Loading AI tools
দেবের স্ত্রীবাচক শব্দ উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
দেবী ঈশ্বরীর সংস্কৃত প্রতিশব্দ। এটি একটি স্ত্রীবাচক শব্দ যার পুরুষবাচক শব্দ দেব। দেবী সনাতন ধর্মের একটি সত্তা যা স্বর্গীয়, ঐশ্বরিক বা শ্রেষ্ঠত্বকে বুঝায়।[1]
দেবীর ধারণা এবং আরাধনা পদ্ধতি খ্রিষ্টপূর্ব ২০০০ বছর পূর্বে রচিত বেদ গ্রন্থে উল্লিখিত থাকলেও, এইসব দেবীর কোন আকার বা চিত্র উল্লেখ নেই। সেসময় এই দেবীগণ কেন্দ্রীয় চরিত্ররূপে আবির্ভূত হননি। দেব দেবীর বিস্তার লাভ করে পৌরাণিক যুগে বিভিন্ন ধর্মীয় মহাকাব্য (পুরাণ) এর মাধ্যমে। লক্ষ্মী, সরস্বতী ও উমার মতো দেবীর পূজা আরম্ভ হয়েছে আধুনিক কালে। মধ্যযুগীয় পুরাণে দেব-দেবী ও তাদের বাণীসম্বলিত পৌরাণিক কাহিনী ও সাহিত্য বিস্তার লাভ করে। যেমন দেবী মহামায়া এসময় চিরসত্য ও পরম ক্ষমতার প্রতিভূরূপে আবির্ভূত হন এবং সনাতন ধর্মে শাক্ত মতবাদ প্রতিষ্ঠা করেন।[2]
বিশ্বের প্রধান ধর্মসমূহের একটি হিসেবে সনাতন ধর্মে প্রাচীনকাল থেকে বর্তমান পর্যন্ত স্বর্গীয় নারীগণের দেবীরূপে অবস্থান বেশ পোক্ত। এমনকি শাক্ত ও শৈবমত মূলত দেবীকে কেন্দ্র করে চালিত হয়।[3]
বৈদিক সাহিত্যে সংস্কৃত শব্দ দেব ও দেবীর উল্লেখ পাওয়া যায়। দেব পুংলিঙ্গ এবং তার সংশ্লিষ্ট মেয়েলি সমতুল্য হলো দেবী। [4] মনিয়ের উইলিয়ামস দেবীকে স্বর্গীয়, ঐশ্বরিক, পার্থিব শ্রেষ্ঠত্ব, মহিমান্বিত, জ্যোতির্ময় হিসেবে অবিহিত করেছেন।[5][6] ব্যুৎপত্তিগতভাবে দেবী লাতিন dea ও গ্রিক thea এর সমগোত্রীয়।[7] প্রয়োগার্থে সনাতন ধর্মে দেবী স্বর্গীয় মাতা হিসেবে বিবেচিত হয়।[8] কখনও কখনও দেবী শব্দটি দেবিকা হিসেবে এবং দেব দেবতা হিসেবে ব্যবহৃত হয়।[6]
ডগলাস হার্পার এর অর্থ জ্যোতির্ময় হিসেবে উল্লেখ করেছেন এবং একে গ্রিক divine ও লাতিন deus/deivos এর সমগোত্রীয় হিসেবে অবিহিত করেছেন।[9]
ঋগ্বেদের বহুল পঠিত দেবী সূক্ত ১০/১২৫ শ্লোকটি ঘোষণা করে দেবী হলো মহাবিশ্বের অধ্যাত্মিক বাস্তবতা।
আমি এই মনুষ্যজাতির এবং এই জগতের রক্ষাকারী অভিভাবক, দ্যুলোককে শাসকরূপে সৃষ্টি করি এবং সুর্যকে সৃষ্টি করি৷
জলের গভীরে ও সমূদ্রে এবং মহাকাশের অনুতে আমার স্থান৷
একইভাবে আমি ব্যাপ্ত আছি মহাবিশ্বের সকল স্থানে, এবং আমি আলোর আকাশে পৌঁছাই এবং আমার আলো ও মহিমা দ্বারা উর্দ্ধে দ্যুলোককে স্পর্শ করি৷
ঋগ্বেদে ছয় দেবী অদিতি, বাক, ভূমি, অরণ্যানী, রাত্রি ও উষার কথা উল্লেখ আছে।[10] এছাড়া সরস্বতী, ভারতী, পৃথিবী, অগ্নায়ী, বরুণানী, অশ্বিনী, রোদসী, রাকাকে দেবী পদভিষিক্তা বলা হয়েছে। যাইহোক, দেবীগণ দেবতাদের ন্যায় খুব বেশি আলোচিত নন। বৈদিক যুগের শেষাংশে এবং বুদ্ধ যুগের পূর্বে দেবী লক্ষ্মীর উল্লেখ বৈদিক শ্রীসূক্তে আছে।। বৈদিক যুগেই সকল দেব-দেবীর বৈশিষ্ট্য চিত্রিত হলেও মূলত মধ্যযুগে এসে তারা একটিমাত্র সর্বশক্তিমান দেবীর প্রতিভাস হিসেবে চিত্রিত হন।[11]
শাক্তমতে দেবীকে সর্বশক্তিমান হিসেবে বিবেচিত করা হয়। অন্যান্য সনাতন ধর্মীয় মতাদর্শেও দেবীগণ দেবতার শক্তি ও ক্ষমতাকে চিত্রিত করেন এবং একে অপরের পরিপূরক রূপে আবির্ভূত হন। যেমন বৈষ্ণব মতাদর্শে লক্ষ্মী ও বিষ্ণু এবং শৈব মতাদর্শে পার্বতী ও শিব পরস্পর স্রষ্টাশক্তি।[12][13]
সনাতন ধর্মীয় গ্রন্থে দেবী-অনুপ্রাণিত দর্শনের অনেককিছু উপস্থাপন করা হয়, যেমন দেবী উপনিষদ উল্লেখ করে যে শক্তিপীঠ মূলত ব্রাহ্মণ, সে প্রাক্তি ও পৌরুষ থেকে উদ্ভূত, সুখ-দুঃখ, জন্ম-জন্মান্তর ও মহাবিশ্বের মূল। তিনি শিবের সৃজনশীল শক্তি, এবং এই বিষয়গুলি এছাড়াও ত্রিপুরা উপনিষদ, গুহ্যকালী উপনিষদ-এও পাওয়া যায়।
দেবী উপনিষদে ঈশ্বরের প্রশ্নের জবাবে দেবী নিজেকে ব্রাহ্মণ বলে উল্লেখ করে বলেছেন, তিনি জগৎ শাসন করেন, পূজা গ্রহণ করেন এবং ব্যক্তিকে আত্মাদান করেন। দেবী দাবি করেন তিনি পৃথিবী এবং আকাশ ও সেখানে বসবাসকারীগণের স্রষ্টা। তার পিতারূপে আকাশ ও মাতারূপে সমুদ্র সৃষ্টি পরমাত্মার প্রকাশ ঘটায়। তার সৃষ্টি কারও নির্দেশে ঘটেনি, বরং তিনিই সৃষ্টির মাঝে বিরাজ করেন। দেবী উপনিষদে তান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি যন্ত্র, বিন্দু, বীজ, মন্ত্র, শক্তি ও চক্রের ব্যবহার উল্লেখ করে।
বিশ্বের প্রধান ধর্মগুলোর মধ্যে সনাতন ধর্মে দেবীর ধারণা ঐশ্বরিক, যার আদ্যিকাল থেকে শক্তিশালী উপস্থিতি ছিল।
পার্বতী হিন্দুদের শক্তি, অসুর বিজয়, প্রেম, উর্বরতা ও ভক্তির দেবী। তিনি শিষ্টতা ও নম্রতার প্রতিরূপ,তিনি আদি পরাশক্তি দেবী।[14][15][16] তার প্রত্যেকটি দিক ভিন্ন ভিন্ন নাম দিয়ে প্রকাশ করা হয়। "পার্বতী" শব্দের অর্থ "পর্বতের কন্যা"। পর্বতের রাজা হিমালয়ের কন্যা বলে তাকে পার্বতী বলা হয়। হিমালয় কন্যা হিসেবে তার অন্য নাম "শৈলজা", "অদ্রিজা", "নগজা", "শৈলপুত্রী", "হৈমবতী", "গিরিজা" বা "গিরিজাপুত্রী"।[17] কখনও কখনও তাকে "পবিত্রা"ও বলা হয়। লক্ষ্মী ও সরস্বতীর সাথে পার্বতীকে একত্রে ত্রয়ীদেবী বলা হয়।[18]
পার্বতী হলেন শিবের স্ত্রী এবং আদি পরাশক্তির । তিনি বিষ্ণুর ভগিনী কারণ দেবী পার্বতী বিষ্ণুর অনন্ত মায়ার স্বরূপ । তাঁর অনেক বৈশিষ্ট্য এবং দিক রয়েছে। তিনি হিন্দুধর্মে মাতৃদেবী এবং গণেশ ও কার্তিকের মা।[19]
তাঁর শতাধিক নামের মধ্যে অন্যতম উমা ও অপর্ণা। তিনি গৌরী নামেও পরিচিত। অন্যান্য দেবীরা তাঁর অংশ থেকে জাত, বা তাঁর অবতার। কয়েকটি প্রাচীন ধর্মগ্রন্থে দাক্ষায়ণীকে উমা বলা হলেও, রামায়ণে পার্বতীকেই উমা বলা হয়েছে। হরিবংশে পার্বতীকে প্রথমে "অপর্ণা" বলে, পরে "উমা" বলা হয়েছে। অপর্ণা শব্দের অর্থ, যিনি ঘোর তপস্যা করেছেন। পার্বতীর মা মেনকা তার তপস্যা দেখে বলেছিলেন, "উ মা" (আর না)। সেই থেকে পার্বতীর অপর নাম উমা।[20] অন্যদিকে পার্বতী একসঙ্গে "গৌরী" (গৌরবর্ণা দেবী) এবং "কালী" বা "শ্যামা" (কৃষ্ণবর্ণা দেবী) নামে অভিহিত হন। কারণ, তিনি শান্ত স্ত্রী উমা। কিন্তু বিপদের সময় ভয়ংকরী কালী,চণ্ডিকা দেবীতে রূপান্তরিত হন। এই দুই পরস্পর বিপরীত রূপ পার্বতীর দুই রকম প্রকৃতির কথা নির্দেশ করে। আবার "কামাক্ষ্মী" রূপে তিনি ভক্তির দেবী।[21]
রিতা গ্রোস উল্লেখ করেন, ভারতের পুরাণে শুধুমাত্র আদর্শ স্ত্রী ও মা হিসেবে পার্বতীর দৃশ্য মেয়েলি ক্ষমতার অসম্পূর্ণ প্রতীকীবাদ হিসেবে বিবেচিত হয়। অন্যান্য দেবীর সঙ্গে পার্বতী বিস্তৃত পরিসর সাংস্কৃতিক উদ্দেশ্য এবং কার্যক্রমে জড়িত। হিন্দু সাহিত্যে মাতৃত্ব এবং নারীর যৌনতা সাথে তার যোগসূত্র কেবল মেয়েলিপনায় সীমাবদ্ধ নয়। তিনি দুর্গা রূপ ধারণ করে সামঞ্জস্যপূর্ণ হন, যিনি নারীত্বের সাথে আপোষ না করেও সক্ষম। পার্বতীর অনেক দিক উল্লেখ করে যে, নারীত্ব বিশ্বজনীন এবং তাকে লিঙ্গভেদে সংকীর্ণ করা যায় না।[21]
হিন্দু বিশ্বাস অনুযায়ী, পার্বতী মহাশক্তি ও শিবের ক্ষমতার উৎস হিসেবে বিবেচিত হন এবং তিনি একটি বন্ধনের কারণ যা সকল সত্তার যোগসূত্ররূপে বিরাজমান। তার এবং তার পতি শিবের সাধারণ প্রতীক যথাক্রমে যোনী এবং লিঙ্গ।[22] প্রাচীন সাহিত্যে যোনীকে গর্ভরূপে চিহ্নিত করা হয় এবং যোনী-লিঙ্গের সঙ্গম সঞ্জীবনী শক্তি নির্দেশ করে। সাধারণত শিবলিঙ্গ হিসেবে পরিচিত হলেও একইসাথে এটি যোনী ও লিঙ্গের প্রতীক।[21]
ভারতীয় কিংবদন্তিতে দেবীকে আদর্শ স্ত্রী, মা এবং গৃহিণী হিসেবে চিত্রিত করা হয়েছে। ভারতীয় শিল্পকলায়, আদর্শ দম্পতির ধারণা শিব ও পার্বতী থেকে প্রাপ্ত।[23][24][25] পার্বতীকে ব্যাপকভাবে প্রাচীন ভারতীয় সাহিত্যে পাওয়া যায়, এবং তার প্রাচীন ও মধ্যযুগীয় ভাষ্কর্য ও মূর্তি দক্ষিণ এশিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অনেক মন্দিরে পাওয়া য়ায়।[26][27]
লক্ষ্মী, যিনি শ্রী নামেও পরিচিত, হিন্দুদের সম্পদ, ভাগ্য, এবং সমৃদ্ধির (উভয় বস্তুগত এবং আধ্যাত্মিক) দেবী। তিনি বিষ্ণুর সঙ্গী এবং রাজসিক শক্তি। তার অপর নাম মহালক্ষ্মী। অগ্নি পুরাণ মতে শ্রী বা লক্ষ্মী হলেন যজ্ঞবিদ্যা, আত্ম্যবিদ্যা, যাবতীয় গুহ্যবিদ্যা ও মহাবিদ্যার অধিকারী। বিষ্ণু রাম ও কৃষ্ণ রূপে অবতার গ্রহণ করলে, লক্ষ্মী সীতা ও রাধা রূপে তাদের সঙ্গিনী হন।[28][29][30] কৃষ্ণের দুই স্ত্রী রুক্মিনী ও সত্যভামাও লক্ষ্মীর অবতার রূপে কল্পিত হন।[31] লক্ষ্মীর বাহন পেঁচা। তার চার হাত মানব জীবনের চারটি লক্ষ্য প্রতিনিধিত্ব করে- ধর্ম, কর্ম, অর্থ ও মোক্ষ।
ভারতের প্রাচীন ধর্মগ্রন্থগুলিতে, সব নারীকে লক্ষ্মীর প্রতিমূর্তি ঘোষণা করা হয়। Patricia Monaghan লক্ষ্মী ও বিষ্ণুর মধ্যে স্ত্রী ও স্বামী হিসেবে বিয়ের সম্পর্ককে "হিন্দু বিবাহে নববধু ও বরের আচার ও অনুষ্ঠানের দৃষ্টান্ত হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন ও প্রাচীন মুদ্রাসমূহ খ্রিষ্টপূর্ব ১ম সহস্রাব্দে লক্ষী পূজার নিদর্শনের সাক্ষ্য দেয়। তিনি এশিয়ার অন্যান্য অ-হিন্দু সংস্কৃতি, যেমন তিব্বতেও প্রচুর সম্মানিত হন। তার ভাষ্কর্য ও মূর্তি দক্ষিণ এশিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অনেক মন্দিরেও পাওয়া য়ায়। আধুনিক কালে লক্ষ্মীকে সম্পদের দেবী হিসেবে পূজা করা হয়। দীপাবলী এবং শারদ পূর্ণিমা (কোজাগরী পূর্ণিমা) উৎসব তার সম্মানে পালিত হয়।
সরস্বতী হিন্দুদের জ্ঞান, সঙ্গীত, শিল্পকলা, প্রজ্ঞা এবং শিক্ষার দেবী।[32] তিনি ব্রহ্মার পত্নী।[33]
দেবী হিসেবে সরস্বতী প্রাচীনতম জ্ঞাত উল্লেখ ঋগ্বেদে পাওয়া যায়। হিন্দু ঐতিহ্যে তিনি বৈদিক যুগ থেকে আধুনিক সময় পর্যন্ত দেবী হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ রয়ে গেছেন। কিছু হিন্দু তার সম্মানে বসন্ত পঞ্চমী (বসন্ত পঞ্চম দিনে) উৎসব উদ্যাপন করে এবং দিবসটি উপলক্ষে শিশু-কিশোরদের সেদিন বর্ণমালা লিখতে শিখতে সাহায্য করে।[34]
সরস্বতীকে সাধারণত বিশুদ্ধ সাদা কাপড় পরিহিত অবস্থায় একটি সাদা পদ্মের উপর উপবিষ্ট করে দেখানো হয়। তিনি শুধুমাত্র জ্ঞান নয় বরং সর্বোচ্চ বাস্তব অভিজ্ঞতার আধার। তার উপস্থিতি, পরিচ্ছদ, বাহন, প্রভৃতিতে শুভ্রতার ছোঁয়া থাকে যা বিশুদ্ধতা, সত্য জ্ঞান, অন্তর্দৃষ্টি ও প্রজ্ঞার প্রতীক।[32][35]
তার সাধারণত চার বাহু, আবার কখনও কখনও শুধু দুই বাহু দেখানো হয়। চার হাত প্রতীকী অর্থে চারটি জিনিশ ধারণ করে, একটি পুস্তক (বই অথবা স্ক্রিপ্ট), একটি মালা (জপ, মালা), একটি জলের পাত্র এবং একটি বাদ্যযন্ত্র (বাঁশি বা বীণা)। তার হাতের বইটি বেদ প্রতীক যা সার্বজনীন ঐশ্বরিক, শাশ্বত, এবং পরম জ্ঞান ধারণ করে।[32][36] স্ফটিকের মালাটি ধ্যান শক্তির প্রতিনিধিত্বমূলক, পানির পাত্র ভুল থেকে সঠিককে শুদ্ধ করার ক্ষমতা প্রতিনিধিত্ব করে। বাদ্যযন্ত্রটি, যা একটি বীণা, সব সৃজনশীল শিল্পকলা ও বিজ্ঞান প্রতিনিধিত্ব করে এবং তার এটা ধারণ করা 'জ্ঞান যে ঐকতান সৃষ্টি করে' তার প্রতীক।[37]
যজুর্বেদের সরস্বতীরহস্য উপনিষদ দশ শ্লোকবিশিষ্ট হয়ে থাকে যা সরস্বতী প্রশংসাসূচক হয়।[38] এই উপনিষদে তিনি প্রশংসিত হন এভাবে- "আপনি সরোবরে জলকেলীরত সৃজনশীল শক্তির রাজহংস, আপনার রূপ থেকে উদ্ভাসিত সৃজনশীল শক্তির তরঙ্গ, আমার হৃদয়ের কাশ্মীরে চিরকাল দীপ্তিমান শুভ্র সমুজ্জ্বল দেবী।
সরস্বতীকে ভারতের বাইরে যেমন, জাপান, ভিয়েতনাম, বালি (ইন্দোনেশিয়া) এবং মিয়ানমারের মধ্যে পাওয়া যায়।
বৈদিক সাহিত্যে দুর্গার ধারণা হিসেবে কোনো বিশেষ দেবী নেই। তাঁঁর কিংবদন্তি মধ্যযুগ পাওয়া যায়, মা দেবী পার্বতীর তাণ্ডবরূপে দুর্গা বা কালী অবতার হিসেবে। আট বা দশ বাহুবিশিষ্ট দেবী হিসাবে অস্ত্র ও অসুরের খুলিহাতে তিনি প্রকাশিত হন। তাঁর বাহন বাঘ বা সিংহ।[39][40] স্কন্দ পুরাণে, পার্বতী একজন যোদ্ধা-দেবী আকার গ্রহণ করেন এবং দুর্গ নামক মহিষাকৃতির একটি দৈত্য বধ করেন। এ কারণে তিনি দুর্গা নামে পরিচিত হন। জ্যানসেন উল্লেখ করেন, পরবর্তীতে হিন্দু সাহিত্যে তিনি "নৈর্ব্যক্তিক পরম শক্তি ও ক্ষমতা" রূপে অধিষ্টিত হন।
হিন্দুধর্মের দক্ষিণ ভারতীয় শাক্তমত অনুসারে, দুর্গা একজন জনপ্রিয় দেবী। মধ্যযুগে রচিত পুরাণ গ্রন্থে সঙ্কটের মুহুর্তে যখন অশুভ অসুরদের আগমন ঘটে তখন তিনি একজন বিশিষ্ট দেবী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। পুরুষ দেবতাগণ মহিষাসুরের অশুভ শক্তি শায়েস্তা করতে ব্যর্থ হয়। যোদ্ধা দেবী দুর্গা সকল দেবতার সম্মিলিত রূপ হিসাবে প্রদর্শিত হন, মহিষাসুর বধ করেন এবং দুষ্টের দমনের মধ্য দিয়ে ধর্মরক্ষা করেন।[41]
দুর্গার উত্থানের কাহিনী পুরাণের দেবী মহাত্ম্য অংশে বর্ণনা করা হয়েছে। শ্লোকে বর্ণিত আছে, দুর্গা যখন খড়গহস্ত হয়ে ওঠেন তখন কালীরূপ ধারণ করেন। দুর্গার মুখ কালো অন্ধকার হয়ে যায় এবং হঠাৎ দুর্গার কপাল থেকে কালী বেরিয়ে আসে। তার বর্ণ কালো, গলায় মানুষের মাথার খুলির মালা ঝুলান, শরীরে ব্যাঘ্র চামড়া পরিধান করেন, বাঘকে বাহন করেন এবং মানুষের ছিন্ন মস্তক তুলে ধরেন। কালী দুর্গার মত শিবের স্ত্রী হিসেবে একজন স্বাধীন দেবী হিসাবে প্রদর্শিত হন। এই হিসেবে, তিনি শিবের সর্বশক্তিমান শক্তিপীঠ প্রতিনিধিত্ব করেন। তিনি সময়ের সৃষ্টিশীল এবং ধ্বংসাত্মক, উভয় ক্ষমতাই ধারণ করেন। তন্ত্র পুরাণে দেবী কালীর একাধিক রূপভেদের উল্লেখ পাওয়া যায়। তোড়লতন্ত্র অনুসারে, কালী আট প্রকার। যথা: দক্ষিণকালিকা, সিদ্ধকালিকা, গুহ্যকালিকা, শ্রীকালিকা, ভদ্রকালী, চামুণ্ডাকালিকা, শ্মশানকালিকা ও মহাকালী।[42] বশিষ্ঠ মুনির মতে, তার ক্ষমতা সমুদ্র, দ্বীপ, বন, মরুভূমি ও পর্বতের সঙ্গে পৃথিবীকে সম্পর্কযুক্ত করে।
দেবীর বৃহত্তম উৎসব দুর্গাপূজা, আশ্বিন (সেপ্টেম্বর-অক্টোবর) মাসে পালিত হয়, যেখানে নয়দিনে দুর্গার নয়টি রূপের পূজা হয়। সেগুলো হলো, শৈলপুত্রী, ব্রহ্মচারিণী, চন্দ্রঘণ্টা, কুশমণ্ডা, স্কন্দমাতা, কাত্যায়নী, কালরাত্রি, মহাগৌরী, সিদ্ধিদাত্রী।[43]
হিন্দুধর্মের নারীবাদী শক্তিধর্ম সম্প্রদায়মতে, সর্বোচ্চ দেবী মহাদেবী সৃষ্টির জন্য দেবী মহাসরস্বতী, স্থিতির জন্য মহালক্ষ্মী এবং ধ্বংসের জন্য মহাকালী হিসাবে প্রকাশিত হন। মহাদেবীর এই তিনটি রূপকে সম্মিলিতভাবে ত্রিদেবী বলা হয়।
সীতা রামের স্ত্রী, বিষ্ণুর অবতার। তিনি লক্ষ্মীর একটি রূপ। রাম রাখি স্তোত্রতে তাকে রামের শক্তি ও প্রকৃতি হিসেবে বলা হয়েছে। শাক্ত উপনিষদ সীতা উপনিষদে সীতা প্রধানতম দেবী হিসেবে প্রশংসিত হন। উপনিষদে সীতা প্রকৃতি হিসেবে চিহ্নিত হয়েছেন যা ইচ্ছা, ক্রিয়া এবং জ্ঞান দ্বারা গঠিত। উপনিষদে এও উল্লেখ আছে যে, সীতাকে হালচাষের সময় লাঙলের ফলা থেকে পাওয়া গিয়েছে। সীতা তার ধর্মচারী গুণাবলী জন্য পঞ্চকন্যার একজন হিসাবে প্রশংসিত হন, যাঁদের নাম উচ্চারণে পাপক্ষয় হয়।[44][45]
সীতা মহাবিষ্ণুর অবতার রামকে বিয়ে করেন। তার জীবন কাহিনী এবং তার স্বামী রাম ও দেবর লক্ষ্মণের সাথে বনবাসের কাহিনী হিন্দু মহাকাব্য রামায়ণের অংশ। যাইহোক, রামায়ণের এবং হিন্দু পুরাণে দেবী হিসেবে তার গল্পের অনেক সংস্করণ আছে। এছাড়াও তার পৌরাণিক মহাকাব্য রামায়ণের দক্ষিণপূর্ব এশীয় সংস্করণে তারতম্য বিদ্যমান। যেমন থাইল্যান্ডের রামাকিনে তিনি সিডা (বা নং সিডা) হিসাবে উচ্চারিত হন।[46]
বাল্মীকির রামায়ণে সীতাকে বারংবার লক্ষ্মী অবতার হিসেবে প্রকাশ করা হয় যিনি কৃষি, খাদ্য, এবং ধনসম্পদের আশীর্বাদ নিয়ে আসেন। তাকে সুবর্ণ দেবী হিসেবে উল্লেখ করা হয় কেননা সীতাবিচ্ছেদের পর রাম পুনরায় বিবাহে অস্বীকৃতি জানান। রাম উল্লেখ করেন তিনি একমাত্র সীতার সাথে চিরজীবনের জন্য বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ এবং তার সিংহাসনের পাশে সীতার একটি স্বর্ণের প্রতিকৃতি স্থাপন করেন। অনেক হিন্দু পুরাণে, সীতা মানবতার ধারাবাহিকতার জন্য কৃষি, উর্বরতা, খাদ্য এবং সম্পদের দেবী।
রাধা মানে সমৃদ্ধি, সাফল্য এবং বজ্র। তিনি কৃষ্ণের সহচরী। পৌরাণিক সাহিত্যে হিসেবে ব্রক্ষ্ম বৈবর্ত পুরাণে তিনি ভালোবাসার দেবী হিসেবে পরিচিত হন। p বিদ্যাপতি (1352-1448) তার কবিতায় তাকে একজন মহাজাগতিক রাণী হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। তাকে লক্ষ্মীর অবতার হিসাবে বিবেচনা করা হয়।
শ্রীকৃষ্ণ এবং রাধার প্রেম বিষয়ক বহু গাথা কবিতা বৈষ্ণব পদাবলি সাহিত্যের অন্যতম উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে যা বাংলা সাহিত্যের এক অমূল্য ঐশ্বর্য। শ্রীকৃষ্ণকীর্তনেও রাধাকৃষ্ণের প্রেমলীলা সুবিস্তৃতভাবে বর্ণিত হয়েছে। তিনি গোয়ালিনী হিসেবে জন্মগ্রহণ করেন। তাকে স্বর্গের দেবী হিসেবে গণ্য করা হয় যিনি শক্তিপীঠ এবং বিষ্ণুর শক্তির সংমিশ্রণ।
তার প্রতীক পদ্ম এবং তিনি সবসময় ভক্তি আন্দোলনের একটি অংশ হয়েছেন। দক্ষিণ ভারতে তাকে ভূমিদেবী হিসেবে বিবেচনা করা হয় এবং সরস্বতীর সাথে সংযুক্ত করা হয়। গীতগোবিন্দ (১২ শতাব্দী) একটি গীতধর্মী নাটক ও "রহস্যময় প্রেমমূলক কবিতা সংকলন" যা কৃষ্ণ এবং গোপীদের, বিশেষত রাধার ভালবাসা বর্ণনা করে এবং এটি মানবাত্মার জন্য একটি প্রতীকীবাদ।[47]
ষষ্ঠ শতাব্দীতে লক্ষ্মী, পার্বতীসহ অন্যান্য বিমূর্ত দেবীদের একক রূপদান করে দেবী বা মহাদেবী নামে দেবীমাহাত্ম্যের আগমন ঘটে। হিন্দু পুরাণ অনুসারে, দেবী ও দেব সাধারণত জোটবদ্ধ, পরিপূর্ণ এবং একসাথে চলাচল করে। সাধারণত তাদের সমান দেখানো হয় কিন্তু কখনো কখনো দেবীকে ছোট বা অধস্তন ভূমিকায় দেখানো হয়। কিছু দেবী অবশ্য হিন্দু দেবসভায় স্বাধীন ভূমিকা পালন করেন এবং কোন দেবতার উপস্থিতি ছাড়াই বা অধস্তন দেবতাদের সঙ্গে নিয়ে শ্রেষ্ঠ হিসেবে সম্মানিত হন। মাতৃদেবী হিসেবে মহাদেবী চূড়ান্ত দেবীর একজন উদাহরণ, যাকে কখনও কখনও শুধু দেবী বলা হয়।[48]
আধ্যাত্মিক গ্রন্থসমূহে মহাদেবী একজন "শক্তিশালী, সৃজনশীল, সক্রিয়, সর্বোত্কৃষ্ট মহিলা হিসেবে মহাবিশ্বের চূড়ান্ত বাস্তবতা রূপে চিত্রিত হয়েছেন। ভারতের পুরাণ এবং তন্ত্র সাহিত্যে ১২-১৬ শতাব্দীর মধ্যের এই ধারণা সমর্থন করে এবং এই ধরনের গ্রন্থের শ্রেষ্ঠ উদাহরণ হচ্ছে দেবী গীতা খচিত দেবীভাগবত পুরাণের বিভিন্ন পাণ্ডুলিপির সংস্করণ।
দেবীভাগবত পুরাণ সর্বমাতা হিসেবে ত্রিভুবনে মহাদেবীর প্রধান অবস্থান উল্লেখ করে এবং তাকে মহাবিশ্বের বস্তুগত এবং আধ্যাত্মিক সকল কিছুর নিয়ন্ত্রক স্বীকার করে। নবম থেকে চতুর্দশ শতাব্দীর মধ্যে রচিত গুরুত্বপূর্ণ তান্ত্রিক গ্রন্থ দেব্যুপনিষদ এ দেবী সবচেয়ে সাধারণ এবং সার্বজনীন মহাদেবী নামে সূচিত হয়েছেন এবং সকল দেবীর অবতাররূপে অবতীর্ণ হয়েছেন। ললিতা সহস্রনামে (ললিতা বা পার্বতীর হাজার নাম) উল্লেখ আছে যে, মহাদেবী বিভিন্ন প্রতিশব্দের দ্বারা পরিচিত হন, যেমন জগতিকান্ড (জগতের কান্ডারী), বিশ্বদিক (যিনি মহাবিশ্ব ছাড়িয়ে বিস্তৃত), নিরুপমা (যার অপর কোন রূপ নেই), পরমেশ্বরী (পরাক্রমশালী শাসক), বিপিন (সবকিছু পরিবেষ্টন করে), অপরিমেয় (অমিত), ব্রহ্মদাজননী (অনেক বিশ্বজগতের স্রষ্টা), বিশ্বগর্ভ (যার গর্ভে মহাবিশ্ব সৃষ্টি), সর্বধারা (সর্ব সাহায্যকারী), সর্বজ্ঞ (একই সময়ে সর্বত্র হচ্ছে), সর্বলোকেশী (বিশ্বজগতের নিয়ন্ত্রক) এবং বিশ্বধারিনী (যিনি সমগ্র মহাবিশ্ব জন্য কাজ করেন)।[48][49][50]
মহাদেবীর ব্যক্তিত্বের অনেক দিক রয়েছে। যা তার উদ্দেশ্য পূরণ করে তিনি সেদিকেই গুরুত্ব দেন, যেখানে বিষ্ণুর মতো দেবতাগণ বারংবার পুনর্জন্মের দ্বারা উদ্দেশ্য পূরণ করেন, সেখানে তিনি তার জ্ঞান ও শক্তি বহুমুখী পদ্ধতিতে নিয়োগ করেন। তার দশ দিক যাদের একত্রে মহাবিদ্যাও (তার জ্ঞানের মহৎ রূপ) বলা হয়: কালী, তারা, ত্রিপুরা সুন্দরী, ভৈরবী, ভূবনেশ্বরী, ছিন্নমস্তা, ধূমাবতী, বগলমুখী, মাতঙ্গী এবং কমলা।
তান্ত্রিক সাহিত্য, যেমন আদি শঙ্কর রচিত সৌন্দর্য্য লহরী (অর্থ সৌন্দর্যের প্লাবন) কবিতাগ্রন্থটি শিবের থেকেও উচ্চতর ক্ষমতাসম্পন্ন সম্প্রদায়ের সর্বোচ্চ দেবীর উদ্দেশে নিবেদিত। এটি দেবী এবং তার নারী ব্যক্তিত্বের গুণকীর্তন করে। এছাড়া এটি দেবী কর্তৃক তন্ত্র সাধনের একটি পন্থা।[51][52]
শাক্ত তন্ত্র ঐতিহ্যে, দেবী মন্ত্র দ্বারা কল্পিত হন এবং তান্ত্রিক সাধকদের জন্য মন্ত্র আধ্যাত্মিক যাত্রার জন্য একটি মধ্যম বিবেচিত হয়। সাধকগণ তাদের কল্পনা, গতিবিধি ও মন্ত্র দ্বারা চক্র তৈরি করেন। স্ট্রেটন হাউলে ও ডোনা ম্যারি উল্ফ উল্লেখ করেন, সাধকগণ বিশ্বাস করেন মন্ত্র প্রতিষ্ঠার মধ্যমে মানুষের মধ্যে বিশ্ব ব্রক্ষ্মান্ড স্থাপন করা যায় এবং এর দ্বারা কেউ পার্থিব সুখ, আধ্যাত্মিক ক্ষমতা বা জ্ঞান আহরণ করতে পারেন।
"বিজ্ঞান ভৈরব তন্ত্র" শীর্ষক একটি তান্ত্রিক গ্রন্থে শিব ও দেবী মধ্যে একটি কথোপকথন অংশে (শ্লোক ১১২) "প্রজ্ঞা ও বিশুদ্ধ চেতনার অন্তর্দৃষ্টি বিষয়ে বর্ণিত আছে।[53]
দেবী পূজা হলো দেবীর উপাসনা যা দেবী মন্ত্রের চারটি রূপের মাধ্যমে পালিত হয়। প্রথমটি তারার, যে চতুর্থ চক্রের অন্তর্জগতে মধ্যে বিদ্যমান, যেটি আধ্যাত্মিক হৃদয়ের প্রতিনিধিত্ব করে। সরস্বতী প্রথম চক্রের মধ্যে উদ্ভূত; লক্ষ্মী দ্বিতীয় চক্র গঠন করে; এবং কালী তৃতীয় চক্রের অন্তরে অবস্থান করে। এই মন্ত্র পূজার মাধ্যমে নিজের মধ্যে "মহাজাগতিক শক্তি" উপলব্ধি করা যায়।
মাতৃকা, অর্থাৎ মা হলো সাত বা আটজন নারী দেবী, যাদের সমষ্টি হিসেবে দেখানো হয়। তাঁঁরা হলেন ব্রহ্মাণী, বৈষ্ণবী, মাহেশ্বরী, ইন্দ্রাণী, কৌমারী, বারাহী এবং চামুণ্ডী বা নারসিংহী। মাতৃকার ধারণা তান্ত্রিক ঐতিহ্যের গুরুত্বপূর্ণ। তারা শিবের প্রতিপক্ষ অন্ধকাসুরের সাথে লড়াইয়ে শিবকে সাহায্য করার জন্য সৃষ্ট হয়েছিলেন। সকল মাতৃকাকে ললিতাসনে বিরাজমান এবং ভারী অলংকারে অলংকৃত অবস্থায় দেখানো হয়।[54]
পণ্ডিতদের ধারণা, শক্তিশালী দেবী হিসেবে মাতৃকার ধারণার উদ্ভব ঘটে প্রথম সহস্রাব্দ কিংবা তারও পূর্বে।[55][56]
একসঙ্গে আট মাতৃ দেবীর ধারণা হিমালযয়ের শৈবধর্মে পাওয়া যায়, যেখানে সাত ঐশ্বরিক মায়ের (সপ্তমাতৃকা) ধারণা দক্ষিণ ভারতের মধ্যে বেশি দেখা যায়।
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.