Remove ads

মারি তুসো (ফরাসি: Marie Tussaud) (১ ডিসেম্বর ১৭৬১ - ১৬ এপ্রিল ১৮৫০) মোমের ভাস্কর্য শিল্পী হিসেবে পরিচিত। তার পুরো নাম আনা মারিয়া গ্রোশোল্জ। বিয়ের পর তার নতুন নাম হয় 'মাদাম তুসো'। তিনি মাদাম তুসো জাদুঘরের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে বিশ্ব দরবারে অত্যন্ত সুপরিচিত ব্যক্তিত্ব। মোমের জাদুঘরটি যুক্তরাজ্যের লন্ডনে অবস্থিত।

দ্রুত তথ্য মারি তুসো, জন্ম ...
মারি তুসো
Thumb
ফ্রান্স থেকে ইংল্যান্ডে যাবার পথে ৪২ বছর বয়সে মাদাম তুসো। জন থিওডর তুসো কর্তৃক প্রতিকৃতি অঙ্কন (১৯২১)
জন্ম
আনা মারিয়া গ্রোশোল্জ

১লা ডিসেম্বর, ১৭৬১
স্ত্রাসবুর, ফ্রান্স
মৃত্যু১৭ই এপ্রিল, ১৮৫০
লন্ডন, ইংল্যান্ড
পরিচিতির কারণভাস্কর্য
উল্লেখযোগ্য কর্ম
মাদাম তুসো জাদুঘর
বন্ধ

শৈশব

জোসেফ গ্রোশোল্জ ছিলেন তার পিতা। তিনি 'সাত বছরের যুদ্ধে' শহীদ হবার ঠিক দু'মাস পূর্বে ম্যারি তুসো স্ট্রসবোর্গে জন্মগ্রহণ করেন। অতঃপর তার মা অ্যানি-ম্যারি ওয়াল্দার সুইজারল্যান্ডের বার্নে চলে যান।[১] সেখানে তিনি ডাক্তার ফিলিপ কার্টিসের বাড়ীতে গৃহপরিচারিকার কাজ নেন। সেখানে তারা উভয়েই সুইস নাগরিকত্ব গ্রহণ করেন। কার্টিস ছিলেন একজন চিকিৎসক এবং মোমের ভাস্কর্যে সিদ্ধহস্ত ছিলেন। ভাস্কর্যগুলোকে তিনি শব ব্যবচ্ছেদ বিদ্যায় ব্যবহার করতেন। পরবর্তীতে তিনি এগুলোর প্রতিকৃতি অঙ্কন করতেন। তুসো তাকে চাচা বা কাকা হিসেবে সম্বোধন করতেন।

Remove ads

প্যারিস গমন

১৭৬৫ সালে ডাঃ ফিলিপ কার্টিস প্যারিসে চলে যান এবং 'ক্যাবিনেট ডি সিরে' বা মোমের প্রদর্শনীর লক্ষ্যে কাজ করতে থাকেন। ঐ বছর তিনি ফ্রান্সের সম্রাট পঞ্চদশ লুইসের শেষ উপ-পত্নী মাদাম দু ব্যারী'র মোমের ভাস্কর্য তৈরী করেন। এ ভাস্কর্যটিই প্রাচীনতম ভাস্কর্য হিসেবে অদ্যাবধি প্রদর্শিত হচ্ছে বর্তমান মাদাম তুসো যাদুঘরে। ১৭৬৭ সালে তুসো ও তাঁর মা সেখানে কার্টিসের সাথে যোগ দেন। ১৭৭০ সালে কার্টিস মোম কর্মের উপর প্রথম প্রদর্শনী করেন ও বিপুলসংখ্যক দর্শকের মনোযোগ আকর্ষণে সক্ষম হন। ১৭৭৬ সালে প্যাল্যাইজ রয়েলে প্রদর্শনীটি স্থানান্তরিত হয়। ১৭৮২ সালে কার্টিস ২য় প্রদর্শনী করেন ক্যাভার্নে ডেস গ্রান্ডস ভোলিউসে যা পরবর্তীতে বোলেভার্ড ডু টেম্পলের 'ভৌতিক কক্ষ' হিসেবে পরিচিত।

Remove ads

ভাস্কর্য শিক্ষা

ডাঃ ফিলিপ কার্টিস, ম্যারি তুসোকে মোম দিয়ে ভাস্কর্য শিল্পকলায় পারদর্শী করে তোলেন। ম্যারি তুসোও তার নিজস্ব মেধা ও প্রতিভার সংমিশ্রণে ভাস্কর্য তৈরীতে মনোনিবেশ ঘটান। ১৭৭৮ সালে তিনি তার প্রথম মোমের প্রতিকৃতি হিসেবে জঁ জাক রুশোর ভাস্কর্য তৈরী করেন। পরবর্তীতে তিনি আরো বিখ্যাত ব্যক্তিবর্গের মোমের ভাস্কর্য তৈরী করে নিজস্ব দক্ষতা ও অপূর্ব সৃষ্টিশৈলীর পরিচয় দেন। তন্মধ্যে - ভলতেয়ার এবং বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিন অন্যতম।

ভার্সেইলসে বসবাস

১৭৮০ থেকে ১৭৮৯ সালের মধ্যে সংঘটিত বিপ্লব চলাকালের মধ্যে তিনি সম্রাট চতুর্দশ লুইয়ের বোন এলিজাবেথকে মানসিকভাবে গড়ে তোলার জন্য নিয়োজিত ছিলেন বলে দাবী করেছেন। এছাড়াও তিনি দাবী করেন যে, তার এ গুণের ফলে তিনি স্বতঃস্ফূর্তভাবে রাজকুমারী এবং তার ভাইসহ রাজ পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের মধ্যে যোগাযোগের উত্তম সেতুবন্ধন গড়ে তোলেন। এর ফলে রাজ পরিবারের সদস্যরা তার কাজ-কর্মের প্রতি খুবই সন্তুষ্ট হন। পরবর্তীকালে তাদের আমন্ত্রণের ফলেই ম্যারি তুসো ভার্সেইলসে বসবাস করতে শুরু করেন।

ফরাসী বিপ্লব

প্যারিসে মারি তুসো ফরাসী বিপ্লবের সাথে যুক্ত হন। সেখানে তিনি অনেক বিখ্যাত ব্যক্তিত্বদের সাথে সাক্ষাৎ করেন। তাদের মধ্যে নেপোলিয়ন বোনাপার্ট এবং রোবসপিয়ের অন্যতম। বাস্তিল আক্রমণের দুই দিন পূর্বে ১২ জুলাই, ১৭৮৯ ইং তারিখে কুতিয়া কর্তৃক জ্যাক নেকার এবং ডাক ডি'অরলিয়েন্স লুইস ফিলিপ জোসেফের মোমের আবক্ষ মূর্তি নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল বের হয়।

তুসো, জোসেফিন ডি বিউহারনাইসের সাথে 'সন্ত্রাসের রাজত্ব' চলাকালে গ্রেফতার হন। তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার জন্য গিলোটিন প্রস্তুত করা হয়। কিন্তু ডাঃ কুতিয়া এবং তার পরিবারের প্রতি কোলো দ্য’হাবোয়া’র গভীর সহমর্মিতা ছিল। তার আন্তরিক সহায়তার ফলেই মাদাম তুসো নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা পান ও মুক্তি লাভ করেন।[১]

তুসো পরবর্তীতে গিলোটিনে নির্মমভাবে নিহতদের মুখোশ নির্মাণে নিয়োজিত ছিলেন। ফরাসী বিপ্লবে নিহত - ষোড়শ লুই, মারি অঁতোয়ানেত, জঁ-পল মারাত এবং রোবসপিয়ের-এর ন্যায় ব্যক্তিদের মুখোশ তৈরী করেন। তার তৈরীকৃত মুখোশগুলো বিপ্লবকালীন সময়ে প্যারিসের রাস্তায় পতাকা এবং শোভাযাত্রায় তুলে ধরা হতো।

Remove ads

ব্যক্তিগত জীবন

১৭৯৫ সালে ফ্রঁসোয়া তুসোকে বিয়ে করেন মারি তুসো। এরপরই তার নতুন নামকরণ হয় মাদাম তুসো। তাদের সংসারে জোসেফ এবং ফ্রাঁসোয়া নামে দু'টি সন্তান রয়েছে।

ইংল্যান্ড গমন

১৭৯৪ সালে ডাঃ ফিলিপ কার্টিয়াস মৃত্যুর পূর্বে তিনি তার যাবতীয় মোমের মূর্তিগুলো তুসোকে দান করে যান। মারি তুসো ঐ মূর্তিগুলোর মালিক হয়ে প্রদর্শনীর জন্য পরবর্তী ৩৩ বছর ইউরোপের সর্বত্র ভ্রমণ করেন। চার বছর বয়সী সন্তান জোসেফকে সাথে নিয়ে ১৮০২ সালে মূর্তি শিল্পের অগ্রদূত পল ফিলিডোরের আমন্ত্রণে লন্ডনে যান। সেখানে লিশিয়াম থিয়েটারে তার মোম কার্যের প্রদর্শনী হয়। আর্থিকভাবে সচ্ছল ছিলেন না মাদাম তুসো। বরঞ্চ প্রদর্শনী থেকে লাভের অর্ধাংশ পল ফিলিডোর নিয়ে যান।

ঐ সময়েই নেপোলিয়নের যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। চরম আর্থিক সঙ্কটে নিপতিত হয়ে তুসো আর ফ্রান্সে ফিরে যেতে পারেননি। গ্রেট ব্রিটেন এবং আয়ারল্যান্ডে মোমের সংগ্রহশালা নিয়ে ঘুরে বেড়াতে শুরু করেন। পরবর্তীকালে ১৮২১ থেকে ১৮২২ সালের মধ্যে তার বড় ছেলে ফ্রাঁসোয়া তাদের সাথে যোগ দেন।

Remove ads

জাদুঘর প্রতিষ্ঠা

Thumb
লন্ডনে মাদাম তুসো'র নিজের মোমের ভাস্কর্য


১৮৩১ সাল থেকে মাদাম তুসো সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য বেকার স্ট্রিট বাজার ভবনের উপর তলা ভাড়া নেন যা বেকার স্ট্রিটের পশ্চিম পার্শ্বে এবং ডোরসেট স্ট্রিট ও কিং স্ট্রিটের মধ্যবর্তী এলাকায় অবস্থিত।[২] পরবর্তীতে ১৮৩৬ সালে এটি তুসো'র প্রথম স্থায়ী নিবাস হিসেবে পরিগণিত হয়েছিল।[৩] ১৮৩৫ সালে লন্ডনের বেকার স্ট্রিটে অবস্থান করে একটি যাদুঘর প্রতিষ্ঠা করেন যা 'মাদাম তুসো জাদুঘর' নামে বিশ্বব্যাপী পরিচিত। তার প্রতিষ্ঠিত যাদুঘরের অন্যত্ম প্রধান আকর্ষণ ছিল 'ভৌতিক কক্ষ'। এতে ফরাসী বিপ্লবে নিহত ব্যক্তিসহ খুনী ও ঘাতকদের মূর্তি রয়েছে। ভৌতিক কক্ষ বা হরর চেম্বার নামটি পাঞ্চ ম্যাগাজিনে ব্যবহার করা হয় ১৮৪৫ সালে। কিন্তু এ নামকরণটি মেরী তার নিজস্ব সৃষ্ট বলে দাবী করেন এবং বিজ্ঞাপন হিসেবে ১৮৪৩ সালের প্রথমদিকে ব্যবহার করেছেন।[৪]

প্রদর্শনী

১৮৩৫ সালে মারি তুসো বেকার স্ট্রিটে অবস্থিত 'বেকার স্ট্রিট বাজার' ভবনের উপর তলায় তার প্রথম মোমের ভাস্কর্য প্রদর্শনী করেন।[৫] ১৮৩৮ সালে তিনি আত্মজীবনী লিখেন। ১৮৪২ সালে তৈরী করেন নিজের মোমের ভাস্কর্য যা 'মাদাম তুসো জাদুঘরের' সম্মুখভাগে রক্ষিত আছে। এছাড়াও, মৃত্যুর পূর্বে তিনি বেশ কিছু নিজস্ব মোমের ভাস্কর্য তৈরী করেছিলেন।

কীর্তিগাঁথা

বর্তমানে মাদাম তুসো'র মোমের জাদুঘর লন্ডন গমনকারী পর্যটকদের অন্যতম জনপ্রিয় পীঠস্থান হয়ে দাঁড়িয়েছে। এছাড়াও এই মোমের জাদুঘরটির কয়েকটি শাখা বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে রয়েছে। তন্মধ্যে - আমস্টারডাম, ব্যাংকক, হংকং (ভিক্টোরিয়া পীক), লাস ভেগাস, সাংহাই, বার্লিন, ওয়াশিংটন ডি.সি, নিউ ইয়র্ক সিটি এবং হলিউড অন্যতম। মার্লিন এন্টারটেইনমেন্ট গ্রুপ মাদাম তুসো জাদুঘরের বর্তমান স্বত্ত্বাধিকারী।

মৃত্যু

মাদাম তুসো ঘুমন্ত অবস্থায় ১৬ এপ্রিল, ১৮৫০ তারিখে লন্ডনে মারা যান। তখন তার বয়স হয়েছিল ৮৮ বছর। মাদাম মারি তুসোর স্মারক চিহ্ন হিসেবে সেন্ট ম্যারি রোমান ক্যাথোলিক চার্চ, ক্যাডোগান স্ট্রিট, লন্ডনের প্রধান অংশের দক্ষিণ দিকে সংরক্ষিত আছে।

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র

বহিঃসংযোগ

Wikiwand in your browser!

Seamless Wikipedia browsing. On steroids.

Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.

Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.

Remove ads