Loading AI tools
হিন্দু দেবী, শিবের পত্নী উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
পার্বতী (সংস্কৃত: पार्वती) হলেন একজন হিন্দু দেবী। তিনি শিবের স্ত্রী এবং আদি পরাশক্তি ,অন্যান্য দেবীরা তার অংশ থেকে জাত, বা তার অবতার, তাঁকে বিভিন্ন রূপ পুজো করা হয় তাই তাঁকে হিন্দু ধর্মে সর্বোচ্চ দেবী বলা হয় । পার্বতী আদি পরাশক্তি সর্বোচ্চ দেবী মহামায়া। তিনি গৌরী বা উমা নামেও পরিচিত। পার্বতী শিবের দ্বিতীয়া স্ত্রী। তবে তিনি শিবের প্রথমা স্ত্রী সতী দাক্ষায়ণীরই অবতার। তিনি গণেশ ও কার্তিকের মা। কোনো কোনো সম্প্রদায়ে তাঁকে বিষ্ণুর ভগিনী মনে করা হয়। পার্বতী গিরিরাজ, পর্বতের দেবতা হিমালয় (হিমবান, হিমবন্ত) ও তার স্ত্রী দেবী মেনকার কন্যা। দেবীগঙ্গা হলেন পার্বতীর জ্যেষ্ঠ ভগিনী । এবং মৈনাক হলেন পার্বতীর জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা। শিবের পাশে তার যে মূর্তি দেখা যায়, সেগুলি দ্বিভুজা। তবে তার একক মূর্তি চতুর্ভুজা, অষ্টভুজা বা দশভুজা, মহিষমর্দিনী সহস্রভুজা হয়; এবং এই মূর্তিগুলিতে তাঁকে সিংহবাহিনী রূপে দেখানো হয়। সাধারণত তাঁকে দয়াময়ী ও উগ্র দুই রূপেই দেখা হয়। তার দয়াময়ী মূর্তিগুলি হল কাত্যায়নী, অন্নপূর্ণা, মহাগৌরী, কমলা, ভুবনেশ্বরী ও ললিতা প্রভৃতি। অন্যদিকে তার ভয়ংকরী রূপগুলি হল দুর্গা, কালী, চামুণ্ডা, তারা, চণ্ডী ইত্যাদি। চৈত্র মাসের শুক্লানবমীর মৃগশিরা নক্ষত্রযুক্ত ব্রহ্মমূহুর্তে ব্রহ্মাণ্ডের সর্ব্বোচ্চ শক্তি আদি পরাশক্তি হিমালয় রাজের কন্যা পার্বতী রূপে মেনকার গর্ভে পুর্নস্বরূপে অবতরণ করেন। তাই এই পবিত্র তিথির উক্ত দিনটিকে সনাতন ধর্মের “বিশ্ব মাতৃ দিবস” হিসেবে পালন করা হয়। আবার এটি ‘দেবী জয়ন্তী’ নামেও বিখ্যাত। এই তিথিতেই ভগবান রামচন্দ্রের জন্ম হয় , যা ‘রামনবমী’ নামে পরিচিত।
পার্বতী | |
---|---|
শক্তি, স্থিতি, প্রলয়, সর্বোচ্চ দেবী সত্তা ও অসুরবিজয়ী | |
অন্যান্য নাম | সতী, ঊমা, গৌরী, দুর্গা, কালী, অপর্ণা, গিরিজা, হৈমবতী, শঙ্করী, মহেশ্বরী |
দেবনাগরী | पार्वती |
অন্তর্ভুক্তি | ত্রিদেবী, আদি পরাশক্তি, সর্বোচ্চ দেবী, দেবী, |
আবাস | কৈলাস পর্বত |
মন্ত্র | ॐ নমঃ শিবায়ৈ ওঁ ভগবত্যৈ পার্বত্যৈ নমঃ/ সর্বমঙ্গল্যামঙ্গল্যে শিবে সর্বার্থসাধিকে উমে ব্রহ্মাণী কৌমারি বিশ্বরূপে প্রসীদ মে , জয়ন্তী মঙ্গলা কালী ভদ্রকালী কপালিনি দুর্গা শিবা, ক্ষমা ধাত্রী, স্বাহা, স্বধা, নমস্তুতে /নারায়াণী স্তোত্র/দেবী মাহাত্ম্য,ইত্যাদি |
অস্ত্র | ত্রিশূল,পদ্ম,তৃতীয়নয়ন শঙ্খ,চক্র,গদা, খড়গ,অঙ্কুশ,নাগপাশ, ধনুর্বাণ |
বাহন | সিংহ |
ব্যক্তিগত তথ্য | |
সঙ্গী | শিব |
সন্তান | কার্তিক, গণেশ ও অশোকসুন্দরী |
"পার্বতী" শব্দের অর্থ "পর্বতের কন্যা"। পার্বতী পর্বতের রাজা হিমালয়ের কন্যা বলে তাঁকে পার্বতী বলা হয়। হিমালয়ের কন্যা বলে তার অন্য নাম "শৈলজা", "অদ্রিজা", "নগজা", "নগনন্দিনী" , "শৈলপুত্রী", "হৈমবতী", "গিরিজা" , "গিরিনন্দিনী", বা "গিরিজাপুত্রী"।[1] কখনও কখনও পার্বতীকে "পবিত্রা"ও বলা হয়; কারণ, তাঁকে অপাপবিদ্ধা ও পবিত্র মনে করা হয়। শিব ও তাঁকে একত্রে শাক্ত সর্বোচ্চ ঈশ্বর আদি পরাশক্তির "সগুণ স্বরূপ" মনে করা হয়।
শ্রীশ্রীচণ্ডী-তে তার অনেকগুলি নামের উল্লেখ আছে। এগুলির মধ্যে দুর্গা, মহাশক্তি, অম্বিকা, গৌরী, ভৈরবী, কালী, উমা, ললিতা, মাতৃ, মাহেশ্বরী, ভবানী ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।[2] ললিতা সহস্রনাম স্তবে পার্বতীর ১০০০টি নামের উল্লেখ আছে।
পার্বতীর সবচেয়ে বেশি পরিচিত দুটি নাম হল উমা ও অপর্ণা। কয়েকটি প্রাচীন ধর্মগ্রন্থে দাক্ষায়ণীকে উমা বলা হলেও, রামায়ণে পার্বতীকেই উমা বলা হয়েছে। হরিবংশ-এ পার্বতীকে প্রথমে "অপর্ণা" বলে, পরে "উমা" বলা হয়েছে। অপর্ণা শব্দের অর্থ, যিনি ঘোর তপস্যা করেছেন (শিবকে পতি রূপে লাভ করার জন্য)। পার্বতীর মা মেনকা তার তপস্যা দেখে বলেছিলেন, "উ মা" (আর না)। সেই থেকে পার্বতীর অপর নাম উমা।[3]
অন্যদিকে পার্বতী একসঙ্গে "গৌরী" (গৌরবর্ণা দেবী) এবং "কালী" বা "শ্যামা" (কৃষ্ণবর্ণা দেবী) নামে অভিহিত হন। কারণ, তিনি শান্ত স্ত্রী উমা। কিন্তু বিপদের সময় ভয়ংকরী কালী দেবীতে রূপান্তরিত হন। এই দুই পরস্পর বিপরীত রূপ পার্বতীর দুই রকম প্রকৃতির কথা নির্দেশ করে। আবার "কামাখ্যী" রূপে তিনি ভক্তির দেবী।
ভাদ্র মাসের শুক্লপক্ষের সপ্তমী, অষ্টমী ও নবমী তিথিতে গৌরীপূজা হয়। তাঁকে শস্য ও নারীর রক্ষাকারী দেবী মনে করা হয়। গৌরীপূজাও সাধারণত মেয়েরাই করে। এই উৎসবটি পার্বতীর পূত্র গণেশের পূজার (গণেশ চতুর্থী) সঙ্গে যুক্ত। মহারাষ্ট্র ও কর্ণাটকে গৌরীপূজা খুব জনপ্রিয়।[4] রাজস্থানে গঙ্গৌর উৎসবের সময় গৌরীপূজা হয়। চৈত্র মাসের প্রথম দিন পূজা শুরু হয় এবং ১৮দিন চলে। এই সময় মাটি দিয়ে ঈশ্বর আর গৌরীমূর্তি বানানো হয়। পার্বতী পূজার একটি বিশেষ উৎসব হল নবরাত্রি ও দুর্গাপূজা বাংলাতে মহালয়া থেকে দশমী অবধি দেবী পার্বতীর মহিষাসুরমর্দিনী রূপের পুজো হয়। এই সময় পার্বতীর সব কটি রূপকে পূজা করা হয়। উত্তর ভারতে নবরাত্রি উৎসবের সময় শৈলপুত্রী, ব্রহ্মচারিণী, চন্দ্রঘণ্টা, কুষ্মাণ্ডা, স্কন্দমাতা, কাত্যায়ানী, কালরাত্রি, মহাগৌরী ও সিদ্ধিদাত্রী - এই নবদুর্গার পূজা হয়।
চৈত্র ও বৈশাখ মাসের শুক্লা তৃতীয়ার দিন হয় "গৌরী তৃতীয়া"। হিন্দুরা বিশ্বাস করেন, এই সময় একমাস পার্বতী বাপের বাড়িতে থাকেন। মহারাষ্ট্র ও কর্ণাটকে এই উৎসব খুব জনপ্রিয়। উত্তর ভারতে এই উৎসব ততটা জনপ্রিয় নয়। পশ্চিমবঙ্গে এই উৎসব পালিতই হয় না। এই সময় সধবা মেয়েরা পিরামিড আকৃতির ধাপযুক্ত বেদী তৈরি করে তার উপরে পার্বতীর মূর্তি ও নিচে গয়নাগাটি, অন্যান্য দেবদেবীর মূর্তি ও ছবি ইত্যাদি রাখেন। রাতে প্রার্থনা করা হয়। তামিলনাড়ু ও অন্ধ্রপ্রদেশে দীপাবলির দিন কেতরা গৌরী বৃতাম উৎসব হয়। এইদিন সধবা মেয়েরা সারাদিন উপোষ করেন এবং মিষ্টি বানিয়ে বাড়ির সকলের মঙ্গল্যের জন্য দেবীকে মিষ্টি দিয়ে পূজা করেন। চৈত্র মাসের শুক্লানবমীর মৃগশিরা নক্ষত্রযুক্ত ব্রহ্মমূহুর্তে সদাশিবপত্নী শিবা পার্বতীরূপে মেনকার গর্ভে লীলাবশত মনুষ্য চর্ম ধারণ করে জন্ম নেন। তাই এই পবিত্র তিথির উক্ত দিনটিকে সনাতন ধর্মের “বিশ্ব মাতৃ দিবস” হিসেবে পালন করা হয়। আবার এটি ‘দেবী জয়ন্তী’ নামেও বিখ্যাত। [5]
কর্ণাটকের কল্লুর শহরে মুকাম্বিকা দেবী মন্দির হল পার্বতীর একটি বিখ্যাত মন্দির।
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.