Loading AI tools
হিন্দু আধ্যাত্মিক গুরু উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
স্বামী নিগমানন্দ পরমহংস (১৮ আগস্ট, ১৮৮০[১]- ২৯ নভেম্বর, ১৯৩৫[২]) নদীয়া জেলার তখনকার সাবডিভিশন কুতুবপুর নামক ছোট গ্রামে (বর্তমান বাংলাদেশের মেহেরপুর জেলায়) এক ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি শ্রী শ্রী ঠাকুর নামেও পরিচিত। চৈতন্য মহাপ্রভুও এই একই জেলায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন। সন্ন্যাস গ্রহণের পর তিনি পরমহংস শ্রীমদ স্বামী নিগমানন্দ সরস্বতী দেব নামে পরিচিত হন।[৩] নিগমানন্দ ছিলেন ভারতের একজন সদগুরু[৪][৫] ও সাধু।[৬] তিনি ছিলেন পূর্ব ভারতে সুপরিচিত একজন হিন্দু যোগী ও আধ্যাত্মিক নেতা।[৭] তিনি শাক্ত সম্প্রদায়ভুক্ত[৮] একজন ভারতীয় হিন্দু গুরু,[৯][১০] ও হিন্দু দার্শনিকও[১১] ছিলেন এবং তন্ত্র ও যোগের একজন উত্কৃষ্ট আধ্যাত্মিক গুরু হিসেবে তাকে দেখা হতো।[১২][১৩][১৪]
নিগমানন্দের অনুসারীরা বিশ্বাস করেন যে তিনি চারটি ভিন্ন সাধনায় যথা তন্ত্র, জ্ঞান, যোগ এবং প্রেমে সিদ্ধি লাভ করেন।[১][১৫][১৬] এই সকল অভিজ্ঞতার উপর ভিত্তি করে তিনি বাংলা ভাষায় ৫টি গ্রন্থ রচনা করেন: ব্রহ্মচর্য সাধনা, যোগী গুরু, জ্ঞানী গুরু, তান্ত্রিক গুরু এবং প্রেমিক গুরু ।[১৭][১৮][১৯][২০] স্বামী নিগমানন্দ নির্বিকল্প সমাধি লাভ করেছিলেন।[২১][২২]
পিতা ভুবনমোহন চট্টোপাধ্যায় ও পিতার গুরু স্বামী ভাস্করানন্দ সরস্বতীর ইচ্ছানুসারে জন্মের পর নিগমানন্দের নাম রাখা হয়েছিল নলিনীকান্ত।[২৩][২৪] ১৩০০ বঙ্গাব্দে যখন নলিনীকান্ত গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ছিল, তখন তার মাতা মাণিক্য সুন্দরী দেবী কলেরায় মারা যান যা তাকে বিষন্নতায় আচ্ছন্ন করেছিল।[২৫][২৬] ১৩০১ বঙ্গাব্দে তিনি ছাত্রবৃত্তি পরীক্ষায় পাস করেন এবং মেহেরপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে কিছু সময়ের জন্য পড়াশোনা করেন। ১৩০২ বঙ্গাব্দের আষাঢ় মাসে তিনি জরিপ বিষয়ে পড়াশোনার জন্য ঢাকা আহসানউল্লাহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ভর্তি হন। নলিনীকান্তের পিতা ১৩০৩ বঙ্গাব্দে হালিশহরের সুধাংশুবালা দেবী নামের এক ত্রয়োদশবর্ষীয়া বালিকার সাথে নলীনীকান্তের বিয়ে দেন। ১৩০৫ বঙ্গাব্দে পড়াশোনা শেষ হওয়ার পর জীবিকা অর্জনের জন্য তিনি রাণী রাসমণির এস্টেট দিনাজপুর জেলা বোর্ডে চাকরিতে যোগ দেন।[২৭] ১৩০৭ বঙ্গাব্দে ভাদ্র মাসের শেষে (বিয়ের প্রায় ৫ বছর পর) যখন তিনি নারায়নপুর এস্টেটে (জমিদারিতে) সুপারভাইজার পদে কাজ করছিলেন,[১][২৫][২৮] তখন একদিন রাত্রে নলীনীকান্ত হঠাত্ টেবিলের নিকট সুধাংশুবালা দেবীর (যার সেই সময় কুতুবপুরে থাকার কথা) ক্রুদ্ধ ভয়ঙ্কর দৃষ্টিতে তাকানো নীরব ছায়ামূর্তি দেখতে পান। তিনি তখনই কুতুবপুরে খোঁজ নিতে গেলেন এবং জানতে পারলেন যে নারায়নপুরে ছায়ামূর্তি দেখার ঠিক এক ঘণ্টা পূর্বে সুধাংশুবালা দেবী ইহলোক ত্যাগ করেন; পুনরায় নলীনীকান্তের জন্য প্রচন্ড আঘাত। তিনি গুপ্ত/অতিপ্রাকৃত বিজ্ঞানের (occult science) সাহায্যে তার সহধর্মিণীর নিকট পৌঁছানোর চেষ্টা করেন কিন্ত্তু ব্যর্থ হন।[২৯]
নলীনীকান্ত সিদ্ধান্তে উপনীত হলেন যে মৃত্যু হচ্ছে একজন ব্যক্তির চূড়ান্ত পরিণতি। তিনি বিশ্বাস করা শুরু করলেন যে মৃত্যুর পর অবশ্যই জীবন আছে।[১] নলীনীকান্ত জীবন ও মৃত্যুর যাবতীয় ইন্দ্রিয়গোচর বস্ত্তু ও বিষয় সম্পর্কে জানতে মরিয়া হয়ে উঠলেন। এসব কিছু তাকে সব সময় চিন্তিত করতে আরম্ভ করল। এই অনুসন্ধান তাকে নিয়ে গেল চেন্না়ইয়ের আধিয়ারের ঈশ্বরদর্শন সমাজে (Theosophical Society at Adyar)।[৩০] তিনি ঈশ্বরদর্শন ও ঐশ্বরিক প্রেরণা লাভের দর্শন শাখার যাবতীয় প্রকল্পসমূহ নিরুপণ করলেন ও সেগুলো চর্চা করলেন এবং একটি মাধ্যমের মধ্য দিয়ে সুধাংশুবালা দেবীর সাথে কথা বলতে সমর্থ হলেন। কিন্ত্তু নলীনীকান্ত তাকে শারীরীকভাবে দেখতে সমর্থ হলেন না। এই অভিজ্ঞতা তাকে মোটেই সন্ত্তষ্ট করল না। তিনি ঐ সমাজের সদস্যদের সাথে আলোচনা করে জানতে পারলেন যে "জীবন ও মৃত্যু" বিষয়ে জ্ঞান থাকা হিন্দু যোগীদের জন্য আবশ্যকীয়। তিনি সময় নষ্ট না করে তখনই একজন প্রকৃত যোগী বা সাধুর খোঁজে ছুটলেন যিনি তার মৃত সহধর্মিণীর সাথে সাক্ষাত্ করার ইচ্ছা পূরণ করতে পারবেন এবং তাকে "জীবন ও মৃত্যু" বিষয়ে প্রকৃত দর্শন শিক্ষা দিতে পারবেন।
নিগমানন্দের অনুসারীদের মতে, একদিন রাত্রে নলীনীকান্ত অলৌকিক আভা দিয়ে ঘিরে থাকা এক সাধুকে দেখতে পেলেন। তিনি জেগে উঠে সাধুকে বাস্তবে তার বিছানার পাশে দাড়ানো অবস্থায় দেখতে পেলেন। সাধুটি তাকে পাতার ওপর লিখিত একটি মন্ত্র দিলেন এবং হঠাত্ অদৃশ্য হয়ে গেলেন। নলীনীকান্ত মন্ত্রটির অর্থ বোঝার জন্য অনেককে এর অর্থ জিজ্ঞাসা করলেন; অবশেষে ১৩০৮ বঙ্গাব্দের ফাল্গুন মাসে তিনি পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলার তারাপীঠের বিখ্যাত তান্ত্রিক বামাক্ষ্যাপার সাথে সাক্ষাৎ করলেন।[২৫][২৬][৩১] নলীনীকান্ত তার নিকট দীক্ষা নিলেন এবং ২১ দিন উক্ত মন্ত্রটি জপ/স্তব করার আদেশপ্রাপ্ত হলেন।[৩২] তার গুরুর নির্দেশিত পথে তিনি "সুদর্শনা দেবী" রুপে মা তারা দেবীর দর্শন পেলেন।[২৬] এই দর্শন তাকে আরেক রহস্যে নিয়ে গেল। তিনি তারা দেবীকে তার শরীর থেকে বেরিয়ে আসতে এবং পুনরায় তার শরীরে মিশে যেতে দেখলেন। এই রহস্য সমাধানের জন্য বামাক্ষ্যাপা তাকে একজন বেদান্তিক গুরুর নিকট অদ্বৈতের জ্ঞান লাভের উপদেশ দিলেন। ১৩০৮ বঙ্গাব্দের চৈত্রে তিনি জ্ঞানী গুরুর খোঁজে ভ্রমণে বের হলেন।[২৫] রাজস্থান রাজ্যের পবিত্র স্থান পুস্করে তিনি সচিনানন্দ সরস্বতীর শিষ্য হলেন।[১][৩৩] তিনি তত্ক্ষণাত্ উপলব্ধি করলেন যে সচিদানন্দ সরস্বতী হলেন সেই সাধু যিনি তাকে স্বপ্নে তারা মন্ত্রটি দিয়েছিলেন। নলীনীকান্ত ব্রহ্মের সকল তত্ত্ব শিখলেন এবং সচিদানন্দ কর্তৃক দাবি-ত্যাগ/আত্ম-অস্বীকৃতি বিষয়ে দীক্ষিত হলেন এবং তদনুসারে তার নাম রাখলেন নিগমানন্দ।[৩৪] কিন্ত্তু এই বিষয়ে তিনি বাস্তব উপলব্ধি করতে পারলেন না, সচিদানন্দ নিগমানন্দকে এই লক্ষ্য অর্জনে একজন যোগী গুরু খুঁজতে বললেন। সচিদানন্দ নিগমানন্দকে আরো নির্দেশ দিলেন ধর্মীয় পীঠের/আসনের চার ধামে তীর্থ নিতে এবং নিজে থেকে প্রত্যেকটির গুরুত্ব উপলব্ধি করতে। হিন্দুরা তাদের পবিত্রতার জন্য এই সকল প্রার্থনার স্থানসমূহকে তাদের নিকট অত্যন্ত প্রিয় মনে করেন। তীর্থের পর তিনি আবার আশ্রমে ফিরে আসলেন। সচিদানন্দ নিগমানন্দের তীর্থ পর্যালোচনা করলেন এবং তাকে আরো নির্দেশ দিলেন একজন যোগী গুরু খুঁজে বের করতে যিনি নিগমানন্দকে সঠিক দিক নির্দেশনা দিবেন এবং সচিদানন্দের শিক্ষাকে সঠিকভাবে অনুশীলন করাবেন।[৩৫][৩৬]
১৯০৩ সালে (জৈষ্ঠ ১৩১০ বঙ্গাব্দ) নিগমানন্দ তার যোগী গুরুর সাক্ষাত্ পেলেন - তিনি হলেন সুমেরু দাস জী (কুট হুমি লাল সিং নামেও পরিচিত)। সুমেরু দাস জীর পথনির্দেশনায় তিনি যোগের গূঢ় বিষয়/তাত্পর্য জানলেন।[৩৭] প্রয়োজনীয় অনুশীলনের পর তিনি সবিকল্প সমাধি এবং পরে ১৯০৪ সালে (পৌষ ১৩১১ বঙ্গাব্দ) নির্বিকল্প সমাধি (যোগের সর্বোচ্চ ধাপ) লাভ করলেন।[১][২৫][৩৮] যোগে তিনি দর্শন করলেন এবং তার নিজ দেহে বুঝতে পারলেন বৈদিক জ্ঞান যা সচিদানন্দের কাছ থেকে শিখেছিলেন। তিনি তার নির্বিকল্প সমাধি লাভ করেছিলেন কামাক্ষ্যায়, নীলাচল পাহাড় (গৌহাটি, আসাম, ভারত) - বলা হয়ে থাকে তিনি জগত্গুরুর ইচ্ছাকে বহন করে মানবতার মাঝে ব্রহ্মজ্ঞান বিস্তারের জন্য সত্গুরু হিসেবে পুন-আবির্ভূত হয়েছিলেন।[২৭][৩৯]
১৯০৪ সালে (মাঘ ১৩১১ বঙ্গাব্দ) তিনি কাশীতে (বর্তমানে বারাণসী, উত্তর প্রদেশ, ভারত) থাকাকালীন দেবী অন্নপূর্ণা স্বপ্নে তার নিকট আসলেন এবং বলছেন যে,[৩৩] তার জ্ঞান নিরাকার ঈশ্বরে সীমাবদ্ধ এবং তদুর্ধে যেতে পারেনি - তাই তিনি ছিলেন তখনও অসম্পূর্ণ। নিগমানন্দ তার নিদ্রা থেকে জেগে উঠলেন এবং দেবী অন্নপূর্ণা কর্তৃক নির্দেশিত তার বিষয়টি সম্পর্কে সচেতন হলেন।[৩৩] তিনি তখন এক মহান সিদ্ধযোগীনী গৌরী দেবীর নিকট গেলেন। তিনি নিগমানন্দকে একজন শিষ্য হিসেবে গ্রহণ করলেন এবং তাকে ভক্তি ও প্রেম শিক্ষা দিলেন।[৩৮] তার শিষ্যদের মতানুসারে নিগমানন্দ ভব সাধনায় এই বহির্জগতকে ঈশ্বরের রুপান্তর হিসেবে দেখলেন এবং ভব বা ভক্তি সিদ্ধি লাভের পর,[৪০] নিগমানন্দ নিজেকে "সম্পূর্ণ এক" হিসেবে উপলব্ধি করলেন।
সিদ্ধি লাভের পর নিগমানন্দ এলাহাবাদে কুম্ভমেলা দেখতে গেলেন এবং জানতে পারলেন যে তার গুরু সচিদানন্দ শৃঙ্গেরী মঠের শঙ্করাচর্যের সাথে ঐ জায়গাতেই ছিলেন। গুরু সচিদানন্দকে দেখতে উদ্বিগ্ন নিগমানন্দ শঙ্করাচর্যের তাবুতে গেলেন যেখানে নিগমানন্দ গুরু সচিদানন্দসহ আরো ১২৫ জন সাধু পরিবেষ্টিত অবস্থায় মঠের অধ্যক্ষকে একটি উচ্চাসনে আসীন অবস্থায় দেখতে পেলেন। গুরুকে দেখে নিগমানন্দ প্রথমে তার গুরুকে শ্রদ্ধা জানালেন এবং পরে অধিক মর্যাদাসম্পন্ন অধ্যক্ষকে সম্মান জানালেন। সাধুগন প্রথমে অধ্যক্ষকে সম্মান না জানানোয় অসন্ত্তুষ্ট হলেন কিন্ত্তু প্রতি উত্তরে নিগমানন্দ এই শ্লোক উদ্ধৃত করেন: "মনাথরো শ্রী জগন্নাথ মদগুরু শ্রী জগদগুরু মহাত্মা সর্বভূতাত্মা তস্মৈ শ্রী গুরুবে নমঃ"। - "আমার স্রষ্টা মহাবিশ্বের স্রষ্টা। আমার গুরু সমগ্র বিশ্বের গুরু। স্বীয় সত্তা সকল সত্তার সত্তা, সেই হেতু আমি বশ্যতা স্বীকার করি আমার গুরুর যিনি আমাকে এটি দেখিয়েছেন।"[৪১] এই উক্তি আরো ব্যাখ্যা করে যে বেদান্ত দর্শনানুসারে "গুরু" (শ্রী সচিদানন্দ সরস্বতী) এবং "জগদগুরু" (শ্রী জগদগুরু শঙ্করাচর্য) এর মধ্যে কোন পার্থক্য নেই ।[৪২][৪৩] নিগমানন্দ আরো পরিষ্কার করেন যে, যদি তাদের মধ্যে পার্থক্য থাকতো তার অর্থ হতো এই যে আমাদের মধ্যে স্বীকৃত আধ্যাত্ম দর্শনে কোন বিশ্বাস নেই এবং এটি যদি বিবেচনা করা হতো যে একজন অন্যজন থেকে বড় তাহলে তা আরো বড় উপসংহারে নিয়ে যেত যে পরবর্তী জনের চেয়ে আরো বড় কেউ থেকে থাকবেন । এভাবে অন্তহীন বাদানুবাদ চলতেই থাকতো। এই ধরনের সিদ্ধান্ত সর্বদাই বিভ্রান্ত সৃষ্টিকারী । আমার গুরু জগদগুরুর সাথে এক হয়ে গিয়েছিলেন যখন জগদগুরু কর্তৃক তাঁর উপর "গুরুগিরি" অর্পিত হয়েছিল; সেই হেতু তাদের মধ্যে পার্থক্য করা উচিত নয় । জগদগুরু এই উত্তর অনুমোদন করলেন এবং নিগমানন্দ আলোকপ্রাপ্ত অবস্থা অর্জন করেছেন বলে স্বীকৃতি দিলেন।[৩৩] জগদগুরু শঙ্করাচার্য সচিদানন্দকে ডাকলেন এবং তাকে বললেন যে তার শিষ্য ইতোমধ্যেই পরমহংস এর অবস্থা অর্জন করেছেন এবং তাকে এই উপাধি দেয়া উচিত। সচিদানন্দ তখন এই প্রস্তাব সাধু সম্মেলনে উথ্থাপন করলেন এবং নিগমানন্দকে পরমহংস উপাধিতে ভূষিত করলেন। এভাবে তার নাম হলো পরিব্রাজকাচার্য শ্রীমদ স্বামী নিগমানন্দ সরস্বতী দেব।[৩৩][৩৮][৪৪]
নিগমানন্দ তার জীবনের শেষ চৌদ্দ বছর উড়িষ্যার পুরীতে অতিবাহিত করেন।[৪৫] তিনি ১৯৩৫ সালের ২৯শে নভেম্বর কলকাতায় দেহ ত্যাগ করেন।[২] তার শিষ্যরা বিশ্বাস করেন যে, তার দৈহিক মৃত্যুর পরও তিনি বেঁচে আছেন, নিগমানন্দের উদ্ধৃতি: আমাকে এই দেহ ছেড়ে যেতে হবে কিন্তু তোমাদের মুক্তি না হওয়া পর্যন্ত আমি তোমাদের গুরু থাকব এবং আমার মুক্তি হবে না ।[২৮][৪৬]
স্বামী নিগমানন্দের জীবনের ব্রত ছিল:
এই উদ্দেশ্যসমূহ উপলব্ধি/বাস্তবায়নের জন্য তিনি তার ভক্তদের নিম্নলিখিত নির্দেশ দেন:
উপর্যুক্ত লক্ষ্যসমূহ অর্জনের নিমিত্তে তিনি সকল পেশার কয়েক হাজার আগ্রহী নর-নারীকে দীক্ষা দেন এবং সকল ধরনের উপদলীয় পক্ষপাতমুক্ত হয়ে পূজা, প্রার্থনা ও ধ্যানের মাধ্যমে তার অনন্য আধ্যাত্মিক অনুশীলনসমূহ শিক্ষা দেন। তিনি তার শিষ্যসমূহকে নির্দিষ্ট সময় পর পর তিন বা ততোধিক জনের দল বা সঙ্ঘে মিলিত হয়ে গুরুর নিকট প্রার্থনা ও পূজা, আধ্যাত্মিক অভিজ্ঞতাসমূহ বিনিময়, "জয়গুরু" স্তব বা গুণকীর্তন,[৩৮] আধ্যাত্মিক গ্রন্থসমূহ পাঠ ও তৎমধ্যস্থিত ধারণাসমূহ চিন্তাভাবনা ও আলোচনা, মঠ এবং আশ্রমসমূহ ব্যবস্থাপনার উপায় ও পন্থা উদ্ভাবন এবং আধ্যাত্মিকভাবে উদ্দীপ্ত/অনুপ্রাণিত আদর্শ গৃহস্থ জীবন যাপনের অঙ্গীকার করতে উৎসাহিত করেন। তিনি তার শিষ্যগণকে উপদেশ দিয়েছিলেন যে, ঈশ্বর বা গুরুর মহিমা "জয়গুরু" এই অক্ষরসমূহের মাধ্যমের মধ্য দিয়ে অনুভূত হয়। যে কেউ ঈশ্বরের কাছে পৌঁছতে পারে এই নামের মধ্য দিয়ে যেহেতু ঈশ্বর হচ্ছেন মহাবিশ্বের গুরু বা প্রভু। যে কোন সম্প্রদায়ের মানুষ তাদের ধর্মীয় জীবনের কোনরুপ ক্ষতি ছাড়াই এই নাম গ্রহণ করতে পারেন। জয় গুরু
স্বামী নিগমানন্দ কখনই স্বীকার করেননি যে তিনি ছিলেন মূর্তিমান-ভগবান বা একজন অবতার যদিও তার অনেক শিষ্যই এই ধরনের অলীক ধারণা পোষন করেন।[১][৫০] তিনি নিবেদন করেন যে অবতার হচ্ছেন একটি ধর্ম, দেশ কিংবা এমনকি সমগ্র বিশ্বে আধ্যাত্মিক শৃঙ্খলা বহাল রাখার জন্য পৃথিবীতে ঈশ্বরের অনন্য পুরুষ। তার কর্তৃত্ব দ্বারা সদাচার প্রতিষ্ঠিত হয় এবং তিনি আসুরিক শক্তিসমূহকে সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করেন। স্বামী নিগমানন্দ চাইতেন যে তাকে সৎগুরু হিসেবে বিবেচনা করা হোক যিনি তার দীর্ঘ জন্ম ও মৃত্যুর পারম্পর্যের অনুসন্ধান দ্বারা তার স্বরুপ জ্ঞান (সত্য প্রকৃতি অর্থাৎ সর্বোচ্চ সার্বজনীন চেতনা) লাভ করেছেন। ধর্মগ্রন্থে প্রমাণ রয়েছে যে গৌতম সত্য উপলব্ধির গুণাবলী অর্জনের পূর্বে এবং মহান "বুদ্ধে" পরিণত হওয়ার পূর্বে তাকে অনেকবার জন্মগ্রহণ করতে হয়েছিল।[১] নিগমানন্দ আরো নির্দেশ করেন যে, একজন অবতার স্বর্গীয় ক্রিয়াকর্মে অর্থাৎ লীলায় অংশগ্রহণ করার জন্য সব সময় অতিমানবীয় চেতনার স্তরে থাকেন না।
একজন সৎগুরু যিনি সর্বদাই আত্মসচেতন এবং সহৃদয় থাকেন তিনি কদাচিৎ ভুল বোঝাবুঝির স্বীকার হন।
গুরুগণ প্রকৃতপক্ষেই ব্যক্তিগত ঈশ্বর। স্বামী নিগমানন্দ ঘোষণা করেন যে আধ্যাত্মিক জ্ঞান অর্জন এবং মুক্তি অর্জন সম্ভব - হয় কঠোর প্রায়শ্চিত্তের মাধ্যমে অথবা একজন ব্রহ্মচারী সৎগুরুর নিকট আত্মসমর্পণের (তার আদেশ পালনের) মাধ্যমে যেটি আমাদের অধিকাংশই অনুশীলন করতে পারি। যদিও তাদের মনে হয় এবং তারা আচরণ করেন সাধারণ মানুষের মত এবং তাদের প্রায়ই ভুল বোঝা হয়ে থাকে। ব্রহ্মচারী সৎগুরুর দেহগত বা বস্ত্তুগত উপভোগের প্রতি কোন আসক্তি থাকে না। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে অন্য সকলকে সাহায্য করতে এবং সেই সাথে পরিবেশের উন্নতির জন্য তারা সর্বদাই নিয়োজিত থাকেন। কিন্ত্তু সৎগুরু হিসেবে তাদের ভূমিকা সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ যেহেতু তিনি প্রজন্ম থেকে প্রজমান্তরে হস্তান্তর করার মত একটি উত্তরাধিকার নির্মাণ করতে পারেন যেমনটি ভগবান শ্রীকৃষ্ণ শ্রীমদ্ভগবত গীতায় বলেছেন।
স্বামী নিগমানন্দের মতানুসারে, শিষ্যকে তার গুরুকে (অবশ্যই একজন সৎগুরু) একজন সাধারণ মানুষ হিসেবে নয় বরং জগৎগুরু (মহাবিশ্বের গুরু, পুরুষোত্তম) হিসেবে গ্রহণ করা উচিত (ভগবতগীতায় শ্রীকৃষ্ণের উক্তির সাথে মিল রেখে)।
স্বামী নিগমানন্দ তার শিষ্যদের উপদেশ দিয়েছিলেন শারীরিক মূর্তিকে ধ্যান করতে যাতে তার সকল প্রশংসনীয় গুণাবলী ও বৈশিষ্ট্যসমূহ স্বয়ংক্রিয়ভাবে তাদের মধ্যে স্থানান্তরিত হয় এবং তাদের আত্মাকে উপযোগী করে। [৫১] অধিকন্ত্তু তিনি আশ্বস্ত করেন যে, যেহেতু তিনি আত্মিক অনুশীলনের তিন উপায়ে/প্রক্রিয়ায় অন্বেষণকারীর পরম আধ্যাত্মিক লক্ষ্য হিসেবে যুগপৎভাবে ব্রহ্ম, পরমাত্মা এবং ভগবানের প্রকৃতি অনুভব করেছেন, তার প্রকৃত শিষ্যরাও একইভাবে যুগপৎ সেই অভিজ্ঞতা লাভ করবেন। তিনি বলেছিলেন,"সেটি ছিল তাঁর শিষ্যদের নিকট থেকে একমাত্র প্রত্যাশা এবং তিনি সেটি পূরণ হওয়ার দিনটি দেখতে অপেক্ষা করতে ভালবাসবেন।"
যেহেতু আত্মোপলব্ধির অদ্বৈতবাদী তত্ত্বের জন্য আবশ্যকীয় হচ্ছে ব্যক্তি-আত্মাকে সর্বোচ্চ সার্বজনীন আত্মার পর্যায়ে সম্প্রসারণ করা, স্বামী নিগমানন্দের মতানুসারে এটি যথাযথ বুদ্ধিগত অনুসন্ধান, বিশ্লেষণ এবং গভীর ধ্যানের মাধ্যমে আকুলভাবে কামনাকারী/উচ্চাকাঙ্খী সন্ন্যাসীদের মধ্য থেকে শুধুমাত্র যোগ্যতমদের দ্বারাই সরাসরি অনুশীলন করা যেতে পারে, যদিও এই ধরনের সাধনায়ও প্রভুর প্রতি সেবা সাফল্যের চাবিকাঠি। যাই হোক, স্বামী নিগমানন্দ ইঙ্গিত করেন যে শুধুমাত্র সর্বোচ্চ/অখণ্ড এর অদ্বৈতবাদী উপলব্ধি অর্জনের পরই সবচাইতে ভাগ্যবানদের দ্বারাই সত্যিকারের দেহাতীত ঐশ্বরিক ভালবাসা ও ভাবাবেশ/সমাধিঅনুভব করা সম্ভব যেমনটি শ্রীমদ্ভগবতগীতায় ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ঘোষণা করেছিলেন।
ভক্তির মধ্য দিয়ে সে আমাকে জানতে পারে, আমার স্বরুপগুলি কিরুপ এবং সত্য মধ্যে আমি কে এবং তৎক্ষণাৎ সে আমার মধ্যে প্রবেশ করে (অষ্টাদশ-৫৫)। (অর্থাৎ তিনি এখন ঈশ্বরের সাথে সস্নেহে একাত্ম যার প্রকৃতি তিনি জানেন এবং যা তিনি নিজেই অর্জন করেন এবং সেই হেতু তিনি সৎগুরুর ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়ার উপযুক্ত, যা প্রকৃতপক্ষেই স্বামী নিগমানন্দের জীবনে ঘটেছিল।) এই ধরনের আধ্যাত্মিক অভিজ্ঞতার পূর্ব অর্জন ব্যতিরেকে ঈশ্বরের জন্য আরোপিত উপায়ে প্রেমভক্তি হতাশাজনক হতে পারে! যাহোক যারা পূর্ব জন্মে এ ধরনের উপলব্ধি লাভ করেছেন তারা এ জন্মে যথেষ্ট শীঘ্রই ঐশ্বরিক ভালবাসা অর্জনে সমর্থ হতে পারেন।
যদিও কিছু অন্যান্য সাধু আত্মা/ঈশ্বর উপলব্ধির সমভাবে বৈধ মতবাদ বৈচিত্রের এবং তা অর্জনের বহুবিধ বৈধ পথের স্বীকৃতি দেন এবং প্রচার করেন, স্বামী নিগমানন্দ ঈঙ্গিত করেন যে আত্মার অখণ্ডতা এবং অখণ্ড সার্বজনীন আত্মার (বা পরব্রহ্মের) উপলব্ধি মানব জীবনের প্রকৃত ও চূড়ান্ত লক্ষ্য হওয়া উচিত।[৫২]
এবং সবচেয়ে আকুলভাবে কামনাকারীদের ক্ষেত্রে সে পথে নেতৃত্ব দান করে তাদের দীক্ষা দানকারী আদর্শ আধ্যাত্মিক গুরুর (সৎগুরু) প্রতি সত্যিকারের ভক্তি। গুরুকে ব্যক্তিগত সেবাদান ও প্রার্থনা, জপ এবং সাধারণ ধ্যানের মাধ্যমে তার অনুগ্রহ আবাহন তাদের জন্য আধ্যাত্মিক অনুশীলনের মুখ্য উপায়। এভাবে এটি নিশ্চিতভাবে জেনে যে তাদের গুরু একজন ব্রহ্মজ্ঞানী এবং তার শিক্ষানুযায়ী জীবন যাপনের চেষ্টা করে তারা শুধুমাত্র অদ্বৈতের উপলব্ধি লাভেই সমর্থ হবেন না, অধিকন্ত্তু যখন তারা অন্যদের আত্মার/ঈশ্বরের উপলব্ধি লাভে সাহায্য করার জন্য তার লীলায় অংশগ্রহণ করতে সমর্থ হবেন, তখন কালক্রমে তারা তার প্রতি তীব্র প্রেমের কারণে স্বর্গসুখের অভিজ্ঞতা লাভ করবেন। স্বামী নিগমানন্দের অনুসারীদের মতে তার ভাবাদর্শগত ও পদ্ধতিগত বাণী শঙ্করের মত অর্থাৎ জ্ঞান - জ্ঞানের পথ এবং গৌরাঙ্গের পথ অর্থাৎ ভক্তি - ভক্তির পথ এ তার সকল লেখাসমূহ সনাতন ধর্মে[১] বিরাজমান সাধনা বা আধ্যাত্মিক অনুশীলনের মূলতত্ত্ব এবং প্রায়োগিক পদ্ধতি সম্পর্কিত।[১][৫৩]
স্বামী নিগমানন্দ ঈঙ্গিত করেন যে ঈশ্বরের প্রতি শর্তহীন ভক্তি ও প্রেম চর্চাকারী এবং প্রচারকারী গৌরাঙ্গ মহাপ্রভুর প্রদর্শিত পথ ছিল অধিকতর সংকীর্ণ কারণ এতে একমাত্র ঈশ্বর হিসেবে শ্রীকৃষ্ণকে নির্দেশ করা হয়েছে। সে পথকে প্রশস্তকরণের জন্য স্বামী নিগমানন্দ পরামর্শ দেন গুরুকে শ্রীকৃষ্ণের (বা অন্য যে কোন দেব-দেবীর যাকে প্রার্থনাকারী ভালবাসেন) একজন প্রতিমূর্তি হিসেবে গ্রহণ করতে যে ক্ষেত্রে পথপ্রদর্শক নিজেই তার লক্ষ্যে পরিণত হন।
এভাবে স্বামী নিগমানন্দ দুটি আপাতদৃষ্টিতে পরষ্পরবিরোধী ধর্মমতের সমন্বয়সাধন বিশ্বাসযোগ্যভাবে সূত্রবদ্ধ করেন, একটি বেদান্ত দর্শনের অদ্বৈত শিক্ষালয়ের প্রতিষ্ঠাতা মহান শঙ্করাচার্যের কারণে এবং অন্যটি ভক্ত ও ঈশ্বরের মধ্যে আপাত দ্বৈততার তত্ত্বের ও অনুশীলনের প্রবক্তা গৌরাঙ্গ মহাপ্রভুর কারণে। মোটের উপর স্বামী নিগমানন্দ দেখান যে ভক্তি ও প্রেমের পথে অভিকাঙ্খীকে তার অহং যথেষ্ট পরিমাণে দমন করতে হবে বা বশে আনতে হবে এবং অতঃপর তিনি উন্নীত হবেন অদ্বৈত অভিকাঙ্খীর পর্যায়ে যার অহং লক্ষ্যে পৌঁছার পর এর বিশেষত্ব হারিয়ে ফেলেছে। পূর্ববর্তী ক্ষেত্রে স্বকীয় ঈশ্বর চেতনার দ্বারা ভক্তের ব্যক্তিস্বভাব তুচ্ছে পরিণত হয়, পরাভূত হয়, যেখানে পরবর্তী ক্ষেত্রে অভিকাঙ্খী নৈব্যক্তিক সার্বজনীন চেতনার সমুদ্রে তার আত্ম-বোধ হারিয়ে ফেলেন।
স্বামী নিগমানন্দ ভারতীয় এবং বিদেশী উভয় ধরনের বিরাজমান বিভিন্ন আধ্যাত্মিক মতবাদ বা দর্শনের প্রতি অত্যন্ত সহনশীল ছিলেন এবং বিবেচনা করতেন যে সেগুলির প্রত্যেকটিই একটি উদ্দেশ্যকে পূরণ করে এবং স্তরীভূত আধ্যাত্মিক উপলব্ধির পুরা প্রকল্পের সাথে খাপ খায়। তিনি দেখান যে যদিও অদ্বৈত বেদান্ত দর্শনের মতবাদ পরম বাস্তবতাকে ব্যক্তি-চেতনা ও সার্বজনীন চেতনার অভেদের নিরিখে বিবেচনা করে, এটি বস্ত্তুগত সৃষ্টির গঠনকে পদ্ধতিগতভাবে ব্যাখ্যা করে না যেটি, পক্ষান্তরে, সাংখ্য দর্শনের দ্বারা ব্যাখ্যাপ্রাপ্ত হয়। কিন্ত্তু পরে উল্লেখিতটি পরম বাস্তবতাকে বিবেচনা করে না। একইভাবে খ্রীষ্টধর্ম যেখানে ঈশ্বর সাধনার উপায় হিসেবে সেবা ও সমর্পণের উপর জোর দেয়, পূর্ব মীমাংসার ভারতীয় দর্শন সেখানে ব্যক্তিগত ও সমষ্টিগত সুখ লাভের জন্য বিভিন্ন ধর্মীয় আচারানুষ্ঠানের পরামর্শ দেয়।
স্বামী নিগমানন্দের দর্শনকৃত ও ছবির আকারে উপস্থাপনকৃত জ্ঞানচক্র[৫৪] ছক (আধ্যাত্মিক সৃষ্টিতত্ত্বের গোলক/বলয়) দিয়ে তিনি ক্ষুদ্র সৃষ্টি/মানুষ (দেহ) এবং মহাবিশ্বের মধ্যে খচিত/আন্তঃবোনা মানব চেতনার বিভিন্ন স্তর চিহ্নিত করেন এবং বিভিন্ন আধ্যাত্মিক বিন্যাস/ক্রমের এবং উপদলের অভিকাঙ্খী শেষ পর্যন্ত কোন স্তরে পৌঁছতে পারেন তা নির্দেশ করেন। এই ছকে তিনি শ্রীকৃষ্ণ ও শ্রীরাধাকে নির্গুণ ব্রহ্ম ও সগুণ ব্রহ্মের[৫৫] মধ্যবর্তী ক্রান্তিকালে রাখেন যেটিকে তিনি বলেন নিত্য বা ভবলোক।[৫৬] (যোগমায়া এক ধরনের দৈব শক্তি, যা পৃথিবীতে আবদ্ধ আত্মাসমূহকে নিরবিচ্ছিন্নভাবে আকর্ষণ করে এবং তাদেরকে সত্যিকারের পরম সুখময় প্রকৃতি উপলব্ধি এবং স্বর্গীয় ক্রীড়ায় অংশগ্রহণ করতে সাহায্য করে।) এই ধারণাকে বিবেচনা করা হয় স্বামী নিগমানন্দের নিজের অন্তর্দৃষ্টি এবং অতীন্দ্রিয় অভিজ্ঞতার উপর ভিত্তি করে আধ্যাত্মিক চিন্তাভাবনার ক্রমবিকাশের দিকে তার এক অনন্য অবদান হিসেবে।
নিগমানন্দের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ধারণা ছিল জীবন্মুক্ত উপাসনা তত্ত্ব যা সাধককে দ্রুত আত্ম-উপলব্ধির পথে চালিত করতে পারে বলে তিনি বিশ্বাস করতেন ।[৩৯][৬০][৬১][৬২]
স্বামী নিগমানন্দের মতে, কর্ম তিন প্রকারের যথা: ক্রীয়মান, সঞ্চিত, এবং প্রারব্ধ। যখন কেউ তার শ্রমের ফল তার জীবদ্দশাতেই উপভোগ করতে পারে, তখন তাকে বলা হয় ক্রীয়মান; তার শ্রমের ফল ভোগ করার পূর্বেই যদি সে মারা যায়, তবে তাকে বলা হয় সঞ্চিত কর্ম। পূর্ব জন্মের সঞ্চিত কর্মের উদ্বৃত্ত অংশ ভোগ করার জন্য যদি তার পুনর্জন্ম হয়, তবে তাকে বলা হয় প্রারব্ধ। সাধনার গুণে কারো পক্ষে ক্রীয়মান ও সঞ্চিতের প্রভাব নিজের জীবন থেকে মুছে ফেলা যেতে পারে কিন্ত্তু প্রারব্ধ কর্মের প্রভাব মুছে ফেলা সম্ভব নয়। পার্থিব উচ্চাকাঙ্ক্ষা দ্বারা যতক্ষণ কোন ব্যক্তি আবিষ্ট থাকে ততক্ষণ তাকে নিশ্চিতভাবে জন্ম-মৃত্যুর অন্তহীন ভ্রমণ গ্রহণ করতে হবে। জীবাত্মা কখনও কখনও নাক্ষত্রিক জগতে ভ্রমণ করার জন্য স্থূল দেহ ত্যাগ করে যাকে বলা হয় প্রেত লোক। এর কর্মের প্রভাবের মধ্য দিয়ে যাবার পর এটি স্থূল দেহের সাথে স্থূল জগতে ফিরে আসে তার অতিরিক্ত বাসনাসমূহ যা তার পূর্ব জন্মে ছিল তা পূরণ করার জন্য। এ ব্যাপারে অজ্ঞ হয়ে কীভাবে এটি এক জগৎ থেকে অন্য জগতে চলাফেরা করে তা এক বড় রহস্যের বিষয়। যোগীরা এ রহস্য স্পষ্টভাবে হৃদয়ঙ্গম বা প্রত্যক্ষ করতে পারেন এবং জীবের পূর্ব সংস্কার সম্পর্কে বলতে পারেন।[৬৩][৬৪][৬৫][৬৬]
নিগমানন্দ আশ্রম (কুচবিহার) জেলার (দিনহাটার)[ নিগমনগর] এ অবস্থিত। ঠাকুর নিগমানন্দ আশ্রম আর নামানুসারে পরবর্তী কালে সেই এলাকার নাম হয় নিগমনগর। ঠাকুরের নামে পরবর্তী কালে স্কুল কলেজ আর নাম ও রাখা হয়। ২০১২ সালে ঠাকুর নিগমানন্দ এর পুনরায় প্রতিষ্ঠা করাহয় মন্দিররে।
১৩১২ বঙ্গাব্দে, নিগমানন্দ আসামের (বর্তমানে মেঘালয়) গারোহিলে একটি যোগ আশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন।[২৭][৬৭]
স্বামী নিগমানন্দ শিবসাগর জেলার জোড়হাটে এক খন্ড জমি নেন এবং ১৩১৯ বঙ্গাব্দের (১৯১২ সালে) বৈশাখ মাসের অক্ষয়া তৃতীয়ায় সেখানে একটি আশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন।[৩] এটাকে বলা হতো "শান্তি আশ্রম" বা সারস্বত মঠ, যা পরবর্তীকালে আসাম-বঙ্গীয় সারস্বত মঠ নামে পরিচালিত হয়ে আসছে।[৬৮] মঠের উদ্দেশ্য/ব্রত ছিল সনাতন ধর্ম ব্যাপকভাবে প্রচার, প্রকৃত শিক্ষা বিস্তার এবং সকলকে ঈশ্বরের প্রতিমূর্তি হিসেবে সেবা করা।
সারস্বত মঠ জোড়হাটের ছয় মাইলের মধ্যে এক দারুণ তৃণভূমির কোলে আশ্রিত ছিল। মঠের এক পাশে ছিল এক উপজাতীয় গ্রাম আর এর তিন দিক গভীর বনে ঘেরা ছিল। মারিয়ানি-জোড়হাট রেলপথ উপজাতীয় গ্রামটির মধ্য দিয়ে কোকিলামুখ পর্যন্ত গিয়েছে। হিমালয় পর্বতমালা এ জায়গার উত্তরে, উদয়গিরি পূর্বে এবং নাগা পর্বত দক্ষিণে অবস্থিত। আশ্রমের দৃশ্য প্রাচীনকালের আশ্রমের দৃশ্য মনে করিয়ে দিত। পাশ্ববর্তী জঙ্গল এবং জায়গাটির নির্জনতা ধ্যানের অত্যন্ত অনুকূল ছিল। ধর্মগ্রন্থ পাঠ ও ধ্যানের সাথে সাথে গবাদি পশু চরানো, ঘাস খাওয়ানো এবং এদের জন্য শুকনো খাদ্য সংগ্রহ ছিল আশ্রমের ব্রহ্মচারীদের উপর অর্পিত কাজ। স্বামী নিগমানন্দ কর্তৃক সম্পাদিত "সারস্বত গ্রন্থাবলী"র কাজ এই মঠের প্রেস হতে প্রকাশিত হয়েছিল। আর্য দর্পণ নামের ধর্মীয় মাসিক পত্রিকা এখান হতে মুদ্রিত হওয়া অব্যাহত ছিল। এছাড়া প্রতিষ্ঠানটিকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করতে আশ্রমটিতে মুদ্রণ, অন্যান্য শিল্প যেমন কাঠের কাজ, কামারের কাজ এবং হস্তচালিত তাঁত চালু করা হয়েছিল। দাতব্য ঔষধালয়টি মঠের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিভাগে পরিণত হয়েছিল যেখানে গরীব রোগীদের ঔষধসহ চিকিৎসা সেবা দেয়া হতো। ছাত্রদের যোগ শিক্ষা দেয়ার জন্য ঋষি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।[২৮][৬৯][৭০][৭১]
স্বামী নিগমানন্দ মহান শঙ্করাচর্যের আদেশে "সরস্বতী"র ঐতিহ্যে তাঁর দশ জন ধর্মপ্রাণ শিষ্যকে সন্ন্যাসে দীক্ষা দেন, যাদের মধ্যে কনিষ্ঠতম ছিলেন "স্বামী নির্বাণানন্দ সরস্বতী" (একজন বিদ্বান, পণ্ডিত, দার্শনিক এবং লেখক যিনি পরে অনির্বাণ হিসেবে বিখ্যাত হন) এবং "স্বামী প্রজ্ঞানানন্দ সরস্বতী"। স্বামী প্রজ্ঞানানন্দকে সারস্বত মঠ ও আশ্রম প্রতিষ্ঠানসমূহের ট্রাস্টি এবং মোহন্ত হিসেবে শপথ পাঠ করিয়ে [৭২] স্বামী নিগমানন্দ অবসর নেন এবং ১৯৩৫ সাল পর্যন্ত পুরীতে নীলাচল কুটিরে কয়েক বছর বসবাস করেন।
১৩১৯ বঙ্গাব্দে (১৯১২ সালে) স্বামী নিগমানন্দ প্রতিষ্ঠিত এ প্রতিষ্ঠান (শান্তি আশ্রম) বা "সারস্বত মঠ" ১৪১৮ বঙ্গাব্দের বৈশাখের অক্ষয়া তৃতীয়ায় (২০১১ সালের ৬ ই মে) এর জীবনের একশত বছরে পদার্পণ করল।[২৭] স্বামী নিগমানন্দের উক্তিটি নিম্নরুপ:
“ | এই শান্তি আশ্রম আমার সারা জীবনের সাধনা ও প্রচেষ্টার ফল; এ আশ্রমের সাথে তুলনা করলে আমার জীবনকে যতসামান্য গুরুত্বের মনে হতে পারে—আমি আমার জীবনকে এ আশ্রমের জন্য শতবার উৎসর্গ করতে পারি। এটি আমার প্রত্যাশা যে এ আশ্রম থেকে উপযুক্ত সময়ে শত শত নিগমানন্দ বের হয়ে আসবে। আমার শিষ্যগণ, তোমরা আমার সে আশ্রমের রক্ষক, এবং আমি আশা করি যে তোমাদের কেউই আমার আত্মা-সদৃশ এ আশ্রমকে অবহেলা করবে না, এবং তদনুযায়ী আমার মৃত্যুর কারণ হবে না। - স্বামী নিগমানন্দ [৭৩] | ” |
স্বামী নিগমানন্দ গুরু ব্রহ্ম আশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন যেখানে যে কোন বিশ্বাসের ব্যক্তিবর্গ তাদের নিজস্ব পথে ঈশ্বরের আরাধনা করতে পারতেন। তিনি অবিভক্ত বাংলার পাঁচটি বিভাগে পাঁচটি আশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন: বাংলাদেশের কুমিল্লার ময়নামতিতে "পূর্ব বাংলা সারস্বত আশ্রম", বাংলাদেশের ঢাকার কালনিতে "মধ্য বাংলা সারস্বত আশ্রম", বগুড়াতে "উত্তর বাংলা সারস্বত আশ্রম", মেদিনীপুরের খরখুসামায় "পশ্চিম বাংলা সারস্বত আশ্রম" এবং ২৪ পরগণার হালিশহরে "দক্ষিণ বাংলা সারস্বত আশ্রম"।[২৮] তিনি অনেক আশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন এবং গুরু-শিষ্য ঐতিহ্যে হাজার হাজার শিষ্য তৈরী করেন।[৭৪] আসামের জোড়হাটের কোকিলামুখে স্বামী নিগমানন্দ ১৯১৫ সালে জগৎ গুরু আসন সংস্থাপন করেন।[৭৫]
স্বামী নিগমানন্দ তার কাজ থেকে অবসর নেন এবং ওড়িশার পুরীর নীলাচল কুটিরে বসবাস করেন। পুরী চার ধাম তীর্থযাত্রার অংশ হিসেবে হিন্দুদের একটি পবিত্র শহর যা ভগবান জগন্নাথের শহর হিসেবেও পরিচিত। স্বামী নিগমানন্দ বিশ্বাস করতেন যে ভগবান জগন্নাথ হচ্ছেন "সত্যের প্রতীক" কারণ ওড়িশার পুরীর ভগবান জগন্নাথের ধর্মানুষ্ঠানের মধ্যে সাংস্কৃতিক সত্যতা, একতা এবং অখণ্ডতা মূর্ত/অন্তর্ভুক্ত করে।[৭৬][৭৭] তিনি তার জীবনের বাকী ১২ বছর পুরীতে অতিবাহিত করেন।
২৪শে আগস্ট ১৯৩৪ (শুক্রবার), শ্রাবণ পূর্ণিমা দিবস, নীলাচল সারস্বত সঙ্ঘ স্বামী নিগমানন্দের নিজের দ্বারা পুরীতে নীলাচল কুটিরে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।[৭৮][৭৯][৮০] ওড়িশার ভক্তবৃন্দ তার জন্মদিন উদ্যাপন করতে সেখানে জড় হন। তিনি তাদের মধ্যে একটি ধর্মীয় বৃত্ত গঠনের উপদেশ দেন। তার ইচ্ছানুসারে কিছু ভক্ত ধর্মীয় আলোচনার জন্য একটি সমিতি বা সংসদ চালু করেন এবং গ্রুপভিত্তিক আলোচনা এবং উপাসনার পর্যায়ক্রমিক বৃদ্ধির দ্বারা "নীলাচল সারস্বত সঙ্ঘ" (সঙ্ঘ)[৮০] চালু হয়, তিনটি উদ্দেশ্য পূরণের জন্য, (১) আদর্শ গৃহস্থ জীবন যাপন, (২) মিলিত শক্তি প্রতিষ্ঠা এবং (৩) ভাব বিনিময়।[৪৮][৮১]
বর্তমানে ভারতের কিছু জায়গায় স্বামী নিগমানন্দের অনুসারীদের দ্বারা যোগ, শিক্ষা এবং দর্শনের কিছু প্রতিষ্ঠান পরিচালিত হচ্ছে।
আধ্যাত্মিক পুস্তক এবং সাময়িকী সমূহ: সারস্বত গ্রন্থাবলী এবং আর্য দর্পণ ছিল সত্যানুরাগীদের জন্য তার অবদান।
সারস্বত গ্রন্থাবলী
শুধু পাঠগত উৎসের ভিত্তিতেই নয় বরং তার প্রথম হাত অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে নিগমানন্দের লেখা বিখ্যাত গ্রন্থসমূহ হচ্ছে "ব্রহ্মচর্য সাধন", "যোগী গুরু", "তান্ত্রিক গুরু", "জ্ঞানীগুরু" এবং "প্রেমিক গুরু" যেগুলি সনাতন ধর্মে বিদ্যমান মৌলতত্ত্ব এবং সাধনা বা আধ্যাত্মিক অনুশীলনের প্রায় সকল বাস্তব পদ্ধতি সম্পর্কিত।[১৭][৮২][৮৩][৮৪] এর অব্যবহিত পরেই তার পর পর লেখা "মায়ের কৃপা"[৮৫], "বেদান্ত বিবেক" এবং "তথ্যমালা" আধ্যাত্মিক জগতে তার গুরুত্বপূর্ণ অবদান।
আর্য দর্পণ
যৌক্তিক ভিত্তি বিবর্জিত সংকীর্ণ ধর্মীয় বিশ্বাস দ্বারা ভ্রান্ত পথে চালিত হতে প্রবণ জনগণের মাঝে অ-উপদলীয় আধ্যাত্মিক জ্ঞান বিতরণের উদ্দেশ্যে তিনি আর্য দর্পণ[৮৬][৮৭] নামে এক মাসিক পত্রিকাও প্রকাশ করেন।
এই পত্রিকায় তিনি ধর্মীয় ও ধর্মগ্রন্থ সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের উপর অনেক রচনা লেখেন। নিগমানন্দের অনুসারীরা ঘোষণা করেছেন যে পৃথিবীর যে কোন বিশ্বাসের অনুসারীদের নিকট এই গ্রন্থসমূহ উপকারী এবং যদি যত্ন সহকারে সেগুলিতে বর্ণিত বিষয়সমূহ চর্চা করা হয় তবে তা আধ্যাত্মিক সাধনায় যে কোন মানুষকে সুনির্দিষ্ট সাফল্যে পৌঁছে দেবে। এই সকল গ্রন্থসমূহ বাংলা থেকে ওড়িয়া ভাষায় অনুবাদ করেন একজন ওড়িয়া সাহিত্য পুরস্কার বিজয়ী ব্যক্তিত্ব এবং ঠাকুরের শিষ্য শ্রী ডি সি মোহান্তি, পুরী (শ্রী দুর্গা চরণ মোহান্তি)।[৮৮] যেহেতু স্বামী নিগমানন্দ এক দীর্ঘ এবং অব্যাহত খোঁজের মধ্য দিয়ে তার গুরুকে আবিষ্কার করেছিলেন, তার অনেক শিষ্যকেও তাকে খুঁজে পেতে একই নিয়ম অনুসরণ করতে হয়েছিল। এ রকম অল্প কিছু সংখ্যক গল্প তার শিষ্যদের দ্বারা বর্ণিত হয়েছে।[৩৩][৮৯][৯০]
বিভিন্ন উপাসনা উপদলসমূহকে শক্তিশালী, জীবনে গুরু থাকার প্রয়োজনীয়তা আলোচনা, আশ্রমে থাকা সন্ন্যাসীদের কল্যাণ পর্যালোচনা, সামগ্রিকভাবে তাদের এবং আশ্রমের সমস্যাসমূহ সমাধানে সাহায্য, বিদ্যালয় বা সম্প্রদায়ের জন্য সমাজসেবামূলক কাজ এবং পরিশেষে সর্বজনীন আধ্যাত্মিক জীবনের সমসাময়িক সমস্যাসমূহের উপর আলোকিত বক্তাদের বক্তৃতা শ্রবণে আধ্যাত্মিক সভা আয়োজন করার জন্য স্বামী নিগমানন্দ গৃহস্থ ও সন্ন্যাসী উভয় ধরনের ভক্তদের বার্ষিকভাবে এক সম্মেলনে মিলিত হওয়ার আহ্বান করেন যাকে বলা হয় ভক্ত সম্মিলনী।[৫১] নিগমানন্দ বলেন যে এই সকল কার্যক্রমের উদ্দেশ্য হলো শিষ্যদের আধ্যাত্মিকভাবে অগ্রসর হতে সাহায্য করা যাতে তারা জীবনে শান্তি এবং সত্যিকারের সুখ লাভ করতে পারে।[১] নিগমানন্দ পৃথিবীর মঙ্গলার্থে এই সম্মিলনী সম্পর্কে কিছু স্পষ্ট নিয়ম-নীতি রেখে গেছেন।
তিনি এই সম্মিলনীকে দুটি অংশে বিভক্ত করেন: একটি হচ্ছে সার্বভৌম (দেশব্যাপী) ভক্ত সম্মিলনী এবং অন্যটি হচ্ছে প্রাদেশিক (রাজ্যব্যাপী) ভক্ত সম্মিলনী।
স্বামী নিগমানন্দ ১৯১৫ সালে আসামের জোড়হাটের কোকিলামুখে প্রথম সার্বভৌম ভক্ত সম্মিলনী চালু করেন।[১]
১৯৩৪ সালের সার্বভৌম ভক্ত সম্মিলনীতে স্বামী নিগমানন্দ প্রতিনিধি হিসেবে তার সকল শিষ্যদের আমন্ত্রণ জানান এবং পুরীতে পরবর্তী সার্বভৌম ভক্ত সম্মিলনীর ডাক দেন।
প্রথম প্রাদেশিক সম্মিলনী ১৯৪৭ সালে "নীলাচল সারস্বত সঙ্ঘ, পুরী" কর্তৃক ওড়িয়ার গঞ্জাম জেলার আঙ্কোলিতে মঘার পূর্ণিমাতে অনুষ্ঠিত হয় যেখানে প্রায় ৬০ জন ভক্ত সমাবেশ করেন।[৯১]
সম্মিলনীতে ভক্তদের জমায়েত থেকে উপচে পড়া স্বর্গসুখের অনন্ত প্রস্রবণ [তথ্যসূত্র প্রয়োজন] থেকে স্বর্গীয় সুখ উপভোগ করতে স্বামী নিগমানন্দ তার সন্তানদের (শিষ্যদের এবং ভক্তদের) প্রত্যেককে তার উষ্ণ ও আন্তরিক আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। সম্মিলনীতে আনন্দের প্লাবন উপচে পড়ে এবং অংশগ্রহণকারীরা এর অংশী হন। বার্ষিক সম্মিলনী তার হৃদয়ের খুর প্রিয় ছিল এবং ভক্তদের সকলেই এখানে শিষ্যদের সাথে মিলিত হওয়াতে তার আনন্দ উপলব্ধি করতেন। তিনি বলেন:
“ | আমার ভক্তরা সম্পূর্ণভাবে অবহিত যে বছরে একবার খ্রীষ্টমাসে এই সম্মিলনীতে তাদের জড় হতে দেখে আমি আনন্দিত। এই ধরনের সমাবেশ মঠসমূহকে বিখ্যাত করবে এবং পৃথিবীর জন্য সাধারণভাবে মঙ্গল বয়ে আনবে। - স্বামী নিগমানন্দ [৯২] | ” |
স্বামী নিগমানন্দ বার্ষিক সম্মিলনীতে মহিলা শিষ্যদের জন্য একটি ভিন্ন উপাসনা দিবসের সূচনা করেছিলেন যেখানে তারা নিজেরাই অংশগ্রহণ এবং তাদের দৃষ্টিভঙ্গি বিনিময় করতে পারত।
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.