আর্য-স্বাদেশিকতাবাদ (ইংরেজি: Indigenous Aryanism) বা স্বদেশীয় আর্য তত্ত্ব (ইংরেজি: Indigenous Aryans theory; সংক্ষেপে: IAT) ও ভারত থেকে অভিপ্রয়াণ তত্ত্ব (ইংরেজি: Out of India theory; সংক্ষেপে OIT) হল এমন একটি মতবিশ্বাস,[1] যা আর্যদের ভারতের উপমহাদেশের আদি বাসিন্দা[2] এবং ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাগুলোকে ভারতে একটি উৎসস্থল থেকে উৎসারিত হয়ে সেগুলোর বর্তমান অবস্থানে ছড়িয়ে পড়েছিল।[2] এটি ভারতীয় ইতিহাস সম্পর্কে একটি "ধর্মীয়-জাতীয়তাবাদী" দৃষ্টিভঙ্গি।[3][4] এই দৃষ্টিভঙ্গিটিকে ইন্দো-আর্য অভিপ্রয়াণ তত্ত্বের[5] (যে মতে পন্টিক-কাস্পিয়ান স্তেপ অঞ্চলটিকে ইন্দো-আর্য ভাষাগুলোর উৎসস্থল মনে করা হয়[6][7][8][টিকা 1]) একটি বিকল্প বিসেবে প্রচার করা হয়।
পৌরাণিক কালপঞ্জির ভিত্তিতে প্রথাগত ভারতীয় দৃষ্টিভঙ্গিটিরই[3] প্রতিফলন ঘটিয়ে স্বাদেশিকতাবাদীরা বৈদিক যুগের যে তারিখ প্রস্তাব করেন তা সাধারণভাবে স্বীকৃত মতের তুলনায় প্রাচীনতর। শুধু তাই নয়, তাঁরা সিন্ধু সভ্যতাকেও বৈদিক সভ্যতা মনে করেন। এই মতে, "ভারতীয় সভ্যতাকে নিশ্চিতভাবেই দেখতে হবে সিন্ধু-সরস্বতী প্রথার প্রাচীনতম যুগ (খ্রিস্টপূর্ব ৭০০০ বা ৮০০০ অব্দ) থেকে নিরবিচ্ছিন্নভাবে চলে আসা একটি ধারা হিসেবে।"[9]
আর্য-স্বাদেশিকতাবাদের সমর্থকেরা অধিকাংশই হিন্দুধর্ম এবং ভারতের ইতিহাস ও প্রত্নতত্ত্বের একদল ভারতীয় বিশেষজ্ঞ।[10][11][12][13][5] এঁরা হিন্দুত্ববাদী রাজনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করেন।[14][15][3][web 1][web 2] মূলধারার গবেষকদের মধ্যে এই তত্ত্বের প্রাসঙ্গিকতা বা এর প্রতি কোনও সমর্থন কিছুই নেই।[টিকা 2]
ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট
ইন্দো-আর্যদের উৎস-সংক্রান্ত প্রামাণ্য মতটি হল ইন্দো-আর্য অভপ্রয়াণ তত্ত্ব। এই তত্ত্ব অনুযায়ী, ইন্দো-আর্যরা খ্রিস্টপূর্ব ১৫০০ অব্দ নাগাদ উত্তর-পশ্চিম ভারতে প্রবেশ করেছিল।[6] পৌরাণিক কালপঞ্জি অর্থাৎ রামায়ণ, মহাভারত ও পুরাণ সাহিত্যে বর্ণিত প্রাচীন ভারতের ইতিহাসের ঘটনাগুলোর যে সময়রেখা, তা বৈদিক সংস্কৃতির আরও প্রাচীনতর এক কালপঞ্জির কথা প্রস্তাব করে। এই দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে বেদ প্রকাশিত হয় বহু সহস্র বছর আগে এবং বর্তমান কল্পের মনু তথা মানবজাতির আদিপুরুষ বৈবস্বত মনুর রাজত্ব শুরু হয়েছিল খ্রিস্টপূর্ব ৭৩৫০ অব্দ নাগাদ।[16] ভগবদ্গীতার পশ্চাৎপট কুরুক্ষেত্র যুদ্ধ সম্ভবত আর্যাবর্তের কেন্দ্রীয় অঞ্চলে খ্রিস্টপূর্ব ১০০০ অব্দে সংঘটিত ঐতিহাসিক ঘটনাবলির সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত।[17][18] আর্য-স্বাদেশিকতাবাদীদের মতে এই যুদ্ধের সময়কাল আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ৩১০০ অব্দ।
আর্য-স্বাদেশিকতাবাদীরা ইতিহাস ও ধর্ম বিষয়ে প্রথাগত ভারতীয় দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন ঘটিয়ে[3] এই মত প্রচার করেন যে, আর্যরা ভারতেরই আদি বাসিন্দা। প্রামাণ্য দৃষ্টিভঙ্গি অবশ্য এই মতের বিরোধিতা করে।[6] ১৯৮০-এর দশকে ও ১৯৯০-এর দশকে স্বাদেশিকতাবাদীরা সাধারণ বিতর্কসভায় নিজেদের মত উত্থাপন করতে শুরু করেন।[19]
ভারতীয় স্বভূমি ও আর্য অভিপ্রয়াণ তত্ত্ব
উনবিংশ শতাব্দীর ইন্দো-ইউরোপীয় বিদ্যায় ঋগ্বেদের ভাষাই ছিল গবেষকদের কাছে পরিচিত সবচেয়ে প্রাচীন ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা। বাস্তবিকই এই গ্রন্থটিই ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষায় লেখা একমাত্র নথি যা যুক্তিগতভাবে ব্রোঞ্জ যুগের ভাষা হিসেবে দাবি রাখতে পারে। সংস্কৃত ভাষার এই প্রাধান্যের কারণেই ফ্রেডরিখ শ্লেগেল প্রমুখ গবেষক অনুমান করেছিলেন যে প্রত্ন-ইন্দো-ইউরোপীয় উৎসভূমির সঠিক অবস্থানটি ছিল ভারতে এবং অন্যান্য উপভাষাগুলো ঐতিহাসিক অভিপ্রয়াণকালে পশ্চিমে ছড়িয়ে পড়ে।[20][21] বিংশ শতাব্দীতে ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষার ব্রোঞ্জযুগীয় প্রত্যয়নগুলোর (আনাতোলীয়, মাইসোনীয় গ্রিক) আবিষ্কারের ফলে বৈদিক সংস্কৃত প্রাচীনতম পরিচিত ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা হওয়ার বিশেষ মর্যাদাটি হারায়।[20][21]
১৯৫০-এর দশকে ম্যাক্স মুলার দুই আর্য জাতির ধারণাটি প্রস্তাব করেন। তাঁর মধ্যে পশ্চিমের আর্য জাতি ককেশাস থেকে ইউরোপে এবং পূর্বের আর্য জাতি ককেশাস থেকে ভারতে অভিপ্রয়াণ করেছিল। এইভাবে মুলার আর্য জাতিকে দুই শাখায় ভাগ করে পশ্চিমের শাখাটির উপর অধিকতর গুরুত্ব ও মূল্য আরোপ করেন। যদিও এই "আর্যদের পূর্বের শাখাটি প্রাচ্যের আদিম অধিবাসীদের তুলনায় অনেক বেশি শক্তিশালী ছিল এবং তাদের সহজেই জয় করেছিল।"[22] ১৯৮০-এর দশকে মুলারের ধারণাটি বর্ণবাদী নৃতত্ত্ববিদেরা গ্রহণ করেন। উদাহরণস্বরূপ, বর্ণ বিজ্ঞানের প্রবক্তা তথা ঔপনিবেশিক প্রশাসক হারবার্ট হোপ রিসলে (১৮৫১-১৯১১) নাকের প্রস্থ থেকে উচ্চতার ভিত্তিতে ভারতীয়দের আর্য, দ্রাবিড় সহ সাতটি জাতিতে ভাগ করেছিলেন।[23][24]
আর্য "অনুপ্রবেশ"-এর ধারণাটি আরও ইন্ধন পায় সিন্ধু (হরপ্পা) সভ্যতার আবিষ্কারের মাধ্যমে। এই সভ্যতার পতন ইন্দো-আর্য অভিপ্রয়াণের প্রায় সমসাময়িক কালের ঘটনা হওয়ায় তা থেকে এক ধ্বংসাত্মক অনুপ্রবেশের ইঙ্গিত পাওয়া যায়। বিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগে প্রত্নতত্ত্ববিদ মর্টিমার হুইলার মহেঞ্জোদাড়োর উপরের স্তরগুলোতে আবিষ্কৃত অসমাহিত অনেক মৃতদেহের উপস্থিতিকে সংঘর্ষের শিকার বলে ব্যাখ্যা করে এই মতটি প্রস্তাব করেন। সিন্ধু সভ্যতার ধ্বংসের জন্য তিনি বৈদিক দেবতা ইন্দ্রকে দায়ী করে যে বক্তব্যটি রেখেছিলেন তা অত্যন্ত খ্যাতিলাভ করে।[25] সেই সময় থেকেই গবেষকেরা মনে করে আসছেন যে, হুইলার প্রমাণগুলোর ভুল ব্যাখ্যা দিয়েছেন এবং প্রাগুক্ত কঙ্কালগুলোকে গণহত্যার অসমাহিত শিকার না বলে তাড়াহুড়ো করে সমাহিত করা মৃতদেহ বলাই সঙ্গত।[25]
ইন্দো-আর্য অভিপ্রয়াণ তত্ত্ব
অভিপ্রয়াণ
১৯৮০-এর দশক থেকে "অনুপ্রবেশ"-এর ধারণাটি মূলধারার গবেষকদের দ্বারা প্রত্যাখ্যাত হতে শুরু করে।[26] তার পরিবর্তে আসে অধিকতর পরিশীলিত এক ধারণা,[27][note 1] যা ইন্দো-আর্য অভিপ্রয়াণ তত্ত্ব নামে পরিচিত। এই তত্ত্ব অনুযায়ী, ইন্দো-ইউরোপীয়-ভাষী জাতিগোষ্ঠী পন্টিক স্তেপে তাদের উরহেইমাত (আদি স্বভূমি) থেকে মধ্য ইউরোপীয় দড়ির ছাপযুক্ত মৃৎসামগ্রী সংস্কৃতি ও পূর্ব ইউরোপীয়/মধ্য এশীয় সিনতাশতা সংস্কৃতির মধ্য দিয়ে মধ্য এশিয়ার মধ্য দিয়ে লেভান্ট মিতান্নি), দক্ষিণ এশিয়া ও অভ্যন্তরীণ এশিয়া (ওউসুন ও ইউয়েঝি) অঞ্চলে অভিপ্রয়াণ করলে দক্ষিণ এশিয়ায় ইন্দো-আর্য ভাষাগুলো প্রচলন লাভ করে।[note 2] এই তত্ত্বটি কুরগান প্রকল্পনা/সংশোধিত স্তেপ তত্ত্বেরই একটি অংশ, যা আরও বর্ণনা করে কীভাবে ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাগুলো ইন্দো-ইউরোপীয়-ভাষী জাতিগোষ্ঠীর অভিপ্রয়াণের ফলে পশ্চিম ইউরোপে ছড়িয়ে পড়েছিল।
ঐতিহাসিক ভাষাবিজ্ঞান এই তত্ত্বের মূল ভিত্তিটির জোগান দেয়, ভাষাগুলোর বিকাশ ও পরিবর্তন বিশ্লেষণ করে এবং বিভিন্ন ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষার বিকাশের সময়কাল সহ সেগুলোর মধ্যবর্তী সম্পর্কটিকে প্রতিষ্ঠা করে। ঐতিহাসিক ভাষাবিজ্ঞান বণ্টিত শব্দাবলি, ইন্দো-ইউরোপীয়ের উৎসের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ ক্ষেত্র এবং নির্দিষ্ট অঞ্চলের নির্দিষ্ট শব্দভাণ্ডার সম্পর্কে তথ্যেরও জোগান দেয়।[7][29][30] ভাষাবৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ ও তথ্যের সঙ্গে প্রত্নতাত্ত্বিক ও বংশগতিবিদ্যা-সংক্রান্ত তথ্য[31][32][note 3] এবং সেই সঙ্গে নৃতাত্ত্বিক মতবাদগুলো মিলিয়ে একটি যে সুস্পষ্ট তত্ত্বটি উপস্থাপনা করা হয়েছে,[7][31] সেইটিই বর্তমানে বহুলভাবে স্বীকৃত।[43]
এই তত্ত্বে দেখা যায়, ইন্দো-ইউরোপীয়দের প্রথম প্রত্নতাত্ত্বিক অবশেষ হল ইয়াম্নায়া সংস্কৃতি, [7] যার থেকে উৎসারিত হয় মধ্য ইউরোপীয় দড়ির ছাপযুক্ত মৃৎসামগ্রী সংস্কৃতি, যেটি আবার পূর্বদিকে প্রসারিত হয়ে সৃষ্টি করে প্রত্ন-ইন্দো-ইরানীয় সিনতাশতা সংস্কৃতি (খ্রিস্টপূর্ব ২১০০-১৮০০ অব্দ), যার থেকে বিকাশলাভ করে অ্যান্ড্রোনোভো সংস্কৃতি (খ্রিস্টপূর্ব ১৮০০-১৪০০ অব্দ)। খ্রিস্টপূর্ব ১৮০০ অব্দ নাগাদ ইন্দো-আর্য জাতি ইরানীয় শাখা থেকে বিচ্ছিন্ন হয় এবং ব্যাকট্রিয়া-মার্জিয়ানা প্রত্ন চত্বর অঞ্চলে অভিপ্রয়াণ করে (খ্রিস্টপূর্ব ২৩০০-১৭০০ অব্দ),[44] এবং সেখান থেকে পরে লেভান্ট, উত্তর ভারত ও সম্ভবত অভ্যন্তরীণ এশিয়াতেও চলে যায়।[45]
সাংস্কৃতিক ধারাবাহিকতা ও অভিযোজনা
উত্তর ভারতে অভিপ্রয়াণ অবশ্যম্ভাবীরূপে বৃহৎ সংখ্যায় ঘটেনি। সম্ভবত ছোটো ছোটো গোষ্ঠীতে ভাগ হয়ে আর্যরা এই অঞ্চলে এসে বসতি স্থাপন করে।[46] এই আর্যেরাই নিজেদের গবাদি পশুর জন্য চারণভূমির অনুসন্ধান করার সময় নতুন অঞ্চলে নিজেদের ভাষা ও সমাজব্যবস্থার প্রবর্তন ঘটায়।[47] তারপর বৃহত্তর গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে সেই ভাষা ও সমাজব্যবস্থা ছড়িয়ে পড়ে।[48][note 4][note 5] এই সকল গোষ্ঠী নতুন ভাষা ও সংস্কৃতিকে গ্রহণ করে।[52][53][note 6] উইটজেল আরও উল্লেখ করেছেন যে, "এখনও সিন্ধু সমভূমি এবং আফগান ও বালুচি উচ্চভূমির মধ্যে ছোটো-আকারে প্রায়-বার্ষিক মানব আনাগোনা অব্যাহত রয়েছে।"[50]
আর্য-স্বাদেশিকতাবাদ
ব্রায়ান্টের মতে:
...[স্বাদেশিকতাবাদীরা] একযোগে অভিযোগ করেন যে, ইন্দো-আর্য-ভাষী জাতিগোষ্ঠীর উৎস ভারতীয় উপমহাদেশের বহিরাঞ্চল এই তত্ত্ব ঠুনকো বা ভ্রান্ত পূর্বধারণা ও অনুমানের উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। এই গবেষকদের মতে, ইন্দো-আর্য জাতির বহুর্ভারতে উৎপত্তির কোনও বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ এখনও পাওয়া যায় নি […] আর্য অনুপ্রবেশ ও অভিপ্রয়াণ তত্ত্বের বিরোধিতার পন্থাই তাঁরা অবলম্বন করেছেন—এই কারণেই এই মতটি আর্য-স্বাদেশিকতাবাদ নামে পরিচিত।[1]
"স্বাদেশিকতাবাদী মতবাদ" আকার গ্রহণ করতে শুরু করে বেদের পূর্ববর্তীকালের হরপ্পা সভ্যতার আবিষ্কারের পর থেকে।[54] এই বিকল্প দৃষ্টিভঙ্গিতে বলা হয় যে, আর্যরা ভারতেরই আদি নিবাসী,[2] সিন্ধু সভ্যতা হল বৈদিক সভ্যতা,[2] খ্রিস্টপূর্ব দ্বিতীয় সহস্রাব্দের আগেই বেদ রচিত হয়,[55] ভারতের ইন্দো-ইউরোপীয় অংশ (উত্তর ভারত) ও দ্রাবিড় অংশের (দক্ষিণ ভারত) মধ্যে কোনও ভেদ নেই,[55] এবং ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাগুলো ভারতের একটি উৎসভূমি থেকেই সেগুলোর বর্তমান অবস্থানে ছড়িয়ে পড়েছে।[2] ব্রেসনানের মতে, ঊনবিংশ শতাব্দীতে এক মহত্তর আর্যজাতি কর্তৃক স্থানীয় ভারতীয়দের শাসন করার যে ধারণাটির কথা ছড়িয়ে পড়েছিল, এই মতবাদ তারই স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া। উক্ত ধারণাটির মাধ্যমে সূক্ষ্মভাবে ঔপনিবেশিক যুগে ইউরোপীয় বহিরাক্রমণকারীদের জাতিগত মহত্তরত্ব প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করা হয়েছিল, "স্বদেশীয় এক বিকাশের মাধ্যমে বেদের উৎপত্তি-সংক্রান্ত কোনও মত" প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য এই ধারণার ছিল না।[56]
স্বাদেশিকতাবাদীর প্রধান বক্তব্য
"স্বদেশীয় আর্য" ধারণাটির সমর্থনে প্রত্নতাত্ত্বিক, বংশগতি-সম্বন্ধীয় ও ভাষাবৈজ্ঞানিক তথ্যের নির্দিষ্ট ব্যাখ্যা এবং ঋগ্বেদের আক্ষরিক ব্যাখ্যা প্রদান করা হয়।[57][11][web 3] "স্বদেশীয় আর্য" তত্ত্বের সমর্থনে এবং মূলধারার ইন্দো-আর্য অভিপ্রয়াণ তত্ত্বের বিরোধিতায় প্রামাণ্য বক্তব্যগুলো হল:
- ইন্দো-আর্য অভিপ্রয়াণ তত্ত্বের প্রতি সন্দেহ প্রকাশ:
- ইন্দো-আর্য অভিপ্রয়াণ তত্ত্বটিকে "ইন্দো-আর্য অনুপ্রবেশ" তত্ত্ব হিসেবে ব্যাখ্যা করা,[58][note 7] যেটিকে ঊনবিংশ শতাব্দীর ঔপনিবেশিকতাবাদীরা ভারতীয়দের দমন করার জন্য আবিষ্কার করেছিল;[59]
- ভাষাবৈজ্ঞানিকদের পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপন;[60][61][62]
- এক স্বদেশীয় সাংস্কৃতিক ধারাবাহিকতার পক্ষে মতপ্রকাশ, উত্তর-পশ্চিম ভারতে ইন্দো-আর্যদের প্রত্নতাত্ত্বিক অবশেষের অভাব-সংক্রান্ত যুক্তির উত্থাপন;[61]
- বংশগতিবিদ্যা-সম্বন্ধীয় প্রমাণ নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপন;[web 4][web 5]
- ছোটো ছোটো গোষ্ঠী কর্তৃক বৃহত্তর ক্ষেত্রে সংস্কৃতি ও ভাষার পরিবর্তন সাধনের সম্ভাবনার তত্ত্বের বিরোধিতা;[web 3]
- একটি বৈদিক-পৌরাণিক কালপঞ্জিকে স্বতঃসিদ্ধ ধরে নিয়ে ভারতের ইতিহাসের তারিখগুলোর পুনর্মূল্যায়ন:[63]
- সংস্কৃত ভাষার এক প্রাচীন, স্থানীয় উৎস নির্দেশ,[64][61] ঋগ্বেদ ও বৈদিক জাতির সময়কাল খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় সহস্রাব্দ বা তারও পূর্ববর্তী বলে উল্লেখ;[55][65][66][62] এর মধ্যে রয়েছে:
- ঋগ্বেদে এক মহতী নদী হিসেবে কথিত সরস্বতী নদীটিকে ঘগ্গর-হকরা নদী হিসেবে চিহ্নিতকরণ, নদীটি আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ২০০০ অব্দ নাগাদ শুকিয়ে যাওয়ায় ঋগ্বেদের এক প্রাচীনতর তারিখায়ন সম্ভবপর হয়;[67]
- খ্রিস্টপূর্ব ২০০০ অব্দের আগে ঘোড়া ও ঘোড়ায় টানা রথের অস্তিত্বের কথা উপস্থাপনা;
- বৈদিক জাতিকে হরপ্পা সভ্যতার সঙ্গে একীকরণের প্রয়াস;[2][65]
- বৈদিক-পৌরাণিক কালপঞ্জির ভিত্তিতে ভারতীয় ইতিহাসের তারিখের পুনর্মূল্যায়ন।[68]
- সংস্কৃত ভাষার এক প্রাচীন, স্থানীয় উৎস নির্দেশ,[64][61] ঋগ্বেদ ও বৈদিক জাতির সময়কাল খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় সহস্রাব্দ বা তারও পূর্ববর্তী বলে উল্লেখ;[55][65][66][62] এর মধ্যে রয়েছে:
আর্য অভিপ্রয়াণ ধারণা নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপন
"আর্য অনুপ্রবেশ" তত্ত্বের ব্যবহার
ইন্দো-আর্য অভিপ্রয়াণতত্ত্বটিকে আক্রমণ করার জন্য সেকেলে "আর্য অনুপ্রবেশ" ধারণাটিকে এক কাল্পনিক বিরোধী পক্ষ হিসেবে দাঁড় করানো হয়।[58][note 7] উইটজেলের মতে, আর্য-স্বাদেশিকতাবাদীরা অনুপ্রবেশের তত্ত্বটির সমালোচনা করেন ঔপনিবেশিক শাসনের স্বপক্ষে উত্থাপিত যুক্তি হিসেবে:[58]
ইন্দো-আর্য-ভাষী আর্যদের অনুপ্রবেশের তত্ত্বটিকে ("আর্য অনুপ্রবেশ") সাধারণভাবে দেখা হয় একটি ব্রিটিশ নীতি হিসেবে, যার মাধ্যমে তারা ভারতে তাদের অনুপ্রবেশের পক্ষে এবং তারপর ঔপনিবেশিক শাসনের স্বপক্ষে যুক্তি উত্থাপন করত: উভয় ক্ষেত্রেই এক "শ্বেতাঙ্গ জাতি"কে স্থানীয় কৃষ্ণাঙ্গ অধিবাসীদের দমন করতে দেখা যায়।
আর্য-স্বাদেশিকতাবাদের সমর্থক কোয়েনরাড এস্টের মতে:[69]
যে তত্ত্বের ভাষাবৈজ্ঞানিক প্রমাণ আমরা আলোচনা করতে চলেছি, তা "আর্য অনুপ্রবেশ তত্ত্ব" নামেই সমধিক পরিচিত। আমি এই পরিভাষাটিই ব্যবহার করব, যদিও কোনও কোনও গবেষক এটির প্রতি আপত্তি জানিয়ে "অনুপ্রবেশ" শব্দের পরিবর্তে "অভিপ্রয়াণ" শব্দটি ব্যবহার করতে চান... উত্তর ভারতের ভাষাবৈজ্ঞানিক প্রেক্ষাপট দু’টি মাত্র সম্ভাব্য ব্যাখ্যার দরজা খোলা রাখে: হয় ইন্দো-আর্যরা স্থানীয়, অথবা এরা অনুপ্রবেশ করেছিল।[note 8]
ভাষাবৈজ্ঞানিক পদ্ধতি
স্বাদেশিকতাবাদীরা ভাষাবৈজ্ঞানিক পদ্ধতি ও ফলাফল নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করেন।[60][61][62] ব্রায়ান্টের মতে,[70] স্বাদেশিকতাবাদীদের ভাষাবিজ্ঞান-সংক্রান্ত জ্ঞান সামান্যই। তাঁরা হয় ভাষাতাত্ত্বিক প্রমাণ সম্পূর্ণ উপেক্ষা করেন এবং সেগুলোকে অতিমাত্রায় অনুমানমূলক ও অনির্ণায়ক বলে খারিজ করে দেন,[note 9] অথবা সেগুলোকে নৈরাশ্যজনকভাবে অপর্যাপ্ত গুণাবলির সাহায্যে সমাধানের চেষ্টা করেন; এই মনোবৃত্তি ও উপেক্ষাই অধিকাংশ অভিপ্রয়াণবাদী গ্রন্থাবলির মূল্য গুরুত্বপূর্ণভাবে হ্রাস করে দেয়।[71][72]
প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কার ও সাংস্কৃতিক ধারাবাহিকতা
১৯৬০-এর দশকে সাংস্কৃতিক পরিবর্তনের প্রত্নতাত্ত্বিক ব্যাখ্যা অভিপ্রয়াণ তত্ত্ব থেকে ঘুরে যায় পরিবর্তনের অভ্যন্তরীণ কারণগুলোর দিকে।[41] ইন্দো-আর্যদের প্রত্নতাত্ত্বিক অবশেষের অভাবের প্রেক্ষিতে জিম জি. শ্যাফার ১৯৮০-এর দশকের ও ১৯৯০-এর দশকের লেখালিখিতে হরপ্পা ও হরপ্পা-পরবর্তীকালের জনবসতিগুলোর মধ্যে এক স্থানীয় সাংস্কৃতিক ধারাবাহিকতার কথা প্রস্তাব করেন।[73][74] শ্যাফারের মতে, হরপ্পার নগর সংস্কৃতির পতনের সময় বা তার পরে উত্তরপশ্চিম ভারতে আর্য অভিপ্রয়াণের কোনও প্রত্নতাত্ত্বিক ইঙ্গিত পাওয়া যায় না।[74][note 10] পরিবর্তে শ্যাফার "স্থানীয় সাংস্কৃতিক বিকাশকে প্রতিফলনকারী সাংস্কৃতিক পরিবর্তনের এক ধারাবাহিকতা"-র পক্ষপাতী ছিলেন।[75] শ্যাফারের মতে, ভাষাবৈজ্ঞানিক পরিবর্তনকে ভুলক্রমে জনগোষ্ঠীর অভিপ্রয়াণের কারণবশত বলে উল্লেখ করা হয়েছে।[76][note 11] অনুরূপভাবে এরডোসিও অভিপ্রয়াণের প্রমাণাভাবের কথা উল্লেখ করেন এবং বলেন যে "ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাগুলো অভিপ্রয়াণের মাধ্যমে দক্ষিণ এশিয়ায় ভালোভাবে ছড়িয়ে গিয়ে থাকতে পারে",[82] কিন্তু ঋগ্বৈদিক আর্যগণ এক শ্রেণির নির্দিষ্ট ধ্যানধারণার অনুগামী এক বিশেষ জাতি-ভাষাকেন্দ্রিক নৃগোষ্ঠী হিসেবে[83][note 12] সম্ভবত স্থানীয় অধিবাসী ছিলেন, যাঁদের ধ্যানধারণাগুলো অনতিকালের মধ্যেই ভারতে ছড়িয়ে পড়েছিল।[82][85]
১৯৯০-এর দশক থেকে মনোযোগ এক ব্যাখ্যাকারী তত্ত্ব হিসেবে আবার অভিপ্রয়াণ তত্ত্বের দিকেই ফিরে আসে।[41] পশুচারক সমাজগুলোকে প্রত্নতাত্ত্বিক নথি থেকে শনাক্ত করা কঠিন। কারণ তারা ছোটো ছোটো গোষ্ঠীতে ভাগ হয়ে যাযাবরের মতো ঘুরে বেড়ায় এবং খুব কম চিহ্নই ফেলে যায়।[web 6] ১৯৯০ সালে ডেভিড অ্যান্টনি অভিপ্রয়াণ তত্ত্বের সপক্ষে একটি গ্রন্থ প্রকাশ করেছিলেন।[41] এছাড়া দ্য হর্স, দ্য হুইল, অ্যান্ড ল্যাংগুয়েজ (২০০৭) গ্রন্থে তিনি ইউরেশীয় স্তেপ ও মধ্য এশিয়া জুড়ে ইন্দো-ইউরোপীয় জাতিগোষ্ঠীর প্রত্নতাত্ত্বিক অবশেষের এক বিস্তারিত বিবরণ প্রদান করেন।[7] ২০১০-এর দশকের গোড়ার দিকে[34][86] বংশগতি-সংক্রান্ত গবেষণায় "বৈপ্লবিক"[33][34][86] উন্নতির ফলে এই পরিবর্তন আবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে। কারণ এই গবেষণার মাধ্যমে ইতিপূর্বে অপ্রাপ্তব্য তথ্যও পাওয়া সম্ভব হয়েছে এবং দেখা গিয়েছে যে প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে বড়ো আকারের অভিপ্রয়াণ চলে আসছে।[41]
বংশগতিবিদ্যা-সংক্রান্ত প্রমাণ
স্বাদেশিকতাবাদের সমর্থকেরা বংশগতিবিদ্যা-সংক্রান্ত গবেষণায় প্রাপ্ত ফলাফলগুলো নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করেন।[web 4][web 5][web 7] কয়েকটি পুরনো ডিএনএ-গবেষণায় ইন্দো-আর্য অভিপ্রয়াণের তত্ত্বটি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।[87][88] ২০১৫ সাল থেকে যদিও বংশগতিবিদ্যা গবেষণা "বৈপ্লবিক"[33][34] উন্নতসাধন করেছে এবং নিশ্চিত করেছে যে স্তেপ পশুচারকেরা পশ্চিম ইউরোপ ও দক্ষিণ এশিয়ায় অভিপ্রয়াণ করেছিল[38][31][39][40][41][note 13] এবং "অনেক বিজ্ঞানী যাঁরা ব্রোঞ্জ যুগে ভারতে গুরুত্বপূর্ণ অভিপ্রয়াণ নিয়ে সংশয়ী বা নিরপেক্ষ অবস্থান গ্রহণ করতেন তাঁরাও মত পরিবর্তন করেন।"[38][note 14]
সাংস্কৃতিক পরিবর্তন
ছোটো ছোটো গোষ্ঠী বৃহত্তর ক্ষেত্রে সংস্কৃতি ও ভাষার পরিবর্তন সাধন করতে পারে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন স্বাদেশিকতাবাদীরা।[web 3] মূলধারার গবেষকদের ব্যাখ্যা অনুযায়ী, এটি হয়েছিল অভিজাতদের আধিপত্য বিস্তার ও ভাষা স্থানান্তরণের মাধ্যমে।[90][91][92] ছোটো ছোটো গোষ্ঠীও একটি বৃহত্তর সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রকে পরিবর্তিত করতে পারে,[93][7] যখন এক অভিজাত পুরুষ গোষ্ঠী ছোটো ছোটো স্থানীয় গোষ্ঠীর মধ্যে মিশে যায় এবং সেই সব ক্ষুদ্রতর গোষ্ঠী অভিজাত গোষ্ঠীটির ভাষা গ্রহণ করে। এই ঘটনার ফলে উত্তর ভারতে এক ভাষা স্থানান্তরণের ঘটনা ঘটেছিল।[94][95][96] এরপর সংস্কৃতকরণের প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে বৈদিক-ব্রাহ্মণ্যবাদী সংস্কৃতির প্রসারের মাধ্যমে ইন্দো-আর্য ভাষাগুলি আরও ছড়িয়ে পড়ে। এই প্রক্রিয়ায় স্থানীয় পরম্পরাগুলি ("ছোটো পরম্পরাসমূহ") ব্রাহ্মণ্যবাদী ধর্মের "মহৎ পরম্পরা"-র সঙ্গে একাত্মীভূত হয়ে যায়।[97] এর ফলে সারা ভারতে ও ভারতের বাইরেও সংস্কৃত ধর্মগ্রন্থ ও ব্রাহ্মণ্যবাদী ধ্যানধারণাগুলি ছড়িয়ে পড়ে।[98] এর ফলে হিন্দু সংশ্লেষণও ত্বরান্বিত হয়,[99][98][97] যার মাধ্যমে ব্রাহ্মণ্যবাদী পরম্পরা "আচার-অনুষ্ঠান ও ধ্যানধারণার স্থানীয় জনপ্রিয় পরম্পরাগুলি"কে আত্মীভূত করেছিল।[99]
ভারতীয় ইতিহাসের পুনঃ-তারিখায়ন
ঋগ্বেদ ও ঋগ্বৈদিক জাতিগোষ্ঠীর পুনঃ-তারিখায়ন
সংস্কৃত
মূলধারার গবেষকদের মতে, দক্ষিণ এশিয়ায় সংস্কৃত ভাষার উদ্ভব ঘটেছিল খ্রিস্টীয় দ্বিতীয় সহস্রাব্দের প্রথমার্ধে ইন্দো-আর্য জাতিগোষ্ঠী কর্তৃক ইন্দো-আর্য ভাষাসমূহের প্রচলন ঘটানোর পরে।[100][101][note 2] সংস্কৃত ভাষার সবচেয়ে পুরনো রূপটি হল ঋগ্বেদে প্রাপ্ত বৈদিক সংস্কৃত। ঋগ্বেদ রচিত হয়েছিল খ্রিটপূর্ব ১৫০০ থেকে খ্রিস্টপূর্ব ১২০০ অব্দের মধ্যবর্তী সময়ে।[102][103][note 15]
"হিন্দু জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক উপকথা"-র সূত্র ধরে[64][29] স্বাদেশিকতাবাদীরা সংস্কৃত ভাষার এক প্রাচীন ও স্থানীয় উৎসের পক্ষে মত প্রকাশ করেন।[64][61][note 11] তাঁরা মনে করেন, ঋগ্বেদ ও বৈদিক জাতিগোষ্ঠীর সময়কাল খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় সহস্রাব্দ বা তারও পূর্ববর্তী।[55][65][66][104][26][note 16] সুভাষ কাকের মতে, খ্রিস্টপূর্ব সপ্তম সহস্রাব্দকে আর্যদের আগমন কাল ধরে একটি জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক নিয়মের মাধ্যমে ঋগ্বেদের সূক্তগুলিকে বিন্যস্ত করা যায়। যাতে দেখে যায় "খ্রিস্টপূর্ব ৩০০০ বা ৪০০০ অব্দের ঘটনাগুলির মধ্যে পরিশীলিত পর্যবেক্ষণমূলক জ্যোতির্বিজ্ঞানের একটি প্রথা গড়ে উঠেছিল।"[105] তাঁর ধারণাগুলি অবশ্য মূলধারার গবেষকেরা খারিজ করে দিয়েছেন।[106][29][107][108][109][110]
ঘোড়া ও রথ
বেশ কয়েকটি প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারকে খ্রিস্টপূর্ব ২০০০ অব্দের পূর্বে বৈশিষ্টসূচক ইন্দো-আর্য প্রত্নসামগ্রীর প্রমাণ হিসেবে ব্যাখ্যা করা হয়। উদাহরণের মধ্যে রয়েছে খ্রিস্টপূর্ব ২০০০ অব্দের পূর্ববর্তীকালের ঘোড়ার হাড় হিসেবে ব্যাখ্যাকৃত পশুর হাড়[note 17] এবং রথ হিসেবে ব্যাখ্যাত সিনাউলি শকট-সমাধি।[web 13][web 14][web 15][note 18] ঘোড়ার দেহাবশেষ ও সম্পর্কিত প্রত্নসামগ্রী পরবর্তীকালীন হরপ্পা (খ্রিস্টপূর্ব ১৯০০-১৩০০ অব্দ) প্রত্নক্ষেত্রগুলিতে পাওয়া যায়। তার থেকে এই ইঙ্গিত মেলে যে পরবর্তীকালীন হরপ্পা যুগেও ঘোড়া বিদ্যমান ছিল।[111] তবে হরপ্পা সভ্যতায় ঘোড়া সম্ভবত কোনও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করত না,[112] যা করত বৈদিক যুগে (খ্রিস্টপূর্ব ১৫০০-৫০০ অব্দ)।[113][note 19] দক্ষিণ এশিয়ার প্রাচীনতম অবিতর্কিত ঘোড়ার দেহাবশেষ পাওয়া যায় গান্ধার সমাধি সংস্কৃত বা সোয়াট সংস্কৃতি (আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ১৪০০-৮০০ অব্দ) থেকে,[113] যা ইন্দো-আর্যদের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত।[114]
হরপ্পা প্রত্নক্ষেত্র সুরকোটাডা (খ্রিস্টপূর্ব ২৪০০-১৭০০ অব্দ) থেকে প্রাপ্ত ঘোড়ার দেহাবশেষকে এ. কে. শর্মা ইক্যুয়াস ফেরাস ক্যাবালাস (Equus ferus caballus) হিসেবে শনাক্ত করেন।[note 20][note 21] যদিও মিডো (১৯৯৭) প্রমুখ প্রত্নতত্ত্ববিদ এই মতের বিরোধী। তাঁরা মনে করেন ইক্যুয়াস ফেরাস ক্যাবালাস-এর দেহাবশেষকে ইক্যুয়াস এসিনাস (গাধা) বা ইক্যুয়াস হেমিওনাস (ওনাগার) অন্যান্য ইক্যুইড প্রজাতির থেকে পৃথক করা কঠিন।[115]
২০১৮ সালে সিনাউলিতে ব্রোঞ্জ যুগের নিরেট-চাকতির চাকাবিশিষ্ট শকট আবিষ্কৃত হয়। এগুলি আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ২০০০-১৮০০ অব্দের গিরিমাটি রঙের মৃৎশিল্প সংস্কৃতির সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত।[116] কেউ কেউ এগুলিকে অশ্ব-কেন্দ্রিক ইন্দো-আর্য জাতিগোষ্ঠীর আবির্ভাবের পূর্ববর্তীকালের ঘোড়ায় টানা রথ হিসেবে ব্যাখ্যা করেন।[117][116][web 13][web 14][web 15][note 18] পারপোলার মতে, শকটগুলি ছিল ষাঁড়ে-টানা গাড়ি এবং এগুলি ভারতীয় উপমহাদেশে ইন্দো-ইরানীয় অভিপ্রয়াণের প্রথম তরঙ্গের সঙ্গে সম্পর্ক যুক্ত।[116] উল্লেখ্য, গিরিমাটি রঙের মৃৎশিল্প সংস্কৃতির (খ্রিস্টপূর্ব ২০০০-১৫০০ অব্দ) সঙ্গে পরবর্তীকালীন হরপ্পা সংস্কৃতি ও বিভিন্ন স্তেপ-সংস্কৃতির সাদৃশ্য লক্ষিত হয়।[116]
সরস্বতী নদী
ঋগ্বেদে সরস্বতীকে এক মহতী নদী হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। স্বাদেশিকতাবাদীরা এই বর্ণনাগুলিকে এক বাস্তব নদীর প্রেক্ষিতে গ্রহণ করেছেন এবং সরস্বতী নদীকে শনাক্ত করেছেন সিন্ধু নদের পূর্ব দিকের উপনদী ঘগ্গর-হাকরা হিসেবে। ঘগ্গর-হাকরা নদী খ্রিস্টপূর্ব ২০০০ অব্দ নাগাদ শুকিয়ে যাওয়ায়, স্বাদেশিকতাবাদীদের মতে বৈদিক জাতিগোষ্ঠী তারও আগে থেকে এই অঞ্চলে উপস্থিত ছিল।[67]
ঋগ্বেদে এক বাস্তব নদীর যে উল্লেখ পাওয়া যায় তা থেকে এমন ইঙ্গিত মেলে যে সরস্বতী নদী "ততদিনে তার জলের প্রধান উৎসটিকে হারিয়েছিল এবং নিশ্চিতই একটি সমুদ্রে গিয়ে মিশেছিল,"[118] "যা বর্তমান যুগের পরিস্থিতিটিকে বর্ণনা করে, কারণ সরস্বতী তার জলের অধিকাংশই হারিয়ে ফেলেছে।"[118][note 22] "সরস্বতী" নদী হিসেবে দক্ষিণ আফগানিস্তানের হেলমান্দ নদীটিকেও শনাক্ত করা যেতে পারে।[120] বৈদিক জাতিগোষ্ঠী পাঞ্জাবে এসে বসতি স্থাপনের পর এই নদীর নামই সম্ভবত সেটির সংস্কৃত রূপে ঘগ্গর-হাকরা নদীর নাম হিসেবে পুনরায় ব্যবহৃত হয়েছিল।[120][121][note 23] ঋগ্বেদের সরস্বতী নদী বলতে সম্ভবত দু’টি স্বতন্ত্র নদীকেও বোঝাতে পারে, শাখান্তর্গত মণ্ডলগুলিতে এই নামে হেলমান্দ নদীকে এবং অধিকতর সাম্প্রতিককালে রচিত দশম মণ্ডলে এই নামে সম্ভবত ঘগ্গর-হাকরা নদীকে বুঝিয়েছে।[120]
হরপ্পা সভ্যতাকে বৈদিক সভ্যতা হিসেবে চিহ্নিতকরণ
স্বাদেশিকতাবাদীরা ভারতের এক অবিরাম সাংস্কৃতিক বিবর্তনের পক্ষে মত প্রকাশ করেন বলে হরপ্পা ও বৈদিক যুগের সভ্যতার মধ্যে পার্থক্যের বিষয়টি অস্বীকার করে[122][65] সিন্ধু সভ্যতার জাতিগোষ্ঠীটিকে বৈদিক জাতিগোষ্ঠী বলে চিহ্নিত করেন।[2] কাকের মতে, "ভারতীয় সভ্যতাকে অবশ্যই দেখতে হবে সিন্ধু-সরস্বতী পরম্পরার আদিতম পর্যায় (খ্রিস্টপূর্ব ৭০০০ বা ৮০০০ অব্দ) থেকে নিরবিচ্ছিন্নভাবে চলে আসা এক পরম্পরা হিসেবে।"[9][note 24][65] এই দাবির কোনও প্রত্নতাত্ত্বিক, ভাষাবৈজ্ঞানিক ও বংশানুবিদ্যা-সম্বন্ধীয় প্রমাণ না থাকায় তা মূলধারার গবেষকেদের দ্বারা প্রত্যাখ্যাত হয়েছে।[29]
এক পৌরাণিক কালপঞ্জিকে স্বতঃসিদ্ধ বলে গ্রহণ
"আর্য-স্বাদেশিকতাবাদ" ধারণাটি ধর্মীয় ইতিহাসের প্রথাগত হিন্দু ধারণার সঙ্গে খাপ খায়। কারণ, এই ধারণা অনুযায়ী, হিন্দুধর্মের উৎপত্তি স্মরণাতীত কালে এবং বৈদিক আর্যরা সুপ্রাচীনকাল থেকেই ভারতে বসবাস করছেন।[note 25] স্বাদেশিকতাবাদীদের ধারণার মূলে রয়েছে রামায়ণ, মহাভারত ও পুরাণ সাহিত্যের কালপঞ্জি, যেখানে রাজাদের নামের তালিকা ও বংশলতিকা পাওয়া যায়।[123][124] প্রাচীন ভারতের প্রথাসম্মত কালপঞ্জি গঠনে এই তালিকাই ব্যবহৃত হয়।[125] "স্বাদেশিকতাবাদীরা" অনুসরণ করেন এক "পৌরাণিক অ্যাজেন্ডা",[126] যাতে বলা হয় যে, এই তালিকাগুলির সময়কাল খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ সহস্রাব্দ পর্যন্ত। জানা যায় যে, আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ৩০০ অব্দ নাগাদ পাটলিপুত্রের মৌর্য রাজসভায় উপস্থিত গ্রিক রাজদূত মেগাস্থিনিস ১৫৩ জন রাজার এক প্রথাসম্মত তালিকার কথা শুনেছিলেন। এই তালিকার রাজাদের রাজত্বকাল ৬,০৪২ বর্ষব্যাপী, যা খ্রিস্টপূর্ব ৩১০২ সালে কলিযুগের শাস্ত্রসম্মত সূচনাকালেরও পূর্ববর্তী।[123] এই রাজতালিকার ভিত্তি সূত চারণকবি প্রথা এবং এই তালিকা যা থেকে উৎসারিত তা মুখে মুখে প্রচারিত হত এবং অবিরাম পরিমার্জিত হত।[123]
এই তালিকাগুলির সঙ্গে জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যাও দেওয়া হয়ে থাকে, যার মাধ্যমে ঋগ্বেদের এক প্রাচীনতর তারিখ অনুমান করা হয়।[127] এরই সঙ্গে ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্ব ও ঘটনাবলির পুনঃতারিখায়নের কাজও চলে। বুদ্ধের তারিখ নির্ধারিত হয় খ্রিস্টপূর্ব ১১০০ অব্দ বা খ্রিস্টপূর্ব ১৭০০ অব্দ এবং চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের (আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ৩০০ অব্দ) স্থলাভিষিক্ত হয় গুপ্ত রাজা চন্দ্রগুপ্ত।[128][note 26] ভারত যুদ্ধের (কুরুক্ষেত্র যুদ্ধ) তথা কলিযুগের আরম্ভের তারিখ নির্ধারিত হয় খ্রিস্টপূর্ব ৩১৩৯-৩৮ অব্দ।[note 27]
আর্য-স্বাদেশিকতাবাদী দৃশ্যকল্প
মাইকেল উইটজেল "স্বদেশীয় আর্য" দৃশ্যকল্পের তিনটি প্রধান ধরনকে চিহ্নিত করেছেন:[130]
১. একটি "নরমপন্থী" মত, যেখানে বলা হয়েছে যে ঋগ্বৈদিক আর্যরা ভারতীয় উপমহাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলেরই আদি বাসিন্দা। অরবিন্দ ঘোষ ও দয়ানন্দ এই মতে বিশ্বাস করতেন।;[note 28]
২. "ভারত থেকে বহির্গমন" মতে বিশ্বাসীরা মনে করেন যে, ভারতই হল প্রত্ন-ইন্দো-ইউরোপীয় স্বভূমি। এই মতবাদটি প্রথম প্রস্তাবিত হয় অষ্টাদশ শতাব্দীতে। পরবর্তীকালে হিন্দুত্ব-অনুরাগী[132] কোয়েনরাড এস্ট (১৯৯৯) এটির পুনরুজ্জীবন ঘটান। হিন্দু জাতীয়তাবাদে শ্রীকান্ত তালাগেরি (২০০০) কর্তৃক এটি আরও জনপ্রিয়তা লাভ করে।[133];[131][note 29]
৩. ভারত থেকেই বিশ্বের সকল ভাষা ও সভ্যতা উৎসারিত হয়েছে, এই মতবাদ। ডেভিড ফ্রলি প্রমুখ এই মতের প্রবক্তা।
কাজানাস একটি চতুর্থ দৃশ্যকল্পও যোগ করেছেন:
৪. খ্রিস্টপূর্ব ৪৫০০ অব্দেরও পূর্বে আর্যরা সিন্ধু উপত্যকায় প্রবেশ করে এবং হরপ্পাবাসীর সঙ্গে মিশে যায় অথবা তারাই ছিল হরপ্পার অধিবাসী।[26]
অরবিন্দের আর্য বিশ্ববোধ
অরবিন্দের মতে, "আর্য"রা কোনও নির্দিষ্ট জাতিগোষ্ঠীর সদস্য নয়, বরং যে ব্যক্তি "আত্ম-সংস্কৃতির, অন্তর্মুখী ও বহির্মুখীর প্রথার, আদর্শবাদের, মহাপ্রাণতার একটি নির্দিষ্ট ধরন গ্রহণ করেন", তিনিই আর্য।[135] অরবিন্দ আর্যদের শক্তিমত্তা ও চারিত্রিক দৃঢ়তার পুনরুত্থান ঘটিয়ে ভারতের শক্তি বৃদ্ধি করতে চেয়েছিলেন।[136] ভারতে "আর্য অনুপ্রবেশকারী" ও এক কৃষ্ণাঙ্গ স্থানীয় অধিবাসীদের মধ্যে জাতিগত বিভাজনের ঐতিহাসিকতা তিনি অস্বীকার করেন। অবশ্য তিনি প্রাচীন ভারতে দুই প্রকার সংস্কৃতির কথা স্বীকার করেন। যথা: উত্তর ও মধ্য ভারত ও আফগানিস্তানের আর্য সংস্কৃতি এবং পূর্ব, দক্ষিণ ও পশ্চিম ভারতের অনার্য সংস্কৃতি। এইভাবেই তিনি ইউরোপীয় ইতিহাসবিদদের দ্বারা কথিত সাংস্কৃতিক বিভাজনের ধারণাটি গ্রহণ করেছিলেন।[137]
"ভারত থেকে বহির্গমন" তত্ত্ব
"ভারত থেকে বহির্গমন" (ইংরেজি: Out of India theory, সংক্ষেপে: OIT) বা "ভারতীয় উরহেইমত তত্ত্ব" হল এমন একটি মতবাদ যা মনে করে, ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা পরিবারের উৎস উত্তর ভারত এবং সেখান থেকে অন্যান্য ইন্দো-ইউরোপীয় অঞ্চলে অনুপ্রবেশের একাধিক পর্যায়ের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।[web 3] এই তত্ত্ব অনুযায়ী, হরপ্পা সভ্যতার অধিবাসীরা ভাষাগত দিক থেকে ইন্দো-আর্য।[57]
ঔপনিবেশিক শাসন এবং হিন্দু রাজনীতির জন্য তাৎপর্য
আর্য-স্বাদেশিকতাবাদের পক্ষে আর্য আক্রমণ তত্ত্ব হিন্দু জাতীয়তাবাদে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।[138] ঔপনিবেশিকতার পটভূমিতে এবং ভারতে জাতি গঠনের পরবর্তী কাজকে বোঝাতে হবে।
হিন্দু পুনরুজ্জীবনবাদ এবং জাতীয়তাবাদ
মূলধারার দৃষ্টিভঙ্গির বিপরীতে, হিন্দু পুনরুজ্জীবনবাদী আন্দোলন আর্য বহিরাগমণ উৎসকে অস্বীকার করে। আর্য সমাজ (আর্যদের সমাজ) এর প্রতিষ্ঠাতা দয়ানন্দ সরস্বতী মতে বেদ হচ্ছে সমস্ত জ্ঞানের উৎস যা আর্যদের নিকট প্রকাশিত হয়েছিল। তিব্বতে প্রথম মানুষ (একজন আর্য) সৃষ্টি হয়েছিল এবং সেখানে কিছুকাল বসবাস করে আর্যরা নেমে এসে ভারতে বসতি স্থাপন করেছিল, যা আগে শূন্য ছিল।[139]
থিওসফিক্যাল সোসাইটি মতে আর্যরা ছিল ভারতের প্রাচীন নিবাসী, কিন্তু তারা ইউরোপীয় সভ্যতার পূর্বপুরুষও ছিল। সোসাইটি ভারতের আধ্যাত্মবাদ এবং ইউরোপের বস্তুবাদের মধ্যে একটি দ্বিধাবিভক্তি দেখেছিল।[140]
রোমিলা থাপারের মতে, সাভারকর এবং গোলওয়ালকরের নেতৃত্বে হিন্দু জাতীয়তাবাদীরা, জাতির জন্য একটি হিন্দু পরিচয় তৈরি করতে আগ্রহী, তারা মনে করে যে, আদি হিন্দুরা ছিল আর্য এবং তারা ভারতের প্রাচীন নিবাসী। ভারতের জনগণের মধ্যে আর্যদের কখনো কোনো আগ্রাসন হয়নি এবং কোনো বিরোধ ছিল না। আর্যদের ভাষা ছিল সংস্কৃত এবং পরবর্তীতে ভারত থেকে পশ্চিমে আর্য সভ্যতা ছড়িয়ে পড়ে।[140]
উইটজেল সাভারকর এবং গোলওয়ালকরের লেখায় "স্বাদেশিক আর্য" ধারণার সন্ধান করেছেন। গোলওয়ালকার (১৯৩৯) উপমহাদেশে "আর্যদের" কোনো অভিবাসন অস্বীকার করেছিলেন, জোর দিয়েছিলেন যে সমস্ত হিন্দু সর্বদা "মাটির সন্তান"। উইটজেলের মতে এই ধারণাটি সমসাময়িক ফ্যাসিবাদের রক্ত আর মাটির কথা মনে করিয়ে দেয়। যেহেতু এই ধারণাগুলো আন্তর্জাতিকতাবাদী এবং সমাজমুখী নেহেরু-গান্ধী সরকারের দ্বারপ্রান্তে আবির্ভূত হয়েছিল, সেগুলো কয়েক দশক ধরে সুপ্ত ছিল এবং শুধুমাত্র ১৯৮০-এর দশকে তা প্রাধান্য পায়।[141]
বার্গন্ডার একইভাবে গোলওয়ালকারকে "স্বাদেশিক আর্য" ধারণার প্রবর্তক এবং গোয়েলের ভয়েস অফ ইন্ডিয়াকে এর উল্লেখযোগ্যতার উত্থানের উপকরণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন:[142]
আর্য অভিবাসন তত্ত্ব প্রথমে হিন্দু জাতীয়তাবাদে কোনো বিশেষ যুক্তিপূর্ণ ভূমিকা পালন করেনি। [...] উদাসীনতার এই ছাপ পরিবর্তিত হয়, তবে মাধব সদাশিব গোলওয়ালকরের (১৯০৬-১৯৭৩) সাথে, যিনি ১৯৪০ সাল থেকে তার মৃত্যু পর্যন্ত চরমপন্থী আধাসামরিক সংগঠন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (আরএসএস) এর নেতা ছিলেন। [...] তাদের অন্যান্য প্রকাশ্য আক্রমণাত্মক শিক্ষার বিপরীতে, হিন্দু জাতীয়তাবাদীরা আর্য অভিবাসনের প্রশ্নকে জনসাধারণের বক্তৃতার বাইরে রাখতে বা পরিবর্তন করার চেষ্টা করেনি; বরং, হিন্দুদের আদিবাসীত্বের তত্ত্বকে সর্বজনীন স্বীকৃতি অর্জনে সাহায্য করার প্রচেষ্টা করা হয়েছিল। এর জন্য প্রকাশক সীতা রাম গোয়েলের (জন্ম ১৯২১) উদ্যোগ ছিল সিদ্ধান্তমূলক। গোয়েলকে সবচেয়ে কট্টরপন্থী মনে করা যেতে পারে, কিন্তু একই সাথে হিন্দু জাতীয়তাবাদী মতাদর্শীদের মধ্যে অন্যতম বুদ্ধিজীবীও। [...] ১৯৮১ সাল থেকে গোয়েল 'ভয়েস অফ ইন্ডিয়া' নামে একটি প্রকাশনা সংস্থা চালাচ্ছেন যা ইংরেজিতে হিন্দু জাতীয়তাবাদী সাহিত্য প্রকাশ করে এমন কয়েকটির মধ্যে একটি যা একই সাথে 'বৈজ্ঞানিক' দাবি করে। যদিও কোনও অফিসিয়াল সংযোগ নেই, 'ভয়েস অফ ইন্ডিয়া'-এর বইগুলি - যা অসামান্য টাইপোগ্রাফিক মানের এবং একটি ভর্তুকি মূল্যে বিক্রি হয় - সঙ্ঘ পরিবারের নেতাদের মধ্যে বিস্তৃত। [...] ১৯৯০-এর দশকে হিন্দু জাতীয়তাবাদের ক্রমবর্ধমান রাজনৈতিক প্রভাবের ফলে আর্য অভিবাসন তত্ত্ব সংশোধন করার প্রচেষ্টাও একাডেমিক জনসাধারণের কাছে পরিচিত হয়ে ওঠে।
বর্তমান সময়ের রাজনৈতিক তাৎপর্য
লার্স মার্টিন ফস "আর্য স্বাদেশিকতাবাদ" এর রাজনৈতিক তাৎপর্য উল্লেখ করেছেন।[138] তিনি উল্লেখ করেন যে "আর্য স্বাদেশিকতাবাদ" হিন্দু জাতীয়তাবাদীরা তাদের মতাদর্শের একটি অংশ হিসাবে গ্রহণ করেছে, যা এটিকে একটি পণ্ডিত সমস্যা ছাড়াও একটি রাজনৈতিক বিষয় করে তোলে।[138] আদিবাসী আর্যবাদের প্রবক্তারা অগত্যা পশ্চিমা ভারতবিদ্যার "নৈতিক অযোগ্যতার" সাথে জড়িত, যা বেশিরভাগ আদিবাসী সাহিত্যে একটি পুনরাবৃত্ত থিম। আদিবাসী সাহিত্যে এবং অর্গানাইজারের মতো হিন্দু জাতীয়তাবাদী প্রকাশনাগুলোতে একই অলঙ্কার ব্যবহার করা হচ্ছে।[138]
অভিজিৎ রবিনুতলার মতে, ভারতে হিন্দুত্বের একচেটিয়া দাবির জন্য প্রাচীন নিবাসীদের অবস্থান অপরিহার্য:[143]
বিজেপি হিন্দুত্ব বা "হিন্দুত্ব" সম্পর্কে পার্টির ধারণার জন্য ইন্দো-আর্যদের মৌলিক বলে মনে করে: ভারত শুধুমাত্র হিন্দুদের এবং তাদের জন্য একটি জাতি। যারা ভারতকে তাদের পবিত্র ভূমি মনে করে তারাই জাতিতে থাকবে। বিজেপির দৃষ্টিকোণ থেকে, ইন্দো-আর্য জনগণ ভারতের প্রাচীন নিবাসী ছিল এবং তাই তারাই প্রথম 'প্রকৃত হিন্দু'। তদনুসারে, এই দৃষ্টিকোণ থেকে 'ভারতীয়' পরিচয়ের একটি অপরিহার্য অংশ হল ভূমির প্রাচীন নিবাসী হওয়া।
ক্যালিফোর্নিয়ার হিন্দু পাঠ্যপুস্তক মামলার সাথে আর্য উৎস সম্পর্কে মতবিরোধের প্রতিক্রিয়া ক্যালিফোর্নিয়ার আদালতে পৌঁছেছে, যেখানে দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়া ইতিহাসবিদ এবং ইন্ডিয়ান হিস্ট্রি কংগ্রেসের সভাপতি, দ্বিজেন্দ্র নারায়ণ ঝা সুপিরিয়রের কাছে একটি "গুরুত্বপূর্ণ হলফনামা" অনুসারে ক্যালিফোর্নিয়া আদালত:
...ভারতে আর্য উৎস বিতর্কের একটি ইঙ্গিত প্রদান করে, ... আদালতকে 'স্বাদেশিক আর্য' দাবির পক্ষে না পড়ার জন্য বলেছিল কারণ এটি 'মুসলিম ও খ্রিস্টানদের বিদেশী হিসাবে বিভ্রান্তির দিকে নিয়ে গেছে এবং ভারতীয় সংস্কৃতিতে অ-হিন্দুদের অবদান' প্রায় অস্বীকার করেছে।
থাপারের মতে, মোদির সরকার এবং বিজেপি "পৌরাণিক কাহিনী এবং স্টেরিওটাইপগুলোকে ছড়িয়ে দিয়েছে," যেমন "আর্যদের একক অভিন্ন সংস্কৃতি, হিন্দুদের পূর্বপুরুষ, উপমহাদেশে বিরাজমান, অন্য সকলকে অন্তর্ভুক্ত করার" উপর জোর দেওয়া সত্ত্বেও ভারতে পরিযাণের জন্য পাণ্ডিত্যপূর্ণ প্রমাণ, যা "প্রাথমিক ইতিহাসের হিন্দুত্ব নির্মাণের প্রতি অশ্লীলতা।"
আরও দেখুন
- দ্রাবিড় সংস্কৃতি
ইন্দো-আর্য
রাজনীতি
- ইতিহাসলিখন বিদ্যা ও জাতীয়তাবাদ
- গৈরিকীকরণ
- এনসিইআরটি বিতর্ক
স্বাদেশিকতাবাদী
- ভয়েস অফ ধর্ম
- এন. এস. রাজারাম
- ডেভিড ফ্রলি
- ভয়েস অফ ইন্ডিয়া
- সুভাষ কাক
বই
- দি আর্কটিক হোম ইন দ্য বেদস (১৯০৩)
- ইন সার্চ অফ দ্য ক্রেডল অফ সিভিলাইজেশন
- আর্য ইনভেশন অফ ইন্ডিয়া: দ্য মিথ অ্যান্ড দ্য ট্রুথ (১৯৯৩)
- আপডেট অন দি আর্য ইনভেশন ডিবেট (১৯৯৯)
- দ্য ঋগ্বেদ: আ হিস্টোরিক্যাল অ্যানালাইসিস (২০০০)
অন্যান্য
পাদটীকা
- Witzel: "For some decades already, linguists and philologists such as Kuiper 1955, 1991, Emeneau 1956, Southworth 1979, archaeologists such as Allchin 1982, 1995, and historians such as R. Thapar 1968, have maintained that the Indo-Aryans and the older local inhabitants ('Dravidians', 'Mundas', etc.) have mutually interacted from early on, that many of them were in fact frequently bilingual, and that even the RV already bears witness to that. They also think, whether explicitly following Ehret's model (1988, cf. Diakonoff 1985) or not, of smaller infiltrating groups (Witzel 1989: 249, 1995, Allchin 1995), not of mass migrations or military invasions. However, linguists and philologists still maintain, and for good reasons, that some IA speaking groups actually entered from the outside, via some of the (north)western corridors of the subcontinent."[28]
- Entry of the Indo-Aryans:
* Lowe (2015, pp. 1–2): "... the eastward migration of the Indo-Aryan tribes from the mountains of what is today northern Afghanistan across the Punjab into north India."
* Dyson (2018, pp. 14–15): "Although the collapse of the Indus valley civilization is no longer believed to have been due to an ‘Aryan invasion’ it is widely thought that, at roughly the same time, or perhaps a few centuries later, new Indo-Aryan-speaking people and influences began to enter the subcontinent from the north-west. Detailed evidence is lacking. Nevertheless, a predecessor of the language that would eventually be called Sanskrit was probably introduced into the north-west sometime between 3,900 and 3,000 years ago. This language was related to one then spoken in eastern Iran; and both of these languages belonged to the Indo-European language family."
* Pinkney (2014, p. 38): "According to Asko Parpola, the Proto-Indo-Aryan civilization was influenced by two external waves of migrations. The first group originated from the southern Urals (c. 2100 BCE) and mixed with the peoples of the Bactria-Margiana Archaeological Complex (BMAC); this group then proceeded to South Asia, arriving around 1900 BCE. The second wave arrived in northern South Asia around 1750 BCE and mixed with the formerly arrived group, producing the Mitanni Aryans (c. 1500 BCE), a precursor to the peoples of the Ṛgveda." - The Ancient DNA revolution since about 2015, along with genome-wide techniques like Admixture Analysis and PCA has provided a fresh new perspective and large amounts of relevant data regarding the steppe migrations.[31][33][34] For Europe, Corded Ware and later Bell Beaker cultures are now shown to be the result of large-scale steppe pastoralist takeovers which replaced the local genetics up to 75% and 90% respectively,[35][36][37] while recent genetic research further confirmed the migration of Steppe pastoralists into Western Europe and South Asia.[38][31][39][40][41] Even in areas where population turnover is lower, there is a marked sex bias in the resulting mixed population in favor of steppe males, such as in India.[42]
- David Anthony (1995): "Language shift can be understood best as a social strategy through which individuals and groups compete for positions of prestige, power, and domestic security […] What is important, then, is not just dominance, but vertical social mobility and a linkage between language and access to positions of prestige and power […] A relatively small immigrant elite population can encourage widespread language shift among numerically dominant indigenes in a non-state or pre-state context if the elite employs a specific combination of encouragements and punishments. Ethnohistorical cases […] demonstrate that small elite groups have successfully imposed their languages in non-state situations."[49]
- Witzel: "Just one "Afghan" IndoAryan tribe that did not return to the highlands but stayed in their Panjab winter quarters in spring was needed to set off a wave of acculturation in the plains, by transmitting its 'status kit' (Ehret) to its neighbors."[50] […] "Actually, even this is, strictly speaking, not necessary. The constant interaction of "Afghan" highlanders and Indus plain agriculturists could have set off the process. A further opening was created when, after the collapse of the Indus Civilization, many of its people moved eastwards, thus leaving much of the Indus plains free for IA style cattle breeding. A few agricultural communities (especially along the rivers) nevertheless continued, something that the substrate agricultural vocabulary of the RV clearly indicates (Kuiper 1991, Witzel 1999a,b). In an acculturation scenario the actual (small) number of people (often used a 'clinching' argument by autochthonists) that set off the wave of adaptations does not matter: it is enough that the 'status kit' (Ehret) of the innovative group (the pastoralist Indo-Aryans) was copied by some neighboring populations, and then spread further.[51]
- Thomason and Kaufman note that Dravidian features in Sanskrit and later Indic languages may be explained by "absorption". They quote Emeneau: "absorption, not displacement, is the chief mechanism in radical language changes of the kind we are considering."[53] Thomason and Kaufman note that a basic assumption is that Dravidians shifted in considerable numbers, so they could not only impose their own habits on Indic, but were also numerous enough to influence Indic as a whole.[53]
- Koenraad Elst: "The theory of which we are about to discuss the linguistic evidence, is widely known as the "Aryan invasion theory" (AIT). I will retain this term even though some scholars object to it, preferring the term "immigration" to "invasion." They argue that the latter term represents a long-abandoned theory of Aryan warrior bands attacking and subjugating the peaceful Indus civilization. This dramatic scenario, popularized by Sir Mortimer Wheeler, had white marauders from the northwest enslave the black aboriginals, so that "Indra stands accused" of destroying the Harappan civilization. Only the extremist fringe of the Indian Dalit (ex-Untouchable) movement and its Afrocentric allies in the USA now insist on this black-and-white narrative (vide Rajshekar 1987; Biswas 1995). But, for this once, I believe the extremists have a point. North India's linguistic landscape leaves open only two possible explanations: either Indo-Aryan was native, or it was imported in an invasion. In fact, scratch any of these emphatic "immigration" theorists and you'll find an old-school invasionist, for they never fail to connect Aryan immigration with horses and spoked-wheel chariots, that is, with factors of military superiority.[69]
- David Anthony, in his The Horse, the Wheel, and Language, has provided an extensive overview of the archaeological trail of the Indo-European people across the Eurasian steppes and central Asia.
- While arguing for an indigenous cultural continuity, Shaffer gives two possible alternative explanations for the similarities between Sanskrit and western languages, arguing for non-Indian origins.[77]
1. The first is a linguistic relationship with a "Zagrosian family of language linking Elamite and Dravidian on the Iranian Plateau," as proposed by McAlpin. According to Shaffer "linguistic similarities may have diffused west from the plateau as a result of the extensive trading networks linking cultures in the plateau with those in Mesopotamia and beyond," while also linking with the Kelteminar culture in Central Asia.[78] Yet, Shaffer also notes that the Harappan culture was not extensively tied to this network in the third millennium BCE, leaving the possibility that "membership in a basic linguistic family - Zagrosian - may account for some of the linguistic similarities of later periods."[78][subnote 1]
2. The second possibility is that "such linguistic similarities are a result of post-second millennium B.C. contacts with the west"[78] by trade, taken over by people who also adopted a new way of societal organisation.[80] This language was used to record the myths preserved in the Vedas. According to Shaffer, "[o]nce codified, it was advantageous for the emerging hereditary social elites to stabilize such linguistic traits with the validity of the explanations offered in the literature enhancing their social position."[81] - See, among others: Lazaridis et al. (2016),Silva et al. (2017), Narasimhan et al. (2019)
- While Shinde et al. (2019), published in Cell, confirmed the Indo-Aryan migrations, news-reports stated that the study proved the Indo-Aryan migration theory to be wrong.[web 8][web 9] This suggestion was reinforced by Shinde himself and Niraj Rai, stating that their study "completely sets aside the Aryan Migration/Invasion Theory."[web 10][web 11]
Shinde's statements were refuted by his co-author Nick Patterson, and by Vagheesh Narasimhan, Shinde's co-author on Narasimhan et al. (2019),[web 10] and met with scepticism in other news reports.[web 10][web 11] David Reich repeated that Steppe people contributed to the genetic make-up of India,[web 12] while Friese (2019) commented on the political complications of doing genetic research on India's history.[89] - Vedas:
* Lowe (2015, pp. 1–2): "It consists of 1,028 hymns (suktas), highly crafted poetic compositions originally intended for recital during rituals and for the invocation of and communication with the Indo-Aryan gods. Modern scholarly opinion largely agrees that these hymns were composed between around 1500 BCE and 1200 BCE, during the eastward migration of the Indo-Aryan tribes from the mountains of what is today northern Afghanistan across the Punjab into north India."
* Witzel (2006b, pp. 158–190, 160): "The Vedas were composed (roughly between 1500-1200 and 500 BCE) in parts of present-day Afghanistan, northern Pakistan, and northern India. The oldest text at our disposal is the Rgveda (RV); it is composed in archaic Indo-Aryan (Vedic Sanskrit)."
* Pinkney (2014, p. 38): " Michael Witzel has assigned an approximate chronology to the strata of Vedic languages, arguing that the language of the Ṛgveda changed through the beginning of the Iron Age in South Asia, which started in the Northwest (Punjab) around 1000 BCE. On the basis of comparative philological evidence, Witzel has suggested a five-stage periodization of Vedic civilization, beginning with the Ṛgveda. On the basis of internal evidence, the Ṛgveda is dated as a late Bronze Age text composed by pastoral migrants with limited settlements, probably between 1350 and 1150 BCE in the Punjab region." - Elst (1999): "The astronomical lore in Vedic literature provides elements of an absolute chronology in a consistent way. For what it is worth, this corpus of astronomical indications suggests that the Rg-Veda was completed in the 4th millennium AD, that the core text of the Mahabharata was composed at the end of that millennium, and that the Brahmanas and Sutras are products of the high Harappan period towards the end of the 3rd millennium BC. This corpus of evidence is hard to reconcile with the AIT, and has been standing as a growing challenge to the AIT defenders for two centuries."
- See History of the horse in the Indian subcontinent, note 37
- R.S. Sharma (1995), as quoted in Bryant 2001: "the Rg Vedic culture was pastoral and horse-centered, while the Harappan culture was neither horse-centered nor pastoral."
- Sharma (1974), as cited in Bryant 2001, পৃ. 271
- Bökönyi, as cited by B.B. Lal, stated that "The occurrence of true horse (Equus caballus L.) was evidenced by the enamel pattern of the upper and lower cheek and teeth and by the size and form of incisors and phalanges (toe bones)."Lal 1998, পৃ. 111, quoted from Bökönyi's letter to the Director of the Archaeological Survey of India, 1993-12-13.
- Witzel: "The autochthonous theory overlooks that RV 3.33206 already speaks of a necessarily smaller Sarasvatī: the Sudås hymn 3.33 refers to the confluence of the Beas and Sutlej (Vipåś, Śutudrī). This means that the Beas had already captured the Sutlej away from the Sarasvatī, dwarfing its water supply. While the Sutlej is fed by Himalayan glaciers, the Sarsuti is but a small local river depending on rain water.
In sum, the middle and later RV (books 3, 7 and the late book, 10.75) already depict the present-day situation, with the Sarasvatī having lost most of its water to the Sutlej (and even earlier, much of it also to the Yamunå). It was no longer the large river it might have been before the early Rgvedic period.[119] - The Vedic Foundation states: "The history of Bharatvarsh (which is now called India) is the description of the timeless glory of the Divine dignitaries who not only Graced the soils of India with their presence and Divine intelligence, but they also showed and revealed the true path of peace, happiness and the Divine enlightenment for the souls of the world that still is the guideline for the true lovers of God who desire to taste the sweetness of His Divine love in an intimate style."[web 16]
- Witzel calls these "absurd dates", and refers to Elst 1999, Update on the Aryan Invasion Debate, p.97 for more of them.[128]
Elst: "It is not only the Vedic age which is moved a number of centuries deeper into the past, when comparing the astronomical indications with the conventional chronology. Even the Gupta age (and implicitly the earlier ages of the Buddha, the Mauryas etc.) could be affected. Indeed, the famous playwright and poet Kalidasa, supposed to have worked at the Gupta court in about 400 AD, wrote that the monsoon rains started at the start of the sidereal month of Ashadha; this timing of the monsoon was accurate in the last centuries BCE. This implicit astronomy-based chronology of Kalidasa, about 5 centuries higher than the conventional one, tallies well with the traditional high chronology of the Buddha, whom Chinese Buddhist tradition dates to c. 1100 BC, and the implicit Puranic chronology even to c. 1700 BC.[web 17]
Elst 1999 2.3 note 17: "The argument for a higher chronology (by about 6 centuries) for the Guptas as well as for the Buddha has been elaborated by K.D. Sethna in Ancient India in New Light, Aditya Prakashan, Delhi 1989. The established chronology starts from the uncertain assumption that the Sandrokottos/ Chandragupta whom Megasthenes met was the Maurya rather than the Gupta king of that name. This hypothetical synchronism is known as the sheet-anchor of Indian chronology.[web 17] - Elst: "In August 1995, a gathering of 43 historians and archaeologists from South-Indian universities (at the initiative of Prof. K.M. Rao, Dr. N. Mahalingam and Dr. S.D. Kulkarni) passed a resolution fixing the date of the Bharata war at 3139–38 BC and declaring this date to be the true sheet anchor of Indian chronology."[web 17]
The Indic Studies Foundation reports of another meeting in 2003: "Scholars from across the world came together, for the first time, in an attempt to establish the 'Date of Kurukshetra War based on astronomical data.'"[web 18] - Witzel mentions:[130]
- Aurobindo (no specific source)
- Waradpande, N.R., "Fact and fictions about the Aryans." In: Deo and Kamath 1993, 14-19
- Waradpande, N.R., "The Aryan Invasion, a Myth." Nagpur: Baba Saheb Apte Smarak Samiti 1989
- S. Kak 1994a, "On the classification of Indic languages." Annals of the Bhandarkar Oriental Research Institute 75, 1994a, 185-195.
- Elst 1999, "Update on the Aryan Invasion Debate." Delhi: Aditya Prakashan. p.119
- Talageri 2000, "Rigveda. A Historical Analysis." New Delhi: Aditya Prakashan, p.406 sqq,[131]
- Lal 1997, "The Earliest Civilization of South Asia (Rise, Maturity and Decline)." New Delhi: Aryan Books International, p.281 sqq.
- In any "Indigenous Aryan" scenario, speakers of Indo-European languages must have left India at some point prior to the 10th century BCE, when first mention of Iranian peoples is made in Assyrian records, but likely before the 16th century BCE, before the emergence of the Yaz culture which is often identified as a Proto-Iranian culture. (See, e.g., Roman Ghirshman, L'Iran et la migration des Indo-aryens et des Iraniens).[134]
তথ্যসূত্র
উল্লেখপঞ্জি
আরও পড়ুন
বহিঃসংযোগ
Wikiwand in your browser!
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.