Loading AI tools
হিন্দুধর্মের বৈদিক দেবী উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
পৃথ্বী (সংস্কৃত: पृथ्वी) বা পৃথিবী (সংস্কৃত: पृथिवी) বা পৃথ্বী মাতা বা পৃথ্বী দেবী হলো পৃথিবীর জন্য সংস্কৃত শব্দ, সেইসাথে হিন্দুধর্ম ও বৌদ্ধধর্মের কিছু শাখায় দেবীর নাম। দেবী হিসেবে তিনি ভূমি, ধাত্রী, ধরিত্রী ইত্যাদি নামেও পরিচিত; এবং বেদে, তিনি দ্যৌষপিতৃ এর সহধর্মিণী; কিন্তু, পুরাণে, তিনি ভূমি নামে পরিচিত, বরাহের সহধর্মিণী।
পৃথ্বী মাতা (পৃথিবীর মাতা) হিসেবে তিনি দিয়াউস পিতা (আকাশের পিতা) এর পরিপূরক।[1] ঋগ্বেদে প্রাথমিকভাবে পৃথিবী এবং আকাশকে দৈবপৃথিবী[2] নামে দ্বৈত সত্তা হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। তিনি গোমাতার সাথে একীভূত। পৃথু নামক ভগবান বিষ্ণুর একজন অবতার সকলের খাদ্যের ব্যবস্থা করার জন্য পৃথিবী দেবীর গো রূপের দুধ দোহন করেছিলেন।
শক্তিশালী হিন্দু ঐতিহাসিক প্রভাব থাকা সত্ত্বেও, এই নামটি ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়ার জাতীয় ব্যক্তি রূপের জন্যও প্রায়ই ব্যবহৃত হয়, যেখানে দেশকে অভ্যন্তরীণভাবে ইবু পার্তিবী (ইন্দোনেশীয় ও মালয় ভাষা) বলা হয়।
বিভিন্ন বৌদ্ধ ধর্মগ্রন্থে এবং বৌদ্ধ ভিক্ষুদের চাক্ষুষ উপস্থাপনায়, পৃথিবী দেবীকে গৌতম বুদ্ধের রক্ষাকর্ত্রী হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। এছাড়াও গৌতম বুদ্ধকে জ্ঞান ও প্রজ্ঞার মাধ্যমে আলোকিত করার সাক্ষী হিসেবে তাঁকে বিবেচনা কিরা হয়েছে। পালি ত্রিপিটক অনুসারে বৌদ্ধ ধর্মের প্রাথমিক যুগে পৃথিবী দেবীর আবির্ভাব হয়েছিল। ত্রিপিটক অনুসারে, তিনি তখন সব ধরনের জড়তা ও প্রলোভনের প্রতীক মরা-কে তাড়িয়ে দেন। এর মাধ্যমে তিনি গৌতম বুদ্ধের জ্ঞান অর্জনের যোগ্যতার প্রমাণ দেন। বুদ্ধকে প্রায়ই ভূমিস্পর্শ বা পৃথিবী স্পর্শ মূদ্রায় চিত্রিত করা হয়েছে। একে পৃথিবী দেবীর প্রতি গৌতম বুদ্ধের প্রতীকী প্রার্থনা হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
পৃথিবী সুক্ত বা ভূমি সুক্ত হচ্ছে অথর্ববেদের ১২.১ সুক্ত। সুক্তটি পৃথিবী দেবীর বন্দনায় গাওয়া হয়।
পৃথিবী দেবীর বিভিন্ন উপাধি রয়েছে। বিভিন্ন সময়ে তাঁকে বিভিন্ন উপাধিতে সম্বোধন করা হয়:
বিভাগ | সংস্কৃত লিপ্যন্তর | বাংলা অর্থ |
---|---|---|
প্রদানকারী | ভূমি | মাটি |
ধাত্রি | দাইমা | |
ধরিত্রী | প্রতিপালক | |
জনিত্র | জন্মস্থান | |
মেদিনী | প্রতিপালক | |
প্রশ্নি | উদ্ভিদের মাতা | |
বনস্পতিনাম গ্রভীর ওষধিনাম | বনজ ও ওষধি বৃক্ষ ও গুল্মের গর্ত | |
বিশ্বধায়া | সর্ব পুষ্টিকর | |
বিশ্বগর্ভা | পৃথিবীর গর্ভ | |
বিশ্বমাংশু | সবকিছুর প্রস্তুতকারী | |
বিশ্বস্বম | সবকিছুর উৎস | |
প্রতিপালক | ধর | সমর্থক অথবা পৃষ্ঠপোষক |
দ্রধ | অধ্যবসায়ী | |
কাসামা | রোগী | |
স্থাবর | স্থিতিশীল | |
বিশধাবা | সবকিছুর সংরক্ষক | |
বিশ্বধরিণী | সর্ব সমর্থনকারী | |
বিশ্বমহারা | সবকিছুর জন্মদাত্রী | |
সমৃদ্ধকারী | রত্নগর্ভা | রত্নেরর ভান্ডার |
রত্নাবতী | রত্নে পরিপূর্ণ | |
বসুন্ধরা | ধন-সম্পদ বহনকারী |
হিন্দু পুরাণ অনুসারে সূর্যবংশের বেণের পুত্র পৃথুকে জগতের প্রথম রাজা বলা হয়। তাকে পৃথিবী দেবীর পালকও বলা হয়। তার আগে কাওকেই রাজা বলা হতো না। কারণ রাজা শব্দের অর্থ হল 'রঞ্জন' অর্থাৎ যে সবার মনোরঞ্জন করতে বা সবাইকে খুশি করতে পারে। আর তিনিই সর্বপ্রথম প্রকৃতপক্ষে মানুষের মনোরঞ্জন করে রাজা উপাধি পেয়েছিলেন।
পৃথিবী সৃষ্টির প্রথমদিকে এর মাটি ছিল অনুর্বর ও খটখটে, মাটি ফেটে চৌচির হয়ে ছিল। মানুষ বনে-জঙ্গলে, পর্বতের গুহায় বাস করত, পৃথিবীর অনুর্বরতার কারণে মানুষ চাষবাস করতে পারতে না, তারা বনের ফল খেয়ে বেঁচে থাকত। তিনি তাদের ঘর-বাড়ি বানাতে শিখান, রাস্তাঘাট তৈরি করে দেন।
প্রজারা তখন রাজা পৃথুকে বলল যে, পৃথিবী সব শস্যখেয়ে ফেলায় তারা শস্য ফলাতে পারছে না। তখন তিনি রেগে গিয়ে পৃথিবী দেবীকে শাস্তি দিতে তীর-ধনুক নিয়ে তারা করলেন। পৃথিবী দেবী তখন গাভীরূপে লেজ উঁচু করে ছুটতে লাগলেন।আকাশ-পাতাল-ব্রহ্মলোক কোথাও তিনি পালাতে পারেননি। পৃথু পৃথিবী দেবীকে তখন শাস্তি দিতে চান। কিন্তু অনেক অনুনয়-বিনয় করায় পৃথিবীকে উর্বর করে দেয়ার শর্তে তিনি তাকে ক্ষমা করেন।
তখন পৃথিবী দেবী তাকে বলেন যে তাকে শাস্তি দিলে কোন লাভ হবে না। কারণ, সব শস্য তাঁর পেটে হজম হয়ে দুধ হয়ে গিয়েছে। একটি বাছুরের ব্যবস্থা করে পৃথিবীর উঁচু নিচু জায়গা গুলোকে সমতল করলে দুধ দোহন করা যাবে।
তারপর পৃথু তাঁর তীর-ধনুক দিয়ে পৃথিবীকে সমতল করেন, এবং স্বয়ং স্বয়ম্ভুব মনু বাছুর রূপে আসেন। তখন সেই গাভীরূপী পৃথিবী দেবীকে দোহন করে সমস্ত দুধ পৃথিবীর মাটিতে ছড়িয়ে দেয়া হয়।
ক্রমে ক্রমে দেব, দানব, যক্ষ, রাক্ষস অর্থাৎ সৃষ্টিজগতের সকলেই নিজেদের বাছুর এনে সেই গাভী দোহন করে দুধ নেয়। তারপরেও সেই দুধ শেষ হয়নি। মাটিতে ছড়িয়ে দেয়া সেই দুধের কারণেই এখনো পৃথিবীতে ফসল ফলানো যায়।
পৃথু তাকে শাস্তি না দিয়ে রক্ষা করেছিলেন, তাই পৃথুকে পৃথিবীর পালক তুল্য মনে করা হয়। সেজন্যই পৃথিবীকে পৃথুর নামে নাম হয়েছে ‘পৃথিবী’ বা ‘পৃথ্বী। আবার পৃথিবী শব্দের আরেকটি অর্থ খুব বড়। তাই পৃথিবীর আকার খুব বড় হওয়ার কারণেও এর এই নামকরণ করা হয়।[3]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.