শীর্ষ প্রশ্ন
সময়রেখা
চ্যাট
প্রসঙ্গ
বিদায় হজ্জ
মুহাম্মদের শেষ ও একমাত্র তীর্থ উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
Remove ads
Remove ads
বিদায় হজ (আরবি: حِجَّة ٱلْوَدَاع) বলতে ইসলামের নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর জীবদ্দশায় তাঁর সম্পাদিত একমাত্র হজ হজ্বকে বোঝানো হয়, যা ১০ হিজরিতে মক্কা বিজয়ের পর সম্পন্ন হয়েছিল। মুসলমানদের বিশ্বাস, কুরআনের ২২:২৭ নম্বর আয়াত এই হজ পালনের প্রেরণা জোগায়। মুহাম্মদ (সা.) হজ পালনের ঘোষণা দিলে প্রায় এক লক্ষ সাহাবি মদিনায় একত্রিত হন এবং তাঁর সঙ্গে এই বাৎসরিক হজে অংশগ্রহণ করেন।
মুহাম্মদ (সা.) হজ্ব কিরান সম্পাদন করেন, যা এমন একটি হজ যাতে উমরাহ ও হজ একত্রে পালন করা হয়। জ্বিলহজের ৯ তারিখে, অর্থাৎ আরাফাহ দিবসে, তিনি জাবালে আরাফাতে দাঁড়িয়ে বিদায় খুতবা প্রদান করেন। এই পর্বত মক্কার বাইরে অবস্থিত।
এই হজের মাধ্যমে মুহাম্মদ (সা.) হজের অনেক গুরুত্বপূর্ণ নিয়ম ও আনুষ্ঠানিকতা নির্ধারণ করেন। এটি তাঁর জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ও বিস্তারিতভাবে লিপিবদ্ধ ঘটনা হিসেবে বিবেচিত। সাহাবিগণ তাঁর সঙ্গে এই হজে অংশগ্রহণ করে তাঁর প্রতিটি কর্ম, আচরণ ও বক্তব্য গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করেন এবং তা পরবর্তী প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দেন। এই কর্মপদ্ধতি মুসলমানদের জন্য সুন্নাহ হিসেবে পরিগণিত হয়, যা অনুসরণীয় আদর্শ।
Remove ads
পটভূমি
হিজরতের পর মুহাম্মদ (সা.) মদিনায় দশ বছর অতিবাহিত করেন, কিন্তু এই সময় তিনি কোনো হজ পালন করেননি, যদিও পূর্বে তিনি দু'বার উমরাহ সম্পাদন করেছিলেন। মুসলমানদের বিশ্বাস, সূরা আল-হাজ্জ্ব-এর ২২:২৭ নম্বর আয়াত নাজিল হলে হজ পালনের নির্দেশ আসে:[কুরআন ২২:২৭]
এবং মানুষের মধ্যে হজের ঘোষণা দাও; তারা তোমার কাছে আসবে পদব্রজে এবং ক্ষীণকায় উটের পিঠে চড়ে, আসবে দূর-দূরান্তের পথ পেরিয়ে।
এই নির্দেশের ভিত্তিতে মুহাম্মদ (সা.) সে বছর হজ পালনের সংকল্প করেন। তখন মদিনা ও আশপাশের অঞ্চলের মুসলমানরা তাঁর সঙ্গে হজের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। সফরের সময় মদিনার শাসক হিসেবে তিনি আবু দুজানাহ আল-আনসারীকে নিয়োগ দেন।
২৫ জ্বিলক্বদ (সম্ভবত ৬৩২ সালের ফেব্রুয়ারি) তারিখে তিনি মদিনা থেকে রওনা হন এবং তাঁর সব স্ত্রী এতে সঙ্গী হন।[১]
মক্কার উদ্দেশ্যে যাত্রার আগে তিনি যুল-হুলাইফা মীকাতে অবস্থান করেন এবং সেখানে সাহাবিদের ইহরাম পরিধানের পদ্ধতি শিক্ষা দেন। তিনি প্রথমে গোসল করেন, এরপর ইয়েমেনি তৈরি দুটি সেলাইবিহীন সাদা সুতির কাপড় দিয়ে ইহরাম পরেন। পরে তিনি ঐ মীকাতে যোহরের নামাজ আদায় করেন এবং ‘আল-কাসওয়া’ নামক উটের পিঠে চড়ে যাত্রা শুরু করেন।
অবশেষে আট দিনের যাত্রা শেষে মুহাম্মদ (সা.) মক্কায় পৌঁছান।[২][৩][৪][৫]
Remove ads
হজ্ব
সারাংশ
প্রসঙ্গ

মক্কার উপকণ্ঠে ধি তুয়া অঞ্চলে রাত্রিযাপন শেষে মুহাম্মদ (সা.) ও তাঁর সাহাবিরা পরদিন মসজিদুল হারামে প্রবেশ করেন। তাঁরা আজকের আস-সালাম গেট নামে পরিচিত দরজা দিয়ে প্রবেশ করে কাবার কাছে আসেন। মুহাম্মদ (সা.) এরপর কাবা শরিফের তাওয়াফ করেন এবং হজরে আসওয়াদ স্পর্শ ও চুম্বন করেন। এরপর নামাজ আদায় করে যমযম কূপ থেকে পানি পান করেন এবং সাফা ও মারওয়া পাহাড়ের মাঝে সাঈ করেন।[৬]
এরপর তিনি আল হুজুন নামক স্থানে অবস্থান করেন। যেহেতু তিনি হজ কিরান পালনের উদ্দেশ্যে ছিলেন, তাই সাঈ শেষেও ইহরাম খোলেননি। হজ কিরানে উমরাহ ও হজ একত্রে পালিত হয়। তিনি নির্দেশ দেন, যারা কোরবানির পশু আনেনি তারা শুধুমাত্র উমরার জন্য ইহরাম পরিধান করে তাওয়াফ ও সাঈ সম্পন্ন করে ইহরাম খোলার মাধ্যমে উমরাহ শেষ করবে।[৭]
জ্বিলহজের ৮ তারিখ সূর্যাস্তে মুহাম্মদ (সা.) মিনায় রওনা হন এবং সেখানেই যোহর, আসর, মাগরিব, এশা এবং পরদিন ফজর নামাজ আদায় করেন। পরদিন সকালে তিনি আরাফাতের উদ্দেশ্যে রওনা হন। উটের পাশে হেঁটে হেঁটে তিনি এগিয়ে যেতে থাকেন। হাজারো হাজি তালবিয়া ও তাকবির পাঠ করছিলেন। তিনি নামিরা নামক স্থানে পূর্ব দিকে তাঁর জন্য একটি তাঁবু স্থাপনের নির্দেশ দেন। সূর্য মধ্য গগনে পৌঁছানো পর্যন্ত তিনি সেখানে বিশ্রাম করেন। এরপর তিনি উটে আরোহণ করে উরানা উপত্যকায় পৌঁছান এবং সেখানে হাজারো সাহাবির সামনে তাঁর জীবনের শেষ জুমার খুতবা প্রদান করেন, যা বিদায় খুতবা নামে পরিচিত। এরপর তিনি যোহর ও আসর নামাজ একত্রে আদায় করেন এবং আরাফাতের ময়দানে থেকে বিকেল পর্যন্ত ইবাদত ও দোয়ায় রত থাকেন।[৮]
আল-মুবারকপুরীর মতে, এই সময় সূরা আল-মায়েদা-এর ৩ নম্বর আয়াত নাজিল হয়েছিল:[৯]
আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীন পরিপূর্ণ করে দিলাম, তোমাদের প্রতি আমার অনুগ্রহ সম্পন্ন করে দিলাম এবং ইসলামকে তোমাদের জন্য জীবনব্যবস্থা হিসেবে পছন্দ করলাম।
৯ তারিখ সূর্যাস্তের পর মুহাম্মদ (সা.) মুযদালিফায় পৌঁছান এবং সেখানে মাগরিব ও এশা নামাজ আদায় করেন। রাতটি সেখানে কাটিয়ে তিনি ফজরের সময় নামাজ ও দোয়া করেন। সকাল বেলা তিনি মিনায় ফিরে আসেন এবং রামি জামার রীতির অংশ হিসেবে প্রতিটি জামরায় পাথর নিক্ষেপ করেন এবং প্রত্যেকবার তাকবির বলেন।[১০]
এরপর তিনি তাঁর সঙ্গে আনা কোরবানির পশু জবাইয়ের নির্দেশ দেন। তিনি ও তাঁর সাহাবিরা সেই গোশত অল্প পরিমাণে আহার করেন এবং বাকিটা দান করেন। পরে তিনি আবার মক্কায় ফিরে যান, সেখানে আরেকবার তাওয়াফ করেন এবং যোহর নামাজ আদায় করেন। তিনি পুনরায় যমযমের পানি পান করেন এবং সেদিনই মিনায় ফিরে যান ও পুনরায় রামি জামার সম্পন্ন করেন।[১১]
পরবর্তী তিন দিন—১১, ১২ ও ১৩ জ্বিলহজ—যা আয়্যামে তাশরীক নামে পরিচিত, তিনি মিনায় কাটান এবং শয়তানকে পাথর নিক্ষেপ অব্যাহত রাখেন। আল-মুবারকপুরীর বর্ণনা অনুসারে, ১২ তারিখ সূরা আন-নাসর নাজিল হওয়ার পর মুহাম্মদ (সা.) আরেকটি ভাষণ প্রদান করেন।[১২]
Remove ads
আরও দেখুন
তথ্যসূত্র
বহিঃসংযোগ
Wikiwand - on
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Remove ads