Loading AI tools
উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
আনাস ইবনে মালিক ইবনে নাদার আল-খাজরাজ আল-আনসারি আরবি: أنس بن مالك الخزرجي الأنصاري [2] নবী মুহাম্মদ এর একজন সাহাবী ছিলেন। তিনি ছিলেন মদিনার খাজরাজ গোত্রের আনসার এবং সবচেয়ে ছোট সাহাবী ছিলেন। তার থেকে অগণিত হাদীস পাওয়া গেছে। তার মৃত্যু হয় ৯৩ হিজরীতে।
তার প্রকৃত নাম আনাস, কুনিয়াত বা উপনাম আবু হামযাহ মতান্তরে আবু ছুমামাহ। উপাধি হচ্ছে ‘খাদেমুর রাসূল’ (রাসূলের সেবক), ইমাম, মুফতী, ক্বারী, মুহাদ্দিছ প্রভৃতি।[3] তার পিতার নাম মালেক ইবনে নাযর এবং মাতার নাম উম্মে সুলাইম বিনতে মিলহান।[4] হাফেয ইবনে কাসীর তার মাতার নাম বলেছেন, উম্মে হারাম বিনতে মিলহান।[5] তিনি মদীনার প্রসিদ্ধ খাযরাজ গোত্রের নাজ্জার শাখায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পূর্ণ বংশ পরিচয় হচ্ছে আনাস ইবনে মালিক ইবনে নাযর ইবনে যামযাম ইবনে যায়েদ ইবনে হারাম ইবনে জুনদুব ইবনে আমের ইবনে গানাম ইবনে আদী ইবনে নাজ্জার।[6]
আনাস -এর নির্দিষ্ট জন্ম তারিখ জানা যায় না। তবে তিনি বলেন, "যখন নবী মদীনায় আগমন করেন তখন আমি ১০ বছরের বালক।"[7] এ হিসাবে তিনি ৩ নববী বর্ষ মুতাবিক ৬১২ খ্রিষ্টাব্দে মতান্তরে ৫ নববী বর্ষ মুতাবিক ৬১৪ খ্রিষ্টাব্দে মদীনায় জন্মগ্রহণ করেন। প্রথমোক্ত মতটিই অধিক প্রসিদ্ধ। শৈশবেই তার পিতা মালেক শত্রুর অতর্কিত আক্রমণে নিহত হন। ফলে আনাস ইয়াতীম হয়ে যান।[4]
মুহাম্মাদ মদীনায় আগমন করলে আবু ত্বালহা আনাস কে নিয়ে এসে বলেন,
"হে আল্লাহর রাসূল ! আনাস একজন বুদ্ধিমান ছেলে। সে আপনার খেদমত করবে।" আনাস বলেন, "অতঃপর বাড়িতে ও সফরে আমি তার খেদমত করেছি।"[8]
আনাসকে তার মা-খালাগণ মুহাম্মাদ এর সেবা করার জন্য উৎসাহিত করতেন।[9] মুহাম্মাদ মদীনায় আগমনের পর থেকে মৃত্যু অবধি আনাস তার সেবা করেন।[10]
আনাস ১০ বছর বয়স থেকে ২০ বছর পর্যন্ত অর্থাৎ তার জীবনের কৈশোর থেকে যৌবনেরও একটি অংশ মুহাম্মাদের সান্নিধ্যে কাটিয়েছেন। ফলে তিনি মুহাম্মাদের নিকট থেকে অশেষ জ্ঞানার্জন করেন।[11][12] তিনি মুহাম্মাদের নিকট থেকে হাদীস শ্রবণ করে তা লিখে রাখতেন এবং তাকে পুনরায় শুনাতেন।[13]
নবী মুহাম্মাদ আনাসের জন্য দো‘আ করেন,
"হে আল্লাহ! আপনি তার সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি বৃদ্ধি করে দিন এবং আপনি তাকে যা দিয়েছেন তাতে বরকত দান করুন।"[14]
আনাস অনেক জিহাদে অংশগ্রহণ করেছেন। তিনি রাসূলুল্লাহ -এর সাথে ৮টি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন।[10][15] তন্মধ্যে হুদাইবিয়ার সন্ধি, মক্কা বিজয়, হুনায়েন ও তায়েফ উল্লেখযোগ্য।[16] তিনি রাসূল এর সাথে বিদায় হজ্জ, ওমরা ও বায়‘আতে রিযওয়ানে শরীক হন।[10] তিনি বদর যুদ্ধে রাসূল এর খাদেম হিসাবে অংশগ্রহণ করেন। তিনি ইরানের প্রসিদ্ধ শহর তুসতার বিজয়ে অংশগ্রহণ করেন।[10] তখন তিনি হুরমুযানকে নিয়ে ওমর -এর নিকটে আসেন। অতঃপর সে ইসলাম গ্রহণ করে।[17]
নবী মুহাম্মাদের সান্নিধ্যে থেকে আনাস ইসলামি জ্ঞান লাভে ধন্য হয়েছিলেন। তিনি তা সাহাবী, তাবেঈ ও অন্যান্য মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন। তিনি মুহাম্মাদ, আবু বকর, ওমর, ওসমান, আব্দুল্লাহ ইবনে রাওয়াহা, মু‘আয ইবনে জাবাল, উসাইদ ইবনে হুযাইর, আবু ত্বালহা, ছাবেত ইবনে কায়েস, আব্দুর রহমান ইবনে আওফ, ইবনে মাসঊদ, মালেক ইবনে ছা‘ছা‘আহ, আবু যর, উবাদাহ ইবনে সামেত, আবু হুরায়রা, উম্মু সুলাইম বিনতু মিলহান (তার মাতা), তার খালা উম্মু হারাম, উম্মুল ফাযল (আববাসের স্ত্রী), ফাতেমাতুয যাহরা প্রমুখ থেকে হাদীস শ্রবণ ও বর্ণনা করেন। তার থেকে আবু হানিফা, হাসান, সুলাইমান আত-তাইমী, আবু ক্বিলাবাহ, ইবনে সীরীন, শা‘বী, আবু মিজলায, মাকহূল, ওমর ইবনে আব্দুল আযীয, সাবিত আল-বুনানী, আবূবকর ইবনে আব্দুল্লাহ আল-মুযনী, ইবনে শিহাব আয-যুহরী, ক্বাতাদাহ, ইবনেল মুনকাদির, ইসহাক ইবনে আব্দুল্লাহ আবু ত্বালহা, আব্দুল আযীয ইবনে ছুহাইব, শু‘আইব আল-হাবহাব, আমর ইবনে আমের আল-কূফী, হুমায়েদ আত-ত্বাবীল, ইয়াহইয়া ইবনে সাঈদ আল আনছারী, কাছীর ইবনে সুলাইম, ঈসা ইবনে তাহমান, ওমর ইবনে শাকির, ছুমামাহ, আল-জা‘দ আবু ওছমান, আনাস ইবনে সীরীন, আবু উমামা ইবনে সাহল ইবনে হুনাইফ, ইবরাহীম ইবনে মায়সারা, বুরাইদ ইবনে আবী মারিয়াম, বয়ান ইবনে বিশর, রবী‘আহ ইবনে আবু আব্দুর রহমান, সাঈদ ইবনে জুবাইর, সালমা ইবনে ওয়ারদান প্রমুখ হাদীস শুনেছেন ও বর্ণনা করেছেন।[11][18] ১৫০ হিজরী পর্যন্ত তার নির্ভরযোগ্য শিষ্য- সাথীগণ এবং ১৯০ হিজরী পর্যন্ত দুর্বল শিষ্যগণ বেঁচেছিলেন। তার ছাত্রদের নিকট থেকে যারা হাদীস শুনেছেন তন্মধ্যে নির্ভরযোগ্য অনেকে ২০০ হিজরীর পরেও জীবিত ছিলেন।[19] তার নিকট থেকে প্রায় ২০০ জন রাবী হাদীস বর্ণনা করেছেন।[10] তার থেকে বর্ণিত হাদীস সংখ্যা ২২৮৬টি। তন্মধ্যে সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিম ঐকমত্যে ১৮০টি, বুখারী এককভাবে ৮০টি এবং মুসলিম এককভাবে ৯০টি হাদীস বর্ণনা করেছেন।[20] কেউ বলেন, মুসলিম এককভাবে ৭০টি হাদীস বর্ণনা করেছেন।[21] -
আবু বকর খলীফা হওয়ার পর আনাসকে বাহরাইনে যাকাত আদায়কারী নিযুক্ত করেন।[22] ওমর ও তাকে বাহরাইনে যাকাত আদায়ের দায়িত্ব দিয়ে প্রেরণ করেন।[12][16] ইয়াযীদের মৃত্যুর পর ইবনে যুবায়ের আনাসের নিকট পত্র লেখেন। তখন তিনি ৪০ দিন বসরার মসজিদে ইমামতি করেন।[22]
আনাস (রাঃ) -এর মৃত্যুকাল নিয়ে ঐতিহাসিকগণের মাঝে মতভেদ পরিলক্ষিত হয়। হুমায়েদ, কাতাদাহ, হায়ছাম ইবনে আদী, সাঈদ ইবনে উফাইর ও আবু উবাইদ বলেন, তিনি ৯১ হিজরীতে মৃত্যুবরণ করেন। মা‘ন ইবনে ঈসা ও ওয়াকেদী বলেন, তিনি ৯২ হিজরীতে মৃত্যুবরণ করেন। ইবনে উলাইয়্যাহ, সাঈদ ইবনে আমের, আল-মাদায়েনী, আবু নু‘আইম, খলিফা, আল-ফাল্লাস বলেন, তিনি ৯৩ হিজরীতে মৃত্যুবরণ করেন। এটাই বিশুদ্ধ মত। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ১০৩ বছর, মতান্তরে ১০৭ বছর।[16][20][23] তিনি বসরায় মৃত্যুবরণ করেন।[16][24][23]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.