Loading AI tools
ফ্রান্সের মোমের জাদুঘর উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
মাদাম তুসো জাদুঘর (ইংরেজি: Madame Tussauds; ইউকে: /təˈsɔːdz/, ইউএস: /tuːˈsoʊz/) যুক্তরাজ্যের লন্ডন নগরে অবস্থিত বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় ও বিখ্যাত ব্যক্তিত্বদের মোম দিয়ে তৈরী মূর্তির সংগ্রহশালা। মাদাম ম্যারি তুসো নামীয় এক ফরাসী মহিলা কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত সংগ্রহশালাই পরবর্তীকালে মাদাম তুসো জাদুঘর নামে বিশ্বব্যাপী পরিচিত।[1][2] পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের প্রধান প্রধান নগরগুলোয় এ জাদুঘরের শাখা রয়েছে। লন্ডনের পর্যটনশিল্প ও অর্থনীতিতে মাদাম তুসো জাদুঘর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। শুধুমাত্র মোম দিয়ে গঠিত জাদুঘরটিতে ঐতিহাসিকভাবে স্বীকৃত ও রাজকীয় ব্যক্তিত্ব, চলচ্চিত্র তারকা, তারকা খেলোয়াড় থেকে শুরু করে খ্যাতনামা খুনী ব্যক্তিদের মূর্তিও সযত্নে রক্ষিত আছে।
মেরী তুসো ফ্রান্সের স্ট্রাসবুর্গে জন্মগ্রহণ করেন। শৈশবে তার নাম ছিল আনা মারিয়া গ্রোসোল্জ (১৭৬১ - ১৮৫০)। তার মা সুইজারল্যান্ডের বার্নে ডাঃ ফিলিপ কার্টিয়াসের বাড়ীতে গৃহপরিচারিকা হিসেবে কাজ করতেন। ডাঃ ফিলিপ কার্টিয়াস ছিলেন একজন চিকিৎসক এবং মোমের ভাস্কর্য তৈরীতে দক্ষ ছিলেন। কার্টিয়াস তুসোকে মোমের ভাস্কর্য তৈরীর যাবতীয় কলা-কৌশল শেখান। ১৭৭৭ সালে তুসো তার প্রথম মোমের তৈরী ভাস্কর্যের জন্য ভলতেয়ারকে বেছে নেন এবং সফলকাম হন।[3] এছাড়াও, ঐ সময়ের অন্যান্য জনপ্রিয় ও বিখ্যাত ব্যক্তি হিসেবে তিনি জঁ জাক রুশো এবং বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিনের ভাস্কর্যও তৈরী করেন। ফরাসী বিপ্লবের সময়কালে তিনি অনেকগুলো ঘটনার চিত্রকর্ম মূর্তি হিসেবে তৈরী করেন। ঐ বিপ্লবের কথা স্মরণ করে তিনি দাবী করেন যে, প্রয়োজনে মৃতদেহের মুণ্ডু হন্যে হয়ে খোঁজ করতেন ও মুখোশ তৈরী করতেন। পরবর্তীতে মৃতদেহের মুখোশগুলো পতাকায় সম্মুখভাগে তুলে ধরাসহ শোভাযাত্রার সময় প্যারিসের রাস্তায় প্রদর্শনের জন্য ধারণ করে রাখা হয়েছিল।
১৭৯৪ সালে ডঃ ফিলিপ কার্টিয়াসের মৃত্যুর পর তুসো যাবতীয় মোমের মূর্তির মালিক হন এবং মূর্তিগুলো প্রদর্শনীর জন্য পরবর্তী ৩৩ বছর ইউরোপের সর্বত্র ভ্রমণ করে ব্যয় করেন। ১৭৯৫ সালে তিনি ফ্রাঙ্কোস তুসোকে বিয়ে করেন এবং নতুন নামধারণ করেন মাদাম তুসো। ১৮০২ সালে মূর্তি শিল্পের পথিকৃৎ পল ফিলিডোরের আমন্ত্রণে লন্ডনের লিশিয়াম থিয়েটারে তার মোম কার্যের প্রদর্শনী করেন। আর্থিকভাবে সচ্ছল ছিলেন না মাদাম তুসো। বরঞ্চ প্রদর্শনী থেকে লাভের অর্ধাংশ পল ফিলিডোর নিয়ে যান। তাই, নেপোলিয়নের যুদ্ধের পর তিনি ফ্রান্সে ফিরে আসতে পারেননি। গ্রেট ব্রিটেন এবং আয়ারল্যান্ডে তার মোমের সংগ্রহশালা নিয়ে ঘুরে বেড়াতে থাকেন।
১৮৩১ সাল থেকে মাদাম তুসো সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য বেকার স্ট্রিট বাজারের উপর তলা ভাড়া নেন যা বেকার স্ট্রিটের পশ্চিম পার্শ্বে এবং ডোরসেট স্ট্রিট ও কিং স্ট্রিটের মধ্যবর্তী এলাকায় অবস্থিত।[4] পরবর্তীতে ১৮৩৬ সালে এটি তুসো'র প্রথম স্থায়ী নিবাস হিসেবে পরিগণিত হয়েছিল।[5] ১৮৩৫ সালে লন্ডনের বেকার স্ট্রিটে অবস্থান করে একটি যাদুঘর প্রতিষ্ঠা করেন। তার প্রতিষ্ঠিত যাদুঘরের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ ছিল 'ভৌতিক কক্ষ'। এতে ফরাসী বিপ্লবে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিসহ নতুন কোন খুনী ও ঘাতকদের মূর্তি রয়েছে। নামটি পাঞ্চ ম্যাগাজিনে ব্যবহার করা হয় ১৮৪৫ সালে। কিন্তু এ নামকরণটি মেরী তার নিজস্ব সৃষ্ট বলে দাবী করেন এবং বিজ্ঞাপন হিসেবে ১৮৪৩ সালের প্রথমদিকে ব্যবহার করেছেন।[6]
২০০৮ সালের জুলাই মাসে মাদাম তুসো জাদুঘরের বার্লিন শাখাটি বিব্রতকর ও বিরূপ পরিবেশের মুখোমুখি হয়। ৪১ বছর বয়সী একজন জার্মান ব্যক্তি দু'জন নিরাপত্তা প্রহরীকে এড়িয়ে আডলফ হিটলারের মোমের ভাস্কর্যটির ব্যাপক ক্ষতি করে। ধারণা করা হয় যে, নাৎসীবাদী জার্মানীর স্বৈরশাসক হিটলারের মূর্তির সাথে খ্যাতনামা খেলোয়াড়, চলচ্চিত্র তারকা এবং অন্যান্য ঐতিহাসিক ব্যক্তিদের অবস্থানের ফলেই এটি ঘটেছে। পরবর্তীকালে অবশ্য ভাস্কর্যটির মেরামত করা হয়।[7]
আডলফ হিটলারের মূল ভাস্কর্যটি এপ্রিল, ১৯৩৩ সালে লন্ডনের মাদাম তুসো জাদুঘরে উন্মোচন করা হয়। এরপর থেকে এ ভাস্কর্যটিও ধারাবাহিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলে ১৯৩৬ সালে ভাস্কর্যটি পরিবর্তন ও মেরামত করতে বাধ্য হয় জাদুঘর কর্তৃপক্ষ। পরবর্তীতে নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে আরও সুদৃঢ় করা হয়।[8][9]
সেন্ট্রাল লন্ডনের উত্তরে, অলসপ প্লেস এবং মেরিলিবোন রোডের কোণায় মাদাম তুসো জাদুঘরের অবস্থান। জুবিলী, ব্যাকারলু, মেট্রোপলিটন, সার্কেল এন্ড হ্যামারস্মিথ এবং সিটি লাইনের নিকটবর্তী পাতাল স্টেশন থেকে যাওয়া যায়। সবুজ ও অর্ধ-গোলাকার ছাদ বা গম্বুজে মোড়ানো জাদুঘরটির পার্শ্বেই লন্ডন গ্রহগৃহ অবস্থিত।
সাধারণত রবিবার এবং বিদ্যালয়ের ছুটি ভিন্ন সপ্তাহের যে-কোন দিন স্থানীয় সময় সকাল ৯:৩০ থেকে বিকাল ৫:৩০ পর্যন্ত অফ-পিক আওয়ারে খোলা থাকে। পিক-আওয়ারে সকাল ৯:০০ থেকে বিকাল ৫:০০ পর্যন্ত জাদুঘরটির দরজা খোলা শুরু হয়। এ পর্যায়ে সপ্তাহের শেষ দিন, যুক্তরাজ্যের বিদ্যালয় অবকাশ, ব্যাংক ছুটি এবং জুলাই থেকে আগস্ট পর্যন্ত পুরো গ্রীষ্মকাল অন্তর্ভুক্ত। ২০০৮ সালে গ্রীষ্মকালে এর কার্যকাল ছিল সকাল ৯:০০ থেকে সন্ধ্যে ৭:০০ পর্যন্ত।
এই মোমের জাদুঘর পরিদর্শনের দূর্বার আকর্ষণ অনেকক্ষেত্রে নির্দিষ্ট সময়সীমার পূর্বেই বিভিন্ন কারণে শেষ হয়ে যেতে পারে। জাদুঘর পরিদর্শনের জন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান কর্তৃক কর্তৃপক্ষের সাথে চুক্তি সম্পাদনের ফলেই কেবল এমনটি হয়ে থাকে। এছাড়াও, দূর্যোগপূর্ণ আবহাওয়াজনিত কারণে বিশেষতঃ তুষারপাত, শৈত্য ঝড় কিংবা প্রচণ্ড বৃষ্টিপাতের দরুণও জাদুঘর বন্ধ থাকে।
বর্তমানে মাদাম তুসো'র মোমের জাদুঘর লন্ডনের পর্যটকদের অন্যতম জনপ্রিয় পীঠস্থান হয়ে দাঁড়িয়েছে। এছাড়াও দর্শকদের কাছে জাদুঘরটির বিপুল চাহিদার প্রেক্ষিতে এর কয়েকটি শাখা বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে রয়েছে। তন্মধ্যে - আমস্টারডাম, ব্যাংকক, হংকং (ভিক্টোরিয়া পীক), লাস ভেগাস, সাংহাই, বার্লিন, ওয়াশিংটন ডি.সি, নিউ ইয়র্ক সিটি এবং হলিউড অন্যতম।[10] বর্তমানে মার্লিন এন্টারটেইনমেন্ট গ্রুপ মাদাম তুসো জাদুঘরের স্বত্ত্বাধিকারী।
বিভাগ | বিবরণ |
ক্রীড়া তারকা | ডেভিড বেকহ্যাম, জেসিকা এনিস, লুইস হ্যামিলটন, মোহাম্মদ আলী,মেসি, শচীন টেন্ডুলকার, ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো |
রাজকীয় ব্যক্তিত্ব | প্রিন্স চার্লস, রাণী ২য় এলিজাবেথ, প্রিন্স উইলিয়াম, প্রিন্সেস ডায়ানা, প্রিন্স হ্যারী, ডাচেস অব কর্নওয়াল |
পপ তারকা | রিহানা, জাস্টিন বাইবার, চেরিল কোল, লেডি গাগা, এমি ওয়াইনহাউজ, ব্রিটনী স্পিয়ারস, জাস্টিন টিম্বারলেক, রোবি উইলিয়ামস্, জেনিফার লোপেজ, মাইকেল জ্যাকসন, কাইলি মিনোগু |
বিশ্ব নেতৃবৃন্দ | বারাক ওবামা, ডেভিড ক্যামেরুন, টনি ব্লেয়ার, নেলসন ম্যান্ডেলা, বরিস জনসন, মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী, নিকোলা সারকোজি, ভ্লাদিমির পুতিন, মার্গারেট থ্যাচার, জন এফ. কেনেডি |
হলিউড তারকা | ব্রুশ উইলিস, অ্যাঞ্জেলিনা জোলি, রবার্ট প্যাটিনসন, জিম ক্যারে, লিওনার্ডো ডিক্যাপ্রিও, নিকোলে কিডম্যান, টম ক্রুজ, জর্জ ক্লুনে, জনি ডিপ, হ্যারিসন ফোর্ড, জুলিয়া রবার্টস, জ্যাক এফরন, ড্যানিয়েল ক্রেইগ, জুডি ডেঞ্চ, চার্লি চ্যাপলিন, ড্যাম হেলেন মিরেন, ব্রাড পিট |
বলিউড তারকা | অমিতাভ বচ্চন, শাহরুখ খান, সালমান খান, ঋত্মিক রোশন, ঐশ্বরিয়া রাই, কারিনা কাপুর ও মাধুরী দীক্ষিত[11] |
সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব | আলবার্ট আইনস্টাইন, চার্লস ডিকেন্স, পাবলো পিকাসো, মাদাম তুসো |
ফ্যাশন | পোশ এণ্ড বেকস্, এলি ম্যাকফারসন, জিন পল গলতিয়ার, কেট মস |
কাল্পনিক চরিত্র | ক্যাপ্টেন আমেরিকা, ক্যাপ্টেন জ্যাক স্প্যারো, শার্লক হোমস, ওলভারিন, দ্য হাক, নিক ফুরি, স্পাইডার ম্যান, দি ইনভাইসিবল ওম্যান, আইরন ম্যান |
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.