আদম (আরবি: آدم) কুরআনে বর্ণিত পৃথিবীর প্রথম মানুষ, প্রথম পয়গম্বর বা নবী। আল্লাহ তার পাঁজর থেকে তার স্ত্রী হাওয়াকে সৃষ্টি করেছেন মানবজাতির মা হিসেবে। হিব্রু "আদম" শব্দের অর্থ মানুষ। বাইবেলপবিত্র কোরআন অনুসারে প্রথম মানব। ইহুদি, খ্রিষ্টানইসলাম ধর্মমতে, আদম (আ:) ও তাঁর স্ত্রী হাওয়া (আ:) থেকে সমগ্র মানবজাতির সৃষ্টি।[1]

দ্রুত তথ্য পরিচিতির কারণ, দাম্পত্য সঙ্গী ...

ʾআদম
آدم
আদম

ইসলামি চারুলিপিতে লেখা আদম এবং তাঁর উপর শান্তি বর্ষিত হোক
পরিচিতির কারণপ্রথম মানুষ
দাম্পত্য সঙ্গীহাওয়া (حواء)
সন্তানহাবিল, কাবিল, শীষ
(هابيل ,قابيل, شِيث )
বন্ধ

প্রথম মানব ও নবী

ইসলাম ধর্ম মোতাবেক আদম আল্লাহর সৃষ্ট প্রথম মানব। পবিত্র কুরআনের বর্ণনা থেকে জানা যায়, আল্লাহ তা'আলা যখন ফেরেশতাদেরকে জানালেন যে তিনি পৃথিবীতে তার প্রতিনিধি নিয়োগ দিতে যাচ্ছেন তখন ফেরেশতারা বলল,

“আপনি কি পৃথিবীতে এমন কাউকে সৃষ্টি করবেন যে অশান্তি সৃষ্টি করবে এবং রক্তপাত ঘটাবে? অথচ আমরাই তো আপনার প্রশংসা সহ পবিত্রতা বর্ণনা করছি!" তখন আল্লাহ বলেন “নিঃসন্দেহে আমি যা জানি, তোমরা তা জান না।” [2]

আল্লাহ তাকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেন। তারপর তার দেহে প্রাণ সঞ্চার করেন। হাওয়া কে সৃষ্টি করা হয় আদম এর পাঁজরের একটি হাড় থেকে। সৃষ্টির পর তাদের আবাস হয় বেহেশত বা জান্নাতে। মানুষ যেহেতু সকল সৃষ্টির সেরা তাই আল্লাহ ফেরেশতাকুলকে আদেশ করেন আদমকে সিজদা করার জন্য। ইবলিশ ব্যতীত সকল ফেরেশতা এই আদেশ প্রতিপালন করেন। কুরআনে বলা হয়েছে,

“আমি আদমকে পৃথিবীতে আমার প্রতিনিধি নিযুক্ত করিব।” (সূরা আল বাকারা, আয়াত: ৩০)[3]

কুরআনে আদমের নাম ১০টি সুরার ৫০ আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে। সূরা আল বাকারা,[4],সুরাআলে ইমরান[5], সূরা আল আরাফ, সূরা ইসরা, সূরা আল কাহফ এবং সূরা ত্বোয়া-হাতে তার নাম, গুনাবলী ও কার্যাবলী আলোচনা করা হয়েছে। সূরা আল হিজর ও সূরা ছোয়াদে শুধু গুণাবলী এবং সূরা আল ইমরান, সূরা আল মায়িদাহ এবং সূরা ইয়াসীনে আনুষঙ্গিক রুপে শুধু নামের উল্লেখ আছে।[6]

আবূ হূরায়রা থেকে বর্ণিত যে, হযরত মুহাম্মদ বলেন, আল্লাহ আদমকে সৃষ্টিকালে তার উচ্চতা ছিল ৬০ কিউবিট এবং মানুষ বেহেশতে প্রবেশকালে আদমের আকার লাভ করবে।[7]

কুরআনে উল্লেখ

কুরআনে আদমের নাম ১০টি সূরার ৫০ আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে। সূরা আল বাকারা,[4] সুরাআলে ইমরান[5], সূরা আল আরাফ, সূরা ইসরা, সূরা আল কাহফ এবং সূরা ত্বোয়া-হাতে তার নাম, গুনাবলী ও কার্যাবলী আলোচনা করা হয়েছে। সূরা আল হিজর ও সূরা ছোয়াদে শুধু গুণাবলী এবং সূরা আল ইমরান, সূরা আল মায়িদাহ এবং সূরা ইয়াসীনে আনুষঙ্গিক রুপে শুধু নামের উল্লেখ আছে।

আদম অর্থ

আদম শব্দটি আরবি না হিব্রু তা নিয়ে মতভেদ। হিব্রু হলে অর্থ পৃথিবী।[8] এ ভাষা আরেক অর্থ মানবজাতি। ফিনিশ ও সাবাই ভাষায় এরূপ অর্থপাওয়া যায়। কেননা সে পৃথিবীর মাটি থেকে সৃষ্টি। আরবি হলে অর্থ ভুত্বকের উপরিভাগ। কেননা সে ভূ-ত্বকের উপরিভাগের মাটি থেকে সৃষ্টি।[9] আবার কেহ বলেন, আদম অর্থ সংমিশ্রণ। কেননা আগুন, পানি, মাটি, বাতাস এর সংমিশ্রণে সে সৃষ্টি।

*আদম* শব্দটি মানুষ দের মাঝে যে ভাষার সাদৃশ্য হয় না কেন।।এই নাম বা শব্দটি আল্লাহর নিজ উচ্চারণি ভাষা থেকে।।আর *আদম* শব্দের সঠিক অর্থ =

আ-আমার,,দম-ফুকে দেয়া বা প্রান সঞ্চালনের বায়ু,,বা আল্লাহর নিজস্ব রুহ থেকে ফুকে দেয়া আদেশিত রুহ।।[6]

আদমের সৃষ্টি

আদমকে সৃষ্টির জন্য আল্লাহ পাক প্রথমে জিবরাইল ও মিকাইল নামক দু’ফেরেশতাকে পাঠালেন। তাঁরা দু’জনে মাটির দুহাই শুনে ফেরত গেল। এরপর আল্লাহ পাক আজরাইলকে পাঠালেন। তিনি মাটির দুহাই অগ্রাহ্য করে পৃথিবীর উপরি ভাগ থেকে বিভিন্ন রঙের মাটি সংগ্রহ করলেন (এ জন্য মানুষ নানা রঙের হয়) এবং আল্লাহর কাছে নিয়ে গেলেন। আল্লাহ পাক এ মাটি দিয়ে নিজ হাতে আদম আকৃতি দিলেন এবং তাতে রুহ ফুকায়ে দিলেন।[10] আদম পেলেন জীবন।[11] হাদিস শরীফে বর্ণিত আছে, "আল্লাহ তাঁর (আল্লাহর) নিজ অবয়বে আদম (আ.) তথা মানুষকে সৃষ্টি করেছেন।"

আদমের সিজদাহ ও শয়তানের অনুরাগ

আল্লাহ পাক আদমকে সৃষ্টি করার পর ফেরেশতাদেরকে বললেন,

“তোমরা আদমকে সিজদা করো। কেননা তোমাদের জ্ঞানের চেয়ে আদমের জ্ঞান অনেক বেশি।”[12]

আল্লাহর আদেশে সব ফেরেশতা আদমকে সেজদা করলো। কিন্তু শয়তান সেজদা করলো না।[13]।সে বলল, “আমি আগুনের তৈরী, আর আদম মাটির তৈরী।” [14] আল্লাহর আদেশ অমান্য করায় আল্লাহপাক শয়তানকে বেহেশত থেকে বিতারন করলেন। আর আদম ও তার স্ত্রী হাওয়াকে জান্নাতে রাখলেন।[15]

বেহেশত/স্বর্গ থেকে বিতাড়ন

সৃষ্টির পর আদম ও হাওয়ার অবস্থান ছিল বেহেশতে বা স্বর্গে। সেখানে তাদের জন্য নিষিদ্ধ বৃক্ষের ফল খাওয়া নিষিদ্ধ ছিল। শয়তানের প্ররোচনায় আদম এবং হাওয়া উভয়ই নিষিদ্ধ ফল খেয়ে ফেলেন।[16] এটি মানুষের আদিপাপ বলে পরিগণিত হয় (বাইবেলের ভাষায়)। এর শাস্তিস্বরূপ সৃষ্টিকর্তা (ইসলামে আল্লাহ) তাদের বেহেশত/ স্বর্গ থেকে বিতাড়ন করেন এবং শাস্তিস্বরূপ তাদের পৃথিবীতে পাঠিয়ে দেন। সুরা ত্ব-হা ও সুরা বাকারায় এ ঘটনার বর্ণনা আছে

কিন্তু শয়ত্বান তাদের পদস্খলন ঘটাল এবং তারা দু’জন যেখানে ছিল, তাদেরকে সেখান থেকে বের করে দিল; আমি বললাম, ‘নেমে যাও, তোমরা পরস্পর পরস্পরের শত্রু, দুনিয়াতে কিছু কালের জন্য তোমাদের বসবাস ও জীবিকা আছে’।

সুরা বাকারা - ২:৩৬

তারপর আদাম (আ.) তার প্রতিপালকের নিকট হতে কিছু বাণী প্রাপ্ত হলেন, অতঃপর আল্লাহ তার প্রতি ক্ষমা প্রদর্শন করলেন, তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। সুরা বাকারা - ২:৩৭

আমি বললাম, ‘তোমরা সকলেই এখান হতে নেমে যাও, পরে যখন আমার নিকট হতে তোমাদের কাছে সৎপথের নির্দেশ আসবে তখন যারা আমার সৎপথের অনুসরণ করবে তাদের কোন ভয় নেই এবং তারা দুঃখিতও হবে না’। সুরা বাকারা - ২:৩৮

আর যারা কুফরী করবে ও আমার নিদর্শনগুলোকে অস্বীকার করবে, তারাই জাহান্নামী; সেখানে তারা চিরকাল থাকবে। সুরা বাকারা - ২:৩৯[17]

তিনি বললেন, ‘তোমরা দু’জনে (আদাম ও ইবলীস) একই সঙ্গে নীচে নেমে যাও, তোমরা একে অপরের শত্রু। অতঃপর আমার নিকট থেকে তোমাদের কাছে সঠিক পথের নির্দেশ আসবে, তখন যে আমার পথ নির্দেশ অনুসরণ করবে সে পথভ্রষ্ট হবে না এবং কষ্টে পতিত হবে না। সুরা ত্ব-হা, আয়াত-১২৩ [18]

কাসাসুল আম্বিয়া অনুসারে আদম এবং হাওয়া পৃথিবীর ভিন্ন দুটি স্থানে অবতরণ করেন। [19][20]আদম অবতরণ করেন সিংহলের(শ্রীলঙ্কার)আদম পাহাড়ে আর হাওয়া অবতরণ করেন সৌদি আরবের হেজাজে। দীর্ঘদিন পর মক্কার আরাফাত নামক প্রান্তরে তাদের পুনর্মিলন হয়।[21]

পৃথিবীর জীবন

পৃথিবীতে আগমনের পর আদম ও হাওয়াকে আল্লাহর পক্ষ থেকে কাবাগৃহ নির্মাণের আদেশ প্রদান করা হয়। ক্বাবা নির্মিত হয়ে গেলে তাদেরকে তা তাওয়াফ করার আদেশ দেয়া হয়। বর্ণিত আছে আদম কর্তৃক নির্মিত ক্বাবা নূহের মহাপ্লাবন পর্যন্ত অক্ষত ছিল।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]

পরিবার

আদমের নিঃসঙ্গতা দূরীকরণের জন্য তার বাম পাঁজরের হাড় থেকে হাওয়াকে সৃষ্টি করা হয়। তার স্ত্রী ছিলেন হাওয়া। পৃথিবীতে আগমনের পর তাঁদের অনেকজন সন্তান-সন্ততি জন্মগ্রহণ করেছিল।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] আলোচিত সন্তানগণ হলেন: হাবিল, কাবিল, আকলিমা, লাইউদা [22]। তাদের সন্তান শিস পরবর্তীতে আল্লাহর একজন নবি (বাণীবাহক) হয়েছিলেন।

উপাধি

সাফিউল্লাহ

আদমকে সাফিউল্লাহ উপাধি দেওয়া হয় (আরবি: صفیالله; যার অর্থ হল: আল্লাহর পছন্দ)।[23]

সন্তান

কুরআনে শুধু বলা হয়েছে, “আদমের সন্তান থেকে।” সূরা মারইয়াম আয়াত: ৫৮। তার সংখ্যা হচ্ছে-হাওয়ার ২০ গর্ভে ৪০ জন বা ১২০ গর্ভে ২৪০ জন ছেলে-মেয়ে জন্ম গ্রহণ করে। মৃত্যুর সময় আদম সন্তান, নাতিপুতিসহ ৪০,০০০ জনকে দেখে যান।[24]

ইন্তেকাল ও কবর

তিনি নয় শত ত্রিশ বা নয় শত পঞ্চাশ বা একহাজার বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর মৃত্যুর দিনটি ছিল শুক্রবার।[25] তাঁর জানাজা পড়ান ছেলে শেথ। আতা খুরাসানী বলেন, তাঁর মৃত্যেতে গোটা বিশ্ব এক সপ্তাহ শোক পালন করে। ইবন ইসহাক বলেন, তাঁর মৃত্যুতেে এক সপ্তাহ চন্দ্র ও সূর্য গ্রহণ ছিল।[26] তাঁকে জাবালে কুবায়সে বা সিংহলের পাহাড়ে যেখানে প্রথম অবতরণ করেছিলেন বা বায়তুল মুকাদ্দাসে দাফন করা হয়।[27] খ্রিস্টপূর্ব প্রথম শতাব্দীর লেখা মোজেসের অ্যাপোক্যালিপ্স এ সলোমনের মন্দিরের(বায়তুল মুকাদ্দাসে) বেদী আদাম (আ.)র সমাধি হিসাবে উল্লিখিত।[28]

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র

Wikiwand in your browser!

Seamless Wikipedia browsing. On steroids.

Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.

Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.