Remove ads
বাংলাদেশী সাহিত্যিক, রাজনীতিবিদ এবং সাংবাদিক উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
আবুল মনসুর আহমদ (বাংলা উচ্চারণ: [abul mɔnsuɾ aɦmɔd̪]; ৩রা সেপ্টেম্বর ১৮৯৮-১৮ই মার্চ ১৯৭৯) ছিলেন একজন বাংলাদেশি সাহিত্যিক, রাজনীতিবিদ, আইনজীবী ও সাংবাদিক।[১][২] তিনি ছিলেন একাধারে রাজনীতিবিদ, আইনজ্ঞ ও সাংবাদিক এবং বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিদ্রূপাত্মক রচয়িতা। ১৯৪৬-এ অবিভক্ত বাংলার কলকাতা থেকে প্রকাশিত ইত্তেহাদ-এর সম্পাদক এবং তৎকালীন কৃষক ও নবযুগ পত্রিকায়ও কাজ করেন তিনি। 'আমার দেখা রাজনীতির পঞ্চাশ বছর (১৯৬৯)' ও আত্মকথা (১৯৭৩) তার বিখ্যাত আত্মজীবনীমূলক রচনা।
আবুল মনসুর আহমদ | |
---|---|
জন্ম | ৩ সেপ্টেম্বর ১৮৯৮ |
মৃত্যু | ১৮ই মার্চ, ১৯৭৯ |
জাতীয়তা | বাংলাদেশী |
নাগরিকত্ব | ব্রিটিশ ভারতীয় (৩ সেপ্টেম্বর ১৮৯৮-১৪ আগস্ট ১৯৪৭)
পাকিস্তানি (১৪ আগস্ট ১৯৪৭-১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১) বাংলাদেশী (১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১-১৮ মার্চ ১৯৭৯) |
পেশা | সাহিত্যিক, রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক |
পরিচিতির কারণ | সাহিত্য, সাংবাদিকতা, রাজনীতি |
রাজনৈতিক দল | বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল |
দাম্পত্য সঙ্গী | আকিকুন্নেসা জিনত (২৬ ফেব্রুয়ারি ১৯২৬-) |
সন্তান | মনসুর আনাম মহবুব আনাম মতলুব আনাম মনজুর আনাম মাহফুজ আনাম |
পুরস্কার | স্বাধীনতা পুরস্কার (১৯৭৯) |
তিনি ময়মনসিংহ জেলার ত্রিশাল উপজেলার ধানীখোলা গ্রামে ১৮৯৮ সালের ৩রা সেপ্টেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম আব্দুর রহিম ফরাজী, মাতার নাম মীর জাহান খাতুন।
তিনি ১৯১৭ সালে ম্যাট্রিক পরীক্ষা পাস করেন এবং ১৯১৯ সালে উচ্চমাধ্যমিক পাস করেন। তিনি কলকাতার রিপন কলেজ থেকে আইন শাস্ত্রে স্নাতক পাস করেন। এই সময়টা ছিল খিলাফত আন্দোলন ও অসহযোগ আন্দোলনের। তিনি ৯ বছর ময়মনসিংহে আইন চর্চা করেন। তারপর কলকাতায় পেশাদার সাংবাদিক হিসাবে কাজ করেন। তিনি বিশিষ্ট আইনজীবীও ছিলেন।[২] গোঁড়া মোহাম্মদী পরিবারের সন্তান ছিলেন আবুল মনসুর আহমদ। লাল তুর্কি টুপি মাথায় মোহাম্মদীর পক্ষে তর্কেও যেতেন। ঘটনাক্রমে একদিন তিনি ময়মনসিংহ জিলা স্কুলের হেড মৌলভী আলী নেওয়াজ ও শিক্ষক মৌলভী শেখ আবদুল মজিদের সংস্পর্শে আসেন। এঁদের সাহচর্যে আবুল মনসুর প্রথম উদারতার পাঠ গ্রহণ করেন। তার এই উদারতার বহিঃপ্রকাশ ঘটে অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের প্রতি। ১৯১৮-১৯ সাল থেকে তিনি কবর পূজা এবং পীর পূজাসহ হিন্দু-মুসলিম সমাজের সকল কুসংস্কারের সরাসরি বিরোধিতা শুরু করেন (আত্মকথা, পৃ ১৮০-৮১)।[৩]
তিনি সাংবাদিক হিসেবে নানান সংবাদপত্রে কাজ করেছেন, যেমন:ইত্তেহাদ, সুলতান, মোহাম্মদী, নাভায়ু। ১৯৪৬-এ অবিভক্ত বাংলার কলকাতা থেকে প্রকাশিত ইত্তেহাদ-এর সম্পাদক এবং তৎকালীন কৃষক ও নবযুগ পত্রিকায়ও কাজ করেন তিনি।
আবুল মনসুর আহমদ চল্লিশ, পঞ্চাশ ও ষাটের দশকজুড়ে ধর্মনিরপেক্ষতার পক্ষে অবিরাম প্রচারণা চালিয়েছিলেন। ইত্তেহাদ-এর সম্পাদক হিসেবে তিনি ভাষা আন্দোলনে অবদান রাখেন।
আবুল মনসুর আহমেদ নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর কংগ্রেস আন্দোলনসমূহের সাথে যুক্ত ছিলেন। ১৯৩৭ সালের নির্বাচনের পরে তিনি বাংলার মুসলীম লীগের সাথে সম্পৃক্ত হন এবং ১৯৪০ সাল থেকে পাকিস্তানের আন্দোলনসমূহের সাথে যুক্ত হন। তিনি যুক্তফ্রন্ট এর নির্বাচনী কর্মসূচি ২১-দফার অন্যতম প্রণেতা ছিলেন। ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টের মনোনয়নে পূর্ববঙ্গ পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর ১৯৫৪ সালে তিনি ফজলুল হক মন্ত্রীসভায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী নিযুক্ত হন। আবুল মনসুর আহমেদ ১৯৫৫ সালে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে পূর্ববঙ্গ পরিষদের সদস্যদের ভোটে পাকিস্তান গণপরিষদ এর সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৫৬ সালে পূর্ব পাকিস্তানের যুক্তফ্রন্ট সরকারের শিক্ষামন্ত্রী এবং ১৯৫৬-৫৭ সালে বণিজ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৫৮ সালে আইয়ুব খান কর্তৃক সামরিক শাসন জারি হওয়ার পর তিনি কারারুদ্ধ হন এবং ১৯৬২ সালে মুক্তি পান। পূর্ববাংলার মঙ্গলের জন্য তিনি নানা পদক্ষেপ নিয়েছিলেন, বিশেষ করে শিল্পায়নে তিনি বিশেষ অবদান রাখেন। আওয়ামী মুসলিম লীগ (পরবর্তীতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ) এর প্রতিষ্ঠাতা-নেতা ছিলেন। ১৯৫৩-১৯৫৮ সাল পর্যন্ত তিনি আওয়ামী লীগ এর সহ-সভাপতি ছিলেন।
১৯৭৯ সালে তিনি দ্বিতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ময়মনসিংহ-৭ (ত্রিশাল) আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন।[৪]
আবুল মনসুর আহমেদ একজন শক্তিমান লেখক ছিলেন। তিনি ব্যঙ্গাত্মক রচনায় বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। আয়না ও ফুড কনফারেন্স গল্পগ্রন্থদ্বয়ে তিনি মুসলিম সমাজের গোঁড়ামি, ধর্মান্ধতা, ভণ্ডামিসহ নানা কুসংস্কারের ব্যঙ্গ করেছেন তীক্ষ্ণ দৃষ্টিভঙ্গির মাধ্যমে।[২]
সাহিত্য চর্চায় অসাধারণ অবদানের জন্য ১৯৭৯ সালে দেশের "সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার"[৬][৭][৮] হিসাবে পরিচিত "স্বাধীনতা পুরস্কার" প্রদান করা হয় তাকে।[৯] এছাড়াও তিনি "বাংলা একাডেমী পুরস্কার" (১৯৬০) ও নাসিরুদ্দীন স্বর্ণপদকে ভূষিত হয়েছেন।
আবুল মনসুর আহমেদ ১৯৭৯ সালের ১৮ মার্চ ঢাকায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.