Loading AI tools
উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
ড. মঙ্গলমপল্লী বালামুরলীকৃষ্ণ (৬ জুলাই ১৯৩০ – ২২ নভেম্বর ২০১৬) ভারতের কর্ণাটকী শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের প্রবাদপ্রতিম কণ্ঠশিল্পী, সঙ্গীতজ্ঞ, বহু-যন্ত্রবাদক, নেপথ্য সঙ্গীতশিল্পী, সুরকার এবং অভিনেতা ছিলেন।[1][2] তিনি ১৯৭৮ খ্রিস্টাব্দে মাদ্রাজ মিউজিক অ্যাকাডেমির সঙ্গীত কলানিধি সম্মানে ভূষিত হন। ১৯৭৬ এবং ১৯৮৭ খ্রিস্টাব্দে দু'বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, ১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দে সংগীত নাটক অকাদেমি পুরস্কার, শিল্পকলায় অসামান্য অবদানের জন্য ভারতের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার পদ্মবিভূষণ লাভ করেন। সেই সঙ্গে ১৯৯৫ খ্রিস্টাব্দে ইউনেস্কো থেকে মহাত্মা গান্ধী রৌপ্য পদক, ২০০৫ খ্রিস্টাব্দে ফরাসি সরকারের "শেভালিয়ার অফ দ্য অর্ডার ডেস আর্টস এট ডেস লেট্রেস" এবং ১৯৯১ খ্রিস্টাব্দে চেন্নাইয়ের ফাইন আর্টস সোসাইটির সঙ্গীত কলাশিখামণি পুরস্কারসহ বহু পুরস্কার ও সম্মাননায় ভূষিত হন[3]
এম বালামুরলীকৃষ্ণ | |
---|---|
প্রাথমিক তথ্য | |
জন্মনাম | মঙ্গলমপল্লী মুরলীকৃষ্ণ |
জন্ম | শঙ্করাগুপ্তম, পূর্ব গোদাবরী জেলা, মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সি, বৃটিশ ভারত (বর্তমান অন্ধ্রপ্রদেশ), ভারত | ৬ জুলাই ১৯৩০
মৃত্যু | ২২ নভেম্বর ২০১৬ ৮৬) চেন্নাই, তামিলনাড়ু, ভারত | (বয়স
ধরন | কর্ণাটকী সঙ্গীত |
পেশা | সঙ্গীতজ্ঞ |
বাদ্যযন্ত্র | ভোয়ালা মৃদঙ্গম খঞ্জিরা |
কার্যকাল | ১৯৩৮–২০১৬ |
লেবেল | লহরী মিউজিক, সঙ্গীতা, পিএম অডিওস অ্যান্ড এন্টারটেনমেন্টস, আদিত্য মিউজিক |
পুরস্কার | পদ্মবিভূষণ (১৯৯১) |
বালামুরলীকৃষ্ণ ছয় বছর বয়সেই সঙ্গীত জীবন শুরু করেন। তিনি জীবদ্দশায় বিশ্বব্যাপী পঁচিশ হাজারেরও বেশি সঙ্গীত সম্মেলনে অংশ নিয়েছিলেন। [4] পণ্ডিত ভীমসেন জোশী পণ্ডিত হরিপ্রসাদ চৌরাসিয়া, পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তী এবং কিশোরী আমোনকরের সঙ্গে যুগলবন্দীতে সঙ্গীত পরিবেশন করেছেন। তিনি শ্রীভদ্রচালা রামদাসু, শ্রীঅন্নমাচার্য এবং অন্যান্য গীতিকারের রচিত সঙ্গীতের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছেন।
বালমুরলীকৃষ্ণ নিজস্ব পরিশীলিত কণ্ঠ-দক্ষতায় ও মাধুর্যে, ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের ছন্দময় রূপ উপস্থাপন করে ভারতীয় সঙ্গীতকে বিশেষ মাত্রায় উন্নীত করেছেন। সঙ্গীতে বিনোদন জগতের বিশিষ্টজনের কাছে জনপ্রিয়তা ও প্রশংসা লাভ করেন। বালামুরলীকৃষ্ণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, যুক্তরাজ্য, ইতালি, ফ্রান্স, রাশিয়া, শ্রীলঙ্কা, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, মধ্যপ্রাচ্যের দেশ এবং অন্যত্র সঙ্গীতানুষ্ঠানে উপস্থাপন করেন। তিনি মাতৃভাষা তেলেগু ছাড়াও,কন্নড় , সংস্কৃত, তামিল, মালয়ালম, হিন্দি, বাংলা এবং পাঞ্জাবি সহ অন্যান্য ভাষার সঙ্গীতের সুরকার ও গীতিকার ছিলেন।[5]
তিনি এক পুরস্কার-বিজয়ী ব্রিটিশ গায়কদলের বিশিষ্ট একক শিল্পী হয়ে যুক্তরাজ্যের গোয়ান সুরকার ড. জোয়েলের সুরারোপিত রবীন্দ্রনাথের গীতাঞ্জলির কিছু কবিতা "গীতাঞ্জলি স্যুট" পরিবেশন করেন। স্পষ্ট উচ্চারণে বাংলাসহ বিভিন্ন ভাষায় রবীন্দ্রসংগীত গেয়েছেন এবং বাংলার পাশাপাশি ফরাসি ভাষাতেও গান গেয়েছেন ও রেকর্ড প্রকাশিত হয়েছে। এমনকি তিনি জ্যাজ ফিউশনে উদ্যোগী হয়েছিলেন, মালয়েশিয়ার রাজপরিবারের জন্য এক অনুষ্ঠানে শীর্ষ কর্ণাটকী পারকাশন শিক্ষক শ্রী টিএইচ সুবাস চন্দ্রনের সঙ্গে সঙ্গীত পরিবেশনে সহযোগিতা করেন।
বালামুরলীকৃষ্ণের জন্ম বৃটিশ ভারতের মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সির অধুনা অন্ধ্র প্রদেশের পূর্ব গোদাবরী জেলার শঙ্করাগুপ্তম গ্রামে এক ব্রাহ্মণ পরিবারে। তার জন্ম নাম ছিল মুরলীকৃষ্ণ [6] তার পিতা মঙ্গলমপল্লী পট্টাভিরাময় ছিলেন খ্যাতনামা সঙ্গীতজ্ঞ এবং মাতা সূর্যকান্তম্মা ছিলেন বীণা বাদক। অতি অল্প বয়সে বালামুরলীকৃষ্ণ মাকে হারান। মাতৃহারা সন্তানকে পিতাই লালন-পালন করেন। সঙ্গীতের প্রতি তার আগ্রহ দেখে, তিনি প্রথাগত শিক্ষার বদলে বালামুরলীকৃষ্ণকে ত্যাগরাজের শিষ্য পরম্পরার নিকট বংশধর পারুপল্লী রামকৃষ্ণায় পান্টুলুর কাছে সঙ্গীত শিক্ষার ব্যবস্থা করেন।[7] তার কাছে বালামুরলীকৃষ্ণ কর্ণাটকী শাস্ত্রীয় সঙ্গীতে তালিম নেন। শৈশবেই তার সঙ্গীত প্রতিভার স্ফুরণ ঘটে। আট বছর বয়সে, তিনি বিজয়ওয়াড়ার থ্যাগরাজা আরাধনার প্রথম পূর্ণাঙ্গ সঙ্গীতানুষ্ঠানে অংশ নেন। প্রখ্যাত হরিকথা আখ্যান গায়ক মুসুনুরি সূর্যনারায়ণ মূর্তি ভাগবতার তাঁর মধ্যে অসামান্য সঙ্গীত প্রতিভা দেখেন এবং তার জন্মের সময়কার নাম মুরলীকৃষ্ণের আগে "বালা" ( শিশু অর্থে) উপসর্গ যোগ করেন এবং পরবর্তীতে বালামুরলীকৃষ্ণ নামেই পরিচিত হন।[8]
বিভিন্ন ভারতীয় ভাষায় তিনি চারশোর বেশি গান রচনা করেছেন। এছাড়া সঙ্গীতশৈলীর উদ্ভাবন ও তার পরীক্ষা-নিরীক্ষায় নিজস্বতার স্বাক্ষর রেখেছেন। খুব অল্প বয়সে তার সংগীত জীবন শুরু করার পরে, পনেরো বছর বয়সেই তিনি কর্নাটকী শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের ৭২ টি মেলকর্তা আয়ত্ত করেন এবং সেগুলির প্রতিটিতে কৃত্তি রচনা করেছিলেন। তাঁর জনক রাগ মঞ্জরী ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত হয়েছিল এবং সঙ্গীতা রেকর্ডিং কোম্পানি নয় খণ্ডের এক সিরিজে রাগাঙ্গা রাবলি রেকর্ড করেছিল। তার সৃষ্ট অন্যান্য রাগগুলি হল– লাভঙ্গী, কাহাথি, সিদ্ধি, গণপতি, সর্বশ্রী ইত্যাদি।[9] তিনি তালা বা বীটের একটি নতুন পদ্ধতিও আবিষ্কার করেছেন। তার খ্যাতি কেবলমাত্র কর্ণাটকী কণ্ঠশিল্পী হিসাবে নয়, তিনি ভোয়ালা, মৃদঙ্গ, বেহালা, কাঞ্জিরা, বীণা সহ বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র বাজাতে সমানভাবে দক্ষ ছিলেন। তিনি একক ভাবে সঙ্গীতানুষ্ঠানে ভায়োলা উপস্থাপন করেন। তিনিই ভায়োলাকে শাস্ত্রীয় ভারতীয় সঙ্গীতের সঙ্গে যুক্ত করেছিলেন। বালামুরলীকৃষ্ণ ভারতীয় চলচ্চিত্রে নেপথ্যে সঙ্গীত পরিবেশন এবং অভিনয়েও অংশগ্রহণ করেছেন। ১৯৬৭ খ্রিস্টাব্দে তিনি "ভক্ত প্রহ্লাদ" চলচ্চিত্রে ঋষি নারদের ভূমিকায় অভিনয় করেন।
তার বলিষ্ঠ প্রাঞ্জল গায়কিতে গাওয়া উল্লেখযোগ্য কয়েকটি রবীন্দ্র সংগীত হল -
তেলেগু, সংস্কৃত, মালায়লাম, কন্নড় এবং তামিল ভাষার বেশ কয়েকটি ছবিতে গান গেয়েছেন বালামুরলিকৃষ্ণা। [10] তিনি তেলেগু চলচ্চিত্র ভক্ত প্রহ্লাদা (1967) নারদা চরিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে আত্মপ্রকাশ করেন এবং তেলেগু এবং তামিল ভাষায় আরও কয়েকটি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন।[11] [12]
কিংবদন্তি সঙ্গীতশিল্পী মঙ্গলপল্লী বালামুরলীকৃষ্ণ ২০১৬ খ্রিস্টাব্দের ২২ নভেম্বর মঙ্গলবার বিকাল সাড়ে তিনটায় চেন্নাইয়ে নিজ বাসভবনে ঘুমের মধ্যে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হওয়ার কারণে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।[13] [14] পরের দিনই চেন্নাইয়ের বেসান্ত নগরের শ্মশানে পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তার শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়।[15] তার মৃত্যুর পর স্ত্রী অন্নপূর্ণা দেবী তিন মাস বেঁচে ছিলেন। তিনি ২০১৭ খ্রিস্টাব্দের ১৬ ফেব্রুয়ারি পরলোক গমন করেন। তাদের তিন পুত্র ও তিন কন্যারা সকলেই প্রতিষ্ঠিত চিকিৎসক।
বালামুরলীকৃষ্ণের মৃত্যুর পর তার পরিবার ড. এম. বালামুরলীকৃষ্ণ মেমোরিয়াল ট্রাস্ট গঠন করেছে।
মঙ্গলমপল্লী বালামুরলীকৃষ্ণ জীবনব্যাপী সঙ্গীত সাধনায় বিভিন্ন সময়ে দেশে ও বিদেশে বহু পুরস্কার ও সম্মানে ভূষিত হয়েছেন। সাম্মানিক ডক্টরেট (১৯৮১ খ্রিস্টাব্দে শ্রী ভেঙ্কটেশ্বরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডক্টর অফ লেটারস, অন্ধ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের পি এইচডি, ডক্টর অফ সায়েন্স, ডক্টর অফ লেটারস) লাভ করেছিলেন। অন্যান্য উল্লেখযোগ্য পুরস্কার গুলি হল -
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.