Loading AI tools
বীর উত্তম খেতাবপ্রাপ্ত বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের মুক্তিযোদ্ধা উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) সুলতান মাহমুদ, বীর উত্তম (১ আগস্ট ১৯৪৪ – ১৪ আগস্ট ২০২৩) বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর প্রধান ছিলেন। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে তিনি ১ ও ২ নং সেক্টরে দায়িত্ব পালন করেন। অপারেশন কিলো ফ্লাইটের নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য তিনি বিশেষভাবে খ্যাত। স্বাধীনতার পর ১৯৮১ সালের ২৩ জুলাই থেকে ১৯৮৭ সালের ২২ জুলাই পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের শাসনামলে তিনি উপ-প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে ১৯৭২ সালে বীর উত্তম খেতাবে এবং ২০১৮ সালে স্বাধীনতা পদকে ভূষিত করে।[2][3]
এয়ার ভাইস মার্শাল (অবসরপ্রাপ্ত) সুলতান মাহমুদ | |
---|---|
বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর প্রধান | |
কাজের মেয়াদ ২৩ জুলাই ১৯৮১ – ২২ জুলাই ১৯৮৭ | |
পূর্বসূরী | সদরউদ্দিন মুহাম্মাদ হোসেন |
উত্তরসূরী | মমতাজ উদ্দিন আহমেদ |
ব্যক্তিগত বিবরণ | |
জন্ম | [1] নিজকুঞ্জরা মজলিশ বাড়ি, ফেনী, ব্রিটিশ ভারত | ১ আগস্ট ১৯৪৪
মৃত্যু | ১৪ আগস্ট ২০২৩ ৭৯) ঢাকা, বাংলাদেশ | (বয়স
সমাধিস্থল | শাহীন কবরস্থান, বিমান বাহিনী ঘাঁটি বাশার, ঢাকা |
পুরস্কার |
|
সামরিক পরিষেবা | |
আনুগত্য | পাকিস্তান (১৯৭১ সাল পর্যন্ত) বাংলাদেশ (১৯৭১ সালের পর) |
শাখা | |
কাজের মেয়াদ | ১৯৬২ – ১৯৮৭ |
পদ | এয়ার ভাইস মার্শাল |
যুদ্ধ | বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ |
সুলতান মাহমুদ ১৯৪৪ সালের ১ আগস্ট তৎকালীন নোয়াখালী জেলার ফেনী মহকুমার নিজকুনজরা মজলিস বাড়ি (বর্তমান বাংলাদেশের ফেনী জেলার ছাগলনাইয়া উপজেলা) নানা বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তার পৈত্রিক নিবাস ছিল দাগনভূঞার দক্ষিন করিমপুর গ্রামে। বাল্যকালে তার নাম ছিল জামাল। তার বাবার নাম নূরুল হুদা এবং মায়ের নাম আঙ্কুরের নেছা। সুলতান মাহমুদের অপর দুই ভাই হলেন বিদুৎ উন্নয়ন বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান কামাল মাহমুদ এবং ব্যবসায়ী জহির উদ্দিন মাহমুদ মামুন।[4]
সুলতান মাহমুদ প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন ঢাকার আরমানিটোলা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে। ১৯৬০ সালে পাঞ্জাবের সারগোদার পিএএফ পাবলিক স্কুল থেকে ম্যাট্রিক এবং ১৯৬২ সালে রিসালপুরের পাকিস্তান বিমানবাহিনী একাডেমী থেকে এফএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন তিনি। পরবর্তীতে, ১৯৭৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রের এয়ার স্টাফ কলেজ থেকে তিনি স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন।[1]
১৯৭১ সালে সুলতান মাহমুদ পাকিস্তানি বিমানবাহিনীর মৌরীপুর বিমানঘাঁটিতে কর্মরত ছিলেন। এর অবস্থান ছিলো করাচিতে। তখন তার পদবি ছিল ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট। মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিতে তিনি মে মাসে সেখান থেকে পালিয়ে শ্রীলঙ্কা হয়ে ঢাকায় আসেন। ঢাকা থেকে ভারতে যাওয়ার পথে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী তাকে আটকের চেষ্টায় তাড়া করে। এ অবস্থায় দাউদকান্দি ফেরিঘাটের কাছে তিনি সাঁতরিয়ে মেঘনা নদী পার হন। অনেক বাধাবিপত্তি পেরিয়ে শেষ পর্যন্ত ভারতে পৌঁছাতে সক্ষম হন। সুলতান মাহমুদ স্বাধীনতার পর ধাপে ধাপে এয়ার ভাইস মার্শাল পদে উন্নীত হন। বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর প্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।[5]
ভারতে তখন সমবেত হয়েছেন পাকিস্তানি বিমানবাহিনীর আরও কয়েকজন বাঙালি। তারা মুক্তিবাহিনীর প্রধান এম এ জি ওসমানীর কাছে অনুরোধ করেন, মুক্তিবাহিনীর জন্য বিমান উইং গঠনের। কিন্তু বাস্তবে তা তখন করা সম্ভব ছিল না। এ অবস্থায় সুলতান মাহমুদ বসে থাকলেন না। যোগ দেন স্থল যোদ্ধাদের সঙ্গে। তিনি প্রথমে যুদ্ধ করেন ২ নম্বর সেক্টরে। পরে ১ নম্বর সেক্টরে। বেশ কয়েকটি অপারেশনে তিনি সাহসিকতার সঙ্গে অংশ নেন। এর মধ্যে চট্টগ্রামের মদুনাঘাট বিদ্যুৎ সাবস্টেশন ধ্বংসের অপারেশন উল্লেখযোগ্য। মদুনাঘাট বিদ্যুৎ স্টেশনটির অবস্থান চট্টগ্রাম কাপ্তাই সড়কের হালদা নদীর পশ্চিম পাশে। সেখানে ছিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর একটি দল। সাবস্টেশনের চারদিকের বাংকারে ছিল তাদের অবস্থান। অক্টোবর মাসের শেষে একদিন সুলতান মাহমুদের নেতৃত্বে একদল মুক্তিযোদ্ধা সেখানে অতর্কিতে আক্রমণ করে। তাদের আক্রমণে সাবস্টেশনটি ধ্বংস হয়। কিন্তু পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর পাল্টা আক্রমণে সুলতান মাহমুদ আহত ও তার এক সহযোদ্ধা শহীদ হন। সেদিন তিনি যথেষ্ট রণকৌশল ও বীরত্ব প্রদর্শন করেন। এরপর তিনি আর স্থলযুদ্ধে অংশ নিতে পারেননি। এ সময়ই গঠিত হয় মুক্তিবাহিনীর বিমান উইং। কয়েক দিন পর সুলতান মাহমুদকে বিমান উইংয়ে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ১৯৭১ সালের ৩ ডিসেম্বর মুক্তিবাহিনীর বিমান উইংয়ের মাধ্যমে প্রথম যে আক্রমণ পরিচালনা করা হয়, এর একটির দায়িত্ব ছিল তার ওপর। তার নেতৃত্বে পরিচালিত হয় গোদনাইল অপারেশন। এ অপারেশনে তার সহযোদ্ধা ছিলেন বদরুল আলম। তারা একটি অ্যালুয়েট হেলিকপ্টারের সাহায্যে নারায়ণগঞ্জের গোদনাইল তেলের ডিপোতে আক্রমণ চালান। ভারতের কৈলাসটিলা বিমানঘাঁটি থেকে পূর্ব নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই তারা গোদনাইলে পৌঁছাতে সক্ষম হন। নির্ধারিত দূরত্বে পৌঁছেই শুরু করেন আক্রমণ। সেদিন তারা হেলিকপ্টার থেকে ১৪টি রকেট নিক্ষেপ করে ইএসএসও-র দুটি তেলের ডিপো সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করে দেন। আরও কয়েকটি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সুলতান মাহমুদ পরে সিলেট, কুলাউড়া, কুমিল্লা, ভৈরব, শমশেরনগর আরও কয়েক স্থানে হেলিকপ্টারের সাহায্যে আক্রমণে অংশ নেন। মুক্তিযুদ্ধের শেষ পর্যায়ে তিনি ও সাহাবউদ্দিন আহমেদ বীর উত্তম একদিন হেলিকপ্টারে সিলেট শহরের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করছিলেন। বিমানবন্দরে অবতরণ করা মাত্র তারা পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর আক্রমণের মুখে পড়েন। হেলিকপ্টারে কয়েকটি গুলি লাগে। সুলতান মাহমুদ অত্যন্ত সাহসিকতার সঙ্গে হেলিকপ্টারটি নিয়ে পাকিস্তানি সেনাদের কবল থেকে বেরিয়ে যান।[6]
ব্যক্তিগত জীবনে তিনি ফেরদৌস আরা মাহমুদের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ ছিলেন। তাদের রাজিব মাহমুদ নামে এক ছেলে এবং এক মেয়ে আছে।
সুলতান মাহমুদ ২০২৩ সালের ১৪ আগস্ট ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। ১৭ আগস্ট গুলশান আজাদ মসজিদ ও বাংলাদেশ বিমান বাহিনী ঘাঁটি বাশার প্যারেড গ্রাউন্ডে জানাজা শেষে তাকে ঘাঁটি বাশারের শাহীন কবরস্থানে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা হয়।[1]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.