দার্জিলিং
ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের শহর উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের শহর উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
দার্জিলিং (নেপালি: दार्जिलिङ দার্জিলিঙ) হল ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের সবচেয়ে উত্তর অঞ্চলের একটি শহর। এটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৬,৭০৯ ফু (২,০৪৪.৯ মি) উচ্চতায় পূর্ব হিমালয়ের শিবালিক পর্বতশ্রেণিতে অবস্থিত।[11] দার্জিলিংয়ের পশ্চিমাংশে নেপালের কোশি প্রদেশ, পূর্বে ভুটান, উত্তরে ভারতের সিকিম রাজ্য এবং আরও উত্তরে চীনের তিব্বত স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল অবস্থিত। শহরটির দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্বে বাংলাদেশ এবং দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য অবস্থিত। শিলিগুড়ি করিডোর নামক সরু রাস্তা দিয়ে শহরটি পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের সাথে সংযুক্ত রয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের আংশিক স্বায়ত্ত্বশাসিত জেলা দার্জিলিঙের সদর দফতর এই শহরেই অবস্থিত। বিশ্বের তৃতীয় উচ্চতম পর্বতশৃঙ্গ কাঞ্চনজঙ্ঘা শহরটির উত্তরে অবস্থিত এবং পরিষ্কার দিনে তা এই শহর থেকে দৃশ্যমান হয়ে থাকে।[lower-alpha 6][16]
দার্জিলিং | |
---|---|
শহর | |
ডাকনাম: পাহাড়ের রানি[1] | |
পশ্চিমবঙ্গ ও ভারতের মানচিত্রে দার্জিলিং শহরের অবস্থান | |
স্থানাঙ্ক: ২৭°৩′ উত্তর ৮৮°১৬′ পূর্ব | |
দেশ | ভারত |
রাজ্য | পশ্চিমবঙ্গ |
জেলা | দার্জিলিং |
বসতি স্থাপন | ১৮৩৫ সালে সিকিম রাজ্যের চোগিয়াল সুফুদ নামগ্যালের নিকট থেকে ইজারা, ও ১৮৪৯ সালে ইজারার মেয়াদপূর্তি[2][3][4] পৌরসভা, ১ জুলাই ১৮৫০[5][6] |
প্রতিষ্ঠাতা | ভারতে কোম্পানি শাসনামলে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি[7] |
সরকার | |
• ধরন | পৌরসভা |
• শাসক | দার্জিলিং পৌরসভা |
• পৌরপ্রধান | দিপেন ঠাকুরি[8] |
আয়তন[lower-alpha 1][10] | |
• মোট | ৭.৪৩ বর্গকিমি (২.৮৭ বর্গমাইল) |
উচ্চতা[lower-alpha 2] | ২,০৪৫ মিটার (৬,৭০৯ ফুট) |
জনসংখ্যা (২০১১)[lower-alpha 3][lower-alpha 4][lower-alpha 5] | |
• মোট | ১,১৮,৮০৫ |
• জনঘনত্ব | ১৫,৯৯০/বর্গকিমি (৪১,৪০০/বর্গমাইল) |
ভাষা | |
• দাপ্তরিক | বাংলা ও নেপালি[14] |
সময় অঞ্চল | ভারত মান সময় (ইউটিসি+০৫:৩০) |
পিন কোড | ৭৩৪১০১ |
টেলিফোন কোড | ০৩৫৪ |
যানবাহন নিবন্ধন | ডব্লিউবি-৭৬ ও ডব্লিউবি-৭৭ |
লোকসভা কেন্দ্র | দার্জিলিং |
বিধানসভা কেন্দ্র | দার্জিলিং |
ওয়েবসাইট | darjeelingmunicipality |
উনবিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে ভারতে কোম্পানি শাসনামলে ব্রিটিশ কর্মকর্তা, সেনা সদস্য ও তাদের পরিবারের সম্ভাব্য গ্রীষ্মকালীন বসবাসের জন্য দার্জিলিংকে বাছাই করা হয়। এই সরু পর্বতশিরা সিকিম রাজ্য থেকে ইজারা নেওয়া হয় এবং ঘটনাচক্রে ব্রিটিশ ভারতের সাথে সংযুক্ত করা হয়। ঔপনিবেশিক প্রশাসন এই এলাকায় একটি স্যানেটোরিয়াম ও একটি সামরিক ডিপো স্থাপন করার পর এই শহরের নথিবদ্ধ ইতিহাসের সূচনা ঘটে। এরপর এই অঞ্চলে প্রচুর চা বাগান গড়ে ওঠে এবং পাহাড়ের ঢালে চা উৎপাদন নিয়ে নিরীক্ষা অত্যন্ত সফল হয়। চা উৎপাদকেরা কালো চায়ের সংকর উৎপাদন করতে শুরু করেন এবং নতুন ধরনের গাঁজন প্রক্রিয়ার উদ্ভাবনা করেন। এর ফলে যে বিশেষ দার্জিলিং চায়ের উদ্ভব ঘটে, তা আন্তার্জাতিক স্তরে স্বীকৃতি লাভ করে এবং বিশ্বের সর্বাধিক জনপ্রিয় কালো চাগুলির মধ্যে অন্যতম আসন গ্রহণ করে।[17] বন পরিষ্কার করতে, ইউরোপীয় পদ্ধতিতে কুটির বানাতে এবং চা চাষ করতে নেপাল থেকে হাজার হাজার শ্রমিক নিয়োগ দেওয়া হয়। ব্যাপকহারে বন উজাড়ের ফলে এখানের আদিবাসীরা বাস্তুচ্যুত হয়। ভারতে স্থায়ীভাবে বসবাসকারী ব্রিটিশদের বাচ্চাদের জন্য দার্জিলিংয়ে ও এর আশেপাশে আবাসিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়।
উনবিংশ শতাব্দীর শেষ দিকে একটি অভূতপূর্ব সরু-গেজ পার্বত্য রেলওয়ে দার্জিলিং হিমালয়ান রেল গ্রীষ্মকালীন বসবাসকারীদের এখানে নিয়ে আসত এবং সারা বিশ্বে রপ্তানির জন্য চা বহন করত। ভারতের যে অল্প কয়েকটি বাষ্পচালিত ইঞ্জিন এখনও কার্যকরী, তার মধ্যে কয়েকটি এই রেলের অন্তর্গত। এটি বর্তমানে ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যের একটি। ১৯৪৭ সালে ভারতের স্বাধীনতার পর ব্রিটিশরা দার্জিলিং ত্যাগ করলে সমতলের ধনাঢ্য ভারতীয়রা কুটিরগুলো এবং শহরের বাইরের ভারতীয় ব্যবসায়ী ও ব্যবসায়ীগোষ্ঠী চা বাগানগুলো ক্রয় করে।
দার্জিলিং শহরে ব্রিটিশ-ধাঁচের একাধিক পাবলিক স্কুল রয়েছে। ভারতের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এবং কয়েকটি প্রতিবেশী রাষ্ট্র থেকে ছাত্রছাত্রীরা এখানে পড়াশোনা করতে আসে। লেপচা, খাম্বা, গোর্খা, নেওয়ার, শেরপা, ভুটিয়া, বাঙালি ও ভারতের অন্যান্য জাতি ও ভাষাগোষ্ঠীর সমাবেশ দার্জিলিঙের সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যে প্রতিফলিত হয়েছে। ১৯৮০-এর দশকে দার্জিলিং এবং পার্শ্ববর্তী জেলার সদর কালিম্পং ছিল গোর্খাল্যান্ড আন্দোলনের কেন্দ্রস্থল।
ব্রিটিশদের আগমনের পূর্বে এখানকার স্থানীয় লেপচা জাতিগোষ্ঠীর কাছে দার্জিলিং স্থানটি দোর্জে-লিং বা "বজ্রপাতের স্থান" নামে পরিচিত ছিল।[18][19] অক্সফোর্ড কনসাইজ ডিকশনারি অব ওয়ার্ল্ড প্লেস নেমস অনুসারে দার্জিলিং নামটির উৎপত্তি তিব্বতি শব্দ দোর্জে (বজ্র) ও লিং (স্থান বা দেশ) শব্দ দু-টি থেকে, যেখানে ব্জ্র হল হিন্দুধর্মের দেবতা ইন্দ্রের অস্ত্র।[20]
দার্জিলিংয়ের ইতিহাস সিক্কিম, নেপাল, ভুটান ও ব্রিটিশ ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীন ভাবে জড়িত। ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধ পর্য্যন্ত সিক্কিম রাজ্য দ্বারা দার্জিলিং সংলগ্ন পাহাড়ী অঞ্চল এবং নেপাল রাজ্য দ্বারা শিলিগুড়ি সংলগ্ন তরাই সমতল অঞ্চল শাসিত হত।[21] ১৭৮০ খ্রিষ্টাব্দ থেকে নেপালের গুর্খারা সমগ্র পাহাড়ী অঞ্চল অধিকারের চেষ্টা শুরু করলে সিক্কিম রাজ্যের ছোস-র্গ্যাল তাদের সঙ্গে যুদ্ধে জড়িত হয়ে পড়েন। ঊনবিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে নেপালীরা তিস্তা নদীর তীর পর্য্যন্ত সিক্কিম সেনাবাহিনীকে হঠিয়ে দিতে সক্ষম হয়।[22] এই সময় সমগ্র উত্তর সীমান্তে নেপালীদের বিজয়যাত্রা রুখতে ব্রিটিশরা তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়। ১৮১৪ খ্রিষ্টাব্দে সংগঠিত ইঙ্গ-গুর্খা যুদ্ধের ফলে গুর্খারা পরাজিত হয়ে পরের বছর সগৌলি চুক্তি স্বাক্ষর করে। এই চুক্তির ফলে সিক্কিম রাজ্য থেকে অধিকৃত মেচী নদী থেকে তিস্তা নদী পর্যন্ত সমস্ত অঞ্চল নেপালীরা ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে সমর্পণ করতে বাধ্য হয়। ১৮১৭ খ্রিষ্টাব্দে তিতালিয়া চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি এই অঞ্চল ছোস-র্গ্যালকে ফিরিয়ে দিয়ে সিক্কিম রাজ্যের সার্বভৌমত্ব সুনিশ্চিত করে।[23]
১৮২৮ খ্রিষ্টাব্দে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির এক প্রতিনিধিদল নেপাল-সিক্কিম অঞ্চলের সীমান্তে তাদের যাত্রাকালে দার্জিলিং অঞ্চলে অবস্থান করার সময় এই স্থানে ব্রিটিশ সৈন্যবাহিনীর স্বাস্থ্য উদ্ধারকেন্দ্র নির্মাণ করার সিদ্ধান্ত নেন।[24][25] ১৮৩৫ খ্রিষ্টাব্দে কোম্পানি ছোস-র্গ্যালের নিকট হতে মহানন্দা নদীর পশ্চিমাঞ্চল লীজ নেন।[26] ১৮৪৯ খ্রিষ্টাব্দে সিক্কিম রাজ্য আর্থার ক্যাম্পবেল নামক কোম্পানির একজন আধিকারিক এবং জোসেফ ডাল্টন হুকার নামক একজন উদ্ভিদবিদ ও অভিযাত্রীকে গ্রেপ্তার করলে কোম্পানি তাদের মুক্ত করার জন্য সেনাবাহিনী পাঠায়, যার ফলে ১৮৫০ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে কোম্পানি ৬৪০ বর্গমাইল (১,৭০০ কিমি২) এলাকা অধিকার করে নেয়। ১৮৬৪ খ্রিষ্টাব্দে ভূ্টান ও ব্রিটিশরা সিঞ্চুলা চুক্তি স্বাক্ষর করলে কালিম্পং ও পাহাড়ের গিরিপথগুলির ওপর ব্রিটিশ রাজের অধিকার হয়।[23] ব্রিটিশ ও সিক্কিমের মধ্যে ক্রমবর্ধমান বিবাদের ফলে ১৮৬৫ খ্রিষ্টাব্দে তিস্তা নদীর পূর্ব তীরের অঞ্চলগুলি ব্রিটিশদের হস্তগত হয়। ১৮৬৬ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে ১,২৩৪ বর্গমাইল (৩,২০০ কিমি২) ক্ষেত্রফল এলাকা নিয়ে দার্জিলিং জেলা গঠিত হয়, যা বর্তমানে একই আকারের রয়ে গেছে। [23]
গ্রীষ্মকালে সমতলভূমির প্রচণ্ড দাবদাহ থেকে রক্ষা পাওয়ার উদ্দেশ্যে ব্রিটিশ আধিকারিকেরা দার্জিলিংয়ের মনোরম আবহাওয়ায় বসবাস শুরু করলে দার্জিলিং একটি শৈলশহর ও স্বাস্থ্য উদ্ধারকেন্দ্র হিসেবে গড়ে ওঠে।[27] আর্থার ক্যাম্পবেল ও রবার্ট নেপিয়ার এই শৈলশহর গঠনে অগ্রণী ভূমিকা নেন। তাদের এই প্রচেষ্টার ফলে ১৮৩৫ থেকে ১৮৪৯ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে পাহাড়ের ঢালে চাষাবাদ ও ব্যবসা বাণিজ্য শুরু হলে দার্জিলিংয়ের জনসংখ্যা শতগুণ বৃদ্ধি পায়।[23][28] ১৮৩৯ থেকে ১৮৪২ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে সমতলের সঙ্গে সংযোগকারী প্রথম সড়কপথ নির্মিত হয়।[27][28] ১৮৪৮ খ্রিষ্টাব্দে ব্রিটিশ সৈন্যদের জন্য অস্ত্রাগার নির্মিত হয় এবং ১৮৫০ খ্রিষ্টাব্দে এই শহরকে পুরসভায় পরিণত করা হয়।[28] ১৮৫৬ খ্রিষ্টাব্দ থেকে বাণিজ্যিক ভাবে চা চাষ শুরু হলে বেশ কিছু ব্রিটিশ চা প্রস্তুতকারক এই স্থানে বসবাস শুরু করেন।[24] ১৮৬৪ খ্রিষ্টাব্দে দার্জিলিং শহরকে বেঙ্গল প্রেসিডেন্সের গ্রীষ্মকালীন রাজধানী রূপে আনুষ্ঠানিক ভাবে ঘোষণা করা হয়।[29] স্কটিশ ধর্মপ্রচারকরা ব্রিটিশ আধিবাসীদের জন্য বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা শুরু করেন। ১৮৮১ খ্রিষ্টাব্দে দার্জিলিং হিমালয়ান রেল চালু হলে শহরের উন্নয়ন আরো দ্রুত হারে বৃদ্ধি পায়।[30]
ব্রিটিশ শাসনকালের শুরুতে দার্জিলিংকে অর্থনৈতিক ভাবে অনুন্নত জেলা হিসেবে গণ্য করা হত, যার ফলে ব্রিটিশ ভারতের অন্যান্য জেলাতে প্রযোজ্য আইন এই অঞ্চলে বলবত হত না। ১৯১৯ খ্রিষ্টাব্দে এই অঞ্চলকে একটি পিছিয়ে পড়া অঞ্চল হিসেবে ঘোষণা করা হয়।[31] ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় দার্জিলিং অঞ্চলের চা বাগানগুলিতে অসহযোগ আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে।[32] ১৯৩৪ খ্রিষ্টাব্দে সশস্ত্র বিপ্লবীরা বাংলার গভর্নর স্যার জন অ্যান্ডারসনকে হত্যার চেষ্টাও করেন।[33] ১৯৪০-এর দশকে এই জেলার চা শ্রমিকদেরকে সংগঠিত করে কমিউনিস্টরা ব্রিটিশ রাজের বিরুদ্ধে জাতীয়তাবাদী আন্দোলন শুরু করেন।[34]
১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দে ভারতের স্বাধীনতার পর দার্জিলিং, কার্শিয়াং, কালিম্পং ও তরাই অঞ্চলের কিয়দংশ নিয়ে নির্মিত দার্জিলিং জেলাকে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের সঙ্গে যুক্ত করা হয়। পাহাড়ে নেপালীরা প্রধান জনগোষ্ঠী হিসেবে বসবাস করলেও তরাই সমতলে ভারত ভাগের ফলে পূর্ব পাকিস্তান থেকে আগত বিশাল সংখ্যক বাঙালি উদ্বাস্তুরা বসবাস শুরু করতে শুরু করে। নেপালীদের দাবীগুলির প্রত্যুত্তরে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের নিস্পৃহ মনোভাবে বিংশ শতাব্দীর পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে দার্জিলিংয়ের স্বায়ত্তশাসন ও নেপালী ভাষার স্বীকৃতির দাবী ওঠে।[35]
১৯৭৫ খ্রিষ্টাব্দে সিক্কিম নামক একটি নতুন রাজ্যের উদ্ভব হলে এবং ভারত সরকার দ্বারা নেপালী ভাষাকে ভারতীয় সংবিধান অনুসারে প্রাতিষ্ঠানিক ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি প্রদানের নিস্পৃহতা লক্ষ্য করে এই অঞ্চলে গোর্খাল্যান্ড নামক একটি নতুন রাজ্য তৈরীর জন্য বিংশ শতাব্দীর আশির দশক জুড়ে ব্যাপক ও হিংসাত্মক আন্দোলন শুরু হয়।[36] ১৯৮৮ খ্রিষ্টাব্দে গোর্খা ন্যাশনাল লিবারেশন ফ্রন্ট ও সরকারের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরের ফলে দার্জিলিং গোর্খা পার্বত্য পরিষদ নামক একটি নির্বাচিত প্রতিনিধিদলের সৃষ্টি করা হয়, যাদের ওপর এই জেলার প্রশাসনিক স্বায়ত্তশাসনের অধিকার দেওয়া হয়। ২০০৮-০৯ সাল নাগাদ ভারত সরকার ও পশ্চিমবঙ্গ সরকার গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার পৃথক রাজ্যের দাবী মেনে নিতে অস্বীকৃত হলে পুনরায় ধর্মঘট আন্দোলন শুরু হয়।[37] ২০১১ খ্রিষ্টাব্দের জুলাই মাসে ভারত সরকার, পশ্চিমবঙ্গ সরকার ও গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার মধ্যে একটি চুক্তির ফলে গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন নামক একটি নতুন স্বায়ত্তশাসিত পার্বত্য পরিষদ গঠন করে এই জেলার প্রশাসনিক দায়িত্ব প্রদান করা হয়।[38]
দার্জিলিং (১৯০১–২০০০)-এর আবহাওয়া সংক্রান্ত তথ্য | |||||||||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
মাস | জানু | ফেব্রু | মার্চ | এপ্রিল | মে | জুন | জুলাই | আগস্ট | সেপ্টে | অক্টো | নভে | ডিসে | বছর |
সর্বোচ্চ গড় °সে (°ফা) | ৯.৪ (৪৮.৯) |
১০.৪ (৫০.৭) |
১৪.৪ (৫৭.৯) |
১৭.৪ (৬৩.৩) |
১৮.৫ (৬৫.৩) |
১৯.৩ (৬৬.৭) |
১৯.৪ (৬৬.৯) |
১৯.৬ (৬৭.৩) |
১৯.২ (৬৬.৬) |
১৮.০ (৬৪.৪) |
১৪.৭ (৫৮.৫) |
১১.৫ (৫২.৭) |
১৬.০ (৬০.৮) |
সর্বনিম্ন গড় °সে (°ফা) | ১.৮ (৩৫.২) |
২.৯ (৩৭.২) |
৬.৩ (৪৩.৩) |
৯.৪ (৪৮.৯) |
১১.৫ (৫২.৭) |
১৩.৬ (৫৬.৫) |
১৪.৩ (৫৭.৭) |
১৪.২ (৫৭.৬) |
১৩.৩ (৫৫.৯) |
১০.৩ (৫০.৫) |
৬.৩ (৪৩.৩) |
৩.৩ (৩৭.৯) |
৮.৯ (৪৮.০) |
অধঃক্ষেপণের গড় মিমি (ইঞ্চি) | ১৯.৭ (০.৭৮) |
২৪.১ (০.৯৫) |
৪৭.৭ (১.৮৮) |
১১৫.৮ (৪.৫৬) |
১৯৭.২ (৭.৭৬) |
৫৭০.০ (২২.৪৪) |
৭৮১.৭ (৩০.৭৮) |
৬৩৫.৩ (২৫.০১) |
৪৩৭.৩ (১৭.২২) |
১২২.৫ (৪.৮২) |
২৩.৫ (০.৯৩) |
৭.০ (০.২৮) |
২,৯৮১.৮ (১১৭.৪১) |
উৎস: Indian Meteorological Department.[39] |
দার্জিলিং শহরে হিমালয়ের পাহাড়ী অঞ্চলের নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়া বিরাজ করে।[40] বার্ষিক গড় তাপমাত্রা ১৫.৯৮ °সে (৬০.৭৬ °ফা) ও গড় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৮.৯ °সে (৪৮.০ °ফা),[41] থাকে। শহরের গড় তাপমাত্রা ৫ থেকে ১৭ °সে (৪১ থেকে ৬৩ °ফা) এর মধ্যে ঘোরাফেরা করে।[42] ১৯০৫ খ্রিষ্টাব্দের ১১ই ফেব্রুয়ারি দার্জিলিং শহরের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা −২৪ °সে (−১১ °ফা) রেকর্ড করা হয়।[41] এই শহরে প্রতি বছর গড়ে ১২৬ দিন বৃষ্টিপাত হয় ও বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ৩০৯.২ সেমি (১২১.৭ ইঞ্চি)[41] জুলাই মাসে সর্বাধিক বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা থাকে।[42] এই ভারী বৃষ্টিপাত এবং ক্রমবর্ধমান বৃক্ষচ্ছেদ ও অপরিকল্পিত নগরায়ণ ব্যাপক ধস সৃষ্টি করে জীবন ও ধন সম্পদের ক্ষতিসাধন করে থাকে।[43][44]
দার্জিলিং পূর্ব হিমালয় প্রাণী-ভৌগলিক অঞ্চলের একটি অংশ। দার্জিলিং এর চারপাশে উদ্ভিদের মধ্যে রয়েছে সাল, ওক, আধা-চিরসবুজ, নাতিশীতোষ্ণ এবং আলপাইন বন। শহরের চারপাশে সাল এবং ওকের ঘন চিরহরিৎ বন রয়েছে, যেখানে বিভিন্ন ধরণের বিরল অর্কিড পাওয়া যায়। লয়েডের বোটানিক্যাল উদ্যানে সাধারণ এবং বিরল প্রজাতির গাছপালা সংরক্ষণ করে, অন্যদিকে পদ্মজা নাইডু হিমালয়ান জুওলজিক্যাল পার্ক বিপন্ন হিমালয়ের প্রজাতি সংরক্ষণ ও প্রজননে বিশেষজ্ঞ। দার্জিলিং শহর এবং আশেপাশের অঞ্চলে কাঠের জ্বালানি ও কাঠের ক্রমবর্ধমান চাহিদা, সেইসাথে যানবাহন চলাচলের ক্রমবর্ধমান বায়ু দূষণের কারণে বন শেষ হচ্ছে। জেলার বন ও বন্যপ্রাণী পশ্চিমবঙ্গ বন বিভাগের টেরিটোরিয়াল এবং বন্যপ্রাণী শাখার বিভাগীয় বন কর্মকর্তা দ্বারা পরিচালিত ও সুরক্ষিত। দার্জিলিং-এ পাওয়া প্রাণীজগতের মধ্যে রয়েছে বেশ কয়েকটি প্রজাতির হাঁস, টিল, প্লোভার এবং গুল যা তিব্বতে এবং থেকে অভিবাসনের সময় দার্জিলিং অতিক্রম করে। এই অঞ্চলে পাওয়া ছোট স্তন্যপায়ী প্রাণীর মধ্যে রয়েছে সিভেট (যেমন ছোট এবং বড় ভারতীয় সিভেট, মুখোশযুক্ত পাম সিভেট, দাগযুক্ত লিনসাং এবং বিন্টুরং), মঙ্গুজ (যেমন ভারতীয় ধূসর মঙ্গুস এবং কাঁকড়া-খাওয়া মঙ্গুজ) এবং ব্যাজার (যেমন বার্মিজ ফেরেট-ব্যাজার এবং বৃহত্তর হগ ব্যাজার)। এই অঞ্চলে পাওয়া অন্যান্য মাংসাশী প্রাণীর মধ্যে রয়েছে হিমালয় কালো ভাল্লুক এবং লাল পান্ডা। ২০১৪ সালে দার্জিলিং চিড়িয়াখানায় লাল পান্ডাদের জন্য একটি সংরক্ষণ কেন্দ্র খোলা হয়েছিল, এটি একটি পূর্বের বন্দী প্রজনন কর্মসূচির ভিত্তিতে তৈরি; এই প্রজাতির বেঁচে থাকার পরিকল্পনায় ২০১৬ সালের মধ্যে প্রায় ২৫টি লাল পান্ডা ছিল। হিমালয় নিউট টাইলোট্রিটন ভেরুকোসাস, ভারতে দুটি স্যালামান্ডার প্রজাতির মধ্যে একটি, আশেপাশের জলাভূমিতে পাওয়া যায়। হিমালয়ের অবশেষ ড্রাগনফ্লাই এপিওফ্লেবিয়া লেইডলাউই, এপিওফ্লেবিডি পরিবারের মাত্র চারটি প্রজাতির একটি, এই অঞ্চল থেকে প্রথম বর্ণনা করা হয়েছিল।
দার্জিলিং শহরে ধর্মবিশ্বাস | ||||
---|---|---|---|---|
ধর্ম | শতকরা | |||
হিন্দুধর্ম | ৬৬.৫১% | |||
বৌদ্ধধর্ম | ২৩.৯১% | |||
খ্রিস্টধর্ম | ৫.১৩% | |||
ইসলাম ধর্ম | ৩.৯৪% | |||
অন্যান্য ও উল্লেখ নেই | ০.৫১% |
২০১১ সালের ভারতীয় দশকীয় জনশুমারির (সর্বশেষ যার জন্য প্রক্রিয়াকৃত তথ্য রয়েছে) রেকর্ড অনুসারে দার্জিলিং পৌরসভার জনসংখ্যা ১১৮,৮০৫ জন; তন্মধ্যে ৫৯,৬১৮ জন মহিলা ও ৫৯,১৮৭ জন পুরুষ, লিঙ্গ অনুপাত প্রতি ১০০০ জন পুরুষের জন্য ১০০৭ জন মহিলা।[5] পৌরসভার জনসংখ্যার ঘনত্ব ছিল প্রতি বর্গ কিমিতে ১৫,৯৯০ জন (প্রতি বর্গমাইলে ৪১,০০০ জন)।[5] সাক্ষরতার হার ছিল ৯৩.৯% - মহিলাদের সাক্ষরতার হার ছিল ৯১.৩% এবং পুরুষদের হার ৯৬.৪%।[5] ভারতের সংবিধান দ্বারা স্বীকৃত যেসব জনগোষ্ঠীগুলো ঐতিহাসিকভাবে পিছিয়ে আছে এবং পরবর্তী কমিশন এবং প্রোগ্রামগুলোতে উন্নতির জন্য মনোনীত করা হয়েছে, দার্জিলিং শহরের জনসংখ্যার প্রায় ২২.৪% তফসিলি উপজাতির এবং ৭.৭% তফসিলি জাতি।[5] কাজে অংশগ্রহণের হার ছিল ৩৪.৪%।[5] বস্তিতে বসবাসকারী মানুষের সংখ্যা ছিল ২৫,০২৬ জন (যা জনসংখ্যার ২১.১%)।[5]
১৯৪৭ সালে ভারতের স্বাধীনতার পর দার্জিলিংকে দার্জিলিং জেলার সদরদপ্তর করা হলে এটি "প্রশাসনিক" শহর হতে শুরু করে।[13] ১৯৬১ থেকে ২০১১ সালের মধ্যে শহরের জনসংখ্যা ত্বরিত হারে বৃদ্ধি পেয়েছে (চিত্র ১)।[13] প্রশাসন, এবং খুচরা ও সেবা শিল্পের সাথে সংশ্লিষ্ট পেশাজীবীদের পরিবারের সমন্বয়ে "উচ্চাকাঙ্ক্ষী মধ্যবিত্ত শ্রেণি" বিকাশ লাভ করে।[13]
"ভারতীয় গোরখা" এই শব্দগুচ্ছ দিয়ে ভারতের নেপালি-ভাষী জনগণকে বোঝানো হয়, তারা মূলত নেপালের নেপালি-ভাষী জনগণ থেকে ভিন্ন।[46] ২০১৬ সাল পর্যন্ত দার্জিলিংয়ের জনসংখ্যা ছিল প্রধানত ভারতীয় গোরখারা। অল্প সংখ্যক লেপচা, ভুটিয়া, তিব্বতি, বাঙালি, মারোয়াড়ি ও বিহারি রয়েছে।[47] ২০১১ সালের জনশুমারিতে দেখা যায় তারা হিন্দুধর্ম (৬৬.৫%), বৌদ্ধধর্ম (২৩.৯%), খ্রিস্টধর্ম (২৩.৯%), ও ইসলাম ধর্ম (৩.৯%) পালন করে।[5] লেপচাদের এই অঞ্চলের প্রধান আদিবাসী সম্প্রদায় হিসেবে গণ্য করা হয়; তাদের মূল ধর্ম ছিল সর্বপ্রাণবাদের একটি রূপ।[47] নেপালি সম্প্রদায় বিভিন্ন জাতি ও জাতিগোষ্ঠীর সংমিশ্রণ এবং তাদের উপজাতীয় ও সর্বপ্রাণবাদী ঐতিহ্য রয়েছে।[47] শহরের জনসংখ্যার ক্রমবৃদ্ধি ও দৃঢ়তার সাথে সম্পৃক্ত জীবনযাত্রায় বিভিন্ন জাতীগোষ্ঠীর সংমিশ্রণের ফলে দার্জিলিংয়ে সমন্বিত সংস্কৃতির সৃষ্টি হয়েছে, যা বিবর্তিত হয়ে তাদের শিকড় থেকে দূরে সরে গেছে।[47]
২০১৪ সালের একটি সমীক্ষা অনুসারে যদিও দার্জিলিং এর আশেপাশের চা বাগানগুলোতে শ্রমিকের চাহিদা ১৯১০ সাল থেকে মোটামুটিভাবে স্থির ছিল, চা বাগানে নেপালি-ভাষী শ্রমিকদের এবং তাদের পরিবারের জনসংখ্যা বাড়তে থাকে।[48] যেহেতু অতিরিক্ত জনসংখ্যা চাকরি ও আবাসনের সন্ধানে দার্জিলিং পর্যন্ত আগমন করে, ১৯৮০-এর দশকে গোর্খাল্যান্ড আন্দোলন তাদের উদ্দেশ্যকে সফল করে তোলে। এর ফলে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক অ-গোর্খা পরিবারকে তাদের দার্জিলিংয়ের বাড়ি ত্যাগ করতে হয়।[48]
দার্জিলিং পৌরসভা ভারতের প্রাচীনতম পৌরসভার মধ্যে অন্যতম। ১৮৫০ সালের ১লা জুলাই দশটি ওয়ার্ড নিয়ে পৌরসভাটি প্রতিষ্ঠিত হয়।[9] এটি কমিশনারদের দ্বারা পরিচালিত হয়েছিল যারা ১৯১৬ সাল পর্যন্ত মনোনীত কমিশনারগণ এটি পরিচালনা করতেন, তারপর ১৯৩২ সাল পর্যন্ত কমিশনার নির্বাচন হত এবং ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত আবার কমিশনার মনোনীত হত।[9] সেই বছর ভারতের স্বাধীনতার পর ১৯৬৪ সাল পর্যন্ত কমিশনারদের নিয়োগ অব্যাহত ছিল, এবং ১৯৬৪ সালে প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। আদালতের নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে তা বাতিল করা হয়; পরবর্তী নির্বাচন এবং পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সরকারের ক্রমাগত হস্তক্ষেপ চলতে থাকে।[9] ২০২১ সাল পর্যন্ত পৌরসভা একজন চেয়ারপারসন এবং একজন ভাইস চেয়ারপারসনের নেতৃত্বে কাউন্সিলরদের একটি বোর্ড দ্বারা পরিচালিত হয়। ১৯৮৮ সালে পৌরসভার ওয়ার্ডের সংখ্যা ৩২-এ উন্নীত হয়।[9] ওয়ার্ডগুলো নির্বাচনী উপবিভাগের প্রতিনিধিত্ব করে; ২০১৭ সালে প্রতিটি ওয়ার্ড থেকে একজন করে ৩২ জন কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। ২০১১ সালে ওয়ার্ডগুলো পুনর্গঠিত ও বিভক্ত করা হয়।[9]
২০১১ সালে ওয়ার্ডগুলো পুনর্গঠিত করার পর শহরের আয়তন ১০.৭৫ বর্গকিলোমিটার (৪.১৫ মা২) থেকে কমে ৭.৪৩ বর্গকিলোমিটার (২.৮৭ মা২) হয়।[9] ২০১৬ সালের মধ্যে পৌরসভা চারপাশ চা বাগান ও বন বিভাগের জমি দিয়ে বেষ্টিত হয়ে যায় এবং সম্প্রসারণের তেমন কোন সুযোগ ছিল না।[47]
২০২১ সালে শহরে প্রায় ২২,০০০ বাড়িঘর ও ৩৫০টি হোটেল ও রেস্তোরাঁ ছিল।[9] একই বছরে সংগৃহীত পরিসংখ্যানে পাওয়া যায়: পৌরসভা ১৫, ১৯, ২০, ২১, ২২, ২৪ ও ২৫ নং ওয়ার্ডগুলোকে প্রধানতম এলাকা বলে গণ্য করে; অধিকাংশ ব্যবসা, হোটেল, রেস্তোরাঁ ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এই ওয়ার্ডগুলোতে অবস্থিত এবং এখানে পৌর বিদ্যুৎ ও পানির সংস্থান বেশি;[49] ১০, ১৫, ২০ ও ৩০ নং ওয়ার্ডের এলাকাগুলো সবচেয়ে উন্নত, অন্যদিকে ১, ২, ১৩, ১৪, ২৭, ৩১ ও ৩২ নং ওয়ার্ড সবচেয়ে অবহেলিত,[50] এবং এই ওয়ার্ডগুলোতে ৩৭টি বস্তি রয়েছে, যেখানে দার্জিলিংয়ের জনসংখ্যার ২৩% লোক বসবাস করে।[51]
১৯৮৮ সালে দার্জিলিং জেলার গোরখা-অধ্যুষিত পার্বত্য অঞ্চলকে দার্জিলিং গোরখা হিল কাউন্সিলের (ডিজিএইচসি) অধীনে স্বায়ত্বশাসিত প্রশাসনিক রূপ দেওয়া হয়।[52] ২০১২ সালে ডিজিএইচসি অনুরূপ সংস্থা গোরখাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (জিটিএ) কর্তৃক স্থলাভিষিক্ত হয়।[52] জিটিএর নির্বাচিত সদস্যবৃন্দ শিক্ষা, শিল্প ও ভূমি কর-সহ কিছু নির্দিষ্ট বিষয়াবলির তদারকি করে; কিন্তু তারা আইন প্রণয়ন বা কর আরোপ করতে পারে না।[53] গোরখা জনমুক্তি মোর্চা (জিজেএম) ২০২২ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত পৌরসভার ক্ষমতায় ছিল,[54] এরপর নবগঠিত হামরো পার্টি তাদের পরাজিত করে।[55]
দার্জিলিং শহর দার্জিলিং বিধানসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত যেখান থেকে প্রতি পাঁচ বছরে রাজ্য বিধানসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার একজন সদস্য নির্বাচিত হয়।[56] শহরটি দার্জিলিং লোকসভা কেন্দ্রের অংশ যেখান থেকে ভারতের দ্বিকক্ষ সংসদের নিম্নকক্ষ লোকসভার সদস্য নির্বাচিত হয়।[57]
দার্জিলিং-এ দুটি শীর্ষ পর্যটন ঋতু রয়েছে, সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর এবং এপ্রিল থেকে মে। 2014 সালের একটি গবেষণায় পরামর্শ দেওয়া হয়েছে যে গার্হস্থ্য পর্যটন হল শহরের অবকাশ ব্যবসার ভিত্তি। চৌরাস্তা (ম্যাল রোড , চক বাজার , নেহেরু রোড ও জাকির হোসেন রোডের সংযোগস্থল) হল একটি জনপ্রিয় কেনাকাটা এবং জমায়েতের এলাকা যেখানে একজন পর্যটক রঙিন এবং দেহাতি স্থানীয় পোশাক পরে তাদের ছবি তুলতে পারেন। নীচের চা বাগানগুলি বিশেষ করে বিদেশী পর্যটকদের দ্বারা পরিদর্শন করা হয়। কিছু প্ল্যান্টেশনের পুরানো বাংলোগুলিকে ডিলাক্স লজিংয়ে রূপান্তরিত করা হয়েছে যেখানে কক্ষগুলি যে কোনও বৈশ্বিক মান অনুসারে খুব বেশি ভাড়া দেওয়া হয়। কিছু পর্যটক সত্যজিৎ রায়ের মধ্যে উদ্ভূত একটি শান্তিপূর্ণ, অপ্রীতিকর এবং মনোরম ল্যান্ডস্কেপ থেকে পালাতে পছন্দ করেন1962-এর চলচ্চিত্র কাঞ্চনজঙ্ঘা।
1860 সালের প্রথম দিকে দার্জিলিং একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন গন্তব্য হয়ে উঠেছিল। 1991 সালে ভারতের অর্থনৈতিক উদারীকরণের পর থেকে, দার্জিলিং-এর পর্যটন সস্তা হয়ে উঠেছে এবং দার্জিলিং, একসময় বিলাসবহুল গন্তব্য হিসাবে বিবেচিত, গণ পর্যটনের জন্য অ্যাক্সেসযোগ্য হয়ে উঠেছে। 2016 সালের একটি সমীক্ষায় 2009 থেকে 2014 সালের মধ্যে দার্জিলিং শহরে পর্যটকদের আগমন রেকর্ড করা হয়েছে যা 2010-2011 মৌসুমে 243,255 জনের সর্বনিম্ন থেকে 2012-2013 সালে সর্বোচ্চ 488,675 ছিল; বড় সংখ্যাগরিষ্ঠ ছিল অভ্যন্তরীণ পর্যটক, বিদেশী পর্যটকদের মধ্যে কখনোই ৩৫,০০০ এর বেশি বার্ষিক দর্শনার্থী ছিল না।
ন্যারো-গেজ দার্জিলিং হিমালয়ান রেল (DHR) দ্বারা দার্জিলিং পৌঁছানো যায় যা শিলিগুড়ি থেকে 88 কিলোমিটার (55 মাইল) দীর্ঘ পথ ভ্রমণ করে। বাষ্পীয় ইঞ্জিন দ্বারা টানা, এটি প্রতি ঘন্টায় 20 কিলোমিটার (12 মাইল) থেকে 25 কিলোমিটার (16 মাইল) গতিতে চলে। যদিও সেবাটি 19 শতকে শুরু হয়েছিল মানুষ এবং মালবাহী বাহনকে দক্ষতার সাথে স্থানান্তর করার জন্য, তবে এর প্রাথমিক ক্লায়েন্টরা আজ পর্যটক যারা একটি বিগত যুগের ভ্রমণের গতিশীলতা অনুভব করার সুযোগটি উপভোগ করছে। এর সমর্থনের জন্য একটি আন্তর্জাতিক ও জাতীয় প্রচারণার পর, রেলওয়েকে ইউনেস্কো কর্তৃক বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে ঘোষণা করা হয়।1999 সালের ডিসেম্বরে মরক্কোতে অনুষ্ঠিত ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ কমিটির 23 তম অধিবেশনে।
দার্জিলিংয়ে দুটি প্রধান সড়ক রয়েছে, প্রথমটি হিল কার্ট সড়ক যা জাতীয় মহাসড়ক ১১০-এর মাধ্যমে শিলিগুড়িকে দার্জিলিং পার্বত্য অঞ্চল ও দার্জিলিংয়ের সাথে সংযুক্ত করে এবং দ্বিতীয়টি লেবং কার্ট সড়ক (দেখুন মানচিত্র ১)।[58] ২০১৮ সালে দার্জিলিংয়ের সড়কগুলোর গড় প্রস্ত ছিল ৬ মিটার (২০ ফুট) থেকে ৭ মিটার (২৩ ফুট)।[59] ২০০৮ সালের দার্জিলিং পৌরসভার প্রতিবেদন অনুসারে দার্জিলিংয়ের অর্ধেকের কিছু বেশি (৫৫%) সড়ক ধাতুযুক্ত (অ্যাসফল্ট বা বিটুমিন দিয়ে পাকা) ও মোটরযোগ্য; এবং বাকি সড়কগুলো কংক্রিটের রাস্তা হোক বা কাঁচা হোক তা খুবই সংকীর্ণ।[58] তিনটি পার্কিং এলাকা ছিল যা রাস্তায় অবস্থিত ছিল না এবং ১৩টি রাস্তায় ছিল। সরু রাস্তার ধারে অবৈধ পার্কিং পথচারী ও চাকাযুক্ত পরিবহন উভয়ের জন্য যানজটের সৃষ্টি করে।[59]
আকাশপথে এখানকার কাছের এয়ারপোর্ট বাগডোগরা। শিলিগুড়ি থেকে নিয়মিত বাস চলাচল করে। নিউ জলপাইগুড়ি এবং শিলিগুড়ি জংশন এখানকার নিকটস্থ রেল-স্টেশন।
দার্জিলিংয়ের সংস্কৃতি বৈচিত্র্যময় এবং এখানে বিভিন্ন আদিবাসী প্রথা ও উৎসব রয়েছে। ভারতের বাকি অংশ থেকে এখানকার আঞ্চলিক স্বাতন্ত্র্য রয়েছে।[60] জাতিগোষ্ঠীগুলোর মধ্যে মিলন এবং আন্তঃবিবাহের ফলে সংকর সাংস্কৃতিক রূপ ও অনুশীলন দেখা যায়।[60]
প্রধান উৎসবসমূহ হল দশৈং (বিজয়া দশমী), তিহার (দীপাবলি), হোলি, লক্ষ্মী পূজা,[61] মাঘে সংক্রান্তি,[62] লোসার, বুদ্ধ জয়ন্তী, ও বড়দিন। তিব্বতি, লেপচা, ভুটিয়া, শেরপা, যোল্মো, গুরুং ও তমাং-সহ কয়েকটি জাতিগোষ্ঠী তিব্বতি বৌদ্ধধর্ম পালন করেন। তাদের প্রধানতম উৎসব হল তিব্বতি নববর্ষ উৎসব লোসার,[63] বুদ্ধ পূর্ণিমা, ও তনডং লো রুমফাত।[64][65] কিরাত জনগোষ্ঠীর রাই, লিম্বু, সুনুয়ার ও যাক্খারা তাদের প্রধান উৎসব হিসেবে উধোলি ও উভোলি পালন করে থাকে।[66]
জনপ্রিয় হিন্দু দেবদেবীরা হলেন দুর্গা, কালী ও শিব। অন্যান্য দেবদেবীর মধ্যে হিন্দু ও বৌদ্ধ দুই ধর্মেই প্রভাব বিস্তারকারী মঞ্জুশ্রী ও মৎস্যেন্দ্রনাথ নেওয়ার জাতির মধ্যে জনপ্রিয়; এবং গোরক্ষনাথের পূজা করে গোর্খারা।[63] অবজার্ভেটরি হিলে অবস্থিত মহাকাল মন্দির হিন্দু ও বৌদ্ধ উভয় ধর্মের মানুষেদের তীর্থ স্থান।[67] তিব্বতি বৌদ্ধধর্ম বা লামাবাদের অনুসারীরা কয়েকটি গোম্পা বা বৌদ্ধ ভিক্ষু মঠ প্রতিষ্ঠা করেছে।[68] ঘুম মঠ (শহরের ৮ কিমি বা ৫ মাইল দূরে), ভুটিয়া বাস্টি মঠ ও মাগ-ধোগ যোল্মোওয়ায় প্রাচীন বৌদ্ধধর্মের পাণ্ডুলিপি সংরক্ষিত রয়েছে। ১৯৯২ সালে জাপানি বৌদ্ধধর্মীয় প্রতিষ্ঠান নিপ্পনজান মিয়োহোজি শান্তি স্তুপ নির্মাণ করে।[69]
দ্য দার্জিলিং ইনিশিয়েটিভ নামক সুশীল সমাজ আন্দোলন দশ দিন ব্যাপী দার্জিলিং কার্নিভাল আয়োজন করে। প্রতি বছর সাধারণত নভেম্বর মাসে আয়োজিত এই উৎসবে দার্জিলিং পাহাড়ের সঙ্গীত ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে উদযাপন করা হয়।[70] দার্জিলিং অঞ্চলের নেপালি-ভাষী জনগোষ্ঠীর মধ্যে সাহিত্য সংস্কৃতি পরিপক্ক হয়েছে। ২০১৩ সালে দার্জিলিংয়ের নেপালি ভাষায় লেখক অসিত রাই ভারতের সর্বোচ্চ সাহিত্য সম্মান সাহিত্য অকাদেমি ফেলোশিপ লাভ করেন।[71]
টিবেটান রিফিউজি সেলফ হেল্প সেন্টারে তিব্বতি কারুশিল্প তথা শতরঞ্জি, কাঠ ও চামড়ার সৃষ্টিকর্ম প্রদর্শিত হয়। দার্জিলিংয়ে ঔপনিবেশিক স্থাপত্যের উদাহরণ হল কুঠির, গথিক গির্জা,[72] প্ল্যান্টার্স ক্লাব,[73] রাজভবন ও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।[74][75]
২০১২ থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে পরিচালিত একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে উনবিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে ব্রিটিশ শিশুদের[lower-alpha 8] শিক্ষার জন্য দার্জিলিংয়ে প্রতিষ্ঠিত অভিজাত বিদ্যালয়সমূহ ভারতীয় শিশুদের উচ্চ মানের ইংরেজি-মাধ্যমিক শিক্ষা প্রদান করে।[77] জেসুইট বালক বিদ্যালয় তথা সেন্ট জোসেফ্স স্কুল (সাধারণত নর্থ পয়েন্ট নামে ডাকা হয়), ছেলেদের জন্য অ্যাংলিকান বোর্ডিং স্কুল, সেন্ট পল্স স্কুল, সহ-শিক্ষামূলক মেথডিস্ট স্কুল মাউন্ট হারমন স্কুল এবং ক্যাথলিক বালিকা বিদ্যালয় লরেটো কনভেন্ট (মানচিত্র ১ দেখুন) বার্মা এবং থাইল্যান্ড সহ দূরবর্তী স্থান থেকে শিক্ষার্থীদের আকর্ষণ করছিল।[77] নর্থ পয়েন্ট ও লরেটো কলেজও প্রতিষ্ঠা করেছিল, সেগুলো হল সেন্ট জোসেফ্স কলেজ ও লরেটো কলেজ (বর্তমানে সাউথফিল্ড কলেজ)। ১৯৪৮ সালে প্রতিষ্ঠিত সহ-শিক্ষামূলক কলেজ দার্জিলিং গভর্নমেন্ট কলেজের সাথে এই কলেজগুলো নিয়ে দার্জিলিংয়ের তিনটি কলেজ গঠিত হয়।[77] সবকয়টি কলেজ শিলিগুড়ির উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত ছিল।[78] একই সমীক্ষায় দেখা যায় যে বেসরকারি বিদ্যালয়সমূহ শুধুমাত্র বিত্তশালীদের সন্তানদেরই শিক্ষা প্রদান করছে না। এসব বিদ্যালয়ের অধিক ব্যয় সত্ত্বেও সন্তানদের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের প্রত্যাশায় দার্জিলিংয়ের কিছু নিম্ন-মধ্যবিত্ত শ্রেণির পরিবার তাদের সন্তানদের নর্থ পয়েন্ট ও লরেটোতে পাঠাচ্ছিল।[77] ২০১৪ সালের মধ্যে কলেজসমূহে গ্রাম থেকে আগত শিক্ষার্থীদের ভর্তি বৃদ্ধি করে।[77] প্রকৌশল ও কম্পিউটার বিজ্ঞানের মত ক্ষেত্রে স্থানীয় কলেজসমূহ ভারতের উন্নত কেন্দ্রগুলোর পেশাদার প্রশিক্ষণ বা কর্মস্থান নির্ধারণের সুবিধাদি দিতে কম সক্ষম ছিল, যার কারণে কিছু শিক্ষার্থী উচ্চ বিদ্যালয়ের গণ্ডি পার করে দার্জিলিং ত্যাগ করে।[79]
২০০৩-২০০৪ সালে দার্জিলিং পৌরসভায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১৬,০১৫ জন, উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ৫,১৬৯ জন এবং কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩,৮২৫ জন শিক্ষার্থী ছিল। [80] ২০১৩ সালের একটি সমীক্ষা অনুসারে, অল্প সংখ্যক শিক্ষার্থী এখানকার কলেজে পড়ে কারণ তাদের উপলব্ধি হল "শিক্ষাগত প্রমাণপত্রের মাধ্যমে দার্জিলিং-এ মধ্যবিত্তের আকাঙ্ক্ষা" পূরণের কম সুযোগ রয়েছে।[80] এই সমীক্ষায় উল্লেখ করা হয়েছে যে অধিক-অর্থায়িত বেসরকারি কলেজগুলোতে ব্যয় উচ্চ-স্তরের সরকারি কর্মকর্তা বা সফল ব্যবসায়ীদের জন্য সাশ্রয়ী হলেও শহরের নিম্ন-মধ্যবিত্তদের জন্য খুব বেশি ছিল। [81] এর ফলে শহরের কেন্দ্রে অবস্থিত একমাত্র সাশ্রয়ী কলেজ সরকারি কলেজের উপর চাপ সৃষ্টি করে। এতে ব্যয় কম কিন্তু কম অর্থায়ন, ভাঙ্গা জানালা, ফুটো ছাদ, ও শিক্ষকদের অনুপস্থিতির ফলে শিক্ষার্থীরা অবহেলিত বোধ করে এবং তাদের উপস্থিতির উপর প্রভাব ফেলে। শিক্ষকবৃন্দ তাদের উপর প্রদত্ত অতিরিক্ত দায়িত্ব পূরণ করতে অক্ষম ছিল।[81]
২০২২ সালের এক নিরীক্ষায় দেখা যায় যে বস্তিতে বসবাসকারী দার্জিলিংয়ের জনসংখ্যার (২০১১ সালের জনশুমারি অনুসারে শহরের মোট জনসংখ্যার ১১.৭২%) ১৩% প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন করেছে, কিন্তু তার অধিক পড়াশোনা করেনি; ৪৫% উচ্চ মাধ্যমিক (দশম শ্রেণি) সম্পন্ন করেছে, কিন্তু তার অধিক পড়েনি; ১৩% উচ্চ-মাধ্যমিক (দশম+২ শ্রেণি) সম্পন্ন করেছে এবং ১০% কলেজে পড়াশোনা করেছে।[82] ২০১৮ সালের এক নিরীক্ষার প্রতিবেদনে বলা হয় যে দার্জিলিং শহরে জলের সমস্যা সরকারি বিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত কিশোরী শিক্ষার্থীদের উপর প্রভাব ফেলে।[83] অনেকেরই তাদের বাড়িতে বা বিদ্যালয়ে সুপেয় পানি সরবরাহ, পয়ঃনিষ্কাশন ও স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশের সুবিধা নেই, বিশেষ করে রজঃস্রাবকালে স্বাস্থ্যসম্মত ব্যবস্থার অপর্যাপ্ততা রয়েছে। এই নিরীক্ষায় পাওয়া যায় যে সরকারি বিদ্যালয়ের অধিকাংশ শৌচাগার ব্যবহারের অনুপযোগী এবং কোন সরকারি বিদ্যালয়ে মেয়েদের জন্য উপযুক্ত স্যানিটারি সুবিধা নেই। শৌচাগারে জলের ব্যবস্থা নেই এবং প্রতিদিন পরিষ্কারের ব্যবস্থা নেই। এই নিরীক্ষায় বলা হয় যে অনেক মেয়েরা বিদ্যালয়ের শৌচাগার ব্যবহার করার ভয়ে ক্লাস চলাকালীন জল পান করে না।[83]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.