Loading AI tools
ভারতীয় পৌরাণিক দেবর্ষি, সপ্তর্ষির অন্যতম উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
অত্রি (সংস্কৃত: अत्रि) হলেন একজন বৈদিক ঋষি৷ হিন্দুধর্ম অনুসারে যিনি অগ্নি, ইন্দ্র সহ বৈদিক দেবতার এবং যজ্ঞে আহুতি প্রদান ও বহু বেদমন্ত্রের মন্ত্রদ্রষ্টা ঋষি৷ ঋগ্বেদে পুনপুন উল্লেখিত ঋষি অত্রি সপ্তর্ষিমণ্ডলের একজন তারকা তথা ঋষি৷ এবং হিন্দু গ্রন্থ ঋক বেদে অন্যতম প্রধান উল্লিখিত ব্যক্তি৷[1]
অত্রি | |
---|---|
পদবি | ব্রহ্মর্ষি |
পরিবার | ব্রহ্মা (পিতা) |
দাম্পত্য সঙ্গী | অনুসূয়া |
সন্তান | দুর্বাসা, চন্দ্র, দত্তাত্রেয় |
হিন্দু ধর্মগ্রন্থ ঋগ্বেদের পঞ্চম মণ্ডলের মন্ত্রদ্রষ্টা ঋষি অত্রি এবং তাঁর বংশধরগণ। সেজন্য, এই মণ্ডলের নাম ঋষির সম্মানার্থে "অত্রি মণ্ডল" নামে নামাঙ্কিত করা হয়েছে৷ এই মণ্ডলে সর্বমোট ৮৭টি সূক্ত রয়েছে, যেগুলোর মন্ত্রদ্রষ্টা হলেন ঋষি অত্রি এবং তার উত্তরসূরীগণ।[2]
এছাড়াও অত্রি ঋষির উল্লেখ বিভিন্ন পুরাণ এবং হিন্দুদের অন্যতম দুটি মহাকাব্য রামায়ণ ও মহাভারতেও পাওয়া যায়[3][4]
সপ্তর্ষি মণ্ডলের সাত জন মহান ঋষি তথা মরীচি, অঙ্গিরা, পুলহ, ক্রতু, পুলস্ত্য ও বশিষ্ঠ সহ ঋষি অত্রির নামও সমান উল্লেখযোগ্য৷[1] বৈদিক যুগের বিভিন্ন গল্প কাহিনী অনুসারে, অত্রি মুনি অনুসূয়া দেবীর সহিত বিবাহ করেন এবং ক্রমে তাদের দুর্বাসা, দত্তাত্রেয় এবং চন্দ্র নামে তিন সন্তান জন্ম নেয়৷[5] জ্যোতিষ গণনা অনুসারে সপ্তর্ষিমণ্ডলের নক্ষত্রগুলোর মধ্যে তিনি অন্তিম এবং ব্রহ্মার জিহ্বার অংশ থেকে সৃষ্ট বলে বিশ্বাস করা হয়৷ তার স্ত্রী অনুসূয়া ছিলেন সপ্ত পতিব্রতা নারীর একজন৷ আকাশবাণীর আদেশ অনুসারে যতবারই তিনি প্রায়শ্চিত্তের বিধান পান, নিষ্ঠার সহিত তিনি তা করেন৷ তার নিষ্ঠা ও কঠোর তপস্যার প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে হিন্দুধর্মের ত্রিমূর্তি হিসাবে আলোচিত ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও মহেশ্বর একযোগে তার সামনে আবির্ভূত হন এবং তাদের বর দান করেন৷ আশীর্বাদ স্বরূপ তিনি ত্রিদেবকে নিজের পুত্র রূপে পান৷ আবার অপর একটি সংস্করণ অনুসারে ঋষিপত্নী অনুসূয়া তার শুদ্ধতা ও সতীত্বের জোরে ত্রিদেবকে সংকট অবস্থা থেকে রক্ষা করেছিলেন৷ তার ফলস্বরূপ তারা অনুসূয়ার প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে তার তিন সন্তানরূপে জন্ম নেওয়ার আশ্বাস দেন৷ ব্রহ্মা চন্দ্রদেব রূপে, বিষ্ণু দত্তাত্রেয় রূপে এবং শিবের কিছু অংশ একত্রিত করে জন্ম নেন দুর্বাসা৷ ঋক বেদের একাধিক পংক্তিতে উল্লেখযোগ্যভাবে অত্রির নাম পাওয়া যায়৷ তিনি একাধিক যুগে একাধিক হিন্দু মহাকাব্যে উল্লিখিত হন৷ ত্রেতাযুগে রামায়ণের সময়ে অত্রি ও তার স্ত্রী অনুসূয়াকে দেখা যায় বনবাসকালে রাম-লক্ষ্মণ ও সীতাকে সৎসঙ্গ দিতে৷ শিব পুরাণ অনুসারে অত্রি-অনুসূয়া উভয়েরই উল্লেখ পাওয়া এবং ঘটনাক্রমে গঙ্গাকে পৃথিবীতে আনয়নে তারা যথেষ্ট ভূমিকা নিয়েছিলেন৷[6]
তিনি ঋগ্বেদের পঞ্চম মণ্ডলের অন্যতম দ্রষ্টা৷ অত্রি মুনির বংশজ একাধিক উত্তরসূরীগণ এবং তার বিভিন্ন অনুগামীরা একই পদ্ধতিতে ঋকবেদের সাথে অন্যান্য বৈদিক পুস্তকের সংযোগ স্থাপন করেন৷ ঋগ্বেদের পঞ্চম মণ্ডলে সর্বমোট ৮৭টি সূক্ত রয়েছে, যা মূলত অগ্নি এবং ইন্দ্রদেবকে উদ্দেশ্য করে রচিত৷ এছাড়া বিশ্বেদেবাঃ (একত্রিতভাবে সমস্ত দেবগণ), মরুদ্গণ এবং যুগ্মদেবতা তথা মিত্র দেব-বরুণ দেব ও অশ্বিনীকুমার বিষয়েও সূক্তে একাধিক উল্লেখ পাওয়া যায়৷[7] ঐ মণ্ডলেই ঊষা দেবী এবং আদিত্য সবিতৃৃকে উদ্দেশ্যে দুটি দুটি করে সূক্ত পাওয়া যায়৷ এই মণ্ডলের অধিকাংশ সূক্তের দ্রষ্টা ঋষি অত্রি এবং তার উত্তরসূরীদের অবদান, তারা "আত্রেয়" নামে পরিচিত৷[4] এই সকল মন্ত্র ১৫০০ থেকে ১২০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে ভারতীয় উপমহাদেশের উত্তর-পশ্চিমভাগে রচিত হয়েছিলো বলে অনুমান করা হয়৷[8][9]
ঋগ্বেদের অত্রি ঋষি দৃষ্ট সূক্তগুলো সুন্দর ছন্দোবদ্ধ রীতি এবং আধ্যাত্মিক ধ্যান ধারণার বুদ্ধিদীপ্ত ধাঁধা সহ শিক্ষনীয় বস্তুর উপস্থিতি বিশেষভাবে গূরুত্বপূর্ণ৷ এই সূক্তগুলোতে সংস্কৃত ভাষার শব্দকোষীয়, বাক্যগঠন সংক্রান্ত, গঠনগত এবং ক্রিয়ার কালের অদ্ভুত ব্যবহার ভাষার নমনীয়তা বর্দ্ধিত করে৷[10] ঋগ্বেদের অত্রি মণ্ডলের ৫.৪৪ সংযক মন্ত্রটিকে বিখ্যাত পণ্ডিত গেল্ডনার সবচেয়ে গূঢ় ধাঁধাবিশিষ্ট এবং কঠিনতর বলে উল্লেখ করেছেন৷[11] এছাড়াও ঐ শ্লোকগুলোতে প্রাকৃৃতিক ঘটনাবলীর মার্জিত উপস্থাপন রয়েছে৷ ৫.৮০ নম্বর শ্লোকে চঞ্চল প্রাণবন্ত একটি নারীকে ভোরের আলোর সাথে রূপক হিসাবে তুলনা করা হয়েছে৷[10]
একাধারে ঋগ্বেদের পঞ্চম মণ্ডলটি ঋষি অত্রি এবং তার বংশানুজ ও অনুগামীদের দ্বারা প্রণীত তেমনি বেদের অন্যান্য একাধিক মণ্ডলে ঋষি অত্রির উল্লেখ রয়েছে৷ দশম মণ্ডলের ১৩৭.৪ নম্বর মন্ত্রপ অত্রির বিশেষ উল্লেখ পাওয়া যায়৷[12]
রামায়ণ অনুসারে বনবাস পালনকালে রাম, তার স্ত্রী সীতাদেবী এবং তার ভ্রাতা লক্ষ্মণের সহিত অত্রি-অনুসূয়ার কুটীরে উপস্থিত হন৷ অত্রির কুটীর চিত্রকূটের নিকট ছিলো বলে উল্লেখ করা হয়েছে৷[4] কুটীরের নিকটে একটি মনোরম সরোবর ছিলো, যেখানে দৈব গান ধ্বনিত হতো এবং সরোবরের জল বিভিন্ন ফুল ও জলজ পাতাসদৃৃশ উদ্ভিদে সজ্জিত ছিলো৷ সারস, মাছরাঙা, কচ্ছপ, পানকৌড়ী, বিভিন্ন প্রজাতির হাসের বাস ছিলো এখানে৷[3]
মধ্যযুগীয় একাধিক পুরাণে অত্রি নামের অনির্দিষ্ট বেশ কিছু ঋষির উল্লেখ পাওয়া যায়৷ এই কারণে পৌরাণিক মূল অত্রি চরিত্রটি ও তার গুরুত্ব হ্রাস পেয়ে বিচিত্র ও অন্তর্সঙ্গতিহীন হয়ে পড়ে৷ ভিন্ন পুরাণে উল্লিখিত প্রতিটি অত্রি মুনিই একই ব্যক্তিত্ব কীনা তা নিয়ে অস্পষ্ট ধারণা থেকেই যায়৷[4]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.