Remove ads
সাহাবা উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
আবু যার আল-গিফারী আল-কিনানি ( أبو ذر الغفاري الكناني), যিনি জুন্দুব ইবনে জুনাদাহ ইবনে সুফিয়ান (جُندب بن جَنادة) নামেও পরিচিত ছিলেন, তিনি হলেন নবী মুহাম্মাদ (সা.) এর সময়ে ইসলাম গ্রহণকারীদের মধ্যে চতুর্থ বা পঞ্চম ব্যক্তি। তিনি বনু গিফার গোত্রের সন্তান ছিলেন। তার জন্মের তারিখ সম্পর্কে কিছু জানা যায় নি। তিনি ৬৫২ খ্রিষ্টাব্দে মদিনার পূর্ব মরুভূমি আর-রাবাযা নামক স্থানে মৃত্যুবরণ করেন।
আবু যার তার সুদৃঢ় উত্তম চরিত্র, যুহদ (দুনিয়া-বিমুখতা) এবং অধিকন্তু খলিফা উসমানের সময়ে প্রথম মুয়াবিয়ার বিরোধিতার জন্য স্মরণীয় হয়ে আছেন। শিয়া মুসলিমগণ তাকে আলির অনুসারী প্রধান মুসলিম চার সঙ্গীর একজন হিসেবে শ্রদ্ধা করে থাকেন।
মুহাজিরুনদের মধ্যে তিনি অন্যতম।[৩]
জুনদুব ইবন জুনাদাহ, আবু যার নামেই যিনি পরিচিত— তিনি ছিলেন গিফার গোত্রের সন্তান। বাইরের জগতের সাথে মক্কার সংযুক্তি ঘটিয়েছে যে ওয়াদ্দান উপত্যকাটি, সেখানেই ছিলো গিফার গোত্রের বসতি। মক্কার কুরাইশদের বাণিজ্য কাফেলা ওখান দিয়ে সিরিয়া যাতায়াত করতো। এসব কাফিলার নিরাপত্তার বিনিময়ে যে সামান্য অর্থ লাভ করতো তা দিয়েই তারা জীবিকা নির্বাহ করতো। ডাকাতি, রাহাজানিও ছিলো তাদের পেশা। মাঝে মাঝে তারা বাণিজ্য কাফেলাতে লুটতরাজ চালাতো। আবু যার ছিলো এ কাবীলারই সন্তান। বাল্যকাল থেকেই তিনি অসীম সাহস, প্রখর বুদ্ধিমত্তা ও দূরদৃষ্টির জন্য ছিলেন সকলের থেকে স্বতন্ত্র। জাহিলী যুগে প্রথম ভাগে তাঁর পেশাও ছিলো রাহাজানি। গিফার গোত্রের একজন দুঃসাহসী ডাকাত হিসেবে তিনি খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। তবে কিছুদিনের মধ্যে তাঁর জীবনে ঘটে গেলো এক বিপ্লব৷ তাঁর গোত্রীয় লোকেরা এক আল্লাহ ছাড়া যে সকল মূর্তির পূজা করতো, তাতে তিনি গভীর ব্যথা অনুভব করতে শুরু করেন। তিনি রাহাজানি পরিত্যাগ করে একাগ্রচিত্তে এক আল্লাহর ইবাদতে ঝুঁকে পড়েন, যখন সমগ্র আরব দেশ গুমরাহীর অতল গহ্বরে নিমজ্জিত ছিল। আবূ মা'শার বলেনঃ 'আবূ যার জাহিলী যুগেই মুওয়াহহিদ বা একত্ববাদী ছিলেন।' এক আল্লাহ ছাড়া অন্য কাওকে তিনি উপাস্য বলে বিশ্বাস করতেন না, অন্য কোন মূর্তি বা দেবদেবীর পূজাও করতেন না। তাঁর বিশ্বাস ও আল্লাহর ইবাদত মানু্ষের কাছে পরিচিত ছিল। এ কারণে যে ব্যক্তি সর্বপ্রথম রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আবির্ভাবের সংবাদ তাঁকে দিয়েছিলো, তিনি বলেছিলেন— হে আবূ যার, তোমার মত মক্কার এক ব্যক্তি লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলে থাকেন। [৪]
ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, মুহাম্মাদ সাঃ-এর আবির্ভাবের সংবাদ যখন আবু যার রা.-এর নিকট পৌঁছল, তখন তিনি তাঁর ভাই (উনাইস) কে বললেন, তুমি এই উপত্যকায় যেয়ে ঐ ব্যক্তির সম্পর্কে জেনে আস যে ব্যক্তি নিজেকে নবী বলে দাবী করছেন ও তাঁর কাছে আসমান থেকে সংবাদ আসে। তাঁর কথাবার্তা মনোযোগ সহকারে শুন এবং ফিরে এসে আমাকে শুনাও। তাঁর ভাই (মক্কামুখী) রওয়ানা হয়ে ঐ ব্যক্তির নিকট পৌঁছে তাঁর কথাবার্তা শোনালেন। এরপর তিনি আবু যারের নিকট প্রত্যাবর্তন করে বললেন, আমি তাকে দেখেছি যে, তিনি উত্তম স্বভাব অবলম্বন করার জন্য (লোকদেরকে) নির্দেশ দান করছেন এবং এমন কালাম (পড়তে শুনলাম) যে পদ্য নয়। এতে আবু যার রা. বললেন, আমি যে উদ্দেশ্যে তোমাকে পাঠিয়েছিলাম সে বিষয়ে তুমি আমাকে সন্তোষজনক উত্তর দিতে পারলেনা। আবু যার রা. সফরের উদ্দেশ্যে যৎসামান্য পাথেয় সংগ্রহ করলেন এবং একটি ছোট্ট পানির মশকসহ মক্কায় উপস্থিত হলেন। মসজিদে হারামে প্রবেশ করে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে তালাশ করতে লাগলেন। তিনি তাকে (মুহাম্মাদ সাঃ) চিনতেন না। আবার কাউকে তাঁর সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করাও পছন্দ করলেন না। এমতাবস্থায় রাত হয়ে গেল। তিনি (মসজিদে) শুয়ে পড়লেন। আলী রা. তাকে দেখে বুঝতে পারলেন যে, লোকটি বিদেশী মুসাফির। যখন আবু যার আলী রা.-কে দেখলেন, তখন তিনি তাঁর পিছনে গেলেন। কিন্তু সকাল পর্যন্ত একে অন্যকে কোন কিছু জিজ্ঞাসাবাদ করলেন না। আবু যার রা. পুনরায় তাঁর পাথেয় ও মশক নিয়ে মসজিদে হারামের দিকে চলে গেলেন। এ দিনটি এমনিভাবে কেটে গেল, কিন্তু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে দেখতে পেলেন না। সন্ধ্যা ঘনিয়ে এল। তিনি (পূর্ব দিনের) শোয়ার জায়গায় ফিরে গেলেন। তখন আলী রা. তাঁর পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি বললেন, এখন কি মুসাফির ব্যক্তির গন্তব্য স্থানের সন্ধান লাভের সময় হয়নি? সে এখনও এ জায়গায় অবস্থান করছে। তিনি তাকে সঙ্গে নিয়ে গেলেন। (পথিমধ্যে) কেউ কাউকে কোন কিছু জিজ্ঞাসাবাদ করলেন না। এমতাবস্থায় তৃতীয় দিন হয়ে গেল। আলী রা. পূর্বের ন্যায় তাঁর পাশ দিয়ে যেতে লাগলেন। তিনি তাকে সঙ্গে নিয়ে গেলেন। এরপর তিনি তাকে জিজ্ঞাসা করলেন। তুমি কি আমাকে বলবেনা কি জিনিস এখানে আসতে তোমাকে উদ্বুদ্ধ করেছে? আবু যার রা. বললেন, তুমি যদি আমাকে সঠিক পথ প্রদর্শনের পাকাপোক্ত অঙ্গীকার কর তবেই আমি তোমাকে বলতে পারি। আলী রা. অঙ্গীকার করলেন এবং আবু যার রা. ও তাঁর আগমনের উদ্দেশ্য বর্ণনা করলেন। আলী রা. বললেন, তিনি সত্য, তিনি আল্লাহর রাসূল (সাঃ)। যখন ভোর হয়ে যাবে তখন তুমি আমার অনুসরণ করবে। তোমার জন্য ভয়ের কারণ আছে এমন যদি কোন কিছু আমি দেখতে থাকি তবে তুমিও আমার অনুসরণ করতে থাকবে এবং যে ঘরে আমি প্রবেশ করি সে ঘরে তুমিও প্রবেশ করবে। আবু যার রা. তাই করলেন। আলী রা. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কাছে প্রবেশ করলেন এবং তিনিও তাঁর (আলীর) সাথে প্রবেশ করলেন। তিনি রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর কথাবার্তা শুনলেন এবং ঐ স্থানেই তিনি ইসলাম গ্রহণ করলেন। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেন, তুমি তোমাদের স্বগোত্রে ফিরে যাও এবং আমার নির্দেশ না পৌঁছা পর্যন্ত আমার ব্যাপারে তাদেরকে অবহিত করবে। আবু যার রা.বললেন, ঐ সত্তার কসম, যার হাতে আমার প্রাণ, আমি আমার ইসলাম গ্রহণকে মুশরিকদের সম্মুখে উচ্চস্বরে ঘোষণা করব। এই বলে তিনি বেরিয়ে পড়লেন ও মসজিদে হারামে গিয়ে উপস্থিত হলেন এবং উচ্চকণ্ঠে ঘোষণা করলেন, أشهد أن لآ إله إلا الله وأشهد أن محمدا رسول الله (ইহা শোনামাত্র মুশরিক) লোকজন (উত্তেজিত হয়ে) তাঁর উপর ঝাঁপিয়ে পড়ল এবং প্রহার করতে করতে তাকে মাটিতে ফেলে দিল। এমন সময় আব্বাস রা. এসে তাকে আগলিয়ে রাখলেন এবং বললেন, তোমাদের বিপদ অনিবার্য। তোমরা কি জাননা, এ লোকটি গিফার গোত্রের? আর তোমাদের ব্যবসায়ী দলগুলোকে গিফার গোত্রের নিকট দিয়েই সিরিয়া যাতায়াতে করতে হয়। একথা বলে তিনি তাদের হাত থেকে আবু যারকে রক্ষা করলেন। পরদিন ভোরে তিনি অনুরূপ বলতে লাগলেন। লোকেরা তাঁর উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে তাকে বেদম প্রহার করতে লাগল। আব্বাস রা. এসে আজো তাকে রক্ষা করলেন।[৫][৬]
নবী মুহাম্মদ তাকে তাঁর গোত্রে ফিরে যেতে বলেছিলেন, সেখানে ফিরে গিয়ে তিনি তার লোকদের ইসলাম সম্পর্কে শিক্ষা দেওয়া শুরু করেন। তার দাওয়াতে পুরো গিফার গোত্র ইসলাম গ্রহণ করেছিলো যেহেতু তিনি ওই গোত্রের একজন সম্মানীত ও প্রভাবশালী ব্যক্তি ছিলেন। হিজরতের পর তিনি আর তাঁর গোত্র মদিনায় চলে আসেন এবং মুহাম্মাদ এর সাথে যোগ দেন।[৭] মুহাম্মাদ একবার তার সম্পর্কে বলেছিলেন,
"আসমানের নিচে এবং জমিনের উপরে আবু যারের চেয়ে অধিক সত্যবাদী আর কেউ নেই" "[৮]
আবু যার বদর, ওহুদ ও খন্দক যুদ্ধের পর মদিনার হিজরত করেন যার ফলে এসব যুদ্ধে অংশগ্রহণ করা তার জন্য সম্ভবপর হয়নি। অগ্রগামী মুসলিম হিসেবে তাবুক যুদ্ধে অংশ নেবেন এটাই কাম্য ছিলো। কিন্তু এ যুদ্ধে তাকে দেখা গেল না। আসলে আবু যার মূল বাহিনীর পেছনেই ছিলেন, তাঁর উটটি ছিলো মন্থরগতির। তিনি উটটিকে দ্রুত চালাবার চেষ্টা করেন; কিন্তু তাতে ব্যর্থ হয়ে জিনিসপত্র নামিয়ে কাঁধে তুলে পায়ে হাঁটা শুরু করেন। এদিকে মুসলিম শিবিরে কানাঘুঁষা শুরু হলো। সাহাবারা বলতে শুরু করলো,"আবু যার পিঠটান দিয়েছে।" খানিক বাদে মুসলিমরা দেখতে পেল, দূর দিগন্তে একজন মানুষ একা হেঁটে আসছেন! তারা মুহাম্মাদকে ব্যাপারটা জানালেন। তিনি বললেন, "এটা যেন আবু যার হয়!" সাহাবারা গভীরভাবে নিরীক্ষণ করে চিনতে পারলো। বললো, "ইয়া রাসুলাল্লাহ, এতো আবু যারই।"
মুহাম্মাদ বললেন,
"আল্লাহ আবু যারের উপর রহমত বর্ষণ করুন। সে একাকী চলে, একাকীই মরবে, কিয়ামতের দিন একাই উঠবে।"[৯]
আবু যার ছিলেন প্রকৃতিগতভাবেই সাদাসিধে, দুনিয়া-বিমুখ ও নির্জনতা-প্রিয় স্বভাবের। নবী মুহাম্মাদ এর মৃত্যুর পর তিনি দুনিয়ার সাথে একেবারেই সম্পর্কহীন হয়ে পড়েন। তিনি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতেন, মুসলিমদের প্রয়োজনের বেশি সম্পদ জমা করা হালাল নয়। আবু যারের যুহদ ছিলো এতটাই কঠোর যে জনগণ ও শাসন কর্তৃপক্ষের সাথে তার ঠিকমত বনিবনা হচ্ছিলো না। উসমানের খিলাফত কালে আবু যার শামে ছিলেন। তখন মুয়াবিয়া ছিলেন শামের গভর্নর। রোমানদের সাথে তখন মুসলমানদের যুদ্ধ চলছিলো, তাই শাম হয়ে উঠে গণিমতের আধার। প্রবল বিত্ত-বৈভবের প্রবাহে আবু যার খুশি ছিলেন না। তিনি মুসলমানদের বকাঝকা করতেন। তারা সম্পদ জমা করতো, সে কারণে তাদের তিরষ্কার করতেন। বিষয়টা জনমনে অসন্তোষের জন্ম দেয়। তাদের বক্তব্য ছিলো, যাকাত দেওয়ার পর ওই সম্পদ চাইলে জমা করা যাবে, ইসলাম এর অনুমতি দিয়েছেন। তাই গর্ভনর মুয়াবিয়া খলিফা উসমানকে চিঠি দিয়ে আবু যারের ব্যাপারে অভিযোগ করে জানালেন তার জন্য শামের স্বাভাবিক জীবনে বিঘ্ন ঘটছে।[১০] উসমান তখন আবু যারকে মদিনায় ফিরে আসতে বলেন। আবু যার শাম ত্যাগ করে মদিনায় ফিরে এলেন। উসমান ইবন আফফান বললেন, "আপনি আমার কাছে থাকুন, দুগ্ধবতী উটনী প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যায় আপনার দরজায় হাজির হবে।" জবাবে তিনি বললেন, "আপনার এ দুনিয়ার কোন প্রয়োজন আমার নেই।" অতঃপর আবু যার মরুভূমির জনমানবহীন একটি জায়গা আর-রাবযাহ প্রান্তরে চলে গেলেন। সেখানে একা একা জীবন কাটাতে লাগলেন এবং একসময় (৬৫২ খ্রিঃ) সেখানেই মৃত্যুবরণ করেন ৷ তার জানাযায় ইমামতি করেন প্রখ্যাত সাহাবি আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ।
একদিন এক ব্যক্তি আবু যারের কাছে এলেন। সে তাঁর ঘরের চারিদিকে চোখ ঘুরিয়ে দেখলো। গৃহস্থালীর কোন সামগ্রী দেখতে না পেয়ে জিজ্ঞাসা করলো, "আবু যার, আপনার সামান-পাত্র কোথায়?" তিনি বললেন, "আখিরাতে আমার একটি বাড়ি আছে। আমার সব উৎকৃষ্ট সামগ্রী সেখানেই পাঠিয়ে দেই।"[১১]
একদা সিরিয়ার আমীর তাঁর নিকট তিনশ দীনার উপহার পাঠালেন। এতে তিনি অত্যন্ত রেগে যান। 'শামের আমীর কি আমার চেয়ে অধিকতর নীচ কোন আল্লাহর বান্দাকে পেলনা?' একথা বলে তিনি দীনারগুলি ফেরত পাঠালেন।[১২]
আবু যার থেকে বর্ণিত হাদিস সংখ্যা মোট আটাশি। তন্মধ্যে বারোটি হাদিস মুত্তাফাক 'আলাইহি অর্থাৎ বুখারী ও মুসলিম উভয়ে বর্ণনা করেছেন। দু'টি বুখারী ও সাতটি মুসলিম এককভাবে বর্ণনা করেছেন। অন্যদের তুলনায় তাঁর বর্ণিত হাদিসের সংখ্যা এত কম হওয়ার কারণ তিনি সবসময় চুপচাপ থাকতেন, নির্জনতা পছন্দ করতেন এবং মানুষের সাথে মেলামেশা কম করতেন। এ কারণে তাঁর জ্ঞানের তেমন প্রচার হয় নি। অথচ, আনাস ইবনে মালিক, আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস এর মত বিদ্বান সাহাবীরা তাঁর নিকট থেকে জ্ঞান অর্জন করেছেন।[১৩]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.