২০২৪ সালে হত্যাকাণ্ডের শিকার বাংলাদেশী আইনজীবী উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যাকাণ্ড হলো ২০২৪ সালের ২৬ নভেম্বর রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় আটক হওয়া চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ পরবর্তী সহিংসতায় চিন্ময় দাসের অনুসারী ও ইসকন সমর্থকদের (অভিযোগকৃত) দ্বারা সংঘটিত হত্যাকাণ্ড।[১][২][৩][৪][৫] তবে এই ঘটনায় ইসকনের সম্পৃক্ততা নেই দাবি করে ইসকন বাংলাদেশ।[৬] নিহত সাইফুল ইসলাম আলিফ ২০১৮ সাল থেকে আইনজীবী হিসেবে চট্টগ্রাম আদালতে অনুশীলন করতেন এবং ২০২৩ সালে হাইকোর্টের আইনজীবী হিসেবে নিবন্ধিত হন।[৭]
সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যাকাণ্ড | |
---|---|
স্থান | চট্টগ্রাম কোর্ট বিল্ডিং, কোতোয়ালী, চট্টগ্রাম, বাংলাদেশ |
স্থানাংক | ২২°২০′৬″ উত্তর ৯১°৫০′৪″ পূর্ব |
তারিখ | ২৬ নভেম্বর ২০২৪ আনু. ১:১৯ PM (ইউটিসি+৬) |
হামলার ধরন | সংঘবদ্ধ হামলা এবং ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত |
ব্যবহৃত অস্ত্র | লাঠি, ধারালো অস্ত্র |
ভুক্তভোগী | সাইফুল ইসলাম আলিফ |
হামলাকারী দল | ইসকনের সদস্য (অভিযোগকৃত) |
অপরাধীগণ | চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের সমর্থকরা |
২০২৪ সালের ২৫শে নভেম্বর সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র ও ইসকনের বহিষ্কৃত নেতা চিন্ময় দাসকে[৮] রাষ্ট্রদোহের অভিযোগে ঢাকা বিমানবন্দর এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরদিন চিন্ময়কে চট্টগ্রাম আদালতে তোলা হয় এবং জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয় আদালত। এ খবর পেয়ে তার অনুসারী মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করে এবং কারাগারে নিয়ে যেতে বাধা দেয়। পরিস্থিতি মোকাবেলায় পুলিশ লাঠিচার্জ, কাঁদানে গ্যাস, সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। পরে আদালত চত্বরে বিক্ষোভকারীরা বেশ কয়েকটি গাড়ি, মোটরসাইকেল ও কোর্ট বিল্ডিং কমপ্লেক্সের নিচতলায় এক আইনজীবীর চেম্বার ভাঙচুর করে। এছাড়া বিক্ষোভকারীদের ছোড়া ঢিলে আদালত মসজিদ কমপ্লেক্সের কাঁচ ভেঙে যায়।[৭][৯][১০] সংঘর্ষের এক পর্যায়ে আদালতের বিপরীতে রঙ্গম কনভেনশন সেন্টার এলাকায় আইনজীবী আলিফকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।[২][৭]
চট্টগ্রাম শহরের আদালত চত্ত্বর ও জমিয়তুল ফালাহ মসজিদ প্রাঙ্গণ এবং লোহাগাড়া উপজেলায় দুই দফা জানাজা[১১] শেষে আলিফকে নিজ গ্রাম চুনতীর ফারেঙ্গা পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। এর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে গায়েবানা জানাযা অনুষ্ঠিত হয়।[১২][১৩][১৪]
সাইফুল ইসলাম আলিফ বাংলাদেশের চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার চুনতি এলাকার বাসিন্দা ছিলেন। তিনি আধুনগর ইসলামিয়া কামিল মাদ্রাসা থেকে দাখিল, চট্টগ্রাম কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন এবং আন্তর্জাতিক ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম(আইআইইউসি) থেকে এলএলবি ও এলএলএম পাশ করে আইন পেশায় নিযুক্ত হন। তিনি ২০১৮ সালে চট্টগ্রাম আদালতে আইন পেশা শুরু করেন। পরবর্তীতে ২০২৩ সালে হাইকোর্টের আইনজীবী হিসেবে নিবন্ধিত হন।[৩]
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস আলিফ হত্যার নিন্দা জানিয়ে আইনি প্রক্রিয়ায় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন।[১৫] বাংলাদেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও ব্যক্তিবর্গ এই হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি প্রদান করে।[১৬][১৭][১৮]
আইনজীবী আলিফের জানাযা পরবর্তী সাংবাদিকদের কাছে ইসকনকে নিষিদ্ধ ঘোষণার দাবি জানায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক সারজিস আলম।[১৯]
হত্যার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতার ও ইসকন নিষিদ্ধের দাবি জানায় হেফাজতে ইসলাম, উলামা পরিষদ, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম, খেলাফত মজলিস, ছাত্রশিবির ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতিসহ বিভিন্ন সংগঠন।[২০][২১][২২][২৩][২৪][২৫]
সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যার প্রতিবাদে বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ মিছিল, প্রতিবাদ সভা, মানববন্ধন ও সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতি ২৭ ও ২৮ নভেম্বর কর্মবিরতি পালন করে।[৭]
আইনজীবী আলিফ হত্যাকাণ্ড ও চিন্ময়ের মুক্তির দাবির আন্দোলনে ইসকন বাংলাদেশের সম্পৃক্ততা নেই দাবি করে ২৮ নভেম্বর সংবাদ সম্মেলন করে ইসকন বাংলাদেশ। মিথ্যা প্রচারণা চালিয়ে ইসকন নিষিদ্ধের মতো অযৌক্তিক দাবি তোলা হচ্ছে বলেও জানানো হয়।[৬]
২৮ নভেম্বর নিহত আলিফের পরিবারকে এক কোটি টাকা অর্থ সহায়তার ঘোষণা দেয় আলহাজ্ব শামসুল হক ফাউন্ডেশন।[২৬] ২৯ নভেম্বর নিহত আইনজীবী আলিফের পরিবারকে পাঁচ লাখ টাকা অর্থ সহায়তা দেয় আস সুন্নাহ ফাউন্ডেশন।[২৭]
রঙ্গম কনভেনশন হলের পেছনে নিয়ে আইনজীবী আলিফকে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে হত্যার একটি ভিডিও ফুটেজ সামাজিকমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, একদল বিক্ষোভকারী আলিফকে নির্মমভাবে আক্রমণ করছে। উক্ত ভিডিও ফুটেজ দেখে আলিফ হত্যার সাথে জড়িত মোট ৭ জনকে গ্রেফতার করে। তারা হলেন রুমিত দাশ, সুমিত দাশ, গগন দাশ, নয়ন দাশ, বিশাল দাশ, আমান দাশ ও মনু মেথর।[২][২৮] এ ঘটনায় বিজিসি ট্রাস্ট ইউনিভার্সিটির আইন বিভাগের এক শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।[২৯]
২৯ নভেম্বর রাতে আইনজীবী আলিফের বাবা ৩১ জনের নাম উল্লেখপূর্বক ও অজ্ঞাতনামা ১০-১৫ জনের নামে কোতোয়ালি থানায় হত্যা মামলা দায়ের করে।[৩০]
৪ ডিসেম্বর রাত পৌনে ১২টার দিকে সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যাকাণ্ডের প্রধান আসামি চন্দনকে পুলিশ কিশোরগঞ্জ জেলার ভৈরব থেকে গ্রেপ্তার করে।[৩১]
আইনজীবী আলিফ হত্যাকাণ্ডে একাধিক গণমাধ্যমে ভুল ও মিথ্যা তথ্য প্রচারিত হয়। ভারতের রিপাবলিক টিভি, অপইন্ডিয়াসহ একাধিক গণমাধ্যমে নিহত আইনজীবী আলিফকে চিন্ময় দাসের আইনজীবী দাবি করে প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এসব মাধ্যমে দাবি করা হয়, আলিফ পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছেন। ভারতীয় গণমাধ্যমে প্রচারিত দাবিটি মিথ্যা ও খারাপ উদ্দেশ্য নিয়ে ছড়ানো হচ্ছে বলে জানায় বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং ফ্যাক্টস।[৩২] বার্তা সংস্থা রয়টার্সেও চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার লিয়াকত আলী খানকে উদ্ধৃত করে সংবাদ প্রকাশ করে যেখানে আইনজীবী সাইফুল ইসলামকে চিন্ময় দাসের আইনজীবী দাবি করা হয়। তবে সরকারের প্রেস উইংয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয় যে রয়টার্স বা কোনো সাংবাদিক লিয়াকত আলী খান থেকে কোনো বক্তব্য নেননি এবং রয়টার্সের প্রতিবেদন বস্তুনিষ্ঠ নয় জানিয়ে এর প্রতিবাদ জানিয়েছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ। পরবর্তীতে রয়টার্স তাদের প্রতিবেদন সংশোধন করে।[৩৩]
আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফকে সহকারী সরকারী কৌঁসুলি উল্লেখ করেও বাংলাদেশের একাধিক গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়। যদিও তিনি রাষ্ট্রের আইনকর্তা ছিলেন না। তবে ২০২৩ সালে তিনি হাইকোর্টের আইনজীবী হিসেবে নিবন্ধিত হন।[৭][৩৪]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.