদি নামে পরিচিত।
কাত্যায়ণের মতে বেদের মূলত দুটি অংশ—মন্ত্র ও ব্রাহ্মণ। মন্ত্র ভাগকে ‘সংহিতা’-ও বলা হয়। সংহিতাগুলো যথাক্রমে ঋগ্বেদ সংহিতা, সামবেদ সংহিতা, যজুর্বেদ সংহিতা এবং অথর্ববেদ সংহিতা। মন্ত্রাংশ গদ্যে, পদ্যে ও গীতিতে রচিত। এটাই বেদের প্রধান অংশ। ব্রাহ্মণ অংশের দুটি ভাগ—আরণ্যক ও উপনিষদ্। ব্রাহ্মণের অন্তিম অংশ আরণ্যক এবং আরণ্যেকের অন্তিম অংশ হচ্ছে উপনিষদ্।
আবার বেদকে কর্মকাণ্ড ও জ্ঞানকাণ্ড দুটি বিভাগে পৃথক করা হয়েছে। ব্রাহ্মণগ্রন্থ যজ্ঞক্রিয়ার বর্ণনা থাকায় তা কর্মকাণ্ডের অংশ। অপরদিকে আরণ্যক ও উপনিষদ্ জ্ঞানকাণ্ডের অংশ।
আর্য সমাজের প্রতিষ্ঠাতা মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতীর মতে কেবল মন্ত্রভাগ সংহিতাই হচ্ছে বেদ। তার মতে ব্রাহ্মণ অংশটি বেদের অন্তর্ভুক্ত নয়। এর কারণ হিসেবে তিনি পতঞ্জলির মতকে উদ্ধৃত করেছেন, ব্রাহ্মণ অংশ ঋষিপ্রণীত যা বেদের ব্যাখ্যার বর্ণনা হয়েছে।[২৫] অন্যদিকে মন্ত্রাংশ কেবল ঈশ্বরপ্রণীত বেদ।[২৬]
বেদের প্রাচীনতম অংশটিকে ‘সংহিতা’ বলা হয় যা হিন্দু সমাজে আজও প্রচলিত।[২৭] তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে, বেদ বলতে কেবল সংহিতা ভাগকেই বুঝানো হয়ে থাকে। সংহিতার আক্ষরিক অর্থ হচ্ছে, “একত্রিত, মিলিত, যুক্ত” এবং “নির্দিষ্ট পদ্ধতি ও নিয়ম অনুসারে একত্রিত গ্রন্থ বা মন্ত্র-সংকলন”।[২৮][২৯] “ঋক্ সংহিতা”, “যজুঃ সংহিতা”, “সামসংহিতা,” এবং “অথর্বসংহিতা” এই চারটি সংহিতা বা মন্ত্র সংকলন রয়েছে। এতে রয়েছে মন্ত্র, স্তোত্র, স্তব, স্তুতি, প্রার্থনা, ও আশীর্বচনের সংকলন।[২৭] এর মধ্যে প্রথম তিনটি ঐতিহাসিক বৈদিক ধর্মের যজ্ঞ অনুষ্ঠান-সংক্রান্ত:
পৌরাণিক সাহিত্য ও কিংবদন্তি অনুসারে, অখণ্ড বেদের বিভাগকর্তা ছিলেন বেদব্যাস।[৩০][৩১][৩২] দ্বাপর যুগে মানুষের বয়স, গুণ ও বোধশক্তির অধঃপতনের জন্য তিনি বেদকে চারটি (মতান্তরে তিনটি) ভাগে ভাগ করেন। এর জন্য তার নাম হয় বেদব্যাস। এই ভাগগুলোকে তিনি অসংখ্য শাখায় বিভক্ত করেছিলেন। ভাগবত পুরাণের অন্য একটি কাহিনি অনুসারে, ত্রেতা যুগের সূচনায় রাজা পুরুরবা আদি বেদকে তিন ভাগে ভাগ করেছিলেন।[৩৩]
ঋগ্বেদ | যজুর্বেদ | সামবেদ | অথর্ববেদ (অপর নাম ব্রহ্মবেদ) |
---|---|---|---|
মন্ত্র: ১০,৫৫২টি
সুক্ত: ১,০২৮ টি মণ্ডল: ১০টি |
মন্ত্র: ১,৯৭৫টি
অধ্যায়: ৪০টি |
মন্ত্র: ১,৮৭৫টি
আর্চিক: ৩টি (পূর্বার্চিক, মহানাম্নিআর্চিক এবং উত্তরার্চিক) |
মন্ত্র: ৫,৯৭৭টি
কাণ্ড: ২০টি |
মোট মন্ত্র: ২০৩৭৯ টি |
বেদের এই অংশে মন্ত্রাংশের বিবিধ আলোচনা ও যজ্ঞে তার ব্যবহার তথা যজ্ঞ প্রক্রিয়া সম্পর্কে বিস্তৃত বিবরণ, মন্ত্রের যাগে বিনিয়োগ, শব্দের ব্যুৎপত্তি ও ছন্দবিষয়ক আলোচনা এবং ইতিহাস পুরাকীর্তি যজ্ঞফলনিষ্ঠ আলোচনা হয়েছে। এই অংশটি গদ্যে রচিত।
বেদের সংহিতা, ব্রাহ্মণ, আরণ্যক, ও উপনিষদ্ যথরীতি পাঠের জন্য এবং তাদের অর্থবোধ এবং বিনিয়োগ সহায়ক অঙ্গ হচ্ছে বেদাঙ্গ। বেদাঙ্গ ৬টি। একে ষড়ভঙ্গ বা বেদের ছয় অঙ্গ স্বরূপ বলা হয়। এই ষড় বেদাঙ্গগুলো হলো:[৪৯]
ঐতিহ্যগত সাহিত্যে কিছু প্রযুক্তিগত কাজের বিষয় নির্ধারণের জন্য উপবেদ শব্দটি ব্যবহৃত হয়। এই শ্রেণীতে কি কি বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে তার তালিকা উৎসের মধ্যে ভিন্ন। চরণব্যুহ চারটি উপবেদের উল্লেখ করেছেন:
লিপিদ্ধভাবে সংরক্ষণের নিয়ম প্রচলনের পূর্বে বৈদিক ঋষিরা বেদমন্ত্র মুখে মুখে উচ্চারণ করে তাদের শিষ্যদের শোনাতেন, আর শিষ্যরা শুনে শুনে তা আয়ত্ত করতেন।[১৩][২৪] বেদের মৌখিক সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে মন্ত্রে কোনোপ্রকার প্রক্ষিপ্ত অংশ বা বিকার প্রবেশ করতে না পারে, তার জন্য প্রাচীন ঋষিগণ বিবিধ উপায় আবিষ্কার করেছিলেন। মৌখিক সংরক্ষণের উপায়গুলোকে জাতিসংঘের সাংস্কৃতিক সংস্থা, ইউনেস্কো, আনুষ্ঠানিকভাবে মৌখিক ইতিহাসের বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।[৫৬][৫৭]
ঋগ্বেদের মন্ত্র সংরক্ষণের জন্য সর্বমোট ১১ প্রকার পাঠ পদ্ধতি রয়েছে। এর মধ্যে ৩টিকে প্রকৃতিপাঠ ও ৮টিকে বিকৃতিপাঠ বলা হয়। সংহিতাপাঠ, পদপাঠ, ক্রমপাঠ এই তিনটি হচ্ছে প্রকৃতিপাঠ। জটা, মালা, শিখা, লেখা, ধ্বজ, দণ্ড, রথ এবং ঘন এই ৮টি হচ্ছে বিকৃতিপাঠ। প্রকৃতিপাঠের মাঝে সংহিতাপাঠ ও পদপাঠ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এবং বিকৃতিপাঠের মাঝে জটাপাঠ ও দণ্ডপাঠ গুরুত্বপূর্ণ। আর ঘনপাঠের উৎস জটাপাঠ ও দণ্ডপাঠ উভয়ই।[২৪][৫৮] ঋগ্বেদ ১।১।১ মন্ত্রটির কয়েকটি পাঠ:
অগ্নিমীড়ে পুরোহিতং
যজ্ঞস্য দেবমৃত্বিজম্।
হোতারং রত্নধাতমম্
অগ্নিম্ | ঈড়ে | পুরঃ S হিতম্ |
যজ্ঞস্য | দেবম্ | ঋত্বিজম্ |
হোতারম্ | রত্ন S ধাতমম্ |
অগ্নিম্ ঈড়ে | ঈড়ে অগ্নিম্ | অগ্নিম ঈড়ে পুরোহিতম্ |
পুরোহিতম্ ঈড়ে অগ্নিম্ | অগ্নিম্ ঈড়ে পুরোহিতম্ |
ঈড়ে পুরোহিতম্ | পুরোহিতম্ ঈড়ে | পুরোহিতং যজ্ঞস্য |
যজ্ঞস্য পুরোহিতম্ ঈড়ে | ঈড়ে পুরোহিতং যজ্ঞস্য | ...
হিন্দু বিশ্বাসিদের মতে বেদ অপৌরুষেয় এবং নিত্য।[৬][৭][৮] অর্থাৎ বেদের উৎপত্তি বা বিনাশ নেই। সকল সময়ই বেদের অস্তিত্ব রয়েছে। কোনো একটি বিশেষ যুগে বেদ প্রকাশিত হয়েছিল, এ কথা স্বীকার করেন না। কিন্তু প্রাচ্য ও প্রতীচ্য উভয় পণ্ডিতরা বেদকে ঋষিপ্রণীত বলে মনে করেন এবং বেদের উৎপত্তিকাল নির্ণয়ের চেষ্টা করেছেন। অবশ্য, বেদের রচনাকাল সম্বন্ধে পণ্ডিতগণ একমত নয়। তবে বিভিন্ন ব্যাক্তির মত হতে সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়, বেদের সংহিতা ভাগের সূচনা ৬০০০ খ্রিস্টপূর্বে; ব্রাহ্মণ ও আরণ্যকের সূচনা ৩০০০ খ্রিস্টপূর্বে; উপনিষদের সূচনা ১৫০০ খ্রিস্টপূর্বে হয়েছিল। এবং এর শেষ হয়েছিল ১০০০ খ্রিস্টপূর্বে। এগুলোর মাঝে ঋগ্বেদ সংহিতা হচ্ছে সবচেয়ে প্রাচীন।[২৪] বেদের কাল নির্ণয়ের জন্য জ্যোতিষতত্ত্ব, ভাষাতত্ত্ব, উদ্ভিদতত্ত্ব ও প্রাণীতত্ত্ব, ভূতত্ত্ব প্রভৃতি ব্যবহৃত হয়েছে।
বাল গঙ্গাধর তিলক[৫৯][৬০] | প্রাচীন সংহিতা: খ্রিস্টপূর্ব ৬০০০-৪০০০ পর্যন্ত।
পরবর্তী সংহিতা ও ব্রাহ্মণ: খ্রিস্টপূর্ব ৪০০০-২৫০০ পর্যন্ত। ব্রাহ্মণ, আরণ্যক, উপনিষদ: খ্রিস্টপূর্ব ২৫০০-১৪০০ পর্যন্ত। |
যাকোবি (Jacobi) | সংহিতা: খ্রিস্টপূর্ব ৪৫০০ -এর পূর্ববর্তী। |
কামেশ্বর আয়ার | ব্রাহ্মণ: খ্রিস্টপূর্ব ২৩০০-২০০০ পর্যন্ত। |
রাধাকৃষ্ণন্ | উপনিষদসূহ: ১৪০০ খ্রিস্টপূর্ব। |
কেট্কার (V. B. Ketkar) | সংহিতা: ৪৬৫০-এর পূর্ববর্তী।
আরেকটি মতে ঋগ্বেদ: ৭৫০০-এর পূর্ববর্তী। |
ব্লুমফিল্ড | বৈদিক যুগের প্রারম্ভকাল: ৪৫০০ খ্রিস্টপূর্ব। |
ড. বূলার | বৈদিক যুগ: খ্রিস্টপূর্ব ৩০০০-এর পূর্বে। |
অধ্যাপক বৈদ্য (C. V. Vaidya) | বৈদিক যুগ: খ্রিস্টপূর্ব ৪৫০০-৮০০ পর্যন্ত। |
কাকাসূ ওকাকুরা (Kakasu Okakura)[৬১] | বৈদিক যুগ: খ্রিস্টপূর্ব ৪৫০০-৭০০ পর্যন্ত।
উপনিষদ: খ্রিস্টপূর্ব ২০০০-৭০০ পর্যন্ত। |
অবিনাশ চন্দ্র দাস[৬২] | ঋগ্বেদ: খ্রিস্টপূর্ব ৭৫০০ পূর্ববর্তী। |
চার বেদে বিজ্ঞান, যজ্ঞকর্ম, ভক্তি ও জ্ঞান এই চারটি বিষয়ের বর্ণনা করা হয়েছে। ঋগ্বেদে দেবতাদের উদ্দেশ্যে স্তুতি অর্থাৎ গুণ প্রকাশ করা হয়েছে। যজুর্বেদে যজ্ঞকর্মের দ্বারা দেবপূজা করা হয়েছে। সামবেদ ভক্তি বা উপাসনা কণ্ডের গ্রন্থ। এবং অথর্ববেদে রয়েছে ব্রহ্ম সম্পর্কে জ্ঞান ও দোদুল্যমান বা সংশয়ের সমাপ্তি বাচক জ্ঞান। ব্রাহ্মণ গ্রন্থ মূলত বেদমন্ত্রের ব্যাখ্যা। এটি গদ্যে রচিত এবং প্রধানত কর্মাশ্রয়ী। আরণ্যক কর্ম-জ্ঞান উভয়াশ্রয়ী এবং উপনিষদ্ বা বেদান্ত সম্পূর্ণরূপে জ্ঞানাশ্রয়ী।
বেদের বিষয়বস্তু সাধারণভাবে দুই ভাগে বিভক্ত কর্মকাণ্ড ও জ্ঞানকাণ্ড। কর্মকাণ্ডে আছে বিভিন্ন দেবদেবী ও যাগযজ্ঞের বর্ণনা এবং জ্ঞানকাণ্ডে আছে ব্রহ্মের কথা। কোন দেবতার যজ্ঞ কখন কীভাবে করণীয়, কোন দেবতার কাছে কি কাম্য, কোন যজ্ঞের কি ফল ইত্যাদি কর্মকাণ্ডের আলোচ্য বিষয়। আর ব্রহ্মের স্বরূপ কি, জগতের সৃষ্টি কীভাবে, ব্রহ্মের সঙ্গে জীবের সম্পর্ক কি এসব আলোচিত হয়েছে জ্ঞানকাণ্ডে। জ্ঞানকাণ্ডই বেদের সারাংশ। এখানে বলা হয়েছে যে, ব্রহ্ম বা ঈশ্বর এক, তিনি সর্বত্র বিরাজমান, তারই বিভিন্ন শক্তির প্রকাশ বিভিন্ন দেবতা। জ্ঞানকাণ্ডের এই তত্ত্বের ওপর ভিত্তি করেই পরবর্তীকালে ভারতীয় দর্শনচিন্তার চরম রূপ উপনিষদের বিকাশ ঘটেছে।
এসব ছাড়া বেদে অনেক সামাজিক বিধিবিধান, রাজনীতি, অর্থনীতি, শিক্ষা, শিল্প, কৃষি, চিকিৎসা ইত্যাদির কথাও আছে। এমনকি সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনের কথাও আছে।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] বেদের এই সামাজিক বিধান অনুযায়ী সনাতন হিন্দু সমাজ ও হিন্দুধর্ম রূপ লাভ করেছে। হিন্দুদের বিবাহ, অন্তেষ্টিক্রিয়া ইত্যাদি ক্ষেত্রে এখনও বৈদিক রীতিনীতি যথাসম্ভব অনুসরণ করা হয়।ঋগ্বেদ থেকে তৎকালীন নারীশিক্ষা তথা সমাজের একটি পরিপূর্ণ চিত্র পাওয়া যায়।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] অথর্ববেদ থেকে পাওয়া যায় তৎকালীন চিকিৎসাবিদ্যার একটি বিস্তারিত বিবরণ। এসব কারণে বেদকে শুধু ধর্মগ্রন্থ হিসেবেই নয়, প্রাচীন ভারতের রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজ, সাহিত্য ও ইতিহাসের একটি দলিল হিসেবেও গণ্য করা হয়।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
কোনো কোনো বৈদিক মন্ত্র আধুনিক কালে প্রার্থনা সভা, ধর্মীয় অনুষ্ঠান বা অন্যান্য অনুষ্ঠানে পাঠ করা হয়ে থাকে।
হিন্দুধর্মের অন্যান্য সকল শাস্ত্র বেদ হতে উদ্ভুত এবং বেদই এসব শাস্ত্রসমূহের পরম প্রমাণ। হিন্দুবিশ্বাসীদের মতে, ঋষিগণ অতীন্দ্রিয় উপলব্ধির দ্বারা বেদের জ্ঞান আহরণ করেছিলেন। তাই বেদের সাথে অন্য কোনো শাস্ত্রের বৈষম্য ঘটলে বেদের সিদ্ধান্তই প্রামাণিক বিবেচিত হয় এবং বেদ বিরুদ্ধ কোনো মতবাদ হিন্দুধর্মের সিদ্ধান্ত হিসেবে বিবেচিত হয় না। হিন্দুধর্মের সমস্ত বিশ্বাসের মূলে রয়েছে এই বেদ চতুষ্ঠয়। হিন্দু আস্তিক্য দর্শন বেদের বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। ষড়দর্শন বেদের বক্তব্যকে প্রামাণিক বলে সমর্থন করে বলে ষড়দর্শন হচ্ছে আস্তিক্যবাদী দর্শন। অপরদিকে, বেদের কৃতিত্ব অস্বীকার করা দর্শনগুলো নাস্তিক দর্শন হিসেবে বিবেচিত হয়।
বেদ এবং আবেস্তার মাঝে কিছু সাদৃশ্যতা পাওয়া যায়। যেমনঃ অহুর থেকে অসুর, দায়েব থেকে দেব, অহুর মাজদা থেকে একেশ্বরবাদ, বরুণ, বিষ্ণু ও গরুদ, অগ্নিপুজা, হোম নামক পানীয় থেকে সোম নামক স্বর্গীয় সুধা, ভারতীয় ও পারসিকদের বাকযুদ্ধ থেকে দেবাসুরের যুদ্ধ, আর্য থেকে আর্য়, মিত্রদেব, দিয়াউসপিত্র দেব (বৃহস্পতি দেব), যস্ন থেকে যজ্ঞ, নারীয়সঙ্ঘ থেকে নরাশংস (মানুষের মাঝে প্রশংসিত জন) , অন্দ্র থেকে ইন্দ্র, গান্দারেওয়া থেকে গন্ধর্ব, বজ্র, বায়ু, মন্ত্র, যম, আহুতি, হুমাতা থেকে সুমতি ইত্যাদি।[৬৩][৬৪] আবেস্তা এবং বেদ একে অপরের থেকে উদ্ভূত নয়, বরং এক এবং একই মূল থেকে, প্রতিটিতে ভিন্নভাবে পরিবর্তিত।[৬৫]
আবেস্তার প্রাচীনতা এবং ধর্ম সংস্কারক জরথুস্ত্রের সময়কাল সম্পর্কিত বিষয়গুলোর উপর গবেষণা পরিচালিত হয়েছিল এবং ভাষাগত যুক্তি দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিল। প্রধান উদ্ভবগুলো নিম্নরূপ ছিল:
ভারতীয় পণ্ডিত ক্ষেত্রচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় পশ্চিমা পণ্ডিতদের উপসংহার সংশোধন করার কাজটি গ্রহণ করেছিলেন, পদ্ধতির ত্রুটিগুলো নির্দেশ করে। তিনি গাথা এবং তাদের লেখক জরথুস্ত্রের প্রাচীনত্ব সম্পর্কে "ভাষাগত যুক্তির শূন্যতা" প্রকাশ করেছিলেন, পাশাপাশি বিদ্যমান মতামতকে নতুন যুক্তি দিয়ে শক্তিশালী করার পাশাপাশি তিনি সমর্থন করেছিলেন। তাঁর মতে, পশ্চিমা প্রাচ্যবাদীরা "ধর্মীয় পরিস্থিতিতে প্রকৃত মনস্তাত্ত্বিক প্রতিক্রিয়া বোঝার অভাবে আমাদের সংস্কৃতির প্রকৃত তাৎপর্য সবসময় উপলব্ধি করতে পারেনি।"[৬৬] বক্তৃতা আকারে উপস্থাপিত তার আপত্তির সময় (১৯৬৪ থেকে ১৯৭৩ সালের শেষ পর্যন্ত), চট্টোপাধ্যায় ঐতিহাসিক বস্তুনিষ্ঠতা মেনে চলেন।[৬৭] উদাহরণ স্বরূপ কিছু উপসংহার, তার দাবী যে "ভাষাগত যুক্তিগুলো তখনই মূল্যবান যখন একই ভৌগোলিক অঞ্চলের বিভিন্ন ভাষার মধ্যে তুলনা করা হয়;"[৬৮] ঐতিহাসিক গবেষণার নিয়ম হিসাবে মূল্যায়ন করা উচিত, ভিত্তিহীন (পশ্চিমা) কুসংস্কার এবং বিভ্রান্তিকর দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে আমাদের মনকে সতেজ করার জন্য আবেস্তা এবং জরাথুস্ত্র সম্পর্কে তার মতামতের প্রশংসা করে আবার শ্বাস নেওয়া প্রয়োজন।[৬৯]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.