Loading AI tools
বাংলাদেশী প্রকৌশলী, অধ্যাপক, গবেষক এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
জামিলুর রেজা চৌধুরী (১৫ নভেম্বর ১৯৪৩ - ২৮ এপ্রিল ২০২০) ছিলেন বাংলাদেশের একজন প্রকৌশলী, গবেষক, শিক্ষাবিদ, বিজ্ঞানী, ও তথ্য-প্রযুক্তিবিদ। তিনি ১৯৯৬ সালের এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ছিলেন। তিনি ২০০১ থেকে ২০১০ পর্যন্ত ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং ২০১২ থেকে আমৃত্যু ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিকের উপাচার্য ছিলেন।[3] এছাড়া তিনি ২০০৩ সাল থেকে বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াডের সভাপতি ছিলেন। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে তার অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা একুশে পদকে ভূষিত করে।[4] ২০১৮ সালের ১৯ জুন বাংলাদেশ সরকার তাকে জাতীয় অধ্যাপক হিসেবে নিয়োগ দেয়।[5]
জামিলুর রেজা চৌধুরী | |
---|---|
ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিকের উপাচার্য | |
কাজের মেয়াদ ২ মে ২০১২ – ২৮ এপ্রিল ২০২০ | |
পূর্বসূরী | আব্দুল মতিন পাটোয়ারি |
উত্তরসূরী | কামরুল আহসান |
ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য | |
কাজের মেয়াদ ২০০১ – ২০১০ | |
পূর্বসূরী | পদ সৃষ্টি |
উত্তরসূরী | আইনুন নিশাত |
ব্যক্তিগত বিবরণ | |
জন্ম | [1] সিলেট, বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি | ১৫ নভেম্বর ১৯৪৩
মৃত্যু | ২৮ এপ্রিল ২০২০ ৭৬) স্কয়ার হাসপাতাল, ঢাকা | (বয়স
মৃত্যুর কারণ | হার্ট অ্যাটাক |
জাতীয়তা | বাংলাদেশী |
দাম্পত্য সঙ্গী | সেলিনা নওরোজ চৌধুরী |
সন্তান | ২ |
পেশা | তথ্য-প্রযুক্তিবিদ,[2] শিক্ষকতা |
পুরস্কার | একুশে পদক (২০১৭) |
জামিলুর রেজা চৌধুরী ১৯৪৩ সালের ১৫ নভেম্বর সিলেট শহরে জন্মগ্রহণ করেন৷ তার পিতা প্রকৌশলী আবিদ রেজা চৌধুরী এবং মাতা হায়াতুন নেছা চৌধুরী। তিন ভাই দুই বোনের মধ্যে তিনি তৃতীয়। পিতার চাকরির সুবাদে দেশের বিভিন্ন জায়গায় তার শৈশবকাল কেটেছে। তিন বছর বয়সে সিলেট ছেড়ে পরিবারের সঙ্গে চলে যান আসামের জোড়হাটে। ১৯৪৭ সালের আগস্টে আবার সিলেটে ফিরে আসেন। এরপর তার পিতা বদলি হয়ে ময়মনসিংহে চলে যান।
তিনি ১৯৫৭ সালে সেন্ট গ্রেগরিজ হাই স্কুল এন্ড কলেজ থেকে ম্যাট্রিক পরীক্ষা দেন। এরপর ঢাকা কলেজ থেকে ১৯৫৯ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। এরপর ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার জন্য তিনি ভর্তি হন আহসানউল্লাহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে (বর্তমানে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়)। ১৯৬৩ সালে তিনি প্রথম বিভাগে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করেন।
১৯৬৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে বার্মাশেল বৃত্তি নিয়ে চলে যান ইংল্যান্ডে। এই বৃত্তি বছরে একটাই দেয়া হতো। সাউদাম্পটন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি এমএসসি করেন, অ্যাডভান্স স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে। থিসিসের বিষয় ছিল, কংক্রিট বিমে ফাটল। ১৯৬৮ সালে তিনি কম্পিউটার এইডেড ডিজাইন অব হাইরাইজ বিল্ডিং বিষয়ের উপর পিএইচডি করেন।
২০১০ সালের ২০শে অক্টোবর ম্যানচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয় জামিলুর রেজা চৌধুরীকে সম্মানসূচক ডক্টর অফ ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রি প্রদান করে। তিনিই প্রথম বাংলাদেশী যিনি কোন ব্রিটিশ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এই সম্মান অর্জন করেন।[6]
বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ফলাফল প্রকাশের কয়েকদিন পর নিয়োগপত্র ছাড়াই বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস নেন তিনি। পরবর্তীতে ১৯৬৩ সালের নভেম্বর মাসে তিনি প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন পুরকৌশল বিভাগে। এভাবেই তার শিক্ষকতা জীবন শুরু হল। ১৯৬৪ সালের বৃত্তি নিয়ে পড়াশুনা করতে ইংল্যান্ড যান।
পরবর্তীতে ১৯৬৮ সালে পিএইচডি শেষ করে দেশে ফিরে তিনি আবার বুয়েটেরই সহকারী অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন। এরপর ১৯৭৩ সালে সহযোগী অধ্যাপক ও ১৯৭৬ সালে অধ্যাপক হিসেবে পদোন্নতি পান। ২০০১ সাল পর্যন্ত বুয়েটে অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। এর মধ্যে তিনি বিভাগীয় প্রধান এবং ডিন ছিলেন। বুয়েটের কম্পিউটার সেন্টারের পরিচালক ছিলেন প্রায় ১০ বছর। ১৯৭৯ সালে ব্যাংককে ইউনেসক্যাপ-এ কয়েক মাস পরামর্শক হিসেবে ছিলেন। ১৯৭৪-১৯৭৫ সালে কমনওয়েলথ বৃত্তি নিয়ে তিনি যুক্তরাজ্যের সারে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিজিটিং এসোসিয়েট প্রফেসর ছিলেন। ২০০১ সাল থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত তিনি ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন৷[7] ১৯৯৭ থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত চট্টগ্রাম বিআইটির গভর্নিং বোর্ডের চেয়ারম্যান ছিলেন।
বাংলাদেশ শিল্প ব্যাংকের পরিচালক পর্ষদের চেয়ারম্যান ছিলেন ১৯৯৬ থেকে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত। তিনি ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন যুক্তরাজ্যের সিভিল ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের ফেলো। যুক্তরাজ্যের একজন চার্টার্ড ইঞ্জিনিয়ার, বাংলাদেশ কম্পিউটার সোসাইটির ফেলো। ১৯৯২ থেকে ১৯৯৩ পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশ ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের সভাপতি ছিলেন। তিনি বাংলাদেশ আর্থকোয়েক সোসাইটি এবং বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।[8][9] অধ্যাপক চৌধুরী বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনের সফটওয়্যার রফতানি এবং আইটি সার্ভিস রপ্তানী-সংক্রান্ত টাস্ক ফোর্সের চেয়ারম্যান ছিলেন ১৯৯৭ থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত। তিনি প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি টাস্কফোর্সের একজন সদস্য।২০১২ সালের নভেম্বর মাসে তিনি বাংলাদেশ ফ্রিডম ফাউন্ডেশনের ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য হন এবং ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়াপারসন মনোনীত হয়ে ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন।[10][11] এছাড়া তিনি আরও অসংখ্য প্রতিষ্ঠানের সঙ্গেও জড়িত ছিলেন। ২০১২ সালের ২রা মে হতে আমৃত্যু তিনি ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিকের উপাচার্য হিসেবে কর্মরত ছিলেন।[3]
জামিলুর রেজা চৌধুরী শিক্ষামূলক কর্মজীবনের পাশাপাশি বাংলাদেশের ভৌত অবকাঠামোর বেশ কয়েকটি প্রকল্পে অবদান রাখেন। তিনি দেশের প্রথম দীর্ঘ সেতু, বঙ্গবন্ধু সেতুর প্রধান পরামর্শক ছিলেন। উপকূলীয় অঞ্চলের ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন করেন তিনি। জাতীয় বিল্ডিং কোড ১৯৯৩ তৈরির স্টিয়ারিং কমিটিতে তিনি ছিলেন, ছিলেন দেশের দীর্ঘতম পদ্মা বহুমুখী সেতুর আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ মণ্ডলীর প্রধান। তিনি প্রথম ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেস হাইওয়ে, কর্ণফুলী নদীর সুরঙ্গ, ঢাকা আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে সহ বিভিন্ন মেগা প্রকল্পের পরামর্শক ছিলেন।
জামিলুর রেজা চৌধুরী ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা (মন্ত্রী) হিসেবে দ্বায়িত্ব পালন করেন।
দেশে এবং আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে ড. জামিলুর রেজা চৌধুরীর ৭০টির বেশি প্রবন্ধ ও গবেষণাকর্ম প্রকাশিত হয়েছে। তাঁর প্রকাশনার ভেতর আছে সুউচ্চ ভবন নির্মাণ, নিম্ন-খরচের আবাসন, ভূমিকম্প সহনীয় ভবন তৈরি, ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় নির্মাণ, রেট্রফিটিং, তথ্য প্রযুক্তি নীতিমালা, ইত্যাদি।
দেশে-বিদেশে জামিলুর রেজা চৌধুরীর ৭০টি গবেষণা-প্রবন্ধ রয়েছে।
তার স্ত্রীর নাম সেলিনা নওরোজ চৌধুরী; তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফলিত পদার্থবিদ্যায় মাস্টার্স ডিগ্রিধারী৷ দাম্পত্য জীবনে তিনি দুই সন্তানের জনক; বড় সন্তান (মেয়ে) কারিশমা ফারহিন চৌধুরী পেশায় পুরকৌশলী এবং ছোট সন্তান (ছেলে) কাশিফ রেজা চৌধুরী তড়িৎ ও কম্পিউটার প্রকৌশলে ডিগ্রি করেছেন৷
চৌধুরী ২০২০ সালের ২৮শে এপ্রিল ৭৭ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। ২৮শে এপ্রিল ভোর রাতে তাকে ধানমণ্ডিতে তার নিজ বাড়িতে সংজ্ঞাহীন অবস্থায় পাওয়া যায়। তাকে স্কয়ার হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর সেখানে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।[12]
সম্প্রতি 'বাংলাদেশ ব্লক চেইন অলিম্পিয়াড পুরস্কার' এর নাম পরিবর্তন করে 'অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী চ্যাম্পিয়ন্স অ্যাওয়ার্ড' রাখা হয়। ৩ মে, ২০২০ এক অনলাইন পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ব্লক চেইন অলিম্পিয়াড কমিটি ২০২০ সাল থেকেই এই পুরস্কার পরিবর্তিত নামে দেয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানায়। অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী বাংলাদেশ ব্লক চেইন অলিম্পিয়াডের উপদেষ্টা ছিলেন। এরই স্বীকৃতি স্বরূপ তার নামে এই পুরস্কারের পুনঃনামকরণ করা হল।[17] ২০২১ সালের এপ্রিলে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরকৌশল ভবনের নাম পরিবর্তন করে ড. জামিলুর রেজা চৌধুরী পুরকৌশল ভবন এ নামকরণ করা হয়।[18]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.