বাংলাদেশী ইমেরিটাস অধ্যাপক, পানি সম্পদ ও জলবায়ু পরিবর্তন বিশেষজ্ঞ উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
আইনুন নিশাত (জন্ম ২৯ এপ্রিল ১৯৪৮) হলেন বাংলাদেশী ইমেরিটাস অধ্যাপক, এবং পানি সম্পদ ও জলবায়ু পরিবর্তন বিশেষজ্ঞ। তিনি ২০০৯ সালে জাতিসংঘ জলবায়ু পরিবর্তন সম্মেলনসহ আরও কিছু আন্তর্জাতিক জলবায়ু বিষয়ক সম্মেলনে বাংলাদেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেন। ২০১৭ সালে বাংলা একাডেমি তাকে সম্মানসূচক ফেলোশিপ প্রদান করে।[১]
আইনুন নিশাত | |
---|---|
![]() ২০১৯ সালে নিশাত | |
ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য | |
কাজের মেয়াদ ২০১০ – ২০১৪ | |
ব্যক্তিগত বিবরণ | |
জন্ম | বাজিতপুর, কিশোরগঞ্জ, পূর্ব পাকিস্তান (বর্তমান বাংলাদেশ) | ২৯ এপ্রিল ১৯৪৮
জাতীয়তা | বাংলাদেশী |
শিক্ষা | পিএইচডি (পুরকৌশল) |
প্রাক্তন শিক্ষার্থী | বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় স্ট্রাথক্লাইড বিশ্ববিদ্যালয় |
পেশা | ইমেরিটাস অধ্যাপক |
যে জন্য পরিচিত | পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনে জলবায়ু পরিবর্তন বিশেষজ্ঞ |
পুরস্কার | বাংলা একাডেমি ফেলোশিপ |
আইনুন নিশাত ১৯৪৮ সালের ২৯ এপ্রিল তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের (বর্তমান বাংলাদেশ) কিশোরগঞ্জ জেলার বাজিতপুর উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা গাজী শামছুর রহমান ছিলেন একজন স্বনামধন্য বাংলাদেশী আইনবিদ ও আইন সংস্কারক। তার জন্মের সময় তার পিতা বাজিতপুরে সহকারী জর্জ হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তার শৈশবে তার বাবা বদলি হন জামালপুর, মুন্সীগঞ্জ ও পঞ্চগড়ে। এই সময়ে তিনি কোন বিদ্যালয়ে পড়াশুনা করেননি। তার বাবা পঞ্চগড়ে বদলি হওয়ার পর তিনি সেখানে প্রাক-প্রাথমিক বিদ্যালয়ে একেবারে তৃতীয় শ্রেণিতে ভর্তি হন। এই স্কুলে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ার পর তার বাবার বদলি হয় বগুড়ায়।
বগুড়া জিলা স্কুলে তিনি তিন-চার মাস পড়াশোনা করেন। পরে তার বাবার বদলি হয় নোয়াখালী জেলায়। নোয়াখালী জিলা স্কুলে পঞ্চম শ্রেণির পাঠ শেষ করেন। পরে তার বাবা বদলি হন সিলেটে। সিলেট থেকে আসেন ঢাকায়। ঢাকায় ছয়মাস থাকাকালীন পড়াশোনা করেন ওয়েস্ট অ্যান্ড হাই স্কুলে। ঢাকা থেকে বদলি হন দিনাজপুরে। সেখানে দুই বছর পড়াশোনা করেন দিনাজপুর জিলা স্কুলে। সেখান থেকে আবার ঢাকা আসেন এবং নিশাত ভর্তি হন ঢাকা কলেজিয়েট স্কুলে। এই স্কুল থেকে ১৯৬৩ সালে তিনি মেট্রিক পাশ করেন।[২]
মেট্রিক পাস করে ভর্তি হন নটর ডেম কলেজে ভর্তি হন। কলেজে একাদশ শ্রেণিতে থাকাকালীন একটি পরীক্ষামূলক বোর্ড পরীক্ষা হয়। নিশাতদের ব্যাচই একমাত্র ব্যাচ যারা নবম, দশক, একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণিতে বোর্ডে পরীক্ষা দিয়েছে। একাদশ শ্রেণির পরীক্ষার পর তার বাবার ফরিদপুর জেলায় বদলি হয়। নটর ডেম কলেজের হোস্টেলের বেহাল অবস্থার জন্য তিনি ফরিদপুর চলে যান এবং রাজেন্দ্র কলেজে ভর্তি হন। এই কলেজ থেকে ১৯৬৫ সালে তিনি ইন্টারমিডিয়েট পাস করেন।[২] পরে তিনি বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পুরকৌশল বিষয়ে বিএসসি এবং পানি সম্পদ প্রকৌশল বিষয়ে এমএসসি ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি ১৯৮১ সালে স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোর স্ট্রাথক্লাইড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পুরকৌশল বিষয়ে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন।[৩]
নিশাত তার কর্মজীবন শুরু করেন বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে। পরে তিনি ১৯৭২ সালে তার নিজের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরকৌশল বিভাগে লেকচারার পদে যোগ দেন। ১৯৭৫ সালে তিনি পানি সম্পদ প্রকৌশল বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এবং ১৯৮৫ সালে পূর্ণ অধ্যাপক হন।[৩]
১৯৯৮ সালে নিশাত প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অবসর নিয়ে আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘে যোগ দেন।[৪] তিনি নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবেও কর্মরত ছিলেন।[৫] তিনি ২০১০ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দায়িত্ব পালন করেন।[২]
নিশাত বাংলাদেশ, মালয়েশিয়া, ও ফিলিপাইনে বিশ্ব ব্যাংক এবং এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের বিভিন্ন প্রকল্পে কাজ করেন। তিনি বাংলাদেশের দীর্ঘতম সেতু যমুনা সেতু নির্মাণকালে এর বিশেষজ্ঞ প্যানেলের সদস্য ছিলেন।[৩]
তিনি বাংলাদেশ জাতীয় পানি কাউন্সিল, ইন্দো-বাংলাদেশ যৌথ নদী কমিশন, বাংলাদেশ জাতীয় কৃষি কমিশন, এবং জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি কাউন্সিলের সদস্য। তিনি ১৯৯৬ সালের গঙ্গা পানি চুক্তিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।[৩][৪]
নিশাতের স্ত্রী সামিনা সুলতানা। তিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপিকা ছিলেন। তার বড় কন্যা বুশরা নিশাত একজন পানিবিজ্ঞান বিশেষজ্ঞ। তিনি একটি বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন। মেজ মেয়ে সাজিয়া নিশাত পানি ও পরিবেশ বিশেষজ্ঞ। তিনি কানাডায় থাকেন। ছোট কন্যা উজমা নিশাত কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার। তিনি একটি মার্কিন কোম্পানিতে কম্পিউটার হার্ডওয়্যার নিয়ে কাজ করছেন।[২]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.