অ্যালুমিনিয়াম একটি মৌলিক পদার্থ যার প্রতীক Al এবং পারমাণবিক সংখ্যা ১৩। এটি বোরন গ্রুপের সদস্য যার রং ধূসর সাদা; গঠনে কোমল, অচৌম্বকীয় এবং যথেষ্ট সংকোচন-প্রসারণক্ষম। ভর অনুপাতে ভূ-পৃষ্ঠের ৮ শতাংশ অ্যালুমিনিয়াম। অক্সিজেন ও সিলিকনের পর ভূ-পৃষ্ঠের মৌল হিসেবে এর অবস্থান ৩য়, যদিও ভূপৃষ্ঠের গভীরে নগন্য মাত্রায় বিদ্যমান। এর প্রধান আকরিক হল বক্সাইট। রাসায়নিকভাবে অ্যালুমিনিয়াম খুবই সক্রিয় বলে তীব্র বিজারনীয় পরিবেশ ছাড়া একে বিশুদ্ধ অবস্থায় পাওয়া যায় না। একারণে ২৭০ ধরনের ভিন্ন পদার্থে এর উপস্থিতি রয়েছে।[9]
উচ্চারণ |
| ||||||||||||||||||||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
উপস্থিতি | রূপালি ধূসর ধাতুতুল্য | ||||||||||||||||||||||||
আদর্শ পারমাণবিক ভরAr°(Al) | |||||||||||||||||||||||||
পর্যায় সারণিতে অ্যালুমিনিয়াম | |||||||||||||||||||||||||
| |||||||||||||||||||||||||
পারমাণবিক সংখ্যা | ১৩ | ||||||||||||||||||||||||
মৌলের শ্রেণী | ধাতু | ||||||||||||||||||||||||
গ্রুপ | গ্রুপ ১৩; (বোরন গ্রুপ) | ||||||||||||||||||||||||
পর্যায় | পর্যায় ৩ | ||||||||||||||||||||||||
ব্লক | পি-ব্লক | ||||||||||||||||||||||||
ইলেকট্রন বিন্যাস | [Ne] ৩s২ ৩p১ | ||||||||||||||||||||||||
প্রতিটি কক্ষপথে ইলেকট্রন সংখ্যা | ২, ৮, ৩ | ||||||||||||||||||||||||
ভৌত বৈশিষ্ট্য | |||||||||||||||||||||||||
দশা | কঠিন | ||||||||||||||||||||||||
গলনাঙ্ক | ৯৩৩.৪৭ কে (৬৬০.৩২ °সে, ১২২০.৫৮ °ফা) | ||||||||||||||||||||||||
স্ফুটনাঙ্ক | ২৭৯২ K (২৫১৯ °সে, ৪৫৬৬ °ফা) | ||||||||||||||||||||||||
ঘনত্ব (ক.তা.-র কাছে) | ২.৭০ g·cm−৩ (০ °সে-এ, ১০১.৩২৫ kPa) | ||||||||||||||||||||||||
তরলের ঘনত্ব | m.p.: ২.৩৭৫ g·cm−৩ | ||||||||||||||||||||||||
ফিউশনের এনথালপি | ১০.৭১ kJ·mol−১ | ||||||||||||||||||||||||
বাষ্পীভবনের এনথালপি | ২৯৪.০ kJ·mol−১ | ||||||||||||||||||||||||
তাপ ধারকত্ব | ২৪.২০০ J·mol−১·K−১ | ||||||||||||||||||||||||
বাষ্প চাপ
| |||||||||||||||||||||||||
পারমাণবিক বৈশিষ্ট্য | |||||||||||||||||||||||||
জারণ অবস্থা | ৩, ২[4], 1[5] অ্যাম্ফোটেরিক অক্সাইড | ||||||||||||||||||||||||
তড়িৎ-চুম্বকত্ব | ১.৬১ (পলিং স্কেল) | ||||||||||||||||||||||||
আয়নীকরণ বিভব | (আরও) | ||||||||||||||||||||||||
পারমাণবিক ব্যাসার্ধ | empirical: 143 pm | ||||||||||||||||||||||||
সমযোজী ব্যাসার্ধ | 121±4 pm | ||||||||||||||||||||||||
ভ্যান ডার ওয়ালস ব্যাসার্ধ | 184 pm | ||||||||||||||||||||||||
বিবিধ | |||||||||||||||||||||||||
কেলাসের গঠন | face-centered cubic (fcc) | ||||||||||||||||||||||||
শব্দের দ্রুতি | পাতলা রডে: (rolled) ৫,০০০ m·s−১ (at r.t.) | ||||||||||||||||||||||||
তাপীয় প্রসারাঙ্ক | ২৩.১ µm·m−১·K−১ (২৫ °সে-এ) | ||||||||||||||||||||||||
তাপীয় পরিবাহিতা | ২৩৭ W·m−১·K−১ | ||||||||||||||||||||||||
তড়িৎ রোধকত্ব ও পরিবাহিতা | ২০ °সে-এ: ২৮.২ n Ω·m | ||||||||||||||||||||||||
চুম্বকত্ব | উপচুম্বকীয়[6] | ||||||||||||||||||||||||
ইয়ংয়ের গুণাঙ্ক | ৭০ GPa | ||||||||||||||||||||||||
কৃন্তন গুণাঙ্ক | ২৬ GPa | ||||||||||||||||||||||||
আয়তন গুণাঙ্ক | ৭৬ GPa | ||||||||||||||||||||||||
পোয়াসোঁর অনুপাত | ০.৩৫ | ||||||||||||||||||||||||
(মোজ) কাঠিন্য | ২.৭৫ | ||||||||||||||||||||||||
ভিকার্স কাঠিন্য | ১৬৭ MPa | ||||||||||||||||||||||||
ব্রিনেল কাঠিন্য | ২৪৫ MPa | ||||||||||||||||||||||||
ক্যাস নিবন্ধন সংখ্যা | 7429-90-5 | ||||||||||||||||||||||||
অ্যালুমিনিয়ামের আইসোটোপ | |||||||||||||||||||||||||
| |||||||||||||||||||||||||
এটি বেশ হালকা ও দীর্ঘদিন ব্যবহারে অক্ষয়িষ্ণু। একারণে এর বহুবিধ ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। মহাকাশীয় যন্ত্রপাতি,[10] যানবাহন ও নির্মানকাজে (জানালার কাঠামো, আংটা ইত্যাদি) অ্যালুমিনিয়াম ও এর সংকর ধাতুসমূহের বহুল ব্যবহার লক্ষনীয়।[11] এর অক্সাইড ও সালফেটসমূহ সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত যৌগ।[10] কোন জীবন্ত প্রাণী তাদের জৈবিক কার্যাবলিতে অ্যালুমিনিয়ামের লবণ ব্যবহার না করলেও মাটিতে প্রচুর পরিমাণে থাকায় উদ্ভিদসমূহে তাদের ভূমিকা রয়েছে।[12] উদ্ভিদে এর ক্রিয়াবলি নিয়ে উপর্যুপরি গবেষণা চলছে।
শুধুমাত্র ২৭ ভরসংখ্যা বিশিষ্ট আইসোটোপ প্রকৃতিতে স্থায়ীরুপে পাওয়া যায়, বাকিগুলো তেজস্ক্রিয় প্রকৃতির ও অস্থায়ী। শুধুমাত্র এটিই (অ্যালুমিনিয়াম-২৭) কেবল পৃথিবীর জন্মের শুরু থেকে আজ পর্যন্ত স্থায়ীভাবে প্রকৃতিতে পাওয়া যায়। এটি নিকটবর্তী অন্যান্য ধাতুসমুহের তুলনায় খুবই হালকা। এর সর্বশেষ কক্ষপথে সর্বমোট তেরটি (১৩) ইলেক্ট্রন বিদ্যমান। এর ইলেক্ট্রন বিন্যাস ২,৮,৩। এটি দৃশ্যমান বর্ণালীর শতকরা ৯২ ভাগ আলোকে প্রতিফলিত করতে পারে। এর ঘনত্ব ২.৭০ গ্রাম/ঘনসেন্টিমিটার। এর প্রতীক হলো Al
অ্যালুমিনিয়ামের সর্বপ্রথম ব্যবহার পাওয়া যায় খ্রিষ্টপূর্ব ৫ম শতকে। ফিটকিরি হিসেবে প্রাচীন গ্রীসে এর ব্যবহার ছিল এই মর্মে গ্রীক দার্শনিক হিরোডোটাস থেকে উদ্ধৃতি পাওয়া যায়। ক্রুসেডের পর ইউরোপের বস্ত্রশিল্পে ফিটকিরির গুরুত্ব তৈরি হয়। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যেও এটি তখন গুরুত্বপূর্ণ পণ্য হিসেবে আবির্ভূত হয়। ১৫৩০ সালের দিকে সুইস চিকিৎসক পারাসেলসাস ভূপৃষ্ঠে এর উপস্থিতি সম্পর্কে আলোচনা করেন। ১৫৯৫ সালে জার্মান রসায়নবিদ আন্দ্রেস লিবাভিয়াস পরীক্ষার মাধ্যমে এর সত্যতা নিরুপণ করেন।
১৭৬০ সালের দিকে অ্যালুমিনিয়াম উৎপাদন নিয়ে প্রথম কাজ শুরু হয়। যদিও এর বেশ পরে ১৮২৪ সালে ওলন্দাজ রসায়নবিদ হান্স ক্রিশ্চিয়ান ওরস্টেড প্রথম একাজে সাফল্য লাভ করেন। ১৮২৭ সালে আরেক জার্মান বিজ্ঞানী ফ্রিডরিক ভোলার ওরস্টেডের পরীক্ষাটি বিশদভাবে আবার পরিচালনা করেন এবং ১৮৪৫ প্রথম অ্যালুমিনিয়ামের ন্যায় ভৌত ধর্ম বিশিষ্ট কিছু টুকরো আবিষ্কারে সক্ষম হন। এর বহুপরে তাকেই অ্যালুমিনিয়ামের আবিষ্কারকের মর্যাদা দেয়া হয়। ভোলারের পদ্ধতিটি বাণিজ্যিকভাবে অ্যালুমিনিয়াম উৎপাদনে ফলপ্রসূ ছিল না।
১৮৮৬ সালে ফরাসি প্রকৌশলী পল হেরোল্ট এবং আমেরিকান প্রকৌশলী চার্লস মার্টিন হোল আলাদা আলাদাভাবে লাভবান উপায়ে অ্যালুমিনিয়াম উৎপাদন পদ্ধতি আবিষ্কার করেন। ১৮৮৯ সালে অস্ট্রিয়ান বিজ্ঞানী কার্ল জোসেফ বেয়ার বক্সাইট পরিশোধন করে অনুরুপ লাভবান একটি কৌশল আবিষ্কার করেন। আধুনিক পদ্ধতিগুলো ২ দুই ব্যবস্থার উপর ভিত্তিতেই প্রতিষ্ঠিত। বিংশ শতকের মাঝামাঝি গৃহস্থালীর ব্যবহার্য তৈজসপত্র তৈরিতে এর বহুমাত্রিক ব্যবহার জনপ্রিয়তা পেতে শুরু করে।
পৃথিবীতে বর্তমানে চীন সর্বাধিক পরিমাণ অ্যালুমিনিয়াম ধাতু উৎপাদন করে থাকে। এছাড়া রাশিয়া, কানাডা, ভারত ও সংযুক্ত আরব আমিরাত উল্লেখযোগ্য হারে এ ধাতুর উৎপাদক। উন্নত দেশসমূহেই এর চাহিদা বেশি। বাণিজ্যিকভাবে লাভবান ২টি পদ্ধতিতেই সাধারণত এ ধাতু উৎপাদন করা হয়ে থাকে। পদ্ধতিদুটি যথাক্রমে বেয়ার প্রণালী ও হল-হেরোল্ট প্রণালী নামে পরিচিত।
বেয়ার প্রণালী
এ পদ্ধতিতে বক্সাইটকে অ্যালুমিনিয়াম অক্সাইডে পরিণত করা হয়। প্রথমে বক্সাইটকে বিগলিত করা হয়। এরপর তাকে সোডিয়াম হাইড্রক্সাইডের গরম দ্রবণে মিশ্রিত করা হয়। তারপর একটি ডাইজেস্টার পাত্রে উচ্চ চাপ প্রয়োগ করলে অ্যালুমিনিয়াম হাইড্রক্সাইড পাওয়া যায় এবং অপদ্রব্যগুলো অদ্রবণীয় হয়ে আলাদা হয়ে যায়।
Al(OH)3 + Na+ + OH− → Na+ + [Al(OH)4]−
এরপর মিশ্রণটি বক্সাইটের স্ফুটনাঙ্কের চেয়েও উচ্চ তাপমাত্রায় উত্তপ্ত করলে বাকি অপদ্রব্যগুলোও দূরীভূত হয়। সবশেষে কেলাসন পদ্ধতিতে অ্যালুমিনিয়াম হাইড্রক্সাইড পৃথক করলে পুরো মিশ্রণের অর্ধেক পরিমাণ অ্যালুমিনিয়াম অধঃক্ষিপ্ত হয়। প্রয়োজন অনুসারে পরে অধিক পরিমাণ পরিশোধন করা হয়ে থাকে।
হল-হেরোল্ট প্রণালী
এটি মূলত তড়িৎ বিশ্লেষণ পদ্ধতিতে অ্যালুমিনিয়াম ধাতুর পৃথকীকরণ প্রক্রিয়া। অ্যালুমিনাকে ৯৫০-৯৮০ ডিগ্রি সেলসিয়াস বিগলিত করা হয়। প্রকৃতপক্ষে অ্যালুমিনার গলনাঙ্ক এর চেয়েও বেশি। ক্রাইওলাইট (Na3AlF6) প্রয়োগে এই তাপমাত্রায় বিগলন কার্য সম্পন্ন হয়। এরপর তড়িৎ বিশ্লেষণ শুরু হলে পাত্রের তলায় গলিত ধাতু তৈরি হতে থাকে। এই ধাতুর প্রবাহকে নিয়ন্ত্রণ করে বিশাল বিশাল অ্যালুমিনিয়াম দন্ড তৈরি করা হয় যা অ্যালুমিনিয়াম বিলেট নামে পরিচিত। পরবর্তীতে চাইলে হুপ প্রণালী অনুসরণ করে প্রায় ৯৯.৯৯ শতাংশ বিশুদ্ধ অ্যালুমিনিয়াম পাওয়া যায়।
যৌগ ছাড়াও ধাতু হিসেবে অ্যালুমিনিয়াম ধাতুর প্রচুর ব্যবহার দৈনন্দিন জীবনে দৃশ্যমান। অ্যালুমিনিয়ামের অ্যাসিটেট, ফসফেট ও হাইড্রক্সাইডসমূহের বহুধা ব্যবহার রয়েছে। ধাতু হিসেবে অ্যালুমিনিয়ামের প্রধান ব্যবহার মূলত লক্ষ্য করা যায়-
১) বেশ হালকা ধাতু হওয়ায় যানবাহনের বডি তৈরিতে যেমনঃ বাস, ট্রাক, রেলের বগি, বাইসাইকেল, উড়োজাহাজ, মহাকাশযান ইত্যাদি এর ব্যবহার প্রচুর।
২) প্যাকেজিং এর জন্য ফয়েল পেপার, ক্যান ইত্যাদি তৈরিতে কারণ এটি বিষাক্ত ও আঠালো নয়।
৩) নির্মাণ কাজে দরজা, জানালা, চৌকাঠ প্রভৃতি তৈরিতে কারণ এটি মরিচা প্রতিরোধী গুণসম্পন্ন।
৪) বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতিতে যেমনঃ মোটর, ট্রান্সফর্মার, ক্যাপাসিটর (ধারক) প্রভৃতি।
৫) গৃহস্থালীতে ব্যবহৃত তৈজসপত্র তৈরিতে যেমনঃ হাড়ি, পাতিল, কড়াই ইত্যাদি।
তথ্যসূত্র
Wikiwand in your browser!
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.