Loading AI tools
উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
মুদ্রণ একটি প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে একটি প্রধান গঠন বা মাপদন্ড থেকে লেখা ও ছবির প্রতিলিপি তৈরি করা হয়। মুদ্রণের প্রথমদিকের কাজের উদাহরণের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত সিলিন্ডার সীল ও অন্যান্য বস্তু যেমন সাইরাস সিলিন্ডার এবং সিলিন্ডার অফ নাবোনিদাস। কাঠের টুকরায় মুদ্রণের সূচনা ঘটে চীনে প্রায় ২২০ খ্রিস্টাব্দে।[1] পরবর্তীতে এর উন্নয়ন হিসাবে অন্তর্ভুক্ত হয় বর্ণ সহজে পরিবর্তনযোগ্য ধরনের মুদ্রণ ব্যবস্থা, প্রায় ১০৪০ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ চীনে বি শেং তৈরি করেন এটি।[2] ইয়োহানেস গুটেনবার্গ যান্ত্রিক পরিবর্তনযোগ্য ধরনের মুদ্রণ ব্যবস্থা ইউরোপে ১৫ শতাব্দীতে চালু করেন। তার ছাপাখানা একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে রেনেসাঁ যুগের, সংস্কারের, আলোকিত যুগের এবং বৈজ্ঞানিক বিপ্লব উন্নয়নের এবং এটি আধুনিক জ্ঞান-ভিত্তিক অর্থনীতির উপাদানের ভিত্তি স্থাপন করে এবং জনগণের মধ্যে শিক্ষার প্রসার ঘটায়।[3]
আধুনিক বড় মাপের মুদ্রণগুলো সাধারণত ছাপাখানা ব্যবহার করে করা হয়, অন্যদিকে ছোট মাপের মুদ্রণগুলো সম্পন্ন করা হয় প্রায় বিনামূল্য-ধরনের আধুনিক মুদ্রাকর দ্বারা। যদিও কাগজ হল - মুদ্রণ করার সবচেয়ে সাধারণ উপাদান, তবুও মুদ্রণ প্রায়শই ধাতু, প্লাস্টিক, কাপড় ও যৌগিক পদার্থের উপরেও করা হয়। কাগজের মুদ্রণের ক্ষেত্রে এটা প্রায়ই একটি বড় মাপের শিল্প প্রক্রিয়ায় করা হয় এবং প্রকাশনা ও লেমদেনের ক্ষেএে এটি একটি অপরিহার্য অংশ ।
কাঠের টুকরায় মুদ্রণ ব্যবস্থাটি হল লিখিত কাজ, চিত্র বা নকশা মুদ্রণের জন্য একটি কৌশল, যা ব্যাপকভাবে প্রচলিত ছিল পূর্ব এশিয়ায়। এটা চীনে উদ্ভব হয়েছিল তাদের বংশ পরম্পরায় চলে আসা মুদ্রণের একটি পদ্ধতি হিসাবে, যা বস্ত্র শিল্পে ব্যবহার করা হত এবং এটিকে পরবর্তিতে কাগজে মুদ্রণের জন্য ব্যবহার করা হয়। কাপড়ে মুদ্রণের উদাহরণ হিসাবে, চীনের প্রথমদিকের কাজের সংরক্ষিত টুকরাটি তৈরি করা হয়েছিল প্রায় ২২০ খ্রিস্টাব্দে।
নিকটতম সংরক্ষিত কাঠের টুকরায় মুদ্রণকৃত টুকরাগুলো চীন থেকে প্রাপ্ত। এগুলোতে মুদ্রিত ছিল রেশমের ফুল তিনটি রং দিয়ে, এটি হ্যান রাজবংশের সময়ের (২২০ খ্রিস্টাব্দ আগের)। এগুলো হল কাঠের টুকরায় মুদ্রণের প্রথমদিকের উদাহরণ, কাগজে প্রথম মুদ্রণ পাওয়া যায় সপ্তম শতকের মধ্যভাগে চীনে।
নবম শতকের মধ্যেই, বহুল প্রচলিতভাবে কাগজে মুদ্রণ চালু হয়ে যায় এবং এখনো টিকে আছে, মুদ্রণের প্রথমদিকের সম্পূর্ণ মুদ্রিত বই ডায়মন্ড সুত্রা (ব্রিটিশ লাইব্রেরি তে সংরক্ষিত রয়েছে), যা মুদ্রিত হয় ৮৬৮ সালে।[4] দশম শতকের মধ্যেই সুত্রা বইয়ের ৪০০,০০০ কপি মুদ্রিত হয় এবং এতে ছবি মুদ্রিত হয়েছিল এবং একই সময় কনফুকিয়ান ক্লাসিক বইও মুদ্রিত হয়েছিল। একটি ক্ষমতা সম্পন্ন মুদ্রাকরে প্রতি দিন প্রায় ২,০০০ উভয় পৃষ্ঠা মুদ্রণ করা যায়।[5]
মুদ্রণ তাড়াতাড়ি ছড়িয়ে পরে কোরিয়া এবং জাপানে যেগুলোতে ব্যবহৃত হত চীনা নির্দেশনামূলক অক্ষর, কিন্তু এই কৌশল আরও ব্যবহৃত হয় তুরপান এবং ভিয়েতনামে অন্যান্য বর্ণ বিন্যাস ব্যবহার করে। এই কৌশল, এরপর ছড়িয়ে পড়ে পারস্য ও রাশিয়ায়।[6] এই কৌশলটি ইসলামী বিশ্বের মাধ্যমে ইউরোপে পৌছায় এবং ১৪০০ সালের দিকে কাগজে মুদ্রণের জন্য ওল্ড মাস্টার কপি ব্যবহার শুরু হয় এবং তাস মুদ্রণ শুরু হয়।[7] তবে ইসলামী মতবাদীদের কর্তৃক আরোপিত সীমাবদ্ধতার কারণে আরবেরা কুরআন মুদ্রণে এই পদ্ধতি কখনই ব্যবহার করেনি।[6]
কাঠে মুদ্রণকে আরবিতে বলা হয় ট্রাশ, যা আরব মিশর কর্তৃক তৈরি করা হয় নবম-দশম শতাব্দীর দিকে, যার বেশিরভাগই ছিল নামাজ এবং তাবিজের জন্য। প্রমাণ পাওয়া যায় যে, মুদ্রিত এই টুকরাগুলো তে কাঠের উপকরণ ব্যবহার করা হয়নি, সম্ভবত টিন, সীসা, বা কাদা মাটি ব্যবহৃত হয়েছিল। কি কৌশলে এগুলো তৈরি ছিল, তা নিশ্চিত নয়, তবে, এবং মুসলিম বিশ্বের বাইরে এটির খুব সামান্যই প্রভাব ছিল। যদিও ইউরোপে প্রচলিত কাঠের টুকরায় মুদ্রণ ব্যবস্থা মুসলিম বিশ্ব থেকে অনুপ্রাণিত, প্রাথমিকভাবে এটির ব্যবহার ছিল কাপড়ে, ধাতুর টুকরায় দ্বারা মুদ্রণ তখন পর্যন্ত অজানা ছিল ইউরোপে। পরিবর্তনযোগ্য প্রকারের মুদ্রণ চীনে চালু হবার পর থেকে কাঠের টুকরায় মুদ্রণ ছড়িয়ে পড়েছিল ইসলামী মধ্য এশিয়ায়।[8]
কাঠে মুদ্রণ প্রথম এসেছিল ইউরোপে কাপড়ে মুদ্রণের জন্য, ১৩০০ সালের মধ্যেই এটি সবার কাছে পরিচিত হয়ে ওঠে। ধর্মীয় উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত ছবির কাপড়ে বেশ বড় এবং সম্প্রসারিত মুদ্রণ করা হত। যখন কাগজ অপেক্ষাকৃত সহজে পাওয়া যেতে শুরু হয়, প্রায় ১৪০০ সাল নাগাদ, এই মাধ্যমটি খুব দ্রুত স্থানান্তরিত হয় কাগজে, ছোট কাঠে খোদাই করা ধর্মীয় ছবিতে ও তাসে মুদ্রিত পাওয়া যেতে শুরু হয়। ১৯২৫ সাল থেকে এই মুদ্রণ ব্যবস্থা ব্যাপক হারে শুরু হয়।
মোটামুটি পঞ্চদশ শতকের মধ্যভাগে, লিখিত অক্ষর ও ছবির কাঠের টুকরা-বই, কাঠে খোদাইকৃত বই হিসাবে পাওয়া যেতে শুরু করে, যা সাধারণত সস্তা বিকল্প হিসাবে একই টুকরায় খোদাই করা পরিবর্তনযোগ্য ধরনের মুদ্রণ যন্ত্রের মাধ্যমে পাণ্ডুলিপি ও বই তৈরি করা হত। ঐ সময়কার সবচাইতে বিক্রিত কাজ ছিল সুখতচিৎ সংক্ষিপ্ত চিত্রের মুদ্রণ গুলো, যার বার বার পূনরাবৃত্তি হত বিভিন্ন কাঠের টুকরা-বই সংস্করণে: আরস মোরিএন্দি এবং বিব্লিয়া পাউপেরুম সবচাইতে বেশি পাওয়া যেত। পণ্ডিতদের মধ্যে এখনও কিছু বিতর্ক রয়েছে পরিবর্তনযোগ্য ধরনের মুদ্রণ যন্ত্রের আবির্ভাবের সময় নিয়ে, সংখ্যাগরিষ্ঠ মনে করেন এটির প্রবর্তনের আনুমানিক তারিখের পরিসীমা হচ্ছে প্রায় ১৪৪০ থেকে ১৪৬০ সাল।[9]
পরিবর্তনযোগ্য ধরন হল মুদ্রেণের সেই পদ্ধতি যেখানে পরিবর্তনযোগ্য ধাতুর টুকরা দ্বারা তৈরি মুদ্রণ ব্যবস্থা ও মুদ্রণবিদ্যার ব্যবহার করা হয়, ম্যাট্রিক্সের ধাতুধর্মী দ্বারা চালিত অক্ষরপাঞ্চ দিয়ে এই মুদ্রণ করতে হয়। পরিবর্তনযোগ্য ধরনের সাহায্যে হাতে অনুলিপি করার থেকে বা কাঠের টুকরায় মুদ্রণের চেয়ে অনেক সহজে মুদ্রণ করা যেত।
প্রায় ১০৪০ সাল নাগাদ, জানা মতে সর্বপ্রথম পরিবর্তনযোগ্য ধরনের মুদ্রণ যন্ত্র চায়নাতে বি শেং তৈরি করেন পোরসেলিন দিয়ে। শেং কাদা মাটির তৈরি পরিবর্তনযোগ্য ধরনের মুদ্রণ যন্ত্র তৈরি করেন, যার টাইপপাঞ্চগুলো সহজে ভেঙ্গে যেত, কিন্তু ওয়াং জেং ১২৯৮ সাল নাগাদ কাঠ থেকে এর থেকেও স্থায়ী যন্ত্র তৈরি করেন। তিনি একটি জটিল পদ্ধতি তৈরি করেন যেখানে চাইনিজ অক্ষরের সাথে সম্পর্কিত টেবিল ও নম্বরের বিভিন্ন সমস্যা তিনি সমাধান করেন যাতে টাইপসেটিং ও মুদ্রণ আরও সহজতর হয়। এখনো, কাঠের টুকরায় মুদ্রণের (জাইলোগ্রাফির) প্রধান উপায় হল এটি, যার মাধ্যমে "কম খরচে ও সহজে হাজারো চাইনিজ হরফ মুদ্রণ করা যায়।"[10]
১২শ শতকের শুরুতে কপারের তৈরি পরিবর্তনযোগ্য ধরনের মুদ্রণ যন্ত্র চায়নাতে আবিষ্কৃত হয়। এটা দিয়ে বৃহৎ আকারে ছাপার কাজ শুরু হয় উত্তর সং রাজবংশের কাগজের মূদ্রা ব্যবহার প্রচলনের পর থেকে। পরিবর্তনযোগ্য ধরনের মুদ্রণ যন্ত্র গোয়িও রাজবংশের আমলে কোরিয়াতে ছড়িয়ে পরে।
প্রায় ১২৩০ সাল নাগাদ, কোরিয়ানরা ধাতুর তৈরি পরিবর্তনযোগ্য ধরনের মুদ্রণ যন্ত্র উদ্ভাবন করে যাতে ব্যবহার করা হত ব্রোঞ্জ। এই জিকজি বইটি প্রকাশিত ১৩৭৭ সালে, সর্বপ্রথম ধাতু ব্যবহার করে মুদ্রিত বই এটি। টাইপ-কাস্টিং এটিতে ব্যবহৃত হয়, যা বানানো হয়েছিল কয়েন কাস্টিং এর পদ্ধতি অনুকরণ করে। অক্ষর গুলো বীচবৃক্ষের কাঠে খদাই করা হয়েছিল, তারপর নরম কাদা মাটি চাপ দিয়ে মাটির ছাঁচ তৈরি করা হয়েছিল এবং এরপর ছাঁচে ব্রোঞ্জ ঢেলে দেয়া হয়েছিল, এবং পরিশেষে অক্ষরগুলো পালিশ করা হয়েছিল।[11] কোরিয়ানদের তৈরি ধাতুর পরিবর্তনযোগ্য মুদ্রণ ব্যবস্থাটির বর্ণনা করেন ফরাসি পণ্ডিত হেনরি-জাঁন মার্টিন "যা অত্যন্ত অনুরূপ গুটেনবার্গের সাথে"।[12] ঢালাই ধাতুর, পরিবর্তনযোগ্য ধরনের মুদ্রণ ব্যবস্থাটি ছড়িয়ে পরে ইউরোপ মধ্যে ১৪শ শতকের শেষে ও ১৫শ শতকের শুরুর দিকে।[6][13][14][15][16]
প্রায় ১৪৫০ সাল নাগাদ, জোহানেস গুটেনবার্গ মুদ্রণ ব্যবস্থা শুরু করেন যা আধুনিক পরিবর্তনযোগ্য ধরনের মুদ্রণ ব্যবস্থা হিসাবে ইউরোপ গণ্য হয় ( প্রিন্টিং প্রেস), একই সাথে তিনি প্রবর্তিত করেন ম্যাট্রিক্সে ব্যবহারের জন্য কাস্টিং করা টাইপ পিস এবং হস্ত চালিত ছাঁচ, তিনি স্ক্রু-ছাপাখানার অভিযোজন করেন; তিসি-তেল বেস কালি হিসাবে ব্যবহার শুরু করেন; এবং তৈরি করেন নরম এবং আরো বেশি শোষককারী কাগজ।[17] গুটেনবার্গ ছিলেন প্রথম ব্যক্তি যিনি তার টাইপ পিস তৈরি করতে সীসা, টিন, অ্যান্টিমনি, তামা ও বিসমাত ধরনের পদার্থ ব্যবহার শুরু করেন –এই সকল একই উপাদান আজও ব্যবহৃত হচ্ছে।[18]
জোহানেস গুটেনবার্গ তার ছাপাখানার কাজ শুরু করেন প্রায় ১৪৩৬ সালে, তার সাথে এটির আরও অংশীদার হিসাবে ছিলেন আন্দ্রিয়াস ড্রিটযেহেন – যাকে তিনি পূর্বে মণিমুক্তা - কাটার কাজ শিখিয়েছিলেন এবং আন্দ্রিয়াস হেইলম্যান্ন, যিনি একটি কাগজের কলের মালিক ছিলেন।[13]
কাঠের টুকরায় মুদ্রণের তুলনায় ছাপাখানা ব্যবহার করে পরিবর্তনযোগ্য ধরনের মুদ্রণের, পৃষ্ঠার সেটিং এবং মুদ্রণ ছিল বেশ দ্রুত ও বেশি টেকসই। এছাড়াও, ধাতু টাইপ পিসগুলো ছিল শক্ত এবং অক্ষরগুলো ছিল অধিক সমতাপূর্ণ, যা লেখনী এবং ফন্টের উপর প্রভাব ফেলত। উচ্চ মানের এবং অপেক্ষাকৃত কম দামের, গুটেনবার্গের মুদ্রণকৃত বাইবেলের (১৪৫৫) ফলে ধাতুর পরিবর্তনযোগ্য মুদ্রণ ব্যবস্থাটি পশ্চিমা ভাষাভাষীদের কাছে প্রতিষ্ঠিত করে এটির শ্রেষ্ঠত্ব। ছাপাখানা এরপর দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে চারিদিকে, রেনেসাঁ যুগের প্রবর্তন ঘটাতে সাহায্য করে এবং অতঃপর ছড়িয়ে পরে সারা বিশ্বে।
গুটেনবার্গের প্রবর্তিত পরিবর্তনযোগ্য ধরনের মুদ্রণ ব্যবস্থাকে বলা হয়ে থাকে দ্বিতীয় সহস্রাব্দের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার।[19]
ঘূর্ণায়মান ছাপাখানা আবিষ্কৃত করেন রিচার্ড মার্চ হো, ১৮৪৩ সালে। টাইপ সেটিং ইমপ্রেশনটি বাঁকা করা অবস্থায় একটি সিলিন্ডারের গায়ে লাগানো থেকে একটি দীর্ঘ একটানা কাগজের রোলে বা অন্য বস্তুর উপর মুদ্রণ করা যায়। ঘূর্ণায়মান ড্রাম মুদ্রণ ব্যবস্থাটি পরবর্তিতে উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নায়ন করেন উইলিয়াম বুলক।
সব মুদ্রণ প্রক্রিয়ার সঙ্গে চূড়ান্ত আউটপুটের দুই ধরনের বিষয় সংযুক্ত থাকে:
যে তথ্যটি মুদ্রিত হবে তা উৎপাদনের জন্য প্রস্তুত করার পর (প্রাক ছাপানোর ধাপে), মুদ্রণ প্রক্রিয়ার প্রতিটি অংশের নির্দিষ্ট কাজ রয়েছে মুদ্রণের জন্য নির্বাচিত অংশ থেকে মুদ্রণের করা হবে না এমন অংশকে আলাদা করতে।
প্রচলিত মুদ্রণ ব্যবস্থায় মুদ্রণ করা হয় চার ধরনের প্রক্রিয়ায়:
মুদ্রাঙ্কিত মুদ্রণ হল রিলিফ ধরনের মুদ্রণের একটি কৌশল। একজন কর্মী পরিবর্তনযোগ্য ছাপাখানাের মধ্যে টাইপের হরফগুলো কম্পোজ করে বসিয়ে দিয়ে, এগুলো আটকিয়ে দেয়, এরপর এতে কালি দেয় এবং কাগজের উপরে চাপ দেয় যাতে টাইপ থেকে কালি স্থানান্তরিত হয়ে সৃষ্টি করে একটি ছাপা কাগজ।
১৫শ শতকের মধ্যভাগে জোহানেস গুটেনবার্গের আবিষ্কৃত মুদ্রাঙ্কিত মুদ্রণ ছিল বেশ প্রচলিত মুদ্রণ ব্যবস্থা যার মাধ্যমে লেখা মুদ্রণ করা হত এবং ২০শ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধ পর্যন্ত এই মুদ্রণ পদ্ধতি ব্যবহার করে বই এবং অন্যান্য জিনিস মুদ্রণ করা হত, যখন না পর্যন্ত অফসেট মুদ্রণ এর উন্নত ঘটে। অতি সম্প্রতি, মুদ্রাঙ্কিত মুদ্রণ কে দেখা হয়েছে, রেনেসাঁ যুগের একজন শিল্পীর কারিগরি হিসাবে।
অফসেট মুদ্রণ হল একটি বহুল ব্যবহৃত মুদ্রণ কৌশল। অফসেট মুদ্রণ করা হয় এমন জায়গায় যেখানে কালিযুক্ত ছবিটি স্থানান্তর করা হয় (বা "অফসেট" করা হয়) একটি প্লেট থেকে একটি রাবার ব্ল্যাংকেটে। একটি অফসেট স্থানান্তরক ছবিটিকে মুদ্রণ পৃষ্ঠে সরিয়ে দেয়। যখন লিথিওগ্রাফির সাথে একযোগে ব্যবহার হয় অফসেট প্রক্রিয়াটি, (লিথিওগ্রাফির) একটি প্রক্রিয়া যা তেল এবং পানির বিকর্ষণ শক্তির উপর ভিত্তি করে কাজ করে, অফসেট কৌশল প্রয়োগ করা হয় একটি সমতল (প্লেনোগ্রাফিক) ছবি স্থানন্তরে। তাই যে ছবিটি মুদ্রিত হবে তা কালি গ্রহণ করে কালির রোলার থেকে, এ সময় যে অংশে মুদ্রণ হবে না সেটি পানিকে আকর্ষণ করে, এতে ঐ অংশগুলো কালি মুক্ত থাকে।
বর্তমানে, অধিকাংশ বই ও সংবাদপত্র ছাপতে ব্যবহার করা হয় অফসেট লিথিওগ্রাফি কৌশল।
ছবি মুদ্রণের খাঁজকাটা প্লেট হল ইন্টেগ্লিও মুদ্রণ প্রযুক্তি, যেখানে ছবি মুদ্রণ করা হয় মুদ্রণ প্লেটের পৃষ্ঠতলের উপর চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে। কালি দ্বারা প্লেটের সেলগুলো পূর্ণ করা হয় এবং এরপর অতিরিক্ত কালি একটি ডাক্তারদের ব্লেডের মত স্ক্রেপার দিয়ে সরিয়ে ফেলা হয়। এরপর একটি রাবার দ্বারা মুড়ানো রোলার দিয়ে প্লেটের পৃষ্ঠতলে উপর কাগজ রেখে তাতে চাপ দেয়া হয়, এসময় খাঁজের ভিতর থাকা কালি কাপজের স্পর্শে আসে। মুদ্রণ সিলিন্ডারটি সাধারণত তৈরি করা হয় কপার প্লেটেড স্টিল থেকে, এরপর এতে কপার প্লেটিং করা হয় এবং খুব সম্ভবত হীরা দ্বারা এর খাঁজ গুলো কাটা হয়; নকশা করা হয়, বা লেজার দ্বারা সিলিন্ডার থেকে ধাতু অপসারণ করা হয়।
খাঁজকাটা প্লেট মুদ্রণ ব্যবস্থা ব্যবহার করা হয়, দীর্ঘ, উচ্চ মানের মুদ্রণ যেখানে সঞ্চালিত হয় সেখানে। যেমন পত্রিকায়, মেইল অর্ডার ক্যাটালগে, প্যাকেজিং এবং ছাপাখানায়, ফ্যাব্রিকের সম্মুখ ভাগে এবং ওয়ালপেপার মুদ্রণে। এটি আরো ব্যবহার করা হয় ডাকমাসুল স্ট্যাম্প মুদ্রণে এবং সাজানোর প্লাস্টিক লেমিনেটে, যেমন রান্নাঘরের কাজ করার অংশের উপরে।
অন্যান্য উল্লেখযোগ্য মুদ্রণ কৌশলগুলো হল:
এটা অনুমান করা হয় যে, গুটেনবার্গের ছাপাখানা উদ্ভাবনের পর পরই ইউরোপে বই উৎপাদন বেড়ে কয়েক মিলিয়ন কপি থেকে প্রায় এক বিলিয়ন কপিতে, মাত্র চার শতাব্দীরও কম সময়ে।[20]
স্যামুয়েল হ্রাটলিব যিনি নির্বাসিত হয়েছিল ব্রিটেন থেকে এবং তিনি উৎসাহী ছিলেন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংস্কার সম্পর্কে, তিনি ১৬৪১ সালে লিখেছিলেন "মুদ্রণ শিল্পটি এমন ভাবে জ্ঞান ছড়িয়ে দিবে যে সাধারণ মানুষ, তারা তাদের নিজস্ব অধিকার ও স্বাধীনতা সম্পর্কে জানবে, তাদের নিয়ন্ত্রিত করা যাবে না নিপীড়নের মাধ্যমে"।[21]
মুসলিম বিশ্বের মধ্যে মুদ্রণ, বিশেষ করে আরবি স্ক্রিপ্ট মুদ্রণ ছিল আধুনিক সময়ে দৃঢ়ভাবে বিরোধিতাপূর্ণ, যদিও কখনও কখনও, হিব্রু বা আর্মেনিয়ান স্ক্রিপ্ট মুদ্রণের অনুমতি দেওয়া হত। তাই, প্রথম পরিবর্তনযোগ্য ধরনের মুদ্রণ উসমানীয় সাম্রাজ্য হয়েছিল হিব্রুতে ১৪৯৩ সালে।[22] ষোড়শ শতাব্দীর মধ্যভাগের ইস্তানবুলের রাষ্ট্রদূত অনুসারে, টার্কস কর্তৃক ধর্মীয় বই মুদ্রণ ছিল একটি পাপ। ১৫১৫ সালে, সুলতান সেলিম প্রথম, একটি ডিক্রি জারি করেন, যার অধীনে বলা ছিল ধর্মীয় বই মুদ্রণ অনুশীলন করার শাস্তি হল মৃত্যু দণ্ড। ষোড়শ শতাব্দীর শেষে সুলতান মুরাদ তৃতীয় আরবি অক্ষরে প্রথম অ-ধর্মীয় মুদ্রিত বই বিক্রয়ের অনুমতি দান করেন, যদিও তখনো সংখ্যাগরিষ্ঠ সংখ্যক বি আমদানি করা হত ইতালি থেকে। ইব্রাহিম মুটেফ্রেরিকা উসমানীয় সাম্রাজ্যে প্রথম আরবিতে মুদ্রণের ছাপাখানা প্রতিষ্ঠিত করেন লিপিবিশারদগণ ও ওলামাদের বিরোধীতার মধ্যে। এটি চালু থাকে ১৭৪২ সাল পর্যন্ত, সর্বোমোট সতেরোটি মুদ্রণ কাজ সম্পন্ন করে, যার সবগুলো ছিল অ-ধর্মীয়, উপযোগবাদী বিষয়ে। মুদ্রণ ইসলামী দুনিয়ার কাছে ১৯ শতাব্দী পর্যন্ত সাধারণ কোন বিষয় ছিল না।[23]
জু দের জন্য জার্মানীতে মুদ্রণকৃত গাইড ছিল নিষিদ্ধ; যে কারণে ইটালিতে হিব্রু মুদ্রণ বৃদ্ধি পায়, ১৪৭০ সালে রোমে শুরু হবার পরে, এটি ছড়িয়ে পরে বিভিন্ন শহরে যার মধ্যে অন্যতম ছিল বারি, পিসা, লিভোরনো ও মানটুয়া। আঞ্চলিক শাষকদের হাতে ক্ষমতা ছিল হিব্রু বই মুদ্রণের অনুমতি বা লাইসেন্স প্রদাণের বা বাতিলের[24] এবং ঐ সময় প্রকাশিত বিভিন্ন বইয়ের সূচনাপত্রের পাতায় লিখা থাকত 'কোন লাইসেন্সজা দা সুপারিওরি' (যার অর্থ ছিল তাদের মুদ্রণটি পরীক্ষক কর্তৃক লাইসেন্সকৃত)।
এটা ধারণা করা হত যে মুদ্রণ ব্যবস্থার আগমনের ফলে 'ধর্মীয় ব্যবস্থা আরো শক্তিশালী হবে এবং রাষ্ট্রশাসকদের ক্ষমতা আরো বৃদ্ধি পাবে।'[25] অধিকাংশ বইয়ের মূল বিষয়বস্তু ছিল ধর্ম সংক্রান্ত, আর বিষয়বস্তু নিয়ন্ত্রণ করত চার্চ ও রাজ্য শাসকরা।[25] এর কারণ ভুল বিষয়ের মুদ্রণের ফলাফল ছিল মারাত্বক। মায়রোউইটজ উইলিয়াম কারটারের উদাহরণ টেনে বলেন, "সে ১৫৮৪ সালে ক্যাথোলিক প্রভাবিত ইংল্যান্ডে একটি আপত্তিজনক প্রাক-ক্যাথোলিক পুস্তিকা মুদ্রণ করেন। এ ঘটনার কারণে তাকে ফাঁসি দিয়ে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়।"
বাইবেলের ব্যাপক হারে বিতরণ একটি বিপ্লবী প্রভাব ফেলে, কারণ প্রধান সঞ্চালক শক্তি ও ঈশ্বরের শব্দের অনুবাদক হিসাবে পরিচিত ক্যাথলিক চার্চের ক্ষমতা এটি কমিয়ে দেয়।[25]
মুদ্রণ দিয়েছে পাঠকদের একটি বৃহত্তর পরিসীমায় জ্ঞান অর্জনের ক্ষমতা এবং পরবর্তী প্রজন্মকে সরাসরি পূর্ববর্তী প্রজন্মের বুদ্ধিজীবীদের অর্জিত জ্ঞান গ্রহণের সুযোগ কোন রকম পরিবর্তন ছাড়াই, যা পরিবর্তন হওয়া সম্ভব মৌখিক ভাবে জ্ঞান প্রদানের ঐতিহ্যে। মুদ্রণ, একটনের স্টাডি অফ হিস্টোরি (১৮৯৫ সালের) বক্তব্য অনুযায়ী, "নিশ্চয়তা দিয়েছিল রেনেসাঁ যুগের কাজ স্থায়ী হবে কিনা, যা লেখা হবে তা সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হবে কিনা, জ্ঞান এবং ধারনার মুদ্রণের মাধ্যমে এমন ভাবে সাজানো হয় যে মধ্যযুগ যে অন্ধকার সময় এসেছিল তার যাতে আর পুনরাবৃত্তি না ঘটে, একটি চিন্তা-চেতনাও যাতে হারিয়ে না যায়।"[21]
সমাজে বই পড়ার ধারণা পরিবর্তণের প্রধান হাতিয়ার ছিল মুদ্রণ।
এলিজাবেথ আইজেনস্টাইন মুদ্রণ আবিষ্কারের ফলে দুটি দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব খুঁজে বের করেন। তিনি দাবী করেন মুদ্রণ একটি স্থায়ী ও সমতাপূর্ণ জ্ঞানের তথ্যসূত্র তৈরি করে, একই সাথে তুলনা তুলে ধরে অসঙ্গতিপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গির ভিতর।[26]
আশা ব্রিগ্স এবং পিটার বুরকে মুদ্রণ আবিষ্কারের সাথে সাথে পঠনের পাঁচ ধরনের পরিবর্তন হওয়া দেখতে পান:
মুদ্রণ আবিষ্কারের সাথে সাথে ইউরোপীয় শহরে কাজকর্মের গঠনের পরিবর্তিত ঘটে। একটি নতুন শিল্পী গুচ্ছ হিসাবে মুদ্রণের আবির্ভূত হয় যাদের কাছে শিক্ষা ছিল অপরিহার্য, যদিও শ্রম-নিবিড় হস্ত লেখকদের কাজ স্বাভাবিকভাবেই বন্ধ হয়ে যায়। প্রুফ-সংশোধন হয়ে ওঠে নতুন একটি কাজ, পুস্তকবিক্রেতা ও গ্রন্থাগারিকদের কাজ স্বাভাবিকভাবেই বৃদ্ধি পায় বিপুল সংখ্যক বই বৃদ্ধি পাওয়ায়।
মুদ্রণ পদ্ধতি | পরিবহন পদ্ধতি | প্রয়োগকৃত চাপ | ড্রপের আকার | সান্দ্রতা | পৃষ্ঠের উপর কালির পুরুত্ব | টিকা | খরচ-সাশ্রয়ী চলার দৌর্ঘ |
---|---|---|---|---|---|---|---|
অফসেট মুদ্রণ | রোলারস | ১ মেগা প্যাসকেল | ৪০–১০০ প্যাসকেল.সেকেন্ড | ০.৫–১.৫ মাইক্রোমিটার (µm) | উচ্চমানের মুদ্রণ | >৫,০০০ (এথ্রি ট্রিম সাইজ, সিট-ফিড)[28]
>৩০,০০০ (এথ্রি ট্রিম সাইজ, অয়েব-ফিড)[28] | |
রোটোগ্রাভুরে | রোলারস | ৩ মেগা প্যাসকেল | ৫০-২০০ মিলি প্যাসকেল.সেকেন্ড | 0.৮–৮ মাইক্রোমিটার (µm) | পুরু কালি স্তর সম্ভব, চমৎকার ছবি পুনরুৎপাদন সম্ভব, অক্ষর ও লাইনের প্রান্ত অসমতল হয় [29] | >৫০০,০০০[29] | |
ফ্লেক্সোগ্রাফি | রোলারস | ০.৩ মেগা প্যাসকেল | ৫০–৫০০ মিলি প্যাসকেল.সেকেন্ড | 0.৮–২.৫ মাইক্রোমিটার (µm) | উচ্চমানের (বর্তমানে এইচডি) | ||
লেটারপ্রেস মুদ্রণ | প্লেট ধরনের | ১০ মেগা প্যাসকেল | ৫০–১৫০ প্যাসকেল.সেকেন্ড | ০.৫–১.৫ মাইক্রোমিটার (µm) | ধীর গতিতে কালি শুকায় | ||
স্ক্রিন-মুদ্রণ | স্ক্রিনের ফুটো দিয়ে কালি যেতে দিয়ে | <১২ মাইক্রোমিটার (µm) | বহুমুখী পদ্ধতি,
নিম্ন মানের হয় |
||||
ইলেক্ট্রোফটোগ্রাফি | ইলেক্ট্রোস্ট্যাটিক্স | ৫–১০ মাইক্রোমিটার (µm) | পুরু কালির স্তর | ||||
তরল ইলেক্ট্রোফটোগ্রাফি | ইলেক্ট্রোস্ট্যাটিক্স পদ্ধতিতে ছবি উৎপন্ন হয় ও ফিক্সিং এর সময় তা প্রেরণ করা হয় | উচ্চমানের ছবি, পুরু কালি স্তর সম্ভব, চমৎকার ছবি পুনরুৎপাদন সম্ভব, মিডিয়ার ক্ষেত্রে রেঞ্জটি বৃহৎ, খুব পাতলা ছবি মুদ্রণ সম্ভব, | |||||
ইঙ্কজেট মুদ্রাকর | তাপের মাধ্যমে | ৫–৩০ পিকোলিটার (pl) | ১–৫ প্যাসকেল.সেকেন্ড | <০.৫ মাইক্রোমিটার (µm) | কালি ছড়িয়া পরা রোধে বিশেষ কাগজ প্রয়োজন | <৩৫০ (এথ্রি ট্রিম সাইজ)[28] | |
ইঙ্কজেট মুদ্রাকর | পাইজোইলেক্ট্রনিক্স | ৪–৩০ পিকোলিটার (pl) | ৫–২০ মিলি প্যাসকেল.সেকেন্ড | <০.৫ মাইক্রোমিটার (µm) | কালি ছড়িয়া পরা রোধে বিশেষ কাগজ প্রয়োজন | <৩৫০ (এথ্রি ট্রিম সাইজ)[28] | |
ইঙ্কজেট মুদ্রাকর | চলমান | ৫–১০০ পিকোলিটার (pl) | ১–৫ মিলি প্যাসকেল.সেকেন্ড | <০.৫ মাইক্রোমিটার (µm) | কালি ছড়িয়া পরা রোধে বিশেষ কাগজ প্রয়োজন | <৩৫০ (এথ্রি ট্রিম সাইজ)[28] | |
ট্রান্সফার-প্রিন্ট | থার্মাল ট্রান্সফার ফ্লিম বা ওয়াটার রিলিজ দেসেল | একটি বাঁকা বা অমসৃণ পৃষ্ঠে ব্যাপক হারে ছবি মুদ্রণের উপযুক্ত পদ্ধতি |
২০০৫ সালের মধ্যে আধুনিক মুদ্রণ বার্ষিক সারা বিশ্বের ৪৫ ট্রিলিয়ন মুদ্রিত পৃষ্ঠার প্রায় ৯% দখল করে নেয়।[30]
মুদ্রণকে বাড়িতে, অফিসে বা একটি ইঞ্জিনিয়ারিং পরিবেশে নিম্নক্ত ভাগে বিভক্ত করা হয়:
আরো কিছু সাধারণ প্রযুক্তির আছে মুদ্রণের:
বিক্রেতারা সাধারণত সরঞ্জামের চালানোর জন্য সাথে জড়িত মোটমোটি সকল খরচ হিসাব করে, মূলধন যন্ত্রপাতি খরচ, যন্ত্রপাতির ডেপ্রিসিয়েশন ইত্যাদি জটিল গণনায় অন্তর্ভুক্ত যে সব খরচ আসে তার সাথে ব্যবসার প্রাত্যহিক কর্মকান্ডের সাথে জড়িত খরচের হিসাবে ভাল ভাবে করে আধুনিক মুদ্রণ চিহ্নিত করে। অধিকাংশ কাজের অংশ হিসাবে, টোনার সিস্টেম অধিক লাভজনক ইঙ্কজেট চেয়ে দীর্ঘ সময় চলার ক্ষেত্রে, যদিও ইঙ্কজেট প্রাথমিক ক্রয় মূল্য কম।
পেশাদারী আধুনিক মুদ্রণ (টোনার ব্যবহার করে) মূলত ব্যবহার করে, একটি বৈদ্যুতিক চার্জ যা টোনার বা তরল কালি স্তর স্থানান্তর করে যে পৃষ্ঠতলে মুদ্রণ হবে তার সম্মুখের তলে। আধুনিক মুদ্রণ ব্যবস্থার মানের ক্রমানয়ে উন্নতি হয়েছে, প্রথম দিকে রঙ্গিন এবং সাদা-কালো মুদ্রণ থেকে আজকের অত্যাধুনিক রঙ্গিন আধুনিক মুদ্রণে, যেমন জেরক্স, আইজিন্থ্রি, কোডাক নেক্সপ্রেস, এইচপি ইন্ডিগো ডিজিটাল প্রেস সিরিজ এবং ইনফোপ্রিন্ট ৫০০০। এই আইজিন্থ্রি এবং নেক্সপ্রেসে ব্যবহৃত হয় টোনারে থাকা কালির কণা এবং ইন্ডিগোতে ব্যবহৃত হয় তরল কালি। এই ইনফোপ্রিন্ট ৫০০০ হল একটি সম্পূর্ণ রঙ্গিন মুদ্রণ সিস্টেম, একটানা ইঙ্কজেট পতন করে-চাহিদা মাফিক মুদ্রণ তৈরি করতে পারে। উপরক্ত সকল মুদ্রাকরই পরিবর্তনযোগ্য তথ্য মুদ্রণে উপযোগী এবং মানের দিক থেকে প্রতিদ্বন্দ্বী করে অফসেটের সাথে। আধুনিক অফসেট মুদ্রণকে বলা হয়, সরাসরি ইমেজিং প্রেসেস, যদিও এই ছাপাখানাগুলো গ্রহণ করতে পারে কম্পিউটারে ফাইল এবং স্বয়ংক্রিয়ভাবে মুদ্রণ-প্লেট তাদের মধ্য প্রস্তুত করতে পারে, তবে এগুলো পরিবর্তনযোগ্য তথ্য মুদ্রণে উপযোগী নয়।
ছোট ছাপাখানায় ও পত্রিকায় সাধারণত ব্যবহার করা হয় আধুনিক মুদ্রণ মেশিন ব্যবহার করে সস্তা ফটোকপি সংযোজনের আগে যেমন স্পিরিট ডুব্লিকেটর, কেক্টোগ্রাফ ও মিমেওগ্রাফ বেশি প্রচলিত ছিল।
থ্রিডি প্রিন্টিং হল উৎপাদনের সেই প্রযুক্তি যেখানে বিষয়বস্তু তৈরি করা হয় ত্রিমাত্রিক আকৃতির তথ্য থেকে ও থ্রিডি মুদ্রাকর দিয়ে। মুদ্রণের বিষয়বস্তু তৈরি করা কয় হয় উপাদান একটির উপর একটি শুইয়ে রেখে বা একটির উপর একটি রেখে। ২০১২ সালে, কিছু কম্পানী যেমন স্কুল্পটো বা শেপওয়েস প্রস্তাব করে অনলাইনে থ্রিডি মুদ্রণ এর ব্যবস্থাপনার।
গ্যাং রান মুদ্রণ হল মুদ্রণের সেই ব্যবস্থা যেখানে একাধিক মুদ্রণ কাজ একই সাথে একটি কাগজের পাতায় মুদ্রিত হয় যাতে মুদ্রণ খরচ ও কাগজের অপচয় কম হয়। গ্যাং রান মুদ্রণ সাধারণত ব্যবহার করা হয় সিট-ফিড মুদ্রণ ব্যবস্থায় ও সিএমওয়াইকে কালার জব প্রসেসে, যাতে চারটি আলাদা মুদ্রণ প্লেট প্রয়োজন যা ছাপাখানার সিলিন্ডার থেকে ঝুলানো থাকে। ছাপাখানায় "গ্যাং রান" বা "গ্যাং" শব্দটি ব্যবহার করা হয় এটা বুঝাতে যে একটি বৃহৎ কাগজের পাতায় অনেকগুলো মুদ্রণের কাজ একই সাথে করা হয়। আসলে, একটি পোষ্টকার্ড যার আকার হল ৪ x ৬ একটি একটি করে মুদ্রণ না করে ছাপাখানায় যদি ১৫টি বিভিন্ন পোষ্টকার্ড একই সাথে একটি ২০ x ১৮ কাগজের পাতায় ছাপা হয় তাহলে একটি ছাপাতে যে সময় লাগবে মোটামুটি সেই সময়ে ১৫টি ছাপা যাবে অর্থাৎ একটির কাজের সময়ে ১৫ গুণ বেশি উৎপাদন সম্ভব।
মুদ্রণকৃত ইলেকট্রনিক্স হল ইলেকট্রনিক্স দ্রব্য উৎপাদনের জন্য ব্যবহৃত মুদ্রণের প্রমাণ পদ্ধতি। মুদ্রণকৃত ইলেকট্রনিক্স দ্রব্য মুদ্রণে খুব সস্তা উপকরণ যেমন পেপার বা ফ্লেক্সিবল ফ্লিম ব্যবহার করা যায়, যা হল সবচাইতে সাস্রয়ী উৎপাদন পদ্ধতি। ২০১০ সালের শুরুরদিক থেকে, মুদ্রণযোগ্য ইলেকট্রনিক্স ইন্ডাস্ট্রি তার গতি পেতে শুরু করে এবং বেশকিছু বড় কম্পানী, যার মধ্যে অন্যতম বেমিস কম্পানী ও ইলিনোস টুল ওয়ার্ক্স বিনিয়োগ করে ফেলে মুদ্রণকৃত ইলেকট্রনিক্স শিল্পে ও ইন্ডাস্ট্রি সহযোগী প্রতিষ্ঠান যেমন ওই-এ এবং ফ্লেক্সটেক এলায়েন্স ব্যাপক সহযোগীতা করে মুদ্রণকৃত ইলেকট্রনিক্স শিল্পের সার্বিক উন্নায়নে।[32][33]
মুদ্রণ পরিভাষাগুলো নির্দিষ্ট ভাবে ব্যবহৃত হয় মুদ্রণ শিল্পে। নিম্নলিখিত তালিকাটি হল মুদ্রণ পরিভাষার:[34]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.