ইহুদি ধর্ম
একটি ইব্রাহিমীয় ধর্ম / From Wikipedia, the free encyclopedia
ইহুদিধর্ম বা যিহূদীধর্ম[lower-alpha 1] (হিব্রু ভাষায়: יַהֲדוּת [jahaˈdut] Yahadut)[6][7][8][9] হল একটি ইব্রাহিমীয়, একেশ্বরবাদী ও নৃগোষ্ঠীগত ধর্ম যা ইহুদি জাতির সামষ্টিক ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক এবং আইনগত ঐতিহ্য ও সভ্যতাকে ধারণ করে।[10][1][11] এটি ব্রোঞ্জ যুগে মধ্যপ্রাচ্যে একটি সংগঠিত ধর্ম হিসেবে উৎপত্তিলাভ করে।[12] আধুনিক ইহুদিধর্ম প্রায় ৫০০ খ্রীষ্টপূর্বাব্দে প্রাচীন ইস্রায়েল ও যিহূদার ধর্ম ইয়াহ্ওয়েহ্বাদ থেকে বিবর্ধিত হয়।[13] ফলে এটিকে অন্যতম প্রাচীন একেশ্বরবাদী ধর্ম হিসেবে বিবেচনা করা হয়।[14][15] ধার্মিক ইহুদিরা ইহুদিধর্মকে তাদের পূর্বপুরুষ ইস্রায়েলীয়দের সঙ্গে ঈশ্বরের স্থিরকৃত নিয়মের বহিপ্রকাশ বলে গণ্য করে।[16] এর অন্তর্ভুক্ত রয়েছে বিস্তৃত গ্রন্থাবলি, অনুশীলন, ধর্মতাত্ত্বিক অবস্থান ও সাংগঠনিক রূপ।
ইহুদিধর্ম যিহূদীধর্ম | |
---|---|
יַהֲדוּת Yahadut | |
ধরন | নৃগোষ্ঠীয় ধর্ম[1] |
প্রকারভেদ | ইব্রাহিমীয় |
ধর্মগ্রন্থ | তানাখ |
ধর্মতত্ত্ব | একেশ্বরবাদী |
নেতা | ইহুদি নেতৃত্ব |
আন্দোলন | ইহুদি ধর্মীয় আন্দোলনসমূহ |
Associations | ইহুদি ধর্মীয় সংগঠনসমূহ |
অঞ্চল | ইসরায়েলের প্রধান ধর্ম এবং বিশ্বব্যাপী সংখ্যালঘু ধর্ম হিসেবে বিস্তৃত |
ভাষা | শাস্ত্রীয় ইব্রীয়[2] |
সদর দপ্তর | যিরূশালেম (সিয়োন) |
প্রবর্তক | অব্রাহাম[3][4] |
উৎপত্তি | খ্রীষ্টপূর্ব ২০শ–১৮শ শতাব্দী[3] যিহূদা মেসোপটেমিয়া[3] |
Separated from | ইয়াহ্ওয়েহ্বাদ |
সন্ন্যাস সংঘ | ইহুদি ধর্মীয় সম্প্রদায়সমূহ |
সদস্য | আনু. ১৪–১৫ মিলিয়ন[5] |
Ministers | রব্বিগণ |
প্রচলিত ইহুদি বোঝাপড়া মোতাবেক তোরাহ হল তানাখ নামে পরিচিত বৃহত্তর পাঠের অংশ। তানাখ ধর্মনিরপেক্ষ পণ্ডিতদের কাছে “হিব্রু বাইবেল” এবং খ্রীষ্টানদের কাছে “পুরাতন নিয়ম” নামে পরিচিত। তোরাহের সম্পূরক মৌখিক ঐতিহ্যকে মিদ্রাশ ও তালমুদের মতো পরবর্তী গ্রন্থ দ্বারা উপস্থাপন করা হয়। ইব্রীয় শব্দ তোরাহের অর্থ হতে পারে “শিক্ষা”, “আইন” বা “নির্দেশ”,[17] যদিও “তোরাহ” একটি সাধারণ শব্দ হিসেবেও ব্যবহৃত হতে পারে যা মোশির মূল পাঁচটি বইয়ের সম্প্রসারণ বা বিস্তার করে এমন যেকোনো ইহুদি পাঠকে বোঝায়। ইহুদি আধ্যাত্মিক ও ধর্মীয় ঐতিহ্যের মর্মস্থলের প্রতিনিধিত্বকারী তোরাহ হল একটি পরিভাষা ও শিক্ষাবলির একটি সমুচ্চয় যা অন্তত সত্তরটি এবং সম্ভাব্য অসীম দিক ও ব্যাখ্যা সমেত স্পষ্টত স্ব-অবস্থানে রয়েছে।[18] ইহুদিধর্মের গ্রন্থ, ঐতিহ্য এবং মূল্যবোধ খ্রীষ্টধর্ম ও ইসলাম-সহ পরবর্তী অব্রাহামীয় ধর্মগুলোকে দৃঢ়ভাবে প্রভাবিত করেছে।[19][20] হেলেনীয়বাদের মতো ইব্রীয়বাদও প্রারম্ভিক খ্রীষ্টধর্মের একটি মূল পটভৌমিক উপাদান হিসাবে এর প্রভাব বিস্তারের মাধ্যমে পশ্চিমা সভ্যতা গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।[21]
ইহুদিধর্মের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের ধর্মীয় আন্দোলন রয়েছে যাদের বেশিরভাগই রব্বিনীয় ইহুদিধর্ম থেকে উদ্ভূত হয়েছে,[22][23] যা মনে করে যে ঈশ্বর সীনয় পর্বতে মোশির কাছে তার আইন ও আদেশগুলো লিখিত এবং মৌখিক তোরাহ উভয় আকারে প্রকাশ করেছিলেন।[24] ঐতিহাসিকভাবে এই দাবির সমস্ত বা অংশকে বিভিন্ন গোষ্ঠীর দ্বারা চ্যালেঞ্জ করা হয়েছিল, যেমন: দ্বিতীয় মন্দির আমলে সদ্দূকী ও হেলেনীয় ইহুদিধর্ম;[22][25] প্রারম্ভিক ও বিলম্বিত মধ্যযুগে করাইট ইহুদি; এবং আধুনিক অনর্থোডক্স সম্প্রদায়ের বিভিন্ন অংশ।[26] ইহুদিধর্মের কিছু আধুনিক শাখা, যেমন: মানবতাবাদী ইহুদিধর্মকে ধর্মনিরপেক্ষ বা অনাস্তিক্যবাদী হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে।[27][28] বর্তমানে সবচেয়ে বড় ইহুদিধর্মীয় আন্দোলন হল অর্থোডক্স ইহুদিধর্ম (হারেদি ইহুদিধর্ম ও আধুনিক অর্থোডক্স ইহুদিধর্ম), রক্ষণশীল ইহুদিধর্ম এবং সংস্কার ইহুদিধর্ম। এই গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে পার্থক্যের প্রধান উৎস হল হালাখা (ইহুদি আইন), রব্বিনীয় ঐতিহ্যের কর্তৃত্ব ও ইস্রায়েল রাষ্ট্রের তাৎপর্য।[3][29][30] অর্থোডক্স ইহুদিধর্ম মনে করে যে তোরাহ ও হালাখা উৎপত্তিগতভাবে ঐশ্বরিক, চিরন্তন ও অপরিবর্তনীয় এবং তাদের কঠোরভাবে অনুসরণ করা উচিত। রক্ষণশীল ও সংস্কার ইহুদিধর্ম আরও উদার। রক্ষণশীল ইহুদিধর্ম সাধারণত সংস্কার ইহুদিধর্মের চেয়ে ইহুদি ধর্মের বাধ্যবাধকতাগুলোর আরও ঐতিহ্যবাদী ব্যাখ্যাকে প্রচার করে। একটি গতানুগতিক সংস্কার অবস্থান হল যে হালখাকে সাধারণ নির্দেশিকাগুলোর একটি সমুচ্চয় হিসাবে দেখা উচিত নয় বরং বিধিনিষেধ ও বাধ্যবাধকতার একটি সমুচ্চয় রূপে দেখা উচিত যা পালন করা সকল ইহুদির জন্য বাধ্যতামূলক।[31] ঐতিহাসিকভাবে বিশেষ আদালত হালখা বলবৎ করত; আজও এই আদালতগুলো বিদ্যমান, কিন্তু ইহুদিধর্মের অনুশীলন বেশিরভাগই স্বেচ্ছাধীন।[32] ধর্মতাত্ত্বিক ও আইনি বিষয়ে কর্তৃত্ব কোনো একক ব্যক্তি বা সংস্থার উপর ন্যস্ত নয়, বরং পবিত্র গ্রন্থাবলি এবং সেগুলোর ব্যাখ্যাকারী রব্বি ও পণ্ডিতদের উপর ন্যস্ত।
জন্মগত ইহুদি ও ধর্মান্তরিত ইহুদিসহ ইহুদিরা একটি নৃধর্মীয় গোষ্ঠী।[33] ২০১৯ সালের একটি পরিসংখ্যান অনুসারে বিশ্বে ইহুদি জনসংখ্যা ১৪.৭ মিলিয়ন বা মোট বৈশ্বিক জনসংখ্যার ০.২৫%।[34][35] ইহুদিদের প্রায় ৪৬.৯% ইসরায়েলে এবং ৩৮.৮% যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় বসবাস করে, বাকিদের অধিকাংশ বসবাস করে ইউরোপে এবং অন্যান্য সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর বসবাস লাতিন আমেরিকা, এশিয়া, আফ্রিকা ও অস্ট্রেলিয়া জুড়ে।[36] পৃথিবীব্যাপী ১৪.৫ থেকে ১৭.৪ মিলিয়ন অনুসারী নিয়ে[37] ইহুদিধর্ম বিশ্বের দশম বৃহত্তম ধর্ম।