Loading AI tools
উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
সিলেট গণভোট হল ব্রিটিশ ভারতের আসাম প্রদেশের সিলেট জেলায় অনুষ্ঠিত একটি গণভোট। গণভোটের উদ্দেশ্য ছিল "সিলেট আসাম-এর সাথে থাকবে ও স্বাধীনতা পরবর্তী ভারত অধিরাজ্যের সাথে যুক্ত হবে নাকি পূর্ব বঙ্গ-এর সাথে যুক্ত হয়ে নতুন সৃষ্ট পাকিস্তান অধিরাজ্যে যোগদান করবে" তা নির্ধারণ করা।[1] সিলেট গণভোট ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দের ৬ ও ৭ জুলাই অনুষ্ঠিত হয়;[1] ইতিপূর্বে ৩ জুলাই এ বিষয়ে সরকারি ঘোষণা দেয়া হয়েছিল। গণভোটে ভোটাররা পাকিস্তানি ইউনিয়নে যোগদানের পক্ষে ছিল; তবে, জেলার করিমগঞ্জ মহকুমা ভারতের আসাম রাজ্যের মধ্যেই রয়ে গেছে।[1]
সিলেট গণভোট | |||||||||||||||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
সিলেট কি পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত পূর্ববাংলায় যোগদান করবে? | |||||||||||||||||||
অবস্থান | সিলেট, আসাম, ব্রিটিশ রাজ | ||||||||||||||||||
তারিখ | ৬ জুলাই ১৯৪৭ | ||||||||||||||||||
| |||||||||||||||||||
|
১৭৬৫ সালে এই অঞ্চলে ব্রিটিশ আগমনের পূর্বে সিলেট সরকার মুঘল সাম্রাজ্যের বেঙ্গল সুবাহের অংশ ছিল কেননা অখন্ড অসম কখনো মুঘল সম্রাজ্যে দখল করতে পারেনি তাই আসামের এক মাএ হিসেবে সিলেট মুঘল সাম্রাজ্যের বেঙ্গল সুবার অন্তরভুক্ত হয় এবং প্রাথমিকভাবে কোম্পানি রাজ সিলেটকে তার বেঙ্গল প্রেসিডেন্সিতে অন্তর্ভুক্ত করে। ১০৯ বছর পর ১৮৭৪ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি আসামের সাথে ঐতিয্যেগত সাদৃশ্য ও বাণিজ্যিক উন্নয়নের সুবিধার্থে সিলেটকে অনিয়ন্ত্রিত প্রধান কমিশনার প্রদেশের (উত্তর-পূর্ব সীমান্ত) অংশ করা হয়। ১০ আগস্ট জেলার সংখ্যাগরিষ্ঠ জনসংখ্যা, যা হিন্দু ও মুসলমান উভয়ের সমন্বয়ে গঠিত, থেকে ভাইসরয় লর্ড নর্থব্রুকের কাছে একটি স্মারকলিপি জমা দেওয়া সত্ত্বেও এই স্থানান্তর কার্যকর করা হয়।[2] নর্থব্রুক যখন সিলেট সফরে আসেন তখন এই বিক্ষোভ কমে যায় যখন বাংলার কলকাতা থেকে শিক্ষা ও ন্যায়বিচার পরিচালিত হবে,[3] সেই সাথে সিলেটের হিন্দু জমিদাররা আসামের চা এস্টেটে কর্মসংস্থানের সুযোগ এবং তাদের পণ্যের বাজারে কর্মসংস্থানের সুযোগ উপলব্ধি করেন।[3]
১৯০৫ সালে বাংলার প্রথম বিভাজনের পর নতুন প্রদেশের সুরমা উপত্যকা ও পার্বত্য জেলা বিভাগের অংশ হিসেবে সিলেটকে সংক্ষেপে পূর্ব বাংলা ও আসামের সাথে পুনরায় যুক্ত করা হয়। যাইহোক, এটি স্বল্পস্থায়ী ছিল যখন সিলেট আবার ১৯১২ সালে বাংলা থেকে পৃথক হয়ে ওঠে, যখন আসামকে প্রধান কমিশনার প্রদেশে পুনর্গঠন করা হয়।[4] ১৯২০-এর দশকে সিলেট পিপলস অ্যাসোসিয়েশন মতো সংগঠনগুলো সিলেটকে বাংলায় পুনর্বহালের দাবিতে জনমত গড়ে তুলে।[5] যাইহোক, মুহাম্মদ বখত মজুমদার এবং সৈয়দ আব্দুল মজিদ সহ পুনর্মিলন লীগের নেতারা পরবর্তীতে সুরমা উপত্যকা মুসলিম সম্মেলনের সময় ১৯২৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে সিলেট ও কাছাড় বাংলায় স্থানান্তরের বিরোধিতা করেন; আব্দুল মজিদের আঞ্জুমান-ই-ইসলামিয়া এবং মুসলিম স্টুডেন্টস এসোসিয়েশন দ্বারা সমর্থিত।
১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের মাধ্যমে ভারত ও পাকিস্তান নামক দুটি রাষ্ট্র গঠনের সিদ্ধান্ত হয়। এসময় বর্তমান সিলেট বিভাগ আসামের অংশ ছিল। দেশ বিভাগের পর সিলেট ভারতে থাকবে নাকি পাকিস্তানে যোগ দেবে এই প্রশ্নে গণভোটের ব্যবস্থা হয়। নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার পর ভারত স্বাধীনতা আইনের ধারা ৩ মোতাবেক গণভোট সংক্রান্ত কার্যক্রমের বৈধতা দেওয়া হয়।[1]
ভারত বিভাজন সংগঠিত হয়েছিল ধর্মীয় সীমারেখা বরাবর। যেখানে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ এলাকা পাকিস্তান গঠন করে এবং হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ এলাকা ভারত গঠন করে।[6] আসামের মধ্যে সিলেট একটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ জেলা ছিল যা হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রদেশের মধ্যে ছিল। সিলেটের লোকজন সিলেটি নাগরী বা বাংলায় কথা বলত যেখানে এই প্রদেশের বাকি লোকজন আসামি ভাষায় কথা বলত। আসাম সরকার মনে করত সিলেট কে সরিয়ে দিলে এটা আরো বেশি স্বদেশী হবে এবং ফলে অধিক শক্তিশালী হবে। আসামের প্রধানমন্ত্রী গোপিনাথ বরদলই ১৯৪৬ সালে বলেন যে তার ইচ্ছা “সিলেটকে পূর্ব বঙ্গে হস্তান্তর করা”।[7]
নির্বাচন পরিচালনার জন্য এইচ. সি. স্টর্ককে রেফারেন্ডাম কমিশনার হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। নির্বাচনের জন্য ২৩৯টি কেন্দ্র ঠিক করা হয়। এতে মোট ৪৭৮ জন প্রিসাইডিং অফিসার ও ১৪৩৪ জন পোলিং অফিসার ছিলেন।[1]
গণভোটে সিলেটের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ পাকিস্তানের পক্ষে ভোট দেয়। এটি ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ১৮ই জুলাই ভারতীয় স্বাধীনতা আইনের ৩ নং অনুচ্ছেদের মাধ্যমে কার্যকর করা হয়েছিল। ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ১৭ই আগস্ট প্রকাশিত র্যাডক্লিফ লাইন সিলেটের কিছু এলাকা–প্রধানত করিমগঞ্জ মহকুমা–ভারতকে প্রদান করেছিল, যদিও করিমগঞ্জে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ জনসংখ্যা ছিল যারা পাকিস্তানকে বেছে নিয়েছিল, অপরদিকে মৌলভীবাজার মহকুমা (দক্ষিণ সিলেট) ভারতে যোগদানের পক্ষে মতামত দিয়েছিল কিন্তু সিলেটের অবশিষ্ট অংশের সঙ্গে মহকুমাটি পূর্ববঙ্গের সঙ্গে যুক্ত হয়।[1][8]
ভারত সিলেটের সম্পূর্ণ তিনটি থানা ও একটি থানার অর্ধেক অংশ পেয়েছিল।[9][10] তৎকালীন করিমগঞ্জ মহকুমার অংশ জকিগঞ্জও স্বাধীন ভারতের অংশ হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল এতে বাধা দেয়।[11] এভাবে, সিলেট জেলার অধিকাংশ অংশ পূর্ব পাকিস্তানে যোগ দেয়।[12]
গণভোটের ফলাফলকে অসমীয়া জনগণ ব্যাপকভাবে স্বাগত জানিয়েছিল।[13]
মহকুমা | ভোটার সংখ্যা | পাকিস্তানের পক্ষে ভোট | ভারতের পক্ষে ভোট |
---|---|---|---|
সিলেট উত্তর | ১,৪১,১৩১ | ৬৮,৩৮১ | ৩৮,৮৭১ |
করিমগঞ্জ | ১,০০,২৪৩ | ৪১,২৬২ | ৪০,৫৩৬ |
হবিগঞ্জ | ১,৩৫,৫২৬ | ৫৪,৫৪৩ | ৩৬,৯৫২ |
দক্ষিণ সিলেট (মৌলভীবাজার) | ৭৯,০২৪ | ৩১,৭১৮ | ৩৩,৪৭১ |
সুনামগঞ্জ | ৯০,৮৯১ | ৪৩,৭১৫ | ৩৪,২১১ |
মোট | ৫,৪৬,৮১৫ | ২,৩৯,৬১৯ | ১,৮৪,০৪১ |
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.