তাওরাত
ইহুদীদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ / From Wikipedia, the free encyclopedia
তোরাহ (হিব্রু ভাষায়: תּוֹרָה, [toːˈraː]; আরবি: توراة, প্রতিবর্ণীকৃত: [taw.raːh]) হল হিব্রু বাইবেলের প্রথম পাঁচটি পুস্তকের সংকলন, যথা: আদিপুস্তক, যাত্রাপুস্তক, লেবীয় পুস্তক, গণনা পুস্তক ও দ্বিতীয় বিবরণ।[1] সেই অর্থে তোরাহ পঞ্চপুস্তক বা মোশির পাঁচটি বইয়ের মতো একই অর্থ বহন করে। তোরাহ শব্দের অর্থ ‘আইন’, ‘নির্দেশ’ বা ‘শিক্ষা’। ইহুদি ঐতিহ্যে এটি লিখিত তোরাহ (תורה שבכתב, Torah She’bichtav) নামেও পরিচিত। যদি স্তোত্রপাঠ্য উদ্দেশ্যে বোঝানো হয়, তবে এটি একটি পাকানো পুঁথির (সফর তোরাহ) রূপ নেয়। যদি মলাটবদ্ধ বই আকারে থাকে, তবে এটিকে হুমাশ বলা হয় এবং সাধারণত রব্বীয় ভাষ্যসহ (পেরুশিম) মুদ্রিত হয়।
![Thumb image](http://upload.wikimedia.org/wikipedia/commons/thumb/1/1b/Coffre_et_rouleau_de_Torah_ayant_appartenu_%C3%A0_Abraham_de_Camondo_chef_de_la_communaut%C3%A9_juive_de_Constantinople_1860_-_Mus%C3%A9e_d%27Art_et_d%27Histoire_du_Juda%C3%AFsme.jpg/320px-thumbnail.jpg)
যদিও মাঝে মাঝে তোরাহ শব্দটি সমগ্র হিব্রু বাইবেল বা তানাখের প্রতিশব্দ হিসাবেও ব্যবহৃত হতে পারে, সেই অর্থে এতে শুধু প্রথম পাঁচটি বই নয়, হিব্রু বাইবেলের ২৪টি পুস্তকই অন্তর্ভুক্ত থাকে। সবশেষে তোরাহ এমনকি ইহুদি শিক্ষা, সংস্কৃতি ও অনুশীলনের সামগ্রিকতাকে বোঝাতে পারে, হোক তা বাইবেলের পাঠ্য বা পরবর্তী রব্বীয় সাহিত্য থেকে উদ্ভূত। পরেরটি প্রায়শই মৌখিক তোরাহ নামে পরিচিত।[2]
এই সমস্ত অর্থের পাশাপাশি তোরাহ সাধারণ ইহুদি জাতির উদ্ভব নিয়ে গঠিত: ঈশ্বর কর্তৃক তাদেরকে আহ্বান, তাদের পরীক্ষা ও ক্লেশ এবং ঈশ্বরের সঙ্গে তাদের চুক্তি, যার অন্তর্গত রয়েছে নৈতিক ও ধর্মীয় বাধ্যবাধকতা ও নাগরিক আইনে (হালাখা) বিন্যস্ত মূর্ত জীবনপদ্ধতি অনুসরণ।[1] তওরাত (আরবি: توراة) হল তোরাহের আরবি নাম। ইসলামি পরিপ্রেক্ষিতে মুসলমানরা এটিকে একটি আসমানি কিতাব হিসাবে বিশ্বাস করে যা ঈশ্বরের তরফ থেকে বনি ইসরাঈলের নবীদের দেওয়া হয়েছিল এবং প্রায়শই এটি সমগ্র হিব্রু বাইবেলকে বোঝায়।[3]
রব্বীয় সাহিত্যে তোরাহ শব্দটি পঞ্চপুস্তক (תורה שבכתב, “তোরাহ যা লিখিত”) ও মৌখিক তোরাহ (תורה שבעל פה, “তোরাহ যা কথিত”) উভয়কেই বোঝায়। মৌখিক তোরাহ ব্যাখ্যা ও পরিবর্ধন সহযোগে গঠিত, যা রব্বীয় ঐতিহ্য অনুসারে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে হস্তান্তর করা হয়েছে এবং এখন তালমুদ ও মিদ্রাশে মূর্ত হয়েছে।[4] রব্বীয় ঐতিহ্য মোতাবেক তোরাহে প্রাপ্ত সমস্ত শিক্ষা (লিখিত ও মৌখিক) ঈশ্বর নবী মোশি বা মুসার মাধ্যমে ইস্রায়েলীয়দের প্রদান করেছিলেন—কিছু সিনাই পর্বতে আর বাকিগুলো সমাগম তাঁবুতে—এবং সমস্ত শিক্ষা মোশি লিপিবদ্ধ করেছিলেন, যার ফলস্বরূপ আজকের তোরাহ বিদ্যমান। মিদ্রাশ অনুসারে তোরাহ মহাবিশ্ব সৃষ্টির পূর্বে তৈরি করা হয়েছিল এবং সৃষ্টির নীলনকশা হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছিল।[5] বাইবেলের সংখ্যাগরিষ্ঠ পণ্ডিতরা বিশ্বাস করেন যে, লিখিত বইগুলো ছিল বাবিলীয় নির্বাসনের (আনু. খ্রীষ্টপূর্ব ৬ষ্ঠ শতাব্দী) একটি উৎপাদিত কাজ যার ভিত্তি ছিল পূর্বকার লিখিত উৎস ও মৌখিক ঐতিহ্য, এবং এটি নির্বাসন-পরবর্তীকালে (আনু. খ্রীষ্টপূর্ব ৫ম শতাব্দী) চূড়ান্ত সংশোধনের মধ্য দিয়ে সম্পন্ন হয়েছিল।[6][7][8]
ঐতিহ্যগতভাবে তোরাহের শব্দাবলি হিব্রু ভাষায় একজন লিপিকার (সোফের) কর্তৃক একটি গোটানো কাগজে লেখা হয়। তোরাহের একাংশ একটি জমায়েতের উপস্থিতিতে প্রতি তিন দিনে অন্তত একবার জনসমক্ষে পাঠ করা হয়।[9] তোরাহ প্রকাশ্যে পাঠ করা ইহুদিদের সম্প্রদায়জীবনের অন্যতম ভিত্তি।
তাওরাত হচ্ছে ইহুদীদের ঐশী ধর্মগ্রন্থ। এটি হিব্রু ভাষায় লিখিত। হিব্রুতে এর নাম তথা তোরাহ্। তোরাহ্ শব্দের অর্থ "আইন", "নিয়ম", বা "শিক্ষণীয় উপদেশ"। এটি ৫ টি পুস্তকের সমন্বয়ে গঠিত। তাই তাওরাতকে অনেকে মুসা নবীর "পঞ্চ পুস্তক" বলা হয়ে থাকে।[10] ইসলাম অনুযায়ী “তাওরাত” আল্লাহর রাসুল মুহাম্মদের পূর্ববর্তী নবী মুসার উপর অবতীর্ণ একটি আসমানি কিতাব যা ৬ রমজান তারিখে অবতীর্ণ হয়েছিল। ইহুদীদের মধ্যে প্রচলিত তাওরাত হযরত ঈসা এর ৪৫৪ বছর পূর্বে লিখিত হয়েছে এবং মুসা (আ.) এর ১১২৫ বছর পরে রচিত হয়েছে বলে বিভিন্ন বর্ণনায় এসেছে।[11]
তাওরাত ইহুদীদের ধর্মীয় রীতি-বিধির ভিত্তি ও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দলিল। তাওরাত মূলত তাদের ধর্মগ্রন্থ তানাখের প্রথম অংশকে বোঝালেও সার্বিকভাবে “তোরাহ” বলতে ইহুদিদের লিখিত ও মৌখিক শিক্ষা, যেমন মিশনাহ, তালমুদ, মিদ্রাশ, ইত্যাদি ধর্মীয় অনুশাসনমূলক গ্রন্থকে একসাথে ইঙ্গিত করে। সিনাগগে গিয়ে প্রার্থনার সময় তাওরাত থেকে পাঠ করা হয়ে থাকে।
ইহুদি, খ্রিস্টান ও মুসলিমরা এই তিন ধর্মাবলম্বীরা মনে করে “তাওরাত” হলো মুসা নবীর নিকটে প্রেরিত ঈশ্বরের সরাসরি ঐশী বাণী বা আসমানী কিতাব। খ্রিস্টান পণ্ডিতরা তোরাহকে হিব্রু বাইবেলের প্রথম পাঁচ গ্রন্থ পুরাতন বাইবেল হিসেবে উল্লেখ করে থাকেন। ইসলামী পণ্ডিতরা বিশ্বাস করেন মূল তাওরাত ও বর্তমানে লভ্য তাওরাত অভিন্ন নয়। বরং বর্তমান লভ্য তাওরাত বিকৃত।