Loading AI tools
উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
টেক্সটাইল[1] বা কাপড়[2] হচ্ছে একটি নমনীয় উপাদান যা প্রাকৃতিক বা কৃত্রিম সুতা বা তন্তুর দিয়ে তৈরী হয়। পাঁকিয়ে সুতা তৈরীতে সাধারণত ব্যবহৃত হয় উল, তিসি, তুলা, বা অন্যান্য উপাদান।[3] সেলাই, কাটা, বোনা, বাঁধা ইত্যাদির সাহায্যে কাপড় তৈরী হয়।
কাপড় সম্পর্কিত ব্যবসা বা কাজে (যেমন দর্জি এবং পোশাক নির্মাণ) ফেব্রিক এবং কাপড় শব্দদুটি টেক্সাটাইলের সমার্থক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। যদিও ব্যবহারভেদে এই পদসমূহের সূক্ষ্ম পার্থক্য আছে। বোনা সুতো দিয়ে তৈরী যে কোন বস্তুকে কাপড় বলা হয়। কাপড় কেটে, সেলাই করে, প্রশস্ত করে অন্যান্য গার্মেন্ট পণ্য প্রস্তুত করা হয়। ব্যবহারের উপর ভিত্তি করে কাপড়ের ভিন্ন ভিন্ন নাম হয়।
কাপড়ের ইংরেজি শব্দ 'টেক্সটাইল' এসেছে ল্যাটিন বিশেষণ টেক্সটিলিস, থেকে যার অর্থ 'বোনা', টেক্সটাস থেকে যা ক্রিয়া টেক্সেরে'র পাস্ট পার্টিসিপিল যার অর্থ বোনার জন্য।[4]
ফেব্রিক শব্দটি সবচেয়ে সম্প্রতি এসেছে মধ্য ফরাসি fabrique, বা 'নির্মাণ, জিনিস তৈরি' এবং তার আগে ল্যাটিন fabrica 'কর্মশালা; একটি শিল্প, বাণিজ্য; একটি দক্ষতাপূর্ণ উৎপাদন, গঠন, ফ্যাব্রিক',যা ল্যাটিন ফেবারবা 'যে সব শিল্পী শক্ত উপাদান নিয়ে কাজ করেন', পাই ধাভ থেকে যার অর্থ 'একসঙ্গে মাপসই করা হবে'।[5]
ক্লথ শব্দটি এসেছে প্রাচীন ইংরেজি ভাষা clað থেকে যার অর্থ, একটি কাপড়, বোনা বা নরম বস্তু মুড়িয়ে একত্রে করা, প্রোটো-জার্মানিক 'কালিথায' (ও. ফ্রিসিয় 'ক্লাথ', মধ্য ডাচ ক্লেড, মধ্য-উচ্চ জার্মানি 'kleine spouwen' এবং জার্মান 'kleid' সবগুলোর অর্থ কাপড়) থেকে।[6]
প্রজাতন্ত্র জর্জিয়ার গুহায় আবিষ্কৃত হয়েছে খ্রিস্টপূর্ব ৩৪,০০০ সালে তৈরী রঙ করা কাপড় - যা প্রাগৈতিহাসিক যুগে কাপড়ের মত বস্তুর উপস্থিতি প্রমাণ করে।[7][8]
কাপড় উৎপাদন একটি নৈপুণ্য যার গতি এবং উৎপাদন শিল্পায়ন এবং আধুনিক উৎপাদন কৌশলের সঙ্গে পরিবর্তিত হয়েছে। যাই হোক কাপড়ে ধরন, সাধারণ বোনা, টুইল বা সাটিন বোনা এসবে প্রাচীন এবং আধুনিক পদ্ধতির মধ্যে খুবই সামান্য পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়।
কাপড়ের বহুবিধ ব্যবহার আছে। তার মধ্যে সব থেকে সাধারণ ব্যবহার হচ্ছে পোশাক হিসেবে এবং পাত্র যেমন ব্যাগ ও ঝুড়ি হিসেবে। বাসাবাড়িতে কার্পেট, আসবাবের উপরে, দরজা জানালার পর্দা, তোয়ালে, টেবিলের ঢাকনা, বালিশ ও বিছানায়, কাঁথা সহ নানাবিধ শিল্পকর্মে কাপড় ব্যবহার করা হয়। কর্মক্ষেত্রে কাপড় ব্যবহৃত হয় শিল্প ও বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়ায় যেমন পাতন। এছাড়াও কাপড়ে বিবিধ ব্যবহার রয়েছে যেমন পতাকা, পিঠে ঝোলানো ব্যাগ, তাবু, জাল, রুমাল, ন্যাঁকড়া, পরিবহন উপকরণ যেমন বেলুন, ঘুড়ি, পাল এবং প্যারাশুট। যৌগিক পদার্থ যেমন ফাইবার গ্লাস এবং শিল্প জিয়োটেক্সটাইলস শক্তিশালীকরণে বস্ত্র ব্যবহৃত হয়। অনেক ঐতিহ্যবাহী কারুশিল্প যেমন সেলাই, নকশী কাঁথা ইত্যাদি সূচিকর্মে কাপড়ের ব্যবহার হয়।
শিল্প উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত বস্ত্র নির্বাচনের ক্ষেত্রে তাদের দেখনাইয়ের (সৌন্দর্য) তুলনায় বৈশিষ্ট্যাবলীকে গুরুত্ব দেওয়া হয় এবং এই কাপড় গুলো সাধারণ ভাবে টেকনিক্যাল টেক্সটাইল বা প্রযুক্তিগত বস্ত্র নামে পরিচিত। প্রযুক্তিগত বস্ত্র যেমন জিয়োটেক্সটাইল (ব্যবহৃত হয় অটোমোটিভ কাজে), মেডিকেল টেক্সটাইল (যেমন ইমপ্লান্ট), এগ্রোটেক্সটাইল (শষ্য প্রতিরোধে ব্যবহৃত বস্ত্র), সুরক্ষা বস্ত্র ( উদাহরণ তাপ এবং বিকিরণ প্রতিরোধী অগ্নিযোদ্ধা পোশাক), ওয়েল্ডারদের গলিত ধাতু প্রতিরোধী পোশাক এবং ছুরিকাঘাত ও বুলেট প্রতিরোধী পোশাক। এই সব কাজে ব্যবহারের ক্ষেত্রে কঠোর কর্মক্ষমতা পূরণ করা আবশ্যক। দস্তা অক্সাইডের সুক্ষ তার দিয়ে বোনা পরীক্ষাগার কাপড় বাতাস বা শরীরের মত কম্পণ ব্যবহার করে সেলফ-পাওয়ারিয়ং ন্যানোসিস্টেম প্রদর্শন করে।[9][10]
ফ্যাশন ডিজাইনারগণ অন্যদের থেকে তাদের করা ডিজাইন আলাদা করার ক্ষেত্রে সাধারণভাবে কাপড়ের ডিজাইনের উপর নির্ভর করে। আরমানি, জিয়ান্নি ভার্সাসে এবং এমিলিয়ো পুচ্চির করা কাজ কাপড়ের নকশা দেখে খুব সহজে আলাদা করা যায়।
বিভিন্ন উপাদান থেকে বস্ত্র তৈরী করা যেতে পারে। চারটি প্রধান উৎস থেকে এই উপাদানগুলো পাওয়া যায়ঃ পশু (উল, সিল্ক), উদ্ভিদ (তুলা, শণ, পাট),খনিজ (অ্যাসবেসটস, গ্লাস ফাইবার), এবং সিন্থেটিক (নাইলন, পলিয়েস্টার, এক্রাইলিক)। অতীতে প্রাকৃতিক উৎস যেমন উদ্ভিদ, প্রাণী ও খনিজ উৎস থেকে প্রাপ্ত সুতা দিয়ে বস্ত্র বয়ন করা হতো। ২০ শতকে পেট্রোলিয়াম থেকে তৈরী কৃত্রিম তন্তু থেকে কাপড় তৈরী শুরু হয়।
বিভিন্ন সক্ষমতার এবং স্থায়ীত্বের কাপড় তৈরী করা হয়। কোনটি হয় সুক্ষ সুতায় তৈরী পাতলা কাপড়, কোনটি মোটা সুতোয় তৈরী ক্যানভাস কাপড়। সাধারণ সুতার থেকে কয়েকউন সরু সুতা দিয়ে তৈরী কাপড়কে মাইক্রোফাইবার বলা হয়।
প্রাণীজাত কাপড় সাধারণত তৈরি হয় চুল, পশম, চামড়া বা সিল্ক (রেশমপোকার ক্ষেত্রে) থেকে।
উল বলতে সেই চুলকে বোঝায় যায় গৃহপালিত ছাগল বা ভেড়া থেকে সংগ্রহ করা হয়। যা অন্যান্য প্রাণীর চুল থেকে সহজে আলাদা করা যায় কারণ এর প্রতিটি চুল বা পশমে ল্যানোলিন নামক মোম মিশ্রণের আবরণ থাকে (উল গ্রিজ নামেও পরিচিত) যা জলরোধী এবন ধুলা-ময়লারোধী।
পশমী বলতে হালকা সুতাকে বোঝায় যা অসমান্তরাল ও অমসৃণ, অন্যদিকে সুক্ষ সুতা বলতে বোঝায় মসৃণ সুতা যা লম্বা, যা চিরুনি দিয়ে আঁচড়ানো যায়। উল দিয়ে কাপড় তৈরী করা যায়। ভারতের কাশ্মিরী জাতের ছাগল থেকে সংগৃহীত কাশ্মিরী এবং উত্তর আমেরিকার অ্যাঙ্গোরা ছাগলের চুল মোহেয়ার হচ্ছে এই ধরনের উল যা তাদের স্নিগ্ধতার জন্য সুপরিচিত।
চুল বা পশম দিয়ে তৈরিকৃত অন্যান্য প্রাণীজাত কাপড় হল আলপাকা উল, ভিকিউনা উল, লামা উল, উটের পশম; যা কিনা কোট, জ্যাকেট, কম্বল ইত্যাদি তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। অ্যাঙ্গোরা বলতে অ্যাঙ্গোরা খরগোশের লম্বা, পুরু নরম চুলকেও বুঝিয়ে থাকে। মুস্কোক্সের ভেতরকার সুক্ষ উল হচ্ছে কিভিউট।
উল থেকে প্রস্তুত একটা মোটা উলের কাপড় হচ্ছে ওয়াদমাল যা ১০০০~১৫০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের কাছাকাছি সময়ে স্ক্যান্ডিনেভিয়ায় তৈরী হতো।
সিল্ক একটি পশুজাত টেক্সটাইল যা চীনা রেশমের গুটি থেকে তৈরী হয় যা একটি মসৃণ ফ্যাব্রিক স্নিগ্ধতার জন্য সুপরিচিত। সিল্কের প্রধান প্রকারভেদ দুটিঃ রেশম সিল্ক বম্বিক্স মোরি থেকে উৎপাদিত এবং 'ওয়াইল্ড সিল্ক' যেমন তোষা সিল্ক। রেশম সিল্ক তৈরীর ক্ষেত্রে প্রথমে শুককীট উৎপাদন করা হয় এবং তাদেরকে সতেজ তুঁতপাতা খেতে দেওয়া হয় অন্যদিকে তোষা সিল্ক তৈরীর ক্ষেত্রে রেশমপোকাকে ওক পাতা খেতে দেওয়া হয়। বিশ্বের প্রায় চার-পঞ্চমাংশ সিল্ক উৎপাদন সিল্ক চাষের উপর নির্ভরশীল।[11]
ঘাস, নলখাগড়া, শণ, এবং সিসল গাছ দড়ি তৈরীর জন্য ব্যবহৃত হতো। এই কাজে ঘাস এবং নলখাগড়ার পুরো গাছ ব্যবহৃত হলেও বাকি দুটোর ক্ষেত্রে উদ্ভিজ্জ তন্তু ব্যবহার করা হয়। নারকেল তন্তু দিয়ে দড়ি, মেঝের চাদর, মাদুর, ব্রাশ, বস্তা ইত্যাদি প্রস্তুত করা যায়।
টুপি তৈরি করতে খড় ও বাঁশ উভয়ই ব্যবহার করা হয়। খড় বা শুকনো ঘাস, তুলার বদলে ঠাসাঠাসি করে গদি হিসেবে ব্যবহার করা যায়।
পাল্প উড গাছ, তুলা, ধান, শণ, এবং বিছুটি থেকে প্রাপ্ত তন্তু ব্যবহার করে কাগজ তৈরী করা হয়।
তুলা, পাট, হেম্প, মোডাল এবং এমনকি বাঁশের ফাইবার ব্যবহার করে পোশাক তৈরী করা হয়। পাইনা (আনারস তন্তু) এবং র্যামি ইত্যাদি ব্যবহার করে কাপড় তৈরী করা হয়, সাধারণত অন্যান্য তন্তু যেমন তুলার সাথে মিশিয়ে ব্যবহার করা হয়। বিছুটি থেকে প্রাপ্ত তন্তু শন বা ফ্লাক্সের তন্তুর অনুরূপ। মিল্কুইড কান্ডের তন্তুও ব্যবহারের কথা জানা যায় কিন্তু শণ বা ফ্লাক্সের তুলনায় খুবই দুর্বল।
লেসবার্ক গাছের বাকলের ভেতরকার অংশ সুক্ষ জালাকৃতির এবং পোশাক এবং আনুষঙ্গিক দ্রব্য যেমন দড়ি তৈরীতে ব্যবহৃত হয়।
সিল্ক, ভেলভেট এবং ট্যাফেটাসের মত কাপড়ের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করতে এসিটেট ব্যবহার করা হয়।
সমুদ্র আগাছা ব্যবহার করে কাপড় প্রস্তুত করা যায়ঃ আলগিনেট নামে একধরনের পানিতে দ্রবণীয় কাপড় প্রস্তুত করা যায় যা ধরার তন্তু হিসেবে ব্যবহার করা হয়। কাপড়টি শেষ হলে আলগিনেট দ্রবীভূত হয়ে যায় এবং জায়গাটি ফাঁকা হয়ে যায়।
কাঠের মন্ড থেকে লায়োসেল নামে একধরনের কৃত্রিম তন্তু পাওয়া যায়। এটাকে কৃত্রিম সিল্কের সমতূল্য হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এটা খুবই শক্ত এবং অধিকাংশ সময়ে অন্যান্য তন্তু যেমন তুলার সাথে মেশানো হয়।
শণ, খাগড়া, বিছুটি প্রভূতি গাছ থেকে প্রাপ্ত সুতা বাস্ট নামেই পরিচিত।
ভিনাইল টাইলস, শিটিং এবং এডহেসিভ, ট্রাঞ্জিট প্যানেল ও সাইডিং, নকশী সিলিন, মঞ্চের পর্দা এবং আগুন কম্বল তৈরীতে অ্যাসবেস্টস এবং ব্যাসল্ট ফাইবার ব্যবহার করা হয়।
লোহার বোর্ড এবং গদি কভার, দড়ি এবং তার, শক্তিবৃদ্ধি ফাইবার যৌগিক পদার্থ জন্য, পোকাধরার জাল, অগ্নিরোধী এবং প্রতিরক্ষামূলক ফ্যাব্রিক, শব্দরোধী, অদাহ্য এবং অন্তরক কাপড় তৈরীতে গ্লাস ফাইবার ব্যবহৃত হয়। গ্লাস ফাইবার বুনে তৈরী করা হয় এবং বাইরে টেফলনের আবরণ দেওয়া হয়। ১৯৬৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রে এই অদাহ্য কাপড় নাইলনকে প্রতিস্থাপন করে।
ধাতব ফাইবার, ধাতব ফয়েল, এবং ধাতব তারের বিভিন্ন রকমের ব্যবহার আছে। কাপড়যুক্ত স্বর্ণ ও গহনা তৈরীতেও ব্যবহৃত হয়। হার্ডওয়্যার কাপড় (শব্দটি শুধুমাত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ব্যবহৃত হয়) হচ্ছে মোটা সেলাই করা স্টিলের তার, নির্মাণ কাজে ব্যবহার করা হয়। এটা সাধারণ জানালার মত কিন্তু অনেক ভারী। এটা অনেকসময় দরজার নিচের অংশে ব্যবহার করা হয় কুকুরের আঁচড়ের দাগ প্রতিরোধ করতে। পোল্ট্রি এবং অন্যান্য প্রাণী নিয়ন্ত্রণের জন্য এটা ব্যবহার করা হয়।
প্রাথমিকভাবে সকল কৃত্রিম বস্ত্র পোশাক তৈরীতে ব্যবহৃত হয়।
সব ধরনের পোশাক তৈরীতেই পলিয়েস্টার ব্যবহার করা হয়। এটা এককভাবে অথবা অন্যান্য তন্তুর সাথে মিশিয়ে ব্যবহার করা হয়।
আরামিড ফাইবার (যেমন ত্বারণ) অগ্নি প্রতিরোধী পোশাক, কাটা সুরক্ষা এবং বর্ম তৈরীতে ব্যবহৃত হয়।
এক্রিলিক ফাইবার উলের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা হয়। কাশ্মিরী শাল সহ অন্যান্য উলের পরিবর্তে এটা ব্যবহার করা হয়।
সিল্কের বিকল্প হিসেবে নাইলন ব্যবহার করা হয়। এটা প্যান্টিহোজ উৎপাদনে ব্যবহৃত হয়। মোটা নাইলন ব্যবহার করে দড়ি এবং বাইরের পোশাক তৈরী করা হয়। বক্ষবন্ধনী, সাঁতারের পোশাক তৈরীতে এটা ব্যবহৃত হয়।
অলেফিন ফাইবার ব্যবহার করে লাইনিং এবং গরম পোশাক তৈরী করা হয়। অলেফিন হাইড্রোফোবিক, খুব দ্রুত শুকিয়ে যায়। টাইভেক বাণিজ্য নামে এটা বাজারে বিক্রি হয়।
ইনজিয়ো হচ্ছে একটি পলিলাকটাইড ফাইবার যা অন্যান্য তন্তু যেমন তুলার সাথে মেশানো হয় এবং পোশাক নির্মাণে ব্যবহৃত হয়। কৃত্রিম তন্তুর মধ্যে এটাই সবথেকে বেশি হাইড্রোফিলিক, এটা সহজে ঘাম শুষে নেয়।
লুরেক্স একটি ধাতব কাপড় যা ভূষণ হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
দুধ প্রোটিন ব্যবহার করেও কৃত্রিম তন্তু প্রস্তুত করা যায়। দুধ বা ছানাজাতীয় কাপড় জার্মানিতে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় তৈরী হয় এবং পরে ইতালি এবং ১৯৩০ সালে আমেরিকায় তৈরী হয়।[13] দুধের কাপড় খুব টেকসই হয় না এবং সহজে বলিরেখা পড়ে যায়। এরা pH মানুষের চামড়ার অনুরূপ এবং অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য আছে। এটা বাজারে জীবাণুবিয়োজ্য, নবায়নযোগ্য সিন্থেটিক ফাইবার হিসেবে বিক্রি করা হয়।[14]
কার্বন ফাইবার অধিকাংশ ক্ষেত্রে যৌগিক পদার্থে রজনের সঙ্গে একসঙ্গে ব্যবহার হয়, যেমন কার্বন ফাইবার রেইনফোর্সড প্লাস্টিক। কার্বনাইজেশনের মাধ্যমে পলিমার ফাইবার থেকে এই ফাইবার প্রস্তুত করা হয়।
শীর্ষ পাঁচ বস্ত্র রপ্তানীকারক—২০১৩ ($ বিলিয়ন) | |
---|---|
চীন | ২৭৪ |
ভারত | ৪০ |
ইতালি | ৩৬ |
জার্মানি | ৩৫ |
বাংলাদেশ | ২৮ |
উৎস: টাইমস অব ইন্ডিয়া [15] |
বয়ন বা বোনা হচ্ছে কাপড় তৈরীর পদ্ধতি যেখানে এক সারি লম্বা সুতা থাকে এবং এর মধ্য দিয়ে আড়াআড়িভাবে আরেক সারি সুতা থাকে। এটা একটি কাঠামো বা যন্ত্রের সাহায্যে করা হয় যা তাঁত নামে পরিচিত। বিভিন্ন প্রকারের তাঁত আছে। এখনও অনেক স্থানে তাঁতে কাপড় বোনা হয় তবে বেশিরভাগ কাপড় মেশিনে বোনা হয়। সুতা গুলাকে টান টান করে ফ্রেমের উপর বিন্যস্ত করা হয়। সেলাইয়ের সুই বা ক্রোশেই হুক যা বাংলায় মাকু নামে পরিচিত। লম্বা সুতা দুই সারিতে সাজানো থাকে। এক সারি উপরে উঠলে এই ফাঁকের মধ্যে দিয়ে মাকু চালানো হয়। এভাবে ধারাবাহিকভাবে মাকু চালনা চলতে থাকে। তবে এক ফাঁকে দুইবার মাকু চালনা করা হয় না। মেশিনের সাহায্যে বুননের সময়ে মাকু ব্যবহার করা হয় না কিন্তু তাঁতে বোনার সময়ে অবশ্যই মাকু ব্যবহার করা হয়।
স্প্রেড টো কাপড় তৈরীর একটি পদ্ধতি যেখানে সুতাউলো পাতলা টেপের মধ্যে ছড়িয়ে রাখা হয় এরপর টেপ গুলোকে লম্বালম্বি বোনা হয়। এই পদ্ধতিতে অধিকাংশ সময়ে যৌগিক পদার্থের জন্য ব্যবহার করা হয়। স্প্রেড টো কাপড় থেকে কার্বন, আরামিড প্রস্তুত করা যায়।
ব্রেইডিং অথবা প্লেইটিং পদ্ধতিতে সুতা একত্রে পাকিয়ে কাপড়ে পরিনত করা হয়। সুতা একত্রে বেধে ম্যাকরেম প্রস্তুতে ব্যবহার করা হয়।
সাধীনভাবে সুতা জুড়ে ফিতা তৈরী হয়, যা ব্যবহার করে উপরের যে কোন পদ্ধতিতে কাপড় তৈরী সম্ভব। হাত বা মেশিন উভয়ের সাহায্যেই ফিতা তৈরী সম্ভব।
কার্পেট, রাগ, মখমল, ভেলর এবং ভেলভেটীন ইত্যাদি তৈরীতে সেলাই করা কাপড় থেকে প্রাপ্ত সুতা থেকে প্রস্তুত করা হয়। একটি তুলতুলে স্তর তৈরী করা হয় যা ন্যাপ বা পাইল বা গাদা নামে পরিচিত।
কাপড়ের পাতা বা মাদুরকে একত্রে চেপে জট না পাকানো পর্যন্ত কাজ করে যাওয়াকে ফেলটিং বলে। কাপড়কে ভেজাতে সাবানজলের মত জল কাপড়ের উপর ছড়িয়ে দেওয়া হয় যাতে উলের সুতার আনুবিক্ষনিক স্কেলগুলো উন্মুক্ত হয়ে যায়।
সুতোর মধ্যে বন্ধন তৈরী করে বুনন না করা কাপড় তৈরি করা যায়। বন্ধন তাপীয় যা যান্ত্রিক হতে পারে, আঠাও ব্যবহার করা যেতে পারে।
বাকলকে পিষে নরম ও সমতল করে বাকল কাপড় বা বল্কল বস্ত্র তৈরী করা হয়।
কাপড়কে প্রায় সব রঙেই রঙ করা যায়। প্রতি পাউন্ড কাপড় রঙ করার জন্য কয়েক ডজন গ্যালন পানির প্রয়োজন হয়।[16] রঙিন নকশা তৈরী করতে বিভিন্ন রঙের কাপড় একত্রে জুড়ে দেওয়া হয় (টার্টান বা উজবেক ইকার্ট), কাপড়ের উপর রঙিন সুতো সুইয়ের সাহায্যে যুক্ত করা হয় (এম্ব্রয়ডারি বা সূঁচিকর্ম), রঙের সাহায্যে প্যাটার্ণ তৈরী করা হয়, নির্দিষ্ট এলাকা ঢেকে রেখে অন্য এলাকায় রঙ করা (টাই-রঞ্জনবিদ্যা), কাপড়ের উপর মোম দিয়ে নকশা অঙ্কন এবং এর মধ্যে রঙ করা (বুটিক), অথবা কাপড়ের উপর বিভিন্ন চিত্র অঙ্কন পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। ভারতসহ পৃথিবীর অনেক স্থানে এখনো কাঠের ব্লক ব্যবহার করা হয় যা ২২০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে চীনে কাপড় বিরঞ্জনে ব্যবহৃত হতো। কাপড়কে ফ্যাকাশে বা সাদা করতে অনেক সময় ব্লিচ করা হয়।
কাপড়ে অনেকসময় রাসায়নিকের ব্যবহার করা হয় তাদের বৈশিষ্ট্যে পরিবর্তন আনার জন্য। ১৯ শতকে এবং ২০ শতকের প্রথম দিকে কাপড়ের দাগ এবং কুঞ্চন দূর করতে ব্যাপক ভাগে স্টার্চ ব্যবহার করা হতো।
১৯ শতকে জার্মানি আলো প্রতিফলনকারী শক্তিশালী উপাদানের আইজেনগার্ন যার অর্থ লোহার সুতা। তুলার সুতারকে শর্করা এবং প্যারাফিন মোমের মধ্যে ভিজিয়ে এটা প্রস্তুত করা হয়। এরপর সুতাগুলোকে টানটান করে ইস্পাত রোলার এবং ব্রাশের দ্বারা পালিশ করা হয়। প্রক্রিয়া শেষে চিকন, মজবুত সুতা তৈরী হয়।[17][18]
১৯৯০ সাল থেকে স্থায়ী চাপ প্রক্রিয়ার মত পদ্ধতির অগ্রগতির সাথে সাথে কাপড়কে মজবুত এবং নিভাঁজ করতে ফিনিশিং এজেন্ট ব্যবহৃত হচ্ছে।[19] সাম্প্রতিক সময়ে ন্যানোম্যাটেরিয়াল গবেষণা অতিরিক্ত অগ্রগতিতে ভূমিকা রাখছে। ন্যানো-টেক্স এবং ন্যানোহরিজন এর মত কোম্পানি পানি, দাগ, কুঞ্চন, প্যাথোজেন যেমন ব্যাকটেরিয়া এবং ছত্রাক প্রতিরোধী কাপড় তৈরীর জন্য ধাতব ন্যানোপার্টিকেল ব্যবহার শুরু করেছে।[20]
আজকের দিনে কাপড় ব্যবহারকারীর কাছে পৌঁছানোর পূর্বে আগের তুলনায় অনেক বেশি পরিচর্যা করা হয়। ফর্মাল্ডিহাইড থেকে জৈব এসিডের পরীক্ষণ, অগ্নিরোধী থেকে কাপড় বিরঞ্জন, অসংখ্য সম্ভাবনা আছে। এগুলোর কারণে প্রান্তিক ব্যবহারকারীর ত্বকে প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। বিভিন্ন এসিড এবং সক্রিয় রঙ ব্যক্তি বিশেষের শরীরে এলার্জিজনিত সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। এমনকি এ গ্রুপের কিছু রঙের সাথে ত্বকের সংস্পর্শের ফলে বিভিন্ন শ্রেণির ডার্মাটাইটিস হতে পারে।
যদি কাপড়ে ফর্মালডিহাইডের মাত্রা বেড়ে যায় তাহলে এলার্জি প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। সেজন্য কাপড়ের রাসায়নিক মান নিয়ন্ত্রণ এবং পরীক্ষণ খুবই জরুরী। ফ্লেম রিটারডেন্ট (প্রধানত ব্রোমিনেটেড রূপে) উদ্বেগের কারণ হিসেবে দেখা দেয় কারণ এদের পরিবেশপ্রভাব এবং তাদের বিষাক্ততা উদ্বেগজনক। এসব এডিটিভসের জন্য বাণিজ্যিক পরীক্ষাগারে পরীক্ষা করা সম্ভব। কাপড়জাত পণ্যের মান Oeko-tex মাননিয়ন্ত্রণের আদর্শ সূচক মোতাবেক হওয়া উচিত।
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.