তারাবীহ

উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ

তারাবীহ

তারাবীহর (আরবি: تَرَاوِيْحِ; একবচন 'তারবীহাতুন', আরবি: تَروِيْحَة) আভিধানিক অর্থ বসা বিশ্রাম করা বা আরাম করা[] এবং এটি আরবি ر و ح শব্দমূল থেকে আগত। তারাবীহ বা কিয়ামুল লাইল[] হলো রাতের একটি বিশেষ সুন্নত নামাজ যেটি মুসলিমগণ রমজান মাসব্যপী প্রতি রাতে এশার ফরজ নামাজের পর সুদীর্ঘ তিলাওয়াত সহকারে পড়ে থাকেন।[]

দ্রুত তথ্য আনুষ্ঠানিক নাম, অন্য নাম ...
আনুষ্ঠানিক নামصلاة التراويح (ṣalāt at-tarāwīḥ; আক্ষরিক অর্থে, 'তারাবীহর নামাজ')
অন্য নামরমজানের রাতের নামাজ
পালনকারীমুসলিমরা
ধরনরমজান মাসের একটি রাত্রিকালীন নামাজ
তাৎপর্যরমজান মাসের একটি রাত্রিকালীন ইসলামি প্রার্থনা
পালনসুন্নত নামাজ
শুরুএশার নামাজ
সমাপ্তি৩ রাকাত বিতর সহ ১১ রাকাত অথবা ২৩ রাকাত পড়তে মোটামুটি ১ ঘণ্টা ২০ মিনিট লাগে
সংঘটনবার্ষিক
বন্ধ
তাইওয়ানের তাইপেই শাহী মসজিদে তারাবীহর নামাজ

তারাবীহ সালাত জোড়া জোড়া রাকাত করে যেকোনো জোড় সংখ্যক রাকআত পড়া হয়। তারাবীহ সালাতের পর বিতর সালাত পড়া হয়। তারাবীহর নামাজের রাকআত নির্দিষ্ট করা হয়নি। হানাফী, শাফেয়ী, মালিকি এবং হাম্বলি ফিকহের অনুসারীগণ ২০ রাকাত তারাবীহ পড়েন। আহলুল হাদীস এবং সালাফীরা ৮ রাকাত তারাবীহ পড়ে থাকেন।

নাম

দৃষ্টিপাত

সারাংশ
প্রসঙ্গ

তারাবিহ নামাজ প্রথম চাঁদ দেখা সন্ধ্যা (রমজানের শুরু) থেকে শুরু হয়ে দ্বিতীয় চাঁদ দেখা সন্ধ্যা (রমজানের শেষ দিন) পর্যন্ত চলে। এই নামাজটি ইসলামি বর্ষপঞ্জির রমজান মাসে ইমামের পেছনে জামাতের সঙ্গে পড়া হয় এশার পরে (এবং বিতরের আগে, যা অন্য এগারো মাসে যেভাবে করা হয় তার বিপরীতে এক বা তিন রাকাতে উচ্চস্বরে)।

তারাবিহর নামাজ জোড়ায় জোড়ায় আদায় করা হয়। সুন্নি ইসলামের হানাফি, মালিকি, শাফি' এবং হাম্বলি মাযহাবের মতে, রাকাতের আদর্শ সংখ্যা বিশটি এবং মুওয়াত্তা' ইমাম মালিকের বর্ণনায় উল্লেখ করা হয়েছে যে, "উমরের যুগে লোকেরা ২০ রাকাত আদায় করতো"। কিন্তু উক্ত বর্ণনার পূর্বে মুওয়াত্তা'তে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে যে, উমর যখন উবাই ইবনে কাব এবং তামিম আল-দারীকে তারাবীহের ইমামতি করার দায়িত্ব অর্পণ করেন, তখন তিনি তাঁদেরকে ১১ রাকাত (তারাবীহের ৮টি এবং বিতরের ৩টি) পড়ার নির্দেশ দেন। সুন্নি মুসলমানরা বিশ্বাস করে যে তারাবীহতে প্রতি রাতে কমপক্ষে একটি পারা পাঠ করে রমজানের অন্যতম ধর্মীয় অনুষ্ঠান হিসেবে খতম ("কুরআনের সম্পূর্ণ তেলাওয়াত") দেওয়া প্রথাগত।

তারাবীহ নামাজ সুন্নত। যাইহোক, এটি বিশ্বাস করা হয় যে যাঁরা তারাবীহর নামাজ আদায় করেন তাঁদের জন্য পুরস্কারটি মহান, কারণ এটি নবি মুহাম্মাদের সুন্নাহ, একাধিক সহীহ হাদিসে বর্ণিত হয়েছে।

মুহাম্মাদ বলেছেন, "যে ব্যক্তি ইমামের সঙ্গে (তারাবীহর নামাজ) শেষ না হওয়া পর্যন্ত দাঁড়ায়, এটি সারা রাত নামাজে কাটানোর সমতুল্য।" এই হাদীসটি ইমাম আহমাদ কর্তৃক প্রমাণিত।[][]

প্রেক্ষাপট

সারাংশ
প্রসঙ্গ

তারাবীহ নামাজকে কিয়াম আল-লাইল মিন রামাদান ("রমজানের রাতে দাঁড়ানো") এবং কিয়াম আল-রামাদান ("রমজানে দাঁড়ানো") হিসাবে হাদিসে উল্লেখ করা হয়েছে। কিছু সুন্নি মুসলিম তারাবীহ নামাজকে (সুন্নত আল-মু'আক্কাদাহ) বলে মনে করেন। অন্যান্য সুন্নি মুসলিমরা বিশ্বাস করে যে তারাবীহ হলো একটি ঐচ্ছিক (নফল) নামাজ যা বাড়িতে পড়া যেতে পারে। এই হাদিস অনুসারে মুহাম্মাদ প্রাথমিকভাবে ও সংক্ষিপ্তভাবে রমজান মাসে জামাতে তারাবীহের নামাজ আদায় করতেন, কিন্তু বাধ্যতামূলক (ফরজ) হওয়ার উদ্বেগ থেকে এই নিয়মটি বন্ধ করে দেন, তবুও তিনি কখনোই জামাতে তারাবীহ পড়তে নিষেধ করেননি।[] উমর যখন খলিফা হয়েছিলেন, তখন তিনি জামাতে তারাবীহ নামাজ পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেন।[]

শিয়া মুসলিমরা তারাবীহকে "উদ্ভাবন" (বিদ‘আত) হিসাবে বিবেচনা করে এবং দাবি করে যে উমর ইবন আল-খাত্তাব তার নিজের কথা অনুসারে মুহাম্মাদের মৃত্যুর পর এটি পুনঃপ্রবর্তন করেন।[]

একটি শিয়া হাদিস নিয়ে অবশ্য দাবি করা হয়েছে যে সুন্নিদের তারাবীহ নামাজ প্রমাণিত:

‘আবু ‘আবদুল্লাহ (রা:) বলেছেন যে, রাসুলুল্লাহ (সা:) রমজান মাসে তার সালাত বৃদ্ধি করতেন। আল-‘আতমাহ (সন্ধ্যার নামাজ) এর পর তিনি বেশি বেশি নামায পড়তেন। পিছনে লোকেরা [নামাজের জন্য] দাঁড়াতেন, কিন্তু তিনি তাঁদের ছেড়ে ভিতরে চলে যেতেন। অতঃপর তিনি বের হয়ে আসার পর, তারা এসে তার পিছনে [নামাজের জন্য] দাঁড়াতেন, কিন্তু তিনি তাঁদের ছেড়ে কয়েকবার ভিতরে যেতেন। তিনি (বর্ণনাকারী) বলেছেন যে ইমাম তখন বললেন, “রমজান মাস ব্যতীত অন্য সময়ে সন্ধ্যার নামাজের পরে নামাজ পড়া উচিত নয়।”

আল-কাফী, খণ্ড ৪, পৃ. ১৫৪-১৫৫ (মাজলিসি কর্তৃক সহীহ ঘোষিত)[]

মুহাম্মাদ আল-বুখারী সহীহ আল-বুখারীতে তারাবীহ নামাজ সম্পর্কে বর্ণনা করেছেন:

আমি রমজানের এক রাতে উমর বিন আল-খাত্তাবের সাথে মসজিদে গিয়েছিলাম এবং দেখলাম লোকেরা বিভিন্ন দলে দলে নামাজ পড়ছে। একজন ব্যক্তি একা সালাত আদায় করছেন অথবা একজন ব্যক্তি তার পিছনে একটি ছোট দল নিয়ে সালাত আদায় করছেন। সুতরাং, 'উমর (রাঃ) বললেন, “আমার মতে আমি এই [লোকদের] একজন ক্বারীর (তিলাওয়াতকারী) নেতৃত্বে একত্রিত করবো (অর্থাৎ তাঁদেরকে জামাতে নামায পড়তে দিবো)। সুতরাং, তিনি উবাই বিন কা'বের পিছনে তাঁদের একত্রিত করার মনস্থ করলেন। অতঃপর অন্য রাতে আমি আবার তার সান্নিধ্যে গেলাম এবং [দেখলাম] লোকেরা তাঁদের ক্বারীর পিছনে নামাজ পড়ছিল। এতে উমর (রাঃ) মন্তব্য করেন, “কি চমৎকার বিদআত (অর্থাৎ ধর্মে নতুনত্ব)!”

এর পরিবর্তে ইসনা আশারিয়ারা তাহাজ্জুদ নামাজকে সালাত আল-লাইল ("রাতের প্রার্থনা") হিসেবে বিশ্বাস করে, এবং সারা বছর, বিশেষ করে রমজানের রাতে পড়ার পরামর্শ প্রদান করে।[১০]

গুরুত্ব

এই নামাজের গুরুত্ব সম্পর্কে হাদিসে এসেছে,

حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ يَحْيَى، قَالَ قَرَأْتُ عَلَى مَالِكٍ عَنِ ابْنِ شِهَابٍ، عَنْ حُمَيْدِ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏ "‏ مَنْ قَامَ رَمَضَانَ إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ ‏"‏ ‏.

অনুবাদ; আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। যে ব্যক্তি রমাযান মাসে ঈমানের সাথে ও একান্ত আল্লাহর সন্তষ্টির নিমিত্তে তারাবীহ পড়ে তার পূর্ববর্তী গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেয়া হয়।[১১]

‘নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা তোমাদের প্রতি রোজা ফরজ করেছেন, আর আমি তোমাদের জন্য তারাবিহ নামাজকে সুন্নাত করেছি। যে ব্যক্তি ইমানের সঙ্গে সওয়াবের আশায় রমজানে দিনে রোজা পালন করবে ও রাতে তারাবিহ নামাজ আদায় করবে, সে গুনাহ থেকে এরূপ পবিত্র হবে, যেরূপ নবজাতক শিশু মাতৃগর্ভ থেকে নিষ্পাপ অবস্থায় ভূমিষ্ঠ হয় ।’

মুহাম্মাদ (সা.), নাসায়ি, পৃষ্ঠা: ২৩৯

‘যে ব্যক্তি ইমানের সঙ্গে সওয়াবের উদ্দেশ্যে রমজান মাসে তারাবিহ নামাজ পড়বে, তার অতীতের সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে ।’

মুহাম্মাদ (সা.), বুখারি, হাদিস: ৩৬

তারাবীহের রাকাত সংখ্যা

সারাংশ
প্রসঙ্গ

তারাবিহের রাকাত সংখ্যা নিয়ে ব্যাপক মতভেদ বিদ্যামান আছে।

৮ রাকাত

সালাফিআহলুল হাদিসদের মধ্যে ৮ রাকাত তারাবীহের প্রচলন দেখা যায়। তারা আট রাকআত তারাবিহ আদায়ের পক্ষে নিম্নোক্ত হাদিস পেশ করেন:

عَنْ أَبِي سَلَمَةَ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمٰنِ أَنَّهُ سَأَلَ عَائِشَةَ كَيْفَ كَانَتْ صَلاَةُ رَسُولِ اللهِ فِي رَمَضَانَ فَقَالَتْ مَا كَانَ يَزِيدُ فِي رَمَضَانَ وَلاَ فِي غَيْرِهِ عَلَى إِحْدَى عَشْرَةَ رَكْعَةً يُصَلِّي أَرْبَعًا فَلاَ تَسَلْ عَنْ حُسْنِهِنَّ وَطُولِهِنَّ ثُمَّ يُصَلِّي أَرْبَعًا فَلاَ تَسَلْ عَنْ حُسْنِهِنَّ وَطُولِهِنَّ ثُمَّ يُصَلِّي ثَلاَثًا فَقُلْتُ يَا رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم أَتَنَامُ قَبْلَ أَنْ تُوتِرَ قَالَ يَا عَائِشَةُ إِنَّ عَيْنَيَّ تَنَامَانِ وَلاَ يَنَامُ قَلْبِي

অনুবাদ:আবূ সালামাহ ইবনু ‘আবদুর রাহমান (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি ‘আয়িশাহ্ (রাযি.)-কে জিজ্ঞেস করেন যে, রমাযানে আল্লাহর রাসূল(﷽)এর সালাত কিরূপ ছিল? তিনি বললেন, রমাযান মাসে ও রমাযানে ব্যতীত অন্য সময়ে (রাতে) তিনি এগার রাক‘আত হতে বৃদ্ধি করতেন না তিনি চার রাক‘আত সালাত আদায় করতেন, তুমি তার সৌন্দর্য ও দীর্ঘতা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করো না। অতঃপর তিনি চার রাক‘আত পড়েন। তুমি তার সৌন্দর্য ও দীর্ঘতা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করো না। এরপর তিন রাক‘আত সালাত আদায় করতেন। আমি [‘আয়িশাহ (রাযি.)] বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি বিতর আদায়ের আগে ঘুমিয়ে যাবেন? তিনি বললেনঃ হে ‘আয়িশাহ্! আমার দু’চোখ ঘুমায় বটে কিন্তু আমার কালব নিদ্রাভিভূত হয় না। [১২]

তবে অনেকের মতে হাদিসটি তাহাজ্জুদ সম্পর্কিত। তবে সালাফিদের ভাষ্যমতে এ মতটি সঠিক নয়। তাদের মতে হাদিসটি ইমাম বুখারি এনেছেন "তারাবীহের সালাত অধ্যায়ে", বিভিন্ন প্রকাশনীর সকল বুখারিতেই অধ্যায়ের নাম উপস্থিত থাকলেও,ভারতীয় (দেওবন্দি) ছাপা বুখারিতে তা নেই, আরব বিশ্বের সকল বুখারিতে তা বিদ্যমান এবং বুখারির বিভিন্ন ব্যাখ্যা গ্রন্থেও অধ্যায়ের নামটি রয়েছে (যেমন: ফাতহুল বারী)। তবে তাদের এ দাবি যৌক্তিক নয়। কেননা রমজানে যদি তারাবির ক্ষেত্রে এই হাদিসের আলোকে দলিল দেওয়া হয়, তাহলে তাহাজ্জুদ অস্বীকার করা হবে।

২০ রাকাত

হানাফি মাযহাবে ২০ রাকাত তারাবীহের প্রচলন আছে। তাদের মতে ইসলমের দ্বিতীয় খলিফা উমর ইবনুল খাত্তাব (র.) তারাবীহ নামাজ ২০ রাকাত চালু করেন। তাদের দলিল হল:

عُمَرَ أَمَرَ أَبَيًّا أَنْ يُصَلِّيَ بِالنَّاسِ فِي رَمَضَانَ فَقَالَ إِنَّ النَّاسَ يَصُوْمُوْنَ النَّهَارِ وَلَا يُحْسِنُوْنَ أَنْ يَقْرَؤُا فَلَوْ قَرَأْتَ الْقُرْآنَ عَلَيْهِمْ بِاللَّيْلِ فَقَالَ يَا أَمِيرَ الْمُؤْمِنِينَ هَذَا شَيْءٌ لَمْ يَكُنْ فَقَالَ قَدْ عَلِمْتُ وَلَكِنَّهُ أَحْسَنُ فَصَلَّى بِهِمْ عِشْرِينَ رَكْعَة: إِسْنَادُهُ حَسَنٌ.

অনুবাদ: উমর (র.) উবাই ইবনে কাব (র.) কে রমজানে লোকদের নিয়ে সালাত আদায় করতে আদেশ করে বলেন,লোকেরা দিনের বেলায় সিয়াম পালন করে। কিন্তু সুন্দর করে কোরআন পড়তে জানে না। তুমি রাতে তাদের নিয়ে কুরআন পড়বে। তিনি বললেন হে আমিরুল মুমিনীন এটা তো আগে হয়নি। উমর (র.) বললেন জানি তবে উত্তম। তারপর তিনি তাদের নিয়ে ২০ রাকাত পড়লেন।

[আল আহাদীসুল মুখতারাহ:১১৬১] ইমাম মাকদিসি হাদীসটিকে হাসান বলেছেন। [১৩]

আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

عَلَيْكُمْ بِسُنَّتِي وَسُنَّةِ الْخُلَفَاءِ الرَّاشِدِينَ الْمَهْدِيِّينَ عَضُّوا عَلَيْهَا بِالنَّوَاجِذِ

অনুবাদ: তোমরা আমার সুন্নাত ও হিদায়াতপ্রাপ্ত খুলাফায়ে রাশিদ্বীনের সুন্নাত অবশ্যই অবলম্বন করবে, তা দাঁত দিয়ে শক্তভাবে কামড়ে ধরবে।[১৪]

সে জন্য হানাফীরা তারাবীহ নামাজ ২০ রাকাত পড়াকে সুন্নাহ মনে করে।কারন এটা খুলাফায়ে রাশিদ্বীনের দ্বিতীয় খলিফা উমর ইবনুল খাত্তাব (র.) চালু করেছেন।

রমজান মাসে রাতের নামায সম্পর্কে ইমাম তিরমিযী (রহ) বলেন:

রামাযানের কিয়াম সম্পর্কে আলিমগণের মতভেদ রয়েছে। কোন কোন আলিম বলেন, বিতরসহ এর রাকাত সংখ্যা একচল্লিশ। এ হল মদীনাবাসীদের অভিমত এবং মদিনা বাসীদেরও এইরূপ আমল রয়েছে। কিন্তু অধিকাংশ আলিমের অভিমত আলী ও উমার (রাঃ) প্রমূখ সাহাবায় কিরাম থেকে বর্ণিত রিওয়ায়াত অনুযায়ী রাকাআত সংখ্যা হল বিশ। সুফিয়ান সাওরী, ইবনু মুবারক ও শাফেঈ (রহঃ) এর অভিমত। ইমাম শাফেঈ (রহঃ) বলেন, আমাদের নগর মক্কায়ও এই ধরণের আমল দেখেছি। তারা বিশ রাকআত সালাত আদায় করেন।।[১৫]

৩৬/৩৯ রাকাত

মালেকী মাজহাবের তারাবীহ ৩৬ বা ৩৯ রাকাত নয়; বরং মুল তারাবীহ ২০ রাকাতই ৷ তখনকার চার মাযহাব সহ সব উলামাগন ২০ রাকাত তারাবীহ পড়তেন ৷ ইমাম বুখারীও ২০ রাকাতের প্রবক্তা ৷ এমনকি সালাফীদের ইমাম শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রঃ বিশ রাকাত তারাবীহ পড়তেন ৷ মালেকি মাজহাবে ৩৬/৩৯ রাকাত আসলো কিভাবে?

ইমাম মালেক রঃ ছিলেন মদিনায় বসবাস কারী ৷ মদিনার হেরেমে ২০ রাকাত নামাজ হতো ৷ তারা দেখলেন যে মক্কাবাসী ২০ রাকাত তারাবী পড়েও আলাদা একটি ইবাদত করতেন ৷ সেটা হলো প্রতি চার রাকাত পরপর তারা কাবা শরীফ তাওয়াফ করতেন ৷ মদিনাবাসিগনের ভাবনা হচ্ছে মক্কাবাসীরা আমাদের থেকে ইবাদতে অগ্রগামী ৷ তাই তারা মক্কীদের সাথে সমতা রক্ষার জন্য প্রতি চার রাকাত পর পর নিজেরা এককভাবে চার রাকাত করে নামাজ আদায় করে নিতেন ৷ তাতে তারাবীহ হত বিশ আর নিজেদের নফলগুলো ১৬ রাকাত হতো ৷ শেষ চার রাকাত পর বিতর পড়তেন ৷ তাহলে টোটাল দাড়ালো 20+16+3=39 রাকাত ৷ ইমাম মালেক রঃ মদিনার লোক হবার সুবাদে তিনিও ৩৯ রাকাত পড়তেন ৷ এজন্যই বলা হয় মালেকি মাজহাবে তারাবী ৩৯ রাকাত বিতর বাদ দিলে ৩৬ রাকত হয় ৷

প্রকারভেদ

বাংলাদেশসহ বিশ্বের অধিকাংশ দেশে তারাবীহর নামাজের দুটি পদ্ধতি প্রচলিত। একটি খতম তারাবীহ আর অন্যটি সূরা তারাবীহ। খতম তারাবীহর ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ কুরআন পাঠ করা হয়।

খতম তারাবীহর জন্য কুরআনের হাফিযগণ ইমামতি করেন। সূরা তারাবীহর জন্য যেকোন সূরা বা আয়াত পাঠের মাধ্যমে সূরা তারাবীহ আদায় করা হয়।

অন্যান্য

৩ জানুয়ারি ২০০০ সালে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মাহাথির বিন মোহাম্মদ দুঃখ প্রকাশ করে বলেন যে তারাবীহর নামাজকে কিছু লোক রাজনৈতিক সুবিধা নেওয়ার জন্য ব্যবহার করছে।[১৬]

২ এপ্রিল ২০২২ সালে শত শত মুসলিম রমজানের প্রথম তারাবীহ নামাজ আদায় করতে টাইমস স্কয়ারে জড়ো হয়। ইফতারের জন্য ১,৫০০ এরও বেশি খাবার লোকেদের নিকট হস্তান্তর করা হয়েছিল। এটি ছিল টাইমস স্কয়ারে সার্বজনীনভাবে অনুষ্ঠিত প্রথম তারাবীহ নামাজ পড়ার ঘটনা।[১৭]

টীকা

তথ্যসূত্র

Loading related searches...

Wikiwand - on

Seamless Wikipedia browsing. On steroids.