Loading AI tools
বাংলাকে দাপ্তরিক ভাষাকরণের দাবিতে ভারতের বিহার রাজ্যের সাবেক মানভূম জেলায় সংঘটিত আন্দোলন উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
মানভূমে বাংলা ভাষা আন্দোলন ১৯১২ সালে শুরু হয়। ১৯৪৮ থেকে ১৯৫৬ সালের মধ্যে ভাষা আন্দোলন তীব্র ভাবে ছড়িয়ে পড়ে মানভূমের বাঙালিদের মধ্যে। মানভূমের এই ভাষা আন্দোলন পৃথিবীতে ঘটা দীর্ঘতম ভাষা আন্দোলন।[১] ১৯৫৬ সালের আগে পুরুলিয়া জেলা বিহারের অন্তর্ভুক্ত ছিল। সেই সময় রাজনৈতিক ভাবে বিহারের স্কুল-কলেজ-সরকারি দপ্তরে হিন্দি চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়।[২] সেই সময় জাতীয় কংগ্রেসের মাধ্যমে বাংলাভাষী জনগণ হিন্দি ভাষার বিরুদ্ধে আন্দোলন করার চেষ্টা করা হয়; কিন্তু, বাংলা ভাষার দাবি প্রতিষ্ঠিত না হওয়ায় পুরুলিয়া কোর্টের আইনজীবী রজনীকান্ত সরকার, শরৎচন্দ্র সেন এবং গুণেন্দ্রনাথ রায় জাতীয় কংগ্রেস ত্যাগ করে জাতীয়তাবাদী আঞ্চলিক দল লোকসেবক সঙ্ঘ গড়ে তোলেন।[২] বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষার লড়াইয়ে তাদের সুদৃঢ় আন্দোলন করেন। এরপর ১৯৫৬ সালে ভারত সরকার মানভূম জেলা ভেঙ্গে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে সঙ্গে একটি নতুন জেলা (বর্তমান পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের পুরুলিয়া জেলা) সংযুক্ত করতে বাধ্য করেন।[২]
১৭৬৫ খ্রিষ্টাব্দে দ্বিতীয় শাহ আলম বক্সারের যুদ্ধে পরাজিত হলে তিনি ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে বিহার ও উড়িষ্যা সমেত সমগ্র বাংলার দেওয়ানী দিতে বাধ্য হন। কোম্পানি বাংলার জঙ্গলমহল এলাকায় কর সংগ্রহ করা শুরু করলে তারা প্রশাসনিক সুবিধার জন্য এই এলাকাকে ১৭৭৩ খ্রিষ্টাব্দে পাঞ্চেত, ১৮০৫ খ্রিষ্টাব্দে জঙ্গল মহল এবং ১৮৩৩ খ্রিষ্টাব্দে মানভূম এই তিন ভাগে ভাগ করেন। মানভূম জেলার সদর দপ্তর হয় মানবাজার। এই জেলা বর্তমান পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বাঁকুড়া জেলা ও বর্ধমান জেলা এবং ঝাড়খণ্ড রাজ্যের ধানবাদ, ধলভূম ও সেরাইকেলা খার্সোয়ান জেলার অংশ নিয়ে ৭,৮৯৬ বর্গমাইল এলাকা জুড়ে তৈরী করা হয়। [৩] পরবর্তীকালে ১৮৪৫, ১৮৪৬, ১৮৭১ ও ১৮৭৯ খ্রিষ্টাব্দে মানভূমকে আরো ভাগ করা হয়। [৪] ১৯১১ খ্রিষ্টাব্দে বঙ্গভঙ্গ রদ হলেও বাংলা ভাষাভাষী সমগ্র মানভূম ও ধলভূম জেলাকে নতুন তৈরী বিহার-উড়িষ্যা রাজ্যের অন্তর্গত করা হয়। [৪] এই বিভক্তির ফলে ঐ অঞ্চলের নেতৃবৃন্দ প্রতিবাদ জানালেও[n ১] ঐ সিদ্ধান্ত রদ হয়নি। জাতীয় কংগ্রেসের ১৯২০ খ্রিষ্টাব্দের নাগপুর অধিবেশনে ভাষাভিত্তিক প্রদেশ পুনর্গঠনের দাবী আনুষ্ঠানিক ভাবে গৃহীত হয়েছিল। কিন্তু ১৯৩৫ খ্রিষ্টাব্দে বিহারে জাতীয় কংগ্রেস মন্ত্রীত্ব লাভ করার পর ডঃ রাজেন্দ্র প্রসাদের সভাপতিত্বে 'মানভূম বিহারী সমিতি' নামক এক সংগঠন গড়ে ওঠে। এর বিপরীতে মানভূম জেলার বাঙ্গালীরা ব্যারিস্টার পি আর দাসের সভাপতিত্বে 'মানভূম সমিতি' নামক সংগঠন তৈরী করেন। বিহার সরকার আদিবাসী ও উপজাতি অধ্যুষিত অঞ্চলে প্রাথমিক স্তরের বিদ্যালয় খুলতে শুরু করলে বাঙ্গালীরাও বাংলা স্কুল খুলতে তৎপর হয়ে পড়েন। এই সময় সতীশচন্দ্র সিংহ রাঁচি, পালামৌ, সিংভূম ও মানভূম জেলা নিয়ে ছোটনাগপুর নামক এক নতুন প্রদেশ গঠন বা বাংলার সঙ্গে পুনরায় সংযুক্তির প্রস্তাব করেন।[৬]:২৫,২৬
১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দে ভারত স্বাধীনতা লাভ করার পর থেকে জাতীয় কংগ্রেসের ভাষাভিত্তিক রাজ্য পুনর্গঠনের নীতির বাস্তব রূপায়নের দাবিতে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে আঞ্চলিকতা বেড়ে উঠতে শুরু করে। সেই পরিস্থিতিতে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু দেশের স্থায়িত্ব ও নিরাপত্তাকে বিবেচনা করে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে প্রদেশ গঠনের সুপারিশ করেন এবং সেই হিসেবে ভাষাভিত্তিক প্রদেশ কমিশন বা দার কমিশন নিয়োগ করেন। ১৯৪৮ খ্রিষ্টাব্দে্র ডিসেম্বর মাসে কমিশন মত দেয় যে, স্বাধীনতার সাথে সাথে জাতীয় কংগ্রেস তার অতীত অঙ্গীকার থেকে অব্যহতি পেয়েছে এবং শুধুমাত্র ভাষাভিত্তিক প্রদেশ গঠন না করে ভারতের ঐক্যবদ্ধতাকে গুরুত্ব দেওয়া উচিত। এই কমিশনের প্রতিবেদন খতিয়ে দেখার জন্য প্রধানমন্ত্রী, সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল ও পট্টভি সীতারামাইয়াকে নিয়ে গঠিত তিন সদস্যের এক উচ্চপর্যায়ের কমিটি নিয়োজিত হয়।[৬]:২৬
১৯৪৮ খ্রিষ্টাব্দ থেকে তৎকালীন বিহার সরকার ঐ রাজ্যের মানুষদের ওপর হিন্দী ভাষা চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। প্রাথমিক স্তরে ও সরকারি অনুদান যুক্ত বিদ্যালয়ে হিন্দী মাধ্যমে পড়ানোর নির্দেশ আসে[৭], জেলা স্কুলগুলিতে বাংলা বিভাগ বন্ধ করে দেওয়া হয় ও হিন্দীকে বিহার রাজ্যের আনুষ্ঠানিক ভাষা হিসেবে ঘোষণা করা হয়।[৪]
মানভূম জেলার বাংলাভাষী মানুষদের ক্ষোভ আঁচ করে জেলা কংগ্রেসের মুখপাত্র মুক্তি পত্রিকায় ১৯৪৮ খ্রিষ্টাব্দের ৮ই মার্চ হিন্দী প্রচার, বাংলা ভাষাভাষীদের বিক্ষোভ ও মানভূম জেলার বঙ্গভুক্তির যৌক্তিকতা বিশ্লেষণ করে সম্পাদকীয় নিবন্ধ প্রকাশিত হল।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] এই বিষয়টি বিবেচনার জন্য ১৯৪৮ খ্রিষ্টাব্দের ৩০শে এপ্রিল বান্দোয়ান থানার জিতান গ্রামে অতুলচন্দ্র ঘোষের সভাপতিত্বে জেলা কমিটির অধিবেশন হলে সেখানে প্রতিনিধিদের মধ্যে মতভেদ দেখা দেয়। ঐ বছর ৩০শে মে পুরুলিয়া শহরের অধিবেশনে মানভূমের বঙ্গভুক্তির প্রস্তাব ৫৫-৪৩ ভোটে খারিজ হয়ে গেলে অতুলচন্দ্র ঘোষ সহ সাইত্রিশজন জেলা কমিটি থেকে পদত্যাগ করে ১৯৪৮ খ্রিষ্টাব্দের ১৪ই জুন পাকবিড়রা গ্রামে লোক সেবক সংঘ তৈরী করেন।[৬]:২৭ বিহার সরকার বাংলাভাষীদের প্রতিবাদসভা ও মিছিল নিষিদ্ধ করলে মানভূম জেলায় আন্দোলন তীব্র হয়ে ওঠে। লোকসেবক সংঘ বাংলা ভাষার প্রতিষ্ঠা ও মানভূমকে পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে যুক্ত করার দাবিতে মোট তিনটি আন্দোলন পরিচালনা করেছিল, যেগুলি হল ক) ১৯৪৯ থেকে ১৯৫১ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত সত্যাগ্রহ আন্দোলন, খ) হাল জোয়াল সত্যাগ্রহ এবং গ) ১৯৫৪ খ্রিষ্টাব্দের ৯ই জানুয়ারি থেকে ৮ই ফেব্রুয়ারি টুসু সত্যাগ্রহ আন্দোলন।[৮]
এই সময়ে আন্দোলন দমনের জন্য বিহার সরকার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছিল। আন্দোলনের প্রধান মুখ অতুলচন্দ্র ঘোষকে বন্দি করা হয়, এবং ১৩৫ মাইল দূরের হাজারীবাগ জেলে পাঠানো হয়। আন্দোলনে অংশ নেওয়া হাজারো বাংলাভাষী আন্দোলনকারীকে কারাগারের প্রকোষ্ঠে নিক্ষেপ করা হয়েছিল। বিচারাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছিলেন রাঘব চর্মকার।[৮]
বিহার সরকার অন্দলন আন্দোলন দমনে আরও মরিয়া হয়ে ওঠে। হাটে-বাজার ও সমস্ত প্রকাশ্য যায়গায় হাল, জোয়াল ও মই ইত্যাদি কৃষি যন্ত্রপাতি বিক্রি বন্ধ করে দেয়। প্রতিবাদ হিসাবে লোকসেবক সংঘ চাষীদের স্বার্থে প্রকাশ্য স্থানে কৃষি যন্ত্রপাতি বিক্রি করতে শুরু করার কর্মসূচি নেয়, যা হাল জোয়াল সত্যাগ্রহ হিসাবে পরিচিতি পায়।[৮]
বাংলা ভাষার দাবিতে লোকসেবক সঙ্ঘের নেতৃত্বে সত্যাগ্রহ শুরু হলে সত্যাগ্রহীদের উপর আক্রমণ নেমে আসে। ঝালদা, পুরুলিয়া ও সাঁতুরির জনসভায় পুলিশ লাঠিচার্জ ও মহিলানেত্রীদের উপর অকথ্য নির্যাতন করে, ফলে সাধারণ জনগণ ক্ষোভে ফেটে পরে। তারা মানভূমের নিজস্ব গান, টুসু গানকে কেন্দ্র করে ৯ই জানুয়ারি টুসু সত্যাগ্রহ শুরু করেছিল। এই সত্যাগ্রহ চলেছিল তিনটি পর্যায়ে। টুসু সত্যাগ্রহের প্রথম পর্যায় ৯ জানুয়ারি থেকে ১৯ জানুয়ারি পর্যন্ত, দ্বিতীয় পর্যায় ২০ থকে ২৬ জানুয়ারি পর্যন্ত এবং তৃতীয় পর্যায় ২৭ জানুয়ারি থেকে ৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলেছিল।[৮]
হেমচন্দ্র মাহাতোর নেতৃত্বে ৯ জানুয়ারি রঘুনাথপুরে লোক সেবক সংঘের সদস্যরা শহর পরিক্রমা শুরু করেন। বিহার সরকার নিরাপত্তা আইনের অজুহাতে ৮ আন্দোলনকারীকে গ্রেপ্তার করে। ১১ জন আন্দোলনকারী ১০ জানুয়ারি টুসু গান গাওয়ার সময় পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন। অতুলচন্দ্র ঘোষ ১২ জানুয়ারি আন্দোলনকারীদের সরকারি বাধা উপেক্ষা করে টুসু গানে পুরো মানভূমকে মুখরিত করার নির্দেশ দেন। এরপরই মানভূমের বিভিন্ন অঞ্চলে টুসু সত্যাগ্রহ ছড়িয়ে পরে। বিহার সরকার তখন আন্দোলন কর্মীদের বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা দেওয়া শুরু করে, যার প্রতিবাদে ২২শে জানুয়ারি লাবণ্যপ্রভা ঘোষ ও ভজহরি মাহাতো, ২৫শে জানুয়ারি সমরেন্দ্রনাথ ওঝা, কালীরাম মাহাতো ও ভাবিনী দেবী স্বেচ্ছায় কারাবরণ করেন।[৮]
নানা ছন্দে, বর্ণে প্রোথিত প্রতিবাদী টুসু লোকগানগুলো হয়ে ওঠে প্রবল জনপ্রিয়। কৃষক, দিনমজুর থেকে শুরু করে সব পেশার মানুষের গানে প্রকাশ পায় প্রতিবাদের সুর। এর মধ্যেই বিহার পুলিশ ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসে টুসু দলের ৪০ জন সত্যাগ্রহীকে গ্রেপ্তার করেছিল। অতুলচন্দ্র ঘোষ, লাবণ্য প্রভা ঘোষ, ভজহরি মাহাতোসহ অনেকে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। পুলিশ ১১ মার্চ মধুপুর গ্রামের লোক সেবক সংঘের অফিস ভাঙচুর করে, এবং প্রচুর টুসু গানের বই বাজেয়াপ্ত করে। এছাড়া, সাব ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ২১শে মার্চ মানবাজারের পিটিদারী গ্রামে সত্যাগ্রহীদের বাড়িঘরে ভাঙচুর ও লুটপাট চালানো হয়। মানভূমের বাঙালিদের বিরুদ্ধে চালানো হয় উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মিথ্যাচার ও অপপ্রচার।[৮]
এই সময় বেশ কয়েকটি টুসু সঙ্গীত জনগণের মধ্যে অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়েছিল। তার মধ্যে একটি হল,
“ |
শুন বিহারী ভাই |
” |
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী বিধান চন্দ্র রায় ও বিহারের মুখ্যমন্ত্রী শ্রীকৃষ্ণ সিং ১৯৫৬ সালের ২৩শে জানুয়ারি পশ্চিমবঙ্গ ও বিহার উভয় রাজ্যের সংযুক্ত করে পূর্বপ্রদেশ নামে এক নতুন প্রদেশ গঠনের প্রস্তাবনা করেন। প্রস্তাবে তারা বলেন, প্রদেশের কেন্দ্রীয় ভাষা হবে বাংলা ও হিন্দি। এই প্রস্তাবের বিরুদ্ধে প্রবীণ কংগ্রেস নেতারা ছাড়াও বামপন্থী দলগুলিও প্রতিবাদ করেন। প্রস্তাবের বিরুদ্ধে সত্যাগ্রহ আন্দোলনের মধ্যে বিহার বিধানসভায় ২৪শে ফেব্রুয়ারি প্রস্তাবটি পাশ হয়ে যায়।
লাবণ্যপ্রভা দেবী ও অতুলচন্দ্র ঘোষের নেতৃত্বে ২০ এপ্রিল ১৯৫৬ হাজারো মানুষ মানভূমকে পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে যুক্ত করা ও পূর্বপ্রদেশ গঠনের বিরোধিতা করে পদযাত্রা শুরু করে। এই পদযাত্রা পুরুলিয়ার পুঞ্চা থানার পাকবিড়রা গ্রামে শুরু হয়, এবং কলকাতায় সমাপ্ত হয়। পদযাত্রায় সত্যাগ্রহীদের সঙ্গে যোগ দিয়েছিল হাজারো জনগণ। মানভূমের টুসু গান ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা 'বাংলার মাটি বাংলার জল' গানে কম্পিত হাজারো সত্যাগ্রহী ও জনতার মিছিল কলকাতা অভিমুখে অগ্রসর হতে থাকে। টানা ১৭ দিনে পাকবিড়রা গ্রাম থেকে বাঁকুড়া, বেলিয়াতোড়, সোনামুখী, পাত্রসায়র, খন্ডঘোষ, বর্ধমান, পান্ডুয়া, মগরা, চুঁচুড়া, চন্দননগর, শ্রীরামপুর, হাওড়া হয়ে ৩০০ কিলোমিটার পদযাত্রা শেষে ৬ই মে সত্যাগ্রহীদের সঙ্গে হাজারো জনতার মিছিল কলকাতায় এসে পৌঁছায়।[৯] কলকাতায় পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ সত্যাগ্রহীদের গ্রেপ্তার করে। সত্যাগ্রহীদের দ্বারা ৭ মে মহাকরণ অবরোধ করা হয়, এবং ৯৬৫ জন স্বেচ্ছায় কারাবরণ করেন। প্রায় ১২ দিন কারাগারে আটক থাকার পরে তাদের মুক্তি দেওয়া হয়।[৬]:৩১,৩২[১০]
এই আন্দোলনের ফলে ১৯৫৩ খ্রিষ্টাব্দের ২৯শে ডিসেম্বর ভারত সরকার সৈয়দ ফজল আলির সভাপতিত্বে, হৃদয়নাথ কুঞ্জরু ও কবলম পানিক্করকে নিয়ে রাজ্য পুনর্গঠন কমিশন তৈরী করে। এই কমিশন ১৯৫৫ খ্রিষ্টাব্দের ৫ই ফেব্রুয়ারি থেকে মানভূম জেলায় তদন্ত করে ঐ বছর ১০ই অক্টোবর তাদের বক্তব্য জমা দেন। তাদের বক্তব্যে মানভূম জেলা থেকে বাঙালী অধ্যুষিত এলাকাগুলি নিয়ে পশ্চিমবঙ্গে ১৯টি থানা নিয়ে পুরুলিয়া জেলা নামে এক নতুন জেলা তৈরী করার প্রস্তাব দেন। তারা মানভূম জেলা থেকে ধানবাদ মহকুমার ১০টি থানা ও পুরুলিয়া মহকুমার ২টি থানা বিহার রাজ্যে রেখে দেওয়ার প্রস্তাব করেন। অপরদিকে ধলভূম পরগণায় বাংলাভাষীদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা স্বীকার করেও যেহেতু ভিন্ন ভাষাভাষী মানুষ ঐ জেলায় বসবাস করেন সেই কারণে কমিশন জামসেদপুরকে পশ্চিমবঙ্গের অন্তর্ভুক্ত করতে বা ধলভূম পরগণা ভেঙ্গে বাংলায় আনতে রাজি ছিলেন না। এই প্রস্তাবে ১৯৫৬ খ্রিষ্টাব্দের ১৭ থেকে ২০শে জুন বিহারপন্থীরা মানভূম জেলায় ধর্মঘটের ডাক দেন। অপরদিকে বাংলা ভাষা আন্দোলনকারীরা ধানবাদ বিহারের অন্তর্ভুক্তিতে খুশি ছিলেন না।[৬]:২৯,৩০
১৯৫৬ খ্রিষ্টাব্দের ১৭ই আগস্ট বাংলা-বিহার সীমান্ত নির্দেশ বিল লোকসভায় ও ২৮শে আগস্ট রাজ্যসভায় পাশ হয়। ১লা সেপ্টেম্বর এতে ভারতের রাষ্ট্রপতি সই করেন। এর ফলে ১৯৫৬ খ্রিষ্টাব্দের ১লা নভেম্বর ২৪০৭ বর্গ মাইল এলাকার ১১,৬৯,০৯৭ জন মানুষকে নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের নতুন জেলা পুরুলিয়া তৈরী হয়। সম্পূর্ণ ধানবাদ মহকুমা বিহার রাজ্যে রয়ে যায়।[৪][১১]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.