মণিরামপুর উপজেলা
যশোর জেলার একটি উপজেলা উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
যশোর জেলার একটি উপজেলা উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
মণিরামপুর বাংলাদেশের যশোর জেলার অন্তর্গত একটি উপজেলা। জনশ্রুতি আছে রাজা সীতারাম রায়ের উকিল মুণিরাম রায়ের নাম ধরে জনপদের নাম হয়েছে মণিরামপুর। ঊনবিংশ শতকের প্রথম দশকে চাঁচড়া রাজবাড়ীর জনৈক মহিলা এখানে একটি মস্তবড় পুকুর খনন করেন। আজও তা কালের স্বাক্ষী হয়ে আছে।[২]
মণিরামপুর | |
---|---|
উপজেলা | |
মানচিত্রে মণিরামপুর উপজেলা | |
স্থানাঙ্ক: ২৩°০′৫২″ উত্তর ৮৯°১৪′১৩″ পূর্ব | |
দেশ | বাংলাদেশ |
বিভাগ | খুলনা বিভাগ |
জেলা | যশোর জেলা |
আসন | ৮৯, যশোর-৫ |
আয়তন | |
• মোট | ৪৪৪.৭৩ বর্গকিমি (১৭১.৭১ বর্গমাইল) |
জনসংখ্যা (২০১১)[১] | |
• মোট | ৩,৮২,৪৬৫ |
• জনঘনত্ব | ৮৬০/বর্গকিমি (২,২০০/বর্গমাইল) |
সাক্ষরতার হার | |
• মোট | ৫০.৭৬% |
সময় অঞ্চল | বিএসটি (ইউটিসি+৬) |
পোস্ট কোড | ৭৪৪০ |
প্রশাসনিক বিভাগের কোড | ৪০ ৪১ ৬১ |
ওয়েবসাইট | দাপ্তরিক ওয়েবসাইট |
মণিরামপুর উপজেলা হরিহর নদীর তীরে অবস্থিত।
জনশ্রুতি আছে যে, রাজা সীতারাম রায়ের আইনজীবী মুনিরাম রায়ের নামানুসারে মণিরামপুর উপজেলার নামকরণ করা হয়েছিল। চাঁচড়া ব্যাসিলিকা (রাজা প্রাসাদ) এর কিছু মহিলা এখানে একটি বড় পুকুর খনন করেছিলেন যা এখনও কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এটি উনবিংশ শতাব্দীর প্রথম দশকে খনন করা হয়। রাজারা ত্রিমোহনী সংযোগ সড়কে মণিরামপুর থেকে রাজগঞ্জ পর্যন্ত নয় কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ করেন। মণিরামপুর ১৭৮৫ সাল থেকে পরিচিত। মণিরামপুরের প্রথম নির্বাচিত চেয়ারম্যান ছিলেন মোঃ লুৎফর রহমান এবং প্রথম নির্বাহী কর্মকর্তা (টিএনও/ইউএনও) ছিলেন মোঃ এসএম মিজানুর রহমান।[৩]
১৯৭১ সালের ২৩ অক্টোবর চিনাটোলা গ্রামের কবি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মুহাম্মদ মনিরুজ্জামানের ছোট ভাই শহীদ আসাদুজ্জামান আসাদকে হত্যা করা হয়। তাকে চিনাটোলার হরিহর নদীর তীরে চিনাটোলা ব্রিজের কাছে সমাহিত করা হয়।শুধু আসাদ নয়, সিরাজুল ইসলাম শান্তি, মশিকুর রহমান তোজো, আহসান উদ্দিন খান মানিক, ফজলুর রহমান ফজলুকেও একই স্থানে একই সময়ে হত্যা করা হয় এবং তাদের সবাইকে একসঙ্গে কবরে দাফন করা হয়। [৪][৫][৬][৭]
তারা ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও রাজনৈতিক দলের নেতা ছিলেন। তাদের একসঙ্গে গ্রেফতার করা হয়, একসঙ্গে হত্যা করা হয় এবং একসঙ্গে কবর দেওয়া হয়। মণিরামপুরের খানপুরের শহীদ আকরাম মণিরামপুরের জুরানপুরের নিহত হন। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে এ উপজেলায় রয়েছে ‘শহীদ আকরাম সড়ক’। তাছাড়া উপজেলায় আছে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার।
মণিরামপুর থানা ১৯৭১ সালের বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর ৮ নম্বর সেক্টরের নিয়ন্ত্রণে ছিল। সেক্টরের সদর দফতর ছিল বেনাপোলে, এটির নেতৃত্বে ছিলেন মেজর আবু ওসমান চৌধুরী (এপ্রিল ১০ - ১৭ জুলাই, ১৯৭১) তারপর মেজর এম এ মঞ্জুর (১৪ আগস্ট, ১৯৭১ - ১৪ ফেব্রুয়ারি, ১৯৭২) এবং মণিরামপুরের প্রথম শহীদ জিএম মোসলেম উম্মে উদ্দিন।
স্মৃতিসৌধ:
এর আয়তন ৪৪৪.৭৩ বর্গ কিলোমিটার (১৭১.৭৩ বর্গমাইল)। উত্তরে যশোর সদর উপজেলা, দক্ষিণে কেশবপুর উপজেলা ও খুলনা জেলার ডুমুরিয়া উপজেলা, পূর্বে অভয়নগর উপজেলা, পশ্চিমে সাতক্ষীরা জেলার কলারোয়া উপজেলা ও ঝিকরগাছা উপজেলা। এখানকার প্রধান নদ-নদী সমুহ: হরিহর, মুক্তেশ্বরী এবং কপোতাক্ষ।
১৫ এপ্রিল ১৯৮৩ সালে মণিরামপুর থানাকে উপজেলায় উন্নীত করা হয়। ১টি পৌরসভা, ৯টি ওয়ার্ড, ১৭টি ইউনিয়ন পরিষদ, ২৪৬টি মৌজা এবং ২৪৯টি গ্রাম নিয়ে গঠিত এই উপজেলা। ইউনিয়নগুলো হলো–
নির্বাহ কাল | সংসদ সদস্য | রাজনৈতিক দল |
---|---|---|
১৯৭৩ | পীযুষ কান্তি ভট্টাচার্য্য | বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ |
১৯৭৯ | আফসার আহমদ সিদ্দিকী | বিএনপি |
১৯৮৬ | মুহাম্মদ ওয়াক্কাস | জাতীয় পার্টি |
১৯৯১ | খান টিপু সুলতান | বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ |
১৯৯৬ | খান টিপু সুলতান | বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ |
২০০১ | মুহাম্মদ ওয়াক্কাস | জামাত-ই-উলামাই ইসলাম |
২০০৮ | খান টিপু সুলতান | বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ |
২০১৪ | স্বপন ভট্টাচার্য্য | স্বতন্ত্র |
২০১৮ | স্বপন ভট্টাচার্য্য | বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ |
২০২৪ | ইয়াকুব আলী | স্বতন্ত্র |
এখনো পর্যন্ত খান টিপু সুলতান হলেন মণিরামপুর থেকে সর্বাধিকবার নির্বাচিত সংসদ সদস্য।
ক্রঃ নং | নাম | হইতে | পর্যন্ত |
০১ | স্বপন ভট্টাচার্য্য (নির্বাচিত) | ২৪-০২-২০০৯ | ০২-১২-২০১৩ |
০২ | নাজমা খানম (ভারপ্রাপ্ত) | ০৩-১২-২০১৩ | ১৯-০৪-২০১৪ |
০৩ | মোঃ আমজাদ হোসেন লাভলু (নির্বাচিত) | ১৯-০৪-২০১৪ | ০১-০৪-২০১৯ |
০৪ | নাজমা খানম (নির্বাচিত) | ০১-০৪-২০১৯ | ০৭-০৫-২০২৪ |
০৫ | মোঃ আমজাদ হোসেন লাভলু (নির্বাচিত) | ০৮-০৫-২০২৪ | বর্তমান |
মণিরামপুর পৌরসভার বর্তমান মেয়র প্রিন্সিপাল আলহাজ কাজী মাহমুদুল হাসান। (দায়িত্বরত)
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শরৎ চন্দ্র মজুমদার (১৯৫৫-৫৮) এবং ধর্মীয় বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মুফতি ওয়াক্কাস এরশাদ সরকারের অধীনে দায়িত্ব পালন করেছেন।
বর্তমানে মানিরামপুর (যশোর-০৫) সংসদীয় আসনের মাননীয় সংসদ সদস্য, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য (এমপি) দায়িত্ব পালন করেছেন।(২০১৮-২০২৪)
মোট জনসংখ্যা প্রায় ৩ লক্ষ ৩০ হাজার। এর মধ্যে পুরুষ ৫০.১ শতাংশ এবং মহিলা ৪৯.৯ শতাংশ। মুসলমান ৭৯.২ শতাংশ, হিন্দু ২০.৬২ শতাংশ এবং অন্যান্য ৫.১৮ শতাংশ। গড় সাক্ষরতা ২৮.৯ শতাংশ। যার মধ্যে শতকরা ৩৭.২জন পুরুষ এবং ২০.৬ জন মহিলা।
পাকা রাস্তা ৪৪ কি: মি:, আধা পাকা ৩২ কি:মি: এবং কাঁচা রাস্তা ৭৮৬ কি: মি:।
গরুর গাড়ি, ঘোড়ার গাড়ি, হেলিকাপ্টার ( যাত্রী বাহক সাইকেল) এবং পালকি হলো এ অঞ্চলের ঐতিহাসিক যানবাহন। এ ধরনের পরিবহন হয় বিলুপ্ত অথবা প্রায় বিলুপ্ত।
এছাড়া আধুনিক যানবাহন যেমন– বাস, মিনিবাস, মাইক্রোবাস, ইজিবাইক, রিকশা-ভ্যান, টেম্পু, করিমন, টেকার, নসিমন, আলমসাধু এবং ইজিভ্যান ইজি রিকশা সহ অন্যান্য সাধারণ যানবহন মণিরামপুরে চলমান।
পরিবার ও সমাজ উন্নয়ন সংস্থা, অভেদ রক্তদান সংস্থা, প্রত্যয় সমাজ উন্নয়নমূলক সংগঠন, সত্যসন্ধ, কণ্ঠশীলন, উচ্চারণ শিল্পী সংসদ, মণিরামপুর শিল্পী গোষ্ঠি, টুনিয়াঘরা মানবকল্যাণ সংঘ।
মণিরামপুর শিল্পী গোষ্ঠির আয়োজনে ২০০০ সাল থেকে নিয়মিত বৈশাখী মাসে মণিরামপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে বইমেলা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। এছাড়াও স্থানীয়ভাবে কৃষি মেলা এবং বৃক্ষ ও ফলজ মেলা হয়ে থাকে যা অতিশয় দৃষ্টিনন্দন। অত্যন্ত যাকজমকের সাথে এখানে পূজা-পার্বণ উদ্যাপিত হয়। মশিয়াহাটির মন্দির প্রাঙ্গণ এর দুর্গাপূজা এবং কপালিয়ার মহামায়া পূজা (গাউটে মেলা) বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তাছাড়া ঝাঁপা বাঁওড়ে অনুষ্ঠিত নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতা অতি মনোরম।
কলেজের সংখ্যা ১১টি, উচ্চ বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৭৭টি, নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যায়ের সংখ্যা ৩৭টি, মাদ্রাসার সংখ্যা ১৬৩টি, সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ১২০টি এবং বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ১৪৬ টি। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে মণিরামপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, মণিরামপুর সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
মণিরামপুরে মানুষের জীবিকা প্রধানত কৃষিনির্ভর। এখানে কৃষিতে ৪৫.৬%, কৃষি শ্রমিক হিসেবে ২৮.৩৬%, পরিবহনে ২.৪৪%, দিন মজুর হিসেবে ১.৯৯%, ব্যবসা বাণিজ্যে ৯.৫১%, চাকুরীতে ৩.৯৪%, শিল্পে ২% এবং অন্যান্য পেশাতে ৬.১৬% মানুষ নিয়োজিত।
এ অঞ্চলে উৎপাদিত প্রধান শস্য হলো ধান, পাট, আলু, সরিষা ও ঋতুকালীন তরিতরকারি। মোট আবাদি জমির পরিমাণ ১,০৯,৮৯৪ একর। বিলুপ্ত অথবা প্রায় বিলুপ্ত ফসলের মধ্যে রয়েছে মসীনা, নীল, এবং অরহর। এখানে প্রচুর পরিমাণে আম, কাঁঠাল, পেঁপে এবং কলা সহ অন্যান্য ঋতুকালীন ফল পাওয়া যায়। শিল্প প্রধান অঞ্চল না হলেও মণিরামপুর উপজেলায় কয়েকটি চাউল কল, আটা কল ও বরফ কল আছে। কুঠির শিল্প যেমন– তাঁত, স্বর্ণকার, কামার, কুম্ভকার, মাটির কাজ, দর্জি এবং ওয়েল্ডিং-ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে অবদান রাখে।
মোট হাট–বাজারের সংখ্যা ৬০টি। এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে কপালিয়া, নেহালপুর, মণিরামপুর, ঢাকুরিয়া, চীনেটোলা, কুয়াদা বাজার এবং রাজগঞ্জ বাজার।
মণিরামপুর উপজেলার সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলির মধ্যে রয়েছে – স্থানীয় গ্রন্থাগার, কবিতা ও সাহিত্য ক্লাব, সঙ্গীত-নাটক-চারুকলা ক্লাব এবং একাডেমি, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড কেন্দ্র।এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল সাইক্লোন শিল্পী গোষ্ঠী, মণিরামপুর পাবলিক লাইব্রেরি, উদীচী, মণিরামপুর শিল্পী গোষ্ঠি এবং মশিয়াহাটি থিয়েটার।
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.